#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_35
#Sabrina_Summa
নিত্যদিনের মতো আজও মাহিরের ফোনে ঘুম ভাঙলো সুপ্তির।
সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহিরের রাগী স্বর শুনলো।
মাহির : কী সমস্যা তোমার? কল করলে রিসিভ করো না তারপর আবার সারারাত বন্ধ করে রাখছিলা! আর এপার্টমেন্ট চেঞ্জ করতে আমি না করছিলাম না?
মাহির থামতেই সুপ্তি বলে উঠলো, ” হুম, তারপর। ”
মাহির আরও বেশি রেগে বললো, ” তারপর মানে কি? ৫ মিনিট টাইম দিলাম আমার সাথে দেখা করবে। ”
সুপ্তি : পারবো না।
মাহির : পারতে হবে। না হয় আমি কি করতে পারি আশা করি তোমার জানা আছে!
সুপ্তি : না, জানা নেই।
মাহির : চুপচাপ দেখা করো।
সুপ্তি : টাইম বাড়ান।
মাহির : ২০ মিনিট দিলাম। পার্কে আসো।
বলেই কল কেটে দিলো।
সুপ্তির এতক্ষণ রাগ না হলেও এখন হলো মুখের উপর কল কাটার কারণে। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
পার্কে প্রবেশ করতেই মাহির এসে জড়িয়ে ধরতে নিলে সুপ্তি বলে উঠলো, ” দূরে থাকুন। ”
মাহির সরে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”
সুপ্তি : আমার আবার কি হবে?
মাহির : এমন করছো কেন?
সুপ্তি : কেমন করছি?
মাহির : ত্যাড়াইছা উত্তর না দিয়ে সোজা কথা বলো।
সুপ্তি : আমি ত্যাড়াইছা কথা বলছি?
মাহির : আচ্ছা, বাবা মাফ চাই।
সুপ্তি : আমি আপনার বাবা?
মাহির : প্লিজ বলো না কি হইছে?
সুপ্তি : আপনি চুপচাপ আপনার বাসায় যান।
মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখিয়েই বললো, ” মিস সিক্রেট তোমায় কিছু বলেছে? ”
এবার সুপ্তিও রাগ হলো। কিছুটা চিৎকার করেই বললো, ” সব জায়গায় শুধু মিস সিক্রেটের ভুল খোঁজেন কেন? সে আপনার ভালো করলেও খারাপ দেখেন, খারাপ করলে তো দেখবেনই। আমাকে কেউ কিছু বলে নি। পারলে আপনার বাবার সাথে গিয়ে কথা বলুন। ”
কথাগুলো বলা শেষে সুপ্তি দ্রুত হাঁটা শুরু করলো।
মাহির সেখানেই কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কারণ সুপ্তির কথাও ভুল না আবার সুপ্তি কোনোদিন তার সাথে এভাবে কথাও বলে নি! তাই সে খুব শিহরিত।
কিছুক্ষণ পরই সে বাড়ির দিকে রওনা হলো।
বাসাতে যেতেই চিৎকার করা শুরু করলো। আজ যেভাবেই হোক তাকে তার বাবাকে সবকিছু বলতেই হবে।
প্রথমদিকে মাহফুজ চৌধুরী রাগ দেখালেও পরবর্তীতে ছেলের পাগলামি তে নিজেও চুপ হয়ে গেছে।
বিকেলের দিকে মিস সিক্রেটকে কল করে আসতে বললেন।
মিস সিক্রেট রুমে প্রবেশ করতে করতে বললো, ” আঙ্কেল, আজকে আবার কি? ”
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি কি সুপ্তিকে না করেছিলে?
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ। সুপ্তি নিজের অবস্থান থেকে এগোবে না।
মাহফুজ চৌধুরী : কিন্তু মাহির…
মাহফুজ চৌধুরীকে কথা শেষ করতে দিলো না মিস সিক্রেট। নিজে বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, এটা আপনাদের আই মেইন বাপ ছেলের কাহিনী। নিজেরা সমাধান করুন। আমি বললামই তো সুপ্তি আর এগোবে না। ”
মাহফুজ চৌধুরী কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, ” ভাবছি, সুপ্তিদের বাসায় যাবো। ”
মিস সিক্রেট রাগী স্বরে প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”
মাহফুজ চৌধুরী : বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো ৷
মিস সিক্রেট মনে খুশি হলেও স্বাভাবিক ভাবে বললো, ” মেনে নিলেন যে? ”
মাহফুজ চৌধুরী এক ধ্যানে বললেন, ছেলের পাগলামিতে! ছেলে যে আমার বড্ড আদরের। এ সম্পর্কে তো তোমার ভালো ধারণা আছে! ”
মিস সিক্রেট : কবে যাচ্ছেন?
মাহফুজ চৌধুরী : কালকে। তুমিও চলো!
মিস সিক্রেট উঠতে উঠতে বললো, ” না, না। আমার কাজ আছে। ”
মাহফুজ চৌধুরী : চলে যাচ্ছো?
মিস সিক্রেট : হুম। রেস্ট নিন। কালকে অনেক জার্নি করতে হবে!
বলতে বলতে চলে গেলো।
পরের দিন সবাই সুপ্তির বাসায় গিয়ে বিয়ের কথা বলে আসছে। বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে তিনদিন পর। অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর।
মাহিরের খুশি দেখে কে!
—
গায়ে হলুদসহ সকল অনুষ্ঠানে খুব ভালো ভাবেই কাটলো। মাহির সুযোগ পেলেই সুপ্তির কাছে আসে।
শহরের এক নামি-দামি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের কার্যক্রম করা হচ্ছে।।
৩১ ডিসেম্বর.,.
সকাল থেকে বিয়েতে মেতে সকলেই খুব ক্লান্ত।
বিকেলের দিকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে তবে এখনো বর কনে নিজেদের দেখে নি।
সন্ধ্যের দিকে কনেকে স্টেজে আনা হচ্ছে।
কনেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মাহির গান বলতে বলতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
হা তামান্না হামে তোমহে দুলহান বানায়ে..
তেরি হাথ পে মেহেন্দী আপনে নামকি সাজায়ে..
( বলতে বলতে কনের হাত ধরে নামালো )
তেরি লে লে বালায়ে, তেরে সাদকে উতারে…
হা তামান্না হামে তোমহে আপনে বানায়ে…
( গাইতে গাইতে কনের দিকে গোল করে ঘুরলো। কনের মাথায় এক হাত ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢাকা দেখে মাহির ভ্রু কুচকালো )
নেহি মুশকিল আফা, জারা দেখো এহা
তেরি আখো মে বাসতা হে মেরা জাহান…
কাবি সুন তো জারা…
বলতে বলতে ঘোমটা সরাতেই অবাক হয়ে তাকালো।
সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তবে সুপ্তির বাবা-মায়ের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।
সাংবাদিকরা একে অপরের সাথে কানা ঘুসা করে বলছে মিস সিক্রেটের সাথে বিয়ে হয়েছে!
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি? ”
মিস সিক্রেট কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” আমার সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে আমিই তো থাকবো! ”
এ কথা শুনতেই মাহির হাতে থাকা মাইকটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হতে নিলে মিস সিক্রেট ফিসফিস করে বলে উঠলো, ” সুপ্তিকে বাঁচাতে চাইলে চুপচাপ এখানে বসে থাকো। ”
মাহির যেতে চেয়েও পারলো না । চুপচাপ সবার সাথে বসে ছবি তুলতে হলো।
বাসায় যাওয়ার সময় মাহির নিজের ভাবনায় মগ্ন রইলো৷
বাসায় পৌঁছাতেই নিজের রুমে গিয়ে সাজানো গোছানো রুমটাকে অগোছালো করে ফেললো। ময়লার স্তুপে পরিণত করলো ।
মিস সিক্রেট বাহিরে দাঁড়িয়ে বললো, ” আঙ্কেল, আমার জন্য অন্য রুম গুছান। ”
মাহফুজ চৌধুরী : একটু কথা বলে দেখো।
মিস সিক্রেট : আঙ্কেল, আমি আগেই নিষেধ করেছিলাম এমনটা না করতে।
মাহফুজ চৌধুরী : কি করবো বলো আমার তো ছেলের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ!
মিস সিক্রেটের গতকাল রাতের কথা মনে পড়লো।।
মাহফুজ চৌধুরী তাকে ডেকে বলেছিল, ” তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া। তুমি তাশরিফকে বিয়ে করবে। ”
মিস সিক্রেট প্রথমদিকে না মানলেও মাহফুজ চৌধুরীর পরিকল্পনা শুনে রাজি হয়েছে।
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি বিয়ে না করলেও আমি সুপ্তিকে গুম করবো।
” ওকে গুম করা হলে মিস সিক্রেটও গুম হয়ে যাবে! ” ( মিস সিক্রেট মনে মনে )
মিস সিক্রেট : না, না আঙ্কেল। ওকে আমি গুম করবো।
মাহফুজ চৌধুরীর কথায় মিস সিক্রেটের ধ্যান ফিরলো।
মাহফুজ চৌধুরী : আমাকে একদম আঙ্কেল বলবে না। বাবা বলবে।
মিস সিক্রেট : ওকে।
বলে রুমে প্রবেশ করতেই মাহির বললো, ” তোর বাসর তুইই কর। ”
বলেই বের হয়ে গেল।
মিস সিক্রেট কিছুই বললো না। সময় দিলো মাহিরকে বুঝার জন্য।
সারারাত মাহির ও মিস সিক্রেট উভয়েরই নির্ঘুম কাটলো।।
#চলবে.,.