EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-২০( শেষ পর্ব)

0
3418

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ২০শ ও অন্তিম

হে আল্লাহ আপনি আমার সামিয়া কে সুস্থ করে দিন।

শ্বশুর মশাই গাড়ি দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করতেছে। তবুও মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে যাচ্ছে। পথ যেন শেষই হচ্ছে না। সামিয়ার অবস্থাও ক্রমশই খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালো। সামিয়া কে কোলে নিয়ে ভিতরে দৌড় দিলাম।

ডাক্তার সামিয়াকে দেখার পর বললোঃ সরি স্যার। ম্যামের অবস্থা এখন বেশ খারাপ। ম্যামের টিউমার টা লাস্ট স্টেপে চলে এসেছে। এখন আমরা কিছু করতে পারবো না। এছাড়া আমাদের এখানে বর্তমান ভালো ডাক্তার নেই। আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকাতে নিয়ে যান। সেখানে ভালো ভালো ডাক্তার আছে। আমি তাদেরকে মেডিকেল টিম গঠন করার জন্য বলতেছি।

সামিয়া কে নিয়ে এয়ারপোর্টে আসলাম। ঐশীর নানু এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তাড়াতাড়ি ফ্লাইটের ব্যবস্থা হয়ে গেলো।আমি, ঐশী আর ঐশীর নানু সামিয়া কে নিয়ে রাওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশে।

ঢাকাতে আসার পর সামিয়াকে মেডিকেলে নিয়ে গেলাম। দুজন টা ডাক্তার সামিয়া কে বললোঃ ওহহ মাই গড! রুগি তো সিরিয়াস।

আমি কান্না করতে করতে ডাক্তার কে বললামঃ ডাক্তার আমার ওয়াইফ সুস্থ হবে তো?

ডাক্তার আমার কাঁধে হাত রেখে বললোঃ প্লিজ আপনি শান্ত হন। আমরা বোর্ড গঠন করেছি। আমরা দেখতেছি। আপনি আল্লাহকে ডাকুন।

ডাক্তাররা সামিয়া কে ওটিতে নিয়ে গেল। আমি আর আমার মেয়ে ওটির বাইরে বসে থেকে কান্না করতেছি। ঐশী শুধু মামনি মামনি বলে কান্না করতেছে।

ঐশী আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ বাবাই আমাল মামনিল তি হয়েতে? আমাল মামনিতে ঐ লোত দুলো তোথায় নিয়ে দেলো?(কান্না করতে করতে)

ঐশীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ আম্মু তোমার মামনি কে ঐ লোক গুলো ভালো করার জন্য নিয়ে গিয়েছে।

ঐশী খুশি হয়ে বললোঃ সততি আমাল মামনি ভালো হয়ে দাবে।

আমিঃ হুমম আম্মু। তুমি কান্না করো না ঠিক আছে।

ঐশীঃ থিক আতে বাবাই। বাবাই মামনি ভালো হয়ে দেলে আমলা আবাল তপিং কলতে দাবো থিত আতে।

আমি ঐশীকে বুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগলাম। এতো ছোট্ট বাচ্চার চিন্তা ধারা কতটা গভীর। তার মামনি ভালো হয়ে গেলে তাকে নিয়ে শপিং করতে যাবে। কিন্তু জানিনা সে তার মায়ের মুখে ঐশী ডাক টা আর শুনতে পারবে কি না? জানিনা আর কোনোদিন সে মায়ের আদর, যত্ন ভালোবাসা পাবে কি না? জানিনা আমিও আমার প্রিয়সীর সাথে এই রঙিন দুনিয়ার রং তামাশায় মেতে উঠতে পারবো কিনা? এ গুলো ভাবতেছি আর ঐশীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছি।

ঐশী আমাকে কাঁদতে দেখে বললোঃ বাবাই তুমি তান্না কলতেথো তেন? আমালে তপিং কলতে নিয়ে দাবে না?(চোখের পানি মুছে দিতে দিতে)

আমি ঐশীর হাতে চুমু দিয়ে বললামঃ নিয়ে যাবো আম্মু। তোমার মামনি সুস্থ হলে তুমি, আমি আর তোমার মামনি একসাথে যাবো।

ঐশীর সাথে কথা বলতেই ঐশীর নানু এসে বললোঃ সাহিদ তুমি মনে হয় সকাল থেকে কিছুই খাওনি। এগুলো খেয়ে নাও।( আপেল, বিস্কিট,কেক আরো কিছু এগিয়ে দিয়ে।)

আমিঃ না বাবা আমি খাবো না।

ঐশীর নানুঃ একটু খাও নইলে শরীর খারাপ করবে।

ঐশীর নানুর জোরাজুরিতে একটু খেলাম। খাওয়ার রুচি ছিলো না।আমি না খেলে আবার আমার মেয়ে খাবে না। তাকে খাওয়ানোর জন্য একটু খেলাম। আর হ্যাঁ সামিয়ার আব্বু আম্মু আর আমার আব্বু আম্মুকে সামিয়ার ব্যাপারে কিছুই বলিনি। যদি সামিয়ার অসুস্থতার কথা সামিয়ার আম্মুকে বলি, তাহলে সামিয়ার আম্মু আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।

প্রায় একঘন্টা পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে এসে বললেনঃ স্যার অপারেশন সাকসেসফুল। কিন্তু,,,

আমিঃ কিন্তু কি ডাক্তার?(উত্তেজিত হয়ে)

ডাক্তারঃ ১২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে রোগি কামাই চলে যেতে পারে। টিউমার টা লাস্ট স্টেপে চলে গিয়েছিলো। যারফলে, অপারেশন করার সময় মস্তিষ্কে কিছুটা চাপ পড়ে। এখন সব কিছু মহান আল্লাহর হাতে। আপনি তাঁর কাছে দোয়া করুন।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। ঐশীকে ওর নানু বাইরে ঘুরতে নিয়ে গেছে। সামিয়ার কথা গুলো আমার মনে পড়তেছে। সে আমাকে এখনো আগের মতই ভালোবাসে। কিন্তু তার অনিশ্চিত জীবনে আমাকে জড়াতে চায়নি বলে আমাকে ইগনোর করে গেছে। আমার ভালোবাসার জন্য সে আমার জায়গায় কাউকে বসাতে পারেনি। তাকে ছাড়া আমি কি ভাবে জীবনের বাকিটা সময় কাটাবো? হে আল্লাহ আপনি শুধু আমার সামিয়া ক্ষমা করে দেন।

দীর্ঘ ১২ ঘন্টা ওটির দরজার পাশে বসে থেকে কাটিয়ে দিলাম। এখনো সামিয়ার জ্ঞান ফিরেনি। মনের মধ্যে ভয় হচ্ছে, সামিয়া কে কি আর পাবো না।

মাথা হেলে কান্না করতেছি। পাশেই ঐশী আর তার নানু বসে আছে। নার্স ওটি থেকে বের হয়ে এসে বললোঃ স্যার রোগির জ্ঞান ফিরেছে।

নার্সের কথাটা যেন আমি নিজের কানেও বিশ্বাস করতে পারতেছি না। দৌড়ে সামিয়ার কাছে গেলাম। দেখি আমার সামিয়ার বেডে শুয়ে আছে। আমাকে দেখার পর হাত দিয়ে কাছে ডাকতেছে। আমি সামিয়ার কাছে যায়ে সামিয়ার পাশে বসে সামিয়ার হাত ধরে কান্না করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে যে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কোনো হারানো রত্নকে ফিরিয়ে ফেয়েছি।

সামিয়া ওর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললোঃ এ এই তুমি কান্না করতেছো কেন? জানো না তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না।

আমীন সামিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললামঃ কলিজা তোমাকে ছাড়া আমি কী করে থাকবো বলো? মনে হচ্ছিল আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। কলিজা তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।

সামিয়া আমার মাথার পিছনে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললোঃ আমিও তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। জানো, আমাকে অপারেশন করানোর আগে আমি শুধু তোমাকে দেখতে চাওয়ার কথাই বলেছিলাম। কিন্তু শয়তান ডাক্তারেরা আমার কথা শুনে নি আচ্ছা আমাদের মেয়ে কোথায়?

আমিঃ মেয়ে আর মেয়ের নানু বাইরে বসে আছে। তুমি থাকো আমি নিয়ে আসতেছি।

বাইরে থেকে ঐশীকে নিয়ে ভিতরে আসলাম। সাথে ঐশীর নানুও আছে। ঐশী তার মামনিকে দেখে জড়িয়ে ধরতে চাইলে আমি আটকিয়ে বললামঃ আম্মু তোমার মামনি এখন অসুস্থ মা । এখন জড়িয়ে ধরা হবে না, কোলে উঠা হবে না বুঝেছো।

ঐশীঃ হ্যাঁ বাবাই বুদেথি।

ঐশী ওর মায়ের মাথার কাছে বসে পড়লো। সামিয়া ঐশীকে তার কাছে টেনে নিয়ে বললোঃ আম্মু তুমি সকালে খেয়েছো?

ঐশীঃ হ্যাঁ মামনি বাবাইয়েল সাতে খেয়েথি। দানো মামনি বাবাই তোমাল দন্য অনেত তান্না তলেথে।

সামিয়া ঐশীর কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ তাই।

ঐশীঃ হ্যাঁ। আর বলেথে তোমাল মামনি ভালো হয়ে দেলে আমালে আল তোমালে নিয়ে তপিং কলতে দাবে।

মেয়ের কথা শুনে মেয়ের মা ঠিক করে হেসে দিলো। অপরদিকে ঐশীর নানুও হেসে দিলো। সামিয়া ঐশীর নানুর হাসির শব্দ শুনে মাথা ঘুরে ঐশীর নানু কে দেখতে পেয়ে বললোঃ বাবা কেমন আছো?(আস্তে আস্তে)

ঐশীর নানু সামিয়ার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ তোকে এই অবস্থায় রেখে কেমন করে ভালো থাকি বল? তোর এখন কেমন লাগতেছে?

সামিয়াঃ হুমম ভালো।

নার্স রুমে ঢুকে সামিয়ার কথা শুনতে পেয়ে বললোঃ ম্যাম আপনি এখন বেশি কথা বলবেন না। কথা বললে আমার মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পড়ে পরবর্তীতে প্রবলেম হতে পারে।

সামিয়াঃ ঠিক আছে।

এরপরে সামিয়া কে কেবিনে শিফট্ করা হলো। ঐশীর নানুর অফিসে একটা জরুরি মিটিং থাকায় সে সিলেটে চলে গেলো। যদিও তিনি সামিয়া রেখে যেতে চাইছিলো না। আমিও জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছি। কেননা, তার অফিস আছে ‌।আর অফিস সামলানোর তিনি ছাড়া কেউ নেই। আমি আর ঐশী সামিয়ার কাছে আছি।

এক সপ্তা হাসপাতালে রাখতে হবে। রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে স্যুপ নিয়ে এসে সামিয়াকে খাইয়ে দিলাম। এরপরে আমার আর আমার মেয়ের জন্য নিয়ে আসা বিরিয়ানি খেলাম। আমার মেয়েটা আবার বিরিয়ানি পাগলি। তার জন্যই মূলত নিয়ে আসা। যদিও আমাকে বিরিয়ানি ভালো লাগে।

রাতে ডিনার শেষ করে বেডের একপাশে ঐশীকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কারণ,সে তার মামনি কে ছাড়া শুবে না। সামিয়ার মাথায় কাছে বসে সামিয়ার মাথাটা আমার কোলে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম। সামিয়ার আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ তুমি ঘুমাবে না? সারাদিন অনেক কষ্ট করেছো।

আমিঃ আমার এসব কষ্ট কিছুই মনে হয় নি। তোমাকে ফিরিয়ে পেয়েছি এটাই অনেক।

সামিয়াঃ তাই। তুমিও আমার পাশে শুয়ে পড়ো।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

আমিঃ আমি এভাবেই ঠিক আছি। আর এখন আমার আদরের প্রয়োজন নেই। সুস্থ হও তার পরে নাহয় আমিই আদর আদায় করে নিবো।(চোখ টিপি দিয়ে)

সামিয়া আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললোঃ হুমম তোমার তো শুধু এসবই। একটুও চেঞ্জ হওনি তো দেখতেছি।

আমিঃ পুরোটাই চেঞ্জ হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়ে আবার আগের মতোই হয়েছি।

সামিয়াঃ তাই।

আমিঃ হুমম। এবার ঘুমিয়ে পড়ো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।

সামিয়াঃ ঠিক আছে।

সামিয়া কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমিও সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম। বেডে তিনজন শুয়ে থাকা মুশকিল। তারপরেও সামিয়া অপারেশনের রুগি।

কেটে গেল এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহের প্রতিটা দিনের প্রতিটা ক্ষণ আমি সামিয়ার সেবা করেছি। তুলে খাওয়ানো, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ফ্রেশ করে দেওয়া, বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া সব কিছু আমি নিজ হাতেই করেছি। তাকে সেবা করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তার ভালোবাসার কাছে আমার এই সেবা কিছুই নয়। কতটা ভালোবাসলে, সত্যটা জানার পরেও ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে রাখতে তার কথা শুনে পরিবার পরিজনকে ছেড়ে চলে যেতে পারে সেটা সামিয়া কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

ঐশীকে ফ্রেশ করে দেওয়া, খাইয়ে দেওয়া, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া আমিই করেছি। ঐশীর নানু নার্স রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি নিষেধ করে দেই। ঐশীর নানু তার কাজের জন্য সিলেটে যেতেন কাজ শেষ করে আবার আসতেন। সামিয়া এখন আল্লাহর রহমতে মোটামুটি সুস্থ। হাঁটতে পারবে,নিজ হাতে খেতে পারবে আর কোনো সমস্যা হবে না। আগামি কাল ফ্লাইটে সিলেট যাবো।

হাসপাতালের বিল পেমেন্ট করতে যায়ে শুনলাম ঐশীর নানু আগেই পেমেন্ট করেছেন। আসলে লোকটা খুব ভালো। সামিয়ার কাছ থেকে শুনেছি,একটা এক্সিডেন্টে তিনি তাঁর পরিবারকে হারিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি তার কম্পানি থেকে যত কিছু আয় হয় সব কিছুই এতিমখানায় আর গরিবদেরকে দান করে দেন। এতিমদের জন্য তিনি একটা স্কুল খুলেছেন, যেটা তিনি নিজের টাকা দিয়ে পরিচালনা করেন।

হাসপাতাল থেকে এয়ারপোর্টে আসলাম। ফ্লাইটে উঠার কিছুক্ষণ পরেই ফ্লাইট আকাশের বুকে উড়াল দিলো।আমি আর সামিয়া পাশাপাশি সিটে বসেছি। ঐশী তার নানুর কোলে বসে আছে। ঐশীর খুশি দেখে কে। নানুর কোলে বসে থেকে হাত তালি দিচ্ছে আর বলতেছেঃ তি মদা আমলা পাতি হয়েতি লে। আকাসে উলতেথি লে ( কি মজা আমরা পাখি হয়েছি যে। আকাশে উড়তেছি রে )।

ঐশীর হাততালি আর কথা শুনে ফ্লাইটের সকল যাত্রীর নজর ঐশীর দিকে। সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ তোমার মেয়ে একে বারে তোমার মতোই হয়েছে।

আমি মুচকি হেসে বললামঃ দেখতে হবে মেয়েটি কার?

সামিয়াঃ কার আবার আমার।(একটু ভাব নিয়ে)

আমিঃ শুধুই কি তোমার?(মন খারাপ করে)

সামিয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে বললোঃ আমার আর আমার এই পাগল বরটার।

কথা বলতে বলতে ফ্লাইট সিলেটে এসে ল্যান্ড করলো। ফ্লাইট থেকে নেমে শ্বশুর বাড়িতে আসলাম। রাতে ডিনার করে আমি আর সামিয়া সামিয়ার রুমে বসে আছি। আমার মেয়ে এসে বললোঃ মামনি আদকে আমি নানু ভাইয়াল কাথে থাকবো।

ঐশীর কথা শুনে সামিয়া আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো। কারণ,ঐশী কোনো রাতই সামিয়া কে ছাড়া থাকেনি। আর থাকতেও চায়না।

আমি ঐশীকে বললামঃ ঠিক আছে মা যাও।আর ভালো ভাবে ঘুমাবে কেমন?

ঐশীঃ ঠিক আছে বাবাই।

ঐশী রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমি সামিয়া কে বললামঃ ঐশীর কথা শুনে এভাবে হাঁ করে থাকার কারণ কী?

সামিয়াঃ আমার মেয়ে কোনোদিন আমাকে ছাড়া থাকে না। কিন্তু আজকে কি হলো ওর?

আমি মুচকি হেসে বললামঃ আমাদের মেয়েও চাই তার বাবাই আর মামনি যেন একা একা কিছু টাইম অতিবাহিত করে।

সামিয়া লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললোঃ হুমম তোমার শুধু দুষ্টামি।

সামিয়া কে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকলে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে ঐশী আর সামিয়া কে নিয়ে শপিং মলে। শপিং শেষ করে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে বাসায় আসলাম। পরেরদিন সামিয়ার থানাতে গেলাম ‌। সেখানে সামিয়ার রিজাইন লেটার জমা দিয়ে আসলাম। কারণ, আমি আর চাইনা সামিয়া জব করুক। ঘোরাফেরা করার মাধ্যমে কেটে গেলো আরো এক সপ্তাহ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে সামিয়া কে বললামঃ বাসায় যাবে কবে?

সামিয়াঃ আর কয়েকটা দিন থাকি এখানে। বাবাকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।

আমিঃ তোমার আম্মু খুবই অসুস্থ। এছাড়া শ্বশুর আব্বুকে নাহয় আমাদের বাসায় নিয়ে যাই।

সামিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললোঃ ঠিক আছে। চলো বাবাকে বলে আসি।

আমিঃ চলো।

ঐশীর নানুর রুমে গেলাম। দেখি তিনি বসে থেকে ফাইল চেক করতেছেন। আমাদের দেখে ঐশীর নানু বললোঃ কি হয়েছে মা তোমাদের?

আমিঃ আব্বু আমি সামিয়া কে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।

আমার কথা শুনে ঐশীর নানু কিছুটা চমকে উঠলো।আর চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেল। হয়তোবা সামিয়া কে যেতে দিতে তার মন চাচ্ছে না। তবুও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললোঃ কখন যাবে তোমরা?

আমিঃ আমরা একাই যাবো না। আপনাকেও সাথে নিয়ে যাবো।

ঐশীর নানুঃ আমি যেতে পারবো না বাবা আমার অফিসের কাজ আছে।

সামিয়াঃ না আব্বু তোমাকে ছাড়া আমরা যাবো না।

ঐশীর নানুঃ মা বুঝার চেষ্টা কর। কালকে অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। আর তোরা যা আমি কাজ শেষ করে যেয়ে তোদের দেখে আসবো ।

সামিয়াঃ ঠিক আছে তাহলে।

সকালের নাস্তা করে আমি,সামিয়া আর ঐশী রুম থেকে বের হলাম। ঐশীর নানুর গাড়ি বাইরে অপেক্ষা করতেছে। আমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ঐশীর নানু আমার হাত ধরে বললোঃ বাবা আমি জানি সামিয়া আমার জন্ম দেওয়া সন্তান নয়। কিন্তু এই চার বছর তাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখেছি। কখনো তাকে না খাইয়ে দিয়ে আমি নিজে খাইতাম না। এই চার বছরে তাকে কখনো কষ্ট পেতে দেয় নি।আমি জানি সামিয়া আমার কাছে সারাজীবন থাকবে না।তার মা-বাবা,স্বামী, সংসার আছে। আমি তাকে বাধাও দিবো না।

বলেই কান্না করতে লাগলো। হয়তো সামিয়া কে ছেড়ে দিতে তার মন চাচ্ছো না।

চোখের পানি মুছে আবার বলতে লাগলোঃ আমার মেয়ে তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমার কথা ভেবে প্রতি রাতেই কান্না
করতো। বাবা তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ তুমি আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিয়ো না। কখনো আর ছেড়ে দিয়ো না।

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ আমি কখনো আপনার মেয়েকে কষ্ট দিবো না বাবা আপনাকে কথা দিলাম।

এরপরে সামিয়া তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার বাবা সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ মারে কান্না করতেছিস কেন? কান্না করিস না মা! সেখানে তোর মা বাবা শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাই আছে। তারাও তোর জন্য অপেক্ষা করতেছে।

সামিয়াঃ তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকবো বলো?(কান্না করতে করতে)

ঐশীর নানু সামিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললোঃ পাগলি মেয়ে আমি তোকে মাঝে মাঝেই দেখতে যাবো কেমন। কান্না করিস না।

যাইহোক, বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে আসলাম। বাইরে এসে দেখি একটা রেড কালারের নিউ গাড়ি দাঁড় করানো। আমি কিছু বলার আগেই ঐশীর নানু আমার হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে বললোঃ বাবা তোমাকে আমার মেয়ের জামাই হিসেবে কিছুই দিতে পারিনি। তাই তোমার জন্যে আমি এই গাড়িটা কিনেছি। প্লিজ বাবা তুমি এটা নাও।

আমিঃ বাবা আমার গাড়ি তো আছে। আপনি কেন এটা কিনতে গেলেন?

ঐশীর নানুঃ আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা তুমি নিবে এটাই চুড়ান্ত।

আমিঃ ঠিক আছে।

গাড়ির কাছে আসতেই বললেনঃ তুমিই ড্রাইভ করবে নাকি ড্রাইভার নিবে?

আমিঃ আমিই ড্রাইভ করবো। ড্রাইভার লাগবে না।

ঐশীর নানুঃ ঠিক আছে ।আর নানু ভাই এখানে এসে তো।

ঐশী সামিয়ার কোলে থেকে নেমে তার নানুর কাছে গেল। ঐশীর নানু ব্যাগ থেকে একটা নেকলেস এর প্যাক বের করে ঐশীর সামনে হেটু গেঁড়ে বসে ঐশীর গলায় নেকলেসটি পড়িয়ে দিয়ে বললেনঃ বাহহ আমার নানু ভাইকে তো প্রিন্সেস এর মতো লাগতেছে।

ঐশী তার নানুর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিয়ে আমার কাছে আসলো। সামিয়া তার বাবাকে বললোঃ এতো কিছু করার কি প্রয়োজন ছিলো বলো?

ঐশীর নানু একটু রেগে গিয়ে বললোঃ এসব আমি কার জন্য করতেছি? আমার মেয়ের আর জামাইয়ের জন্যেই তো। তাদেরকে দিবো না তো কাকে দিবো?

ঐশীর নানুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। তিনি গাড়ির কাছে এসে সামিয়া কে বললোঃ মা তুই পৌঁছে আমার কাছে ফোন করিস। আর এই বুড়ো বাবা টাকে যেন ভুলে যাস না মাঝে মাঝেই আসবি কিন্তু।(চোখের কোণার পানি মুছে)

সামিয়াঃ ঠিক আছে বাবা আসবো। আর তুমিও মাঝে মাঝে যাবে।

ঐশীর নানুঃ আচ্ছা। নানু ভাইয়া ভালো ভাবে যাবে কেমন।

ঐশীঃ আততা নানু ভাইয়া।

সামিয়া ঐশীকে বললোঃ নানু ভাইয়াকে বিদায় দেও।

ঐশীঃ আততালামুআলাইতুম নানু ভাইয়া থাতো ।

ঐশীর নানুঃ আচ্ছা যাও।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রান্না দিলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যাওয়ার পর লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখি ঐশীর নানু এখনো আমাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

মানুষ এতো তাড়াতাড়ি একটা মানুষ আপন করে নিতে পারে সেটা উনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। গাড়ি চলতেছে হাইওয়েতে। আমি ড্রাইভ করতেছি। সামিয়া আমার পাশের সিটে বসে আছে।আর ঐশী সামিয়ার কোলে।

আমি মোবাইল টা পকেট থেকে বের করে আম্মুর কাছে ফোন দিলাম। একবার রিং হতেই আম্মু রিসিভ করলো। আমি সালাম দিয়ে বললামঃ আম্মু কেমন আছো?

আম্মু সালামের উত্তর দিয়ে বললোঃ তোকে ছাড়া আর কেমন থাকবো বল? তুই কবে বাসায় আসবি?

আমিঃ আজকেই যাচ্ছি।

আম্মুঃ কিহহহ সত্যি?

আমিঃ হুমম। আর সামিয়ার আব্বু আম্মু কোথায় আছে?

আম্মুঃ নওগাঁয় আছে। কেন?

আমিঃ উনাদের ফোন করে এখনি আমাদের বাসায় আসতে বলো।

আম্মু অবাক হয়ে বললোঃ কেন?

আমিঃ একটা সারপ্রাইজ আছে । তুমি উনাদের ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলো।

আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।

আম্মুর সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই ঐশী বললোঃ বাবাই আমলা তোথায় দাতথি? তপিং মলে?

আমিঃ না আম্মু। আমরা তোমার দাদুর বাড়িতে যাচ্ছি।

ঐশীঃ মামনি দাদু তি?

ঐশীর প্রশ্নে শুনে আমি হাসতে লাগলাম। সামিয়া আমার হাসি দেখে বললোঃ এই তুমি হাসতেছো কেন?

আমিঃ মেয়ের কথা শুনে।

সামিয়াঃ মেয়ে কি কোনোদিন দাদুকে দেখেছে নাকি দাদুর নাম কোনোদিন শুনেছে? তাহলে বুঝবে কি করে দাদু কী?

আমি সামনে তাকিয়ে বললামঃ মেয়ে তার দাদু কে দেখেনি শুধু তার মায়ের জন্য। সে যদি আমাদের ছেড়ে না আসতো তাহলে অবশ্যই দেখতে পেতো।

সামিয়াঃ হুঁ,,,।

ঐশী ওর মায়ের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললোঃ মামনি বলো না দাদু তি?

সামিয়াঃ আমার বাবা তোমার কে হয়?

ঐশীঃ নানু ভাইয়া।

সামিয়াঃ তেমনি তোমার বাবাইয়ের বাবা তোমার দাদু হয়। বুঝেছো?

ঐশী চকলেট মুখে দিতে দিতে বললোঃ হুমম বুদেথি।

ঐশী আর কিছু না বলে চকলেট খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো। আমি ড্রাইভ করতে লাগলাম। দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভ করে এসে পৌঁছলাম বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীতে। রাজশাহীতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। গাড়ি নিয়ে শপিং মলে গেলাম। কারণ,সামিয়া আর ঐশীর কোনো ড্রেস নিয়ে আসা হয়নি। আর হ্যাঁ ঐশী ঘুমিয়ে গেছে। এখনো ঘুমিয়ে আছে।

শপিং শেষ করে গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম। গাড়ি পার্ক করে ঐশীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে কোলে তুলে নিলাম।আর সামিয়া নেকাবটা ভালো ভাবে পরে নিলো। সামিয়া বোরকা পরেছিল।

কলিং বেল বাজাতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো। আমার কোলে বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে গেল। আর সবচেয়ে বেশি অবাক হলো আমার পাশে থাকা বোরকা পরা মেয়েটিকে দেখে।

আম্মু আমাকে বললোঃ সাহিদ কে এরা?

আমি আম্মুকে বললামঃ ভিতরে চলো।

ভিতরে যায়ে দেখি সামিয়ার আব্বু আম্মু, আমার আব্বু, সাফিয়া আর তিশা সোফায় বসে আছে। আমাকে দেখে সাফিয়া মুচকি হাসলো। যেটার মানে কেউ বুঝতে না পারলেও আমি বুঝতে পেরেছি। সাফিয়ার হাসির কারণ হলো,কাজ হয়েগেছে।

আব্বু আমার পাশে বোরকা পরা মেয়ে আর কোলে বাচ্চা দেখে বললোঃ সাহিদ কে এরা?

আমি কিছু না বলে ঐশীকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সামিয়ার মুখ থেকে নেকাব টা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সামিয়ার আম্মু সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। একবারো ভালো ভাবে দেখার প্রয়োজনও মনে করলো না যে,এটা তার মেয়ে নাকি অন্য কেউ।

সামিয়া আম্মু সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার তার আবেগ কে ধরিয়ে রাখতে না পেরে তার আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। এটা তাদের কষ্টের কান্না নয়।এটা তাদের সুখের কান্না। একজন তার হারানো মানিককে খুঁজে পাওয়ার জন্য কান্না করতেছে ,অন্য জন তার সবচেয়ে আপন জনকে পেয়ে কান্না করতেছে।

সামিয়ার আম্মু সামিয়া কে বললোঃ মা তুই আমাদের কে মাফ করে দে। বিনা কারণ তোকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।

সামিয়া তার আম্মুকে বললোঃ তোমাদের কারো উপর আমার রাগ অভিমান নেই। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

সামিয়া তার মাকে ছেড়ে দিয়ে তার আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার আব্বু ও মেয়েকে তার পেয়ে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার আব্বু বললোঃ মা আমি জানি আমরা তোকে কষ্ট দিয়েছি। বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। তুই যদি আমাদেরকে মাফ না করিস তাহলে আমরা চিরকাল তোর কাছে পাপী হয়ে থাকবো।

সামিয়াঃ আব্বু আমি সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। তাছাড়া তোমাদের জায়গায় যে কেউ হলে একই কাজ করতো।

সামিয়া আমার আব্বু আম্মুর কাছে গেলো তারাও সামিয়ার কাছে ক্ষমা চাইলো। ঐশী এতোক্ষণ আমার কাছেই ছিলো। সামিয়ার কাছে যায়ে বললোঃ মামনি এই লোত দুলা যে?

ঐশীর কথা শুনে সবাই ঐশীর দিকে তাকালো।আর সামিয়া কে মামনি ডাকায় সবাই বেশ অবাক হয়েছে।

আমি সামিয়ার কাছে যায়ে ঐশীকে কোলে নিয়ে আমার আব্বুকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃএটা হলো তোমার দাদু ভাই। আম্মুকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা তোমার দাদি। শ্বাশুড়ি মাকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা তোমার নানি। শ্বশুর আব্বুকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃএটা তোমার নানু ভাই।

নানু ভাই বলাতে ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ আমাল তো নানু ভাই আতে।

আমিঃ এটাও তোমার নানু ভাই। এখন থেকে এই নানু ভাই তোমাকে চকলেট কিনে দিবে।

ঐশীঃ আততা।

এরপরে ঐশীকে সাফিয়া কে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃএটা তোমার আন্টি।

ঐশীঃ ওও। আন্নির নাম তি?

আমিঃ সাফিয়া।

আব্বু আমাকে বললোঃ সাহিদ এই বাচ্চাটাকে?

আমি মুচকি হেসে বললামঃ এটা তোমাদের নাতনি।

আব্বু-আম্মুঃ কিহহ?

আমিঃ হ্যাঁ। সামিয়া এখান থেকে যাওয়ার সময় প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ছিলো।

আব্বুঃ ওওও। তো আমার মিষ্টি দাদু ভাইয়ের নাম কি?

ঐশীঃ আমার নাম ইসলাত দাহান ঐতী।

ঐশীর বলা নাম শুনে সবাই হাসতে লাগলো। সামিয়া সাফিয়া আর তিশার সাথে কথা বলতে লাগলো।এর পর সাফিয়া আর তিশা সামিয়া কে সাফিয়ার রুমে নিয়ে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আমি আমার দুই আম্মুর সাথে কথা বলতে লাগলাম আর ঐশী তার দাদু আর নানুর সাথে কথা বলতেছে।

একটু পরে আম্মু ডিনার করার জন্য ডাইনিং টেবিলে যেতে বললোঃ সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। আজকে খুব মজা লাগতেছে।আজ থেকে চার বছর পর সবাই একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করতেছি। যদিও চর বছর আগে একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছি । কিন্তু তখন একটা চেয়ার ফাঁকা ছিলো। আর সেটা হলো আমার মেয়ের চেয়ার।

আমি আম্মুর পাশে বসেছি। সামিয়া সামিয়ার আম্মুর পাশে আর ঐশী তার আন্টিদের কাছে। ডিনার শেষ করে বাসায় সকল মেম্বার সোফায় বসে থেকে আড্ডা দিতে লাগলাম।

সামিয়া সব সময় তার আম্মুর কাছে আছে। আর থাকবেই না কেন আজ থেকে চার বছর পর মাকে কাছে পেয়েছে। সবাইকেই পেয়েছে কিন্তু মায়ের প্রতি ভালোবাসার একটা আলাদা রকম টান আছে।

আম্মু সামিয়ার বললোঃ সামিয়া মা তুই এতো দিন কোথায় ছিলিস?

এরপরে সামিয়া বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ঐশী জন্ম গ্রহণ করা, তারপরে আমার সাথে দেখা হওয়া, ব্রেন টিউমার হওয়ার সব কিছু বললো।

সামিয়ার ব্রেন টিউমার হওয়ার কথা শুনে সামিয়ার আম্মু কান্না করতে লাগলো। মেয়ের অসুস্থ হওয়ার খবর তিনি মেনে নিতে পারতেছে না।

সামিয়া তার আম্মুকে শান্তনা দিতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর তিনি শান্ত হলেন। আরো কিছু আড্ডা দিলাম। মনে হচ্ছে গল্প শেষ হতেই চাচ্ছে না।

আমি আর সামিয়া আমার রুমে আসার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। বাসায় আসার পরে আমি আর সামিয়া কেউ এখনো রুমে যাইনি।

ঐশীকে সাফিয়া আর তিশা তাদের রুমে নিয়ে গেছে। আমি রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। সামিয়াও আমার পিছে পিছে আসতেছে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। লাইট জ্বালিয়ে দেওয়ার পর সামিয়া যখন বেডের দিকে তাকালো তখন সে কিছু টা অবাক হয়ে গেল। সে তার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারতেছে না। সে কি দেখতেছে।

বেডটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে আর নানা রকম বেলুন ফুলিয়ে উপরে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক কথায় বাসর ঘরের মতোই।

আমাকে বললোঃ এসব কখন করলে?

আমিঃ সে টা তোমার না জানলেও চলবে।

সামিয়া কে কিছু না বলে তার হাত ধরে বেলকুনিতে নিয়ে আসলাম। বেলকুনিতে একটা টেবিলের বার্থডে কেক আছে আর সাইটে ছোট্ট ছোট্ট মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া আছে।

সামিয়া সেগুলো মুগ্ধ নয়নে দেখতেছে। আমি তার সামনে হেটু গেঁড়ে বসে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললামঃ

সামিয়া তোমাকে আমি না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
দিয়েছি প্রিয় জনদের ভালোবাসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে । তবুও তুমি আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছো। জানি তোমার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসাটা নগন্য তম।
সামিয়া তুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দিবে?
দিবে কি সেই সুযোগ একবার, বুকের ভিতরের
সেই ছোট্ট কুটিরে তোমাকে রাখার? কথা দিচ্ছি আর কখনো যাবো না ছেড়ে। ভুলিয়ে দিবো বিগত দিনের সব দুঃখ কষ্ট আমার ভালোবাসার বিনিময়ে। পাড়ি দিয়ে দিবো আমাদের ভালোবাসার মাধ্যমে চলার পথে সমস্ত বাধাকে। গড়বো নতুন করে দুজনের ভালোবাসা দিয়ে একটা তাজমহল। যেখানে থাকবে না কোনো সন্দেহ, থাকবে না কোনো ভুল বুঝাবুঝির স্থান। থাকবে শুধু তোমার আমার সুখের সংসারে নতুন দিনের পথ চলার সন্ধান।

কথা গুলো বলেই সামিয়ার দিকে অশ্রু ভেজা নয়নে তাকিয়ে থাকলাম। সামিয়ার চোখ দিয়েও পানি পড়তেছে। আমার হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে টেবিলের একপাশে রেখে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।

আমি বললামঃ এই পাগলি কান্না করতেছো কেন?

সামিয়া ডুকরে ডুকরে কান্না করতে করতে বললোঃ ছেড়ে যাবে না তো কখনো? বাঁচবো না সাহিদ । সত্যিই আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।

আমি চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ ছেড়ে যাওয়ার জন্য তো এতো দিন অপেক্ষা করে থাকি নি। জীবনের শেষ পর্যন্ত তোমাকে আমার বুকের এই ছোট্ট কুটিরে রাখবো। যাতে একটা মাছিও তোমাকে স্পর্শ করতে না পারে।

সামিয়া কান্না করেই যাচ্ছে। আমি বললামঃ এই পাগলি সারা রাত শুধু কান্নায় করবে? কেক কখন কাটবে?

সামিয়া হুঁ বলে যেমনি কেক কাটতে যাবে তখনই পিছন থেকে কে যেন বললোঃ হাতি বাত দে তু ওু,হাতি বাত দে তু ওু মামনি( হ্যাপি বার্থডে টু ইউ)।

সামিয়া আর আমি পিছনে ঘুরে দেখি ঐশী, সাফিয়া আর তিশা দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তিনজন সামিয়ার কাছে আসলো। এরপরে সামিয়া কেক কেটে প্রথমে আমাকে, তারপর ঐশীকে তার পর সাফিয়া আর তিশা কে খাইয়ে দিলো।

বেলকুনিতে সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে আসলাম । রুমে আসার পর ঐশী সামিয়া কে বললোঃ মামনি আদকে আমি আন্নিল কাথে থাকবো।

সামিয়াঃ ঠিক আছে মা যাও।

ঐশী যাওয়ার পর আমি দরজাটা ভালোভাবে লাগিয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে সামিয়ার কাছে এসে বললামঃ আজকের দিনে তুমি আমার থেকে যা চাইবে তাই পাবে।

সামিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে থেকে গলা থেকে নেকলেস খুলতে খুলতে বললোঃ আজ থেকে চার বছর আগে তোমার বার্থডে আমি তোমার কাছ থেকে চেয়েছিলাম। আজ আমার বার্থডে তে তুমি আমার কাছে কি চাও বলো?

আমি সামিয়ার ঘাড়ের উপর থুতনি লাগিয়ে দিয়ে বললামঃ আমি আরো একটা সন্তানের জনক হতে চাই।

সামিয়া আমার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিরব বসে থাকলো। “নিরবতা সম্মতির লক্ষণ” ভেবে আমি আর সময় নষ্ট না করে সামিয়া কে কোলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলাম ‌। এরপরে শ
সংঘটিত হলো আমাদের লাইফের সেকেন্ড ফুলশয্যার রাত।

সকালে সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। সামিয়া আমাকে বললোঃ এই উঠো অনেক বেলা হয়েছে ‌।

আমি সামিয়ার চুলে মুখ গুজে বললামঃ ওমম আর একটু থাকি না।

সামিয়াঃ হুঁ,, বুড়ো হয়েছে তার পরেও ভিমরতি পুরায় না।

আমিঃ কিহহ আমি বুড়ো হয়েছি? এখনো যদি বিয়ে করার জন্য পাত্রীর সার্কুলার ছাড়ি তাহলে মেয়ের লাইন ধরে যাবে।(সামিয়া কে রাগানোর জন্য)

সামিয়াঃ ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবো এসব চিন্তা ভাবনা করলে হুঁ।(রেগে)

ব্রেকফাস্ট করার সময় শ্বশুর মশাই বললেনঃ বাবা আজকে তোমরা দুজন আমাদের সাথে আমাদের বাসা থেকে বেড়ে এসো।

আমি ভাবলাম অনেক দিন থেকে যাওয়া হয়নি। একটু ঘুরে আসি। তাছাড়া সামিয়ার যায়নি।

আমিঃ ঠিক আছে। যাবো।

বিকেলে সিলেটের শ্বশুরের গাড়ি নিয়ে বেড় হলাম নওগাঁতে মানে সামিয়ার বাবার বাসায়। আমি আর সামিয়া এক গাড়িতে। ঐশী তার নানা-নানীর সঙ্গে এক গাড়িতে উঠেছে। নওগাঁয় পৌঁছতে রাত হয়ে গেল।

সামিয়ার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। এরপরে সামিয়া কে নিয়ে ছাদে গেলাম। রাতে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে নাস্তা করে আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলাম। ইকবালের সঙ্গে দেখা করে শাকিব আর রিয়াদের সঙ্গে দেখা করলাম। তাদেরকে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে শ্বশুরের বাসায় আসলাম।

শ্বশুর বাড়িতে তিন দিন থেকে আবার রাজশাহীতে চলে আসলাম। এক সপ্তাহ পর থেকে অফিসে জয়েন করলাম। ভালোই চলতেছে দিন গুলো। সিলেট থেকে ঘুরেও এসেছি কয়েক বার। দেখতে দেখতে কেটে গেল আট মাস। সামিয়া এখন প্রেগন্যান্ট। পেট অনেক বড় হয়ে গেছে।

দুপুরে অফিস থেকে বাসায় এসে রেস্ট নিচ্ছি। সামিয়াও আছে আমার পাশে। ঐশী রুমে এসে তার মামনি কে বললোঃ মামনি তোমাল পেত এতো বলো তেন?

মেয়ের কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে বললামঃ তোমার মামনির পেটে তোমার ভাইয়া আছে এইজন্য বড়।

ঐশীঃ সত্যি আমাল ভাইয়া আতে? আমাল তাওথিফ (তাওসিফ হলো সামিয়ার কাজিনের ছেলে) ভাইয়াল মতো ভাইয়া আথে এতানে( সামিয়ার পেটে হাত দিয়ে)?

আমিঃ হ্যাঁ মা তোমার ভাইয়া আছে ওখানে।

ঐশী সামিয়ার পেটের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললোঃ ভাইয়া তুমি তালাতালি এথো। তোমাল সাতে থেলা তলবো। তোমালা দন্য আমি অনেত দুলো চকলেত রেখে দিবো আততা।

বলেই সামিয়ার পেটে চুমু দিলো।

মেয়ের এমন কাহিনী দেখে আমি আর সামিয়া হাসতে লাগলাম।আর হ্যাঁ সামিয়া কে আর কোনো কাজ করতে দেয়না। কারণ, সামিয়া ঐশীর সময়ে অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন আর কষ্ট দিতে চাইনা।

রাতে ডিনার করে বেডে বসে সামিয়া কে বললামঃ আমাদের কি বাবু হবে?

সামিয়াঃ আল্লাহ যেটা দিবে সেটাই হবে।(আমার গালে হাত রেখে)

আমিঃ হুমম। বাট আল্লাহর কাছে চেয়েছো কি?

সামিয়াঃ ছেলে বেবি।

আমিঃ আমিও চেয়েছি ছেলে বেবি।

পরেরদিন সকালে সামিয়া কে হাসপাতালে নিয়ে যায়ে চেক আপ করে নিয়ে আসলাম।

অফিস সামলানো, পরিবারের সাথে সময় দিতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, ঘোরাফেরা করতেই কেটে গেলো পাঁচ বছর। রুমে আমি আর সামিয়া বসে আছি। তাওহিদ বাইরে থেকে এসে বললোঃ বাবাই অনেক দিন থেকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়?

সামিয়া তাওহিদের কথা শুনে বললোঃ আপনার তো শুধু ঘোরাফেরা করা। লেখা পড়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।

তাওহিদ আমার কোলে বসতে বসতে বললোঃ দেখো না বাবাই মামনি শুধু বকতেছে!

আমি তাওহিদ কে ভালোভাবে কোলে বসিয়ে নিয়ে সামিয়া কে বললামঃ এই তুমি আমার প্রিন্সকে বকতেছো কেন?

সামিয়া আমার দিকে চোখ গরম করে বললোঃ বকবো না তো কি করবো? তোমার ছেলে কি ভালো? এর সঙ্গে মারামারি, ওর চকলেট কেড়ে খাওয়া এসব শুধু।

সামিয়ার কথা শেষ হতেই ঐশী রুমে এসে বললোঃ বাবাই জানো তাওহিদ কি করেছে?

আমিঃ কি করেছে মামনি?

ঐশীঃ তাওহিদ,,,,,,

তাওহিদ দৌড়ে ঐশীর মুখ চেপে ধরে কিছু বলতে না দিয়ে ঐশীকে বললোঃ প্লিজ আপু তুমি বাবাইকে কিছু বলো না!

আমিঃ তাওহীদ তুমি কি করেছো সত্যি করে বলো।(ধমক দিয়ে)

তাওহীদ আমার ধমক খেয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে করতে বললোঃ আমি তিথির চকলেট কেড়ে খেয়েছি।

হায় আল্লাহ এটার জন্য আমি এতো বড় একটা বিচার সভার আয়ো করলাম! তবুও কড়া গলায় বললামঃ আর যেন কোনো দিন এসব না শুনি ঠিক আছে?

তাওহিদ কান্না করতে করতে বললোঃ ঠিক আছে বাবাই।

সামিয়া ঐশীর আর তাওহীদ কে ফ্রেশ করে দেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। আর হ্যাঁ তাওহীদ হলো আমার আর সামিয়ার ছেলে। বয়স প্রায় পাঁচ বছর। খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। তার মাকে সব সময় জালিয়ে খায়। আর তিথি হলো সাফিয়ার মেয়ে। বয়স তিন বছর। সাফিয়ার বিয়ে হয়েছে চার বছর আগে। আর ঐশীর বয়স প্রায় আট বছর। স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী।

লাঞ্চ করার সময় আব্বুকে বললামঃ আব্বু তাওহিদ ঘুরতে যেতে চাচ্ছে। আর অনেক দিন থেকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তাই ভাবতেছি সিলেট থেকে সবাই মিলে ঘুরে আসি।

আব্বু খেতে খেতে বললোঃ হুমম ভালো তো।এছাড়া তোমার শ্বশুর(সিলেটের) আমাদের যেতে বলতেছে। কবে যেতে চাচ্ছো?

আমিঃ পরশু দিন যাবো।

আব্বুঃ ঠিক আছে।

লাঞ্চ শেষ করে সামিয়া,সাফিয়া, ঐশী, তাওহিদ আর তিথীকে নিয়ে শপিং করতে গেলাম। ভ্রমনের জন্য শপিং করার মজাই আলাদা। শপিং করে বাসায় আসলাম।

সিলেট যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতেছি। আমি, সামিয়া, ঐশী, তাওহিদ,সাফিয়া, তিথি , সাফিয়ার হাজবেন্ড, আব্বু আম্মু, সামিয়ার আব্বু আম্মু, তিশা , তিশার হাজবেন্ড,মামা মামী এক কথায় তিন পরিবারের সকল সদস্য একসাথে যাচ্ছি। একটা এসি বাস রিজার্ভ করেছি। হ্যাঁ তিশারও বিয়ে হয়েছে একবছর আগে। বাট এখনো বেবি হয়নি।

বাসে উঠার পরে তাওহিদ আর তিথি পুরো বাসটাকে মাতিয়ে রাখতেছে। সিলেট পৌঁছতে রাত লেগে গেলো। শ্বশুর মশাই আমাদের সকলকে একসাথে দেখে এতোটাই খুশি হয়েছে যে তা বলে বুঝাতে পারবো না। রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম।

সকালে নাস্তা করে ঘুরতে গেলাম জাফলং য়ে। জাফলংয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করলাম।

এরপরে একটা পাহাড়ে উঠলাম।পাহাড়ে দাঁড়িয়ে নীল আকাশের নিচে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাটানো মূহুর্ত টাকে ক্যামেরা বন্দি করে নিলাম। যেখানে আমি আর সামিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। তাওহিদ আছে আমার কোলে ঐশী দাঁড়িয়ে আছে সামিয়ার সামনে। সাফিয়া আর সাফিয়ার হাজবেন্ড আছে পাশাপাশি, তিথি আছে সামিয়ার কোলে। তিশা আর তিশার হাজবেন্ড আছে পাশাপাশি। যেখানে তিশার মা-বাবা আছে তাদের পিছনে। সামিয়ার মা-বাবা আছে আমার আর সামিয়ার পিছনে। আমার মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছে সাফিয়া আর সাফিয়ার হাজবেন্ডের পিছনে। আর সকলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন আমার শ্বশুর মশাই। যিনি আমাদের এই ভালোবাসার সংসার গঠনের মূল হিসেবে আছেন। তাঁর জন্যেই পেয়েছি আমার ভালোবাসার মানুষটি কে। হয়তো এই ক্যামেরা বন্দি ফটোটা বুঝিয়ে দিবে, মা-বাবারা পিছন থেকে আমাদের কে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে আগামী দিনের সফলতাকে অর্জন করার জন্য। হয়তোবা এটাই আমাদের ভালোবাসার সুখের সংসারের স্মৃতি হিসেবে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যা কোনো দিনও হারিয়ে যাওয়ার নয়। যেটা মনে করিয়ে দিবে আমাদের ভালোবাসার কথা। হোক সেটা শতবছর পর,হোক সেটা হাজার বছর পর ।

———— সমাপ্ত————

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে