#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_23
#Sabrina_Summa
চিন্তায় ডুবে আছে মাহির। সময়ের গতিতে সময় যাচ্ছে তবে তার চিন্তা শেষ হচ্ছে না। সারাদিন তার চিন্তায়ই গেলো। শেষে আর না পেরে মিস সিক্রেটকে কল করলো।
মিস সিক্রেট কল রিসিভ করে বললো, ” এতদিন পর আমায় মনে পড়লো! ”
মাহির সে কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো, ” সুপ্তির মিনি ডাইরিটা কোথায়? ”
মিস সিক্রেট : যার ডাইরি তার কাছেই।
মাহির : কেন দিলে? আমাকে দেওয়ার কথা ছিল! এরজন্যই কারো উপকার করতে নেই।
( এক নিশ্বাসে, কিছুটা রেগে )
মিস সিক্রেট : অন্য কিছু কি বলবে নাকি কল কেটে দিবো?
মাহির : না না। একটা হেল্প করবে প্লিজ… ( টেনে )
মিস সিক্রেট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, ” বলে ফেলো। ”
মাহির : আমি ঘাটাইল যাবো….
বাকি কিছু বলার আগেই মিস সিক্রেট বললো, ” সুপ্তির জন্য নিশ্চয়ই ! ভালো একটা উপদেশ দিচ্ছি ওর পিছ ছেড়ে দাও না হয় পরে তোমাকে পস্তাতে হবে। ”
মাহিরের কথাটা পছন্দ হলো না। পছন্দ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। একতো সে সুপ্তিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
আর দ্বিতীয়তো কেউই ফ্রী ফ্রী উপদেশ পাওয়া বা নেওয়া পছন্দ করে না।
তাই মাহির মিস সিক্রেটের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, ” বাবাকে একটু রাজি করাও না। প্লিজ। ”
মিস সিক্রেট জানতো হয়তো মাহির এমন কিছুই বলবে। কারণ এমনিতেই মাহির তার কথা শুনে না। আর এ বিষয়ে তো প্রশ্নই ওঠে না। তবুও কেন যেন আজ মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।
মিস সিক্রেট : ওকে, একটু পর আঙ্কেলের কাছে যাও।
ঝড়ের গতিতে বলেই কল কেটে দিলো। যাতে বিরক্ত হলো মাহির ৷
বিরক্তিতে বলে উঠলো, ” ধূর। কি অদ্ভুত মানুষ রে বাবা। কতদিন থাকবো সেটাও বলতে দিলো না। ”
মাহির কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে সাহস যুগিয়ে মাহফুজ চৌধুরীর রুমের সামনে গিয়ে বললো, ” বাবা, আসবো? ”
মাহফুজ চৌধুরী : চলে এসো।
মাহির ভিতরে প্রবেশ করতেই বললো, “বসো।”
মাহির বসে বললো, ” বাবা, আমার একটু ঘাটাইল যেতে হবে। ”
মাহফুজ চৌধুরী : কবে যাচ্ছো?
মাহির : কালকে।
মাহফুজ চৌধুরী : সেখানকার বর্তমান ইউনো আমার ক্লাসমেট ছিল। দেখা করে এসো।
মাহির : আচ্ছা বাবা।
মাহির মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, ” তোমার এত ডং না করলেই চলবে আমি জানি বাবা, তুমি কেন এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়েছো। ”
মাহফুজ চৌধুরীও মনে মনে বললো, ” শুধু মিস সিক্রেট বলে ছিলো বলে যেতে পারছো। ”
দুইজনের মনে মনে কথা শেষ হলে মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললো, ” যাও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো। সকাল সকালই তো রওনা দিবে! ”
মাহির : হ্যাঁ বাবা।
বলেই রুম থেকে বের হতে হতে বিড়বিড় করে বললো, ” কত ভালো ব্যবহার! ” ( তিরস্কার করে )
খুব সকালেই রওনা দিলো মাহির। গন্তব্য তার ঘাটাইল নয়, গন্তব্য তার প্রিয়তমার বাড়ি।
এ বিষয়ে সুপ্তিকে কিছু বলে নি সে, সরাসরি সারপ্রাইজ দিতে চাই। তবে তার প্রিয়তমা তো সেই কবেই জেনে গেছে।
জেমে পড়তে হয় নি তার। তবুও পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। পৌঁছে সুপ্তিকে কল করলো।
সুপ্তি এসে মাহিরকে তার পুরোনো স্কুলে নিয়ে গেল। কারণ রিইউনিয়ন পার্টি তো সেখানেই। একটু পরই অনুষ্ঠান শুরু হবে ৷
স্কুলের সামনে যেতেই প্রধানশিক্ষক এসে মাহিরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়ে গেল। হয়তো সুপ্তি বলেছিল মাহির আসছে!
রিইউনিয়ন পার্টিটা ছোট করার কথা থাকলেও তা এখন বড় করেই করা হচ্ছে।
একটা ক্লাস রুমে বসে আছে সবাই। সেখানে মাহির ও সুপ্তি প্রবেশ করতেই সুপ্তিকে দেখে সবাই বলে উঠলো, ” তুই হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেছিলি আপুর মৃত্যুর পর? ”
এমন প্রশ্ন যে আসবে তা সুপ্তির জানায় ছিল তবুও মন খারাপ হলো শেষের কথাটুকু শুনে। সুপ্তি উত্তর দিলো না। একজন কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, ” কেমন আছো, সুপ্তি? ”
সামনের মানুষটিকে দেখে অনেক কষ্টে মুচকি হাসি দিলো। কখন না আবার গন্ডগোল বাধিয়ে দেয় এই ভয়েই আছে সে। তবে উত্তর তো দিতেই হবে তাই বললো, ” এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি? ”
অন্যদিকে মাহিরকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মাহিরের নজর তো সুপ্তির দিকেই। তার এসব সহ্য হচ্ছে না।
— ” আছি মোটামুটি। ”
সুপ্তি : মোটামুটি কেন?
— ” ভালো আর থাকতে দিলে কই! ১০ বছর আগে হঠাৎ ব্রেকাপ করে উধাও হয়ে গেলে। এতটাই কি অযোগ্য ছিলাম আমি! ”
সুপ্তি বুঝতে পারলো সে ভুল পয়েন্টে হাত দিয়ে ফেলেছে। যেহেতু ভুল করেই ফেলেছে সেহেতু আরেকটু বাজানো যাক। এই ভেবেই বললো, ” হঠাৎ এসব কথা বলছো কেন। ”
উত্তর দেওয়ার পূর্বেই মাহির এসে হাজির। তাও আবার প্রশ্ন নিয়ে, ” ও কে সুপ্তি?” ( লোকটিকে দেখিয়ে )
সুপ্তি : সোহম, আমার ফ্রেন্ড।
সোহম : আপনি এখন একটু যান। আমার সুপ্তির সাথে কথা আছে। ( মাহিরকে উদ্দেশ্য করে )
মাহির : ও হ্যালো। শি ইজ মাইন। মেইনটেইন ডিস্টেন, ওকে?
সোহম : তোমার বয়ফ্রেন্ড? ( সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে )
সুপ্তির বলার আগেই মাহির বললো, ” নো। উড বি হাসবেন্ড। ”
সোহম কিছু বলতে নিচ্ছিলো। কিন্তু সোহমকে বলার সুযোগ না দিয়ে মাহির সুপ্তিকে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো।।
#চলবে.,.
#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_24
#Sabrina_Summa
কিন্তু সোহমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহির সুপ্তিকে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো।
সুপ্তি : থ্যাংকস, পার্ফেক্ট টাইমে আসার জন্য। বাট আপনি একটু বেশিই বলে ফেলেছেন।
মাহির কিছুটা রেগে গেছে সোহমের ব্যাপারটা নিয়ে। তবুও শান্তভাবে প্রশ্ন করলো, ” ছেলেটা কে? কোনো নরমাল ফ্রেন্ড তো মনে হচ্ছে না! ”
সুপ্তি : আমার ওয়ান এ্যান্ড অনলি এক্স।
মাহির : তোমার এক্স? ( রেগে )
সুপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই মাহিরের রাগ বাড়লো। রাগ দেখাতে যাবে তার আগেই সুপ্তির ডাক পড়লো। তাই সুপ্তি চলে গেলো।
এরপর আর সুযোগ হয়ে উঠলো না কথা বলার। শপিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
মূলত শাড়ির সাথে মেচিং করে জুয়েলারি কিনবে।
একরকম শাড়ি, ব্লাউজ, পাঞ্জাবি – পায়জামা আগেই অর্ডার করা ছিল। যা আজকেই রিসিভ করেছে।
মাহিরের রাগ কিছুটা হলেও কমলো প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে পাঞ্জাবি পায়জামা পেয়ে ৷
ছেলেরা অফ হোয়াইট কালারের মাঝে গোল্ডেন কারুকার্যের পাঞ্জাবি পড়েছে । সাথে মেচিং সুজ, ওয়াচ এ্যান্ড সানগ্লাস।
মাহির মোটামুটি এক ঘন্টা ধরে মেয়েদের সাজার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা+পাহাড়া দিচ্ছে। তবে এত প্রতীক্ষা যার জন্য সেই আসছে না।
সুপ্তি গোল্ডেন পাড়ের লাল শাড়ি পড়ে বের হলো।
বাঙালি স্টাইলে পড়া। চুল খোলা তবে পিছনে লাল গোলাপ ফুল দেওয়া। হাতে লাল রেশমি চুড়ি। চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। সাথে কিছু জুয়েলারি তো আছেই। এতেই সুন্দর লাগছে তাকে।
সত্য বলতে ফর্সা মানুষের কম সাজলেও হয় তার প্রমাণ সুপ্তি।।
সুপ্তি মাহিরকে দেখে অবাক হলো। বললো, ” দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ”
মাহির সুপ্তির দিকে না তাকিয়েই বলা শুরু করলো, ” এতক্ষণ লাগে কারো সা…”
সুপ্তির দিকে তাকাতেই কথা বন্ধ হয়ে গেল। শুধু বললো, ” মাশাল্লাহ। ”
এরপর নিজেকে সংযত করে বললো, ” এত সেজেছো কেন? ”
সুপ্তি : কেন খারাপ লাগছে? জানেন, আমি প্রায় ১০ বছর পর সাজলাম।
” এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাই ওকে এতই সুন্দর লাগছে যে কেউ ক্রাশ খাবে! “( মনে মনে )
সুপ্তি : এক মিনিট। আপনি আমাকে এতটুকুতেই এত সাজ বলছেন! আগে তো আমি বউ সাজতাম। সে তুলনায় এটা তো কিছুই না।
মাহির : কার বউ সাজতে?
সুপ্তি : আমার ফিউচার হাসবেন্ডের।
মাহির : ও আচ্ছা, আমার জন্য সাজতে।
সুপ্তির রিয়েকশন দেখে মাহির কথা ঘুরানোর জন্য বললো, ” চলো ওই দিকে যাই। ”
সুপ্তি দ্বিমত করলো না। হাঁটা শুরু করলো।
মাহির হাঁটতে হাঁটতে বললো, ” আমাদের বিয়েতে তোমাকে শাড়ি পড়তে দিবো না। ”
সুপ্তি : আমাদের বিয়ে মানে! আপনাকে কে বিয়ে করবে? আর সেকেন্ড কথা আমি এমনিতেও শাড়ি পড়বো না কারণ এটা সামলানো অনেক কঠিন।
কথা শেষ করতেই তার মাথায় আরেকটা প্রশ্ন আসলো তাই বললো,” যাইহোক, এইটা কথা বলুন শাড়ি পড়লে কি হবে? ”
মাহিরের ঝটপট উত্তর, ” সবাই তোমাকেই দেখবে। আমাকে কেউ পাত্তাও দিবে না। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর বললো, ” হাইরে প্লে বয় রে! মানুষ পাত্তা পাওয়ার জন্য কত কিই করে।
আপনার সাথে একটা গানের দুই লাইন পার্ফেক্টলি যায়। ”
মাহির : কোন গান? একটু সুর দিয়ে বলো তো।
সুপ্তি : কারো একদিন হবো, কারো এক রাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না।
মাহিরের তো গান শুনে মাথায় হাত।
” তুমি আমায় এমন ভাবো? ”
সুপ্তি : এখন ভাবি না।
মাহির : তাহলে আগে ভাবতা?
সুপ্তি : আরে বাদ দেন তো। এই গান এখন উপন্যাসে খুব ভাইরাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেই এসব গান তাই বললাম।
মাহির : তুমি সোশ্যাল মিডিয়াও চালাও।
সুপ্তি : একদম ডং করবেন না। আপনার জন্যই তো। কখন কোথায় মেনশন দিয়ে দিবেন আর সুশমিতা আমাকে জ্বালাইয়া মারবে।
মাহির হাসলো। এ বিষয়ে কথা বাড়ালে যদি সুপ্তি রেগে যায় তাই কথা ঘুরিয়ে বললো, ” আচ্ছা, তুমি নাকি উধাও হয়ে গেছিলে? ”
সুপ্তি : হুম। পরে বলবো নি সম্পূর্ণ কাহিনি। এখন মুড নেই।
মাহির জোর করলো না। যেহেতু সুপ্তি বলেছে পরে বলবে তার মানে পরেই বলবে ৷ নিরবতা চললো কিছুক্ষণ। এতক্ষণে সম্পূর্ণ স্কুল মাঠে পাঁচ বার রাউন্ড দেওয়া শেষ।।
নিরবতা ভেঙে মাহিরই বললো, ” একটা কাজ করবে! একদম বলবে না তোমার মুড নেই। ”
সুপ্তি : কি কাজ? ( সিরিয়াস হয়ে )
‘কাজ’ শব্দটা শুনলেই কেমন যেন সিরিয়াস ভাব চলে আসে তার মাঝে।
মাহির : আমার সাথে একটু ফ্লাটিং করো তো।
সুপ্তির এক্সপ্রেশন দেখে মাহির দ্রুত বলে উঠলো, ” প্লিজ, প্লিজ, প্লি…”
বলার পূর্বেই সুপ্তি বললো, ” ওকে। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর কিছুক্ষণ হাসলো। তারপর বললো, ” যাই হয়ে যাক। আপনি হাসবেন না কিন্তু! ওকে?”
মাহির মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো ৷
সুপ্তি ফিল নিয়ে বলার জন্য মাহিরের চোখের দিকে তাকালো। তারপর বললো, ” জানেমান। ”
মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” আজ আমি শেষ!”
সুপ্তি : আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড হতে চাই না। আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হতে চাই। আপনার বাঁ পাঁজরের হাড়ের অস্তিত্ব হতে চাই! সেই সুযোগটা কি আমাকে দিবেন!
মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি নিজের ইমোশন আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। জোরে হাসা শুরু করলো। সেই অবস্থাতেই মাহির সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো। সুপ্তি তাও হাসতেই রইলো। অনেকদিন পর মন খুলে হাসছে সে ৷
কিছুক্ষণ পর মাহিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” ‘বাঁ পাঁজরের হাড় ‘ কথাটা ইন্টারেস্টিং করার জন্য বললাম। ডোন্ট মাইন্ড। ”
মাহির : তুমি যে কারণেই বলে থাকো না কেন! আমি তোমার প্রেমে আবারো পড়ে গেছি ।
সুপ্তির কেন যেন রাগ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কিছু না শোনার ভান করে বললো, ” চলুন স্টেজের দিকে যায়। ”
দুইজন স্টেজের একদম সামনের দিকটাই বসলো।।
#চলবে.,.