Gangstar In Love Part-41+42

0
3144

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 41

🍁🍁🍁
..
..
..
..
..

“বস, বস” (চিৎকার দিয়ে)

এমন চিৎকারের শব্দে দুলাল দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। এসেই দেখে যে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে বসে কাতরাচ্ছে। দুলাল জলদি নিচে নেমে এসে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরে।

দুলাল;; রুবেল হয়েছি কি, তোর এই হাল কিভাবে হলো?

রুবেল;; বস, বস আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আমার এই হাল করেছে। তিনি আমাকে ধমিয়েছেন যেন আমি আপনাকে বলি যে আইরাত মেডামের পিছু ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

দুলাল;; কিন্তু…

রুবেল;; বস তিনি আপনাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন।

দুলাল;; আমি তোকে দেখে নিবো আব্রাহাম চৌধুরী। এতো কিছু করছি আর আমি কিনা এতো সহজেই আইরাতের পিছু ছেড়ে দিবো কখনই না।

রুবেল;; বস, বস।

দুলাল;; আচ্ছা শোন তুই আগে হস্পিটালে যা নয়তো আর তোর বেচে থেকে কাজ নেই। তোর অবস্থা অনেক খারাপ।

দুলাল জলদি করে তার বাকি কিছু লোকদের কে ডেকে নিয়ে রুবেলের সাথে হস্পিটালে পাঠিয়ে দিলো।

দুলালের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ঠিক তখনই দুলাল তার বাড়ির বাইরে অনেক বেশি হৈচৈ এর আওয়াজ শুনতে পেলো। দুলাল তার বারান্দায় চলে গেলো। নিচে তাকিয়ে দেখে তার বাড়ির বাইরে অনেক গুলো সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছে। তারা পারছে না দরজা ভেংে ভিতরে ঢুকে পরতে। তখন তমাল তাড়াতাড়ি করে দুলাল কে ডেকে নিচে নামিয়ে আনলো। টিভি তে আজকের ব্রেকিং নিউজ দেখে দুলাল তার মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পরলো।


আব্রাহাম সোফায় বসে ল্যাপটপে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। কোথাও কোন খেয়াল নেই। ল্যাপটপের ওপর চোখ রেখেই পাশে থাকা গরম ধোঁয়া ওঠানো কফির মগটা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে থাকলো। কাজের মাঝেই হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে, এক নজর ফোনের দিকে তাকিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো।

আব্রাহাম;; কি হলো?

রাশেদ;; স্যার আমাদের কাছে একটা ভিডিও ক্লিপ আছে আর এই ভিডিও তেই সবকিছু বন্দী হয়ে রয়েছে। কোন ভাবেই যদি এটা মিডিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে দিই তাহলে কাল অব্দি সব তোলপাড় হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; আর এটাই আমি চাই। কাল পর্যন্ত যেন সবকিছু হয়ে যায় ওকে!

রাশেদ;; জ্বি স্যার অবশ্যই।

আব্রাহাম ফোন রেখে মুচকি হাসে,,

আব্রাহাম;; এখন শুধু কাল সকাল হওয়ার অপেক্ষা।

আব্রাহাম আরো বেশ কিচ্ছুক্ষন কাজ করে অবশেষে আইরাতের একটি ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

~~

পরেরদিন সকালে🌅 ~~

নিপা-আইরাত-রাত্রি তারা রেডি হচ্ছে কারণ আজকে তাদের নিরবের সাথে দেখা করার কথা। আইরাত আর রাত্রি একটু বেশিই এক্সসাইটেড। তারা রেডি হচ্ছে আর মাঝে মাঝে নিরবের কথা বলে নিপা কে লজ্জায় ফেলছে। আর নিপা এগুলোর বাদরামি সহ্য করছে।

রাত্রি;; এই নিপু আজ আর সিম্পলভাবে যাস না কেমন একটু সেজেগুজে যা, আফটার অল আমাদের হবু দুলাভাই আসবে বলে কথা।

নিপা;; চুপ কর, জাস্ট দেখা করতে যাচ্ছি তাও তোদের নিয়ে,, বিয়ে না আজ আমার যে এতো করে সাজতে হবে।

আইরাত;; বিয়ে না কিন্তু হতে কতক্ষন। ভাজ্ঞিস, বলেছিলি যে তোর রিলেশন আছে যদি বিয়ে করার পরে বলতি তখন কি হতো! (কানের দুল পরতে পরতে)

রাত্রি;; একদম ঠিক বলেছিস।

নিপা;; কেন এভাবে তোরা লেগ পুল করছিস আমার, আমি বলতেই চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সুযোগই পেয়ে ওঠি নি আর কাল তো সব বলেই দিলাম।

আইরাত;; হাহা, আচ্ছা বুঝলাম এবার চল তাড়াতাড়ি।

তারা তিনজনেই বের হয়ে পরলো। নিরবের একটা কফিশপে আসার কথা সাথে নাকি নিরবের আরো একটা ফ্রেন্ড আসবে। কোন মতেই আজকে দেরি করতে চায় না তাই তারা জলদি করে বের হয়ে পরে।

~~

চৌধুরী ভবন““

অয়ন;; দাভাই, দাভাইইইইইই ( হলরুম থেকে জোড়ে চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম তার ঘরে এক্সারসাইজ করছিলো হুট করেই অয়নের এমন গলা ফাটা ডাকে আব্রাহাম তার ঘামে ভেজা শরীর মুছে সিড়ি বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; কিরে কি হয়েছে এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?

অয়ন;; দাভাই টিভি তে দেখ আগে।

আব্রাহাম কপাল কুচকে টিভির দিকে তাকায়, তাকিয়েই সাথে সাথে তার মুখের কোণে এক চিলতে বাকা হাসি ফুটে ওঠে। কেননা টিভি তে দেখাচ্ছে যে দুলালের বাড়ির সামনে মিডিয়ার লোকরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পরছে। সবার একই প্রশ্ন “ভিডিও ক্লিপে যা দেখাচ্ছে তা কি সব সত্যি, দুলাল কি সব অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত?”। গতকাল রাশেদ আব্রাহামকে যে ভিডিও এর কথা বলছিলো সেটা দুলালের অপকর্মের ঘটনার সাক্ষী। সেখানে দুলালকে এক মেয়ে পাচারকারীর সাথে হাত মেলাতে দেখা যায়। দুলাল সব খারাপ কাজের সাথে যুক্ত আছে যা এতোদিন সকল মিডিয়া বা দেশের বড়ো বড়ো নেতাদের অজানা ছিলো। নিজের অবৈধ টাকার জোরে আজ পর্যন্ত এইসবকিছুই করে এসেছে দুলাল। কিন্তু আব্রাহামের কিছু লোক দুলাল এবং তার সকল কথপোকথন একটা ক্যামেরাতে রেকর্ড করে ফেলে। আর রাতেই রাশেদ আব্রাহামকে ফোন করে সবকিছুর খবর বলে দেয়। টিভি তে দেখা যাচ্ছে সবাই দুলালের ওপর কঠোর প্রশ্ন ছুড়ে মারছে। “” মিস্টার দুলাল কি এইসব বাজে কাজের সাথে অনেক আগেই থেকেই জড়িত?, মেয়ে পাচার, কালোবাজারি, ঘুষ আরো কি কি এর সাথে জড়িত আছেন তিনি? তিনি অসহায় মেয়েদের কোথায় পাচার করেন আর তার বদলে কি তিনিও কি টাকা পান?””। এমন আরো হাজারো হাজারো প্রশ্ন করা হচ্ছে দুলালকে। বাড়ির দারোয়ান কোন রকম করে সব মিডিয়া কে ঠেলেঠুলে বাইরে বের করে দিচ্ছেন। এরই মাঝে কয়েকজন লোক রাস্তা থেকে ইট তুলে দুলালের বাড়ির জানালাতে ছুড়ে মারছে,, টাস টাস করে এক একটার জানালার কাচ ভেংে যাচ্ছে। আর ভিতরে দুলাল বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। সে এটাই ভেবে কূল পাচ্ছে না যে এতো সুরক্ষা দেওয়ার পরেও তার এই গোপন ভিডিও কি করে ফাস হলো।
এগুলো সব কিছুই টিভি তে বড়ো বড়ো অক্ষরে ব্রেকিং নিউজে দেখানো হচ্ছে। আব্রাহাম তাই দেখছে, আব্রাহাম খুব আরাম করে বসে পায়ের ওপর পা তুলে জুস খেতে থাকে আর এইসব দেখতে থাকে। অয়নের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই সবকিছুই তার ভাইয়ের কাজ।

অয়ন;; দাভাই, এইসব কিছুই তোর কাজ তাই না?

আব্রাহাম;; কি মনে হয়! (জুস খেতে খেতে)

অয়ন;; হাহাহা,, তুই পারিস ও বটে ভাই।

আব্রাহাম;; পাথরের সাথে বারি খেতে আসলে ব্যাথা টা কিন্তু সে নিজেই পাবে পাথর না। দুলাল নিজের কিয়ামত নিজে ডেকে এনেছে।

অয়ন;; এই না হলো আমার দাভাই।

আব্রাহাম;; হুমম হয়েছে, আচ্ছা তুই কি কোথাও যাচ্ছিস নাকি?

অয়ন;; হ্যাঁ, ওইতো একটু বাইরে যেতে হবে দেখা করতে।

আব্রাহাম;; দেখা করতে! কার সাথে?

অয়ন;; নিরবের সাথে, অনেকদিন পরে আসছে তো তাই দেখা করতে বললো।

আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা ভালো তো জলদি বের হয়ে পর।

অয়ন;; তুই যাবি না?

আব্রাহাম;; আমি খানিক বাদেই বের হবো। আর এই নে গাড়ির চাবি (চাবি অয়নের দিকে হালকা ঢিল দিয়ে)

অয়ন;; আচ্ছা।

অয়ন গাড়ি নিয়ে বাইরে চলে গেলো। আসলে নিরব আর অয়ন সেই স্কুলের ফ্রেন্ড,, তাদের মাঝে বন্ধুত্ব অনেক গভীর। নিরবের সাথে আব্রাহামেরও সম্পর্ক বেশ ভালোই। এতোদিন নিরব কাজের চাপে পরে অয়ন আর আব্রাহামের সাথে দেখা করতে পারে নি। কিন্তু আজ সময় পেয়ে একেবারে অয়ন আর রাত্রি নিপা আইরাতের সাথে দেখা করবে। দ্রুত গতিতেই অয়ন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন পর অয়ন নিরবের বলা জায়গাতে এসেও পরে। কিন্তু নিরব কে কোথাও না দেখতে পেরে অয়ন ফোন লাগায়।

অয়ন;; নিরব কোথায় তুই? আমি দাঁড়িয়ে আছি।

নিরব;; দোস্ত সরি, আমি রাস্তায় আছি আর এখানে অনেক জ্যাম। গাড়ি সব আটকে গেছে আর কিছুক্ষন সময় দে আমি আসছি।

অয়ন;; এটা তোর নতুন কিছু না কখনোই সময় মতো আসিস না তুই,, দেরি তো তোকে করতেই হবে। প্লিজ জলদি আয়।

নিরব;; আচ্ছা বাবা আচ্ছা এখন রাখছি।

ওদিকে নিপা-আইরাত আর রাত্রি এসে পরে। তারা এসে দাড়িয়ে থাকে কিন্তু নিরবের দেখা নেই। নিপাও তখন নিরবকে ফোন দিয়ে জানতে পারে যে সে গাড়িতে আটকে পরেছে জ্যামের কারণে তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। নিপা কথা বলে ফোন কেটে দেয় আবার সামনে এগুতে লাগে তারা। কিন্তু এবার আইরাত তাদের থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; ওহহহ নোওওওওও।

রাত্রি;; কি হয়েছে?

আইরাত;; আরে আজ সকালে স্যার আমাকে ফোন করে আরো কিছু নিউ কালেকশন আনতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তো একদম ভুলে গেছি। আনতে বলেছিলো সেই সকাল ১০ টায় আর এখন বাজছে ১০;৪৫। এখন কি হবে!?

রাত্রি;; কি ভুলো মন তোর। আমাকে একটা বার বলতি আমি মনে করিয়ে দিতাম। এখন কিভাবে যাবি।

আইরাত;; এখন গেলেও আমি পাবো। আচ্ছা এককাজ করি আমি এখন চলে যাই ডিজাইন গুলো নিয়েই দ্রুত এসে পরবো আর বেশি সময়ও লাগবে এই যাবো আর আসবো।

রাত্রি;; একা যাবি?

আইরাত;; নিপু তুই চল না আমার সাথে। নিরবের আসতে তো দেরিই আছে। ততক্ষণে আমরা গিয়ে আবার এসে পরতে পারবো।

নিপা;; হ্যাঁ তাই ভালো হবে আমিই যাই। রাত্রি শোন তুই ভিতরে গিয়ে টেবিল নং ৭ এ বোস আমি আইরু গিয়ে জলদি করে সেগুলো নিয়ে আসে কেমন!!

রাত্রি;; আচ্ছা যা বাট প্লিজ জলদি আসবি।

আইরাত;; আচ্ছা ঠিকআছে।

আইরাত আর নিপা রাত্রিকে কফিশপের ভিতরে যেতে বলে তারা আবার তাদের কাজে চলে যায়। রাত্রি ভিতরে গিয়ে ৭নং টেবিলে বসে পরে। অন্যদিকে অয়নও ধীরে ধীরে কফিশপের ভিতরে চলে আসে। নিরব তাকে বলেছিলো যে ৭ নং টেবিল তাদের জন্য বুক করা আছে। কিন্তু অয়ন তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা মেয়ে বসে আছে। এতে অয়ন কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। পরক্ষণেই তার মনে পরে যে এই হয়তো নিরবের গার্লফ্রেন্ড। অয়ন মুচকি হেসে সেদিকে যেতে থাকে। অয়ন গিয়ে মেয়েটির পিছনে দাঁড়িয়ে পরে….

অয়ন;; এক্সকিউজ মি. মিস।

অয়নের ডাকে রাত্রি হালকা চকমে উঠে, মাথা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকালে বেকুব বনে যায়। অয়নেরও মুখে লেগে থাকা হাসি টা মূহুর্তেই উধাও হয়ে যায়। অয়ন একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। রাত্রির বারবার এই একই লোকের সাথে দেখা হওয়াতে মেজাজ বিগড়ে যায়। তাই রাত্রি এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে পরে এবং অবাক হয়ে বলতে থাকে…..

রাত্রি;; আপনি!

অয়ন;; তুমি?

রাত্রি;; আপনি এখানে কি করছেন?

অয়ন;; তুমি এখানে কি করছো?

রাত্রি;; এই প্রশ্ন টা তো আমার!

অয়ন;; আমারও ঠিক একই প্রশ্ন।

রাত্রি;; এটা একটা কফিশপ তো অবশ্যই এখানে কফি খেতে এসেছি।

অয়ন;; আর আমি তো হাওয়া খেতে এসেছি তাই না!

রাত্রি;; যা খাওয়ার খান সেটা আপনার বেপার। আচ্ছা By any chance, আপনি আমাকে ফলো টলো করছেন না তো?

রাত্রির এমন হুটহাট প্রশ্নে অয়ন নিজেই বোকা হয়ে গেলো। এখন তার কি বলা উচিত ঠিক তাও মাথায় আসছে না তার।

অয়ন;; মানে কি, আমি ফলো করবো তাও আবার তোমার মতো পাগলকে। মানে আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না যে আমি তোমার মতো একটা তাড় ছেড়া মেয়েকে ফলো করবো আর দুনিয়াতে কি মেয়েদের অভাব পরেছে নাকি।

রাত্রি;; কিইইইইইইইইইই,, যত বড়ো মুখ নয় তত বড়ো কথা। আমি পাগল, তাড় ছিড়া?!

অয়ন;; সত্য সবসময় তেতোই লাগে। (ভেংচি কেটে)

রাত্র;; ওই বেটা বেশি সাহস হইছে তাই না কিছু বলছি না তার মানে এই না যে যখন যা খুশি তাই মুখ দিয়ে বের করে ফেলবেন।

অয়ন;; বাধ্য করেছো তুমি আমায় বলতে।

রাত্রি;; তবে রে…

লেগে গেলো অয়ন আর রাত্রির মধ্যে তুমুল ঝগড়া। যেন কুকুর & বিড়াল ঝগড়া করছে। তখনই অয়নের পাশ দিয়ে নিরব আর রাত্রির পাশ দিয়ে নিপা-আইরাত চলে এলো। এসেই দেখে পুরো টেবিলে যা ইচ্ছে তাই একটা অবস্থা। একদম লেজে গবরে হয়ে গেছে। অয়ন আর রাত্রি একে ওপরের পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে, কেউ কাউকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না। নিরব আর নিপা-আইরাত চুপচাপ শুধু দেখে যাচ্ছে। সবকিছু তাদের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিরব এগিয়ে গেলো।

অয়ন;; ডিসগাস্টিং, তোমার মতো ঝগড়াটে মেয়ে আমি আমার পুরো জীবনে আর একটাও দেখি নি।

রাত্রি;; হ্যাঁ তো এখন দেখে নিন না। আর আমাকে ঝগড়াটে বলছেন আপনি নিজে কি ফালতু লোক একটা।

অয়ন;; তোমাকে তো।

নিরব;; অয়ন ভাই আমার থাম থাম প্লিজ থাম।

অয়ন;; ওহহ নিরব, এসে পরেছিস তুই যাক ভালোই হয়েছে। দেখ না কোথা থেকে কোন এক মেয়ে এসে আমার সাথে এমন ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছে।

রাত্রি;; আর নিজে তো দুধে ধোঁয়া তুলসিপাতা তাইনা।

অয়ন;; তুমি…

নিরব;; অয়ন কি করছিস তুই প্লিজ থাম।

অয়ন;; ধুর কি থামবো এই মেয়ে পুরো মুডের বারো টা বাজিয়ে দিয়েছে আমার। আর নিরব তুই, তুই কিনা এই মেয়ের সাথে এতোদিন রিলেশনে ছিলি। মানে কি, How is this possible?! তুই ওকে কি করে সামলাস ভাই। আমার তো ৫ মিনিটেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই সব চিপ মেয়েদের না আমি ভালো করেই চিনি, যত্তসব।

রাত্রি;; ওইইই তুই কি বললি, চিপ আমি চিপ। চিপ হবে তোর বউ। এতোক্ষন অনেক আপনি আপনি করেছি কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুই রেস্পেক্ট দেওয়ার মানুষই না,, কালা বাদর কোথাকার।

অয়ন;; নিরব দেখেছিস দেখেছিস তুই, কিভাবে গায়ে পরে ঝগড়া করছে মেয়েটা, আর তুইতুকারি করছে। তুই এর সাথে রিলেশন ওহহ গড। ভাই আমি তোর কাছে হাত জোড় করছি তুই যদি প্রাণে বাচতে চাস তাহলে এখন এই মূহুর্তে তুই এই মেয়ের সাথে ব্রেকাপ করবি এখনই।

নিরব;; আরে অয়ন কিন্তু আমার কথ….

অয়ন;; না না না আমি কোন কথাই শুনবো না আমি তোকে এমন একটা জংলি বিড়ালের কাছে ছেড়ে যেতে পারি না। তুই এখনই ব্রেকাপ করবি এখনই।

নিরব;; আরে আরে থাম কথা শোন আমার, আমি এই মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিলাম না এটা ওই মেয়ে না।

অয়ন;; হ্যাঁ আমিও তো তাই বলছি,, কিহহহহহহ?

নিরব;; হ্যাঁ।

অয়ন;; তুই এই মেয়ের সাথে রিলেশনে নেই,, সেটা এই মেয়ে না?

নিরব;; একদম না।

অয়ন;; তাহলে?

নিরব;; সামনে তাকিয়ে দেখ ওই যে নিপা দাঁড়িয়ে আছে, আর এই হচ্ছে রাত্রি আর নিপার পাশের জন আইরাত।

অয়নের কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো লাগছে। অয়ন আইরাতের দিকে তাকায়, আইরাতও অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন বেশ ভালো করেই জানে যে এরা কেউই জানে না যে আইরাত আব্রাহামের বউ। আর আইরাতও জানে যে অয়ন তাদের কিছুই বলবে না। তাই তারা স্বাভাবিক ভাবেই আচরণই করলো। অয়নের ভাবনাতে ছেদ ঘটিয়ে রাত্রি চিল্লিয়ে বলে উঠলো…

রাত্রি;; আসলেই একটা মাথামোটা লোক।

রাত্রি এই কথা বলে আবার বসে পরে। অয়ন রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগে নিরব অয়নের হাত ধরে থামিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। নিপা-আইরাত এসে টেবিলে রাত্রির পাশে বসে পরে। নিরব আর অয়নও একপাশে বসে পরে।

নিরব;; অয়ন, এই হচ্ছে নিপা যাকে আমি ভালোবাসি।আর এই হচ্ছে রাত্রি আর আইরাত। রাত্রির সাথে তো তোর আর কিছু পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না কারণ এই পর্যন্ত অনেক বেশি পিরিচিত হয়ে গেছিস তোরা।

অয়ন রাত্রির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে একটা বড়ো হাসি দেয়। আইরাত তা দেখে নিজেও হেসে দেয়।
তারা এখন একে ওপরের সাথে কথা বলতেই ব্যাস্ত হয়ে পরে। মাঝে মাঝে অয়ন আর রাত্রির চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে আর দুজনই রাগে ফুসছে। এবার আসে খাবার অর্ডার দেওয়ার পালা। রাত্রি তা দেখে বলে ওঠে…

রাত্রি;; আমি অর্ডার করবো আমি।

অয়ন;; পেটুক একটা খালি খাই খাই।

রাত্রি;; ওইই মিয়া আপনি কি বললেন আমি পেটুক।

অয়ন;; অবশ্যই তাই আর তার নমুনা বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে।

রাত্রি;; আপনাকে তো আমি….

আইরাত;; সবাই চুউউউউউউউউউউউউউউপ!! একদম চুপ সবাই।

এবার খাবারের অর্ডার নিয়ে অয়ন আর রাত্রির মাঝখানে ঝগড়া লাগতে দেখলে আইরাত এক ধমক দিয়ে দুজনকে চুপ করিয়ে দেয়। কেননা এমনিতেও এদের চক্করে কান দুটো একদম ঝালাপালা হয়ে গেছে আর না। আইরাতের এমন ধমকে তারা সবাই একদম চুপসে গেলো।

আইরাত;; এভাবে দুজন দুজনের পিছে পরে আছো কেন। ঝগড়া কি সবসময় করতেই হবে নাকি আজব। এই রাত্রি মেনু দে কাউকে অর্ডার করতে হবে না আমি বলছি।

রাত্রি আর কিছু না বলে চুপচাপ মেনু আইরাতের দিকে এগিয়ে দিল। আইরাত মেনু দেখে বেশ কিছু খাবারের কথা বলে দিলো। তারপর তারা খেয়ে দেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে লাগলো।


আব্রাহাম এখন নিজেও তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। উদ্দেশ্য সেই প্রিয় হাইওয়ে। আব্রাহাম হাইওয়ে তে চলে গেলে গাড়ি থামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের ফোনটা বের করে আইরাতকে ফোন দেয়।

আইরাত নিপা নিরব রাত্রি অয়ন তারা সবাই হেসে হেসে কথা বলছিলো কিন্তু কথার মাঝেই আইরাতের ফোন বেজে ওঠে। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের ফোন। আইরাত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোন কেটে দেয়। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পারে যে আইরাত তার ফোন কেটে দিয়েছে, আব্রাহামের রাগ হতে লাগে। আব্রাহাম আবারও ফোন দেয় আইরাতের কাছে। এবার আইরাত ফোন ধরে। টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে কথা বলতে থাকে আইরাত।

আইরাত;; কি হয়েছে বার বার ফোন কেন দিচ্ছেন?

আব্রাহাম;; এই মেয়ে, মানুষ ফোন কেন করে! আর আমার বউ কখন ফোন দিবো কি না দিবো তা কি আমার তোমার কাছ থেকে জানতে হবে।

আইরাত;; 🤦‍♀️

আব্রাহাম;; এখন শুনো তাড়াতাড়ি করে হাইওয়ে এসে পরো।

আইরাত;; কি এখন, এই সময় হাইওয়ে তে কেন?

আব্রাহাম;; তোমাকে আমি উল্টো প্রশ্ন করতে বলি নি, আর না ই তোমাকে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন আমি মনে করি। আসতে বলছি আসবে ব্যাস, আর কোন কথা না। আর যদি কোন তামাশা চাও তাহলে সেটাই বলে দাও আমি তোমাকে গিয়ে তুলে নিয়ে আসি। তুমি কোথায় আছো তা কিন্তু বেশ ভালো করেই জানি আমি। আমার আসতে শুধুমাত্র দু মিনিট লাগবে।

আব্রাহমের এমন মিষ্টি থ্রেট দেওয়াতে আইরাতের হোস উড়ে যায়। কারণ আব্রাহাম যে আসলে কেমন তেড়া প্রকৃতির লোক তা আইরাতের থেকে আর ভালো কেউই জানে না। তাই আইরাত আমতা আমতা করে বলে উঠলো…

আইরাত;; সবসময় এতো ব্লেকমেইল কেন করেন,, আসছি তো আমি😒

আব্রাহাম;; That’s like a good girl,, love you…

আইরাত ফোন কেটে দিয়ে কোন রকমে নিপা নিরব রাত্রি আর অয়নকে অনেক কিছু বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজের কথা বলে সেখান থেকে কেটে পরে। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আইরাত এক রিকশা তে উঠে পরে এবং চলে যায় হাইওয়ের উদ্দেশ্যে।










🌿🍃চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer;; Tamanna Islam

#part__ 42

💛🌼..
..
..
..
..
..

আইরাত একসময় হাইওয়েতে পৌঁছে গেলো। অনেক রোদ ওঠেছে যাকে বলে একদম কাঠ ফাটা রোদ। আইরাত মাথায় হাত দিয়ে মুখে রোদ আসা থেকে আটকাচ্ছে। আইরাত কিছুটা সামনে চলে গেলে একটা কালো গাড়ি দেখতে পায় তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এইটা আব্রাহামেরই গাড়ি। গাড়ি যেহেতু এখানে আছে তাহলে আব্রাহামও এখানেই রয়েছে। আইরাত আবারও সামনে হেটে যেতে লাগলো। হাটতে হাটতে নদীর পাড়ে চলে এলো।

আইরাত;; এই লোকটা এতো অদ্ভুত কেন বুঝি না। আমাকে এখানে এই সময় ডেকে এনে নিজেই উধাও। অসহ্যকর।

আইরাত বেশ বিরক্তি নিয়ে এবং আব্রাহামকে হাজার টা গালি দিয়ে পিছনে ঘুড়তে নিলেই আচমকা আব্রাহামকে দেখে ভরকে যায়। চিল্লিয়ে নিচে পরে যেতে ধরলে আব্রাহাম একহাতে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম ঠাই দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে একহাতে আইরাতকে ঝাপটে ধরে আছে। আইরাত চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। আব্রাহাম মুগ্ধ হয়ে আইরাতের এই ভয়ার্ত মুখখানা দেখছে। বেশ ভালো লাগছে তার। আব্রাহামের নিজের ভিতরে এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে যখনই সে আইরাতের কাছে থাকে। পরে যাওয়ার আভাস না পেয়ে আইরাত পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। দেখে যে আব্রাহাম তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে এবং এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এখনো তার দিকে এক নয়নে তাকিয়েই আছে। আইরাত তা খেয়াল করে মাথা নিচু করে ফেলে। তার অবাধ্য চুলগুলো বারবার সামনে এসে পরছে। আব্রাহাম তার আরেক হাত দিয়ে আইরাতের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। আব্রাহাম ক্রমশ আইরাতের মুখের কাছে এগিয়ে আসছে। আইরাতের শ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আব্রাহাম এবার তার দুহাত দিয়ে আইরাতের দুগাল জড়িয়ে ধরে। আইরাত আব্রাহামের হাতের ওপর তার হাত রেখে দেয়। তার দিকে আরো ঝুকে এলে আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে এবং আইরাতের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। আইরাত তা দেখে কিছুটা গলা ঝাড়ি দেয় তাতে আব্রাহামের হোস ফিরে আসে। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আইরাতও ঠিক হয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে লজ্জায় আইরাতের গাল দুটো ঠিক টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। আব্রাহাম তো এই লজ্জা মাখা মুখের ওপরই ফিদা। আব্রাহাম এবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচিয়ে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; আমাকে খুজছিলে বুঝি!

আব্রাহাম;; ননা মামানে না আসলে,, হাহ্ আমার বয়েই গেছে আপনাকে খোজার।

আব্রাহাম;; মানুষের কথায় কখন জড়তা কাজ করে জানো যখন সে কারো কাছে ধরা পরে যায়। তোমার কথায় জড়তা আছে জান। আমি জানি তুমি আমাকেই খুজছিলে।

আইরাত;; হ্যাঁ খুজছিলাম তো, খুজবো না আমাকে এখানে ডেকে আপনি নিজেই নেই।

আব্রাহাম;; তোমার আব্রাহাম তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না জান। (আইরাতকে ঘুড়িয়ে পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে)

আইরাত;; ছাড়ুন তো মানুষ আছে দেখছে তারা।

আব্রাহাম;; দেখুক তাতে কার কি। আমার বউ আমার সম্পত্তি যা খুশি করবো।

আইরাত এবার আব্রাহামের কথা শুনে হেসে দেয়। কিন্তু তা আব্রাহামের চোখে পরতে দেয় না। আব্রাহাম এবার আইরাতকে ছেড়ে দিয়ে তার হাত ধরলো। আইরাত তার হাতের দিকে তাকালো। আব্রাহাম খুব যত্নের সাথে তার হাত ধরে আছে। এভাবে হাত ধরাতে আইরাত অনেক শান্তি আর সেইফ মনে করে। এক আস্থা আছে এভাবে আব্রাহামের হাত ধরাতে। আব্রাহাম সবসময় এভাবেই আইরাতের হাত ধরে। আইরাত হঠাৎ মনে পরে যে ঠিক এভাবেই আব্রাহাম তার হাত ধরে তার বাপির বাড়ি থেকে এনেছিলো। কিন্তু তখন আইরাতের ভিতরে কোন ভয় কাজ করেনি বরং এক আলাদা শান্তি অনুভব হয়েছিলো। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। আব্রাহামের হাতে যেন আইরাতের হাতটা খুব করে মানিয়েছে। আইরাত তার হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি এক হাসি দেয় যা আব্রাহামের চোখ এড়ায় না।

আব্রাহাম;; সামনে এগুনো যাক!

আইরাত;; (আইরাত কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায় যার মানে হ্যাঁ)

আব্রাহাম আর আইরাত নদীর কিণার দিয়ে বসে পরলো। আব্রাহাম আইরাত পাশাপাশি বসে আছে। নদীতে ছোট ছোট সাদা পালকের হাসেরা ভেসে বেড়াচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের পাশে কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সে টেনে আইরাতকে আরো কাছে নিয়ে এসে বসলো। আইরাত এক পলক আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। আব্রাহাম আইরাতকে আঙুল দিয়ে সামনে দেখাচ্ছে এবং হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথা বলছে। আইরাত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে আব্রাহামের সবকিছুই খেয়াল করে যাচ্ছে। কেন জানিনা আইরাতের আজ মন সায় দিচ্ছে না আব্রাহামের কাছ থেকে চোখ সরাতে। আব্রাহামকে আজ বেশ সুদর্শন লাগছে। ফর্সা মুখে খোচাখোচা চাপদাড়ি, কপালের সামনে পরে থাকা চুল, ফিটফাট বডি,মুখে ঘায়েল করা হাসি। চোখজোড়া বেহায়ার মতো আব্রাহামের দিকে তাকিয়েই আছে। নিজের অজান্তেই আইরাত তার মাথাটা আব্রাহামের কাধে আলতো করে ছেড়ে দিলো। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত তার কাধে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে,, আব্রাহাম তা দেখে মুচকি হেসে আইরাতের কপালে চুমু একে দেয়, আবার সামনে তাকিয়ে থাকে আব্রাহাম। মন চাইছে সময় যেন এখানেই থেমে যায়। দুনিয়ার সব শান্তি যেন এখন এখানে এসে ভর করেছে।

এভাবেই দিন যায়, সময় যায়। আইরাত আব্রাহাম এখনো সেভাবেই রয়েছে। আব্রাহাম প্রতিনিয়ত আইরাতকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ছেড়েছুড়ে যেন এখন এটাই আব্রাহামের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইরাতকে এভাবে বিরক্ত করতে আব্রাহামের যেন বেশ ভালো লাগে। কিন্তু আইরাত যখন একটু তেড়ামি করে তখন আব্রাহাম তার লাভ টর্চার শুরু করে। নিপা আর নিরবের সম্পর্কও দিন দিন গভীর হচ্ছে। একসময় তাদের বিয়ের কথা বার্তাও হয়,, বিয়ের দিন তারিখ সবকিছুই একদম ঠিকঠাক হয়ে যায়। এতে রাত্রি আর আইরাতের খুশির যেন কোন সীমা নেই। রাত্রি আর অয়নের মাঝেও এখন তিক্ততা কিছুটা কমে এসেছে। তারা আর আগের মতো একজন আরেকজনের গায়ে পরে ঝগড়া করে না। কিন্তু এখনো কম না মাঝে মাঝে বেধেই যায় ঝগড়া। কিন্তু ঝগড়া বা রাগ করে কেউ দূরে থাকতে পারে না খানিক বাদেই আবার মিশে যায়। তারা এখন অনেক ভালো বন্ধু।



৭ দিন পর🍃🍃…

আইরাত ঘুমিয়ে আছে, গভীর ঘুম। কিন্তু ঘুমের ঘোড়েই আইরাতের সামনে বারবার তার আম্মু পাপার মৃতদেহ ভেসে ওঠছে। সেই রক্তাক্ত দৃশ্য বারবার আসছে। আব্রাহামের ছুরি নিয়ে তার পাপার লাশের সামনে বসে থাকা সারা গায়ে রক্ত দিয়ে নাজেহাল অবস্থা,, হিংস্র-ভিবৎস সেই চেহারা চোখের সামনে এসে পরে। আইরাত ঘুমের মধ্যেই এগূলো দেখছে আর ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। এভাবে আর না থাকতে পেরে আইরাত এক চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে ঘুম থেকে ওঠে পরে।
ঘুম থেকে ওঠে দেখে রুমের মধ্যে কেউ নেই। পুরো রুম ফাকা। আইরাত পুরো ঘরে একবার চোখ বুলায়। একদম ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে সে। আইরাত বুঝতে পারে যে এটা একটা খারাপ সপ্ন ছিলো। সে চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে বিছানাতে বসে থাকে। হঠাৎ মনে পরে আজকের কথা। আইরাত দ্রুত করে তার ফোন অন করে দেখে আজ ২৫ জুলাই,, এইদিনই আইরাতের আম্মু-পাপা মারা যায়। আজ তাদের মৃত্যুবার্ষীকি। আইরাত ফোন রেখে আবারও মাথা চেপে ধরে, হাতজোড়া দিয়ে মুখখানা ঢেকে রাখে। মুখ থেকে হাত সরাতেই আইরাতের চোখ মুখ নাক সব লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে টুপ করে পানি গড়িয়ে পরে। গত দুবছর ধরে সবার অগোচরে আইরাত এই দিনে তার আম্মু পাপার কবরে গিয়েছে। এতোদিন তো সে ভাবতো যে আব্রাহামও এই দুনিয়া তে নেই কিন্তু তার ধারনা ভুল ছিলো। এতে আইরাতের খুশি হওয়ার কথা না বিষন্ন হওয়ার কথা তা আইরাতের জানা নেই। কিন্তু আজ কেন যেন খুব খারাপ লাগছে তার।না চাইতেও বারবার তার বাবা-মার মৃত্যুর কথা মনে পরছে যা তার বুকে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণা কে দ্বীগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আইরাত কিছুক্ষন এভাবেই বসে থেকে গায়ের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে উঠে পরে। তারপর রান্না ঘরে চলে যায়।
রাত্রি আর নিপা বাইরে গিয়েছিলো, বাসায় আসার পর আইরাতকে রুমে দেখতে না পেরে তারা আরো ভিতরে চলে যায়। রান্নাঘর থেকে টুক টাক শব্দ আসাতে তারা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আইরাত খাবার বানাচ্ছে। আজ অনেক চুপচাপ সে।

রাত্রি;; বেবিজান ঘুম থেকে উঠে পরেছিস!

আইরাত;; হুমম

রাত্রি;; আসলে না আমরা একটু বাইরে গিয়েছিলাম বুঝলি তুই তো গভীর ঘুমে ছিলি তাই আর তোকে ডাক দেয়নি।

আইরাত;; হুমম

নিপা;; তুই হুট করেই রান্নাঘরে যে কি বানাচ্ছিস?

আইরাত;; পাস্তা, তোদের না পছন্দের!

নিপা;; তা তো পছন্দেরই কিন্তু আজ কেমন যেন কোথায় একটা কিছু নেই।

আইরাত এবার নিপার দিকে ঘুড়ে তাকালো। নিপা দেখলো আইরাতের চোখ নাক মুখ অস্বাভাবিক ফুলে আছে যাতে করে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে কেদে কেদে সাগর করেছে আইরাত। আর নিপা তা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে।

আইরাত;; আব… কোথায় কি নেই,, কি কম পরলো!

নিজের আশেপাশে খোঁজাখোজি করে আইরাত এগুলো বলছে। তখনই নিপা আইরাতের বাহু ধরে নিজের কাছে আনলো।

নিপা;; আইরাত কি হয়েছে তোর,, কান্না করেছিস কেন?

আইরাত;; কি কককই না তো একদম না, আআরে আমি আমি কেন কান্না করতে যাবো ধুর। (চোখ মুছে)

নিপা;; দেখ তুই অন্তত আমাকে মিথ্যা বলিস না, বেশ বুঝা যাচ্ছে যে কান্না করে করে বুক ভাসিয়েছিস। এখন বল কি হয়েছে।

আইরাত কিছু না বলে মুচকি হেসে নিপাকে জড়িয়ে ধরে। নিপা তার কাধে তরল কিছু একটা অনুভব করে। নিপা বুঝতে পারে যে আইরাত কান্না করছে। রাত্রি ও আইরাতকে এমন করতে আগে কখনোই দেখেনি। তারপর তারা আইরাতকে নিয়ে ঘরে বসিয়ে দেয়। আইরাতের মন অনেক খারাপ দেখে তারা কেউ আর আইরাতকে কিছু জিজ্ঞেস করে না। আইরাতও চুপ হয়ে যায়।

..
..

বিকেলবেলা আইরাত তার বাসা থেকে বের হয়ে পরে। রাত্রি আর নিপা তার সাথে বের হতে চাইলে আইরাত তাদের থামিয়ে দেয় আর বলে তার একা কিছু সময় দরকার, একা থাকতে চায় সে কিছুক্ষন। তারা আইরাতকে আর কিছু বলে না আইরাতের বেপার টা বুঝতে পেরে তাকে একাই যেতে দেয়। জনমানুষ নেই প্রায় শূন্য একটা রাস্তার কিণার দিয়ে হেটে চলেছে আইরাত। আনমনে হয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। মন-মস্তিষ্কে শুধু সেই মর্মান্তিক দিনের ঘটনা টাই বয়ে বেড়াচ্ছে৷ আইরাত লাগাতার হেটেই যাচ্ছে। ঠিক তখনই আব্রাহাম কাজ শেষ করে গাড়ি করে আসছিলো। আইরাতকে চোখে পরে আব্রাহামের। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে খানিক অবাকই হয়। কেননা আইরাত কখনো এমন একা আর এই রাস্তাতে আসে না তবে আজ কেন!! আব্রাহাম তাকিয়েই আছে আইরাতের দিকে, আব্রাহামের গাড়ি আইরাতকে ছাড়িয়ে চলে গেলে আব্রাহাম আবার গাড়ি ঘুরিয়ে আইরাতের সামনে নিয়ে যায় এবং আইরাতকে আটকে দেয়। এভাবে হঠাৎ করেই গাড়ি আইরাতের সামনে ব্রেক কষাতে আইরাত কিছুটা ঘাবড়ে যায়। এতে বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সে। কপাল কুচকে সামনে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম তার সিট বেল খুলে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসছে। আব্রাহাম যট করে গাড়ি থেকে নেমে সোজা আইরাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। আব্রাহাম একদম আইরাতের মুখের সামনে এসে দাড়িয়েছে। আইরাত দুহাত ভাজ করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
আইরাতের এমন বেখেয়ালি ভাবটা আব্রাহামের মোটেও ভালো লাগলো না তাই সে কড়া গলায় বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; তুমি কি পাগল আইরাত?

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; একা কেন এমন জনমানবহীন রাস্তায় বের হয়েছ। বলেছ আমাকে একবার ও!?

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; আর মুখের এই কি হাল করে রেখেছ হ্যাঁ, নাক মুখ এমন ফুলে আছে কেন, কান্না করেছ কেন কি হয়েছে জান তোমার, কেউ কি কিছু বলেছে তোমাকে?
বেবি প্লিজ এমন চুপ করে থেকো না তো আমার খারাপ লাগে প্লিজ কিছু তো বলো। (আইরাতের গালে হাত রেখে)

আইরাত;; কি কি বলবো আমি, আপনি বলার জন্য আর কি অবশেষ রেখেছেন। (হাত সরিয়ে)

আব্রাহাম;; মানে?

আইরাত;; আজ ২৫ জুলাই মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী। আমার আম্মু-পাপার মৃতুদিন। কিছু কি মনে পরে আপনার? ঠিক আজকেও দিনেই আমার বাবা-মাকে খুন করেছিলেন আপনি। আর আমি, আমিই কিনা তার বিয়ে করা বউ।

আইরাতের কথায় আব্রাহাম টোটালি শকড্। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে কপালে স্লাইভ করে আবার বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আইরাত কেন ভুল একটা ধারণা বয়ে বেড়াচ্ছো তুমি,, আর কতো আর কতো টা দিন পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝবে তুমি। প্লিজ এখন তো আমার সম্পর্কে তোমার এই ভুল ধারণা টা পাল্টাও প্লিজ।

আইরাত;; এটা কোন বানোয়াট কাহিনি না। এটা আমার স্ব চোখে দেখা সত্য।

আব্রাহাম;; আইরাত আমরা যা চোখে দেখি তা সবসময় সত্য হয়না। প্লিজ বুঝো।

আইরাত;; যথেষ্ট হয়েছে এবার থামুন। আমি আর যাই হোক নিজের আম্মু-পাপার খুনির সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে পারবো না। আমার পক্ষে আপনাকে মেনে নেওয়া এককথায় অসম্ভব। আমি না ই কখনো আপনাকে ভালোবেসেছিলাম আর না ই কখনো ভালোবাসবো।

আব্রাহাম;; আইরাত… (আইরাতের দিকে এগিয়ে যেতে ধরে)

আইরাত;; ব্যাস (হাত দিয়ে আব্রাহামকে থামিয়ে দিয়ে) আমি মুক্তি চাই, শুনেছেন আপনি আমি মুক্তি চাই,, মুক্তি চাই আমি আপনার কাছ থেকে। আমি আর আপনাকে সহ্য করতে পারছিনা।

এই কথা টা বলতে আইরাতের গলা প্রচুর ধরে আসছিলো কারণ আইরাতও কিন্তু আব্রাহামকে কম ভালোবাসে না কিন্তু এক কালো পর্দা আইরাতের মনে বাসা বেধে রেখেছে। নিজের বুকের ওপর পাথর রেখে এই কথা টা আব্রাহামকে বলতে হয়েছে আইরাতের। আইরাতের ভাষা মতে একজন খুনির সাথে একই ছাদের নিচে কোন মূল্যেই থাকা যায় না। আর যদি সেটা হয় নিজের বাবা মায়ের তাহলে তো কথায় নেই। আব্রাহামকে এটা বলে তাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আইরাত পিছন ঘুড়ে চলে আসে। আব্রাহাম ভাংগা মন নিয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে তার। ওদিকে আইরাতের চোখের পানিও যেন আজ কোন বাধা মানছে না। চোখের পানি মুছতে মুছতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু পথের মধেই একটা গাড়ি এসে আইরাত কে টেনে হিচড়ে গাড়ির ভিতরে তুলে নেয়। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক ছুটাছুটি করেও কোন লাভই হয় না। অবশেষে আইরাতকে গাড়িতে তুলে তারা নিয়ে যায়। আব্রাহাম আকাশ সমান রাগ নিয়ে সেই গাড়ির দিকে দৌড়ে যায়। কিন্তু তার আগেই গাড়ি চলতে শুরু করে। আব্রাহাম রাগে গর্জে ওঠে। আব্রাহামও তার গাড়ি নিয়ে সোজা সেই গাড়ির পিছনে ছুট লাগায়।













🤎🍂চলবে~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে