Blind love পর্ব ৩

0
3210

#Blind_Love পর্বঃ৩

ডেডইন্ডে যে তালহা আর পলির জন্য এত বড় একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছিল; তা তারা বুঝতে পারে নি।এতো। জঘন্য একটা ক্রাইম স্পট তালহা’র নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কেউ তৈরি করেছে তা সে নিজে মেনে নিতে পারছে না।
এদিকটা জঙ্গল তাই কেউ আসে না, মনে করে এখানে বেশি নজর দেয় নি।কিন্তু আজকে এই জঙ্গলের মাটি খুঁড়েই একে একে বের করা হলো আটটি পঁচা গলা লাশ।
পলি এরইমধ্যে দু’বার বমি করেছে।তারপরও বিকৃত লাশগুলো একে একে দেখছে আর নিজের মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।প্রতিটা লাশ দেখে শিউরে ওঠে পলি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করে এটা যেন তার মেয়ে না হয়।
— লাশগুলো পুরানো।এদের মধ্যে আমাদের তোয়ামনি নেই। (তালহা)
–তুমি দেখছো কত নৃশংসভাবে মেয়ে গুলোকে মেরেছে? কতটা অমানুষ!!!এই খুনির হাতে যদি আমার তোয়ামনি পরে। আল্লাহ আমি আর ভাবতে পারছি না।(পলির কান্না থামছেই না)
–তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়ো তাহলে মেয়েকে কি করে খুঁজবে?মায়ের ভালবাসায় অনেক শক্তি। ভরসা রাখো আল্লাহর উপর। (তালহা)
–স্যার……এদিকে আরও একটা লাশ। (কনস্টেবল চেঁচিয়ে ডাকলো ওদের)
সবাই সেখানে গেল।
–স্যার এটাও অনেক পুরন। মাংস পঁচে গেছে।
–হুম। তাই দেখছি। তুমি থানা থেকে আরও কয়েকজনকে আসতে বলো।জায়গাটা ভালোভাবে সার্চ করো। আর এই লাশগুলো পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠাও।
–জ্বি স্যার।
— আমি আর বাকি টিম নিয়ে আমি সামনে যাচ্ছি। আপডেট করবে।
–ওকে স্যার।
___________।__________

–পলি তুমি বাড়ি যাও।(তালহা)
–তোমার মাথা ঠিক আছে?আমার মেয়েটা কোথায় তার কোন হদিস নেই আর তুমি আমাকে বাড়ি যেতে বলছো?(পলি)
–বলছি কারণ তুমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো।এখন তুমি অসুস্থ হলে বিপদ বাড়বে। তার চেয়ে তুমি বাড়ি যাও। নামাজ পড়ে দোয়া করো।
–তুমি বুঝতেছ না।
–তর্ক করো না। বাসায় যাও। আমি এদিকটা দেখছি।শোন তুমি সিফাতের টিম থেকে প্রতিটা বাড়ি চেকের পর ডিটেইলে আপডেট নিবে আর আমি অন্য টিম থেকে।কোন খটকা লাগলে জানাবে।আমি কোন ঝুঁকি নিবো না।
–স্কেচটার কি হলো?
–বাচ্চা মানুষ ঠিক মতো সব মনে নেই।তাই দেরি হচ্ছে। আরও ঘন্টা-দেড়েক লাগবে।
–হুম।তোমার কথা মেনে নিলাম, বাড়ি যাচ্ছি কিন্তু আমার মেয়েকে না নিয়ে তুমি বাড়ি ফিরো না।
–বাড়ি ফিরলে তোয়ামনিকে নিয়েই ফিরব।
তালহা চলে গেল।
আর পলি রিকশায় বসে সিফাতকে ফোন দিয়ে সব খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করছে। সে বাড়ি ফিরছে মেয়ে ছাড়া।
—।—-।—–।—
–কে এসেছে মা?
— রাজু। তুমি নাকি ফোন করে কিসব আনতে বলেছো।
–হ্যাঁ ওকে ভেতরে নিয়ে আসো।
আইরিন রাজুকে নিয়ে ভেতরে এলো দরজা খোলা রেখেই।
–সব এনেছিস?ফারাবি
–জ্বি ভাই।(রাজু)
–দাঁড়া তোর টাকাটা নিয়ে আসছি।(বলে ফারাবি ভেতরে গেলো)
বাহিরে এসে দেখলো ওর মা কয়েকজন পুলিশের সাথে তর্ক করছে।
–সরি মেডাম। বলছিতো দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে চলে এসেছ। কিন্তু বোঝার চেষ্টা করুন আমাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই।
–আমি কোন কথা শুনব না।বের হয়ে যান এক্ষুণি।
একটা কাগজ বের করে সিফাত আইরিনের হাতে দিল।
–আমাদের কাছে পুরো এলাকা সার্চের ওয়ারেন্ট আছে।একটা মেয়ের জীবন-মরন ব্যাপার।
আইরিন মুহূর্তে রঙ বদলায়।
–আগে বলবেন তো।আপনারা খুঁজে দেখুন কিন্তু এখানে সময় নষ্ট না করলেই ভালো হতো।
— সেটা আমরা বুঝব(সিফাত)
–মা কোন সমস্যা?
–না বাবা।তুমি প্যানিক হইয়ো না। ওদের কাজ করতে দাও।আর তুমি রাজুকে বিদায় করো।
–কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না আগে সার্চ শেষ হোক।
— ও আমার বাসায় কিছু জিনিস দিতে এসেছে।ওকে চেক করে বিদায় করুন।(আইরিন)
–কি জিনিস?
–সেটা আপনার দরকারের নয়।(আইরিন)
–আহ মা!!এভাবে কথা বলছো কেন?একটা মেয়ের জীবন নিয়ে কথা।না জানি ওর মা-বাবা কত চিন্তা করছে।সার্চ করতে দাও।আর তুমি বলছো না কেন আমার ঘরে নতুন পেইন্টিং টানানোর জন্য রাজু লোহা এনেছ। এত ঝামেলার কি আছে?(ফারাবি)
আইরিন ছেলেকে সবসময় বাহিরের মানুষের সাথে নরম সুরে কথা বলা শিখিয়েছে।পরিস্থিতি যত খারাপই হোক ফারাবি সবার সামনে নিজেকে ভালো হিসেবে প্রদর্শন করতে পারে।
–সরি স্যার, ম্যাডামের রাগ করাটা স্বাভাবিক।আমাদের শুধু দশ-পনের মিনিট লাগব।আর ওই ছেলেটা যেতে পারে।(সিফাত)

রাজু চলে গেল।পুরো বাড়ি খুঁজা হলো কিন্তু কিছুই পেল না সিফাতের টিম।
–আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।(সিফাত)
–এটা আমাদের কতর্ব্য। আমার মায়ের ব্যবহারের জন্য আমি মাফ চাইছি।কোন সহায়তা লাগলে বলবেন।
— নিশ্চয়ই। চললাম।
–আচ্ছা। আমি আশা করি মেয়েটা ভালো আছে।
পুলিশ চলে গেলো।

–মা আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।এরপর মেয়েটার কাছে যাবো।(ফারাবি)
–চলো।
——-।——–।——–।——–।——-

সিফাত পলিকে ফোন দিলো।
–ম্যাম ২৩ নম্বর বাড়িও ক্লিন।
–আপনি কি কি দেখলেন তা বলুন।
তারপর সিফাত শুরু থেকে সব বলে ফোন রাখলো।

–মা মেয়েটা কি এইটুকুতেই মরে যাবে? (ফারাবি)
–নাহ।।ও শুধু জ্ঞান হারিয়েছ। এত সহজে মরবে না।(আইরিন)
–তার মানে লোহাগুলি দিয়ে ওর উপর এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে।
—তোমার যা খুশি করো। আমি বাঁধা দিবো না কারণ তুমি কথা দিয়েছো এটাই শেষ।
–হ্যাঁ, মা কথা দিলাম এই মেয়েই শেষ।
তখন কলিংবেল বাজলো।কেউ অস্থির হয়ে বারবার বেল চাপছে ।
আইরিন দরজার ছিদ্র দিয়ে চেহারা দেখে ভেতরে গেলো।নিজের ঘর থেকে কিছু একটা আনলো। দরজা খুলেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির উপর স্প্রে করল এবং ব্যক্তিটি অজ্ঞান হয়ে যায়।

পানির ঝাপটাতে জ্ঞান ফিরলে নিজেকে চেয়ারে বাঁধা আবিষ্কার করলো পলি । ওর মুখও টেপ দিয়ে আটকানো। সামনে দাঁড়িয়ে একটা মহিলা ভীষণ বিচ্ছিরি রকম হাসছে। মহিলাকে ভীষণ চেনা লাগছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে ।
–পলি।।।চিনতে পেরছো আমাকে?(দাঁত বের করে হেসে পলির মুখের সামনে মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আইরিন)
–মাথা নাড়িয়ে না করে পলি।
—আমি সাহায্য করছি। Things we do for love…কিছু মনে পড়ছে?

—চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে