#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_40
#Sabrina_Summa
জ্ঞান ফিরতে নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা রুমে। যার চতুর্দিকে আয়না লাগানো। একটা মানুষের থাকার মতো করেই রুমটা গোছানো।
একটা চেয়ারে বসে আছে সে। তার হাত পিছনে চেয়ারের সাথে বাঁধা। মাহির তার সামনের চেয়ারে বসে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মাহিরের হাতে পানির বোতল ৷ বুঝায় যাচ্ছে সুপ্তির জ্ঞান ফিরানোর জন্য এতক্ষণ পানি ছিটিয়েছে।
মাহির স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” এতক্ষণে জ্ঞান ফিরলো তবে। ”
সুপ্তি : আমি এখানে ইচ্ছে করে আছি বলেই আটকিয়ে রাখতে পারছেন। আমি যদি…
মাহির কথার মাঝখানে বলে উঠলো, ” হ্যাঁ, হ্যাঁ জানি। তুমি ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারবে।
এখন নাটক কম করে হাতটা সামনে আনো। আমি দেখেছি তোমার হাত খোলা শেষ। ”
সুপ্তি কোনো ভঙ্গিতা ছাড়ায় হাত সামনে আনলো । মাহিরের মতিগতি বুঝার জন্য বললো, ” মানুষ তো আয়নাঘর নাম রেখে অন্ধকার একটা টর্চার রুম বানায়। তোমার ওই আগের রুমের মতো যেখানে তুমি সুপ্তির শোকে বসে ছিলে!
( উপহাস করে )
কিন্তু এই রুমটা আয়নাঘরের নাম রাখতে পারবে। তুমি এত আয়না লাগিয়েছো আয়নাঘরের নাম রাখার জন্যই মাহির? ”
মাহির : তুমি আমার ওই রুম সম্পর্কে জানলে কিভাবে?
( স্বাভাবিক ভাবেই )
সুপ্তি হেসে বললো, ” আমি সবই জানি। তুমি যে সেখানে মানুষকে এনে টর্চার করো তাও জানি। ”
মাহির : নিজেকে এত সাধু ভেবো না। আমি মানুষকে শুধু টর্চার করি তোমার মতো খুন করি না।
সুপ্তি : নিজেকে সাধু ভাববো না কেন বলো, তোমার সকল কুকীর্তিই তো আমার মাধ্যমে চাপা পড়ে । আই মেইন, আমি না থাকলে তুমি এতদিন জেলে থাকতে!
মাহির : তুমি কোথায় থাকতে? আমার আগে তো তোমার জেলে যাওয়ার কথা! যে পরিমাণ খুন করেছো।
সুপ্তি : মানুষ যতটা ভাবে আমি ততটা খুনও করি না বা করি নি।
মাহির : যা রটে তা কিছুটা হলেও বটে। আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি ৮৮ টার কথা। অবশ্যই তার থেকে বেশিই হবে !
সুপ্তি ৮৮ টা বলেই হাসা শুরু করলো।
মাহির : তবে কি তারও বেশি?
সুপ্তি : আমি মাত্র ৫ টা খুন করেছি। বাকিগুলো হয়তো আমার টিম বা অন্য কেউ করেছে যা আমার নামে চালিয়েছে। তবে এগুলো আমার নির্দেশে না।
মাহির : আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আরেকটা কথা, বিষয়টা খুবই হাস্যকর যে একটা মানুষ লাশে ভয় পায় না তবে কবরে ভয় পায়!
সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনার বিশ্বাস দিয়ে আমি কি করবো! যা সত্যি তাই বললাম।
আর আমি ট্রমায় ছিলাম তাই কবরে ভয় পেতাম তবে সব কবরে না যেমন – আপুর কবরটা। প্রথমদিকে লাশেও ভয় পেতাম।
কিন্তু এখন কিছুতেই পাই না। এতে অবশ্য আপনার ক্রেডিট অনেক। সো ধন্যবাদ। ”
মাহির : কাকে কাকে খুন করেছো বলা যাবে?
সুপ্তি অবাক হচ্ছে মাহিরের শান্ত মনোভাবে। সে শান্ত থাকতে পারছে না তবে মাহির এত শান্ত কিভাবে? মাহিরের মাঝে কি কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না!
সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
” ২০১৮ সালে আমি ঢাকায় আসি। ততদিনে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয় নি। আপুর ধর্ষণ হয়ে খুন তারপর আবার আমাকে তুলে নিলে যাওয়া আর দেশের খারাপ অবস্থা সবদিক বিবেচনা করেই বাবা আমাকে ফাইট শিখায়।
আমি তখন মিস সিক্রেট নামে খুবই জনপ্রিয়।
আচ্ছা, আমি কিন্তু আমার মিস সিক্রেট হয়ে খুনের পথে যাওয়ার গল্প শুনাচ্ছি । বলতে গেলে শুরু থেকেই শুরু করছি। কারণ আমি যা যা বলবো সবই একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড। ”
মাহির মাথা কাত করে সম্মতি জানালে সুপ্তি আবারও বলা শুরু করলো, ” আমি যখন ক্লাস ফাইভে তখন বাবা আমাকে কম্পিউটার ক্লাসে ভর্তি করে। কিছুটা বাধ্য হয়েই। কারণ আমার মেয়েদের মতো পুতুলে না ছেলেদের মতো ডিভাইসে ইন্টারেস্ট বেশি ছিল। আমি কম্পিউটার তো শিখিই নাথে হ্যাকিংও শিখে ফেলেছিলাম।
ক্লাস সিক্সে নিজে নিজেই নতুন নতুন হ্যাকিং আইডিয়া বের করতাম। এক কথায় মাস্টার হয়ে যাচ্ছিলাম এগুলোতে।
ক্লাস সেভেনে আমি জাতীয় পর্যায়ে হাত দেয়। সরকারের জন্য কাজ করা শুরু করি। কেউ অবশ্য আমার পরিচয় জানতো না। এমনকি আপু ব্যতিত আমার ফ্যামিলির কেউ না।
ক্লাস এইটে অনেক বেশি দক্ষ হয়ে গেয়েছিলাম। যে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করতে পারতাম যেকোনো জায়গায় বসে। হোক তা এক কিলোমিটার বা হাজার কিলোমিটার। এগুলোই আমাকে সাহায্য করেছিল মিস সিক্রেট হিসেবে জনপ্রিয় হতে।
এখন আসি খুনের বিষয়ে।
যখন আমার ফাইটিং শেখা পুরোপুরি শেষ। ধীরে ধীরে পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হচ্ছি। এমন সময় তোমার বাবা মাহফুজ চৌধুরী আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও পরে আমি তার সাথে যোগাযোগ করি।
সে আমাকে জানায় আপুর খুনিদের খুঁজে দিবে। বিনিময়ে আমাকে তার ফ্যামিলিকে প্রটেক্ট করতে হবে।।
রাজি হয়ে যায়। কারণ আপুর খুনিকে যে আমার দরকার।
তবে আমি যে তার সামনে যাবো এতে আমার সেইফটি কোথায়? উত্তর হলো আমার কোনো সেইটি নেই। তাই মাস্ক পড়ে তার সামনে যায়। সে আমাকে গান চালানোর ট্রেনিং দেয়। তারপর আসে বহু অপেক্ষিত সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।
১৬ জুলাই, ২০১৯।
পরপর নিজের হাতে গান দিয়ে দুইটা খুন করি। জানেন, সেদিন আমার হাত না কাঁপলেও বারবার প্রশ্ন আসছিল ওই দুটো লোক আর আমার মাঝে কি পার্থক্য রইলো! তারাও খুনি আমিও খুনি। এরপর স্বাভাবিক হতে ১ বছর সময় নেয়। প্রশ্নের উত্তর খুঁজি, হাজারটা যুক্তি সাজায়। তবুও উত্তরটা আজও মিলে নি।
১ বছর পড়াশোনায় গ্যাপ পড়ায় এসএসসি তে ফেল করি। ”
মাহির আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে। মিস সিক্রেটের খুনি হওয়ার পিছে যে তার বাবার এত বড় অবদান তা সে জানতো না।
সুপ্তি একটু রেস্ট নিয়ে আবারও বলা শুরু করলো, ” দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে টেনে টুনে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। ততদিনে আমি হ্যাকিংয়ের পেশায় নেমে পড়েছে। কলেজও শেষ করি টেনে টুনে।
তারপর এডমিশন টেস্ট দেয় প্রথমবারে হয় না প্রিপারেশনের অভাবে। ভাবলাম দ্বিতীয়বারে ভর্তি হবো। অনেক ভালো করে পড়লাম তবে পরীক্ষার আগের দিন এক মাসের জন্য অন্য দেশে যেতে হয়। আমি দেশে আসতে আসতে ততদিনে সকল পরীক্ষাও শেষ।
ভর্তি হয় প্রাইভেট ভার্সিটিতে। প্রথম তিন বছরে টেস্ট ব্যতিত তিনদিন ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম কিনা সন্দেহ আছে। এখন তো ঠেকায় পড়ে প্রতিদিনই যেতে হয়!
যাইহোক, দীর্ঘ ৯ বছর পর তৃতীয় খুন করি। এরমাঝে আমি কাউকে খুন করি নি। শুধু আহত করেছি।
চতুর্থ খুন করি তৃতীয় খুনের দুইদিন পর। আমার জিনিসে হাত দিলে এমনই হয়। ( রেগে )
মাহির হঠাৎই প্রশ্ন করলো, ” কে এই দুইজন? ”
সুপ্তি : ও, এতক্ষণ আপনি এখানে ছিলেন? আমি তো বুঝতেই পারি নি!
মাহির বিরক্ত নিয়ে বললো, ” আসল কথায় আসো। ”
সুপ্তি : এত জেনে কি করবেন?
#চলবে.,.