Blind love পর্ব ১

2
4933

Blind love পর্ব ১

আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন।আমি কি করেছি কেন আমাকে তুলে এনেছেন?আমি বাড়ি যাব।” বলেই ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করল চৌদ্দ বছর বয়েসী তোয়া।
‘”হিসসস…..চুপ চুপ….আরে কান্না থামাও …আমার কান্নাকাটি একেবারেই পছন্দ না।
এইতো আর একটু অপেক্ষা করো,আমার ছেলে এলো বলে। সে এসেই তোমাকে খুন করবে।” বলেই বিচ্ছিরিভাবে দাঁত বের করে হাসতে লাগলো তোয়া’র সামনে বসা মহিলাটি।
এই কথা শুনে তোয়া প্রচন্ড ভয় পয়।আর জোরে কেঁদে ওঠে।
ভাঙা ভাঙা গলায় কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে,
–আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি কেন আমাকে মারবেন?
–না মামনি তুমি কিছু করো নি। এর আগের একুশটা মেয়েও কিছু করে নি কিন্তু তবুও তাদের মরতে হয়েছ।
-আপনি কে? কিসব আজে-বাজে কথা বলছেন? আমি বাড়ি যাবো।
-ও মরার আগে পরিচিত হতে চাও, ঠিক আছে। আমি আইরিন।আর আমি মোটেও বাজে বকছি না কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার খুন হবে। তাই তুমি বাড়িতে যেতে পারবে না।(আইরিন)
-আপনি কেন এমন করছে? প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।কি চাই আপনার।আপনার যদি টাকা লাগে বলুন আমি পাপাকে ফোন করছি পাপা দিয়ে দিবে। চিৎকার করে বললো তোয়া।
–না সোনা আমার টাকা লাগবে না।টাকা দিয়ে আমি কি করব? আমার তো শুধু তোমার প্রাণটা চাই। (আইরিন)
–কিন্তু কেন?আমাকে মারলে আপনার কি লাভ?
–আমার লাভ আছে বলেই তো তোমাকে মরতে হবে।তোমাকে মারলে হয়তো আমার ছেলে ভালো হয়ে যাবে।
–আন্টি প্লিজ আমাকে যেতে দেন। আর তাছাড়া কাউকে মারলে কেউ ভালো হয় না।বোঝার চেষ্টা করুন।(তোয়া খুব করুন সুরে অনুরোধ করতে লাগলো)
–তুমি বেশি জানো?ডাক্তার বলেছে এই কথা।(ধমকের সুরে বললো আইরিন)
–ডাক্তার খুন করতে বলেছ?(অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল তোয়া)
–হুম,কিছুটা এমন।
–মানে বুঝলাম না। দেখুন আমাকে তো খুন করে ফেলবেন কিন্তু মারার আগে বলুন কেন মারতে চান?
–দেখো সে অনেককথা।এত কিছু শুনে কি করবে তুমি?
–আমাকে তো মেরে ফেলবে। মরার আগে নিজের মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। প্লিজ শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করুন।
–ঠিক আছে । এত করে বলছো যখন শুনো।
-।-।-।-।
আমি তখন সব হারিয়ে আমার ছেলে ফারাবিকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করি।
কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে ফারাবির কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দিল।তখন আমি ওকে সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাই।উনি ওক দেখে বলে সারাদিন একা থাকার ফলেই এমন।ওকে যেনকোন কিছুতে বাধা না দেই।ফারাবি একটা খেলনা নষ্ট করলে যেন আরেকটা এনে দেই।তাতেও বোর হয়েঐ কাজ করা ছেড়ে দিবে এভাবেই ভালো থাকবে,তারপর উনি পরবর্তী চিকিৎসা দিবেন। আর উনি আমাকে দুইমাস পর আবার যেতে বলেছিলেন কিন্তু তার প্রয়োজন হয় নি।কারণ ফারাবি খেলনা ভেঙে বোর হয়ে গেছিলো।সুস্থ হয়ে গেছিল ।

এভাবে অনেক বছর ভালো যায়। আমার ছেলে কলেজে ভর্তি হয়।পাশের বাসার নবম শ্রেণির এক মেয়ের সাথে তার প্রেম হয়। সব ঠিকঠাক চলছিল।ফারাবি অনেক খুশি ছিল ।

কিন্তু মেয়েটার সাথে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো।তখন ছেলেটা আমার খুব পাগলের মতো করতো,মন খারাপ করতো । আমি তখন মেয়েটাকে বাসায় ডেকে ঝগড়া মিটিয়ে দিতাম। এমনই একদিন ওদের ঝগড়া মিটিয়ে বাজার থেকে চিনি আনতে গিয়েছিলাম।

ফিরে এসে দেখি সারা বাড়ি রক্তে ভরা। মেয়েটা যন্ত্রণাতে কাতরাচ্ছে।ওর মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।আমি দৌড়ে মেয়েটাকে ধরতে যাবো তখনই ফাবারি বলে উঠে,
–মা, একে পড়ে থাকতে দাও। আমার ওর যন্ত্রণা দেখতে ভালো লাগছে।ওর চিৎকারে শুনে আনন্দ পাচ্ছি।
আমি বুঝতেপারলাম খুন করতে পারলে আমার ছেলে ভাল থাকবে।তাই মেয়েটা মরার পর লাশ গুম করে ফেললাম। সেদিন রাতে ঠিকানা বদলে ফেলি।
এরপর ও যখনই পাগলামি করে আমি একটা করে চৌদ্দ-পনের বছর বয়েসী পতিতার ব্যবস্থা করি।ও তাদের মারে আমি গুম করি। যে দেশে ভালো মানুষের খুনের বিচার হয় না চাপা পড়ে যায়, সেখানে পতিতা-দের খুঁজ কে করবে?

–এতে কি আপনার ছেলে সুস্থ হয়ে গেছ? তোয়া কথাটা জিজ্ঞেস করল।
–না।আরও হিংস্র হয়ে গেছে। কিন্তু ও ভালো আছে।
–কিন্তু আমিতো পতিতা নই।স্কুলে পড়ি।
–জানি তো।আসলে কাল স্কুলের সামনে তোমাকে দেখে মনে হলো যে আমি যদি একটা ভালো মেয়েকে এনে ওর সামনে দেই ও ভালো হয়ে যাবে।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।
–ওই তোমার আজরাইল এসে গেছে বলে দরজা খোলার জন্য গেল আইরিন।


অপরদিকে নিজের একমাত্র মেয়েকে পলি আর তালহা খুঁজেই চলছে। স্কুল ছুটির পর মেয়ে বাসায় ফিরে নি। তখন তারা খুঁজ নিয়ে জানতে পারে তোয়া আজ স্কুলেই যায় নি।পলি সাংবাদিক আর তালহা পুলিশের চাকরি করেও নিজের মেয়েকে খুঁজে বের করতে পারছে না।
–আমার মেয়েটা তো কোনদিন কারও কোন ক্ষতি করেনি তাহলে কেন এমন হলো।(কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললো পলি)
–আমাদের মেয়ের কিছু হবে না।ও ভালোয় ভলোয় ঘরে ফিরে আসব।(তালহা পলিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো)
–আচ্ছা আমরা কি চাকরিক্ষেত্রে অজান্তেই কোন শত্রু পুষে ফেলেছি যার জন্য এমন কিছু হলো । (পলি)
–আমরা কোনদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই নি।কারও সাথে অন্যায় করি নি।সৎ থেকেছি।বিশ্বাস রাখো আল্লাহর উপর তিনি আমাদের কোন হতে দিবেন না।(তালহা)
–কিন্তু (পলি কিছু একটা বলবে এমন সময় তালহার ফোন রিং হলো)
–হ্যালো, অফিসার বলুন তোয়ামনির কোন খুঁজ পেলেন?
–না স্যার । কিন্তু একটা ক্লু পেয়েছি। আপনি এক্ষুনি একবার তোয়া’র স্কুলের সামনে চলে আসুন।(ওপাশ থেকে)
–আমি আসছি।
তালহা ফোন রেখে পলিকে বললো,
–আমি যাই ওরা একটা ক্লু পেয়েছ। তুমি থানায় বসবে না বাসায় যাবে?
–আমি তোমার সাথে যাবো।
–কিন্তু পলি…..
— প্লিজ তালহা আজ আমরা সাংবাদিক আর পুলিশ নই।আজ আমরা তোয়ামনির মা-বাবা হিসেবে ওকে দুজন মিলে খুঁজব।
–ঠিক আছে চলো।
দুজন মা-বাবা বেরিয়ে গেল নিজের সন্তানকে খুঁজতে।
চলবে?—–

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে