coffee & vanilla Part-05

0
2512

#coffee & vanilla
#part_5
#Arohi_Ayat


রুমের দরজা খুলতেই দেখলাম টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আলমারি থেকে কাপড় বের করছে ফারহান৷ আর শরিরে কোন কাপড় নেই শুধু একটা টাওয়েল৷ আমি হঠাৎ দরজা খুলতে ফারহানও আমার দিকে তাকালো আর আমি ফারহানের দিকে৷ বড় বড় চোখ করে কিছু না বুঝে কতক্ষন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম৷ তারপর কিছু না বলে তারাতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি নিজেও কেমন একটা মানুষের রুমে যে নক করে ঢুকতে হয় সেটা কি ভুলে গিয়েছিলাম? ফারহান এসে দরজা খুলে বলল
– কি হয়েছে?
আমি ঘুরতে দেখলাম ফারহান এখনো সেইভাবেই আছে৷ আমি বললাম
– আগে যান জামা কাপর পরেন তারপর কথা বলছি! আর সরি নক না করে ঢুকে গিয়েছিলাম!!
ফারহান বলল
– ডোন্ট ওয়ারি! আমিই ত তোমাকে বলেছিলাম তুমি যেকোনো সময় আমার রুমে আসতে পারো! তুমি গার্লফ্রেন্ড রাইট!!

– আপনি প্লিজ আগে যান কাপড় পরে আসেন আমার কথা আছে আপনার সাথে!

ফারহান রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল৷ আর আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি আমি না বুঝে কত খারাপ ভেবেছি ফারহানকে আমার এমন করা উচিৎ হয় নি৷ আচ্ছা,, রুমাইশা যা বলেছে তা কি সত্যি আমার ত ভয় করছে! কিন্তু আমি উনার সাথে যে ব্যাবহার করে সেটার জন্য আমাকে সরি বলতেই হবে!

কালকে রাতে,, আমি রুমে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে ভাবছি৷ ফারহান কি তাহলে সত্যি এমন? আমি ত ভাবতেও পারি নি! আর তাছাড়া আজকের দিন চলে গেলে আর আছে ২দিন তারপর ত ও চলেই যাবে আমার ওর কথা নিয়ে ভাবার এত কি প্রয়োজন? আর আমার সাথে ওর সম্পর্ক ছিল শুধু এই ৫দিনেরই আমার কোন অধিকার নেই ওর এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলার ওর লাইফ ওর ইচ্ছে যা মন চায় করুক কিন্তু হ্যা ও আমার সাথে এমন গুটিবাজি করতে পারবে না! এখন থেকে ওর থেকে দশ হাত দূরে থাকবো আর এখনি ওকে ভুলে যাব!

সকালে,,,,
ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে যেতে দেখলাম ফারহান বসে আছে৷ আমি সিরি দিয়ে নামার সময় ফারহানের চোখ পড়লো আমার দিকে৷ খেয়াল করলাম আমার দিকেই তাকিয়ে আছে কিন্তু আমি ওর দিকে তাকাবোই না,, আজকে না যত দিন এখানে আছে আমি ওকে পুরোই ইগনোর করবো!! আমি নিচে নেমে টেবিলে বসলাম৷ হাতে একটা ব্রেড নিয়ে আস্তে আস্তে খেতে খেতে একেবারে আস্তে করে এক পলক ফারহানের দিকে তাকাতে দেখলাম এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে রুমাইশার দিকে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম৷ ব্রেকফাস্ট শেষে বাগানে গিয়ে দাড়ালাম৷ দেখলাম ফারহান এইদিকেই আসছে আমি ঘুরে দাড়ালাম৷ ফারহান আমার সামনে এসেই বলল
– গুডমর্নিং গার্লফ্রেন্ড!
আমি কিছু বললাম না এমনকি ঘুরলামও না৷ ফারহান আমার সামনে এসে দাড়াতে আমি আবার ঘুরে দাড়ালাম ফারহান বলল
– হেই! তুমি এমন বার বার ঘুরে দাড়াচ্ছো কেন?

আমি কিছু বললাম না৷ ফারহান আমার হাত ধরে বলল
– এইযে লিসেন,, আমি আছি এখানে কি হয়েছে তোমার?

আমি সাথে সাথে হাত ছারিয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম৷ ফারহান ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ভিতরে গেলাম৷ সোফায় বসলাম রুমাইশার সাথে৷ দেখলাম ফারহান আবার আসছে এখানে৷ এসে ফারহানও সোফায় বসলো৷ আমি রুমাইশা তারপর বাকি সবার সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত আর ফারহান বার বার আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কি যেন বলতে চাচ্ছে কিন্তু আমি ভুলেও ওর দিকে তাকাচ্ছি না! একটু পরে আমি উঠে রুমের দিকে গেলাম৷ ফারহানও আবার উঠে আমার পিছনে আসছিলো৷ আমি আমার রুমের সামনে আসতেই পিছন থেকে ফারহান আমার হাত ধরে বলল
– হেই তুমি কি আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করছো?

অনেকটা শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো ফারহান৷ আমি এইবার ঘুরে বললাম
– সরি কে আপনি? ওহ আপনি রুমাইশার ভাই তাই না? আমি আপনাকে ইগনোর কেন করবো? আমি এখানে বিয়ে খেতে এসেছি আমার ফ্রেন্ড এর আমি ত এখানে কাউকে ইগনোর করতে আর কাউর গার্লফ্রেন্ড হতে আসি নি! সরি!

এটা বলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম৷
বিকেলে,,,আমি রুমাইশার রুমে গেলাম৷ পার্লার থেকে লোক এসেছে রুমাইশাকে সাজাতে আজকে রুমাইশার গায়ে হলুদ৷ আমি যেতে রুমাইশা বলল
– তুই বস তোকেও সাজিয়ে দিবে!
– না আমি এত গর্জিয়েস লুক করবো না আমি নিজেই সাজতে পারি আমি নিজে সেজে নিব তুই সাজ!
– আচ্ছা!
রুমাইশার হেয়ার স্টাইল নিয়ে ব্যাস্ত,,আমি ওর পাশেই বসে আছি চুপচাপ আমাকে এইভাবে দেখে রুমাইশা বলল
– কি হয়েছে?
আমি একটু মন মরা হয়ে বললাম
– না আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই!
– কি?
– আব,,,,ফারহানের আগে কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিল,, মানে ওর গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে আই মিন ওর সম্পর্কে একটু বলবি?
– ও আচ্ছা এই কথা! দেখ তুই আমার ছোট কালের ফ্রেন্ড তুই আমাকে এইসব কথা জিজ্ঞেস করতে হিছকিচ খাচ্ছিস কেন? ফারহান আমার ভাই আমি সব জানি ওর সম্পর্কে আর আমি কেন বলবো না তোকে? আচ্ছা ডায়রেক্ট বল কি বিষয় নিয়ে তুই এত টেন্সনে?

এইবার আমি অনেকটাই ফ্রি ফিল করলাম৷ এইভাবে এমন কোন কথা নেই যেটা আমি রুমাইশার সাথে শেয়ার করি না আর আমার দুইজন অনেক ফ্রি আমি আমার প্রত্তেকটা ছোট ছোট কথাই রুমাইশাকে বলি৷ কিন্তু এই প্রথম আজকেই আমি এমন ফিল করেছি ওর সাথে কথা বলতে কারণ আমি ওকে ওর ভাইয়ের কথাই জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছি আর আমি ওর ভাইয়ের কথাই খারাপ ভাবছি পরে রুমাইশা জানতে পারলে কিভাববে তাই আমি এখানে এসেছি রুমাইশাকে সব বলতে আর ওর থেকে সত্যি জানতে! আমি বললাম
– রুমাইশা! ফারহানের মিতিকা নামের কোন,,,,,,,

আমি এত টুকি বলতে রুমাইশা বলল
– ওহ্ মিতি,,মিতিকা! এই মিতিকাই ত সব কিছুর মূল! এই মিতিকা জানিস কত খারাপ! মিতিকা প্রথমে নিজেই এসেছিলো ফারহানের কাছে ওকে বলেছিল ও ফারহানকে অনেক ভালবাসে এর পর অনেক দিন ফারহানের পিছনে ঘুরার পর ফারহান রাজি হয় ওর সাথে রিলেশন এ যেতে! ওদের রিলেশন মাত্র ৩দিন গেছে কারণ মেয়েটা ছিলই গুটিবাজ! এর পর থেকে বারবার ফারহানকে কল করে একি কথা বলে ও অকে অনেক ভালবাসে! এর পর একদিন ফারহান রাজি হয় ওকে মাফ করে দিতে কিন্তু সেই দিনও ও আরেকটা ছেলের সাথে ধরা খায়! বল এইসব মেয়েদের কি করা উচিৎ! আর তাছাড়া ফারহানের আরও কিছু গার্লফ্রেন্ড ছিল কিন্তু আমার মনে হয় না সেগুলো গার্লফ্রেন্ড,, সেগুলো শুধু নামেই গার্লফ্রেন্ড! এইভাবে না দেখা হতো না কথা হতো ফারহান ওদের ফ্রেন্ড হিসেবেই মানতো!

আমি বললাম
– তোকে কি ফারহান সব বলে?

– হুম! একমাত্র আমিই যার সাথে ফারহান সব কিছু শেয়ার করে! আচ্ছা এখন বল তুই এত আপসেট কেন? দেখ এই সময় গার্লফ্রেন্ড সব ছেলেদেরই থাকে একটা দুইটা,, আর ফারহানের শুধু পাস্ট এ ছিল এইসব এখন কেউ নেই! শুধু তুই আছিস!

– কিন্তু আমি কিছু না যেনে সকাল থেকে ওকে ইগনোর করছি এমনকি একটু আগে আমি ওকে কিসব বলেছি! এখন আমার সরি বলতে হবে ওকে!

রুমাইশা সোজা হয়ে বসে বলল
– কি তুই ইগনোর করেছিস তাও আবার ফারহানকে? লাইক সিরিয়াসলি? আর ও কি এখনো তোকে কিছু বলে নি?

আমি গলা ঝেরে বললাম
– মানে কি? কি বলবে?

– ওও আই থিংক তোকে কিছু বলে নি! কিন্তু তুই ওকে চিনিস না! ওর কাছে সব চেয়ে বেশি খারাপ লাগে কেউ ওকে ইগনোর করলে এরপর ও পুরাই ফায়ার হয়ে যায়! ও তেমন মানুষ না যে কেউ ওকে ইগনোর করবে আর ও চুপচাপ মেনে বসে থাকবে!

– তার মানে কি আমি সরি বললে আমাকে মাফ করবে না?

রুমাইশা ঠোট উল্টিয়ে বুঝালো সে জানে না কিন্তু মুখে কিছু বলল না৷ আমি বড় একটা হাফ ছেরে বললাম
– আচ্ছা আমিও রেডি হই এখন!

আমি রেডি হয়েই ফারহানের রুমে গেলাম৷ আমি আজকেও সুন্দর করে সেজেছি আর একটা কাচা হলুদ রঙের লেহাংগা পিরেছি৷

বর্তমানে,,,
আমি ফারহানের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ ফারহান রুমের দরজা খুলে আমাকে রুমের ভিতিরে টান দিল৷ আমার কেন যেন আজকে অনেক ভয় করছে আবার বুকের ধুকপুক বেরেছে৷ ফারহান ঘার একটু বাকা করে শান্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি ফারহানের দিকে খেয়াল করতে দেখলাম ফারহান একটা পাঞ্জাবি পরেছে হলুদ কালার এর৷ ফারহান বলল
– কি হয়েছে?

আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
– স,,,সরি! সকালে আপনার সাথে এমন ব্যাবহারের জন্য! আমি আসলে,,,,!

দেখলাম ফারহান সেই ভাবেই ঘার বাকা করে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে মনে হয় এখনি আমাকে খেয়ে ফেলবে৷ আমি এইভাবেই কাপাকাপা গলায় কথা বলছি তাও আবার এই চাহনি দেখে মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না! ফারহান বলল
– হুম তারপর,,,? তুমি আসলে,,,?

– আ,,আমি আসলে আপনাকে ইগনোর করছি,,,,,,!

আর কিছু বলতে পারলাম না ফারহান আমার ঘারে মুখ গুজতে মুখটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো আমি নিজেই জমে গেছি! ফারহানের প্রত্যেকটা নিশ্বাস আমার ঘারে পরছে৷ আমার কেন যেন এখন হাত পাও কাপছে না কিছু বলতে পারছি আর না ওকে সরাতে পারছি! ফারহান ওর মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে যাবে তার আগে হঠাৎ রুমে কে যেন ঢুকে বলল
– ফারহান ভাইয়া ডাকে!

এটা বলে চলে গেলো৷ রুমের দরজাটা লক করা ছিল না৷ হঠাৎ কেউ আসায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম৷ ফারহান বলল
– চলো নিচে যাই!

এটা বলে ফারহান আগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো৷ আমি মনে মনে ভাবছি কিরে বাবা একটু বলবে না আমাকে কেমন লাগছে? কোন কম্পলিমেন্ট না দিয়েই চলে গেলো৷

চলবে,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন 💖✨)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে