# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১২শ
আমি সামিয়া কে বললামঃ এই পাগলি তোমার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব টা আমাকে দিবা না?
সামিয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললোঃ হুমম আমার সব স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব এখন থেকে তোমার।
আমিঃ তো বলেন ম্যাম আপনার স্বপ্ন গুলো কি কি?
সামিয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং এর সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলোঃ আমার স্বপ্ন গুলো হচ্ছে আমি আমার স্বামীকে প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিবো। সে ঘুম থেকে জাগার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যাবে। নামাজ পড়ে এসে প্রতিদিন সকালে আমি কোরআন পাঠ করবো আর সে তা শুনবে। আমাকে সব সময় ভালোবাসবে। কখনো যদি আমার কোনো ভুল হয় তাহলে সে আমার ভুলটা ধরিয়ে দিবে। আমাকে তুলে খাইয়ে দিতে হবে। তার বুকে আমার মাথাটা রেখে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। আর সবচেয়ে বড় চাওয়া বা স্বপ্ন হলো সে আমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।
আমি সামিয়া কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ এই স্বপ্ন গুলো সবই তো তোমার বিয়ের পরের দিন গুলোর। কিন্তু আজকে রাতের জন্য তোমার কি স্বপ্ন রয়েছে?
সামিয়া লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললোঃ আমার একটা কিউট বেবি লাগবে।
আমিঃ তাই। তাহলে আমাকে তো মিশন শুরু করতে হবে দেখতেছি।
সামিয়াঃ একদম শয়তানি করবে না বলা দিলাম।
আমিঃ করলে কি করবে।( ওর দিকে এগুতে এগুতে)
সামিয়াঃ আগে ওযু করে এসো নামাজ পড়বো।
আমিঃ ঠিক আছে।
আমি ওযু করার জন্য ওয়াশরুমে গেলাম। ওযু করার পর দুইজনে দুই রাকাত নামাজ পড়ে সামিয়া কে কোলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলাম।তারপরে দুজনে হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার অতল গর্ভে।
সকালে সামিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙলো। ফ্রেশ হয়ে দুজনে একসাথে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ার পড়ে সামিয়া কে নিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। সামিয়া উঠে যেতে চাইলে আমি বললামঃ রাতে তো ভালো মতো ঘুমাতে দেওনি এখন একটু ঘুমাই।
সামিয়াঃ কিহহ আমিই তোমাকে ঘুমাতে দেইনি? তুমিই তো সারারাত আমার সাথে,,,,
সামিয়া বলতে চেয়েও আর বললো না। আমি বললামঃ সারারাত আমার সাথে কী?
সামিয়া লজ্জা পেয়ে বললোঃ কিছু নয়। ছেড়ে দাও আমি নিচে যাইয়ে শ্বাশুড়ি আম্মুকে রান্নার কাজে সাহায্য করি।
সামিয়া কে আমার বুকে টেনে নিয়ে বললামঃ আজকে শ্বাশুড়ি আম্মুকে সাহায্য করতে হবে না। আজকে তুমি তোমার শ্বাশুড়ি আম্মুর ছেলেকে আদর করো।
সামিয়াঃ হুঁ শুধু আদর । সারারাতেও মন ভরে নি। এতোক্ষণে ঘুমালে মানুষ কি ভাববে?
আমিঃ মানুষ ভাববে যে তারা দুজন বেবি আনার মিশনটা খুব পরিশ্রম করে শেষ করেছে। এজন্য উঠতে দেরি হচ্ছে।
সামিয়াঃ যাহহ দুষ্টু।
দুষ্টুমি করতে করতে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম। দরজায় কারো ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। সামিয়া উঠে দরজা খুলে দিতে গেল। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে তিশা, সাফিয়া,মিমি আর মিতু রুমে ঢুকে পড়লো।
তিশা সামিয়া কে বললোঃ কী ব্যাপার ভাবি তোমাকে কেমন জানি খুশি খুশি লাগতেছে?
মিমি বললোঃ আরে ভাবিকে খুশি লাগার কারণটা জানো না ? তো ভাবি রাতে কয় রাউন্ড হয়েছিলো।
মিমির কথা শুনে সামিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আমার এসে বসে পড়লো।
তিশাঃ আহহহ তোমরা কি শুরু করেছো বলতো ? দেখছো না আমার ভাবি টা লজ্জা পেয়েছে। ভাইয়া তুমি বাইরে যাও আমরা ভাবিকে সাজিয়ে নিচে নিয়ে যাবো।
আমিঃ ঠিক আছে।
রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি আমার কয়েকটা কাজিন আর আমার বন্ধুরা বসে আছে।
আমাকে দেখে রাফি বললোঃ কি খবর দোস্ত বাসর রাত কেমন কাটলো।
আমি শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম। কি বলবো?
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই সামিয়া উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসতেছে। সামিয়া কে তো আমি আজকে আবার নতুন রুপে দেখতেছি। আমি শুধু সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চারপাশে কি হয়ে যাচ্ছে তা আমার খেয়াল নেই।
যাইহোক, সবাই মিলে একসাথে সকালের লাঞ্চ করলাম। আমার পরিবারটা মনে হচ্ছে কেবল পরিপূর্ণ হলো। তবে এখনো পুরোপুরি ভাবে পরিপূর্ণ হয়নি, একটা বেবি হলে হবে আরকি।
নাস্তা শেষ করে বন্ধুদের সাথে বাইরে ঘুরতে বের হলাম। ঘোরাফেরা করে দুপুরের আগে বাসায় চলে আসলাম।
বিকালে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হলাম। আমি গাড়ি ড্রাইভ করতেছি আর সামিয়া আমার পাশে বসে আছে। আমি সামিয়া কে বললামঃ সামিয়া গায়ে হলুদের দিন আমার বাসায় তোমার যেই কাজিন গুলো এসেছিলো তাদেরকে তুমি পাঠিয়েছিলে?
সামিয়াঃ হ্যাঁ কেন?
আমি সামিয়া কে রাগানোর জন্য বললামঃ হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে যেই মেয়েটা এসেছিলো তার নাম কি?
সামিয়াঃ রুহি। কিন্তু তার নাম শুনলে কেন?(আগ্রহী হয়ে)
আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর ছিলো। মন তো চেয়েছিলে বিয়ে করি।
সামিয়া রেগে যায়ে বললোঃ কিহহ তুমি আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিলে?
আমিঃ আমি কি জানতাম তোমার সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে। জানলে তো আর কারো দিকে তাকাতাম না।
সামিয়া বাইরের মুখ করে বললোঃ হুঁ,, তোমার সাথে আমার কথাই নেই।
আমি একটা হাসি দিয়ে একহাত দিয়ে সামিয়া কে আমার কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ পাগলি তোমাকে ছাড়া আর কারো দিকে আমি তাকাই নি। আমি তোমাকে রাগানোর জন্য বললাম।
সামিয়া অভিমানের সুরে বললোঃ আমাকে রাগাতে কি তোমার ভালো লাগে?
আমিঃ হ্যাঁ খুব ভালো লাগে। তুমি যখন রেগে যাও তখন তোমার গাল দুটি স্ট্রব্রেরি ফলের মতো লাগে। মন চায় খেয়ে ফেলে।
সামিয়াঃ হুঁ আমাকে আর পাম দিতে হবে না। ( কিছুটা অভিমান নিয়ে)
আমি সামিয়া কে আমার কোলে বসিয়ে বললামঃ
লক্ষি সোনা রাগ করে না একটু হাসো প্লিজ।
না হাঁসিলে করবো যে তোমার
স্ট্রব্রেরি গালে দুটো কিস।
সামিয়া আমার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। শ্বশুর বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা পার্ক করে বাসার ভিতরে ঢুকলাম। শ্বাশুড়ি মাকে দেখে সালাম দিয়ে বললামঃ আম্মু কেমন আছেন?
শ্বাশুড়ি মাঃ আলহামদুলিল্লাহ। বাবা তোমরা কেমন আছো?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ।
শ্বাশুড়ি মাঃ সামিয়া জামাই কে তোর রুমে নিয়ে যা।
সামিয়াঃ ঠিক আছে আম্মু।
আমি আর সামিয়া সামিয়ার রুমে আসলাম। রুমে ঢুকে তো আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। কারণ সামিয়ার পুরো রুম আমার আর সামিয়ার ছবি সাজানো আছে। যেই ছবি গুলো আজ থেকে চার বছর আগের তোলার ছিলো। এছাড়া নতুন কয়েকটি দেখতেছি, যেগুলো কয়েক দিন পার্কে ঘুরতে যাওয়ার সময়ের।
ফ্রেশ হয়ে পোশাক চেঞ্জ করে খাটে হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। সামিয়া এখনো ফ্রেশ হয়ে আসেনি। বসে থাকতেই একটা ছোট্ট বাচ্চা (বয়স তিন বছর বা তার চেয়ে কম হবে) রুমে আসলো। এসে বললোঃ আনতেল আনতেল আপি তোমালে আল ফুফিলে নাততা কলাল দনন্য দাকতেথে।
আমি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বললামঃ বাবু তোমার নাম কি?
বাচ্চাটিঃ আমাল নাম তাওথিফ।
তাওথিফ আবার কি নামরে বাবা। আচ্ছা পরে সামিয়ার থেকে শুনবো নি।
আমিঃ আব্বু তোমার আপি কে?
তাওথিফ মানে বাচ্চাটিঃ আমাল আপি হলো তামিয়া ফুফিল আম্মু।
বাচ্চাটির কথা শেষ হতেই সামিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বাচ্চাটিকে দেখে বললোঃ আরে আব্বু তুমি কখন আসলে?
বাচ্চাটিঃ এথনই এতেথি। তোমালে আল আনতেল যে নাততা কলাল দনন্য দাকতেথে।
সামিয়াঃ ঠিক আছে বাবা তুমি যাও আমি আর তোমার আংকেল যাচ্ছি।
বাচ্চাটি চলে যাওয়ার পর আমি সামিয়া কে প্রশ্ন করলামঃ সামিয়া বাচ্চাটার নাম কি?
সামিয়াঃ তাওসিফ আহমেদ।
আমিঃ ওও আমি নাম জিজ্ঞাসা করতে সে বললো,তাওথিফ। আমি আর বুঝতে পারতেছি না তাওথিফ আবার কি নাম।
সামিয়া হাসতে হাসতে বললোঃ বাবুটা দেখতে খুব কিউট কিন্তু সে এখনো স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে না।
আমিঃ কার ছেলে এটা?
সামিয়াঃ আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। আচ্ছা চলো নাস্তা করবে।
আমিঃ হুম চলো।
সামিয়ার সাথে নাস্তা করার জন্য নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি শ্বশুর মশাই আর একটা অপরিচিত ছেলে সোফায় বসে আছে। আসলে ছেলেটাকে পিছন থেকে দেখে বুঝা যাচ্ছে কে সে?
আমি শ্বশুর আব্বুর কাছে যায়ে সালাম দিয়ে কেমন আছে তা জিজ্ঞাসা করে ছেলেটার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম। ছেলে টা হলো সেই ছেলে যার সাথে সামিয়া কে সেদিন পার্কে দেখেছিলাম।
ছেলেটি আমার সাথে কুশল বিনিময় করলো। আমিও জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছে তা। কিন্তু একটা জিনিস আমাকে ভাবাচ্ছে এই ছেলে এখানে কেন? আমাকে চিন্তিত দেখে ছেলেটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললোঃ এতো চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই। সামিয়া আমার সম্পর্কে তোমাকে সব বলবে।
আমি প্রতি উত্তরে একটা মুচকি হাসি দিলাম। যাইহোক, ছেলেটাকে সাথে নিয়ে নাস্তা করলাম। নাস্তা করে আবার সামিয়ার রুমে আসলাম। একটু পরে সামিয়াও আসলো। আমি সামিয়া কে বললামঃ আচ্ছা সামিয়া যেই ছেলেটা কে দেখলাম সেটা কে?
সামিয়া বললঃ এই ছেলেটা হলো আমার মামাতো ভাই মারুফ। এই ছেলেটির সাথেই তুমি আমাকে পার্কে দেখে ছিলে। আসলে সে আমার কোনো বিএফ বা হাজবেন্ড ছিলো না। সে শুধু ছিল আমার বড় ভাই। এছাড়া অন্য কিছু নয়। সে আমাকে ছোট বোনের মতোই ভালো বাসে। সেদিন তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই আমি ঐ কথাটা বলেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি সেই কথাটির জন্যই আমাকে এতো কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে।
সামিয়ার চোখের কোণায় পানি লক্ষ্য করলাম। আমি সামিয়া কে আমার কাছে বসিয়ে ওর চোখের পাঁচ মুছে দিয়ে বললামঃ আমাকে মাফ করে দাও। আমি না জেনে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। আচ্ছা এসব বাদ দেও। ঐ বাচ্চা টা মানে তাওসিফ কি এই ভাইয়ার ছেলে ?
সামিয়াঃ হ্যাঁ। ছাদে যাবে কী?
আমিঃ হুম এই সময় ছাদে যাওয়াটা মন্দ নয়। সূর্যাস্তের কিছু দৃশ্য উপভোগ করতে পারবো, চলো।
সামিয়া আর আমি ছাদে আসলাম। দুই জনেই ছাদে বেশ কিছু সময় কাটালাম। একেবারে রাতে নিচে আসলাম।
ডিনার করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে সামিয়া রুমে আসলো। এসে কোনো কথা না বলে আমার বুকের উপর শুয়ে পড়ল। আমিও আমার পাগলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে গল্প করতেছে আর আমি শুনতেছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে দু’জনেই ছাদে আসলাম। একটু পরে তাওসিফ এসে সকালের নাস্তা করার জন্য ডেকে গেলো। দুজনে নিচে যায়ে নাস্তা করতে বসলাম। তবে এখন খাবার সার্ভ করতেছে অন্য একজন মহিলা। আমি সামিয়া কে জিজ্ঞাসা করলাম। সে বললো এটা তাওসিফের আম্মু মানে মারুফ ভাইয়ার স্ত্রী আর আমার ভাবী। খুবই মিশুকে স্বভাবের।
নাস্তা শেষ করে রুমে আসলাম। আসলে নিজ শহরে শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় শ্বশুর বাড়ি থেকে ঘুরতে যাওয়ার তেমন কোনো জায়গা নেই।
দুই দিন শ্বশুর বাড়ি থেকে বাসায় চলে আসলাম। মামা মামি আর তিশা বাসায় চলে গেছে। কয়েক দিন পর তিশার এক্সাম। আর হ্যাঁ মিমি, সিফাত, রাফি আর নীলিমারাও আজকে সকালে চলে গেছে।
দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে বসে থেকে টিভি দেখার সময় আব্বু আমাকে দুই টা টিকেট দিয়ে বললোঃ তুমি আর সামিয়া তিন দিনের জন্য কক্সবাজারে হানিমুনে যাবে।
আমিতো খুশিতে দিশেহারা হয়ে গেলাম। কত দিনের স্বপ্ন বউকে নিয়ে হানিমুনে যাবো। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সামিয়াও খুশি হয়েছে।
আমি আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমাদের টিকেট কয়টায়?
( চলবে)