Contract_marriage★
part: 16
writer-Jubaida Sobti♥
নিলা: দাদী চলে গিয়েছে এবার ছাড়ুন।
আবির হাত সরিয়ে নিলো….
এভাবে কেটে যায় ৫ মাস..আবির আর নিলার মাঝে খুঁটিনাটি ঝগড়া খুঁটিনাটি ভালোবাসা..মাঝে মাঝে বন্ধুত্বপরায়ন আচরণ আবার এর মাঝে শত্রুর মতো আচরণ চলতে থাকে।
.সৌরভের সাথে নিলাকে কথা বলতে দেখলে আবিরের অসহ্য লাগে…
আবার তারার জন্য ভালোবাসা তারার সাথে প্রতিদিন দেখা করা প্রতিদিন ভালোবাসার কথা বলা।
..৬ মাস পূরণ হতে আর মাত্র ২৫ দিন বাকি।
পরের দিন…..সকালে নাস্তা করে আবির অফিসে যাচ্ছিলো….হঠাৎ আবিরকে সৌরভ ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে…
আবিরের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে হলো…খুব জরুরি কথা নাকি।
আবির : কি হয়েছে বল। বেশিক্ষন সময় নেই।
সৌরভ : (একটু হেসে) যা বলার জন্য তুকে ঢেকেছি শুনার জন্য তুই হয়তো মোটে ও প্রস্তুত নয়।
আবির : যা বলবি সরাসরি বল। এতো অভিনয় করার কি আছে। প্রস্তুত তো আমি সবসময় থাকি।
সৌরভ : তাহলে শোন… দেখ আমার আর নিলার মাঝে কিছু নেই। নিলাতো আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে তোর সাথে অভিনয় করার জন্য…তাই আমি এসব অভিনয় করছি।
আবির : (শুনে পুরাই অবাক।আবির নিলাকে ভালোবাসেনা ঠিক কিন্তু নিলাকে কখনো ঘৃণা করেনা।নিলাকেতো আবির তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে তাকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু নিলা আবির আর তারার ভালোবাসার মাঝে এভাবে কাটা বেধে দাঁড়াবে আবির তা এক্সপেক্ট করেনি।)
সৌরভ : কি বিশাস হচ্ছে না। তাহলে নিলা থেকেই জিজ্ঞেস কর।…নিলা চেয়েছিলো যে….আমার সাথে নিলাকে দেখলে তোর যাতে jealous ফিল হয়। এবং তুই নিলাকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিস। এবং তারাকে ভুলে যাস।
আবির আর এক মূহুর্তের জন্য ঐ জায়গায় দাঁড়ায়নি।
(খুব রাগ কাজ করছে এখন আবিরের শরীরে আবির কখনো ভাবেনি নিলা এতোটা নিচে নামবে)
সোজা গাড়িতে উঠে ফুল স্পিডে গাড়ী চালিয়ে নিলার কাছে যায়।
বাড়িতে এসে দেখে নিলা ড্রইং রুমে বসে দাদী ভাবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
আবির : নিলা একটু রুমে এসো তো…
ভাবী : (দুষ্টামির ভঙ্গীতে) হঠাৎ রুমে কি জন্যে আমরা একটু শুনি।?
নিলা আবিরের চেহেরা দেখে বুঝতে পারে আবির কিছু একটা বলতে চাচ্ছে নিলাকে।
নিলা: চলেন।
নিলাও আবিরের পিছু পিছু রুমে গেলো।
আবির নিলাকে রুমে ঢুকানোর পরে দরজা বন্ধ করে দেই।
(নিলা অনেক গাভ্রিয়ে যায়। আবির নিলাকে রাগান্বিত চোখে দেখে)
আবির : নিজেকে কি মনে করো হে…তুমি অনেক চালাক তাই না। আসলে তোমার মতো মেয়েরায় পারে এমন কাজ করতে।
নিলা: ( রেগে গিয়ে) শুনেন উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। কি করেছি সেটা তো বলেন।
আবির : (একটু রাগান্বিত হেসে) কি করেছো না কি করোনি সেটা বলো…
(আবির নিলার দিকে এগিয়ে এসে) তোমার ঐ কূমতলোব প্লানের কথা সৌরভ
আমাকে সব বলে দিয়েছে।কিন্তু নিলা যতো চেষ্টা করবে করো কোনো লাভ নেই। তোমাকেতো আমি আমার ভালো ফ্রেন্ড বানিয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি?
নিলা : (নিলা পুরাই অবাক সৌরভ এমন কেনো করেছে।) দেখেন আমি সৌরভকে নিষেধ করেছিলাম।
আবির: হে নিষেধ করেছিলে। কিন্তু তবু ও আমায় বলে দিয়েছে। কারন ও তোমার মতো মেয়েকে ভালো করে বুঝে নিয়েছে। Shameless girl.
নিলার আর কিছু বলার ছিলো না। চোখ দিয়ে শুধু নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
আবির : ওয়াও! নিলা আর কতো অভিনয় করবা। এসব চোখের পানি গুলো কিভাবে নিয়ে আসো এতো তাড়াতাড়ি।
নিলা চোখ মুচে আবিরের দিকে তাকালো।
আবির: (রেগে রেগে) তোমার ঐ পাঁচ লক্ষ টাকা আমি কালকের মধ্যেই দিয়ে দিবো। তারপর চিরদিনের জন্য তুমি আমার জীবন থেকে খালাস।
নিলা: (কেঁদে কেঁদে) আপনার পাঁচ লক্ষ টাকা আপনি আপনার কাছেই রাখুন। এসব টাকার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আমিতো দাদীকে প্রমিস করেছিলাম তাই আপনাকে টাকা ইনকাম করার জন্য ফোর্স করেছিলাম। আমার যদি টাকার এতোই লোভ থাকতো তাহলে আমি শুধু পাচঁ লক্ষ টাকায় চেতাম না। আর আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমি টাকা চেয়েছি আপনার হাতের ইনকাম করা টাকা।যদি টাকার লোভ থাকতো তাহলে আমি আপনার বাবার টাকা নিয়েই চলে যেতাম।
হে আমি মেনে নিচ্ছি আমার এটা অনেক বড় ভুল হয়েছে সৌরভের সাথে প্লানটা করে।
আসলে আমি এখন বুঝতে পারছি ভালোবাসা জোড় করে হয়না। ভালোবাসা মন থেকে হতে হয়। যেমন আপনার আর তারার ভালোবাসা। আমি এই বিয়েটা করেছি নিজের জন্য নয় যাতে আপনার আর আমার পরিবার অপমানিত না হয়।
আবির : আমার পরিবারের জন্য এতো দায়িত্ব কেনো তোমার কারন তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো নিলা তুমি কন্ট্রাক্ট এর রুলস ভঙ্গ করেছো
নিলা : ঠিকাছে আর কিছু ভঙ্গ করতে হবে না।
দোয়া করবো যাতে আপনাদের জীবনটা খুব রঙিন হোক।
আমি আজ রাতেই চলে যাবো আর কখনো আসবো না আপনার আর তারার মাঝে।
আপনি আমাকে এতোটুকু সাহায্য করেছেন আপনার এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি।
আবির : (অবাক হয়ে) কিন্তু এখনো তো ২৫ দিন বাকী আছে।
নিলা: ২৫দিন পরে গেলে যেমনটা হবে আজ গেলেও তেমন হবে।আবির একদিন না একদিনতো বলতেই হবে পরিবারকে।
আবির কিছু বলেনি নিলাকে… চুপ করে আছে। নিলা আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে তার বেগ গুছিয়ে নিচ্ছে।
আবির রুম থেকে বেরিয়ে তার বাবাকে বলতে যায় কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।
আবির চলে যাওয়ার পরে নিলা সৌরভকে ফোন দেই।
নিলা : এমনটা কেনো করলেন?
সৌরভ : নিলা আসলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই এসব করতে বাধ্য হয়েছি। নিলা দেখো আবিরতো তোমাকে ভালোবাসে না। আমি তোমাকে…….
নিলা ফোনটা কেটে দেই।আর কিছু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না নিলার।
তারার ফোন আসে।আবির তারার সাথে দেখা করতে গেলো।অনেক্ষন হলো দুজন চুপচাপ বসে আছে আবির ও কেমন মন মরা হয়ে বসে আছে।
তারা : কি হয়েছে আবির তুমি কি আমায় ইগনোর করছো….কখন থেকে বসে আছি কিছুই বলছো না।
আবির: আরে না তেমন কিছু না। এমনি ভালো লাগছে না তাই।
তারা : ভালো লাগছে না মানে! কেনো কি হয়েছে?
আবির: তারা জানো আজ রাতে নিলা চলে যাবে।
তারা : (খুশী হয়ে) ওয়াও আবির। ২৫দিন আগেই।কেমনি বের করছো আবির এতো তাড়াতাড়ি ঐ পেত্নীটাকে।
আবির : (একটু রেগে) তারা! এটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
নিলা ততোটা ও খারাপ না।আর ও মোটেও পেত্নীর মতো না।ও কিন্তু দেখতে তোমার চেয়ে সুন্দর।
তারা : ( চুপ করে আবিরের দিকে রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছে)
আবির : (আবির ও বুঝতে পারেনি সে তারাকে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। আবির তারার হাত ধরে.)… তারা! আসলে আমি ওটা বুঝায় নি। তুমি ও অনেক সুন্দর।তুমি সুন্দর না হলে ও আমার জন্য পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দরী।
তারা: (তারা বুঝতে পারে নিলার প্রতি আবিরের মায়া জমে গিয়েছে।সাভাবিক এটাতো হওয়ার ছিলো। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ৫ মাস একসাথে ছিলো তাও আবার বিয়ে করা জামাই বউ।নিলা আবার তারার চেয়েও সুন্দর।
কিন্তু তারা ও আবিরকে ভালোবাসে এখন তারাও আবিরকে ছাড়তে পারবে না।তারা বুঝেও না বুঝার মতো..)
আবির! আমি কিছু মনে করিনি। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
আবির: (অন্যমনা কি যেন ভাবছে)
তারা: (চিৎকার করে) আবির!
আবির: হে বলো!
তারা: আবির কি ভাবছো তুমি? আমি কথা বলে যাচ্ছি আর তুমি কি ভেবেই যাচ্ছো। বুঝেছি ঐ নিলা তোমার উপর যাদু করে দিয়েছে তাই না।
আবির: কি বলছো তারা পাগল নাকি তুমি। আচ্ছা বাদ দাও। বলো কি খাবা?
তারা : (কেঁদে কেঁদে) কিছু খাবো না আমি তুমিই খাও।
আবির : এই দেখো পাগলি আবার কাদে ও। আচ্ছা বাবা সরি! এই নাও কান ধরলাম খুশি?
তারা : (একটু হেসে) হে খুশি।
তারা বাসায় গেলো….
তারার বাবা তারাকে জিজ্ঞেস করে আবিরের পরিবারের সাথে কথা বলবে নাকি।
তারা : বাবা আমার তোমাকে কিছু বলার ছিলো আবিরের বেপারে।
বাবা : হে বল।
তারা তার বাবাকে আবিরের নিলার আর তারার কথা সব খুলে বললো।
বাবা: তারা তুইতো educated মেয়ে তুই এই ভুল কিভাবে করবি।তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন? আবির বিবাহিত।
তারা: বাবা আমিতো বলেছি ও বিয়ে করেছে ঠিক। কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসে। নিলাকে ও সাহায্য করেছে.বিয়ে করে.. নিলাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে তার পরিবারকে তাদের মাঝে মনমালিন্য হয়েছে বলে… বাবা আবির অনেক ভালো ছেলে।
বাবা : দেখ তারা কোনো বাবা চাইনা তার মেয়ে অসুখী হোক। আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।
আর আমি একজন বাবা হিসেবে বুঝতে পারছি একটা মেয়ের সংসার ভেংগে গেলে তারা পিতামাতার কতটা কষ্ট লাগে।
তারা তুই বল নিলা আবিরের সাথে সংসার করেছে তাও আবার ৫ মাস পুরোপুরি। এতোদিনের একটা সম্পর্ক ভেংগে দিয়ে ঐ স্থান তুই পূরন করতে পারবি। আবির যদি নিলার সাথে ৫ মাস সংসার করে তাকে ছেড়ে দিতে পারে তাহলে তুকে অন্য মেয়ের জন্য ছাড়তে পারবে না তার গ্যারেন্টি কি?
তারা : (কিছুক্ষন ভেবে) ঠিক বলেছো বাবা.. আজ আমি আবিরের সাথে দেখা করে ও বুঝতে পেরেছি আবিরের নিলার প্রতি অনেকটা মায়া বেরে গিয়েছে।আবির আগে এমন ছিলো..না.
বাবা: এটাতো হওয়ারি কথা।কারন তারা নিলা আর আবিরের বিয়ে হয়েছে তারাদুজন এখন এক বন্ধনে।তোর আর আবিরের ভালোবাসার শক্তির চেয়ে একজন সামীর জন্য তার স্ত্রীর ভালোবাসার শক্তি যথেষ্ট ।
তোর মা মারা যাওয়ার পর থেকে তুকে আমি তোর বাবা ও বন্ধুর মতো আচরণ করেছি কেনো জানিস তারা…. যাতে একজন মাকে তার মেয়ে যা যা বলতে পারে তা তুই আমাকে বলতে পারিস।তারা তোর জীবনের ডিসিশন নিতে আমি বাধা দিবো না। কিন্তু যদি আমার মতামত জানতে চাস তাহলে আমি বলবো তাদের সংসারটা ভেংগে দিস না। তোর এখনো বিয়ে হয়নি তুই হয়তো বর পাবি। আর আবিরতো ছেলে ও বউ পাওয়া বেপার না। কিন্তু ঐ মেয়েটা….
তারা রুমে গিয়ে অনেক্ষন কান্না করে।
আবিরকে ফোন করে।
তারা: আবির আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
আবির : পাগল হয়ে গিয়েছো?
তারা: আমি পাগল হয়নি। পাগল তুমি হয়েছো…তুমি কি মনে করেছো তোমার ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও একজন বিবাহিত ছেলেকে আমি বিয়ে করবো?
আবির: তারা তুমি এসব কি বলছো…তুমিতো সব জানো কি হয়েছে না হয়েছে।
তারা : হে আমি এটা ও জানি একটা রুমে দুজন বিবাহিত ছেলে মেয়ে একসাথে থাকলে কি কি হয়।তুমি কি বলতে চাচ্ছো তুমি নিলাকে ছুয়ে ও দেখো নি।আবির আমি বাচ্ছা না সব বুঝি।
আবির : কুকুরে কামড় দিয়েছে নাকি তোমাকে পাগলা কুকুরের মতো করছো কেনো….তোমাকে আমি কতোবার বলেছি যে… আমার আর নিলার মাঝে কিছু নেই।
কিছু হয় ও নি হবে ও না।
তারা : (কাদো কাদো ভাবে) তুমি আমাকে পাগলা কুকুরের সাথে তুলনা করেছো আবির….
আসলে আমারি ভুল হয়েছে…কেনো যে আমি ও তোমাকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম। এই কথাটা শোনার বাকি ছিলো…আমার।
আবির : তারা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।
তারা : আর কিছু বুঝার বাকি নেই আবির আমাকে ফোন দিবানা। আজ থেকে তোমার আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।
আবির ও রেগে ফোনটা কেটে দিলো।
আবির : মাথায় কিছু আসছে না। কি হচ্ছে আমার সাথে।
বন্ধু: এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।তুকে সহজভাবে বললেতো তুই বুঝবি না।
তারা তোর জন্য তোর পরিবারের জন্য মোটে ও পারফেক্ট না। যেটা পারফেক্ট সেটা ঘরেই আছে…
আবির দীর্ঘ শাঃস ফেলে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যায়।
সন্ধ্যা হলো আবির বাসায় আসে।
নিলা : ভালো করেছেন আজ তাড়াতাড়ি এসেছেন নাহলে আপনার সাথে দেখা না করেই চলে যেতে হতো।
ভালো থাকবেন চলে যাচ্ছি। আর…হে আপনার কাপড় গুলো ভাজ করে রেখেছি। এখন থেকে পুরো আলমারি আপনার। আর ঝগড়া করতে হবে না।
আবির: (মনমরা মুচকি হেসে) বাপরে ঐদিন মনে আছে তুমি আমার সাথে কি ঝগড়া… আমার একটা টি শার্ট তোমার ভাগে চলে এসেছিলো…
নিলা : হিহিহি(হেসে হেসে) হে মনে আছে…আর আমি আপনাকে ওটার শাস্তি ও দিয়েছিলাম।
আবির: (হেসে হেসে) ঐদিন আমার খাটে শুয়ার পালা ছিলো… কিন্তু আমার সোফায় শুতে হয়েছিলো।
নিলা: আপনার পরিবারকে তারার কথা বলেছেন?
আবির: না!
নিলা : কবে বলবেন? আমিতো চলে যাচ্ছি এখন…
আবির : এখন মানে! তুমিতো রাতে যাবা বলেছিলে।
নিলা: রাত হতে আর কতোক্ষন?
আবির: নিলা!
নিলা: হে বলেন।
আবির: (নরম গলায়) নিলা! তুমি যদি চাও বাকি ২৫দিন গুলো শেষ করে যেতে পারো।
নিলা: কি দরকার চলে যাওয়াই ভালো।
আবির: (রেগে গিয়ে) শুনো আমাদের মাঝে কন্ট্রাক্ট হয়েছে ৬ মাস পরেই তুমি যেতে পারবা। আর আমি আমার পরিবারকে এখন বলতে পারবো না।
নিলা: ঠিকাছে তাহলে আমিই বলছি।
নিলা বলতে যাচ্ছিলো আবির নিলাকে হাত ধরে টেনে ধরে ফেলে।
আবির : তাহলে কন্ট্রাক্ট করেছিলে কেন?…
নিলা : পুরো জীবনের জন্য করিনি ৬ মাসের জন্য করেছিলাম।
আবির : নিলা! তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
নিলা : (অবাক হয়ে) কেন কি হয়েছে?
আবির : (কেঁদে কেঁদে) ও আমাকে ভুল বুঝছে। মনে করছে আমার আর তোমার মাঝে গভীর সম্পর্ক।
নিলা: আমাকে ফোন দিন আমি বুঝিয়ে বলছি।
আবির : না নিলা! থাক যে যেতে চাই তাকে চলে যেতে দেওয়া ভালো…
আমার প্রতি অর বিশাস নেই তাহলে ওকে আটকিয়ে কি লাভ।
আসলে দোষ আমার আমি ওকে ধোকা দিয়েছি আমি বলেছিলাম আমি অর জন্য এক বছর অপেক্ষা করবো…কিন্তু আমিতো কথা রাখিনি।বিয়ে করে ফেলেছি। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে এমন সন্দেহ হওয়াটা সাভাবিক। অর চলে যাওয়াটা ও ঠিক।
নিলা: আমার জন্য হয়েছে না আবির এসব।আমি যদি আপনাকে বিয়ে করতে না বলতাম তাহলে আজ এতোকিছু হতো না।
আবির : তোমার উপর নিওনা দোষ।তোমার উপর ও আমি কতো অবিচার করেছি।
এভাবে কি কোনো বিয়ে হয়। কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ নাকি…. একটা বাচ্ছা ও হাসবে আমাদের এই বিয়ের কথা শুনলে। তুমি বুঝবে না নিলা এসব তুমিতো কখনো কাউকে ভালোবাসোনি।
নিলা : (অনেক কষ্ট চেপে রেখে) ঠিক বলেছেন আমিতো কাউকে ভালোবাসিনি কিভাবে বুঝবো এসব..
.বাবা এসে গেছে নিশ্চয় আমার চলে যাওয়ার ও সময় হয়ে গেছে বেশী রাত হয়ে গেলে আবার যেতে সমস্যা হয়ে যাবে।
নিলা রুম থেকে চলে যাচ্ছিলো..
আবির : নিলা!
নিলা : হুম…
আবির : নিলা… তুমি এভাবে চলে গেলে মামা মামি কি বলবে…. তাদের কি জবাব দিবে?… একটা কাজ করো বাকি জীবনটা এইখানেই এভাবে সোফা আর খাট শেয়ার করে থেকে যাও। তোমার মামা মামি ও আর বুঝতে পারবে না। আমার পরিবার ও।
আবিরের চেহেরায় তখন কেমন জানি একটা মায়া কাজ করছে নিলার ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আবিরকে ঝরিয়ে ধরে কাঁদতে। কিন্তু আবির যদি সোফা আর খাট শেয়ার করে থাকার কথা না বলে একবার এটা বলতো নিলা তুমি চিরদিনের জন্য আমার বউ হয়ে আমার সাথে থেকে যাও তাহলে নিলা এক মুহুর্তের জন্য ও ভাবতো না।)
নিলা : মামা মামীকে আমি বুঝিয়ে দিবো।ধন্যবাদ ওটা বলার জন্য কিন্তু আমার আপনার সাহায্য আর লাগবেনা।
আবিরের চেহেরায় নিলা বুঝতে পারছে আবির নিলাকে অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু আবির বলছে না।
আবির : রেগে গিয়ে.. দাঁড়াও নিলা কন্ট্রাক্ট যখন সাইন করেছো….তাহলে সেটা পুরণ করেই যাবা।
নিলা : এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না।
এই বলে নিলা চলে যাচ্ছে।
চলবে…
আবির হাত সরিয়ে নিলো….
এভাবে কেটে যায় ৫ মাস..আবির আর নিলার মাঝে খুঁটিনাটি ঝগড়া খুঁটিনাটি ভালোবাসা..মাঝে মাঝে বন্ধুত্বপরায়ন আচরণ আবার এর মাঝে শত্রুর মতো আচরণ চলতে থাকে।
.সৌরভের সাথে নিলাকে কথা বলতে দেখলে আবিরের অসহ্য লাগে…
আবার তারার জন্য ভালোবাসা তারার সাথে প্রতিদিন দেখা করা প্রতিদিন ভালোবাসার কথা বলা।
..৬ মাস পূরণ হতে আর মাত্র ২৫ দিন বাকি।
পরের দিন…..সকালে নাস্তা করে আবির অফিসে যাচ্ছিলো….হঠাৎ আবিরকে সৌরভ ফোন দিয়ে দেখা করতে বলে…
আবিরের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে হলো…খুব জরুরি কথা নাকি।
আবির : কি হয়েছে বল। বেশিক্ষন সময় নেই।
সৌরভ : (একটু হেসে) যা বলার জন্য তুকে ঢেকেছি শুনার জন্য তুই হয়তো মোটে ও প্রস্তুত নয়।
আবির : যা বলবি সরাসরি বল। এতো অভিনয় করার কি আছে। প্রস্তুত তো আমি সবসময় থাকি।
সৌরভ : তাহলে শোন… দেখ আমার আর নিলার মাঝে কিছু নেই। নিলাতো আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে তোর সাথে অভিনয় করার জন্য…তাই আমি এসব অভিনয় করছি।
আবির : (শুনে পুরাই অবাক।আবির নিলাকে ভালোবাসেনা ঠিক কিন্তু নিলাকে কখনো ঘৃণা করেনা।নিলাকেতো আবির তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছে তাকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু নিলা আবির আর তারার ভালোবাসার মাঝে এভাবে কাটা বেধে দাঁড়াবে আবির তা এক্সপেক্ট করেনি।)
সৌরভ : কি বিশাস হচ্ছে না। তাহলে নিলা থেকেই জিজ্ঞেস কর।…নিলা চেয়েছিলো যে….আমার সাথে নিলাকে দেখলে তোর যাতে jealous ফিল হয়। এবং তুই নিলাকে চিরদিনের জন্য আপন করে নিস। এবং তারাকে ভুলে যাস।
আবির আর এক মূহুর্তের জন্য ঐ জায়গায় দাঁড়ায়নি।
(খুব রাগ কাজ করছে এখন আবিরের শরীরে আবির কখনো ভাবেনি নিলা এতোটা নিচে নামবে)
সোজা গাড়িতে উঠে ফুল স্পিডে গাড়ী চালিয়ে নিলার কাছে যায়।
বাড়িতে এসে দেখে নিলা ড্রইং রুমে বসে দাদী ভাবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
আবির : নিলা একটু রুমে এসো তো…
ভাবী : (দুষ্টামির ভঙ্গীতে) হঠাৎ রুমে কি জন্যে আমরা একটু শুনি।?
নিলা আবিরের চেহেরা দেখে বুঝতে পারে আবির কিছু একটা বলতে চাচ্ছে নিলাকে।
নিলা: চলেন।
নিলাও আবিরের পিছু পিছু রুমে গেলো।
আবির নিলাকে রুমে ঢুকানোর পরে দরজা বন্ধ করে দেই।
(নিলা অনেক গাভ্রিয়ে যায়। আবির নিলাকে রাগান্বিত চোখে দেখে)
আবির : নিজেকে কি মনে করো হে…তুমি অনেক চালাক তাই না। আসলে তোমার মতো মেয়েরায় পারে এমন কাজ করতে।
নিলা: ( রেগে গিয়ে) শুনেন উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। কি করেছি সেটা তো বলেন।
আবির : (একটু রাগান্বিত হেসে) কি করেছো না কি করোনি সেটা বলো…
(আবির নিলার দিকে এগিয়ে এসে) তোমার ঐ কূমতলোব প্লানের কথা সৌরভ
আমাকে সব বলে দিয়েছে।কিন্তু নিলা যতো চেষ্টা করবে করো কোনো লাভ নেই। তোমাকেতো আমি আমার ভালো ফ্রেন্ড বানিয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি?
নিলা : (নিলা পুরাই অবাক সৌরভ এমন কেনো করেছে।) দেখেন আমি সৌরভকে নিষেধ করেছিলাম।
আবির: হে নিষেধ করেছিলে। কিন্তু তবু ও আমায় বলে দিয়েছে। কারন ও তোমার মতো মেয়েকে ভালো করে বুঝে নিয়েছে। Shameless girl.
নিলার আর কিছু বলার ছিলো না। চোখ দিয়ে শুধু নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
আবির : ওয়াও! নিলা আর কতো অভিনয় করবা। এসব চোখের পানি গুলো কিভাবে নিয়ে আসো এতো তাড়াতাড়ি।
নিলা চোখ মুচে আবিরের দিকে তাকালো।
আবির: (রেগে রেগে) তোমার ঐ পাঁচ লক্ষ টাকা আমি কালকের মধ্যেই দিয়ে দিবো। তারপর চিরদিনের জন্য তুমি আমার জীবন থেকে খালাস।
নিলা: (কেঁদে কেঁদে) আপনার পাঁচ লক্ষ টাকা আপনি আপনার কাছেই রাখুন। এসব টাকার প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। আমিতো দাদীকে প্রমিস করেছিলাম তাই আপনাকে টাকা ইনকাম করার জন্য ফোর্স করেছিলাম। আমার যদি টাকার এতোই লোভ থাকতো তাহলে আমি শুধু পাচঁ লক্ষ টাকায় চেতাম না। আর আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমি টাকা চেয়েছি আপনার হাতের ইনকাম করা টাকা।যদি টাকার লোভ থাকতো তাহলে আমি আপনার বাবার টাকা নিয়েই চলে যেতাম।
হে আমি মেনে নিচ্ছি আমার এটা অনেক বড় ভুল হয়েছে সৌরভের সাথে প্লানটা করে।
আসলে আমি এখন বুঝতে পারছি ভালোবাসা জোড় করে হয়না। ভালোবাসা মন থেকে হতে হয়। যেমন আপনার আর তারার ভালোবাসা। আমি এই বিয়েটা করেছি নিজের জন্য নয় যাতে আপনার আর আমার পরিবার অপমানিত না হয়।
আবির : আমার পরিবারের জন্য এতো দায়িত্ব কেনো তোমার কারন তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো নিলা তুমি কন্ট্রাক্ট এর রুলস ভঙ্গ করেছো
নিলা : ঠিকাছে আর কিছু ভঙ্গ করতে হবে না।
দোয়া করবো যাতে আপনাদের জীবনটা খুব রঙিন হোক।
আমি আজ রাতেই চলে যাবো আর কখনো আসবো না আপনার আর তারার মাঝে।
আপনি আমাকে এতোটুকু সাহায্য করেছেন আপনার এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না আমি।
আবির : (অবাক হয়ে) কিন্তু এখনো তো ২৫ দিন বাকী আছে।
নিলা: ২৫দিন পরে গেলে যেমনটা হবে আজ গেলেও তেমন হবে।আবির একদিন না একদিনতো বলতেই হবে পরিবারকে।
আবির কিছু বলেনি নিলাকে… চুপ করে আছে। নিলা আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে তার বেগ গুছিয়ে নিচ্ছে।
আবির রুম থেকে বেরিয়ে তার বাবাকে বলতে যায় কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।
আবির চলে যাওয়ার পরে নিলা সৌরভকে ফোন দেই।
নিলা : এমনটা কেনো করলেন?
সৌরভ : নিলা আসলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই এসব করতে বাধ্য হয়েছি। নিলা দেখো আবিরতো তোমাকে ভালোবাসে না। আমি তোমাকে…….
নিলা ফোনটা কেটে দেই।আর কিছু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না নিলার।
তারার ফোন আসে।আবির তারার সাথে দেখা করতে গেলো।অনেক্ষন হলো দুজন চুপচাপ বসে আছে আবির ও কেমন মন মরা হয়ে বসে আছে।
তারা : কি হয়েছে আবির তুমি কি আমায় ইগনোর করছো….কখন থেকে বসে আছি কিছুই বলছো না।
আবির: আরে না তেমন কিছু না। এমনি ভালো লাগছে না তাই।
তারা : ভালো লাগছে না মানে! কেনো কি হয়েছে?
আবির: তারা জানো আজ রাতে নিলা চলে যাবে।
তারা : (খুশী হয়ে) ওয়াও আবির। ২৫দিন আগেই।কেমনি বের করছো আবির এতো তাড়াতাড়ি ঐ পেত্নীটাকে।
আবির : (একটু রেগে) তারা! এটা ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
নিলা ততোটা ও খারাপ না।আর ও মোটেও পেত্নীর মতো না।ও কিন্তু দেখতে তোমার চেয়ে সুন্দর।
তারা : ( চুপ করে আবিরের দিকে রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছে)
আবির : (আবির ও বুঝতে পারেনি সে তারাকে কি বলতে কি বলে ফেলেছে। আবির তারার হাত ধরে.)… তারা! আসলে আমি ওটা বুঝায় নি। তুমি ও অনেক সুন্দর।তুমি সুন্দর না হলে ও আমার জন্য পৃথীবির সবচেয়ে সুন্দরী।
তারা: (তারা বুঝতে পারে নিলার প্রতি আবিরের মায়া জমে গিয়েছে।সাভাবিক এটাতো হওয়ার ছিলো। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ৫ মাস একসাথে ছিলো তাও আবার বিয়ে করা জামাই বউ।নিলা আবার তারার চেয়েও সুন্দর।
কিন্তু তারা ও আবিরকে ভালোবাসে এখন তারাও আবিরকে ছাড়তে পারবে না।তারা বুঝেও না বুঝার মতো..)
আবির! আমি কিছু মনে করিনি। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
আবির: (অন্যমনা কি যেন ভাবছে)
তারা: (চিৎকার করে) আবির!
আবির: হে বলো!
তারা: আবির কি ভাবছো তুমি? আমি কথা বলে যাচ্ছি আর তুমি কি ভেবেই যাচ্ছো। বুঝেছি ঐ নিলা তোমার উপর যাদু করে দিয়েছে তাই না।
আবির: কি বলছো তারা পাগল নাকি তুমি। আচ্ছা বাদ দাও। বলো কি খাবা?
তারা : (কেঁদে কেঁদে) কিছু খাবো না আমি তুমিই খাও।
আবির : এই দেখো পাগলি আবার কাদে ও। আচ্ছা বাবা সরি! এই নাও কান ধরলাম খুশি?
তারা : (একটু হেসে) হে খুশি।
তারা বাসায় গেলো….
তারার বাবা তারাকে জিজ্ঞেস করে আবিরের পরিবারের সাথে কথা বলবে নাকি।
তারা : বাবা আমার তোমাকে কিছু বলার ছিলো আবিরের বেপারে।
বাবা : হে বল।
তারা তার বাবাকে আবিরের নিলার আর তারার কথা সব খুলে বললো।
বাবা: তারা তুইতো educated মেয়ে তুই এই ভুল কিভাবে করবি।তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন? আবির বিবাহিত।
তারা: বাবা আমিতো বলেছি ও বিয়ে করেছে ঠিক। কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসে। নিলাকে ও সাহায্য করেছে.বিয়ে করে.. নিলাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে তার পরিবারকে তাদের মাঝে মনমালিন্য হয়েছে বলে… বাবা আবির অনেক ভালো ছেলে।
বাবা : দেখ তারা কোনো বাবা চাইনা তার মেয়ে অসুখী হোক। আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।
আর আমি একজন বাবা হিসেবে বুঝতে পারছি একটা মেয়ের সংসার ভেংগে গেলে তারা পিতামাতার কতটা কষ্ট লাগে।
তারা তুই বল নিলা আবিরের সাথে সংসার করেছে তাও আবার ৫ মাস পুরোপুরি। এতোদিনের একটা সম্পর্ক ভেংগে দিয়ে ঐ স্থান তুই পূরন করতে পারবি। আবির যদি নিলার সাথে ৫ মাস সংসার করে তাকে ছেড়ে দিতে পারে তাহলে তুকে অন্য মেয়ের জন্য ছাড়তে পারবে না তার গ্যারেন্টি কি?
তারা : (কিছুক্ষন ভেবে) ঠিক বলেছো বাবা.. আজ আমি আবিরের সাথে দেখা করে ও বুঝতে পেরেছি আবিরের নিলার প্রতি অনেকটা মায়া বেরে গিয়েছে।আবির আগে এমন ছিলো..না.
বাবা: এটাতো হওয়ারি কথা।কারন তারা নিলা আর আবিরের বিয়ে হয়েছে তারাদুজন এখন এক বন্ধনে।তোর আর আবিরের ভালোবাসার শক্তির চেয়ে একজন সামীর জন্য তার স্ত্রীর ভালোবাসার শক্তি যথেষ্ট ।
তোর মা মারা যাওয়ার পর থেকে তুকে আমি তোর বাবা ও বন্ধুর মতো আচরণ করেছি কেনো জানিস তারা…. যাতে একজন মাকে তার মেয়ে যা যা বলতে পারে তা তুই আমাকে বলতে পারিস।তারা তোর জীবনের ডিসিশন নিতে আমি বাধা দিবো না। কিন্তু যদি আমার মতামত জানতে চাস তাহলে আমি বলবো তাদের সংসারটা ভেংগে দিস না। তোর এখনো বিয়ে হয়নি তুই হয়তো বর পাবি। আর আবিরতো ছেলে ও বউ পাওয়া বেপার না। কিন্তু ঐ মেয়েটা….
তারা রুমে গিয়ে অনেক্ষন কান্না করে।
আবিরকে ফোন করে।
তারা: আবির আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
আবির : পাগল হয়ে গিয়েছো?
তারা: আমি পাগল হয়নি। পাগল তুমি হয়েছো…তুমি কি মনে করেছো তোমার ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও একজন বিবাহিত ছেলেকে আমি বিয়ে করবো?
আবির: তারা তুমি এসব কি বলছো…তুমিতো সব জানো কি হয়েছে না হয়েছে।
তারা : হে আমি এটা ও জানি একটা রুমে দুজন বিবাহিত ছেলে মেয়ে একসাথে থাকলে কি কি হয়।তুমি কি বলতে চাচ্ছো তুমি নিলাকে ছুয়ে ও দেখো নি।আবির আমি বাচ্ছা না সব বুঝি।
আবির : কুকুরে কামড় দিয়েছে নাকি তোমাকে পাগলা কুকুরের মতো করছো কেনো….তোমাকে আমি কতোবার বলেছি যে… আমার আর নিলার মাঝে কিছু নেই।
কিছু হয় ও নি হবে ও না।
তারা : (কাদো কাদো ভাবে) তুমি আমাকে পাগলা কুকুরের সাথে তুলনা করেছো আবির….
আসলে আমারি ভুল হয়েছে…কেনো যে আমি ও তোমাকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম। এই কথাটা শোনার বাকি ছিলো…আমার।
আবির : তারা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।
তারা : আর কিছু বুঝার বাকি নেই আবির আমাকে ফোন দিবানা। আজ থেকে তোমার আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।
আবির ও রেগে ফোনটা কেটে দিলো।
আবির : মাথায় কিছু আসছে না। কি হচ্ছে আমার সাথে।
বন্ধু: এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।তুকে সহজভাবে বললেতো তুই বুঝবি না।
তারা তোর জন্য তোর পরিবারের জন্য মোটে ও পারফেক্ট না। যেটা পারফেক্ট সেটা ঘরেই আছে…
আবির দীর্ঘ শাঃস ফেলে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যায়।
সন্ধ্যা হলো আবির বাসায় আসে।
নিলা : ভালো করেছেন আজ তাড়াতাড়ি এসেছেন নাহলে আপনার সাথে দেখা না করেই চলে যেতে হতো।
ভালো থাকবেন চলে যাচ্ছি। আর…হে আপনার কাপড় গুলো ভাজ করে রেখেছি। এখন থেকে পুরো আলমারি আপনার। আর ঝগড়া করতে হবে না।
আবির: (মনমরা মুচকি হেসে) বাপরে ঐদিন মনে আছে তুমি আমার সাথে কি ঝগড়া… আমার একটা টি শার্ট তোমার ভাগে চলে এসেছিলো…
নিলা : হিহিহি(হেসে হেসে) হে মনে আছে…আর আমি আপনাকে ওটার শাস্তি ও দিয়েছিলাম।
আবির: (হেসে হেসে) ঐদিন আমার খাটে শুয়ার পালা ছিলো… কিন্তু আমার সোফায় শুতে হয়েছিলো।
নিলা: আপনার পরিবারকে তারার কথা বলেছেন?
আবির: না!
নিলা : কবে বলবেন? আমিতো চলে যাচ্ছি এখন…
আবির : এখন মানে! তুমিতো রাতে যাবা বলেছিলে।
নিলা: রাত হতে আর কতোক্ষন?
আবির: নিলা!
নিলা: হে বলেন।
আবির: (নরম গলায়) নিলা! তুমি যদি চাও বাকি ২৫দিন গুলো শেষ করে যেতে পারো।
নিলা: কি দরকার চলে যাওয়াই ভালো।
আবির: (রেগে গিয়ে) শুনো আমাদের মাঝে কন্ট্রাক্ট হয়েছে ৬ মাস পরেই তুমি যেতে পারবা। আর আমি আমার পরিবারকে এখন বলতে পারবো না।
নিলা: ঠিকাছে তাহলে আমিই বলছি।
নিলা বলতে যাচ্ছিলো আবির নিলাকে হাত ধরে টেনে ধরে ফেলে।
আবির : তাহলে কন্ট্রাক্ট করেছিলে কেন?…
নিলা : পুরো জীবনের জন্য করিনি ৬ মাসের জন্য করেছিলাম।
আবির : নিলা! তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
নিলা : (অবাক হয়ে) কেন কি হয়েছে?
আবির : (কেঁদে কেঁদে) ও আমাকে ভুল বুঝছে। মনে করছে আমার আর তোমার মাঝে গভীর সম্পর্ক।
নিলা: আমাকে ফোন দিন আমি বুঝিয়ে বলছি।
আবির : না নিলা! থাক যে যেতে চাই তাকে চলে যেতে দেওয়া ভালো…
আমার প্রতি অর বিশাস নেই তাহলে ওকে আটকিয়ে কি লাভ।
আসলে দোষ আমার আমি ওকে ধোকা দিয়েছি আমি বলেছিলাম আমি অর জন্য এক বছর অপেক্ষা করবো…কিন্তু আমিতো কথা রাখিনি।বিয়ে করে ফেলেছি। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে এমন সন্দেহ হওয়াটা সাভাবিক। অর চলে যাওয়াটা ও ঠিক।
নিলা: আমার জন্য হয়েছে না আবির এসব।আমি যদি আপনাকে বিয়ে করতে না বলতাম তাহলে আজ এতোকিছু হতো না।
আবির : তোমার উপর নিওনা দোষ।তোমার উপর ও আমি কতো অবিচার করেছি।
এভাবে কি কোনো বিয়ে হয়। কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ নাকি…. একটা বাচ্ছা ও হাসবে আমাদের এই বিয়ের কথা শুনলে। তুমি বুঝবে না নিলা এসব তুমিতো কখনো কাউকে ভালোবাসোনি।
নিলা : (অনেক কষ্ট চেপে রেখে) ঠিক বলেছেন আমিতো কাউকে ভালোবাসিনি কিভাবে বুঝবো এসব..
.বাবা এসে গেছে নিশ্চয় আমার চলে যাওয়ার ও সময় হয়ে গেছে বেশী রাত হয়ে গেলে আবার যেতে সমস্যা হয়ে যাবে।
নিলা রুম থেকে চলে যাচ্ছিলো..
আবির : নিলা!
নিলা : হুম…
আবির : নিলা… তুমি এভাবে চলে গেলে মামা মামি কি বলবে…. তাদের কি জবাব দিবে?… একটা কাজ করো বাকি জীবনটা এইখানেই এভাবে সোফা আর খাট শেয়ার করে থেকে যাও। তোমার মামা মামি ও আর বুঝতে পারবে না। আমার পরিবার ও।
আবিরের চেহেরায় তখন কেমন জানি একটা মায়া কাজ করছে নিলার ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে আবিরকে ঝরিয়ে ধরে কাঁদতে। কিন্তু আবির যদি সোফা আর খাট শেয়ার করে থাকার কথা না বলে একবার এটা বলতো নিলা তুমি চিরদিনের জন্য আমার বউ হয়ে আমার সাথে থেকে যাও তাহলে নিলা এক মুহুর্তের জন্য ও ভাবতো না।)
নিলা : মামা মামীকে আমি বুঝিয়ে দিবো।ধন্যবাদ ওটা বলার জন্য কিন্তু আমার আপনার সাহায্য আর লাগবেনা।
আবিরের চেহেরায় নিলা বুঝতে পারছে আবির নিলাকে অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু আবির বলছে না।
আবির : রেগে গিয়ে.. দাঁড়াও নিলা কন্ট্রাক্ট যখন সাইন করেছো….তাহলে সেটা পুরণ করেই যাবা।
নিলা : এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না।
এই বলে নিলা চলে যাচ্ছে।
চলবে…