#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_15
#Sabrina_Summa
সোমবার।
দুপুর প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। আজ প্রকৃতিতে কেমন যেন শুনশান নীরবতা। রোদ আছে, বাতাস আছে শুধু মনে শান্তি নেই। সবার না শুধুমাত্র মাহিরের মনে।
মাহিরের নিত্যদিনের অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুপ্তিকে কল করা। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহুবার কল করেছে মাহির। তবে পরিচিত নাম্বারে অপরিচিত কন্ঠ “কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি তে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না!” একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত মাহির। তাই তো ফোনটা এক কোনে ফেলে দিলো।।
সন্ধ্যে সাতটা। মাহির বাসায় বসে কিছুটা ছটপট করছে। কারণ আজ সারাটা দিন তার সুপ্তির সাথে দেখা বা কথা কোনোটিই হয় নি ৷
তানিশা অনেকক্ষণ ধরে মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” মনে হচ্ছে তুমি সুপ্তির প্রেমে পড়ে গেছো। ” ( শান্ত কণ্ঠে )
মাহির মানতে নারাজ। তাই বিরক্তি নিয়ে বললো, ” অসম্ভব।”
তানিশা : তাহলে এত ছটপট কেন করছো?
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” কোথায়! ”
তানিশা : তাশরিফ। ভুলে যেও না আমি তোমাকে তোমার ১৮ বছর থেকে দেখছি। এখন তোমার বয়স ২৬ অর্থাৎ ৮ বছর ধরে আমি তোমার এসিস্ট্যান্ট। আর তাছাড়াও তোমার বয়স আমিও পার করেছি ওয়ারঅল তোমার থেকে বড় আমি।
মাহির : বাদ দেও তো ৷ একটু ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছে তাই একটু চিন্তা হচ্ছে।
তানিশা : ওকে ফাইন। মেনে নিলাম।
বলেই চলে গেলো।
” তানিশা তো ভুল কিছুই বলে নি। তার পছন্দ না কোনো মেয়ে তাকে পাত্তা দিবে না এই বিষয়টা। এরজন্যই তো সে সুপ্তির সাথে এমন করতো৷ কিন্তু আজ কেন তার এত চিন্তা হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে গেছে। যা তার দরকার ছিল। সত্যিই কি সে ভালোবেসে ফেলেছে! ”
মাহির নিজের ভাবনাকে ধমক দিয়ে বললো, ” ছিঃ মাহির। তুই কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারিস না। ”
” এখন এগুলো থেকে বের হওয়ার জন্য খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়। ”
তার ব্রেইন যা বললো সে তাই করলো। সাড়ে নয়টার মাঝে শুয়ে পড়লো। এতে হতভম্ব বাড়ির সবাই। যেই ছেলে দশটা এগারোটার আগে বাসায় ফিরে না সেই ছেলে আজ দশটার মধ্যে শুয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লো মাহির।
১২ টার ঘর পেরিয়ে ঘড়ির ছোট কাটা এখন ৩ টায় গিয়ে পৌঁছেছে। বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ কেমন যেন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাণীর শব্দ তো আছেই।
এমন সময় ঘুম ভেঙে যায় মাহিরের। আর ভালো লাগছে না তার। খুব চিন্তা হচ্ছে। তারমাঝে তার দুঃস্বপ্ন তার চিন্তাকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সে এক ক্লাস পানি খেল কিন্তু নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।
আর না পেরে কয়েকবার সুপ্তিকে কল করলো। এখনো বন্ধই আছে।
এরপর তানিশাকে কল করলো।
তানিশা কল রিসিভ করে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললো, ” আরে ভাই। এত রাতে জালাচ্ছিস কেন? ”
মাঝে মাঝেই তানিশা ফান করে মাহিরকে তুই বলে। সো এতে মাইন্ড করলো না মাহির। আর মাইন্ড করার পরিবেশেও নেই সে।
মাহির : তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসো।
তানিশা আর দেরি করলো না। কল কেটেই রুমে চলে এলো।
তানিশা : কি হয়েছে! কেউ অ্যাটাক ট্যাটাক করেছে নাকি?
মাহির : আরে না। আমার ভালো লাগতাছে না।
তানিশা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ৷ মাহিরের ভালো লাগছে না তাতে সে কি করবে? তার মধ্যে সে কত আতঙ্কিত হয়ে গেয়েছিল!
মাহির : লোক পাঠিয়ে সুপ্তিকে খুঁজে আনো। ( করুণ কন্ঠে )
তানিশা : পাগল হয়ে গেছো?
মাহির চুপ করে রইলো।
তানিশা : আমি এখন লোক পাঠালে স্যার আমাকে জুতা মেরে বাসা থেকে বের করে দিবে।
মাহির এখনও চুপ রইলো। তার ভালো লাগছে না কিছুই।
তানিশা : ভাই এখন ঘুমা। সকালে দেখা যাবে ৷
বলেই তানিশা চলে গেলো।
মাহির আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তার ঘুম আজ মরে গেছে। তাই পায়চারি করা শুরু করলো।
সকাল ৯ টা।
প্রতিদিনের মতোই আজও মাহফুজ চৌধুরী চিৎকার করে ডাকছে, ” রাগী, এই রাগী। ”
রাগিনী বেগম এসে বললো, ” কি হয়েছে ডাকছো কেন? আর আমার নাম রাগিনী। রাগী না। ”
মাহফুজ চৌধুরী : তো কি হয়েছে। আমি কি বউকে আদর করে ছোট নামে ডাকতে পারি না!
রাগিনী বেগম : মানুষ শুনলে মনে করবে আমি সত্যিই রাগী।
মাহফুজ চৌধুরী : যা সত্যি তাই তো মনে করবে।
রাগিনী বেগম : কিহ! আমি রাগী? কে বলেছে তোমাকে?
মাহফুজ চৌধুরী : তোমার বাবা মানে আমার শশুর।
রাগিনী বেগম : বাবা মারা গেছে কিন্তু তার কথা এখনও রয়ে গেছে।
মাহফুজ চৌধুরী : হুম। এখন বলো তোমার ছেলে কোথায়? ৯ টার সময় আমরা একসাথে খেতে বসি। জানে না সে! সবসময় ডেকে আনতে হয়৷
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
রাগিনী : ও পরে খেয়ে নিবে।
মাহফুজ চৌধুরী : পরে খাবে কেন? বিভিন্ন অজুহাতে ভার্সিটিতে যাবে না আজ! এমনিতে তো ৯ টার দিকেই বের হয়ে যায়।
তানিশা : না স্যার। আজকে যাবে না।
( ড্রাইনিং এ বসতে বসতে )
মাহফুজ চৌধুরী : তুমি এসেছো তাহলে তাশরিফ কোথায়?
তানিশা : স্যার, তাশরিফকে রুমে খাবার দিয়ে আসবো ৷
মাহফুজ চৌধুরী : কেন অসুস্থ নাকি?
তানিশা : অসুস্থ না তবে কেমন জানি মনমরা হয়ে আছে।
মাহফুজ চৌধুরী আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো ।
#চলবে.,.
#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_16
#Sabrina_Summa
সূর্য আজ তার প্রখরতা একটু বেশিই দেখাচ্ছে । তাই তো সময় ধারণা করাটা একটু কঠিনই হয়ে পড়েছে।
মধ্যাহ্নের খাবার খাওয়া সবারই শেষ সেই ২ টার দিকে । তবে একজন বাদে। সে হলো মাহির। মধ্যাহ্নের খাবার তো দূর, সকালের খাবারই খাওয়া হয় নি তার।
মাহফুজ চৌধুরী অবশ্য এসেছিল ছেলেকে দেখতে। তবে ছেলের আপদারে বিরক্ত সে।
মাহির বারবার একটা কথায় বলছিল, ” বাবা, একটা মেয়েকে খুঁজে এনে দেও না প্লিজ। জীবনে যা বলবে সব মেনে নিবো। ”
এ কথা শুনে মাহফুজ চৌধুরী বের হয়ে গেছে। যেতে যেতে রাগিনী বেগমকে বললো, ” তোমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। ”
রাগিনী বেগম মাহিরের রুমে ঢুকলেন।
মাহির ফ্লোরে বসে আছে। সেভাবেই বললো, ” আম্মু প্লিজ বাবাকে বলো না সুপ্তিকে খুঁজে এনে দিতে। আমি প্রমিস করছি কখনো অন্য মেয়ের দিকে তাকাবো না। ”
রাগিনী বেগম কিছুক্ষণ মাহিরকে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ” কেন খুঁজছিস মেয়েটাকে? ”
মাহির : আমি জানি না। আমি শুধু জানি, আই ওয়ান্ট হার। ( চিৎকার করে )
তানিশা : স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি কিছুই করতে পারবো না। তবে তোমার বডিগার্ডদের ওকে খুঁজতে লাগিয়েছি।
মাহির : মিস সিক্রেটকে কল দেও।
তানিশা : মিস সিক্রেট কল ধরবে না।
মাহির : ধরবে ৷ দরকার হয় আমি পায়ে ধরে ক্ষমা চাবো ৷ তাও প্লিজ সুপ্তিকে খুঁজে দিতে বলো। ওর বেশি সময় লাগবে না খুঁজতে।
তানিশা : আরে তুমি জানো না মিস সিক্রেট কোনো মিশনে গেলে কল রিসিভ করে না! মিস সিক্রেট মিশনে দেশের বাহিরে গেছে দুইদিনের জন্য।
মাহির : এই মেয়ের এখনই যাইতে হইলো।
ছেলের পাগলামি দেখে আর সহ্য করতে পারছে না রাগিনী বেগম । তাই নিজের স্বামীকে বুঝাতে চলে গেলো।
বিকেল ৫ টা। সময় যেন কাটছে না মাহিরের। কারো জন্য মনটা বড্ড কষ্ট পাচ্ছে। তাই তো সে ব্যক্তির খোঁজ নেওয়ার জন্য সুশমিতাকে কল করলো মাহির ৷
সুশমিতা কল রিসিভ করতেই মাহির উত্তেজিত কন্ঠে বললো, ” সুশমিতা, সুপ্তির কোনো খোঁজ জানো? ”
সুশমিতার চিনতে সমস্যা হলো না কলদাতা ব্যক্তিকে। তাই তো স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” না ভাইয়া। আমিও এই প্রশ্নটা করার জন্যই আপনাকে খুঁজছিলাম। ”
মাহির : বাসা কোথায় জানো?
সুশমিতা : না ভাইয়া। কখনো বলে না কতবার জিজ্ঞেস করেছি।
আচ্ছা ভাইয়া চিন্তা করবেন না। সুপ্তি মাঝে মাঝেই এমন উধাও হয়ে যায় । কোনো খোঁজ পেলে বলবেন।
মাহির : তুমি পেলেও বলো।
কল কেটে দিলো মাহির। আবারো ব্যর্থ হলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজতে।
” এই মেয়ে এত জেদি কেন? নিজের বাসার এড্রেস কেন দেয় না কাউকে? ”
বলা শেষ করে রাগে দুঃখে ফোনটাকে আছাড় মারলো মাহির। তবে ফোনের তেমন ক্ষতি হলো না।
তানিশা : আচ্ছা এত পাগলামির মানে টা কি? ( রেগে )
মাহির : আই ডোন্ট নো। আই ডোন্ট নো এনিথিং। আই অনলি নো দ্যাট আই নিড হার এট এনি কস্ট। গেট আউট ফম হেয়ার। আই কান্ট বেয়ার এনিওয়ান।
বলা শেষ করে পাশের টেবিলে থাকা পানির গ্লাস আছাড়রমেরে ভেঙে ফেললো ৷
তানিশা রুম থেকে চলে এলো। এখন সেখানে থাকা মানে নিজের সাথে সাথে মাহিরেরও ক্ষতি করা৷
সন্ধ্যার পর থেকে লোক লাগানো হলো সুপ্তিকে খোঁজার জন্য।
মাহফুজ চৌধুরী ছেলের পাগলামিতে বাধ্য হয়েছে লোক লাগাতে। তবে শর্ত দিয়েছে মাহিরকে খাবার খেতে হবে৷।
৭ টার দিকে মাহির খাবার খেল। তার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়লো। কারণ খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশানো ছিল। এটাও মাহফুজ চৌধুরী বাধ্য হয়ে করেছে।
সারারাত খোঁজার পরও সুপ্তির কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। এমন কি সুপ্তি কোথায় থাকে সেটা পর্যন্ত জানা গেল না। শুধু পাওয়া গেল সুপ্তির বাবা-মার নাম্বার। সেখানে কল করেও জানা গেল সুপ্তি সেখানে নেই।
তাহলে কোথায় গেল সুপ্তি? এই প্রশ্নটায় সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ।
মিস সিক্রেট দেশে থাকুক বা বিদেশে। ছোট থেকে বড় সকল খবর তার কাছে থাকবেই। তাই বেশি সময় লাগলো না তার জানতে যে, মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে।
মাহিরের ঘুম ভাঙলো সুশমিতার কলে।
গভীর ঘুম নিয়েই কলটা রিসিভ করলো।
সুশমিতা : ভাইয়া। সুপ্তি আমাকে কল করেছিল।
সাথে সাথে মস্তিষ্ক সচল হয়ে গেল মাহিরের। দ্রুত বেগে উঠে বসে বললো, ” কোথায় ও? কি হয়েছিল? ফোন কেন ধরে না? ”
সুশমিতা : এতকিছু তো বলে নি। শুধু বলেছে আজ ভার্সিটিতে আসবে।
মাহির : থ্যাংক ইউ সো মাচ ইনফরমেশনটা দেওয়ার জন্য। এখন রাখি।
বলেই কল কেটে দিলো। ধপাস করে আবারো শুয়ে পড়লো।
প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার। এমনিতেই সারাদিন টেনশনে ছিল। তারপর আবার কিছু খাই নি। তারমধ্যে ঘুমের ঔষধ আর এখন তাড়াহুড়ো করে উঠা।
তবে তার একটু হলেও মনে শান্তি লাগছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিলো পুনে আটটা।
#চলবে.,.