Dark Mystery পর্ব-১৭+১৮

0
3

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_17
#Sabrina_Summa

ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, তবে সময় মনে হয় মাহিরের জন্য থমকে রয়েছে । প্রতিটি মিনিট যেন ঘন্টা হয়ে দাঁড়িছে ।
মাহির তার গাড়ির ভেতরে বসে, ভার্সিটির মেইন গেটের ঠিক ভেতরের দিকে অপেক্ষা করছে । সময় তখন সকাল ৯ টা হবে । গাড়ির এয়ারকন্ডিশনের মৃদু বাতাসেও যেন তার হৃদয়ের উত্তেজনা কমছে না। কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে এতদিন পর একবার দেখার জন্য।

অবশেষে, মাহিরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৯টা ৪৫-এ কাঙ্ক্ষিত মানুষটি গেট পেরিয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো।
মাহির আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির দরজা ঠেলে নেমে এলো ।

সুপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়ে কোনো কিছু বলার আগেই তাকে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে নিল।
সমস্ত কোলাহল, চারপাশের ভিড়, কৌতূহলী চোখ কিছুই যেন তার গ্রাহ্য করার বিষয় না।
চারপাশে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল মাহিরের বডিগার্ডরা, দৃঢ় একটা বলয় তৈরি করে, যেন এই দুই প্রাণের মাঝখানে বাতাসও প্রবেশ করতে দিবে না তারা ।

সুপ্তি অবাক হয়ে একটু কেঁপে উঠলেও মুহূর্তের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললো, ” আরে মিয়া….”
কথা শেষ করতে না দিয়ে মাহির বললো, ” আমি তোমার কোনো মিয়া টিয়া নই। ”
মাহির এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে সুপ্তি মাহিরকে সরাতেই পারছে না।
সুপ্তি : তাহলে কি? প্লে বয় অর ক্যারেক্টারলেস!
মাহির : না জামাই। জামাই বলবে আমাকে।
সুপ্তি : ঠ্যাকা গো আমার ৷
( আবারো মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে )
সুপ্তি মাহিরকে যতই ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেষ্টা করে মাহির ততই আরো শক্ত করে সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে।
মাহির : হ্যাঁ ঠ্যাকাই।
সুপ্তি : আরে ছাড়ুন তো । মিডিয়াতে চলে যাবে। ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। ( রেগে )
মাহির সুপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো, ” আচ্ছা। এখন বলো কোথায় ছিলে এতদিন ? ”
সুপ্তি : বাসায়।
মাহির : তাহলে কল কেন ধরো নি? ফোন কেন বন্ধ ছিল?
সুপ্তি : সিম হারিয়ে গেছিলো।
মাহির : অন্য সিম দিয়ে কল করতে পারতে বা ভার্সিটিতে আসতে।
সুপ্তি : সিম খুঁজতে খুঁজতে দুইদিন চলে গেছে।
মাহির : ফাজলামো পাইছো! সিম খুঁজতে কেউ দুইদিন বাসায় বইসা থাকে?
সুপ্তি : কেউ না থাকলেও আমি থাকি।
মাহির : কেন খেলছো আমার সাথে এভাবে?
সুপ্তি : আমি কি করলাম?
মাহির : কিছু না। গাড়িতে বসো।
( গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে )
সুপ্তি : আমি ভার্সিটিতে যাবো।
মাহির : না। তুমি আমার সাথে যাবে৷ দুদিন আমাকে সময় দেও নি। আজকে সারাদিন সময় দিবে।
সুপ্তির খুব বিরক্ত লাগছে। কি নেশা জড়ানো কথাগুলো।
সুপ্তি : আই’ম ইক্ট্রেইমলি সরি। আমার ক্লাস আছে।
মাহির : এই দুইদিন ছিল না?
সুপ্তি : এই দুইদিন করি নি দেখেই তো নোট নিতে হবে।
মাহির কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা চলো ৷ আজকে তোমার সাথে আমিও ক্লাস করবো। ”
বলেই কোলে তুলে গাড়িতে বসালো। নিজেও বসলো।
” এই ছেলে আজকে একটু বেশিই করছে না?”( সুপ্তি মনে মনে )
সুপ্তি : প্লিজ। আমার ক্লাসে যাবেন না। আমার মান ইজ্জতের কথাটাও একটু ভাবুন।
মাহির সুপ্তির কথা আমলেই নিলো না।
এবকর সুপ্তি একটু রেগে বললো, ” যদি একটু আগেকার ঘটনাটা মিডিয়াতে যায়, আপনার খবর আছে তাহলে! ”
মাহির : আরে যাবে না। আমার বডিগার্ডরা ছিল তো।
সুপ্তি আর কথা বললো না। তাই মাহিরও বললো না।

ভার্সিটির ক্লাসে আজ যে স্যাররাই আসছে তারা মাহিরকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে । ভালো মন্দ জিজ্ঞেসও করছে ৷
সবাই আজ ক্লাস বাদ দিয়ে মাহিরকেই দেখছে। আর সুপ্তি! তার তো মনে হচ্ছে সে যদি অদৃশ্য হতে পারতো! যতই চাচ্ছে মানুষ থেকে দূরে থাকতে ততই মানুষ তাকে চিনে ফেলছে । ফলে তার একাকী জীবনও নষ্ট হচ্ছে।।

আজ শুক্রবার। সময় ১১ টা কি ১২ টা হবে।
মাহিরের জন্য একটা স্পেশাল দিনও বলা চলে। কারণ এদিন মাহির সুপ্তির ঘুরতে যাওয়ার দিন।
আজকের ঘুরতে যাওয়া নিয়ে মাহির অনেক এক্সসাইটেড।
তবে হঠাৎই সুপ্তি রেগে রেগে মাহিরকে কল করলো। মাহির কল রিসিভ করতেই বললো, ” ব্রেকিং নিউজ দেখছেন? ”
মাহির : না দেখি নি। ওয়েট, এখান দেখি।
সুপ্তি : আপনার আর দেখতে হবে না।
শোনেন, যে পর্যন্ত এই ব্রেকিং নিউজ সকল চ্যানেল থেকে না যাবে সে পর্যন্ত আমি বাসার বাহিরে এক পাও দিবো না। ”
মাহিরের আর বোঝার বাকি নেই ব্রেকিং নিউজটা কি!
মাহির : আজকে তোমার আমার সাথে ঘুরার কথা ছিল। প্লিজ এমন করো না।
সুপ্তি : আমি বলেছি মানে বলেছি ৷ আমি এক পাও দিবো না।
বলা শেষ করে রেগে কল কেটে দিলো।

মাহিরের নিউজটা ডিলিট করতে করতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। যদিও সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট এটাকে ১ ঘন্টায়ই সরাতে পারতো কিন্তু এতে মাহিরের সন্দেহ করার চান্স ছিল। তাই তো সে কোনো হেল্পই করলো না।
সুপ্তিকে নিয়ে ১ ঘন্টা ঘুরলো মাহির। সুপ্তি অবশ্য বের হতে চাই নি। তবে তার শর্ত পূরণ হওয়ায় বের হতে বাধ্য হয়েছে।

#চলবে.,.

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_18
#Sabrina_Summa

শনিবার।
মিস সিক্রেট অনেকদিন পর মন্ত্রীর বাড়িতে এসেছে কিছু কাজে। কাজ শেষ করে চলে যাবে তখনই আটকালো মাহির।
মাহির : একটু সাইডে আসো কথা আছে।
মিস সিক্রেট ভাবছে আবারও সেই ভুলটাই করবে কিনা! তবুও মাহিরের সাথে চলে গেলো।
মাহির : তুমি হইতো জানো বাংলাদেশে সবথেকে কুকর্মে বিখ্যাত কে?
মিস সিক্রেট :হ্যাঁ। রুদ্র। রুদ্র শেখ তাই তো!
মাহির : হ্যাঁ। তাহলে এটাও জানো ও দেশ থেকে পালিয়েছে। আর বিভিন্ন ফোর্স ওকে ধরতে চাচ্ছে!
মিস সিক্রেট : হ্যাঁ সবই জানি আমি। এত ভঙ্গিতা না করে সোজাসাপ্টা কথা বলো।
” হ্যাঁ, তুমি সবজান্তা সমসেরের বউ। ” ( মাহির মনে মনে )
মাহির : কিছুদিন আগে ও বলেছে তোমাকে বিয়ে করলে আটকে রাখা ১০০০ জন নারীকে ছেড়ে দিবে।
মিস সিক্রেট কিছুক্ষণ হেসে বললো, ” আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখা শুধুমাত্র একটা বিলাসিতা! ”
মাহির : একটা রিকোয়েস্ট করছি। প্লিজ ওকে তুমি বিয়ে করো।
মিস সিক্রেট : কিহ? বিয়ে! আর আমি! জীবনেও না।
মাহির : সিরিয়াসলি, তোমাকে বিয়ে করতে হবে না। শুধু নাটক করতে হবে।
মিস সিক্রেট : মানে তুমি আমার লাইফ নিয়ে খেলতে চাচ্ছো?
মাহির : হ্যাঁ। মানে তেমন কিছুই।
মিস সিক্রেট : সাহস কিভাবে হয়?
মাহির : তুমি তোমার লাইফ নিয়ে খেলো না?
মিস সিক্রেট : আমার অধিকার আছে । তবে তোমার নেই।
মাহির : ট্রাস্ট মি। আমি সুপ্তিকে সাক্ষী রেখে বলছি বিয়েটা হবে না। হয়তো তোমাকে বিয়ের কনে সাজতে হতে পারে তবে বিয়েটা হবে না।
মিস সিক্রেট : তুমি তো হাজারটা মেয়ের সাথে থাকো। বিশ্বাস করবো কিভাবে? আর তাছাড়াও ওই রুদ্রকে বের করতে আমার জাস্ট একটা দিন লাগবে। বড়জোড় দুইদিনই লাগবে ধরলাম। তাহলে আমি নাটকটা করবো কেন?
মাহির : তুমি খুব ভালো করে জানো বলেই আশা করছি মিস সিক্রেট। যে হাজারটা মেয়ে আর সুপ্তি আমার কাছে এক নই। আমি তোমার কাছেই প্রথম স্বীকার করছি আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আর তাছাড়াও একটু খেলি না রুদ্রর সাথে প্লিজ। আমি প্রমিস করছি ওই রুদ্র তোমাকে টাচও করতে পারবে না।
মিস সিক্রেট মাহিরের কথা শুনে পুরোই হ্যাং হয়ে গেছে। এতটা দ্ধিধায় অনেক দিন পর পড়লো সে।
” ভুল মানুষের কাছে তুমি ভুল কথা বলে ফেলেছো মাহির। ” ( মনে মনে )
মাহির : লিসেন, তুমি রুদ্রকে বের করতে পারলেও মেয়েগুলোকে বের করতে পারবে না। রুদ্রও কিন্তু কাঁচা খেলোয়াড় না। আশা করি সেটাও তুমি বুঝতে পারছো।
মিস সিক্রেট : ওকে। যা ইচ্ছা করো।
“একটু না হয় খেলিই রুদ্রর সাথে। ” ( মনে মনে ) “বাট একটা কানা কড়িও আমি দিবো না। মাইন্ড ইট। আর বিয়ের লেহেঙ্গা যদি আমার পছন্দ না হয় তো আমি বিয়ের আগের দিনই বিয়ে ক্যান্সেল করবো। ”
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
মাহির ভাবতে লাগলো, ” এই মেয়ে কী মজা করে গেল নাকি সিরিয়াসলি বলে গেল!”
মাহির : যাইহোক। বিয়ের কাজ শুরু করি। টাকা কারো না কারো কাছ থেকে ওশুল করেই নিবো। এত বড় ক্রিমিনাল ধরিয়ে দিবো বলে কথা।
মাহিরের ফোনে একটা মেসেজ আসলো মিস সিক্রেটের পক্ষ থেকে। মেসেজটা হলো –
” আমার যদি কিছু হয় মনে রেখো তুমি সুপ্তিকে হারাবে। খুব প্রস্তাবে। খুব বেশিই প্রস্তাবে। ”
মাহির মেসেজটা দেখে হেসে বললো, ” ডোন্ট ওয়ারি। আমি আর কোনো ক্ষতি করবো না তোমার৷ অন্তত সুপ্তির জন্য হলেও। ”
কিছু একটা টাইপ করেও সেন্ট করলো না মাহির।

পুরো দেশে ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ের কথা ।
অনেকেই খুশি হতে পারলো না। কারণ রুদ্র মিস সিক্রেটকে বিয়ে করলে শাস্তি থেকে বেঁচে যেতে পারে। ওয়ারঅল মিস সিক্রেট তো আর নিজের হাসবেন্ডের কিছু হতে দিবে না।
রুদ্রও ঠিক এটা ভেবেই মিস সিক্রেটকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।

মাহফুজ চৌধুরী রীতিমতো মিস সিক্রেটকে জিজ্ঞাসার উপর রেখেছে। মিস সিক্রেট এ বিয়েতে রাজি কিনা। এটা নিয়ে।
মিস সিক্রেট বার বার বলছে সে রাজি না থাকলে তবে কেউ কি তার বিয়ে দিতে পারতো?
এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মাহফুজ চৌধুরী চলে গেলো। সে চাই না এ বিয়ে হোক।

মাহিরই সব শপিং করলো। আর রুদ্রও প্রচুর শপিং করে পাঠিয়েছে।
শুক্রবার বিয়ে ধার্য করা হলো। তাদের বিয়েটা মাঝারি আয়োজনে হচ্ছে।
এগুলোতে মিস সিক্রেটের কোনো কিছুই যায় আসছে না। সে খাচ্ছে- দাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, কাজ করছে আর দিন গুনছে।।

#চলবে.,.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে