# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১৮শ
ডাক্তার আংকেল সামিয়ার আম্মুকে চেকআপ করে বললেনঃ হার্ট অ্যাটাক করেছেন। এখন থেকে খুব যত্নে রাখতে আর কোনো বিষয়ে যেন কখনো চিন্তিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে ।
ডাক্তার আংকেল বাসা থেকে বের হওয়ার একটু পরেই আব্বু আর সামিয়ার আব্বু বাসায় আসলো। সামিয়ার আব্বু সামিয়ার আম্মুকে সেন্সলেস অবস্থায় দেখে বললোঃ কি হয়েছে সুলতানার (সামিয়ার আম্মুর নাম সুলতানা)?(উত্তেজিত হয়ে)
আমি সামিয়ার আব্বুকে সিহাবের বলা কথা এবং তা শুনে সামিয়ার আম্মুর সেন্সলেস হওয়ার কথা বললাম।
সামিয়ার আব্বু সামিয়ার ব্যপারে শোনার পর আমার আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আব্বু কি বলে শান্তনা দিবে সে ভাষা তার নেই। সবারই একটাই কথা কেন আমরা সামিয়ার কাছ থেকে বিষয়টা একবারের জন্যও শুনলাম না।
আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।আর ভাবতে লাগলাম সেদিনের কথা যেদিন সামিয়া বলেছিলো ” সাহিদ তুমি আমাকে সব সময় তুলে খাওয়াবে তো? আমি বলেছিলাম হ্যাঁ খাওয়াবো। এরপরে সে বলেছিলো তুমি আমাকে না খাইয়ে দিলে আমাকে ভালো লাগে না।”
জানিনা সামিয়া এখন কেমন আছে?
আমার একটা ভুলের জন্য আজকে আমাদের এই অবস্থা। এতো দিন সব দোষ সামিয়া কে দিয়ে এসেছিলাম। তাকে সন্দেহ করে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। এটাই ছিলো আমার ভালো বাসা? যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছিলো তাকেই কষ্ট দিলাম। সেদিন যদি সামিয়ার একটা কথা শুনতাম। তাহলে হয়তবা এমন হতো না। এখন নিজেকে নিজের প্রতিই খারাপ লাগতেছে।
সারা রাত চোখের দুই টা পাতা এক হয়নি । মন চাচ্ছে দৌড়ে সামিয়ার কাছে যেয়ে বলি,সামিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও আমি না জেনে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ মাফ করে দাও। কিন্তু সে আছে কোথায় সেটাই তো আমার অজানা। না বসে থাকলে চলবে না। আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
সকালে কোনো মতো ফ্রেশ হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলাম থানার উদ্দেশ্যে। সেখানে যায়ে সামিয়ার সম্পর্কে কিছু জানতে পারি। থানায় পৌঁছে ওসিকে সামিয়ার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ স্যার সামিয়া ম্যাম আজ থেকে তিন বছর আগে তার সকল কিছু জমা দিয়ে চলে গেছেন।
আমিঃ কোথায় গেছে তা বলতে পারবেন কি?
ওসিঃ না স্যার আমরা সেটা বলতে পারবো না। আর হ্যাঁ তিনি যাওয়ার সময় তাঁর ইউনিফর্ম জমা দিয়ে গিয়েছিলেন।
আমি থানায় দেরি না করে চলে গেলাম সেই পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা বাসাটাতে। কোনো দিন সেদিকে যাওয়া হয়নি। বাসার কাছে যায়ে দেখি একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আছে আর সেখানে লেখা আছে “এই জমির বর্তমান মালিক সাহিদ হাসান সাহি।”
এটা দেখে চোখ দুটো নোনা জলে ভিজিয়ে গেল। আমার খুশির জন্য সে এতো কিছু করেছে। আমি পাশের একটা টং দোকানে যায়ে দোকানদারকে বললামঃ মামা এই যে বাসাটা দেখতে পাচ্ছেন এটার মালিক কি এখানে এসেছিলো।
দোকানদারঃ না মামা কোনোদিন দেখনি। শুনেছি বাসাটা হাসপাতাল বানাবে। যেটাতে গরিবদের চিকিৎসা করবে। ক্যান মামা তোমার কেউ হয় নাকি?
আমি দোকানদারকে কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বের হলাম সামিয়া কে খুঁজতে । কোথাও যদি একটা বার দেখা পেতাম। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে হতাশ হয়ে ফিরে আসলাম। পরদিন আবার বের হলাম খুঁজতে। লোকজন কে সামিয়ার ফটো দেখাচ্ছি কিন্তু কে বলতে পারতেছে না কোথায় আছে।
আমি সারাদিন সামিয়া কে খুঁজি আর রাতে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাই। সামিয়ার আব্বু আর আমার আব্বু মিলে সামিয়া কে খুঁজতেছে কিন্তু কোথাও সামিয়ার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কেটে গেল একমাস ।এই একমাসে সামিয়া কে পুরো রাজশাহী শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু পাওয়া যায়নি। সামিয়ার আম্মু সামিয়ার কথা ভেবে এখন বেশি অসুস্থ।
এভাবে কেটে যায় এক বছর। আমিও নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছি। কোথাও আর যেতে মন চায় না। সব সময় সামিয়ার ছবি বুকে নিয়ে কান্না করি। মাঝে মাঝে কোলবালিশ কে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলি এটাই আমার সামিয়া। কথা বলি সামিয়া তুমি এতদিন কোথায় ছিলে? জানো তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি?
কিন্তু আমার সামিয়া নামক কোলবালিশ টি কোনো কথা বলে না। আব্বু আম্মু আমার এই রকম অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে। বন্ধুরা বাসায় এসে আমাকে দেখে যায়। তারা আমাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমার চুল গুলো বড় বড় হয়ে গেছে। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছি। দেহের ওজন আগের থেকে কমে গেছে। কেমন জানি চিকনা চিকনা লাগে!
রাতে অন্ধকারে রুমে বসে থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতেছি। কতদিন পর আজকে আবার ফোনটা হাতে নিলাম। কয়েক পার্সেন্ট চার্জ আছে। ওয়েলপেপারে আজ থেকে চার বছর আগের তোলা সামিয়ার একটা ফটো সেভ করে রাখা আছে। যেখানে সামিয়া কাশফুলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কাশফুলের কোমল ছোঁয়া নিচ্ছে। ছবিটা তুলেছিলাম পদ্মার চরে। ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো,দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করতেই একটা ছোট্ট বাচ্চা কান্না করতে করতে বললোঃ বাবাই মামনি অতুস্থ হয়ে পলেথে।
কথাটা শুনে কলিজা টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। আজ একবছর পরে আবার সেই ছোট্ট বাচ্চাটি আমাকে ফোন দিয়েছে। এখনো তার কথা গুলো আগের মতই আছে। কথা গুলোর মাধ্যমে বুঝতে পারলাম এটা সেই ছোট্ট বাচ্চা।
কি বলবো আমি ভেবে পাচ্ছি না। আমিতো বাচ্চাটিকে চিনি না।কোথায় তার বাসা কে তার মামনি? আর আমিই বা তার অসুস্থ মামনিকে কি করবো? আমি তাকে বললামঃ আম্মু তোমার মামনির নাম কি?
আমার কথা শেষ হতেই ফোনটা কেটে দিলো। আমি ফোন দিবো কিন্তু ফোনে কোনো ব্যালেন্স নাই। ইমার্জেন্সি নিয়ে ফোন দিলাম কিন্তু সুইচ অফ দেখাচ্ছে।
আম্মু আমার পাশে এসে বসলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ বাবা তুই আমাদেরকে কেন এতো কষ্ট দিচ্ছিস?(চোখের কোণায় পানি নিয়ে এসে)
আমি অবাক হয়ে বললামঃ কই আম্মু,,,, আমি কেন তোমাদের কষ্ট দিতে যাবো? আর কোথায় তোমাদের কষ্ট দিচ্ছি?
আম্মুঃ বাবা তুই যে একবছর আগে ধরে নিজেকে রুমের মধ্যে বদ্ধ রেখে কষ্ট দিচ্ছিস এতে কি আমরা কষ্ট পাচ্ছি না? তুই এখন নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করিস না, এতে কি আমরা কষ্ট পাচ্ছি না? শোন বাবা আমরা তোর বাবা মা, কোনো সন্তান যদি ভালো না থাকে তাহলে বাবা কি করে ভালো থাকবে বল? আমরা তো সামিয়া কে কম খুঁজি নি। বা তুইও তোর কম জায়গায় খুঁজিস নি।
কোথাও পেয়েছিস কী? যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এটা নিয়ে এখন পড়ে থাকলে চলবে কি? এখন আমাদের বয়স হয়ে গেছে। এখন আমাদের রেস্ট নেওয়ার সময় কিন্তু দিন দিন আমাদের কষ্ট টা বেড়েই যাচ্ছে। আমরাও তো চাই জীবনের শেষ মুহূর্ত টা একটু হাসি খুশি ভাবেই কাটাতে। প্রত্যেক বাবা মা চায় শেষ মুহূর্তে তাদের সন্তানদের কে হাসি খুশি দেখতে। প্লিজ বাবা তুই আগের জীবনে ফিরে আয়। সব কিছু আবার তুন করে শুরু কর। আমরা আর তোর এই অবস্থা মেনে নিতে পারতেছি না! আজ যদি তোরকিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো?(কান্না করতে করতে)
আসলেই তো আম্মু ঠিক কথায় বলেছে, প্রত্যেক বাবা মা-ই তো চায় তাদের সন্তানদের কে হাসি খুশি দেখতে। প্রত্যেক বাবা মা-ই তো চায় জীবনের শেষ সময় টা হাসি খুশি ভাবে কাটাতে। আর তাদেরকে হাসি খুশি রাখার দায়িত্ব হলো প্রত্যেক সন্তানদের। আজকে কেন তারা এতো কষ্ট করবে? জীবনের শেষ সময়ে এসে দুঃখ কষ্ট কেন জীবন সঙ্গী হবে তাদের?
তারাও তো আমাদের জন্য কম সংগ্রাম করেনি। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে অর্থ উপার্জনের রাস্তায়। যেখানে অতিবাহিত হয়েছে তাদের লাইফ সার্কেলের মিনিমাম সেভেনটি ফাইভ পার্সেন্ট সময়। শেষ সময়েও যদি কষ্ট করতে হয় তাহলে তো আমাদের মতো সন্তানের কোনো প্রয়োজন নেই তাদের।
আম্মু কান্না করেই যাচ্ছে । আমি আম্মুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ আম্মু আমি এখন থেকে আগের মতো হয়ে যাবো। তোমাদের কে আর কষ্ট দিবো না। এখন ডাইনিং টেবিলে যায়ে এক প্লেট ভাত নেও। তোমার হাতে অনেক দিন ধরে তুলে খাওয়া হয়নি।
আম্মু আমার কথা শুনে একটু হেসে কপালে চুমু দিয়ে বললোঃ ঠিক আছে বাবা আয়।
আম্মু যাওয়ার পর আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলাম। আম্মু আমার কথা শুনে কত খুশি হয়েছে। প্রত্যেক বাবা মা-ই তার সন্তানের মঙ্গল চায়। সামিয়া কথা মনে হতেই আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমিও তো সামিয়া কে ভালোবাসি।একটা ভুলের জন্য আজকে আমাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। সে যদি আমার ভাগ্যে থাকে তাহলে তাকে পাবো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। আব্বু আর সাফিয়া বসে থেকে খাওয়া দাওয়া করতেছে। আর আম্মু টেবিলে ভাত নিয়ে বসে আছে। কতদিন পরে আজকে সবার ডিনার করবো। এতো দিন নিজের রুমেই খাওয়া দাওয়া করতাম। আম্মু আমার জন্য খাবার দিয়ে আসতো আমি খেতাম। আম্মু খাইয়ে দিতে চাইলে আমি নিষেধ করতাম। আর সাফিয়া তো প্রতিদিন আমার কাছে এসে বায়না ধরতো আমি যেন সকলের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া করি।
কিন্তু তার বায়না আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জেদকে হার মানাতে পারে নি। আমি সঙ্গি করে নিয়েছিলাম একাকিত্ব কে। একাকি থাকতে খুব ভালো লাগতো।একাই বসে থেকে গল্প করতাম সামিয়ার ছবি গুলোর সাথে আর সামিয়া নামক কোলবালিশ টির সাথে।
আব্বু আমাকে দেখে বললোঃ কি ব্যাপার আমি কিছু ভুল দেখতেছি না তো?
আমি আম্মুর পাশে বসতে বসতে বললামঃ ভুল দেখবে কেন?
সাফিয়া আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে খাবার প্লেট রেখে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ ভাইয়া তুমি এখন থেকে আমাদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবে?(উত্তেজিত হয়ে)
আমিঃ হুমম।
সাফিয়াঃ ওহহ তাহলে কত মজা হবে জানো? কত দিন তোমার সাথে বসে থেকে ডিনার করিনি।
আমিঃ এখন থেকে একসাথে ডিনার করবো। এবার খুশি?
সাফিয়াঃ হ্যাঁ।
আম্মু আমাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আব্বু কে বললামঃ আব্বু কালকে থেকে আমি অফিসে যাবো।তুমি এমডি সাহেবকে বলে দিও।
আব্বুঃ তুমি দীর্ঘ দিন ধরে নিজেকে একাকিত্বের মধ্যে রেখেছিলে। এখন অফিসে না যায়ে কয়েকদিন বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও। নইলে বোরিং ফিল করবে।
আমিঃ আমি কাল থেকেই অফিসে জয়েন করবো এটাই ফাইনাল।
আব্বুঃ ঠিক আছে।
পরের দিন সকালে নাস্তা করে সেলুনে গেলাম। সেলুনে যায়ে চুল গুলো কাটলাম। বাসায় এসে গোসল করে অফিসে চলে গেলাম। তবে সাধারণ ভাবেই গেলাম। নিজেকে গোছানোর মতো আর সময় নেই। তাছাড়া এসবের প্রতি ভক্তি উঠে গেছে। মনের মানুষটা যদি পাশে থাকতো তাহলে হয়তো মনে কিছুটা রস জন্মাতো।
অফিসে যাওয়ার পর সবাই আমাকে স্বাগতম জানালো। অনেক দিন পর আজকে অফিসে আসলাম। সকলের সাথে কথা বলে আমি আমার কেবিনে চলে আসলাম। একটু পরে আমার পিএ নেহা এসে বললোঃ স্যার আপনাকে আজ কত দিন পর দেখতেছি।
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
নেহাঃ আমিও ভালো আছি।অফিসটা এখন খুব ভালো ভাবে চলবে।
আমিঃ হুমম।
অফিসে কিছুক্ষণ কাজ করে বাসায় আসলাম। প্রথম দিন আজকে ভালো লাগতেছে না। পরেরদিন আবার অফিসে গেলাম। নেহা মেয়েটি যথেষ্ট ভদ্র এবং মিশুটে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা মা আর ছোট ভাই নিয়ে সংসার। তার বাবা একটা ব্যাংকে জব করতেন। এখন অবসরে আছেন। দেখতেও খুব সুন্দর কিন্তু কোনো দিন রুপের বড়াই করে নি। আমার সঙ্গে একেবারেই ফ্রি। আমি তাকে বোনের মতোই দেখি । দুই বছর আগে লেখা পড়া শেষ করে আমার কম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউ দেয়। ভাগ্যক্রমে টিকিয়ে যায়। তার কাজে মুগ্ধ হয়ে আমি আমার পিএ বানিয়ে দেই। এখন সে ভালো সেলারি পায়।
কেবিনে বসে থেকে ল্যাপটপ অন করতেই নেহা আমার রুমে আসলো। নেহা বললোঃ স্যার কেমন আছেন?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তোর কি অবস্থা?আর তোকে কতবার বলবো আমাকে স্যার না বলে ভাইয়া বলে ডাকবি।
নেহাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া আমার অবস্থাও ভালো।
আমিঃ বিয়ে করবি না নাকি আমিই তোর জন্য ছেলে দেখা শুরু করবো? আন্টি তো আমাকে বলতেছে ছেলে দেখার জন্য।
নেহাঃ বাদ দিন এসব । আগে বলুন ভাবির কি খবর? মানে ভাবির সন্ধান পেয়েছেন?
আমিঃ না,,, অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি!(মন খারাপ করে)
নেহাঃ সরি ভাইয়া আমি মনে হয় কথাটা বলে আপনাকে কষ্ট দিলাম!
আমিঃ না সমস্যা নেই।
অফিস শেষ করে বাসায় আসলাম। কেটে গেল এক সপ্তাহ। অফিসে যাতেই নেহা বললোঃ ভাইয়া আমাদের কম্পানির সাথে এফসি কম্পানির একটা মিটিং আছে। আর মিটিং টা করার জন্য আমাদেরকে সিলেট যেতে হবে।
আমিঃ কবে মিটিং?
নেহাঃ আগামি কাল বিকেল তিনটায়।
আমিঃ ঠিক আছে তুই সব ফাইল রেডি করে রাখিস। সাথে তুইও রেডি থাকিস।
নেহাঃ ঠিক আছে।
রাতে গাড়ি নিয়ে আমি আর নেহা বের হলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে।
সিলেট পৌঁছে কম্পানি থেকে যেই হোটেল বুক করা হয়েছিলো সেখানে গেলাম। বিকেলে তিনটায় মিটিং এর জন্য এফসি কম্পানিতে গেলাম। সেখানে মিটিং হবে।আর মিটিং টা ছিলো একটা প্রজেক্ট নিয়ে। ভালোভাবেই মিটিং টা শেষ হলো। আমাদের কম্পানির পারফরমেন্স ভালো হওয়ায় প্রজেক্ট টা আমাদের কম্পানিই পেয়েছে।
আমি নেহা কে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। নেহা সিলেটের কিছুই দেখেনি। ঘোরাঘুরি করে হোটেলে চলে আসলাম। পরের দিন গেলাম জাফলং। সেখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার দেখতে গেলাম। মাজার দেখার পরে হোটেলে চলে আসলাম। আগামী কাল সকালে রাজশাহীতে চলে যাবো। রাতে রেস্টুরেন্টে থেকে ডিনার করে হোটেলে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে বাসায় যাওয়ার সময় মনে হলো, সিলেটের বিখ্যাত কমলালেবু আর সাতকড়ার আচারের কথা। গাড়ি থেকে নেমে দোকান থেকে কমলালেবু আর সাতকড়ার আচার নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই লক্ষ্য করলাম একটা ছোট্ট মেয়ে বাচ্চা
বয়স আনুমানিক তিন বছর হবে রাস্তার মাঝখানের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। মাঝরাস্তায় তার খেলনার বেলুন উড়িয়ে গেছে। সেটা নেওয়ার জন্যই বাচ্চাটি মাঝরাস্তায় যাচ্ছে আর সামনে থেকে একটা বাস হর্ণ দিতে দিতে আসতেছে। বাচ্চাটির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
বাসটিও কাছে চলে এসেছে। আমি হাতে থাকা কমলালেবু আর সাতকড়ার আচারের ব্যাগ ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাচ্চাটির কাছে গেলাম আর বাচ্চাটিকে কোলো তুলে নিয়ে রাস্তার সাইটের দিকে লাফ দিলাম। আর বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার বিপরীত সাইটে থাকা ক্যারেন্টের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়।
ঘটনাটি দ্রুত ঘটে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে অনেক লোক জড়ো হয়ে যায়। আমি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে দাড়াতেই বাচ্চাটি আমাকে বাবাই বাবাই বলতে শুরু করলো।
আমি ছোট্ট মেয়েটির মুখে বাবাই বাবাই ডাক শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম।কারণ এই বাচ্চাটাই হলো সেই বাচ্চা যে আমার কাছে ফোন দিয়ে কথা বলতো। একেবারে সেম কন্ঠ।আর অবাক করার বিষয় হলো ছোট্ট মেয়েটি আমাকে চিনতে পারলো কি করে ? আমাকে কি আগে কোথাও দেখেছে নাকি? কিন্তু আমারতো মনে হচ্ছে না আমি এই বাচ্চাটিকে দেখেছি। তবে বাচ্চাটিকে কেমন জানি আপনি আপন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ।
চারিদিকে কি হয়ে যাচ্ছে সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই আমি বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতেছি। আর বাচ্চাটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশে থাকা একটা লোকের ডাকে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম।
লোকটিঃ ভাই আপনার হাত থেকে রক্ত পড়তেছে।
আমি লোকটির কথাই হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাত কিছুটা ছিলে গেছে। বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে লাফ দেওয়ার সময় হয়তো এটা হয়েছে। বাচ্চাটি আমার হাতের রক্ত দেখে বললোঃ বাবাই তোমার হাতে লক্ত তেন?
বাচ্চাটিকে যতই দেখছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমাকে বাবাই বাবাই বলতেছে কেন?
আমি বাচ্চাটিকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু তোমার নাম কি?
বাচ্চাটিঃ আমাল নাম ইসলাত দাহান ঐতী ( ইসরাত জাহান ঐশী)।
নামটা শুনতেই বুকটা কেঁপে উঠলো।কারণ, আজ থেকে চার বছর আগে আমি সামিয়াকে বলেছিলাম, সামিয়ার আমার মেয়ের নাম কি রাখবো জানো?
সামিয়াঃ কি রাখবে?
আমিঃ ইসরাত জাহান ঐশী রাখবো।নামটা কেমন হবে?
সামিয়া আমার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললোঃ হুমম খুব সুন্দর নাম। আমার পছন্দ হয়েছে।
কথা টা ভাবতেই চোখ পানি পড়তে লাগলো। ঐশী আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললোঃ বাবাই তান্না কলতেথো তেন?
আমি আর মনের ভিতর কথা চেপে না রেখে ঐশীকে বললামঃ আম্মু তুমি আমাকে চিনো? আমাকে তুমি কোথায় দেখেছিলে?
ঐশীঃ আমাল আম্মুল মোবাইলে।
কিছুটা অবাক হয়ে বললামঃ তোমার আম্মুর নাম কি?
ঐশীঃ আমাল আম্মুল নাম সামিয়া দাহান।
ঐশীর কথা শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমার ছবি ওর আম্মুর মোবাইলে।আর ওর আম্মুর নাম সামিয়া। তাহলে কি আমার সামিয়া?
পিছন থেকে কে যেন বললোঃ ঐশী তুমি ঠিক আছো আম্মু?(উত্তেজিত হয়ে)
কন্ঠটা কোনো মেয়ের। তবে কন্ঠটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগলো। পেছনে ফিরে মেয়েটির দিকে তাকাতেই হাত পা অবশ হয়ে গেল। আর বুকের বাঁ পাশ টা ধড়ফড় করতে লাগলো। মেয়েটি হলো আমার সামিয়া। যাকে আমি বিনা দোষে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি। সামিয়াও আমাকে এখানে দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। আমিও তার দিকে তাকিয়ে আছি। দুজনেই চোখের দুজনের প্রতি জমানো তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। কত দিন পরে দেখতেছি আমার প্রিয় মানুষটাকে।
জানিনা কত সময় ছিলাম আমরা।পাশে কি হয়ে যাচ্ছে তারও খবর নেই। ঐশীর কথাই দুজনের নিরবতা ভেঙ্গে গেল। ঐশী আমার কোল থেকে নেমে সামিয়ার কাছে যায়ে বললোঃ মামনি এইযে বাবাই।( আমাকে দেখিয়ে দিয়ে)
সামিয়া ঐশীর দিকে তাকালো এরপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে ঐশীকে নিয়ে জোড়ে জোড়ে হেঁটে ওর গাড়ির কাছে যায়ে গাড়িতে ওঠে গেল।আমি পিছন থেকে সামিয়া সামিয়া বলে ডাকতেছি কিন্তু সে শুনতেছে না। এরপরে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
আমি বোবার মতো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর পাশে থাকা একটা লোক কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ভাই এই পুলিশ মেয়েটা কে? আর তার বাসা কোথায়?
আর হ্যাঁ সামিয়া পুলিশের ড্রেস পড়ে ছিলো গর তার গাড়িটাও ছিলো পুলিশের।আমি মিন যেটা সরকার থেকে দেয়।
লোকটিঃ ইনি হলেন আমার সিলেট সদর থানার এসআই। বাসা কোথায় সেটা বলতে পারবো না কিন্তু আজ থেকে প্রায় চার বছর ধরে এখানে আছে।
আমিঃ ধন্যবাদ ভাই।
আমি আমার গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে উঠে হোটেলে চলে গেলাম। হোটেল যায়ে নেহা কে বললামঃ নেহা তুই ড্রাইভার আংকেলের সাথে রাজশাহীতে চলে যা।
নেহা অবাক হয়ে বললোঃ আপনি কোথায় যাবেন?
আমিঃ আমার একটা কাজ আছে জানি না কত দিন লাগবে সেটা শেষ হতে। তুই ভালোভাবে অফিসটা সামলাবি আর কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবি।
নেহাঃ ঠিক আছে।
এরপরে নেহা আর ড্রাইভার আংকেল কে পাঠিয়ে দিলাম রাজশাহীতে। আমি ফোন দিয়ে আব্বু কে দিয়ে আব্বুকে বলে দিলাম যে, আমি এখন যাবো না। কারণ জানতে চাইলে বললাম, একটা সিক্রেট মিশন আছে আর সেটা কমপ্লিট হলেই চলে যাবো।
হোটেল থেকে বের হলাম সিলেট সদর থানাতে।
_-_-_-_-_-_
সামিয়া ঐশীকে নিয়ে শপিং করতে গিয়েছিলো আর সেখানেই তো এই অবস্থা। সামিয়া ঐশীকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে রুমে ঢুকে বেডে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো। ঐশী তাকে ডেকে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খবর নেই। সামিয়া কান্না করতে করতে বলতেছেঃ কেন সাহিদ কেন তুমি আবার আমার কাছে আসলে। আমি তো আমার মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি।
_-_-_
থানায় পৌঁছে দেখি ওসি সাহেব বসে আছে। তাকে বললামঃ আপনাদের এসআই এর নাম কি?
ওসিঃ মিসেস সামিয়া। বাট আপনি কে?
আমিঃ আমি তার স্বামী।
ওসিঃ হোয়াট কি বলতেছেন এসব?
আমিঃ হুমম। ঠিকই বলতেছি। আমার নাম সাহিদ হাসান সাহি। তার বাসার ঠিকানাটা দেন তো।
ওসিঃ এটা কেমন কথা স্যার আপনার ওয়াইফের বাসার ঠিকানা আপনি জানেন না।
আমিঃ একটা মিস বিহেভ হয়েছিল আমাদের মাঝে।তার থেকেই দুজনে বিচ্ছেদ। আসলে রাইটিং ভাবে বা কাগজে কলমে বিচ্ছেদ নয়।
ওসিঃ বুঝতে পেরেছি।
ওসির থেকে সামিয়ার বাসার ঠিকানা নিয়ে একটা রিকশা নিয়ে বের হলাম। সামিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে। বাসার সামনে রিকশা থেকে নামলাম।
বাসার ভিতরে ঢুকে দেখি গার্ডেনে একটা ভদ্রলোক বসে আছেন। আমাকে দেখে বললেনঃ তুমি সাহিদ না?
আমি অবাক হয়ে বললামঃ হ্যাঁ আমি সাহিদ বাট আপনি আমাকে কি করে চিনলেন?
সামিয়ার মুখে তোমার নাম শুনেছি আর তার মোবাইলে তোমার ফটো দেখেছি।
আমিঃ আপনি সামিয়া কে কোথায় পেয়েছিলেন? আর সামিয়া এখানেই কেন?
লোকটিঃ সেটা অনেক কাহিনী। আজ থেকে চার বছর আগে আমি রাজশাহীতে গেছিলাম আমার ব্যবসার জন্য। কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। পরের দিন অফিসে জরুরি মিটিং থাকায় সন্ধ্যায় রাজশাহীতে থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হই।
গাড়িতে উঠার সময় দেখি রাস্তার পাশে একটা মেয়ে মাথা হেলে কান্না করতেছে।আর মেয়েটা হলো আজকের সামিয়া। সামিয়ার কাছে যাই। এরপর তার কি হয়েছে সব কিছু তার থেকে শুনি। তাকে আমার বাসায় নিয়ে আসতে চাইলে প্রথমে না করে । পরে আমার মেয়ে হয়ে থাকার কথা বললে রাজি হয়ে যায়। এরপরে নিয়ে আসি তাকে এখানে। আর আমার কোনো সন্তান না থাকায় তাকে এই চার বছর ধরে নিজের সন্তানের মতোই দেখেছি। আমি জানি তোমাদের মধ্যে কি হয়েছিলো। তবে এখন সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করাই ভালো। একটা মেয়ের জন্য পরিবার থাকাটা খুবই প্রয়োজন।
আমিঃ কিন্তু সে আমাকে ক্ষমা করবে কি?
লোকটিঃ দেখো চেষ্টা করে।
আমি লোকটির কাছ থেকে চলে আসলাম বাসার দরজায়। কলিং বেল বাজাতেই ঐশী এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললোঃ বাবাই তুমি এতেথো। মামনি তান্না কলতেথে!
আমি কোলে নিয়ে বললামঃ হুমম আম্মু এসেছি। তোমার আম্মুর কাছে চলো।
ভিতরে ঢুকে দেখি সামিয়া সোফায় বসে থেকে কান্না করতেছে। আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়ে বললোঃ কেন এসেছেন আপনি আমার কাছে?
আমি সামিয়ার হাত ধরে বললামঃ প্লিজ সামিয়া তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে না জেনে কষ্ট দিয়েছি।(কান্না করতে করতে)
সামিয়া আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললোঃ আমার কারো প্রতি
রাগ নেই।আর আমার মতো পাপীর এর থেকেও বেশি কষ্ট হওয়া দরকার।
আমিঃ প্লিজ সামিয়া আমাকে মাফ করে দাও। চলো না নতুন করে সব কিছু শুরু করি।
সামিয়াঃ বললাম তো আমি মাফ করার কেউ নয়। হা হা আর কি বললেন নতুন করে শুরু করবেন। এটা তো একটা নতুন জোক্স শুনালেন। আমার মতো পাপী মেয়ের সাথে আপনি কি করে শুরু করবেন?
আমি আবার সামিয়ার হাত ধরে বললামঃ প্লিজ সামিয়া,,,
আমার কথা শেষ হতে না হতেই সামিয়া পাশে থাকা একটা ফল কাটা চাকু হাতে নিয়ে বললোঃ আপনি যাবেন নাকি আমি আমি এটা দিয়ে আমার জীবন শেষ করে দিবো। আপনার মুখ দেখতে ইচ্ছে করতেছে না।
সামিয়ার কথা শুনে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললামঃ যাচ্ছি তবে একটি কথার উত্তর দিবে।
সামিয়াঃ কি?
আমিঃ এই মেয়ে বাচ্চাটি কার?
আমার কথা শুনে সামিয়া চমকে উঠলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। চুপ থাকতে দেখে বললামঃ কি হলো বলো?
সামিয়াঃ এটা আপনারই সন্তান।
(চলবে)