coffee & vanilla part-03

0
3011

#coffee & vanilla
#part_3
#Arohi_Ayat


– এত ভয় পাও যখন কেন উঠেছো?!

– উফফ,,আপনি বুঝবেন না! আমি ভয় পাই নাই!

– তাহলে এইভাবে গলা ফাটিয়ে চিল্লানি দিয়েছো কেন?

– এটাই ত নাগরদোলায় উঠার মজা! ধুর আপনি বুঝবেন না! চলেন আমি যে কেন এসেছি আপনাকে এখানে নিয়ে সবার সামনে ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ফেলেছেন আজগুবি আজগুবি কথা বলে!

এটা বলে হাটা দিলাম৷ পিছন থেকে হঠাৎ আমাকে হ্যাচকা টান দিল অসভ্যটা৷ আমি ওর থেকে দূরে গিয়ে বললাম
– ছারেন কি করছেন? বুঝতে পারছি না কিছুই!

– কোথায় চলে যাচ্ছো? আমাকে তোমার সাথে নিয়ে এসেছো এখন নিজে একাই চলে যাচ্ছো?

– তো আসেন আমার পিছনে পিছনে আমি কি আপনাকে ফেলে চলে যাচ্ছি নাকি? আজব মানুষ! একটা মানুষ রেগে গেলেও কি বুঝেন না?

– না পিছন পিছন আসতে পারবোনা তোমার সাথেই নিয়ে যাও!

– চলেন!! এইজন্যই হয়তো আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড আপনার সাথে কোথাও ঘুরতে যায় না দুই একদিন পরে একটু ফোনে কথা বলে কারণ ওরাও জানে আপনি যে কি,,,!

– লিসেন ওরা আমার সাথে কথা বলে না বা ঘুরতে যায় না এমন না আমি নিজেই অনেক ব্যাস্ত থাকি তাই ওদের টাইম দেই না!

– আচ্ছা চলেন!


সন্ধ্যাবেলা,,,,

দোলনায় গিয়ে বসে কানে হ্যাডফোন গুজে গান শুনছিলাম৷ দূর থেক দেখছি ফারহান আসছে আমার দিকেই৷ আমার সামনে এসেই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কি যেন বলল কিন্তু কিছু ঠিক মত শুনতে পারলাম না কারণ দুইকানেই হ্যাডফোন আর ফুল সাউন্ড৷ আমি হ্যাডফোন খুলে বললাম
– কি?

– তুমি এই সন্ধ্যায় এখানে কি করছো?

– যাই করছি তাতে আপনার প্রবলেম কি?

– shut up! আমি বলেছি মাত্র ৫দিনের জন্য তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড আর দেখেছো আজকে ১দিন কিভাবে চলেও গেছে!

– তো আমি কি করবো? আপনি নিজেই আমাকে পাগলের মত গার্লফ্রেন্ড ভাবছেন আমি কি বলেছি? আর হ্যা ভালোই যত তারাতাড়ি সময় কাটবে ৫দিন শেষ হবে আপনার থেকে পিছা ছুটবে!

– দেখো এই ৫দিনে যেন আবার আমার প্রেমে না পরে যাও!

– হাহ হাহ!

– সাইড হও আমি বসবো!

আমি একটু সাইড হতে ফারহান বসে পড়লো আমার সাথে দোলনায়৷ তারপর আমার এক কানের হ্যাডফোন নিয়ে নিজের কানে গুজে আরেকটা আমার কানে গুজে দিল৷ অনেক্ষন ধরে চুপচাপ কিছু না বলে গান শুনছিলাম৷ আমার গানের দিকে মনযোগই যাচ্ছে না বার বার আড় চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম,,চোখ বন্ধ করে গানটা ফিল করছে ফারহান৷

এইভাবে দুইজন একসাথে বসে একটা রোম্যান্টিক গান শুনবো গানটা ফিল করবো তারপর আমি ওর কাধে মাথা রাখবো তারপর,,, ধ্যাত কিন্তু এটা ত সেই মানুষ না! আমি তারাতারি সেখান থেকে উঠে হ্যাডফোন টান দিয়ে খুলে ফেললাম৷ ফারহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
– কি হয়েছে?

– উফফ! এখন এইভাবে আপনার সাথে বসে গান শুনলে পরে কি হবে?

– কোন পরে?

– পরে যখন আমার প্রিন্স চার্মিং আসবে,, ওর সাথে যখন আমি আমার এই স্বপ্নটা পুরোন করবো তখন আমার বার বার আপনার কথাই মনে পরবে যে আপনার সাথে বসেও একদিন এইভাবে গান শুনেছিলাম!

– তো পরবে মনে কি হয়েছে? আর মনে পরবেই কেন ৫দিন পর ত আমি চলে যাবো এর পর আমাকে ভুলে যাবে!

– উফফ এটাই ত সমস্যা ৫দিন পর আপনি চলে যাবেন আর এখন এইসব করে আমাকে কিছু মোমেন্ট হাই লাইট করে দিয়ে গেলে পরে আমি কি করবো?!

– কিন্তু আমি ত তোমার সাথে কিছু সময় কাটাতে চাই যেটা আমার মনে থাকবে এর কারণ হলো বাংলাদেশি গার্লফ্রেন্ড এর এক্সপিরিয়েন্স! আমার সবসময় মনে থাকবে যে আমার সেখানে একটা গার্লফ্রেন্ড ছিল!

– আচ্ছা আপনি আমাকে ভালবাসেন না তার মানে? মানে আপনি শুধু এক্সপিরিয়েন্স এর জন্য আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানানোর জন্য এমন পাগল হয়েছেন?

ছোট ছোট চোখ করে বললাম৷ ফারহান কিছুই বলল না আমি আবার বললাম
– আচ্ছা আপনি যে ৫দিন ৫দিন করছেন যদি আল্লাহ আমাদের ভাগ্য মিলিয়ে দেয় মানে এমন হয় যে আপনার সাথে আমার জোড়া আছে এরপরেও কি আপনি আমাকে ভালবাসবেন না? মানে তখনও কি আপনি এটাই বলবেন তুমি আমার ৫দিনের বউ আমি শুধু এক্সপিরিয়েন্সের জন্য,,,,,!

– আউচ!!!!

জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো ফারহান আমি ভয় পেয়ে বললাম
– কি হয়েছে?

– এখানে অনেক মশা! চলো ভিতরে যাই!

এটা বলে উনি উঠে চলে গেলো৷ আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবছি আমার একটু আগে বলা কথা গুলো আজব আমি কি বললাম এইসব আমি নিজেই বুঝছি না! মুখ দিয়ে কি আবোল তাবোল বের হলো আজগুবি কথা উফফ আমিও মনে হয় এই ১দিনেই পাগল হয়ে গেছি,,,,আউচ!!! সত্যিই অনেক মশা তারতাড়ি বাড়ির ভিতরে যাই!

রুমাইশার রুমে গিয়ে দেখলাম আরহান ভাইয়া বসে আছে৷ আমিও গিয়ে ওদের সাথে বসলাম৷
– ভাইয়া তুমি এখানে?

রুমাইশা বলল
– ভাইয়ার এই সন্ধ্যা বেলা ব্রেকাপ হয়েছে সেই কষ্টের কথাই বলতে এসেছে!

– ব্রেকাপ? যাক ভালোই হয়েছে!

– আমি ভাইয়ার জন্য চা নিয়ে আসি তুই বস!

রুমাইশা চলে গেলো৷ আমি বসে বললাম
– তো ব্রেকাপ কেন হয়েছে শুনি? ও না বলেছিল ও কখনোই তোমাকে ছেরে যাবে না!

– ও কিছু করে নাই আমিই ব্রেকাপ করেছি!

– কেন?

ভাইয়া আমার হাত ধরর বলল
– রাইসা! তুই ত জানিস আমি ওকে কত ভালবাসি!

– হ্যা ভালোবাসো ত ব্রেকাপ কেন করেছো?

– ও বলছে ওর ফ্যামিলিতে নাকি প্রবলেম হয়েছে,, এখন ও ওর ফ্যামিলির সাথে গ্রামে চলে যাবে! ওর ভাবা উচিৎ ছিল না যে এর পর আমি কি করবো? আমি রাগে ওর সাথে ব্রেকাপ করেছি!

– তাহলে তোমারও ত ভাবা উচিৎ ছিল ওর কষ্টটা!

কথার মাঝখান দিয়ে রুমাইশা চা নিয়ে এলো৷ দেখলাম ওর সাথে ফারহানও এসেছে৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি যে ও এখনে কি করছে? রুমাইশা চা নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়াতে ফারহানও এসে রুমাইশার পিছনে দাঁড়িয়ে কিভাবে যেন ওকে ধাক্কা লাগিয়ে দিল আর রুমাইশার হাতের সব চা এসে পরলো আমার আর আরহান ভাইয়ার হাতে৷ ভাইয়া আমার হাত ধরেছিল তাই অর্ধেক আমার হাতে আর অর্ধেক ভাইয়ার হাতে এসে পরেছে৷ চা গুলো হালকা গরম ছিল তবুও একেবারে হাত জলছে৷ ফারহান বলল
– ওহ্ আ’ম রেলি সরি ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে!

আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান আমার সামনে এসে আমাকে বলল
– ওহ্ নো তোমার হাতেও লেগে গেছে দেখি!

আমি ঝারামেরে হাত ছারিয়ে নিয়ে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে এলাম দরজাও বন্ধ করে দিলাম তারপর হাতে পানি দিলাম৷ কত খারাপ এই ফারহানটা ইচ্ছে করে এমন করেছে আমি জানি! অনেক রাগ লাগছে৷ ওহ্ আরহান ভাইয়ারও ত মনে হয় লেগেছে কিন্তু এই সময় আমি বাহিরে যেতে চাই না! একটু পরে এসে রুমাইশা আমাকে ডাক দিল৷ দরজা খুলতে বলল
– আয় ডিনার করবি না?

আমি কিছু না বলে ওর সাথে গেলাম৷ নিচে গিয়ে দেখলাম আরহান ভাইয়াও বসেছে ডিনার করতে৷ কিন্তু ফারহান নেই৷ আমি গিয়ে ভাইয়ার পাশে বসে ভাইয়াকে বললাম
– তোমার হাত ঠিক আছে ত ভাইয়া? বেশি লেগেছে নাকি?

– আরে না কিছু হয় নি!

– আচ্ছা সরি! ওইসময় তোমাকে না দেখেই চলে গেলাম,, তুমি ত জানো আমি কত রেগে যাই!

ডিনার শেষ করলাম কিন্তু ওই ফারহানটা আর এলো না৷ যাজ্ঞে আমি আমার রুমের দিকে গেলাম৷ রুমে ঢুকবো তার আগে পাশের রুম থেকে হ্যাচকা টান দিল৷ আমি রুমে ঢুকতেই রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো দেখলাম ফারহান! আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি৷ ফারহান আমার কাছে এসে বলল
– তোমার হাত দেখাও!

আমি রেগে বললাম
– কেন? কেন দেখাবো? আপনার দেখে কি? আপনি নিজে ইচ্ছা করেই ত ফেলেছেন তাই না?

– আমি কি জানতাম তোমার হাতেও লেগে যাবে?!

আমি বড় বড় চোখ করে বললাম
– তার মানে কি আপনি আরহান ভাইয়ার হাতে ফেলতে চাইছিলেন? কেন?

– ও তোমার হাত ধরেছে কেন?

এইবার রাগ ত লাগছেই আর অবাকও,, মুখ এত বড় হা করে বললাম
– উনি আমার হাত ধরেছে তাতে আপনার কি হয়েছিলো? উনি আমার ভাইয়ার মত বুঝতে পেরেছেন!

ফারহান আমার সামনে এসে বলল
– আচ্ছা তোমার হাত দেখাও!

আমি দুই হাত পিছনে নিয়ে বললাম
– না জীবনেও আপনাকে দেখাবো না!

ফারহান আমার হাত দেখার জন্য আমার সাথে জোর করতে লাগলো আর আমি ত কখনোই দেখাবো না আমাকে চিনে না এই ফারহান৷ ফারহান যে হাতে চা পরেছিল ওই হাত চেপে ধরতে একটু ব্যাথা পেলাম৷ ফারহান আমার হাত সেই ভাবেই ধরে আমাকে বসিয়ে পাশের ড্র‍য়ার থেকে একটা ঔষধ বের করে আমার হাতে লাগিয়ে দিল৷ আমি চুপচাপ বসে ওর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছি৷ ঔষধ লাগানো শেষ হতে হঠাৎ করে আমার হাতে চুমু লাগিয়ে দিল৷ আমি ধরফরিয়ে লাফিয়ে উঠে বললাম
– কি করছেন?!!!

এটা বলে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে পিছন থেকে ফারহান ডেকে বলল
– রাইসা! আ’ম সরি!

আমি দাঁড়িয়ে যেতে ফারহান আবার বলল
– আমি তোমাকে সকাল থেকে বলছিলাম যে এই ৫দিন তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড,, আর আজকে ১দিন কেটেও গেছে! এতক্ষন আমি তোমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এইভাবেই বলছিলাম তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু আজকে সারা দিন তোমার সাথে থেকে যতটুকুই তোমাকে চিনেছি এখন আমি তোমাকে মন থেকে জিজ্ঞেস করছি তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?

হায় আমার বুক ধকধক করে উঠলো৷ ফারহান কি সত্যি মন থেকে তাহলে জিজ্ঞেস করছে আমাকে?! আমি পিছনে ঘুরে তাকাতে ফারহান আবার বলল
– তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে?

আমার মুখে কেন যেন মুভকি হাসি ফুটে উঠলো কিন্তু হাসিটা বেশিক্ষন রইলো যখন ফারহান আবার বলল
– আমি মন থেকে জিজ্ঞেস করছি তুমি কি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে এই ৪দিনের জন্য!!!

ব্যাস আমি দাত কটমট করে আর একমিনিটও দারালাম না সেখানে দরজা খুলে সোজা আমার রুমে গেলাম৷ আমার রুমে দরজা বন্ধ করে বেডে বসে ভাবছি উফফ যখনি ছেলেটাকে একটু ভাললাগে তখনি সব শেষ করে দেয়,,,,,! আজকে সারাদিন পাগলের মত ৫দিন ৫দিন করেছে এখন আবার ছাগলের মত ৪দিন ৪দিন করছে বুঝলাম না৷ পাগলটা এই ৪/৫ কেন করছে কেন ৪দিন পরে কি পাগল খানায় ভর্তি হবে??!

চলবে,,,,,

#coffee & vanilla
#bonus_part✨
#Arohi_Ayat


– আপনি আমার রুমে কি করে এলেন???
– রুমাইশার থেকে চাবি নিয়ে এসেছি!
–কি? আর ও দিয়েও দিয়েছে?
– দেয় নি জোর করে নিতে হয়েছে! তোমার হাত দেখাও!

– কেন?

এসে আমার হাত ধরে ভালো করে দেখে বলল
– কামরের দাগ কই?

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম
– আমি কি জানি চলে গেছে হয়তো!

– চলে গেছে মানে? এত তারাতাড়ি কিভাবে গেলো?

আমি ছোট ছোট চোখ করে বললাম
– সাধারণ একটা কামরের দাগই ত সারাজীবন ত আর থাকবে না আর না ৫দিন থাকবে! চলে গেছে অনেক আগেই!

ভ্যাম্পায়ারটা কিভাবে যেন রুড চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি চোখের কয়েকটা পলক ফেলে বললাম
– কি?

কিছু বলছে না অনেক্ষন ধরে তাকিয়েই আছে৷ আমি একটু নরে চরে বললাম
– এইভাবে তাকাবেন না!! যান এখান থেকে!

আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছিলাম৷ বের হয়েই দেখি এই ফারহানটা বসে আছে৷ ফারহান হঠাৎ এসে আমার ঘারের সামনে থেকে ভিজা চুল সরিয়ে সেখানে জোরে কামর বসিয়ে দিল৷ আমি ফারহানকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে ঘারে হাত দিয়ে বললাম
– আল্লাহ আমার ঘার!

আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালাম৷ একেবারে লাল নিল হয়ে গেছে ৷ আমি রেগে বললাম
– উফফ আপনাকে যে কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না! আপনি কেমন মানুষ?

– হাতের দাগ চলে গেছে তাই,,,,!

– আল্লাহ আমার মনে হয় জ্বর এসে পরবে!

আমার চোখে পানি চলে এসেছে৷ ফারহান বলল
– কি হয়েছে? তুমি কান্না কেন করছো!

– আপনি যান এখান থেকে! আর আমাকে না বলে আমার রুমে আসবেন না!

– ঠিক আছে আসবো না কিন্তু তুমি যেকোনো সময় আমার রুমে আসতে পারবে!

– আমার কোন শখ নেই আপনার রুমে আসার যান এখান থেকে! আর আপনি ইচ্ছে করে আমার রুমের পাশে আপনার রুম নিয়েছেন তাই না!?

– লিসেন আমি তোমার রুমের পাশে না তুমি আমার রুমের পাশে রুম নিয়েছো! আমি যখন এখানে আসি এই রুমেই থাকি!!

এটা বলে ফারহান সেখান থেকে চলে গেলো৷ আর আমি রুমাইশার কাছে গেলাম৷ রুমাইশার কাছে যেতে রুমাইশা বলল
– তুই সারাদিন বসেই থাকবি? চল একটু শপিং করে আসি!

– তো কি করবো? তুই কর! আগে তুই বল ওই ফারহানকে আমার রুমের চাবি দিয়েছিস কেন?

– না আমি দেই নি জোর করে নিয়েছে! কেন কি হয়েছে?!

– তোর মাথা!! তারাতাড়ি বিয়ে করে দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে!! সাথে ওই ফারহানকেও নিয়ে যা তারতারি!

এটা বলে রুমে এসে প্রথমে একটা ওড়না গলায় পেচিয়ে রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হলাম৷ রুমাইশা বলল
– কোথায় যাচ্ছিস?

– এইসময় রাগ লাগছে বাহিরে যাচ্ছি! বিকেলে আসবো!

– কেন এতক্ষন কোথায় কাটাবি শুনি?!

– যেখানেই যাই তোর কি? ঘুরবো বেরাবো!

এটা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম৷ রিকশায় না উঠে হাটা ধরলাম৷ আজকে হাটতে হাটতে যেখানে যেতে পারি সেখানেই যাব! হাটতে হাটতে দেখলাম আইসক্রিম ব্যাস কিনে খেতে খেতে চললাম৷ এরপর কল করলাম আমার কলেজ ফ্রেন্ড লাইসাকে৷ ওর সাথে অনেক দিন ধরে কথা হয়না ভাবছি আজকে ওর সাথেই ঘুরবো৷ আমি গিয়ে একটা পার্কে বসে আমার আইসক্রিম খাচ্ছিলাম এর মাঝখানেই লাইসা এসে হাজির হলো৷ আমি ওকে দেখে আমার পুরো আইসক্রিমটা মুখে ঢুকিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম৷
– তোর সাথে কত দিন ধরে কথা হয় না বান্ধবি! ভালো আছিস?

– হুম!

– চল আজকে তোর সাথে ঘুরবো!

কালকে যে মেলায় গিয়েছিলাম ফারহানের সাথে আজকে আবার লাইসার সাথে সেখানে গেলাম কারণ কালকে আমি ভালো মত ঘুরতে পারি নি আজকে ঘুরবো দুই বান্ধবি৷ মেলায় গিয়ে আমি প্রথমেই হাওয়াই মিঠাই এর সামনে গেলাম৷ দারিয়ে দারিয়ে দেখছিলাম কিভাবে হাওয়াই মিঠাই বানায়৷ সেখানে দাঁড়িয়ে আমি লাইসাকে সব বলছিলাম এই ফারহানের ব্যাপারে ও ত অবাকের উপর অবাক হচ্ছে৷ আমি আস্তে করে আমার গলার মধ্যে থেকে ওড়নাটা সরিয়ে ওকে ঘারের কামরের দাগটা দেখালাম৷ লাইসা মুখে এক হাত দিয়ে বড় করে মুখ হা করে বলল
– কি এটা ওর কাজ?

– হ্যা!

আমরা এইভাবেই কথা বলছিলাম হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে ভ্যাম্পায়ারকে দেখে ভয়ে কেপে উঠলাম৷
– আপনি এখানে কিভাবে এলেন?

ফারহান ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি বললাম
– এইযে,,হ্যালো আপনি এখানে কি করছেন?

– তুমি আমাকে না বলে এখানে এসেছো কেন?

– আমার ইচ্ছা! আর আপনি কি করে জানলেন আমি এখানে?

– কালকে তুমি আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছিলে তাই ভেবেছি তুমি হয়তো এখানে আর আমি ত অন্য কোন জায়গা চিনি না যে সেখানে তোমাকে খুজবো তাই এখানে এসেছি!

– ও আপনি ভেবেছেন কালকে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি তাই আজকে আমি এখানে আসবো আবার? একটা মানুষ এত গাধা কি করে হতে পারে আমি কালকে এখানে এসেছি তাই বলে কি আমি রোজ রোজ এখানে এসে বসে থাকবো আর আপনি যখন কোন যায়গা চিনেন না এই একটাই যায়গা চিনেন তাহলে আপনি আমাকে এই অচেনা জায়গায় খুজতেই কেন আসবেন আর আপনি শিউর হলেন কিভাবে যে আমি এখানে? এখন যদি আমি এখানে না থাকতাম?

– হ্যা আমিও এটা ভেবেছিলাম যে তুমি ত আর রোজ রোজ এক জায়গায় এসে পরে থাকবে না কিন্তু দেখো তুমি ত আজকে আবার এসেছো এইখানে!

– লিসেন এটা হলো ভাগ্য নাহলে আমি এখানে না এলে আপনি পাগলের মত আমাকে এখানে খুজতেন! আর আমি বুঝলাম না আপনি আমাকে খুজবেনই কেন? এক মুহুর্তের জন্য কি আমার পিছা ছারবেন না?

– কিন্তু তুমি ত আমার গার্লফ্রেন্ড!

আমি বড় নিশ্বাস ছেরে লাইসার দিকে তাকিয়ে বললাম
– দেখেছিস! আমি তোকে বলেছিলাম না এটা একটা পাগল!

লাইসা বলল
– আরে না এটা ত পাগল না এটা ত গার্লফ্রেন্ড এর প্রতি দায়িত্ব পালন তাই না!

ফারহান লাইসার দিকে তাকিয়ে বলল
– ওয়াও তুমি ত দেখছি একটু স্মার্ট!

আমি লাইসাকে টেনে একটু দূরে নিয়ে বললাম
– এখন কিন্তু তোকে নাগরদোলায় এমন দোল খাওয়াবো যে বিয়ে হওয়ার আগেই তোর বরের নাম ভুলে যাবি!!

– আরে গাধি শুন চল আজকে সারা দিন আমারা দুইজন ওকে নিয়ে ঘুরবো!

আমি দুইহাত ভাজ করে ছোটছোট চোখ করে বললাম
– কেন? যেন আমারাও পাগল হয়ে যাই?

– নাহ! শুনত,,ওর সাথে একটু ঘুরি না আমরা দুইজন তাহলে আমরা দুইজনই বুঝতে পারবো ও কেমন ধরনের মানুষ!

– এক মিনিট আমার কালকেই জানা হয়ে গেছে ও আজব ধরনের মানুষ এর পরে ইচ্ছে হলে তুই যা!

– আচ্ছা,,,চুপ আয় আমার সাথে!

লাইসার সাথে গেলাম,,লাইসা গিয়ে ফারহানকে জিজ্ঞেস করতে ফারহান সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো আজকে সারাদিন আমাদের সাথে ঘুরতে৷ আমি ত এখনি জানি আজকে সারা দিনটা যে হালাত পাতলি হয়ে যাবে আজকে শুধু এই জন্যই আমি মেনেছি যে দেখবো লাইসার কি অবস্থা হয়!
আমি বললাম
– চল নাগোরদোলায় উঠবো!

ফারহানও উঠেছে আমাদের সাথে কিন্তু এমন ভাবে বসে আছে যেন কোন রোবোট ভিতরে কোন ফিলিংসই নেই! আর এইদিকে লাইসা ত চিল্লিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলছে আর আজকে আমিও ফারহানের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে চুপ করে বসে আছি৷ শেষ হলো এই নাগোরদোলা৷ এরপর আমরা মেলা থেকে বের হয়ে অন্য জায়গায় গেলাম৷ এইভাবেই ঘুরছিলাম,,এক সাথে লাঞ্চ করলাম আরো অনেক জায়গায় ঘুরলাম৷ আমি ত একটা টু শব্দও করছি না কারণ যেহেতু লাইসার ইচ্ছা ছিলো ঘুরার ও নিজেই করুক যা করার আমি ত শুধু দেখবো৷ লাইসা দেখছি একেবারে এমন স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করছে আর এই ফারহান কথায় কথায় বলছে
– ওয়াও,, you are very smart!

আর ফারহান দেখছি আমার সাথে যেই পাগল পাগল কথা বলে তেমন কিছুই করছে না একেবারে নিজেও স্মার্ট স্মার্ট কথা বলছে মনে হচ্ছে যেন আমার সাথে কথা বলার সময় ইচ্ছে করেই পাগল পাগল কথা বলে৷ লাইসা আমার কানে কানে বলল
– কই তুই যতটা পাগল বললি তেমন ত কিছুই না আমার ত সত্যিই মনে হচ্ছে আমি একটা জেন্টেলম্যানের সাথে কথা বলছি!

– বল তাহলে!

এখন প্রায় অনেক ঘন্টা হয়ে গেছে,, আর এতক্ষন যাও মনে হচ্ছিলো যে আমিও ওদের সাথে ঘুরতে এসেছি আমি কোন কথা না বলি,, ওরা দুইজনই কথা বলেছে বেশি আর এখন মনে হচ্ছে যেন এখানে আমি অনুপস্থিত! ওরা দুইজন কথা বলতে বলতে একেবারে আমাকে পিছনে ফেলে চলে যাচ্ছে৷ আমি আমার ঠোট কামরে ধরলাম অনেক রাগ লাগছে ত,, এইসব কি ধরনের?! অনেক্ষন কিছু না বলে রাগে ফুসতে ফুসতে ওদের পিছুপিছুই হাটছিলাম কিন্তু নাহ আমি তেমন সহ্য করার মত মেয়ে না,, যে কেউ আমার সাথে এমন করবে আর আমি চুপচাপ পিছনে মাথা নিচু করে হাটবো৷ এক চিল্লানি দিয়ে বললাম
– ওই! দাড়া তোরা!

ওরা দুইজন দাঁড়িয়ে পিছনে তাকাতে আমি বললাম
– কি হুম? চলে যা আমাকে রেখেই! এতই যখন কথা তোদের আমাকে বল যে চলে যা এখান থেকে! আমাকে কি বডিগার্ড পাইসো যে আমি চুপচাপ তোমাদের পিছন পিছন আসবো? একেবারে আমার দিকে কারো মনযোগই নাই! কেন ভাই আমারে এখন কেউ চিনো না তাই না? মাত্র কয়েক ঘন্টা হইসে দুইজন পরিচয় হইসে এখন আমারে কেউ চিনে না! যা তোরা দুইজনই যেখান মন চায় যা আমি গেলাম!!!!!!!!!!!!

লাইসা আমার সামনে এসে বলল
– আচ্ছা সরি! এখন এই রাস্তায় এইভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন? আর তুই ত কোন কথা বলছিলি না তাই আমরাই কথা বলছিলাম!

– তো বল না ভাই আমি চলে যাই! তোরাই বল যত কথা বলার! চাইলে আজকে সারাদিনই কথা বল!

– না,,না আমি এখন বাসায় চলে যাবো!

আমি আর কিছু বললাম না লাইসা আমাদের দুইজনকেই বায় বলে চলে গেলো৷ আমি এখনো রেগে দারিয়ে আছি৷ ফারহান বলল
– তোমার ফ্রেন্ডটা একটু ইন্টেরেস্টিং!

– তো কি? এখন কি অকেও এই স্পেশাল অফার দিবেন ৫দিনের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার?

– নাহ্ তুমি ত আমার গার্লফ্রেন্ড!

– ও আচ্ছা এখন আবার বলছেন আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড! তাহলে এইটাই আপনার গার্লফ্রেন্ড এর প্রতি দায়িত্ব পালন যে গার্লফ্রেন্ড কে পিছনে রেখে আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলা!

আমি রেগে কি বলছি আমি নিজেও ত জানি না কিন্তু এই সময় মুখ দিয়ে যা আসবে আমি বলেই ছারবো এটাই আমার রাগের উদাহরণ! ফারহান বলল
– কেন তুমি কি jealous?

– এই যে বললেন না আবার একটা পাগল ছাগলের মত কথা! আমার সামনে এত পাগলের মত আর ওর সামনে এত স্মার্ট কেন? আমাকেও কি আপনার পাগল মনে হয় যে আমার সাথে এইভাবে কথা বলেন!

– চলো বাসায় যাই!

আমি কিচ্ছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ফারহানের দিকে একবার তাকিয়ে বললাম
– উফফ আবার আমাকে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে?

– হুম!



বাসায় আসার পর অনেক্ষন নিচে বসেছিলাম সবার সাথে কথা বলছিলাম কালকে রুমাইশার মেহেদি৷ একেবারে রাতের ডিনার করেই উপরে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে ছাদে গেলাম৷ সেখানে গিয়ে বাবাকে কল করলাম৷
– আসসালামু আলাইকুম বাবা!

– ওয়ালাইকুমুসসালাম! কি করছো?

– কিছু না বাবা মাত্র ডিনার করলাম!

কিছুক্ষন বাবার সাথে কথা বলে ফোনটা রাখলাম৷ টের পেলাম কেউ আসছে ছাদে৷ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর দেখলাম ফারহান! এসে আমার পাশে দাড়ালো৷ আমি চুপ করেই ছিলাম একটু পর ফারহান বলল
– আমি বুঝলাম না মনে হচ্ছে অনেক তারাতাড়ি দিন কাটছে একেবারে রকেটের মত! এইভাবে লন্ডনে আমার মনে হয় সময় কাটতেই চায় না!

– এখানে এমন কেন মনে হচ্ছে?

– জানি না! হয়্তো তোমার সাথে আছি বলে! কিন্তু আমি চাই না এই সময় গুলো যেন তারাতাড়ি কেটে যাক! দেখো আজকে আরেকটা দিন চলে গেলো৷ আর ৩দিন আছে!

ফারহানের কথা গুলো শুনে কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেলো জানি না কেন? শুনেই কেমন যেন অদ্ভুত লাগে আর মাত্র ৩দিন আছে! ফারহান আবার বলল
– আমারা আর বাহিরে যাব না ঠিকাছে আর না তোমার কোন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবো কারণ এইভাবেই সময়টা জলদি কাটে যেমন আজকে ঘুরতে ঘুরতেই সময় শেষ!

ফারহানের কথা গুলো শুনে কেমন যেন মনে হচ্ছে একটা ফিলিং আসছে ভিতরে৷ আমার নিজেরও কেমন যেন মনে হচ্ছে যেন ৩দিন পরে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে৷ আমি ফারহানকে ডেকে বললাম
– এখন আপানার এই কথা গুলো শুনে কেন যেন রাগ করতে ইচ্ছে করছে না আমি কিছু বলতে চাই,,,৩দিনই ঠিক কিন্তু আমি এইবার হতে চাই আপনার গার্লফ্রেন্ড! এই ৩দিনই কাটাতে চাই আপনার সাথে! পরে ত আপনি লন্ডন চলে যাবেন তারপর আমি আবার আমার আগের লাইফে আর আপনি আপনার!!

চলবে,,,,,,,

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ✨)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে