Dark Mystery পর্ব-৩৬+৩৭

0
49

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_36+37
#Sabrina_Summa

আজকের সকালটা বোধহয় সকলের জন্যই অশুভ। সকলেরই মন খারাপ। কেননা বাড়ির ছেলে বাড়িতে নেই। বাড়ির নতুন বউ মন খারাপ করে বসে আছে।
সকাল থেকে সকলেই মাহিরকে কল দিচ্ছে তবে কল রিসিভ করছে না মাহির।
অবশেষে বাধ্য হয়েই মিস সিক্রেট বের হলো।

__________________

মাহির একটা চেয়ারে বসে বিড়বিড় করছে।
” কত শখ করে ৩০ ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে আর পহেলা জানুয়ারী সুপ্তিকে নিয়ে নিউ ইয়ার ইনজয় করবো ভেবেছিলাম। আর এখন! ”

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো মাহিরের।
মিস সিক্রেটকে দেখে বলে উঠলো, ” তুমি? ”

মিস সিক্রেট : কী শুরু করছো! কারো কল ধরছো না কেন? ( রেগে )

অন্ধকার রুমে খুব হালকা আলো থাকায় ভালো করে মাহিরের মুখ দেখা যাচ্ছে না।

মাহির : তুই এখানে আসলি কিভাবে?

মিস সিক্রেট : যে পাতালেই থাকো, তোমাকে খুঁজে পাওয়া মিস সিক্রেটের জাস্ট কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

মাহির : সুপ্তিকে কোথায় গুম করছিস বল।

মিস সিক্রেট : বাসায় চলো।

মাহির : চুপচাপ আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

মিস সিক্রেট : মাহির….

মাহির : একদম মাহির বলবি না। মাহির নামটা শুধু সুপ্তির জন্য।

মিস সিক্রেট : একদম তুই করে বলবে না। ভুলে যেও না আমি তোমার বিয়ে করা বৈধ বউ।

মাহির : ডিভোর্স পেপার রেডি করতেছি। সেখানে সাইন করে সুপ্তিকে সামনে আনবি।

মিস সিক্রেট : এই ব্যবহারের জন্য একদিন খুব পস্তাবে। আর আমার কাছে ক্ষমাও চাইবে।

মাহির : জীবনেও এমন দিন আসবে না।

মিস সিক্রেট : দুইদিন সময় দিলাম। দুইদিনের মাঝে বাসায় ফিরতে বাধ্য হবে!

দরজা দিয়ে বের হতে হতে বললো, ” আর ডিভোর্সের কথা তো ভুইলাই যা। ”

৭ দিন কেটে গেছে।
মাহির সত্যিই বাধ্য হয়েছিল বাসায় ফিরতে।
তবে একদিন মিস সিক্রেট ঘুমন্ত মাহিরকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখায় তানিশা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুমন্ত মাহিরের উপর ফেলে দেয়।
সেদিন মাহির মিস সিক্রেটকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে আবারও বাসা ছেড়ে চলে যায়। এবার আর মিস সিক্রেট বাঁধা দেয় না বা বাধ্যও করে না বাসায় ফিরার জন্য।

জনগণ যা ভেবেছিল, মিস সিক্রেট যাকে বিয়ে করবে তার ন্যূনতম ক্ষতি বা দুর্নাম হতে দিবে না। তাই হয়েছে। মিস সিক্রেট মাহিরের বিরোধ্যে সামান্যতম কথাও বলতে দেয় না।

এইতো সেদিনের কথা, লাইভে মাহির আর সুপ্তিকে নিয়ে কথা উঠায় মিস সিক্রেট টিভি চ্যানেলটা হ্যাক করে লাইভ নষ্ট করে দিয়েছে।

মাহিরের অবর্তমানে মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর কোম্পানি চালাচ্ছে।
এতকিছুর পরও শাশুড়ির মনে জায়গা করে নিতে পারে নি সে ৷
রাগিনী বেগমের মতে সকল সমস্যার উৎপত্তি মিস সিক্রেট। তাই তো প্রতি পদক্ষেপে ভুল ধরে মিস সিক্রেটের।

এভাবেই কেটেছে সাতটি দিন ৷
আজ অনেকদিন পর মিস সিক্রেটের ডাক পড়েছে নতুন মিশনের জন্য। এমন না যে এতদিন তার কাজ ছিল না! তার কাজ ছিল কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সে কোনো কিছুই করে নি।

তবে এবারেরটা ভিন্ন।
কথায় আছে না, “কান টানলে মাথা আসে। ”
ঠিক তেমনটিই। মিস সিক্রেটকে আনার জন্য এখানে মাহিরকেও ডাকা হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে মিস সিক্রেটও যাচ্ছে তবে ইরফানের সাথে।।

মিস সিক্রেট, ইরফান আর মাহির একটা রুমের বসে আছে। রুমটা খুবই গোছানো। অনেকগুলো এক্সপেনসিভ পেইন্টিং লাগানো।
মাহিরের মাঝে কিছুটা চিন্তার ভাজ বুঝা গেলেও মিস সিক্রেটের কোনো চিন্তা নেই তা তার কথায়ই বুঝা যাচ্ছে। সে তো ইরফানের সাথে পেইন্টিং নিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত।

একজন রুমে প্রবেশ করতে করতে নিজের পরিচয় দিলো।
মিস সিক্রেটকে যে এজেন্সি থেকে ডাকা হয়েছে সেই এজেন্সির ওনারের পিএ সে।

লোকটা খুব ফরমাল কথা বলায় বিরক্ত হলো মিস সিক্রেট। মিস সিক্রেট ডিরেক্টলি বললো, ” সোজাসাপটা বলুন কেন ডেকেছেন আমাদের! ”

লোকটা কিছুটা থতমত খেলো।
কিছু সময় নিয়ে বলা শুরু করলো, ” বস অসুস্থ তাই আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। আপনাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডাকা হয়েছে যেখানে সরকারও আপনাদের সাহায্য করবে ৷ ”

লোকটা কিছু সেকেন্ডের জন্য থামলো। হয়তো মিস সিক্রেটের প্রতিক্রিয়া দেখতে চাচ্ছে।
তবে মিস সিক্রেটের মতি গতি বুঝতে না পেরে আবারও বলা শুরু করলো, ” রিসেন্টলি, আমাদের প্রতিবেশি দেশের কিছু লোক এসে আমাদের দেশের একটা ইমপর্ট্যান্ট ফাইল চুরি করে নিয়ে গেছে। যা দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের দেশের হাতে পড়লে দেশের বিরাট ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। ”

মিস সিক্রেট ব্যতিত বাকি দুইজন উঠলো, ” কি বিষয়ের ফাইল? ”

পিএ : সেটা আপনারা পরেই জানতে পারবেন।

মিস সিক্রেট : আপনারা সিওর যে ফাইলগুলো প্রতিবেশি দেশেরই কেউ নিয়েছে।

পিএ : ১০০% সিওর। কিছুদিন আগে সেই দেশের কিছু মানুষ বডার দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ করেছিল। তারাই চুরিটা করেছে।

মিস সিক্রেট ভ্রু কুচকে বললো, ” এত সিওর হচ্ছেন কেন! তারা কি ফাইলগুলোর পরিবর্তে কোনো কিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে? ”

পিএ : হ্যাঁ।

মিস সিক্রেটকে স্বাভাবিক দেখে সবাই অবাক হচ্ছে।

মিস সিক্রেট : এই ঘটনা তাও কতদিন আগের?

পিএ : প্রায় দেড় মাস।

মিস সিক্রেট : কি? আর আপনি আজ আমাকে বলছেন! এ ঘটনা ঘটার সময় আমি কোথায় ছিলাম?

পিএ : সম্ভবত আপনি দেশের বাহিরে ছিলেন। আর আমরা চুরির বিষয়ে জানতে পেরেছি ১২ দিন আগে। এতদিন এটা নিয়ে রিচার্স চলছিল। আসলে আমরা চাই না এটা পাবলিক জানুক। বুঝেনই তো রাজনৈতিক বিষয়!

মিস সিক্রেট : আপনারা কি চাচ্ছেন, এই মিশনটা আমি পরিচালনা কি?

পিএ হ্যাঁ বলতেই মিস সিক্রেট দাঁড়িয়ে বললো, ” সরি, এই মিশনে যাওয়া মানে নির্ঘাত মৃত্যু। ”

পিএ : আপনি এ কথা বলছেন! আপনি এর থেকেও অনেক হার্ড মিশন করেছেন!

মিস সিক্রেট : আপনি বুঝতে পারছেন না। সেটা আমি একা করেছি কিন্তু এটা একা করা সম্ভব না। আর আমি কারো জীবন নিয়ে খেলবো না।

মিস সিক্রেটের কথার আঁচে বুঝা যাচ্ছে সে কারো মৃত্যুর আশঙ্কা করছে এ মিশনে! তাই হয় তো যেতে চাচ্ছে না।

পিএ : কিন্তু, এটা তো প্রয়োজন। আর আপনাকে যেতেই হবে।

মিস সিক্রেট : আমাকে এ বিষয়ে আগে জানিয়েছেন! আর আপনি আমাকে অর্ডার করছেন? ( রেগে )

পিএ : একটু শান্ত মাথায় বসুন, প্লিজ।

সকলের অনুরোধে মিস সিক্রেট শান্ত হয়ে বসলো। পিএ তাকে অনেকক্ষণ বুঝানোর পর মিস সিক্রেট রাজি হলো।

তবে তার শর্ত আছে।

এ মিশনে যদি কেউ মারা যায় তবে তার পরিবারকে সরকার দেখবে।

এ মিশন সম্পর্কে কেউ জানবে না এবং

মিস সিক্রেট যা বলবে সকলকে তা মানতে হবে। সে যেই হোক না কেন!

সব শর্তেই রাজি হতে হলো পিএকে। নইতো মিস সিক্রেটকে রাজি করানো যাবে না।

কোনো বিপদ ঘটার পূর্বে মানুষের মন কু ডাকে। আজ মিস সিক্রেটেরও কেমন যেন ডাকছে। এই কাজটা তার মনের বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে। তবুও কাজ শুরু করলো।

মিস সিক্রেট ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটা টিম বানাতে ৩ দিন লাগালো শুধু সদস্য বেছে নিতে।
এই সদস্যরা হলো – মিস সিক্রেট, নাম্বার -১১, নাম্বার- ৩, ইরফান, মাহির, বডারগার্ড ৩ জন, ৭ জন গোয়েন্দা অফিসার, ইয়ার ফোর্সের ২ জন এবং আর্মি ৩ জন।

এরমধ্যে ২ জন গোয়েন্দাকে মিস সিক্রেট আগেই ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছে ছদ্মবেশে। বাকিদের টেনিং চলছে।।

৩ জন ঘুরার নাম করে যাবে। বডারগার্ডরা আমাদের পালাতে সাহায্য করবে যদি কোনো কারণে আমাদের ওই দেশে আটকে ফেলা হয় তো। মাহির, ইরফানসহ সিক্রেট টিমের ২ জন এ দেশেই থাকবে।
এগুলোই মিস সিক্রেট বলছিল।

হঠাৎই একজন বলে উঠলো, ” ম্যাম, তাহলে আমরা কি করবো? ”

মিস সিক্রেট : ম্যাম না, মিস সিক্রেট বলো। আমিও তো তোমাদের টিমমেট।
মিস সিক্রেট মলিন হেসে বললো। তবে তার সেই হাসি মাস্কের আড়ালেই রয়ে গেল ৷

কিছুক্ষণ পর বললো, ” বাকিরা আমার সাথে যাবে আমার বডিগার্ড হয়ে। ”

সকলেই এক দফা অবাক হলো।

মাহির : তাহলে এই টিমের মাস্টারমাইন্ড কে? আই মেইন কে দেশে থেকে এই টিম পরিচালনা করবে?

মিস সিক্রেট : তুমি।

মাহির আরেক দফায় অবাক হলো।

মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” আমি যাবো প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। এখন হয় তো বুঝতে পারছো তোমাদের কি কাজ! ( ইয়ার ফোর্সের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে )
আর বাকিদের কাজ তো আগেই বলেছি। ”

মিস সিক্রেট আরও কিছু কথা বললো।
৭ দিনের টেনিংয়ের পর আসল কাজ শুরু হলো। যেভাবে প্লেনিং করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে।।

__________________

কাজ শেষ করে দীর্ঘ পাঁচ দিন পর দেশে ফিরছে মিস সিক্রেট। মিশনটা সিক্রেট রাখার কথা থাকলেও মিস সিক্রেটকে বাঁচানোর জন্য তা এখন পাবলিকও জানে।

মিস সিক্রেট জেট থেকে নামতেই সাংবাদিকরা তাকে ঘেরাও করলো।

মিস সিক্রেট মাহিরকে দেখে মাস্কের আড়ালে হাসলো। সে শুনেছে তাকে বাঁচানোর জন্য মাহির অনেককিছু করেছে।

মিস সিক্রেট সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললো, ” আমি লাইভে এসে সবকিছু ক্লিয়ার করবো। প্লিজ, এখন ডিস্টার্ব করবেন না। ”

বলা শেষে হাঁটা শুরু করলো। তার দুইপাশে মাহির এবং ইরফান। ইরফান সকলকে সরাতে ব্যস্ত।

সকলে এসে গাড়িতে বসলো। গন্তব্য তাদের মাহিরের বাড়ি।।

#চলবে.,.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে