#Destiny_of_Love
#PART_03
#Nishat_Tasnim_Nishi
আবরার চলে যাওয়ার মিনিট দশকের মধ্যেই কলিংবেল বেজে উঠলো, শ্রুতি তখনও ভাবনাচিন্তায় বিভোর ছিলো।তিনবার বেল বেজে উঠতেই ও গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই ও চমকে যায়,ভীষণ চমকে যায়। অবাক হয়ে ও তাকিয়ে আছে বাহিরে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে! ও ভাবছে এ অসময়ে ডেলিভারি বয় কই থেকে আসবে?ও তো কিছুই অর্ডার দেয় নি,তাহলে?
–‘ম্যাম,আপনি ই কি শ্রুতি হাসান?’
–‘জ্ জ্বি।’
শ্রুতির কথা শেষ হতেই ওর হাতে একটা পার্সেল দিয়ে চলে যায় ডেলিভারি বয়। শ্রুতি প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে পার্সেল টার দিকে তাকিয়ে আছে,একবার ভাবছে খুলবে আবার ভাবছে না। পার্সেল টা রাখতে যাবে তখনই ওর মনের ভেতর খচখচ শুরু হয়ে যায়। তাই সে সেটা না রেখেই কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা খুলে।পার্সেল খুলতেই ও দেখে একটা স্মার্টফোন। যা দেখে সত্যিই সে চমকে যায়,সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাতের দিকে। মোবাইল এর উপর একটা কালার পেপার মুড়ানো। ভাঁজের উপরেই সুন্দর করে স্মাইলি ইমুজি আঁকা রয়েছে। চিরকুট টা হাতে নিয়ে ওপাশ-ওপাশ করে দেখতে লাগলো।
শ্রুতি,
প্রিয় বলে সম্বোধন করতে গিয়েও করি নি,সেটার কারন নাহয় অজানা থাকুক। জানি তুমি ভয়ের কারনে এটা হয়তো এতক্ষণ খোলো নি।এত ভয় পেয়ো না,মোবাইল টা আমি ই পাঠিয়েছি।আর হ্যা,শোনো বেশি চিন্তা করো না,নাহলে সবগুলে চুল সাদা হয়ে যাবে। চুপচাপ একঘন্টা ঘুম দিয়ে উঠো।বিকেলে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
ইতি,
(…….)
আমি তোমার প্রিয় না অপ্রিয়, কনফিউজড ছিলাম তাই আর নাম টা লিখলাম না।
চিরকুট টা পড়ে শ্রুতির মুখশ্রীর রং বদলে গেলো,একদম গম্ভীর মুখে ও চিরকুটের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারলো এটা আবরার পাঠিয়েছে,আর স্পষ্ট অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। কয়েক পলক চিরকুটের দিকে তাকানোর পর ও একটা জিনিস আবিষ্কার করলো,আর সেটা হলো চিরকুটের একটা কোণা ভেজা। তাও একটা ছোট গোল রাউন্ডের মতো।সেকেন্ডেই বুঝে গেলো লিখার সময় আবরার কেঁদেছিলো।শ্রুতির বুকটা কেমন করে উঠলো,গলায় কাটা বিঁধলে যেমন লাগে ঠিক তেমন। ওর নিজের চোখ দিয়েও দুফোটা স্নিগ্ধ জ্বল গড়িয়ে পড়লো চিরকুটের উপর।বাহিরের হিমেল হাওয়ার সাথে সাথে পর্দাগুলো উড়তে লাগলো।সাথে শ্রুতির আগাছালো চুল।
৪. শীতের মৌসুম,চারপাশে কুয়াশায় ঘেরা।গাছের পাতায় কুয়াশা জমে জমে বৃষ্টির ফোঁটার মতো জমেছে।একটুপর সূর্যের উত্তাপে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে শিশিরকণাগুলো। হালকা শীত এড়াতেই গায়ে চাদর জড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে শ্রুতি। বিকাল চারটায় আবরারের সাথে তার দেখা করার কথা অথচ এখন বাজে চারটা দশ। আজ যেনো পথ এগুচ্ছেই না, কেমন যেনো বিরক্তিভাটাও দেখা দিয়েছে তার মধ্যে!নিজের বিরক্তিভাবটা এড়াতে কোকিল কন্ঠে গুনগুন করে গেয়ে উঠলো গান!
মন আকাশে বৃষ্টি আসে,
রুদ্র মেঘের জুটি,
আজ নতুন আলোয়
আধার কালোর খুনসুটি।
ঝড়ের বেশে এলো কেশে,
কাজল কালো চোখ দুটি!
দিলো কঠিন কথার, বিষণ্ণতার ছুটি।
তারই সাথে খেলনা পাতে,অযথা হাসাহাসি।
হাজার বারণ আর অকারণ,
তবুও সে দারেই আসি।
চলনা সুজন মিলে দুজন,
নীল ওই আকাশে ভাসি!!
দেখুক লোকে অবাক চোখে,
তোর ওই দুচোখের হাসি।
চলনা সুজন মিলে দুজন,
বিনা দোষেই হোক ফাঁসী,
দেখুক লোকে অবাক চোখে
কতটা ভালোবাসি!!
মিনিটদুয়েক আগেই শ্রুতি পৌঁছিয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্থানে। কিন্তুু তার এখনও কোথাও আবরারের দেখা মেলি নি। নতুন ফোনটা নিয়ে ইতোমধ্যে দুবার আবরারের নাম্বার ডায়াল করেছে সে। পার্কের আসেপাশের মানুষজন কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারদিকে। পাশের ব্রেঞ্চিতে বসে আছে দুটো ছেলে। লাল পোশাকওয়ালা ছেলেটি কেমন বাজে দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে,ছেলেটির এমন দৃষ্টি শ্রুতির অস্বস্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। শ্রুতি মনে মনে ভাবলো এখানে আর বসে থাকা যাবে না,তাই সে যাবার জন্য উঠে দাড়ায়। দুকদম পা বাড়াতেই কোথা থেকে দৌড়ে আসে আবরার। এসেই হাঁপাতে হাপাঁতে বলতে লাগলো, –“সরি,সরি,লেইট হয়ে গিয়েছে।”
শ্রুতি কোনো জবাব দিলো না। আবরার নিজেই বললো,–“চলো,নাহলে আরো লেইট হয়ে যাবে।”
শ্রুতির হাত ধরেই হাটা দেয় আবরার,আর শ্রুতি? সে তো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের হাতবন্ধনের দিকে। আর কখনো হয়তো তাদের এভাবে হাটা হবে না?আজই যে এ সম্পর্কের শেষদিন।সে কী পারবে আবরারকে ছাড়া থাকতে?আবরার ই বা পারবে? কষ্ট হচ্ছে,খুব কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ তার ইচ্ছা হলো,হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে। কী হতে,যদি তাদের জীবনটা এমন না হতো?খুব কি ক্ষতি হতো তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে?
৫. সূর্য পশ্চিম আকাশে হিলে পড়েছে , আকাশেরর শেষ সীমানায় লাল-কমলা রং দেখা দিয়েছে। নদীর স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।তীরের পানির ঢেউ এর সাথে সে দৃশ্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তীরের পাশে আবরারের হাত ধরে হাটছে শ্রুতি,চলার পথেই সে এসব আবিষ্কার করেছে। চারপাশে অনেক মানুষ,সবাই সবার মতো ব্যস্ত,কেউ তাদের দিকে তাকাচ্ছেও না। শ্রুতি খুটিয়ে খুটিয়ে চারপাশের মানুষজনকে দেখতে লাগলো! হঠাৎ ই আবরার কোমল কন্ঠে ডাক দিলো,–‘শ্রুতি!!’
শ্রুতি আনমনে জবাব দিলো,–‘হু!!’
–“ওদিকে তাকাও,কী সুন্দর না?’
শ্রুতি চোখ তুলে আবরারের ইশারাকৃত দিকে তাকালো।মুহূর্তেই সে বিষ্মিত হয়ে যায়!
মুখ দিয়ে আপনাআপনিই বলে উঠে,–‘ওয়াওও!!’
কি সুন্দর ফুল-লতা দিয়ে সাজানো টেবিল।
সূর্যের আলোয় চারপাশ টা জ্বলমল করছে।না,না,মরিচ বাতির আলোয় জ্বলমল করছে। আমি উৎফুল্লু হয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালাম! সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতেছিলাম তখন ই আবরার বললো,–‘কেমন হয়েছে?’
আমি ভাব নিয়ে বললাম,–‘উত্তম,অতি উত্তম হয়েছে।’
আমার কথা শুনে আবরার হেসে দিয়েছে। শেষ বিকেল টা একদম অন্যরকম হয়েছে,দুজনেই সব ভুলে গিয়ে খুব আনন্দ করলাম। আমরা দুজনই চাইলাম না সে সময় টা নষ্ট করতে।নদীর কিনারার পানিতে হাত ধরে আধভেজা হয়ে হাটলাম দুজনে,পানির ঢেউ এর সাথে খিলখিল করে হেসে উঠলাম দুজনেই। হোক না জমা স্মৃতির পাতার জন্য কিছু বিশেষ সময়।
৬. ‘অস্বস্তি ‘ এ শব্দের প্রতি চরম বিরক্ত আমি। সবকিছুতেই আমার দেখা দেয়, এই যে গত কয়েক মিনিট থেকে আবরারকে একটা বিষয় জানাতে চাচ্ছি,সেটা শুধু এ অস্বস্তির জন্য পারতেছি না। বারবার ওকে ডাকতে গিয়েও গলায় আটকে যাচ্ছে,বলতেই পারছি না! অনেক্ষণ পর হুট করেই আবরারকে ডাক দিলাম,
–‘আবরার?’
আবরার আমার কাঁধে মাথা রেখে জবাব দিলো,–‘হু।’
আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলাম,একদমে বলতে লাগলাম,
–‘আবরার আপনি জানেন,আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ করি না।কিছুক্ষণ আগে আম্মু ফোন দিয়েছেন, নেটওয়ার্কের সমস্যার কারনে ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি।’
আবরার চুপচাপ বসে রইলো, কোনো কথা বললো না।আমি চুপ করে রইলাম,এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা নেমে এসেছে,চারপাশ টা অন্ধকার হয়ে আসছে।
মানুষের আনাগোনাও কমে যাচ্ছে।
ঝিঁঝিঁপোকারাও ডাকছে,সূর্যের রং ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। হঠাৎ কাঁধে ভেজা ভেজা অনুভব করলাম,মুহূর্তেই বুঝে গেলাম আবরার কান্না করছে। ওর শরীর টাও গরম হয়ে আছে। আমি বারবার আবরার আবরার বলে ডাকতে লাগলাম, কিন্তুু ও কোনো রেসপন্স করছে না।
আমি আবরার আবরার করতেছি তখন ই পেছন থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে ডেকে উঠলো,–‘শ্রুতিইই!!!’
কন্ঠস্বর শুনতেই আমি চমকে গেলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। আপনাআপনি মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো,–‘বা্ বাবা!!’
.
চলবে?