# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৯শ
সামিয়াঃ এটা আপনারই সন্তান।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ মানে?
সামিয়াঃ আজ থেকে চার বছর আগে আপনি যখন আমার মতো হতভাগী পাপী কে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন তার আগের দিন আপনাকে আমি দুইটা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলেছিলাম।তার একটা হলো এই সন্তান আমার গর্ভে আসার কথা। আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলার কয়েক দিন আগে আমার শরীরটা বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝেই বমি হতো। বুঝতে পেরেছিলাম আমি প্রেগন্যান্ট।
কিন্তু আপনাকে বলেনি আপনাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে। সেদিন সকালে আপনাকে বলেছিলাম আজকে আমার বাসায় দেরি হবে। দেরি হওয়ার কারণ আমি থানার টাইম শেষ করে প্রেগন্যান্সির বিষয়টা টেষ্ট করার জন্য হাসপাতাল গিয়েছিলাম। হাসপাতালে যাওয়ার পর ভালোভাবেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করি।আর রিপোর্ট ভালো আসে। রিপোর্ট নিয়ে বাসায় যাই। ভেবেছিলাম আপনি সারপ্রাইজ পেয়ে খুশি হবেন কিন্তু না আমার ধারণা ভুল ছিলো। আমি সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই বড় সারপ্রাইজ পেয়েছিলাম।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
কিছুক্ষণ থেমে আবার বললোঃ এখানে আসার প্রায় নয় মাস পর ঐশী জন্ম গ্রহণ করে। বুঝতে শিখার পর থেকেই বাবাই বাবাই বলে কান্না করতো। আমি তাকে থামাতে না পেরে মোবাইলে একটা ফটো ছিল সেটা বের করে দিতাম। ঐশী ছবিটাকে দেখে বাবাই বাবাই বলে ডাকতে থাকে। যখন ছবিটা কথা বলতো না তখন ঐশী কান্না করে দিতো।তার কান্না আমার সহ্য হতো না। কারণ,এই পৃথিবীতে সে ছাড়া আর আপন কেউ নেই।(লেখকঃ সাহিদ হাসান সাহি)
তার কান্না থামানোর জন্য আমি আপনার ফোনে কল দিতাম আর আমার মেয়ে বাবাই বাবাই বলে ডাকতো। আপনার কথা শুনার পরে আবার ফোনটা আমাকে দিয়ে দিতো।অন্যের বাবারা যখন তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে পার্কে যেতো তখন আমার এই ছোট্ট বাচ্চাটা কান্না করে দিয়ে বলতোঃ মামনি আমার বাবাই কোথায়? আমি বাবাইয়ের সাথে ঘুরতে যাবো।
আমি তার কথার উত্তর না দিলে সে কান্না করতো। তার কান্না আর থামাতে পারতাম না। কারণ, তার বাবাই যে তাদের কাছে আসবে না। তার বাবাই যে তার পাপী, অপবিত্র মায়ের কাছে আসবেনা। এট লাস্ট নিজেই তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতাম।
সামিয়া কথা গুলো বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।
আমি ঐশীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। কপালে, গালে অজস্র চুমু দিতে লাগলাম। আজকে আমার জন্য আমার মেয়ে এতো কষ্ট পেয়েছে। আমার কলিজাকে মেয়েকে আমি চিনতে পারতেছি না। আমি সামিয়া কে বললামঃ প্লিজ সামিয়া আবার ফিরে এসো না? ঐশীর তো মামনি বাবাই দুজনেরই দরকার।
সামিয়া চোখের পানি মুছে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললোঃ আমি জানি আপনি আপনার ভুল টা বুঝতে পেরেছেন।এই জন্য হয়তোবা আজকে চার বছর পর আমার কাছে এসেছেন আবার আম আমাকে আপনার জীবনে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি আপনার জীবনে ফিরিয়ে যাবো না। আমি চাই না আমার মায়ায় পড়ে কারো জীবন নষ্ট হয়ে যাক। আমার মতো পাপী কে নিয়ে কারো সম্মান হানি হোক। দয়া করে আপনি আমাদের কাছ থেকে চলে যান। একাই বাঁচতে শিখেছি আল্লাহর রহমতে বাকিটা পথ অতিক্রম করতে পারবো। হয়তোবা মেয়েটিকে তার বাবার অধিকার দিতে পারবো না। কিন্তু চেষ্টা করবো বাবার সমান ভালোবাসা স্নেহ প্রদান করতে। দয়া করে আপনি চলে যান।
আমিঃ আমি তোমাদেরকে না নিয়ে কোথাও যাবো না।
সামিয়াঃ দেখুন আপনি না গেলে আমি কিন্তু দারোয়ান ডাকতে বাধ্য হবো।
আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ ডাকো। নিজের স্বামীকে যদি দারোয়ান দিয়ে বের করে দিতে ভালো লাগে তাহলে ডাকো।
সামিয়া বিরক্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই ফল কাটার চাকুটার কথা মনে হলো। চাকু হাতে নিয়ে বাম হাতের শিরার উপর রেখে বললোঃ আপনি যাবেন কিনা?
আমিঃ যাচ্ছি প্লিজ তবুও তুমি নিজের কোনো ক্ষতি করো না।
সামিয়ার বাসা থেকে আমি হোটেলে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে চকলেট ফুচকা আর আইসক্রিম নিয়ে চলে গেলাম সামিয়ার বাসায়। বাসায় ঢুকতেই দেখি ঐশী আর ভদ্র লোকটা ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে।
ঐশী আমাকে দেখে দৌড়ে আমার কাছে আসলো।আমি তাকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ আম্মু তুমি কি করতেছো? আর ঐ টা তোমার কে হয়?
ঐশী আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললোঃ আমি আমাল নানু ভাইয়াল সাতে গাথে পানি দিততি।আল ঐতা আমাল নানু ভাইয়া হয়।
আমিঃ তোমার মামনি বাসায় আছে?
ঐশী মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দিলো।
আমিঃ ওও আচ্ছা। এই চকলেট গুলো তুমি খাবে আর আইসক্রিম আর ফুচকা গুলো তোমার মামনি কে দিবে কেমন?
ঐশীঃ থিক আতে বাবাই।
ঐশী কোল থেকে নেমে ফুচকা, চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে বাসায় চলে গেল। আর আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। একেবারে মায়ের কপি। হাঁটা, কথা বলার স্টাইল সব কিছু।
ওফফস এবার কিছুটা শান্তি পেলাম। কারণ, আমার মেয়ে এবং তার মাকে পেয়েছি। এখন শুধু মেয়ের মায়ের অভিমানটা ভাঙ্গানোর অপেক্ষায়। খুব কষ্ট হবে সামিয়ার রাগ আর অভিমান ভাঙ্গাতে । ঐশীকে বাসায় পাঠিয়ে ভদ্রলোক মানে ঐশীর নানুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে হোটেলে চলে আসলাম। গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে গেলাম। লাঞ্চ করে হোটেলে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম।
বিকেলে আবার গেলাম সামিয়ার বাসায়। কিন্তু সামিয়ার সাথে দেখা হলো না। ঐশীর সাথে কিছুক্ষণ খেলাধুলা করে সামিয়ার বাসার আশেপাশে একটা বাসা খুঁজতে লাগলাম। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর পেলাম একটা বাসা। সামিয়ার বাসা থেকে কাছেই। এখানে বাসা ভাড়া নেওয়ার কারণ, যাতে করে সব সময় সামিয়ার পাশে থাকতে পারি।তার মনে যেন আবার আমার জন্য ভালোবাসা জন্মাতে পারি।
কেটে গেল তিন দিন।এই তিনদিনে রাত ছাড়া আমি প্রতিটা সময় সামিয়ার কাছে থেকেছি। সামিয়া যদি থানায় থাকলে আমি থানাতে গিয়েছি। কিন্তু সামিয়ার রাগ এখনো কমাতে পারিনি।একি কথা সে আমার সঙ্গে যাবে না। তবে ভদ্রলোক মানে ঐশীর নানুও সামিয়া কে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু। তাতেও কাজ হয়নি। আমিও হাল ছেড়ে দেওয়ার ছেলে না। দেখি তার কত অভিমান আছে।
সন্ধ্যায় সামিয়ার বাসায় গেলাম। কিছু শপিং করা প্রয়োজন তাই ভাবলাম ঐশী আর সামিয়া কে নিয়ে যাই।যদিও সামিয়া যেতে চাইবে না। কিন্তু চেষ্টা করে দেখি। সামিয়ার বাসার কলিং বেল বাজাতেই ভদ্র লোক দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখে বললেনঃ আরে জামাই যে ভিতরে এসো বাবা।
সোফায় সামিয়া বসে আছে।সামিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপি দিয়ে বললামঃ ঠিক আছে শ্বশুর মশাই (ভদ্রলোক)।
সামিয়া আমার দিকে রাগি মুডে তাকালো।আমি যায়ে সামিয়ার পাশে বসলাম।এতে সামিয়া আরো একটু রেগে গেল। আমি আরো একটু তার দিকে চেপে বসলাম। শ্বশুর মশাই আমাদের কাহিনী দেখে হাসতেছে।
শ্বশুর মশাই সামিয়া কে বললেনঃ সামিয়া জামাইয়ের জন্য নাস্তা করার ব্যবস্থা করো।
সামিয়া রেগে গিয়ে বললোঃ আব্বু কে তোমার জামাই ? বারবার জামাই জামাই করতেছো কেন? আর কিসের নাস্তা?(চিৎকার করে)
ঐশী তার মামনির চিৎকার শুনে ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ছোট বাচ্চা তো, চিৎকার করে কথা বলায় ভয় পেয়েছে। শ্বশুর মশাই সামিয়াকে শান্ত ভাবে বললোঃ দেখ মা প্রত্যেকেরই ভুল হতে পারে। একটা সংসারে ভুল বুঝাবুঝিটা স্বাভাবিক ব্যাপার। হতেই পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সংসার ছেড়ে,প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে একা একাই থাকতে হবে। সে তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
এখন তুই যদি তাকে মাফ না করে নতুন করে আবার শুরু না করিস তাহলে তো তোর মেয়ের ভবিষ্যৎ টা কি হবে ভেবে দেখেছিস? সে ঠিকমতো পাবে না মায়ের আদর, যত্ন ,ভালোবাসা আর না পাবে বাবার আদর, যত্ন, ভালোবাসা।অথচ একটা সন্তান বড় হতে হলে মা বাবা উভয়ের আদর যত্ন সমান ভাবে পাওয়া দরকার। সুতরাং বলি কি, এমন সিদ্ধান্ত নিস না যেটার ফলে তোদের ভবিষ্যৎ টা অন্ধকার হবে। এখন এইসব কথা না বলে জামাইকে নাস্তা দে।
শ্বশুর মশাইয়ের কথাই সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে বিরক্তি সুরে বললোঃ আসুন,,, যত্তসব।
আমি আর কিছু না বলে ঐশীকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলাম। চেয়ারে বসতেই সামিয়া প্লেটে মিষ্টি, আপেল, কেক আরো কিছু কিছু দিলো। আমি প্লেট থেকে ছোট্ট আপেলের অংশ হাতে নিয়ে ঐশীকে খাইয়ে দিলাম। এরপরে সামিয়া কে বললামঃ “বাবু খেয়েছো?”
সামিয়া মুখটা ঘুরিয়ে বললোঃ আমার জন্য কাউকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি আপনার কাজ করুন।
ঐশীকে পাশের চেয়ারে বসে দিয়ে সামিয়ার হাত ধরে একটান দিয়ে
আমার কোলে বসিয়ে একহাত দিয়ে আটকে রেখে বললামঃ এতো রাগ কেন হুমম? যেটা প্রশ্ন করেছি সোজাসুজি সেটার উত্তর দিবে।
সামিয়া আমার কোল থেকে উঠার জন্য চেষ্টা করতেছে বাট পারতেছে না। ঐশী তার মামনি কে আমার কোলে দেখে হাততালি দিতে দিতে বললোঃ তি মদা লে আমাল মামনি লে আমাল বাবাই তোলে নিতে লে,, তি মদা লে।
মেয়ের কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।আর সামিয়া রাগে শুধু ফোসতেছে। প্লেট থেকে একটা মিষ্টি আমার মুখে নিলাম। এরপরে মুখটা সামিয়ার মুখের সাথে লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টি টা ট্রান্সফার করে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সামিয়া নিতে চাচ্ছে না। প্রথমে নিতে না চাইলেও পরবর্তীতে আর কোনো উপায় না পেয়ে খেয়ে নিল।
একটা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে বললামঃ এটাও আগের নিয়মে খাইয়ে দিতে হবে নাকি নিজ ইচ্ছায় খাবে?
সামিয়া এক রাশ বিরক্তি নিয়ে আমার হাত থেকে আপেলের টুকরো টা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
আমি মুচকি হেসে মনে মনে বললাম, কেবল তো শুরু জানু।
নাস্তা শেষ করে সামিয়া কে বললামঃ রেডি হও শপিং মলে যাবো।
সামিয়া অবাক হয়ে বললোঃ আমি কেন আপনার সঙ্গে যাবো?
আমিঃ যাবে কিনা তাই বলো?
সামিয়া কিছু বলার আগেই ঐশী বললোঃ তলনা মামনি আদকে বাবাইয়েল সাতে তপিং মলে দাবো।
সামিয়াঃ আমি যাবো না।
আমিঃ কেন যাবে না? ঐশী তো যেতে চাচ্ছে তাকে নিয়ে চলো।
ঐশী সামিয়ার হাত ধরে নাড়াতে নাড়াতে বললোঃ তলো না মামনি।
সামিয়া ঐশীর দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বললোঃ বললাম তো আমি যাবো না। তারপরেও তোর কানে কথা যাচ্ছে না কি?
সামিয়ার চিৎকার শুনে ঐশী ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে লাগলো। বিষয়টা আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই সামিয়া ঐশীকে কোলে নিয়ে ওর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।আর আমাকে ঝাঁজালো সুরে বললোঃ দেরি করুন।
আমি সোফায় বসে ভাবতে লাগলাম কি করে ওর রাগ ভাঙ্গানো যায়। ভেবেছিলাম সহজ হবে কিন্তু এখন দেখতেছি যা ভেবেছিলাম তার বিপরীত।
একটু পরে মা আর মেয়ে একসাথে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। তাদেরকে নিয়ে শপিং মলে গেলাম। শপিং মলে যাওয়ার পর আমার জন্য দুইটা টিশার্ট,একটা জিন্স প্যান্ট আর ব্রান্ডের গেঞ্জি নিলাম। এর পর ওদেরকে নিয়ে লেডিস সাইটে গেলাম। মহিলা কর্মচারী সামিয়াকে দেখে বললোঃ ম্যাম কেমন আছেন?
সামিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
মহিলাটিঃ আমিও ভালো আছি। আপনার পাশের ছেলেটা কে?(আমাকে দেখিয়ে দিয়ে)
সামিয়া কিছু বলার আগেই আমি বললামঃ আমি আপনার ম্যামের হাজবেন্ড।
মহিলাটিঃ সরি স্যার। আসলে আপনাকে কোনো দিন দেখিনি তো তাই চিনতে পারিনি।
আমি সামিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললামঃ নো প্রবলেম। আর এখন থেকে প্রতিবারই আমি আর আপনার ম্যাম এক সঙ্গে আসবো।
মহিলাটিঃ ওহহ রিয়েলি। বাই দা ওয়ে স্যার আপনাকে আর ম্যাম কে খুব ভালো মানিয়েছে। আর আপনি হ্যান্ডসামও বটে।
আমি সামিয়া কে একটা চোখ টিপি দিয়ে বললামঃ এটাই তো আপনার ম্যাম বোঝে না।
মহিলাটিঃ স্যার বুঝলাম না।
আমিঃ কিছু না। আপনি আপনার ম্যামের জন্য কিছু শাড়ি দেখান।আর আমার মেয়ের জন্য কিছু টিশার্ট আর ফ্রোক দেখান।
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ম্যাম নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে রাগে ফুসতেছে আর দুই হাত কচলাচ্ছে । পাবলিক প্লেস হওয়ার ফলে আমাকে কিছু বলতে পারতেছে না। নইলে কাঁচায় চিবিয়ে খাবে। আর আমার মেয়ে হেঁটে হেঁটে পুরো দোকান ঘুরে ঘুরে দেখতেছে।
শপিং শেষ করতে করতে রাত আটটা বেজে গেলো। আকাশ টা মেঘলা মেঘলা করতেছে।মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আর আমার শরীরটাও কেমন জ্বর জ্বর ভাব করতেছে। হয়তোবা সিলেটের আবহাওয়ার জন্য।
সামিয়ার বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে ঢুকতেই সামিয়া বললোঃ কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
আমিঃ কেন তোমার সাথে তোমার বাসাতে।
সামিয়াঃ আপনি আমার বাসায় ঢুকবেন না। আপনি আমাকে পেয়েছেন টা কি ? আমি কি আপনার খেলনার বস্তু? শপিং মলে আপনি কেন আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দিলেন? আমার কোনো স্বামী নেই । যে ছিলো সে আজ থেকে চার বছর আগেই আমার নিকট মারা গেছে! আমি আপনার সঙ্গে কথা বলি বা আজকে শপিং মলে গিয়েছিলাম শুধু আমার মেয়ের জন্য। আপনি ভাববেন না যে,আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। আর আপনি কেন আমার বাসায় আসতেছেন? আর কখনো আসবেন না। আপনাকে আমার সহ্য হয়না।
সামিয়া কথা গুলো বলেই দরজা বন্ধ করে দিতে যাবে তখন আমি বললামঃ তুমি যদি আমাকে ভিতরে ঢুকতে না দেও তাহলে আমি এখানেই বসে থাকবো।
সামিয়া কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেল। আমি সেখানেই হেটু ভাঁজ করে বসে পড়লাম। হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম। সামিয়ার নিকট আমি মৃত হয়ে গেছি। আমাকে নাকি আর তার সহ্য হয়না। আমি কি এতোই খারাপ কাজ করেছি? সামিয়া তুমিও তো আমার মতো ভুল করেছিলে।আমি তো তোমাকে এতো কষ্ট দেইনি। তোমাকে তো বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কেন আজকে আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছো?
মনের আকাশে মেঘ জমেছে। তেমনি বাইরের আকাশের বুকে আজকে বেশ মেঘ জমেছে। হয়তোবা, এখনি সেই গুলোকে পৃথিবীর বুকে ঠেলে দিবে। বসে থাকতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। কেন জানি বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাচ্ছে। যদি বৃষ্টির পানির সাথে মনের মেঘ গুলোও ঝড়ে পড়ে। গার্ডেনে থাকা দোলনায় বসে পড়লাম। আমার যে বৃষ্টির পানিতে এলার্জি আছে সেটা ততক্ষণাৎ ভুলে গেলাম। বৃষ্টিতে ভিজতেছি আর সামিয়ার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো মনে করতেছি।
এরপরে আর কি হলো মনে নেই।
_-_-_-_-
সামিয়া দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঐশীকে নিয়ে রুমে আসলো। ঐশীকে ফ্রেশ করে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। এরপরে বেডে বসে ভাবতে লাগলো সাহিদের সঙ্গে যা যা ঘটেছে সব কিছু। কিছুক্ষণ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। হঠাৎ, সামিয়ার মনে পড়ে গেল সাহিদের বলা কথাটা যে,”আমি এখানেই বসে থাকবো।” সামিয়া দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। কারণ,সামিয়া জানে সাহিদ বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করে। আর বৃষ্টির পানিতে সাহিদের এলার্জি আছে।
দরজা খুলে দেখে সাহিদ আশেপাশে কোথাও নেই। সামিয়ার চিন্তা বাড়তে লাগলো। রাতে কিছু দেখতেও পাচ্ছে না। আনমনে সে চারিদিকে সাহিদ কে খুঁজতে লাগলো। গার্ডেন লাইটে দেখে দোলনায় কে যেন শুয়ে আছে আর কাঁপতেছে।
সামিয়া দৌড়ে দোলনায় কাছে যায়ে দেখে এটা তার সাহিদ। কপালে হাত দিয়ে দিয়ে দেখে তার জ্বর আসার কারণে শরীর তাপে পুড়ে যাচ্ছে। সামিয়া কি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।
কোনো কিছু না ভেবে সাহিদ কে দোলনা থেকে উঠায়ে কোনো রকম ভাবে তার রুমে নিয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে শরীরটা মুছে দিলো।আর হ্যাঁ শপিং করার সময় সাহিদ যেগুলো নিয়েছিল সেগুলো সামিয়ার ব্যাগেই আছে।এর পরে ডিম লাইট জ্বালিয়ে সামিয়া ব্যাগ থেকে সাহিদের প্যান্ট আর টিশার্ট নিয়ে এসে চেঞ্জ করে দেয়।
সাহিদ কে চেঞ্জ করে দিয়ে সেও চেঞ্জ হতে যায়। এরপরে তার বাবার রুম থেকে মেডিসিন নিয়ে এসে সাহিদ কে খাইয়ে দিলো। ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি আর একটা রুমাল নিয়ে বেডে বসলো। সাহিদের মাথাটা কোলে নিয়ে রুমাল ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে সাহিদের জ্বর কিছুটা কমে গেলো।
সামিয়া সাহিদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতেছে আর বিড়বিড় করে বলতেছে, এখন কতই না নিষ্পাপ লাগতেছে।আর জেগে থাকলে মনে হয় আমাকে জ্বালানো ছাড়া আর কাজ নেই। এই পাগলটা কি কিছু বুঝে না নাকি? কত ভালোবাসি তাকে। কিন্তু আমার জীবনে যে ভালোবাসা সইবে না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো, চেহারা কি করে ফেলেছে? কেন এখন কেউ যত্ন নেওয়ার জন্য নেই নাকি? আমার কাছেই আবার এসেছিস কেন(চুল টানতে টানতে)? আমি নাকি পাপী? তাহলে আমার কাছে এসেছিস কেন?
যা অন্য মেয়ের কাছে। পবিত্র মেয়ের কাছে। আমার কাছে আছিস কেন?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সাহিদের কপালে একটা চুমু দিতে যাবে।
_-_-_-
হঠাৎ ঘুম টা ভেঙে গেল। এতোক্ষণে ঘুমে ছিলাম নাকি তা বলতে পারবো না। কিন্তু এখন কারো কথা শুনতে পারতেছি। চোখ এখনো বন্ধ করে আছি। মাথার নিচে নরম কিছু অনুভব করলাম। মিটমিট করে চোখ খুলে দেখি আমি সামিয়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি।আর সামিয়া আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ডিম লাইটের আলোতে সামিয়া কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ভাবতে লাগলাম আমি এখানে কেন? আমি তো পানিতে ভিজতে ছিলাম।
হঠাৎ,সামিয়া তার মুখ আমার কাছে নিয়ে আসলো।যেই কিস দিবে তখনই আমি নড়ে উঠলাম। সামিয়া লজ্জা পেয়ে তার মাথাটা অন্য দিকে ঘুরাতে যাবে তখনই আমি হাত দিয়ে সামিয়ার মাথা আমার দিকে ঘুরিয়ে কাছে নিয়ে এসে চার ঠোঁট এক করে দিলাম। সামিয়া শুধু ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে।
একটু পরে শান্ত হয়ে গেলো কিন্তু কোনো রেসপন্স দিচ্ছে না। আমিও ছেড়ে দিলাম। কেননা,আমি চাই না জোড় করে অধিকার আদায় করতে। আমি সামিয়া কে বললামঃ সামিয়া তুমি আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেন? আমাকে কী মাফ করা যায় না?
সামিয়াঃ আমি কেন আপনাকে কষ্ট দিতে যাবো? আর মাফ তো আমি অনেক আগেই আপনাকে করেছি।
আমিঃ তাহলে আমাকে বারবার দূরে সরিয়ে দিচ্ছো কেন?
সামিয়া চুপ করে আছে। আমি বললামঃ আমাকে ভালো নাই বাসলে কেন আমাকে বৃষ্টির পানি থেকে এখানে নিয়ে আসলে? কেন আমার সেবা করলে?
সামিয়া বেড থেকে নামিয়ে যায়ে বললোঃ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন। নইলে শরীর খারাপ করবে।
আমিঃ আমার কথার উত্তর দেও আগে।
সামিয়াঃ প্রশ্নের উত্তর গুলো নাহয় অজানাই থাক নাকি?
আমি কিছু না বলে সামিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সামিয়া রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই আমি বললামঃ কোথায় যাচ্ছো?
সামিয়াঃ আপনি এখানে ঘুমিয়ে পড়ুন আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।
আমিঃ এখানে থাকলে কী সমস্যা?
সামিয়াঃ না না আমি থাকাতে যদি আপনার কোনো কষ্ট হয়।
সামিয়ার কথায় প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বেড থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় যায়ে শুয়ে সামিয়া কে বললামঃ যাও বেডে শুয়ে পড়ো।
সামিয়াঃ তার দরকার নেই, আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।
আমিঃ খারাপ হলেও এতোটা খারাপ নইযে,কারো অনুমতি না নিয়ে তার কাছে অধিকার ফোলাতে যাবো।
সামিয়া কিছুক্ষণ ভাবার পর বেডে পড়লো। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল। মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখি রাত তিনটা বাজে। আর ঘুম ধরতেছে না।
বেলকুনিতে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে সামিয়ার বেডের পাশে দাঁড়িয়ে সামিয়া কে দেখতে লাগলাম। ডিম লাইটের আলোতে খুব সুন্দর লাগতেছে। আলোটা একেবারে মুখের উপর পড়েছে। কিন্তু চুল গুলো আমাকে দেখতে বাঁধা দিচ্ছে। মন চাচ্ছে চুল গুলো সরিয়ে দেই কিন্তু সেই অধিকার এখন আমার নেই। যদিও সে আমার স্ত্রী।
দাড়িয়ে থেকে দেখতে দেখতে মন আর মানলো না। সামিয়ার পাশে বসে পড়লাম। শরীরটা একটু ক্লান্ত লাগতেছে আর জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে। হাত দিয়ে সামিয়ার মুখের উপর থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। এর পরে দেখতে লাগলাম আমার প্রিয়শীকে।
দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারবোনা। সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখি আমি সামিয়া কে জড়িয়ে ধরে আছি আর সামিয়া আমার বুকের উপর শুয়ে আছে। কপালে যেমনি একটা চুমু দিতে যাবো তখনি সামিয়া চোখ খুললো।
চোখ খুলে আর কোনো কথা না বলে আমার বুকের উপর থেকে নেমে ঠাসস ঠাসস করে আমার গালে দুইটা চড় মারলো। আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
সামিয়া বলতে শুরু করলোঃ লুচ্চা তোকে আমি নিষেধ করিনি তুই আমার কাছে আসবি না? রাতেই তুই লেকচার দিলি অনুমতি ছাড়া তুই কিছু করিস না তাহলে এখন কি করতে চেয়েছিলিস? কেনো তুই আমার পিছনে লেগে আছিস? আমাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না। তোদের খুশির জন্যই তো আমি চলে এসেছি দূরে। তবুও কেন তুই আমার পিছে পড়ে আছিস? আর কি চাস তোরা আমার থেকে? আমার সন্তানকে? নিয়ে যা। তবুও আমাকে মুক্তি দে। আমি চাইনা তোদের কাছে ফিরে যেতে আমি একাই ভালো আছি। তোদের মতো স্বার্থপরদের কে দেখলে শুধু ঘৃণা হয় ঘৃণা।
সামিয়ার চড়ের আঘাত যতটা না লেগেছে কথা গুলো তার থেকে বেশি এই মনে আঘাত করেছে। আমি সামিয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললামঃ সামিয়া তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?
সামিয়াঃ না আমি কাউকে ভালো বাসি না। আর পুড়তে চাইনা ভালোবাসা নামক কোনো দহনে। যেখানে নেই কোনো বিশ্বাস, নেই কোনো আস্থা আছে শুধু ঘৃণা আর স্বার্থপরতা। আর ভালোবাসা সেটা আবার আপনাকে , এটা অসম্ভব । কান খুলে শুনে রাখুন আপনাদের প্রতি আমার কোনো ভালোবাসা নেই আছে শুধু ঘৃণা আর ঘৃনা।( বেড থেকে নামতে নামতে)
কথাগুলো শুনে আমার দাঁড়িয়ে থাকাটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমি সামিয়ার সামনে যায়ে দাঁড়িয়ে বললামঃ চোখে চোখ রেখে বলো তো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা? আর হ্যাঁ তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। যেখানে থেকে আর আর ফিরে আসে না কেউ। হারিয়ে যাবো কোনো এক অজানা জায়গায় যেখানে খুঁজে পাবে না কেউ। বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?
সামিয়া কিছু না বলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। সামিয়ার চোখের কোণায় পানি চিকচিক করেছিলো। সামিয়া কে চুপ করে থাকতে দেখে বললামঃ কি হলো বলো? আচ্ছা বলতে হবে না। আমার দোষ টা কি ছিলো জানো, আমি তোমাকে কোনো কিছু না জিজ্ঞাসা করে, ভুল বুঝে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিয়েছি। তাইতো?
আচ্ছা তোমার মনে আছে কি? আজ থেকে আট বছর আগে তুমিও আমার মতো ভুল করেছিলে। আমাকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে গেয়েছিলে। আর ভুল বুঝার অন্যতম কারণ ছিলো তুমিও আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলে না। সেদিন তুমিও আমাকে বলেছিলে “লুচ্চা”, “চরিত্রহীন”, “স্বার্থপর” ইত্যাদি। আমি কি সেদিন কষ্ট পেয়েছিলাম না? নাকি আমি তোমাকে ছেড়ে সুখেই ছিলাম? এরপরে তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলে। আমিও তোমাকে ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। শুধু ভালোবাসি বলে। আর
সেদিন তোমাকে ভুল বোঝার কারণ কি জানো? সেদিন তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করা। তুমি যেদিন আমাকে সারপ্রাইজের কথা বলেছিলে সেদিন তোমাকে আমি সিহাবের সাথে পরিত্যক্ত বাসায় দেখেছিলাম। কিন্তু কি জন্য গিয়েছিলে সেটা আমি জানতাম না। তোমাকে জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলেছিলে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা। তার পরের দিনই তোমার আর সিহাবের কিছু ফটো আর ভিডিও পাই। আচ্ছা তুমি কি করতে সেদিন আমার জায়গায় থাকলে? ভুল তো মানুষের হয়।
আমার ভুলের প্রায়চিত্তের জন্যই তো আজ আমি এখানে পড়ে আছি।পড়ে আছি আমার মেয়ের মুখে বাবা ডাকটা শুনার জন্য। আমার ভুলের জন্য আমি তো তোমার কাছে বারবার ক্ষমা চাচ্ছি কিন্তু বারবারই তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো। একটা কথা জানো কি? তুমি বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরের তিনটা বছর আমি কি ভাবে কাটিয়েছি তা বলতে পারবো না।
তিনটা বছর আমার কাছে মনে হয়েছিল তিনটা যুগ। আজ থেকে একবছর আগে সিহাবের কাছ তোমার ব্যপারে সত্যটা জানার পর থেকে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতাম না। শুধু তোমার কথা ভেবে। মনে পড়তো তোমার একটা কথাই “সাহিদ তুমি আমাকে সব সময় খাইয়ে দিবে তো? তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না।”
তোমাকে দিনে খুঁজতাম আর রাতে তোমার ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতাম। কোলবালিশ কে তোমায় ভেবে জড়িয়ে ধরে কথা বলতাম। রুম থেকে বের হতাম না। কারণ রুমে তোমার কিছু স্মৃতি ছিল যেগুলো আঁকড়ে ধরে বসে থাকতাম।মা বাবা বিয়ের কথাও বলেছিলো। কিন্তু আমি তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবোনা বলে বিয়ে করিনি।
চোখের পানি মুছে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার বললামঃ এখন আমাকে নাকি তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।ভালো থেকো।আর আসবো না তোমাকে বিরক্ত করতে।
কথা গুলো বলে যেমনি পিছনে ঘুরতে যাবো তখনই সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললামঃ কি হয়েছে কান্না করতেছো কেন? আমি তো চলেই যাচ্ছি আর তো বিরক্ত করবো না।
সামিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমার এই অনিশ্চিত জীবনে আর তোমাকে জড়াতে চাই না।
আমি অবাক হয়ে বললামঃ অনিশ্চিত জীবন মানে?
সামিয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ড্রয়ারের কাছে গেলো। ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বলতে লাগলোঃ কয়েক দিন আগে আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। আগে ছিলো কিন্তু এতোটা বেশি ছিলো না। আমি ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে গেলে ডাক্তার আমাকে সিটি স্ক্যান করতে বলেন।
এরপরে আমি সিটি স্ক্যান করলাম। রিপোর্ট আসলো আমার ব্রেন টিউমার। যেটা তখন অপারেশন করলে সাকসেস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিলো। কিন্তু আমার বেঁচে থাকার আর কোনো ইচ্ছা ছিলো না। সেদিন ঐশী তোমাকে ফোন দিয়ে আমার অসুস্থতার কথা বলেছিলো। সেদিন আমার মাথা ব্যথা বেশি হয়। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিলেন আমি লাস্ট স্টেপে চলে এসেছি। এখন অপারেশন করলে ঝুঁকি টা বেশি হবে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু দিন বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রোগের জন্য এটাও আর হবে না।
আমার রোগের কথা বাবাকে বলি নি। বললে তিনি চিন্তা করবে। আমার মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হতো আমি না থাকলে কে দেখবে তাকে? কিন্তু এখন তার বাবাই এসেছে আমার আর কোনো চিন্তা নেই।(মুচকি হেসে)
আমি সামিয়ার কথা গুলো শুনে ভাবতেছি আমি কি আমার সামিয়া কে হারিয়ে ফেলবো? সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ জানো সাহিদ তুমি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন এর জন্য আমার কোনো রাগ হয় নি।কারণ,আমি জানি তুমি আমাকে ভুল বুঝতেছিলে। আমি জানি কেউ তোমার জায়গায় থাকলে একই কাজ করতো। আমিও তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। এইজন্য আমি এই বিষয়ে রাগ করি নি। কিন্তু আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। যেখানে আমি তোমার হাতে তুলে খাওয়া ছাড়া খেতে পারতাম না। আর সেখানে আমি তোমাকে পাশে ছাড়া কীভাবে খাবো বলো। অনেক কষ্ট হতো প্রেগন্যান্সির সময় ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারতাম। প্রেগন্যান্সির সময় প্রত্যেক টা মেয়েরই চায় তার প্রিয় মানুষটা তার সাথে থাকা। কিন্তু আমার ভাগ্যে হয়নি। প্রত্যেক মেয়েই সেই সময় মা-বাবার আদর পাওয়ার আশা করে কিন্তু আমার হয়নি।
ঐশী হওয়ার পরে অনেকে অনেক কথা বলে কিন্তু আমি সেদিকে কান দেয়নি। আমার জবের জন্য অনেকে আমাকে বিয়ের অফার দেয় কিন্তু আমি আমার মেয়ের মুখের দিকে দেখে তাকিয়ে, তোমাকে দেওয়া কথা আর তোমার ভালোবাসার বন্ধন ছেড়ে কোথাও যাইনি।
তোমাকে যেদিন দেখেছিলাম যেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। যখন শুনলাম আল্লাহর রহমতে তুমিই আমাদের মেয়েকে এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা করেছো।এটা শুনে তো আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগছিলো।যে আমার মেয়েকে তার বাবাই রক্ষা করেছে। কিন্তু পরোক্ষণেই আমার রোগের কথা ভেবে তোমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আজকে সকালে তোমার গায়ে হাত তুলতে চাই নি কিন্তু কি করবো বলো আমার এই অনিশ্চিত জীবনে যে তোমাকে জড়াতে চাচ্ছি না।
বলেই কান্না করতে লাগলো।
আমিও আর নিজের কান্না ধরে রাখতে পারলাম না। আমিও সামিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললামঃ এই পাগলি তোমাকে বাঁচতে হবে। বাঁচতে হবে আমার জন্য,বাঁচতে হবে আমাদের মেয়ের জন্য। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করেন যেন।
সামিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললোঃ খুব ভালো বাসি সাহিদ তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ একটু জড়িয়ে ধরো না।
আমি সামিয়া কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আমাদের মেয়ে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কান্না করতে দেখে সেও কান্না করতে লাগলো। সামিয়া আমাকে বললোঃ সাহিদ আমার মাথাটা কেমন জানি ব্যথা করতেছে। প্লিজ একটু টিপি দেওনা।
সামিয়ার মাথা টিপে দিতে লাগলাম। হঠাৎ, করেই সামিয়া কেমন জানি করতে লাগলো। আমি ঐশীর নানুকে ডাক দিলাম।
ঐশীর নানু আসলে বললামঃ আপনি তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করুন। সামিয়া কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সামিয়া কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসালাম। আমিও ওর পাশে বসে ওর মাথা আমার বুকে রাখলাম। ঐশীর নানু গাড়ি ড্রাইভ করতেছে।সামিয়া ক্রমশই নেতিয়ে পড়তেছে।
ঐশী কান্না করতে করতে বললোঃ বাবাই মামনিল তি হয়েতে?
আমি আমার মেয়েকে কি বলে শান্তনা দিবো ভেবে পাচ্ছি না। শুধু মাথার মধ্যে একটা চিন্তায় হচ্ছে, আমি কী সামিয়া কে হারিয়ে ফেলবো। এতো কষ্ট করে আমি আমার সামিয়া কে পেয়েছি। এখন যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি আর বাঁচবো না। হে আল্লাহ আপনি আমার সামিয়া কে সুস্থ করে দিন।
(চলবে)