#Destiny_of_Love
#PART_09+10
#Nishat_Tasnim_Nishi
_____________________________
খেলা শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। আবরার দের দল চার রান এ হেরে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আপসেট ছিলাম আমি, দিদুনের মুখে তেমন কোনো পরিবর্তন ছিলো না।উনি বেশ স্বাভাবিক ছিলেন। আবরার মুখ টা নিচু করে আছে। এর মাঝে আবরার শুধু একবার বলেছে যে,
–“আসলে আমি নার্ভাস ছিলাম।’
আমি ওর কথায় পাত্তা দেয় নি।ও তবুও বুঝিয়েছে ও এখানে নতুন,হুট করে যদি ওকে কেউ খেলতে বলে তাহলে তো ও নার্ভাস হবেই? বাড়ীর সামনে আসতেই আমার নজর পড়ে পাশের বাড়ীর দিকে, এ বাড়ী টার চার পাশে উঁচু উঁচু দেওয়াল হয়ে গিয়েছে।উঁকি দিয়েও কিছুই দেখতে পারতেছি না।এ বাড়ী টা আমার খুব প্রিয়,কারন এটা আমার ছোটকালের বন্ধুর বাড়ী।অর্থাৎ ইশতিয়াক আর ফাহিমা আপুদের বাড়ী। কত স্মৃতি রয়েছে এ বাড়ী জুড়ে। কত বউ পুতুল খেলেছিলাম এখানে। কতশত বকা যে খেয়েছিলাম শুধু মাত্র রাতবিরাতে এখানে আসার জন্য। ইশতিয়াক টা খুব বেয়াদপ ছিলো,সারাক্ষণ কান টেনে বলতো, ‘আমাকে ভাইয়া বলবি।’ আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিতাম,সেটা দেখে ও বলতো আচ্ছা,ঠিক আছে ইশতিয়াক ই বলিস। এরপর আমি দাত বের করে হেসে দিতাম। ও আমার থেকে গুনে গুনে পাঁচ বছরের বড় আর ফাহিমা আপু ওর দুই বছরের বড়। প্রায় সমবয়সী ই ছিলাম আমরা। আমি বড় ভাইয়া মেঝো ভাইয়া আর ওরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। কিন্তুু হঠাৎ একদিন ওরা চলে যায় এ এলাকা ছেড়ে,পাড়ি জমায় বিদেশে। সেদিন আমি খুব কেঁদে ছিলাম,সে থেকেই ওদের প্রতি আমার এত এত জেদ জমেছে। খুব খারাপ ওরা। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় গেইটে এসে দাড়িয়ে থাকতাম ওদের জন্য, কিন্তু ওদের দেখতাম না।কারন ওরা তো নেই।রাগ করে কতদিন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এর কিছু দিন পর আমি অসুস্থ হয়ে যাই,খুব অসুস্থ। ডাক্তার বলেছিলো আমার ইয়া বড় অসুখ হয়েছে।হাসপাতালে কতদিন থাকতে হয়েছিলো আমাকে এরপর আমি সুস্থ হয়ে যাই।
সময়ের সাথে সাথে আমিও বদলে গিয়েছি,এখন আমার নিজের বাচ্চামোর কথা মনে পড়লে হাসি আসে। ইশশ কত ছোটই না ছিলাম, যত দিন যায় ততই পরিবর্তন হতে থাকে মানুষ।
১৭. রৌদ্রজ্জ্বল দিন,শীতের আবহাওয়া কেটে গিয়েছে দিন কয়েক আগে।এখানে আসার মাস খানেক পেরিয়ে গিয়েছে। দুপুরের সোনালী রৌদ্দুর সরাসরি জানালা দিয়ে এসে পড়ছে আমার উপর।আমিও চেয়ারে গা এলিয়ে এলিয়ে বসে আছি। হঠাৎ কবিতা আবৃতির তীব্র ইচ্ছা হয়ে উঠলো।
তুমি আমায় চিলেকোঠায় একটা ঘর দিও,
আমি তোমায় দিব বিশ্বাস-ভরসা,মায়া-মমতা,প্রেম-মহানুভবতায় গড়া একটা ভালোবাসার তাজমহল।
তুমি আমায় একটু আলো দিও,
আমি তোমায় দিব প্রথম প্রভাতের টুকটুকে লাল সূর্যের সবটুকু জ্যোতি তোমার কক্ষে , ভরা চাঁদের পূর্ণ জ্যোৎস্না নিংড়ে দিব তোমার শীতল বক্ষে।
তুমি আমায় খণ্ডখানেক মেঘ দিও,
আমি তোমায় দিব আমার যাপিত জীবনের সমস্ত শরত,একজীবনের আনন্দ দিয়ে গড়া অনুভূতির গাঢ় নীল আকাশ।
তুমি আমায় কিছুটা উষ্ণতা দিও,
আমি তোমায় দিব মখমলি প্রেম,
হৃদয় উঠোন জুড়ে জ্যৈষ্ঠের সোনালী রোদ্দুর।
তুমি আমায় একটু থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিও,
আমি তোমায় দিব তারকার মতো বে-হিসেবি সুখ ,নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস রেখে জীবনের শেষ গোধূলি দেখার জন্য একটা বিশ্বস্ত বুক।
___মুসলিমা খালেক মেঘলা
চোখ বন্ধ করে বসে আছি আমি। সকাল থেকেই খুব টেনশন হচ্ছে,ভয়ে নাওয়া-খাওয়া উঠে গিয়েছে।দিদুন কী করছে না করছে, কিছুই বুঝতে পারতেছি না।আমাকে ঘরবন্ধী করে বললেন যে,–‘আজ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। বসে থাক।’
আবার আবরার ও আজকে ঢাকায় গিয়েছে,ও বলেছে যে ও দুএকদিনের মধ্যে চলে আসবে। সবাই জানে ও ওর বাবাকে দেখতে গিয়েছে শুধু আমি সত্যি টা জানি যে কই গিয়েছে!ফুফি স্ট্রোক করেছে সেজন্যই ও পাগলের মতো ছুটে গিয়েছে।
হঠাৎ দরজাটা শব্দ করে উঠে,খ্যাক খ্যাক আওয়াজ করে ভেতরে প্রবেশ করে রুমকি। তার মুখে ইয়া বড় হাসি ঝুলানো,মনে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত জিনিস দেখে এসেছে সে। বড় বড় পা ফেলে সে এসে দাড়ালো সামনে। আমি তাকালাম তার দিকে,ইশারায় বললাম ‘কিছু বলবি?’
সে ঘাড় হিলালো,ইয়া বড় হাসি দিয়ে বললো,–‘আপা নিচে চলেন,তাড়াতাড়ি চলেন।’
—‘কেনো?’
–‘আরে চলেন না।গেলেই না দেখবেন চমক।’
–‘তুই বলবি?’
–‘উহু, বলতে পারবো না, দিদুন বলেছে।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম। এই রুমকির নাম টা রুমকি না রেখে দিদুনের চামচা রাখা উচিত। দিদুন যদি রাতকে দিন বলে ও সেটাই মানবে।সে দিদুনের অন্ধভক্ত! অন্ধভক্ত বুঝেন?
আমি বলি?কীভাবে বলবো?এভাবে বললে হয়তো বুঝবেন না,উদাহরণ দেই তাহলে হয়তো বেশ ভালো বুঝবেন।উদাহরণ হিসেবে আমাকেই বেঁচে নিলাম আমি।কারণ অন্য কাউকে নিয়ে বললো সেটা হয়তো অন্য মিনিং বের করে ফেলবেন।
উদাহরণ — আমার সেঝো চাচ্চুর বড় ছেলে,তার বয়স চার। সে আমি বলতেই অজ্ঞান। আমাকে তার ভালো লাগে,সেজন্য আমার সব কিছুই তার ভালো লাগে। আমি যদি অনেক বড় দোষ ও করে ফেলি তবুও সে আমার সাপোর্ট গাইবে। আমি যদি ক কে খ বলি সেও ক কে খ ই মানবে।আমি মিথ্যা কথা বলছি জেনেও সে মিথ্যা কথা টা প্রচার করবে। আমাকে খুশি করার জন্য সে বহু তেল মারা কথা বলবে।একেই বলে অন্ধভক্ত যার নিজের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
রুমকিও ঠিক তেমন,দিদুনকে খুশি করার জন্য ও সব করবে।
১৮.
‘চমক!’ শব্দটা শুনতেই তকমা লেগে উঠে। মনে হয় যেনো অস্বাভাবিক কিছু। এ শব্দের সাথে আমার স্বল্পপরিচিতি রয়েছে।কারণ আমাকে চমক খুব কম মানুষ ই করতে পারে। তার মধ্যে দিদুন আমাকে সত্যিই অস্বাভাবিক ভাবে চমক দেন।
আজও চমকে বসে আছি,হু সেটাও দিদুন করেছে। কিছুক্ষণ আগেই নিচে নেমে এসেছিলাম আমি।এসেই দেখলাম এক সুদর্শন যুবক সোফায় হাতপা ছিটিয়ে বসে আছে।সুদর্শন বললাম কেনো ? ঘন পল্লব বিশিষ্ট আখি,ব্ল্যাক সিল্কি চুল, সরু চিকন ঠোঁট, পরনে স্যুট প্যান্ট,দুপায়ে ব্যুট জুতো দেখতে অনেক টা অফিসের ম্যানেজারের মতো লাগছে, এখানে কী সুদর্শন বলাটা বেমানান?উহু,আমার তো মনে হয় সুদর্শন না বলা টা হয়তো বেমানান হতো। ছেলে টা গা এলিয়ে বসে আছে সোফায়,মনে হচ্ছে সে ক্লান্ত,ভীষণ ক্লান্ত। লং জার্নি করার পর মুখে যেমন ক্লান্তির ছাপ পড়ে তার মুখেও ঠিক তেমন ছাপ দেখাচ্ছে।
আমি মাথার কাপড় টা আরেকটু টেনে গিয়ে বললাম,-‘কে আপনি?’
সাথে সাথে ছেলেটা চোখ মেলে,মাথা টা তুলে আমার মুখের দিকে তাকালো। কেমন যেনো তার চাহনি?
পাশের সোফায় বসেছিলো দিদুন,দিদুনের পিছনে লাইন ধরে দাড়িয়ে ছিলো আমার পুরো পরিবার। তারা সবাই কেমন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,হয়তো আমার থেকে কোনো জবাব আশ করছে!
দিদুন বলে উঠলো,–‘বল তো কে উনি?’
আমি কপালে ভাঁজ ফেলে উনার দিকে তাকালাম,দিদুন বলতে বললো উনি কে?তাহলে কী আমার চেনার কথা?
পা থেকে মাথা অবধি পুরো স্কেন করেও বুঝতে পারলাম না উনি কে?মষ্তিষ্কে পুরো চাপ দিলাম, চেনাজানা কারো সাথেই তার চেহারার মিল খেলো না। প্রথমবার ই দেখলাম উনাকে।
আমি দিদুনকে ইশারায় বললাম,–‘চিনি না।’
তিনি হাসলেন,আমাকে বললেন, –”চিনিস নি?ও হলো ইশতিয়াক।তোর সেই পাশের বাড়ীর ইশতিয়াক। যার জন্য কতকাল কেঁদে বুক ভাসিয়ে ছিলি।’
ইশতিয়াক নাম টা শুনেই বেশ চমকে গেলাম।চেনা চেনা মনে হতে লাগলো,এদিকওদিক তাকিয়ে ভাবতেই মনে পড়ে গেলো আমার সেই ছোট বেলার বন্ধু ইশতিয়াকের কথা।
তবে দিদুনের শেষের কথা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।ছিঃ এভাবে কেউ কারো সামনে বলে?
ইশতিয়াক কে চিনেই চমকে বসে আছি আমি।
১৯. –‘কেমন আছিস ফুলবানু?’
ইশতিয়াকের কথায় মুখ তুলে তাকালাম ওর দিকে।কত কত দিন পর শব্দ টা শুনলাম।’ফুলবানু!’ নাম টা আমাকে দিয়েছিলো ইশতিয়াক আর ফাহিমা আপু। এর বিশেষ একটা কারণ ও আছে,সেটা হলো আমি সবসময় ফুল নিয়ে খেলতাম।সব কিছুতেই ফুল চাইতাম। বিশেষ করে বকুল ফুল,সেটাও ওদের বাড়ীর পাশের গাছটার। ওর কথায় আমার ঘোর ভেঙ্গে গিয়েছে, আমি হঠাৎ উৎফুল্লু কন্ঠে বললাম, –‘ইশতিয়াক ভাইয়াআআ?’ তুমি সত্যি এসেছো?আপু কই?আন্টি আর আঙ্কেল?’
ইশতিয়াক হাসলো,দূর্বোধ সেই হাসি। ওর হয়তো আমার কথা পছন্দ হয় নি। আমি এদিকওদিক তাকিয়ে বাকিদের খুঁজতে লাগলাম। সেটা দেখে ও একটু আওয়াজ করে হাসলো,হেসে হেসে বললো,–‘আরে কেউ আসেনি। সবাই এক সপ্তাহ পর আসবে। ‘
—‘কেনো?উনারা এখন আসে নি কেনো?’
—‘আরে আমাদের এক সপ্তাহ পরেই আসার কথা।আমিই আর কি একটু আগে চলে এসেছি।’
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,–‘ওহ।’
উনিও বললেন,–‘হুম।’
আচ্ছা উনি হয়তো ডিরেক্ট আমাদের বাসায় এসেছেন। আজব, কেউ ফ্রেশ হতেও বলছে না। সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে চেয়ে আছে।
—‘ভাইয়া,আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এখন এসেছেন। ক্লান্ত ও দেখাচ্ছে,ফ্রেশ হয়ে নিন।’
কী আজব ব্যাপার এখনো সবাই চেয়ে আছে?আজব! মেঝো চাচী বললেন,–‘শ্রুতি তুই ঠিক আছিস তো?’
কপাল কুচকে বললাম,–‘হুম,আমি তো একদম ঠিক। কেনো কী হয়েছে?’
—‘না,মানে তুই একদম স্বাভাবিক বিহেভ করছিস। ইশতিয়াক তো চিনেছিস?’
–‘মানে?আমার কী অস্বাভাবিক বিহেভ করার কথা ছিলো?আর কী বলো,ইশতিয়াক ভাইয়াকে চিনবো না কেনো?ওদের দুই ভাইবোনকেই তো চিনি,শয়তান দুটো আমাকে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছিলো।’
সবাই কেমন হতাশ চাহনীতে আমার দিকে তাকালো। ফিহাকে টেনে রুমে নিয়ে এসে বললাম কী হয়েছে রে?সবাই এমন কেনো করছে? ফিহার কথায় অবাক না হয়ে পারলাম না।
উনাদের ধারনা ছিলো আমি হয়তো অভিমান করবো,ইশতিয়াক এর সাথে কথা বলতে চাইবো না।ওর সাথে জিদ ধরে কথা বলবো না।
ওর হয়তো আমাকে মানাতে প্রচুর খাটতে হতো।সেজন্যই ও এক সপ্তাহ আগে চলে এসেছে। আর এ এক সপ্তাহ ও আমাদের বাসায় থেকে আমাকে মানাতো।আর দিদুন ই এত হেল্প করেছে উনাকে।
আজব?এমন করার কী আছে?ছোট বেলায় অবুঝ ছিলাম সেজন্য হয়তো রাগ করেছিলাম।অবুঝ মনে বলেছিলাম যে ও যতদিন না এসে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার জেদ ভাঙ্গাবে ততদিন কথা বলবো না। কিন্তু সেটা তো ছোটবেলার কথা। এখন তো বড় হয়েছি নিশ্চয়ই আমার চিন্তাধারা বদলে গিয়েছে।
২০. গত একঘন্টা থেকে আবরার এর সাথে বসে আছি। মুখে কোনো বুলি নেই, শুধু গাল দুটো ফুলিয়ে ঢোল বানিয়ে রেখেছে। মেজাজ টা এবার চরম খারাপ হয়ে গিয়েছে। কালকেই সে ফিরে এসেছে,এসেই বলেছে যে শ্রুতি, যে করেই হোক দিদুনের সাথে আম্মির ঝামেলা মিটাতেই হবে। তার কন্ঠ ছিলো ভারী,বলেছিলাম কেনো কী হয়েছে? জবাবে শুধু বলেছে, –‘সময় হলে জানিয়ে দিবো।’
কাল সারাদিন নিজের মতো ছিলো,কারো সাথে তেমন কথা বলে নি চুপচাপ করে বসে রয়েছিলো।
আর আজ হঠাৎ আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি বারবার বললাম কী হয়েছে? কোনো জবাব দেয় নি। কিছুক্ষণ পর পর চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায় আর আমি হ্যাবলার মতো বলতে থাকি কী হয়েছে? আবার একটুপর মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। মেজাজ এবার চরম খারাপ হয়ে গিয়েছে। কলার টা টেনে মুখের সামনে নিয়ে এনে বললাম,–‘কী হয়েছে বলবি নাকি নিচের বাঁশ টা নিয়ে তোর মাথা ফাটিয়ে দিবো?’
আবরার কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,–‘তুমি মিথ্যুক,খুব খারাপ। তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো!’
আমি অসহায় গলায় বললাম,,
–‘কী করেছি সেটা তো বলেন?’
আমার কথা শুনে ওর চেহারার রং বদলে যায়। শার্টের হাতা টা কনুই অবধি ফোল্ড করে ও আমার দিকে তেড়ে এসে গাল টা ছুঁয়ে বললো,
–‘ ওই ছেলে তোমার এখানে সুমু দিয়েছে কেনো?’
ভীতু গলায় বললাম,–‘ক্ কোন ছেলে?’
আবরার কোনো কথা না বলে ও কয়েকটা ফটো বের করে আমাকে দেখালো। ছবিগুলো অনেক পুরাতন, প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইশতিয়াক আমার গালে কিস করছে,দ্বিতীয় ছবিতে আমরা দুজন জামাই-বউ সেজে বসে আছি, তৃতীয় ছবিতে আশিক স্টাইল করে দাড়িয়ে আছে, আর আমি মুখের সামনে হাত দিয়ে খিলখিল করে হাসছি।স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে আমি ওর ছবি নষ্ট করে দিচ্ছি,এটা দেখে আমি হেসে দিলাম।হাসতে হাসতে পাশে তাকালাম।অটোমেটিক আমার হাসা বন্ধ হয়ে যায়।আবরারের রিয়েকশন দেখে একদম ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে ফেললাম।এসব ছবি কই থেকে আসলো?আবরার এগুলা কই পেলো? আর ও ছোট বেলার ছবি দেখে চিনলো কীভাবে?
–‘আপনি এসব কই পেলেন?’
—‘ড্রয়িংরুমে তোমার ওই প্রেমিক সবার সাথে বসে ছবি গুলো দেখছে আর তার বর্ণনা দিচ্ছে।’
আবরার রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, আমাকে খুন করতে পারলে হয়তো ওর টাগ মিটতো। আমি একদম অসহায় মুখ করে বললাম,–‘দেখুন,আমি তখন ছোট ছিলাম। আর ও আমার বন্ধু ছিলো। ‘
ও এদিকওদিক তাকালো,এরপর আমার গায়ের ওড়না টা টান দিলো। আমি আতঁকে উঠে ওর দিকে তাকালাম। ও কোনো কথা না বলে ওড়নার এক পাশ দিয়ে আমার গাল ঘষা শুরু করে দিলো।ওর কান্ড দেখে আমি থ হয়ে গেলাম। এক স্থানে বারবার ঘষার কারণে গাল টা জ্বলে উঠলো।
—‘আরে কী করছেন?ব্যাথা পাচ্ছি তো। আজব ও কি আজকে কিস দিয়েছে নাকি যে গালে লেগে রয়েছে?এত বছরে কী আমি গাল ধুই নি? ‘
–‘একদম চুপ, বেশি কথা বলবা না। ওয়েট, ওয়েট!সত্যি কথা বলো তো ও কয়বার গালে কিস দিয়েছে?আর গাল ছাড়া অন্য কেথাও দিয়েছে?’
আমি অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম।কাল কী করেছি সেটাই মনে থাকে না আর কত বছর আগে কয়বার কিস দিয়েছে সেটা মনে থাকবে কীভাবে? আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,’আমি জানি না।’
ও কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, এবার ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম,হোয়াট? সামান্য বিষয় নিয়ে ও কেঁদে দিয়েছে? বিষ্ময়ের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে মুখ টা ইয়া বড় হা হয়ে গেলো।
আমি ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,—‘আপনি কাঁদছেন?’
ও ঝাঁটকা মেরে হাত টা সরিয়ে দিলো। চোখের পানি মুছতে মুছতে ও চলে যেতে লাগলো। কী হলো?
.
চলবে?