চুক্তির বউ ২য় পর্ব
লেখা:তামান্না
বিয়ের সব কাজ শেষ করে কাজী চলে গেলো।মেঘ শ্রাবণ কে বলে…
মেঘঃস্যার এবার তো আমি মায়ের কাছে যেতে পারি।
শ্রাবণঃহ্যা এসো।
মেঘঃএই পোশাকে।
শ্রাবণঃহ্যা…এটাই পরে যাবে।তোমার মায়ের কাছ থেকে আশির্বাদ নিতে হবে না।ওনার তো দেখা দরকার ওনার মেয়েকে বউ সাজে কেমন লাগছে তাও আবার #চুক্তির_বউ।(মেঘের একদম কানের কাছে গিয়ে মুখ নিয়ে বলে)
শ্রাবণের মাঃকি রে কি বলছিস ওকে?
শ্রাবণঃমামনি ও ওর মায়ের দেখা করতে চায়।কথা ঘুরিয়ে।
শ্রাবণের মাঃঠিক আছে তুই ওকে নিয়ে,আর হ্যা তাড়াতাড়ি আসিস।আমাকে একটা করিস আমি চিন্তায় থাকবো।
শ্রাবণঃমামনি তুমি চিন্তা করো না আমরা ফিরে আসবো।ফুলি এই ফুলি কোথায় তুই?
ফুলিঃজ্বি ভাইজান বলেন।
শ্রাবণঃমামনির খেয়াল রাখিস আমি একটু বাইরে যাবো।
ফুলিঃজি ভাইজান রাখবো।আপনে কোনো টেনশন করবেন না।
শ্রাবণঃগুড…মেঘ চলো আমাদের বেরোতে হবে।
মেঘঃআসছি মা।
শ্রাবণের মাঃতাড়াতাড়ি এসো।
মেঘঃজি মা আসবো।
ওরা হাসপাতালে গেলো,মেঘ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে চাইলো ওর মায়ের এখন কি অবস্থা।
মেঘঃDoctor আমার মা কোথায়?
ডাক্তারঃওনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।যদি ও ওনার অপারেশন সাকসেসফুল তবুও ওনাকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা……
মেঘঃমানে কি Doctor?
ডাক্তারঃদেখো শ্রাবণ জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে এখন ওনি চাইলে মানুষ কে বাঁচাতে পারেন আবার মারতেও পারেন।আপনার মা আর বেশিদিন বাঁচবেন না।
মেঘঃআপনি পাগল হয়ে গেছেন Doctor।এটা কখনোই হতে পারে না আমার মা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না।আমি মায়ের কাছে যাবো।
মেঘ এক ছুটে মায়ের কেবিনে ডোকে মায়ের পাশে বসে কান্না করতে থাকে।
এদিকে শ্রাবণ ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
শ্রাবণঃDoctor ওনাকে কবে রিলিজ করছেন?
ডাক্তারঃদুদিন পর ওনাকে রিলিজ করে দিবো।আর একটা কথা।
শ্রাবণঃহ্যা Doctor বলুন।
ডাক্তারঃপ্লিজ ওনার একটু খেয়াল রাখবেন ওনার হাতে মাত্র ছয়মাস সময় আছে।এই ছয়মাস ওনাকে একটু দেখে রাখবেন।
শ্রাবণঃOkay Doctor I will try my best.
ডাক্তারঃThank You Shrabon.
শ্রাবণঃআমি আসছি।
শ্রাবণ কেবিনে এসে দেখে মেঘ পাগলের মতো কান্না করছে অনিক কিভাবে ওকে সামলাবে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ওর ঘাড়ে হাত রেখে ওকে শান্ত্বনা দেয়।
শ্রাবণঃমেঘ প্লিজ তুমি এভাবে ভেঙে পড়োনা।
তুমি যদি দুর্বল হয়ে পড়ো তাহলে তোমার মাকে কে সামলে রাখবে।ওনি তো এখন ও জানেন না ওনার হাতে সময় মাত্র কটা মাস।
মেঘ পিছন থেকে ঘুরে শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে…
মেঘঃমায়ের কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো না স্যার।মা ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই।আমি যে খুব একা হয়ে যাবো।
শ্রাবণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
শ্রাবণঃকেনো আমরা আছি তো।আমি আর মামনি কেনো এভাবে ভেঙে পড়ছো।মেঘ তুমি নিজেকে সামলাতে শিখো।
শ্রাবণের কথায় মেঘ ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে যায়।
মেঘঃI am sorry…
মেঘের মাঃমেঘ…….অস্পষ্ট ভাবে ডাক দিলেন।
মেঘঃমা তুমি ঠিক আছো তো।
মেঘের মা উঠতে গেলে শ্রাবণ ওনাকে ধরে পিটের পিছনে বালিশ দিয়ে ওনাকে বসিয়ে দেয়।
মেঘের মাঃবাহহ তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে এই সাজে।(বিয়ের পোশাক দেখে)
মেঘঃমা আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
মেঘের মাঃশ্রাবণ আমাকে সব বলেছে।
মেঘঃতুমি জানো।(অবাক হয়ে)
মেঘের মাঃহ্যা…অপারেশন এ যাওয়ার আগে ওর সাথে আমার কথা হয়েছিলো আমি ওকে অনুমতি দেই তোকে বিয়ে করার।
মেঘের মনে ভয় ডুকে যায় কি বলে স্যার মাকে বিয়ের জন্য রাজী করে ফেললো তাও আবার একটা এগ্রিমেন্ট এ সই করা বিয়ে।মা কি এটা জানে।মা এটা জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
মেঘ শ্রাবণের দিকে এক নজর তাকিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।
মেঘের মাঃতুই খুব সুখী হবি মা।আমি তোর জন্য আল্লাহর কাছে রোজ কান্নাকাটি করে তোর জন্য এমন একজন কে চেয়েছি।শ্রাবণ খুব ভালো ছেলে মা ও তোকে খুব ভালো রাখবে।
মেঘঃমা…এখন এসব কথা ছাড়ো তো.আগে বলো তোমার এখন কেমন লাগছে?
মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।কথা ঘুরাতেই এমন কিছু বলা।
মেঘের মাঃআমি একদম ঠিক আছি।
শ্রাবণঃমা এখন একটু রেস্ট নিন নয়তো আবার শরীর খারাপ করবে।
মেঘের মাঃঠিক আছে।
শ্রাবণঃমেঘ চলো আমরা বাসায় যাই মামনি অপেক্ষা করছে।
মেঘঃস্যার আমি এখানেই থাকি মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘের মাঃকিন্তু মা আজ তো তোদের বিয়ের প্রথম…
মেঘঃমা প্লিজ…যাই বলো আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না এটাই ফাইনাল।
মেঘ বাচ্চাদের মতো মাকে জড়িয়ে ধরে রাখে।
মেঘের মাঃপাগল মেয়ে।
মেঘঃতোমার ই তো।
শ্রাবণঃমা আমি মামনিকে কল করে বলছি মেঘ আসতে চাইছে না।
মেঘের মাঃনা বাবা মেঘ যাবে।আজ মাত্র ওর বিয়ে হলো।আজ তো ওর বরের বাড়িতে থাকার কথা তাছাড়া আমি এখন ভালো আছি।তোমরা সকালে এসো রাতে তো দুজন থাকতে পারবে না।এটা Hospital।এখানে কি এতলোক জন Allow করবে।
মেঘঃকিন্তু মা আমি তোমাকে ছাড়া।
মেঘের মাঃরাতটাই তো।সকালে আসিস অনেক সময় আড্ডা দিবো মা মেয়ে মিলে।এবার যা তোর সংসার সাজানোর প্লেন কর।
মেঘঃমা….(মেঘ কান্নায় ভেঙে পরে।মায়ের কথা শুনে মেঘের কান্নার বেগ যেন বাড়তেই থাকে)
মেঘের মাঃকাঁদে না মা।আজ যে সুখের দিন।আজকের দিনে কাঁদতে নেই।(মেঘের চোখের পানি মুছে ওর কপালে চুমু দিলেন)
মেঘঃমা আমি যাব না।
মেঘের মাঃমায়ের কথা শুনতে হয়।আর তোর শ্বাশুড়ি মা তো অপেক্ষা করছে তোদের জন্য।
মেঘঃতাতে কি হয়েছে?
মেঘের মাঃশ্রাবণ ওকে নিয়ে যাও তো বাবা।
মেঘঃমা তুমি এমন করছো কেনো?
মেঘের মাঃপাগলি মেয়ে।নিজের বরের বাড়ি যাবি না এখানে থাকবি সেটা হয় নাকি।
শ্রাবণঃও খুব জেদি মা আমার একটা কথাও শুনে না বকা দিন তো একটু।
মেঘ রাগে কটমট করে শ্রাবণের দিকে তাকায়।
শ্রাবণঃএইভাবে তাকিয়ো না মা বকা দিবে।
মেঘের মাঃঅনু কি শুরু করলি তুই যাবি ওর সাথে।
মেঘঃযাচ্ছি তো।নিজের মেয়ের থেকে মেয়ের জামাইকে প্রায়োরিটি দিচ্ছো।তুমি খুব পঁচা।
মেঘ রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
মেঘের মাঃতোমার কাছে একটা অনুরোধ বাবা।
শ্রাবণঃছি মা অনুরোধ কেনো বলছেন বলুন না আপনি কি বলবেন?
মেঘের মাঃআমি জানি আমার হাতে সময় নেই।আমি যখন থাকবো না ওকে দেখে রেখো বাবা।আমি চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে।এটা একটা সন্তানের কাছে তার মায়ের অনুরোধ।(শ্রাবণের হাত ধরে)
শ্রাবণঃমা আমি আপনাকে আগেই সব বলেছি।আপনি একদম ভাববেন না।মেঘের দায়িত্ব যখন আমি নিয়েছি তখন ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব ও আমার আজ হোক কাল হোক ও আমার হবেই।হ্যা এটা ঠিক যে মেঘ আগে একজনকে ভালোবাসতো।হয়তো সে থাকলে আজ মেঘ আমার হতো না।মা আমি আপনাকে ওয়াদা করছি আজ থেকে মেঘকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।একফোঁটা কষ্ট ও ওকে স্পর্শ করবে না মা।শুধু আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন আমার সর্বস্ব দিয়ে মেঘকে ভালো রাখতে পারি।
মেঘের মাঃআমি দোয়া করি একদিন তোমার ভালোবাসার জয় হবেই।আমার মেয়েটা যে কবে বুঝবে কে জানে?
শ্রাবণঃচিন্তা করবেন না।বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন ও চাইলেও এই পবিত্র বন্ধর থেকে মুক্ত হতে পারবে না।আমি ওকে মুক্তি দেবো না।সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে আমাদের মাঝে।মামনি তো ওকে চোখে হারায়।
মেঘের মাঃতোমার মতো একজনের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে পেরেছি এর থেকে বড় সুখ আমার কাছে আর কি হতে পারে।
শ্রাবণঃআসি মা মেঘ গাড়িতে একা।
মেঘের মাঃঠিক আছে বাবা এসো।
শ্রাবণ গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ চুপচাপ বসে আসে কেউ কোনো কথা বলছে না।ভাগ্যিস মেঘ তখন কেবিনে ছিলো না নইলে সব শুনে ফেলতো মেয়েটা।এমনিতেই অনেক কষ্ট পাচ্ছে।আর কষ্ট দেওয়া যাবে না।এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে চলে আসে।গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যায়।
মেঘ ফ্রেশ হতে যায়। শ্রাবণ ওকে আলমারি থেকে কিছু শাড়ি বের করে দেয়।আর একটা শাড়ি পরে নিতে বলে।মেঘ ফ্রেশ হয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে রান্নাঘরে যায়।
তারপর রাতের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ।
চলবে………….