#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 30
❤️🌹..
..
..
..
..
..
আবির আহমেদ আব্রাহামকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন। অয়ন গাড়ি পার্ক করতে গেছে। বাড়ির ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে সব স্টাফ রা একে একে আব্রাহামের সাথে কথা বলছে। কিন্তু এতে আব্রাহামের কোন সাড়াশব্দ নেই। সেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। যেন কারো কোন কথা তার কান দিয়ে যাচ্ছেই না। হঠাৎ আব্রাহামকে দেখে বাড়ির মালি দৌড়ে আসে।
রহিম(মালি);; আব্রাহাম বাপজান আপনে আসছেন। জানেন এতোদিন আপনার কথা বহুত মনে পরছে। আপনারে ছাড়া এই বাড়ি টা কেমন জানি ফাকা ফাকা লাগে। এই দেহেন আপনে এখন আইসা পরছেন বাড়ি এহন ভরা ভরা লাগতাছে। কিন্তু যদি আইরাত আম্মাজান থাকতো তাইলে আরো…..
আবির আহমেদ;; আব… রহিম তুমি এখন যাও বাগানের কাজ শেষ করে বরং এসো ঠিকআছে।
রহিম;; জে আচ্ছা।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম চলো আমরা বসি। আজ সবকিছু তোমার পছন্দের করা হবে তুমি শুধু বল…
আবির আহমেদ আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলো কিন্তু এর মাঝেই আব্রাহাম সেখান থেকে উঠে সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে আসে। আবির আহমেদ তার যাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে এবং চশমা খুলে চোখের পানি টুকু মুছে ফেলে।
আব্রাহাম তার রুমের সামনে এসে থেমে যায়। পা যেন তার চলছে না। তবুও কাপা কাপা হাতে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। যেতেই সবার আগে চোখে পরে দেয়ালে টাংানো আইরাতের বড় হাসিমাখা ছবির দিকে। আব্রাহাম অসহায় ভাবে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই রুমটা ছিলো তো আব্রাহাম আইরাত দুজনেরই কিন্তু সবজিনিস ছিলো আইরাতের। আইরাত এটা প্রায় অপছন্দ করতো যে রুমে তার এতো জিনিস রাখার কি দরকার স্পেশালি ছবি। তখন আব্রাহাম আইরাতকে কাছে টেনে নিয়ে বলতো আমার সবকিছুতে তুমি থাকবে, শুধু তুমি আর তুমি। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের ছবির দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো ভাবছে হঠাৎ করেই ঠোঁটের কোণে হাসি এসে পড়লো তার। আব্রাহাম ছবিটির দিকে এগিয়ে গেলো,, হাতের নরম স্পর্শে আইরাতের মুখখানা ছুয়ে দিলো। এবার তার চোখ গেলো আইনার ওপর। আইরাত প্রায় ফ্রেশ হয়ে আইনার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিলে তার চুল মুছতো আর আব্রাহাম পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতো। আব্রাহাম পুরো ঘর দেখছে এবং আইরাতকে অনুভব করার চেষ্টা করছে। আর এইসব কিছুই যেন আব্রাহাম কে ভিতরে থেকে দুমড়ে-মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে। আইরাতহীন আব্রাহামের কোন অস্তিত্ব নেই। আব্রাহাম ভাবতেও পারে না যে আইরাত যার নামে নিজের সবকিছু লিখে দিয়েছিলো,, মন হেরে গিয়েছিলো যার কাছে, সে এখন আর তার জীবনে নেই। আব্রাহাম তার হাতে আইরাতের একটা ছবি নিয়ে নিচে বসে পড়লো।
আব্রাহাম;; জাজাজানপাখি, জানো আআমার না খুখুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া। আমি পারি না থাকতে। এই যে এখানে ঠিক এখানে ব্যাথা করে (বুকে আংগুল দেখিয়ে)। তুমি তো আমাকে এখানেই শুট করেছিলে তাই না। ব্যাথা তো তুমি দিয়েছো তাহলে ঠিক ও তুমিই করে দাও না। প্লিজ ফিরে এসো প্লিজ। জানো সবাই সবাই কি বলে তুতুমি নাকি তুমি নাকি আর নেই। কিন্তু আমি জানি মিথ্যা বলে তারা সবাই। তুমি আছো আমার কাছেই আছো। তুমি পারো না, তুমি পারো না আমাকে ছেড়ে যেতে। (আইরাতের ছবি বুকে জড়িয়ে পাগলের মতো কান্না করে)
এই মূহুর্তে আব্রাহামকে যে কেউ দেখলেই চোখের পানি ফেলবে। আইরাতকে হারিয়ে একদম ছোট বাচ্চার মতো আচরণ করছে আব্রাহাম। আইরাতের বিচ্ছেদ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না সে। এর থেকে মৃত্যু যন্ত্রণাও যেন অনেক সুখের। এভাবেই দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায় কিন্তু আব্রাহামের মধ্যে কোন উন্নতিই নেই। হস্পিটাল থেকে আসার পর দুজন নার্সকে রাখা হয় আব্রাহামের দেখা শোনা করার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম তাদের সোজা সাপ্টা মানা করে দেয়। আব্রাহাম এখন আর কান্না করে না আগের মতো। এখন অনেক টাই শক্ত হয়ে গেছে। রোজ অফিসে যায়, কাজ করে। আগের মতো হাসে না, বাপির অয়নের সাথে যে টুকু কথা বলে বাইরের মানুষের সাথে তার একবিন্দু ও বলে না। প্রচুর পরিমাণে রাগি, বদমেজাজি হয়ে গেছে আব্রাহাম। অনেকটা স্ট্রিট ফোরওয়ার্ড। এই সময়ের মাঝে হাজারো মেয়ে আব্রাহামের লাইফে আসার চেষ্টা করেছে কিন্তু আব্রাহাম তাদের এমন ভাবে ট্রিট করেছে যেন তারা কোন ফেক্ট ই না। তার জিনিসপত্রও এখন সবার থেকে আলাদা। ঘরে বেশিরভাগ জিনিসই সাদা-কালো। তার ঘর সম্পূর্ণ পালটে গেছে শুধু আইরাতের ছবি গুলো বাদে। ঘরের এমন একটা কোণা নেই যেখানে আইরাতের ছবি নেই। স্বভাব পালটে গেছে আব্রাহামের। যেই আব্রাহাম কিনা আগে ঝাল দেখলেই চিল্লা চিল্লি করা শুরু করতো সেই আব্রাহাম এখন তার খাবারে ঝাল না দেখলে চিল্লা চিল্লি শুরু করে দেয়। অনেকটা নির্মম, পাথর হ্রদয়ের মতো হয়ে গেছে এখন সে। বাড়ির সবাই এমনকি অফিসের সব স্টাফরা আব্রাহামকে দেখলে ভয়ে কাপাকাপি আরম্ভ করে দেয়। আমেরিকার মাফিয়া হিসেবে আব্রাহামের তেজ এবং জোর এখন আরও কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। খুবই পাশান ভাবে আব্রাহাম এখন মানুষ কে খুন করে। একবার ভাবে পর্যন্ত না। তবে এর মধ্যে আব্রাহাম আইরাতকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আইরাতকে সে খোঁজে নি কিন্তু ফলাফল সেই একই, নিখোঁজ বা মৃত। আবির আহমেদ ছেলের এমন অবস্থা দেখে আর নিরবে চোখের পানি ফেলে। আবির আহমেদ জানে যে আব্রাহামের পক্ষে আইরাতকে ভুলে অন্য কোন মেয়েকে পুনরায় তার জীবনে আনা অসম্ভব। তাই সে আব্রাহামকে কিছু বলেও না এই ভয়ে যে পাগলামি যদি আবার শুরু হয় তাহলে। নিজের চোখের সামনে ছেলের এমন বদলে যাওয়া খুব আঘাত দেয় তাকে। অয়ন ও নিজের ভায়ের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। অয়ন আব্রাহামের সম্পর্ক এখনও ঠিক আগের মতোই রয়েছে,, কিন্তু কোথায় যেন সেই আগের আব্রাহাম টা নেই। আব্রাহামের সব কিছু পালটে গেলেও একটা জিনিস সেই আগের মতোই রয়েছে তা হলো সারারাত আইরাতের ছবি দেখে এবং ছবির সাথে কথা বলে কাটিয়ে দেওয়া। সিগারেট & এলকোহল যেন আব্রাহামের এখন নিত্যদিনের সংগী।
।
।
।
।
।
।
।
৭ মাস পর_____________
..
..
..
..
..
~~🌹
Tere Bin Main Yun Kese Jiya, Kese Jiya Tere Bin.. Tere Bin Main Yun Kese Jiya, Kese Jiya Tere Bin💔…..
Le Kar Yaad Teri, Rate Hain Meri Kati
Le Kar Yaad Teri, Rate Hain Meri Kari🤎🦋
““Mujhse Baatein Teri, Karti Hain Chandni
Tanha Hain Tujh Bin Rate Meri,, Din Mere Din Ke Jese Nehi🌼
““Tanha Badan, Tanha Hain Ruh “ Naam Mere Ankhein Rahe″″ Aaja Mere Abb Rubaru Jina Nehi Bin Tere ~~~
~~Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaaa
Kese Jiya Tere Bin💔
Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaaa
Kese Jiya Tere Bin💔~~
Kaab Se Ankhein Meriiiiiiii
“““`Raho Main Teri Bichie
Kaab Se Ankhein Meriiiiiiii
Raho Main Teri Bichie ““““
Vule Se Hain Kabhi Tu Mill Jaye Kahi
Vule Naaaaaa Mujhse Baatein Teri
Bheegi Hain Har Pal Ankhein Meri 🍂
Kew Saans Loo“ Kew Main Jiyu,,
Jina Bura Sa Lagay
~Kew Hogaya Tu Bewafa Mujhko Bata De Mujhee🌸
~~Tere Bin Main Yun Kese Jiya 🥀,, Kese Jiya Tere Bin 🧡🍂
Tere Bin Main Yun Kese Jiya🍁, Kese Jiya Tere Bin🖤🥀~~~
“~Tere Bin, Tere Bin, Tere Bin Main Yun Kese Jiyaaaaa,, Kese Jiya Tere Bin 💔🌹“`~
.
.
.
.
.
.
.
.
.
গভীররাতে হাতে গিটার নিয়ে, এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে, বুকের ক্ষতগুলো সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিয়ে ছাড়া গলায় গান গাইছে আব্রাহাম। গানের প্রত্যেকটা লাইনে যেন আইরাত কে না পাওয়ার কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে। সবকিছু যেন আইরাতের কথাই বলছে। গান এবং হারানোর বেদনা যেন সম্পূর্ণই আইরাতকে উৎসর্গ করা। মানুষের জীবনে আফসোস থাকেই। পদে পদে মানুষ আফসোস করে। একটা জিনিস না পেলে আমাদের আফসোস থাকে অন্যরকম যে “” পেলাম না, আমি জিনিসটা চেয়েও পেলাম না “”। কিন্তু কোনকিছু যখন আমরা পেয়ে হারিয়ে ফেলি তাতে বুকের ভিতর যা ক্ষত সৃষ্টি হয়,, তা মুখে বলা মুশকিল। তার আফসোস সারাজীবন নিরবে বুকে বয়ে বেড়াতে হয়। পেয়ে হারানোর কষ্ট আকাশ সমান। আর যদি হয় তা নিজের ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে তাহলে তা যেন এক বেচে থেকেও মৃত্যুর সমান। আর তা এখন আব্রাহাম হারে হারে টের পাচ্ছে।
আব্রাহাম উঠে গিয়ে করিডরে দাঁড়ালো হাতে রয়েছে জলন্ত সিগারেট। সব কষ্ট সেই দূর আকাশে ধোঁয়ার সাথে বের হয়ে যাচ্ছে। করিডরে এভাবে বেশকিছুক্ষন থাকার পর আব্রাহাম ভিতরে এসে পড়লো। আবার আইরাতের ছবি হাতে নিলো। বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। আব্রাহামের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এ এমন নতুন কিছু না,, এটা আব্রাহামের প্রতিদিনের কাজ। সেই আইরাতকে হারানোর পর থেকে কোন একরাত সে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারেনি। এভাবেই রোজ নির্ঘুম রাত কেটে যায় আব্রাহামের।
।
।
।
পরেরদিন সকালে🌄……
___________
আব্রাহাম গার্ডেনে জিম করছে। ঘাম তার পুরো শরীর দিয়ে বেয়ে পরছে। চোখ গুলো লাল হয়ে রয়েছে তার, চোয়াল শক্ত, স্থির দৃষ্টি। প্রায় ১ ঘন্টা জিম করার পর সে ওঠে পরে। তার রুমে চলে যায়। সাদা একটা টাওয়াল জড়িয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।দেয়ালে একহাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় আইরাতের স্নিগ্ধ মুখখানা সামনে ভেসে ওঠে আব্রাহামের। আইরাতকে নিয়ে পানির নিচে ভিজতে থাকা, আইরাতের ছোট বাচ্চাদের মতো করে পানি দিয়ে খেলা, আব্রাহাম-আইরাতের পানির নিচে এক সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সবই যেন আব্রাহামের চোখের পর্দায় এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। আব্রাহাম চট করে চোখজোড়া খুলে ফেলে। চোখে-মুখে ভালো করে পানি দিতে থাকে। ঘন্টা খানিক টানা সাওয়ার নেওয়ার পর আব্রাহাম বেড়িয়ে আসে। আইরাতের চলে যাওয়াতে আব্রাহাম A-Z পরিবর্তন হয়ে গেলেও, ভিতর থেকে শত টুকরো হলেও বাইরে থেকে কেউ তাকে দেখে বলবে না যে এই মানুষ টা এতো টা ভংগুর। ভিতরে আব্রাহাম যতাটুকু ভেংঙে পরেছে ঠিক বাইরে থেকে ততটুকুই স্ট্রং হয়ে গিয়েছে। আর তার এটিটিউড তো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। পেন্ট শার্ট, কোট, ওয়াচ, পরে নিচে ড্রোইং রুমে এসে পরে আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; Good morning বাপি
আবির আহমেদ;; Good morning
আব্রাহাম;; অয়ন কোথায় বাপি?
আবির আহমেদ;; ও তো মনে হয় ঘরে এইতো এখনই এসে পরবে তুই বোস,, ব্রেকফাস্ট করে নে।
আব্রাহাম;; হুমমম, তুমিও বোস আর খাওয়ার পর ঔষধ খেয়ে নিবে।
অয়ন;; শুভ সকাল বাপি-দাভাই। (জলদি এসে)
আব্রাহাম;; দেখ অয়ন তুই বেশ ভালো করেই জানিস যে আমি দেরি একদমই পছন্দ করি না,, বার বার একই কাজ কেন করিস (প্রচুর রেগে)
অয়ন;; না মানে দাভাই আসলে সরি। মানে রাতে কাজ করতে করতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম তো তাই সরি দাভাই।
আব্রাহাম;; বাপি আমার খাওয়া শেষ। তুমি ঠিকমতো ঔষধ খেয়ে নিবে আর নিজের খেয়াল রাখবে। আর তুই (অয়নের উদ্দেশ্যে) ১০ মি. টাইম দিচ্ছি খেয়ে দেয়ে সব ফাইল নিয়ে দ্রুত অফিসে আয়।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম বাবা আর কিছু খেয়ে যা, কি খেলি তুই।
আব্রাহাম;; না বাপি। Ba-Bye…
আব্রাহাম চলে গেলে আবির আহমেদ হতাশ ভাবে তাকিয়ে থাকে।
আবির আহমেদ;; আমি না কোন ভাবেই আমার মনকে বুঝাতে পারছি না যে আমার আব্রাহাম এভাবে পালটে গেছে। আব্রাহাম আর আগের মতো নেই।
অয়ন;; বাপি (জড়িয়ে ধরে) তুমি চিন্তা করো না তো। তুমি দেখো দাভাই একদিন ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে। আমাদের আগের আব্রাহাম হয়ে যাবে।
আরে এই দেখো আমি আবার লেট হয়ে গেলাম। বাপি এবার আমি যাই কেমন, নয়তো পরে দেখা যাবে যে আমার অফিস থেকে আমারই ভাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তুমি নিজের খেয়াল রেখো (গালে চুমু দিয়ে) Bye বাপিইইইই।
আবির আহমেদ;; আরে পাগল ছেলে সাবধানে যা।
আব্রাহাম-অয়ন যাওয়ার পর আবির আহমেদ বাড়ির ভিতরে এসে এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
আবির আহমেদ;; অনেক বেশি মিস করি রে আইরাত মা তোকে। কেন যানি না আমার মন বলে তোর কিছুই হয়নি, তুই একদম ঠিক আছিস। যেখানেই থাকিস ফিরে আয় না মা। এসে আমার আব্রাহামের জীবন টাকে আবার আগের মতো গুছিয়ে দিয়ে যা না। আমার অসম্পূর্ণ পরিবারটাকে আবার সম্পূর্ণ করে দে মামনি। খুব প্রয়োজন তোর আব্রাহামের এবং আমার এই আধুরা পরিবারের। ফিরে আয় মামনি (আইরাতের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কেদে)।
আবির আহমেদ কথা গুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে সেখানে থেকে চলে গেলেন।
।
।
।
(সবাই আইরাতকে মৃত বললেও আসলেই কি আইরাত মারা গেছে। আর কখনো কি ফিরে আসবে না তার আব্রাহামের কাছে?!)
।
।
।
।
।
💖চলবে~~~~~
.
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 31
🌿🌿🌿..
..
..
..
..
..
২৯ জানুয়ারি……।
রাত্রি;; এইইইইইইইইইইইইইই….
______________________
রাত্রি;; বেবিজান, দেখ এবার যদি তুই ঘুম থেকে না উঠিস না তাহলে, তাহলে আমি তোকে কি যে করে বসবো আমি নিজেও জানি না। জলদি ওঠ।
__________;; হুমম, হুম হহুমম..
রাত্রি;; কি হুমম হুমম করছিস ওঠ। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো তো
_________;; তো কি হয়ে গেছে!?
রাত্রি;; হয়েছে কি মানে তুই জানিস না কি হয়েছে। বিয়ের এতো কাজ পরে আছে আর তুই কিনা এখনো পরে পরে ঘুমোচ্ছিস। বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে, সেখানের পেন্ডেলে কি আর কোন কালারের ফুল বসাবে তা সিলেক্ট করতে হবে, পুরো বাড়ি সাজানো বাকি এখনো কত্তো কাজ আর তুই কিনা বলছিস যে কি হয়ে গেছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি ওঠ নয়তো বকা খেতে হবে।
নিপা;; কিরে কাকের দল এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো রে।
রাত্রি;; আমি কি আর সাধে চিল্লাই,, দেখ কতো দেরি হয়ে গেছে আর এই মেডাম কিনা এখনো ঘুমোচ্ছে। হাতে আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। এর মধ্যে যেতে হবে তো।
নিপা;; আচ্ছা তুই যা, আমি দেখছি ওকে।
রাত্রি;; হ্যাঁ দেখ বাবা আমি আর পারিনা।
রাত্রি রেগে মেগে চলে গেলে নিপা বিছানার পাশে গিয়ে বসলো।
নিপা;; কিউটিপাই, (মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে)
_________;; হুমমম, দেখ প্লিজ এভাবে চিল্লাস না আর মাত্র পাচঁ টা মিনিট ঘুমোতে দে।
নিপা;; দেখ হাতে বেশি সময় নেই,, আমাদের রেডি হয়ে সেখানে যেতে হবে আবার সেখানে কতো কাজ। বুঝতে পারছিস তো তাড়াতাড়ি উঠে পর।
_________;; আরেএএএএএ,, ওঠেছি ওঠেছি। এই নে ওঠে পরেছি। বুঝি না তোদের ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাংগে কিভাবে আমি তো বেলা এগারোটার আগে ওঠতেই পারি না।
রাত্রি;; হ্যাঁ, কারণ আপনি নবাব সীরাজউদ্দৌলার বংশধর। (ঘরে এসে)
_________;; চুপ থাক বান্দরনী (কুশন দিয়ে রাত্রি কে ঢিল দিয়ে)
নিপা;; উফফ তোরা থাম তো,, কিউটিপাই তুই প্লিজ ওঠে রেডি হয়ে নে।
রাত্রি;; ভালো লাগছে না, টিভি অন কর তো।
।
।
।
।
।
।
রাত্রি টিভি অন করে কাজ করতে লাগলো। কিন্তু আমাদের ঘুমকুমারী এখনো বিছানাতেই বসে আছে। আর এই ঘুমকুমারী আর কেউ না আমাদের আইরাত। অনেক যুদ্ধ করে, বিপদ-আপদ পার করে আইরাত এই অবস্থায় এসেছে। অনেক খড় কাঠ পোড়াতে হয়েছে তাকে ঠিক হওয়ার জন্য। কিন্তু বাইরে ঠিক থাকেলেও কোথাও না কোথাও সেই ক্ষত দাগ টা রয়েই গিয়েছে মনের গহীনে। আইরাত তো সেদিনই মরে গিয়েছিলো যেদিন সে তার নিজ হাতে আব্রাহাম কে শুট করেছিলো। এখন শুধু কোনরকম দিন পার করে যাচ্ছে সে। বেচেঁ থাকাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল আইরাত কিন্তু এই রাত্রি & নিলা নামক দুই মেয়ে,, এরা আবার আইরাতকে বাচঁতে শিখিয়ে দিয়েছে। সব কিছু হারিয়ে এখন আইরাতের একমাত্র বেচেঁ থাকার সম্বল এই রাত্রি & নিপা।
।
।
।
Flashback🍃~~~
.
.
.
.
সেদিন আইরাতকে ট্রাক অনেক জোড়ে একটা ধাক্কা দেয় যার ফলে সে ছিটকে গিয়ে বেশ খানিক দূরে পরে। রক্তাক্ত পুরো রাস্তা। আইরাত মাঝ রাস্তায় পরে থাকে। কিন্তু বেশখানিক সময় পর একটা গাড়ি আসে। আইরাতকে এভাবে রাস্তায় পরে থাকতে দেখে তারা তাদের গাড়ি থামিয়ে দেয়। সেই গাড়ি তে আর কেউ না এই রাত্রি আর নিপা ছিলো। তারা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে এবং দেখে যে আইরাত মাঝ রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে। তারা আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাই না। অবশেষে তারা অন্য কোন উপায়-উপান্তর না পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আইরাতকে ধরে গাড়িতে তুলে নেয় এবং হস্পিটালের দিকে ছুট লাগায়। প্রায় ১৫ মি. পর তারা হস্পিটালে পৌঁছে যায়। ইমারজেন্সি ডাক্তার কে ডাকা হলে ডাক্তার জলদি এসে পরে। আইরাতের অবস্থা অনেক খারাপ দেখে দ্রুত তাকে ICU তে সিফর্ট করা হয়। রাত্রি এবং নিপা বাইরে খুব চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অজানা-অচেনা এক মেয়েকে এভাবে মাঝ রাস্তায় আধামরা ভাবে কি করে ছেড়ে দেবে তারা। আর মানুষ তো মানুষের জন্যই,, বিপদে মানুষ কাজে আসবে না তো আর কখন আসবে। আসলে এই রাত্রি এবং নিপা আপন খালাতো বোন হয়। কিন্তু তাদের সাথে তাদের পরিবারের তেমন একটা ভালো সম্পর্ক নেই,, যার ফলে তারা ঠিক করে যে পরিবার থেকে বাইরে চলে আসবে এবং নিজেরা নিজেদের মতো করে থাকবে। রাত্রি-নিপা পেশাতে “Wedding Designer”।। তারা বিভিন্ন বাড়িতে বিয়ের পুরো ডিজাইন এরেঞ্জমেন্ট করে। একটা ফ্লেট নিয়ে তারা দুজনেই থাকে। তবে রাত্রি একটু দুষ্ট এবং চঞ্চল প্রকৃতির আর নিপা একদম শান্ত-ভদ্র। দুজনেই অনেক ভালো। তার জন্যই তো আইরাতকে আজ এভাবে পরে থাকতে দেখে তারা আইরাতের জান বাচাঁলো নয়তো আজকালকার লোকজন তো শুধু মাত্র তামাশা দেখে।
বেশ সময় পর ডাক্তার ICU রুম থেকে বের হলো। রাত্রি নিপা তড়িঘড়ি করে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার কে আইরাতের কথা জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার বলেন..
” উনার অবস্থা অনেক বেশিই সেন্সিটিভ। সারা শরীরে অনেক জখম রয়েছে, রক্তক্ষরণ ও অনেক হয়েছে, দেখেই বুঝা যায় যে তার অনেক বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে”।
এতে রাত্রি এবং নিপা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ডাক্তার তাদের জিজ্ঞেস করে “আইরাত আপনাদের কে হয়?!”
রাত্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিপা বলে ওঠে “বোন হয় আমাদের”।
ডাক্তার আর কিছু না বলে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। রাত্রি এবং নিপা বেশ চিন্তার সহিত বসে থাকে। আইরাতকে হস্পিটালে নেওয়ার পর দুইদিন পর্যন্ত তার কোন জ্ঞান ছিলো না। অজ্ঞান অবস্থা তে পরে ছিলো হস্পিটালের বেডে। একদিন রাত্রি-নিপা দুজনেই আইরাতকে হস্পিটালে দেখতে গেলে দেখে যে আইরাতের জ্ঞান ফিরে এসেছে। এতে রাত্রি-নিপা খুশি হলেও কিছুটা ভরকে যায় এই ভেবে যে যদি আইরাত তাদের চিনতে অস্বীকার করে দেয় এবং নিজেকে তাদের বোন বলে সীকৃতি দিতে মানা করে দেয় তাহলে। তারা তাড়াতাড়ি করে আইরাতের রুমে যায় গিয়ে দেখে আইরাত বেডে চুপচাপ বসে আছে জানালার দিকে মুখ করে। হাতে তার সুই পুশ করা এবং মাথায় বেন্ডেজ। ডাক্তার আইরাতের সাথে তাদের দেখা করতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তখন রাত্রি-নিপা আইরাতের পাশে বসে।
রাত্রি;; হাই, আমি রাত্রি আর ও হচ্ছে আমার বোন নিপা। তোমাকে আমরা রাস্তার মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে পাই। তারপর এখানে নিয়ে আসি।
নিপা;; নাম কি তোমার?
________________________
রাত্রি;; দেখো তুমি একদম ভয় পেয় না। তুমি এখানে সেফ আছো। তোমার নাম কি বলো!
আইরাত;; আআআমার নানাম, আই আই…..
নিপা;; হুমম হুমম বলো
আইরাত;; আমার নাম, আমার নাম নুজাইফা বিনতে আইরাত।
রাত্রি;; বাহহ অনেক মিষ্টি নাম তো ঠিক তোমার মতো।
নিপা;; আচ্ছা এবার তুমি বলো তো যে তোমার হয়েছিলো টা কি। তুমি ওভাবে রাস্তায় পরে ছিলে কেন। আর তোমার পরিবার-পরিজন তারা কোথায়?
আইরাত;; আম..আমার কেউ নেনেই।
আইরাতের কথায় রাত্রির চোখ দিয়ে একফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে।
নিপা;; তুমি আগে থাকতে কোথায়?
নিপার প্রশ্নে আইরাত কিছু বলে না শুধু চুপ করে বসে থাকে। নিপা তা বুঝতে পেরে প্রশ্ন করা বন্ধ করে দেয়।
রাত্রি;; জানো আইরাত আমরাও না ঠিক তোমার মতো,, আমাদের ও সবকিছু থেকেও নেই। আচ্ছা আইরাত যেহেতু তোমার কেউ নেই তাহলে আজ থেকে বরং তুমি আমাদের সাথেই থাকবে কেমন!!
নিপা;; Best Idea! এইটাই সব থেকে ভালো হবে। আমরা দুজন থেকে তিনজনে পরিণত হবো। তিন বোন হয়ে থাকবো আজ থেকে। কি আইরাত থাকবে তো আমাদের সাথে?!
আইরাত;; না মানে,, মানে আসলে আমি কি কিভাবে আপনাদের সাথে…..
রাত্রি;; আহা ওসব কিছু তুমি চিন্তা করো না তো। তুমি এখন অনেক অসুস্থ রেস্ট নাও। আর আমাদের সাথেই থাকবে তুমি।
নিপা;; আর এই কোন আপনি টাপনি চলবে না,, ডিরেক্ট তুই করে বলতে হবে কিন্তু।
রাত্রি-নিপার কথা তে আইরাত হেসে দেয়। এবং তাদের সাথেই থাকতে রাজি হয়ে যায়।
রাত্রি;; এইতো হেসেছে। আর শোন আজ থেকে আমি তোকে বেবিজান বলে ডাকবো কেমন। নিপা তুই কি বলে ডাকবি তা তুই ভেবে নিস।
নিপা;; হয়েছে তোর এবার থাম। তোরা থাক আমি একটু ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি ওকে….
রাত্রি;; আচ্ছা যা।
রাত্রি আইরাতের পাশে বসে তার সাথে গল্প করতে লেগে যায়,, এবং চেষ্টা করে আইরাতকে হাসানোর জন্য। আর নিপা চলে যায় ডাক্তারের কাছে।
নিপা;; ডাক্তার, আমরা আর কতোদিন পর আইরাতকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবো?
ডাক্তার;; আজ নয় তবে আপনারা উনাকে কাল বা পরশুর মধ্যে নিয়ে যেতে পারেন।
নিপা;; জ্বি আচ্ছা। আর কোন ফর্মালিটিস্ থাকলে আপনি আমায় দিয়ে দিন।
ডাক্তার;; জ্বি,, আপনি এখানে সাইন করে দিন।
নিপা;; Sure….
নিপা ডাক্তারের সাথে কথা বলে এবং সবকিছু দেখে শুনে এসে পরে। দুদিন পর তারা আইরাতকে হস্পিটাল থেকে নিয়ে এসে পরে। আইরাতকে নিয়ে তারা তাদের ফ্লেটে ওঠে। রাত্রি আর নিপা দিনরাত এক করে আইরাতের দেখা শোনা করে। এতে আইরাতের প্রায় মন খারাপ হয় যে কেন একজন পরের জন্য তারা এতোকিছু করছে। তখন নিপা ধমক দিয়ে আইরাতকে বলে যে “নিজের বোনের দেখভাল করলে বুঝি পরের দেখভাল করা হয়”। তখন আইরাত কিছু বলে না শুধু তাকিয়ে থাকে আর ভাবে যে দুনিয়া টা যত খারাপ মানুষে ভরা ঠিক তেমনই ভালো মানুষেও ভরা। দুইটার সংমিশ্রণে আজকার এই দুনিয়া। রাত্রি আর নিপা তো চলে যায় বাইরে কাজে বাসায় সারাদিন একা একা থাকতে হয় আইরাতকে। সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে এবং আগের সব স্মৃতি মনে করে কান্নায় বুক ভাসায়। কিন্তু আগের থেকে আইরাতের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন কিছুটা হলেও হাসে, কথা বলে। রাত্রি এবং নিপা প্রাণপন চেষ্টা করে আইরাত কে সবসময় হাসি-খুশি রাখার। কিন্তু যখন তারা বাসা থেকে চলে যায় তখন তো আইরাত একদম একা পরে যায়। নিপা আইরাতের এই কথা চিন্তা করে একদিন বলে ওঠে….
.
.
.
.
.
নিপা;; আইরু,
আইরাত;; হুমমম
নিপা;; তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে!
আইরাত;; সত্যি (কিছুটা খুশি হয়ে)
নিপা;; না মিথ্যে
আইরাত;; ☹️
রাত্রি;; কেনো জ্বালাচ্ছিস মেয়েটাকে বলে দে না..
নিপা;; হাহাহা আচ্ছা ঠিকআছে বলছি বলছি,,, আইরু কাল থেকে তুই ও আমাদের সাথে কাজে যাচ্ছিস। I mean weddings planer…
আইরাত;; Really?!
রাত্রি;; হ্যাঁ, আসলে আমাদের যে ওনার রয়েছে তিনি বলেছেন আরো একজনকে নিতে। তো আমি আর নিপা ভাবলাম যে তোকে নেই কারণ সারাদিন বাসায় বসে বসে তো বোর ই হোস তার থেকে আমাদের সাথে চল ভালো লাগবে আর ধীরে ধীরে কাজ ও শিখে যাবি। যাবি তো?
আইরাত আর কিছু না বলে সোজা দৌড়ে এসে রাত্রি এবং নিপা কে জড়িয়ে ধরে।
আইরাত;; আমি, মানে আমি কি যে বলবো আমার জানা নেই। Thank you yaar, thank you so much.. তোদের দুজনকেই অনেক অনেক Thank you আর এত্তো গুলা ভালোবাসা।
নিপা;; আরে ছাড় এবার দম বন্ধ হয়ে গেলো তো।
রাত্রি;; হ্যাঁ কাল থেকে সকাল সকাল ওঠে পরবে ঠিকআছে এভাবে বসে বসে খাওয়া আর চলবে না। (ভেংচি কেটে)
আইরাত;; কিইইই দাঁড়া তবে রে…..
এই বলেই আইরাত বালিশ নিয়ে রাত্রির পিছনে ছুটতে থাকলো। আর নিপা তাদের দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি। এভাবেই আইরাত তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে লাগে। সেই আগের আইরাতে রুপান্তরিত হয়। অনেক চঞ্চল, হাসি খুশি। শুধু মাঝে মাঝে হুট করেই আব্রাহামের কথা এবং পুরনো স্মৃতি মনে পরলে বুকের পাশটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তখন আর চোখের পানি কোন বাধা মানে না। কিন্ত রাত্রি-নিপা আছে না, তারা থাকতে কখনোই আইরাত চোখের জল ফেলে না। ইন ফেক্ট কোন কারণে যদি রাত্রি বা নিপার মন খারাপ থাকে তাহলে উল্টো আইরাত তাদের মন ভালো করে দেয়। এভাবেই চলছে আইরাতের জীবন। আজ প্রায় এক বছরের বেশি হবে আইরাত রাত্রি-নিপার সাথে থাকে।
।
।
।
।
Flashback শেষ ~~
.
.
.
.
.
আইরাত বসে বসে আগের দিনগুলোর কথাই ভাবছিলো কিন্তু সেই সময় রাত্রি আসে, এসে দেখে যে আইরাত এখনো পাগলির মতো হয়ে বিছানাতে বসে আছে। তা দেখে রাত্রি চিল্লিয়ে ওঠে…
রাত্রি;; আইরুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউ,, তুই কি উঠবি নাকি আমার হাতের মার খাবি (রেগে)
আইরাত;; (রাত্রি চিল্লানোতে আইরাত চমকে ওঠে) আরে মেরি মা,, যাচ্ছি যাচ্ছি এভাবে সকাল থেকে ষাঁড়ের মতো করে চিল্লাচ্ছিস কেন। গলার এতো জোর কেন তোর।
রাত্রি;; 😡😤
আইরাত বিছানা থেকে ওঠে বিছানা গোছাতে লাগে। গোছ-গাছ শেষ হলে আইরাত ওয়াসরুমের দিকে এগোতে ধরলেই টিভি তে বড়ো বড়ো করে ব্রেকিং নিউজ ওঠে আসে।
“” নিজের কোম্পানি ইউরোপ & রাশিয়া তে লঞ্চ করায় এবং নিজের জন্মদিন উপলক্ষে এক বড়ো ভিআইপি পার্টি থ্রো করেন টপ বিজনেসম্যাম মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী””।।
পুরো খবর টা কানের বাইরে দিয়ে গেলেও “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী” এই নামটি যেন আইরাতের কান ভেদ করে গিয়ে লাগলো। আইরাত জলদি ঘাড় ঘুড়িয়ে টিভির স্ক্রিনে তাকায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে আব্রাহাম বসে আছে। ঠিক আগের মতোই রয়েছে সে। সেই তীক্ষ্ণ চোখজোড়া, অগোছালো হয়েও গোছালো চুল, চাপদাড়ি। সেই আগের আব্রাহাম। আইরাত দ্রুত গিয়ে আজকের ক্যালেন্ডার দেখে। চোখের সামনে জলজল করে ওঠে আজকের তারিখ টা। আজ “২৯ জানুয়ারি” আব্রাহামের জন্মদিন। আইরাত আবার টিভির দিকে তাকায়,, চোখের কোণে তার বিন্দু পানি জমেছে। আজ কে আব্রাহামের জন্মদিন তা আইরাতের একদমই মনে নেই। আর মনে না থাকার ই কথা। কেননা যাকে সে নিজের জীবন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলেছে তার অন্য কোন চিহ্ন বা স্মৃতি নিজের মাথায় বা মনে বয়ে বেড়ানো হাস্যকর। আইরাত এক দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলে পিছন থেকে রাত্রি এসে বলে ওঠে…
রাত্রি;; ইনি হচ্ছেন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে টপ বিজনেসম্যাম। এন্ড সব মেয়েদের ক্রাশ।
আইরাত;; হুমম (লুকিয়ে চোখের পানি মুছে)
রাত্রি;; এভাবে তাকিয়ে কি দেখসিস নিজেও ক্রাশ খেয়েছিস তাই না, তাই না বল?!
আইরাত;; বাজে বকিস না তো। চেহারা দেখেছিস ওর। কালো বাদরের মতো লাগে। এর ওপর কে ক্রাশ খাবে। আর আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আসছে ক্রাশ খাওয়াইতে, সর এখান থেকে (ঝাড়ি দিয়ে)
রাত্রি;; তোর যে চয়েজ খারাপ তা এতো দিনে শিওর হলাম। দেখেছিস উনাকে আয় হায় কি কিউট, হ্যান্ডসাম, মে তো মার গায়ি।
আইরাত;; হা তো মার যা
রাত্রি;; চুপ কর। আমার ড্রিমবয় এই আব্রাহাম,, যদি একবার একটাবার উনি আমাকে প্রপোজ করতেন আমি তো প্রপোজ ও ঠিক ভাবে করতে দিতাম না আগেই রাজি হয়ে যেতাম।
আইরাত;; ইশশশশশ আল্লাহ রুচিবোধ এতো বাজে তোর। যাহ চোখের সামনে থেকে সর।
রাত্রি;; আমি না তুই যা ওয়াসরুমে,, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
আইরাত;; যাচ্ছি।
।
।
।
আইরাত ওয়াসরুমে গিয়ে কিছুটা জোড়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর নিচে বসে পরে। আইরাত ভেবে ছিলো আব্রাহাম আর নেই যার ফলে সে “খুনী” নামক বোঝা টা নিজের অজান্তেই নিজের মনে বয়ে বেড়াচ্ছিলো। কিন্তু না তার ধারনা ভুল। আব্রাহাম বেচে আছে। ঠিক আছে, আগের মতোই রয়েছে সে। আইরাত এগুলো ভাবছে আর একা একাই হেসে যাচ্ছে। কিন্তু তার সামনে আবার ও আব্রাহামের সেই হিংস্র মুখ, তার শার্টে লেগে থাকা রক্ত এবং তার বাবা-মার পাশে বসে থেকে হাতে ছুরির নির্মম দৃশ্য ভেসে ওঠে। সাথে সাথে আইরাতের মুখের হাসি খানা উড়ে যায়। আইরাত উঠে দাঁড়াতে লাগলে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আবার ঠিকঠাক মতো দাঁড়িয়ে সাওয়ারের নিচে চলে যায়। সাওয়ার অন করতেই ঠান্ডা পানি সব আইরাতের ওপর পরে। আইরাত তার মাথা ওপরে তোলে মুখে পানির ফোটা ফালাতে লাগে। এতে যেন আইরাতের চোখের পানি সব ধুয়ে যাচ্ছে। বুকের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে আসছে। আব্রাহাম কে আজ এতোদিন পর দেখার ফলে সব ক্ষত-ব্যাথা গুলো যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে তার।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
🤎🍂চলবে~~~~~