Dark Mystery পর্ব-২১+২২

0
5

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_21
#Sabrina_Summa

সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে মাহিরের আরও একদিন লাগলো।

বর্তমান.,.
সুপ্তি : আমার পছন্দের গান ধরবো। মাইন্ড করবেন না।
মাহিরের ধ্যান ভাঙলো সুপ্তির কথায়। মাহির কিছু বলার আগেই সুপ্তি গান শুরু করলো,
পাল ভার ঠেহের যায়ে
দিল হে সামহাল যায়ে
কেছে তোমহে রোকা কারো…..
মেরে তারাফ আতা, হার গাম পিসাল যায়ে
আখো মে তুমকো ভারো…
বিন বলে বাতে তুমছে কারো…
আগার তোম সাথ হো…….(ii)
———————————— তেরে নাজরো মে হে তেরে সাপনে, তেরে সাপনো মে নারাজি….
মোজে লাগতাহে কে বাতে দিল কি হতি লাফজো কি ধোঁকেবাজি।
তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া…… ফার্ক হে…বেদার্ত থি জিনদিগী বেদার্ত হে….
আগার তোম সাথ হো….
সুপ্তি খুব আবেগ দিয়ে গাচ্ছিল। যখনই আবার বলছিল ” আগার তোম সাথ… ” তখনই মাহির সুপ্তির কাধে মাথা রেখে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। থেমে গেলো সুপ্তি। মাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
মাহির সুপ্তির চাহনি দেখে বুঝতেই পারছে না সুপ্তি বিরক্ত হচ্ছে নাকি রাগ করছে। অদ্ভুত সেই চাহনি।
মাহির : কি হলো গান বন্ধ করলে কেন?
সুপ্তি উত্তর না দিয়ে সেভাবেই তাকিয়ে রইলো। মাহির এবার সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” তোমার মতো তোমার গলার সুরও অনেক সুন্দর। তবে গানের একটা লাইন আমার পছন্দ হয় নি। ”
সুপ্তি চোখের ইশারায় বোঝালো কি?
মাহির : ওই যে ওই লাইনটা। ” তোম সাথ হো ইয়া না হো কিয়া ফার্ক হে। ” আচ্ছা, আমি না থাকলে তোমার যায় আসবে না?
সুপ্তি : তা একটু আসবে। ভালো ফ্রেন্ড বলে কথা।
মাহির : শুধু ফ্রেন্ড আমি! আর জাস্ট একটুই যায় আসবে!
সুপ্তি : না ভালোই যায় আসবে। আর আপনি তো ফ্রেন্ডই।
মাহির : আমি শুধুই ফ্রেন্ড?
সুপ্তি : তা না হলে কি ভাইয়া?
মাহির : ভাইয়া?
সুপ্তি : হ্যাঁ ভাইয়া।
মাহির : ভাইয়া মানেই ছাইয়া ছাইয়া। বিয়ে পর বুঝাবো ভাইয়া কি জিনিস!
বলা শেষ করে রেগে উঠে যেতে নিলো।
সুপ্তি : আরে আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন।
মাহির : জাহান্নামে।
সুপ্তি : নাউজুবিল্লাহ। রাগ করছেন? আমি কিন্তু রাগ ভাঙ্গাতে আসবো না।
মাহির : ভাঙ্গাতেও হবে না।
মাহিরের রাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।।
সুপ্তিও নিজের এপার্টমেন্টের দিকে চলে গেলো। তাদের রাতে আর কথা হলো না।
মাহির রাগ করেই রইলো।।

সকাল এগারোটা বেজে চল্লিশ কি পঞ্চাশ.,.
সুপ্তি অনবরত মাহিরকে কল করছে । ৫ বার হবে হয়তো। কিন্তু মাহির রাগ করে থাকায় কল রিসিভ করছে না ।
সুপ্তি বিরক্তিতে বিড়বিড় করে বললো, ” এতক্ষণে ইরফানকে একবার কল করলেই চলে আসতো। শুধুমাত্র এই সিমে ওর নাম্বার নেই বলে। ”
মাহির কল না ধরায় সুপ্তি রাস্তায়ই শুয়ে পড়লো ক্লান্তিতে।
শেষবারের মতো কল করলো সুপ্তি। এবারও ধরলো না মাহির ৷ তবে কিছুক্ষণের মাঝেই কল বেক করলো।
সুপ্তি কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? তুমি যে মেয়ে এতবার কল তো শুধু শুধু করবে না ! কোনো বিপদ হয়েছে? তাড়াতাড়ি বলো। ”
সুপ্তি : ভার্সিটি গেটের পূর্বসাইডে আছি।
বলা শেষ করে কল কেটে দিলো। হয় তো মাহিরের চিন্তা বাড়ানোর জন্য। নয় তো তার বলতে কষ্ট হচ্ছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই মাহির গাড়ি নিয়ে চলে এলো।
সুপ্তিকে ফুটপাতে শুয়ে থাকতে দেখে অনেক মানুষ ভিড় করেছে। তা দেখে মাহির আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলো। ভিড় সরিয়ে সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়েছে তোমার? ”
সুপ্তি : আগে এদের সরান।
মাহিরের বডিগার্ড সবাইকে সরিয়ে দিলো।
মাহির ফুটপাতে বসে বললো, ” আরে বলছো না কেন, কি হয়েছে! তোমার মুখ লাল হয়ে আছে কেন? ” ( ভয়ে + রেগে )
সুপ্তি : একা একটা মেয়ে ১৫/১৬ জন ছেলের সাথে ফাইট করলে ক্লান্ত + একটু ব্যথা তো পাবেই।
( শুয়ে শুয়েই )
মাহির : তোমার পিছে সবসময় মানুষ লেগে থাকে কেন? কী করো তুমি?
সুপ্তি : আরে। কিছু মেয়েকে ডিস্টার্ব করছিল। তখন ঝামেলা বেঁধে গেছে। আমার আবার এসব সহ্য হয় না।
মাহির : তুমি কি গোয়েন্দা?
( সুপ্তির মুখের সামনে ঝুঁকে )
সুপ্তি : আমি আর গোয়েন্দা! হাও ফানি!
বলেই হাসতে শুরু করলো।
মাহির উঠে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো।
সুপ্তি উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। মাহির ভ্রু কুচকে তাকালো। সুপ্তি তোলার ইশারা করতেই মাহির কোলে তুলে নিলো ৷ এরপর গাড়িতে বসিয়ে বললো, ” আজকে তোমার সাথে টেনিং করবো। ”

#চলবে.,.

#Dark_Mystery (কালো রহস্য)
#Part_22
#Sabrina_Summa

প্রায় জনশূন্য মাঠ। চারপাশে শুধু বাতাসের গুঞ্জন, আর মাঝেমধ্যে গাছের পাতার মৃদু কাঁপুনি।
গাছের নিচে বসে আছে সুপ্তি। এক হাতে শুকনো একটা পাতা নিয়ে খেলছে। তার চুল বারবার বাতাসে মুখে এসে পড়ছে, কিন্ত তাতে কোনো হেলদোল নেই তার৷

ঠিক তখনই একটা ছায়া এসে পড়ল গাছের গায়ে।

সুপ্তি না তাকিয়েও বুঝতে পারে সামনে কে দাঁড়িয়ে।
সামনে দাঁড়িয়ে মাহির—সাদা রঙের হালকা টি-শার্টে, চোখে নির্লিপ্ত কিন্তু গভীর কিছু।
কণ্ঠে হালকা গম্ভীরতা—“ক্লাইম্বিং করতে পারো?”

সুপ্তি — “হ্যাঁ, পারি।”

মাহির হালকা মাথা নাড়ল, যেন এই উত্তরটাই সে আগে থেকেই জানত।
“আমি জানতাম তুমি পারবে।”

সুপ্তি অন্য দিকে তাকিয়েই বললো, “আমি মোটামুটি সবই পারি।”

মাহির —চলো, আমরা ক্লাইম্বিং করি।

সুপ্তি অবাক হয়ে চারপাশে তাকাল, তারপর আঙুল তুলে দেখাল পাশের বিল্ডিংটা—
“এই বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে?”

“হুম।” মাহিরের ঠাণ্ডা উত্তর।

সুপ্তি : “আপনি করুন, আমি করবো না।”

“তাহলে কী আমি ভেবে নেবো তুমি পারো না?”—মাহিরের কণ্ঠে খোঁচা।

সুপ্তির গলায় তখন একরকম অভিমান মেশানো রাগ— “আমি পারি। কিন্তু এটা অনেক উঁচু। আমি সবসময় বিল্ডিংয়ের ভেতরে ক্লাইম্বিং করেছি। বাইরে থেকে কখনো না।”

মাহির এগিয়ে এলো একটু, বললো,
“সেইফটি তো আছেই। সাথে আমিও আছি। এরপরও যদি বাহানা দাও, তাহলে ভাবতেই হবে—তুমি আসলে পারো না।”

সুপ্তির চোখে আগুন জ্বলে উঠলো। ইগোতে লাগল ব্যাপারটা।
সে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো—
“চলুন।”

মাহির নরম কন্ঠে বললো, “এই ড্রেস পড়ে পারবে না। চেঞ্জ করে এসো।”

সুপ্তি চুপচাপ উঠে চলে গেল চেঞ্জিং রুমে। কয়েক মিনিট পর ফিরে এলো সাদা একটা টি-শার্ট পড়ে । বাগানে এসে দেখে মাহির আগেই ছাদে চলে গেছে। সে এক দৌড়ে উঠে গেল উপরে।

ছাদের কিনারায় একজন মাহিরকে সেইফটি কিট লাগাচ্ছিল। সুপ্তির উপস্থিতি টের পেয়ে মাহির একবার তাকালো, চোখ মিলিয়ে আবার নিচে নামিয়ে নিলো।

সুপ্তি এগিয়ে গেলে মাহির নিজেই তার সেইফটি কিট লাগিয়ে দিল। নিঃশব্দে, খুব যত্নে।

তারপর নামা শুরু হলো। একটানা।

বিল্ডিংয়ের পাশে গভীর একটা পুকুর।
তাই রিস্ক নেই বললেই চলে।

মাহির : মানুষ আমাদের দেখে কাপল বলবে। সেইম টি-শার্ট।

সুপ্তি : চুপ থেকে নিজের কাজে মনোযোগ দিন।

মাহির আর কথা বললো না।
২ তলার দিকে নামতেই মাহির বলে উঠলো, ” সুপ্তি আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ হাতটা ধরো। ”

সুপ্তি হাত ধরতেই সেইফটি রশি খুলে ফেললো মাহির।
সুপ্তি অনেক কষ্টে মাহিরকে নিজের বরাবর আনলো।

মাহির সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে। সুপ্তিও আতঙ্কিত চোখে মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

এদিকে মাহির সুপ্তির সেইফটি রশিটা খুলছে।
সুপ্তি প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলো তখন আতঙ্কিত স্বরে মানা করে বললো, ” প্লিজ মাহির এটা…”

কথা শেষ করার আগেই মাহির ও সুপ্তি উভয়ই পানির দিকে পড়া শুরু করলো।
কিছু সেকেন্ডের মাঝে পানিতে পড়ে গেলো তারা।

সুপ্তি মাহিরকে জড়িয়ে ধরে থাকায় অনেক কষ্টে পার সাইডে আনলো মাহির সুপ্তিকে ।
সুপ্তি তখনও মাহিরের ঘাড়ে দুইহাত পেঁচিয়ে ঝুলছে।

মাহির আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ” মানুষ দেখলে কি বলবে! আমরা পার সাইডে আছি। সো তুমি দাঁড়াতে পারবে। ”

সুপ্তির কিছুক্ষণ লাগলো মাহিরের কথা বুঝতে।
এরপর পা রেখেও মাহিরকে জড়িয়ে ধরেই রইলো।

মাহির : আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে তোমার অনেক ভালো লাগে!

সুপ্তি : কেন করলেন এমন? আমার ভয় লাগে হাইটে।

মাহির এবার কিছুটা রেগে গেলো। সুপ্তি ছাড়িয়ে বললো, ” কেন ভয় লাগে? এই যে তুমি উপর থেকে পড়লে এতে কি তুমি মরে গেছো! বা হাত-পা ভেঙ্গেছে বা কোথাও ব্যথা পেয়েছো? ”

সুপ্তি ভয়ে কান্না শুরু করলো ।
মাহির সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” টাওয়াল নিয়ে এসো। ”

তানিশা টাওয়ালের জন্য চলে যেতেই মাহির সুপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” সরি। কান্না করো না প্লিজ। দেখো জন্ম থেকে হাইটের ভয়টা সবারই থাকে। তবে তোমার একটু বেশিই আছে। এভাবে তুমি ট্রমাট্রাইস্ট হয়ে যাবে তো! এরজন্য এমন করেছি। সরি। আর করবো না। ”

সুপ্তি : আমি কালকে রিইউনিয়ন পার্টিতে ঘাটাইল যাচ্ছি । ভেবেছিলাম আপনাকে পার্টিতে নিয়ে যাবো। কিন্তু এখন আর নিবো না।
( বাচ্চাদের মতো করে )

মাহির তানিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” এতক্ষণ লাগে টাওয়াল আনতে। তাড়াতাড়ি দেও। ”

তানিশা টাওয়াল দিলে মাহির সুপ্তিকে পেঁচিয়ে বললো, ” এখন এসব বাদ। আগে তুমি চেঞ্জ করে নেও। হেঁটে হেঁটে যাবা। আমি কোলে নিতে পারবো না। কেন পারবো না আশা করি তুমি বুঝেছো! ”

সুপ্তির কোনো হেলদোল নেই। তাই মাহির নরম স্বরে বললো, ” তুমি সম্পূর্ণ ভিজে গেছো সুপ্তি। খারাপ দেখাচ্ছে। প্লিজ সু…”

বাকি কথা আর বলতে হলো না মাহিরের । সুপ্তি হাঁটা শুরু করলো। পিছে পিছে মাহিরও। দুইজনেই চেঞ্জ করে নিলো। সুপ্তি বের হতেই মাহির তাকে তার সামনের একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো, ” কি যেন বলছিলে? ”

সুপ্তি : আমি তিন দিনের জন্য ঘাটাইল যাচ্ছি ।

মাহির : তিন…..দিন….! ( টেনে ) একদিনই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না সেখানে তিনদিন! ইম্পসিবল।

সুপ্তি : আমি আপনাকে নিয়ে যাবো না।

মাহির : বাবা আমাকে এমনিতেও যেতে দিবে না। সো তুমিও যাবে না।

সুপ্তি : এটা সম্ভবই না। আমি অনেক দিন হলো বাড়িতে যাই না। আমাকে যেতেই হবে।

মাহির : প্লিজ, ট্রাই টো আন্ডারস্ট্যান্ড।

সুপ্তি : আমি কালকে সকালে রওনা দিবো। আপনি গেলে বলতে পারেন। ( দাঁড়িয়ে )

মাহির : কিন্তু বাবা….

সুপ্তি : মিস সিক্রেটের সাথে যোগাযোগ করুন। বলেই চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করলো।

মাহির বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। রাত পেরিয়ে দিন হয়ে গেল। সুপ্তি ঘাটাইল চলে গেলো কিন্তু মাহির এখনও এটাই চিন্তা করছে মাহফুজ চৌধুরীকে মিস সিক্রেট রাজি করাতে পারবে কিনা!

#চলবে.,.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে