Angry_Husband
Season_2___Part_13
Written by Avantika Anha
বাড়িতে পৌঁছাইতেই সবাই গল্প শুরু করে দিলো। এর মাঝে আমার আর আরাভের একান্তে কোনো কথা হলো না। আমি নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম। আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকেছিলাম। ভালো করে দেখে আরাভ রুমে আছে কি না? তারপর ঢুকি কিন্তু বের হয়ে দেখি আরাভ বাইরে বাথরুমের দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি দরজা খুলার সাথে সাথে ও আমাকে দেখে ফেলে। ওর ঠোঁটের কোণায় শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। আমি লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে দরজা লাগায় দেই। আমি ভালো করেই জানি এটা দেখে আরাভের প্রচন্ড রাগ উঠে গেছে। এই কয়েকমাসে ওকে অনেকটাই চিনে গেছি। কিন্তু আমার আবার ওকে রাগাইতে সেই লাগে। কিছু সময় পর আবার দরজা খুলে দেখি আরাভ ওখানেই বসে আছে। ওর মুখটা পুরাই লাল। একদম টমেটোর মতো হয়ে আছে। একবার ভাবলাম আবার দরজা লাগাবো। কিন্তু ও আরো রেগে যাবে। এই ভয়ে দরজা খুলে বের হলাম।
আরাভ- বের হলে কেনো ভিতরে যাও।
আমি- ওকে।
.
এই বলে আমি আবার বাথরুমে চলে গেলাম। দরজাটাও লাগিয়ে দিলাম।
প্রায় কিছু সময় পর আমি দরজা খুললাম আবার।
আরাভ- দরজা খুলছো কেন আবার লাগাও।
আমি- আর কতো সময় থাকবো?
আরাভ- পুরো দিন।
আমি- না।
আরাভ- ঢুকবা নাকি আমি যাবো ওখানে।
আমি- ওকে ওকে। এতো শাস্তি দূররররর।
আরাভ- যা বলছি করো।
আমি- কি করবো আমি ওখানে এতো?
আরাভ- গোসল করো। বসে থাকো। গোসলেই তো প্রথমে ঢুকছিলা।
আমি- তাই বলে বারবার গোসল করবো?
আরাভ- জ্বী।
আমি- ভাই গিজার নষ্ট ঠান্ডা পানি।
আরাভ- যা বলছি করবা কি না? (ভাই বলার কারণে রেগে গেছি)
আমি- ওকে ফাইন। তাহলে ঢুকলাম। খুলতে বললেও আমি আপনার জন্য দরজা খুলবো না। বুঝিয়েন। আমি অসুস্থ হলে বুঝবেন।
আরাভ- যাস্ট বলবা নাকি করবাও?
আমি- ইনসাল্ট। ওকে। আই হেট ইউ।
আরাভ- যাবা কি না? (রাগ উঠে গেলো আরো বেশি)
.
আমি আর কিছু না বলেই বাথরুমে ঢুকে গেলাম। আমারো রাগ আছে। অনেকটাই। আরাভকে আজ আমি এটার প্রমাণ দিবোই। আমি ঝর্ণা ছেড়ে দিলাম। ঠান্ডা পানি ছিলো প্রচুর ঠান্ডা লাগছিলো। কিন্তু আমি জেদ করে ওর নিচে দাড়িয়ে আছি। সময় যেতে লাগলো। আমি সহ্য করতে দাড়িয়ে ছিলাম। ধীরে ধীরে প্রচুর ঠান্ডা লাগতে লাগলো। আমি দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে আছি। এরকম করে প্রায় ঘন্টা খানেক দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আর পারছিলাম না। তাই ওখানেই বসে পড়লাম।
.
এদিকে আরাভ ঘরে বসে ওর অফিসের কাজগুলো করছিলো। ওর প্রচুর রাগ হয়ে আছে আমার প্রতি। রাগ কমাতে কাজ করছিলো। প্রায় কাজ শেষ করে দেখে ২ ঘন্টা ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে। ওর মনে একটু খটকা লাগলো আমি এখনো বের হচ্ছি না কেনো?
.
ওর বিশ্বাস ছিলো, আমার এতোটা সাহস নাই যে নিজের এতো ক্ষতি করতে পারবো। তবুও নিজের আকর্ষণটা দূর করতে ও দরজায় টোকা দিলো। আমি পানির শব্দের মাঝে আর এতো সময় ভিজার পরে উঠার শক্তি পাচ্ছিলাম না।
আরাভ- আনহা দরজা খুলো। হইছে যাও তোমার শাস্তি শেষ।
.
ভিতর থেকে জবাব দিতে পারছিলাম না।
আরাভ- হইছে আর নাটক করে বসে থাকতে হবে না।
.
হালকা শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।
আরাভ- ওই ঢং করছো কেন? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য মজা করছো। কি ভাবো আমি বুঝি না।
.
আমি অনেক কষ্টে তাকে বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি নাটক করছি না। কিন্তু অস্ফূত স্বর ছাড়া আর কিছু পারছিলাম না। আরাভ আমার কিছু অস্ফূত স্বর শুনতে পেলো। আরাভের ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেলো। যে আরাভের মুখ রাগে লাল হতো, সে এখন ভয়ে লাল হচ্ছে। আরাভ তাড়াতাড়ি দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করলো। চেষ্টা করে ভাঙ্গে ফেললো। আরাভ দেখে আমি প্রায় আধশোয়া অবস্থায় রয়েছি। চোখটা হালকা খুলছি আবার বন্ধ করে ফেলছি। আরাভকে দেখে আমি আমার হাতটা কিছুটা তুলে হাত বাড়ালাম। কিছুটা উঠানোর পরে পড়ে গেলো।
.
আরাভ তাড়াতাড়ি আমাকে কোলে তুলে নিলো। ও ঘরের দরজা আগেই লাগিয়ে রেখেছিলো। কারণ সবাই জানে আরাভ রাগলে দরজা লাগায়। এর আগেও অনেক কয়েকবারই লাগিয়েছিলো। তাই কেউ আর বেশি সন্দেহ করলো না। আরাভ আমাকে বিছানায় শুঁয়ে দিলো। আমার জ্ঞান ছিলো কিন্তু আমি কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না।
.
আরাভ আমাকে বাইরেও নিয়ে যাইতে পারছিলো না। কারণ বাইরে সবাই আছে।আরাভ আমার ভিজা কাপড় পাল্টে দিলো তাড়াতাড়ি। আরাভ তাড়াতাড়ি তার এক বন্ধুকে ফোন দিলো, ফ্যামিলি ডক্তরকে ফোন দিলো না কারণ সে জানে তাকে জানাইলে পুরো পরিবার জেনে যাবে।
আরাভ- দোস্ত তোর ভাবি অনেকক্ষণ ধরে পানিতে ভিজতেছিলো। এখন প্রায় অজ্ঞান অবস্থা। তুই একটু কষ্ট করে বাড়ি আয়। কাউকে বলিস না। চুপচাপ চলে আয়।
রাফি- ওকে আমি আসতেছি। কিভাবে হলো?
আরাভ- আয় তারপর বলতেছি।
রাফি- ওকে।
.
রাফির বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় তাড়াতাড়ি চলে আসলো। রাফি ভালো করে আমার চেকআপ করলো।
আরাভ- কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
রাফি- না ব্যাপার না। ঠান্ডায় অনেক ভিজেছে তাই এমন হইছে। কিন্তু এমন হলো কিভাবে?
আরাভ- আসলে রাগ করে আমি…. (সব বললো)
রাফি- তোর রাগ একটু কমা রে।
আরাভ- হুমম কমাতে হবে। আমি জানতাম নাকি ও নিজে জেদ করবে। আমি তো যাস্ট রাগে..
রাফি- থাম থাম। আমাকে বোঝাইতে হবে না। আমি জানি তোর রাগ কতো।
আরাভ- হুমমম।
রাফি- আমার কাজ আছে। শুন মেডিসিন গুলো দিচ্ছি খাইয়ে দিস। আর ভাবির কিন্তু জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে।
আরাভ- আচ্ছা আমি খাইয়ে দিবো।
রাফি- যতো পারিস গরম রাখার চেষ্টা করবি। যেহরতু তোরা কাপল আমার মনে হয় না প্রব্লেম হবে।
আরাভ- ওকে।
.
রাফি আসার সময় মা দেখেছিলো।
মা- কিরে বাবা হঠাৎ এলে যে?
রাফি- ওইতো অনেকদিন আরাভের সাথে দেখা হয় নি তো তাই এসেছিলাম।
মা- এখনি যাচ্ছো কেনো?
রাফি- জরুরী কাজ পড়ে গেছে আন্টি। যেতেই হবে।
মা- কিছু খেয়ে তো যাও।
রাফি- আবার আসবো তখন খাবো।
মা- খালি বলো আসো তো না।
রাফি- এবার আসবো।
মা- আচ্ছা।
.
রাফি যাওয়ার পর আরাভের মা আরাভের ঘরে গেলো। গিয়ে দেখে দরজা লাগা। আরাভের মা ভালো করেই বুঝেছে কেনো লাগা। তাই সে আরাভকে ডাক দিলো।
মা- আরাভ।
আরাভ- কি মা?
মা- বউমাকে বেশি বকিস না। রাগ করছিস বুঝি?
আরাভ- হুমম।
মা- ও কই?
আরাভ- বাথরুমে।
মা- ও খায় নি কিছু নাস্তা খাবে না? ওকে জিজ্ঞেস কর।
আরাভ- ঘরে খাবে। এতো লং জার্নি করে ওর মাথা ব্যাথা।
মা- ওহো। আচ্ছা তুই নিয়ে যা খাবার।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ তাড়াতাড়ি নাস্তা এনে পাশে রেখে আমার পাশে বসলো। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আরাভ আমার মাথায় হাত বুলালো। তারপর কপালে একটা ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিলো। রাতের দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
আমি তাকিয়ে দেখি আরাভ পাশেই চোখ বুজে হেলান দিয়ে হালকা শুয়ে আছে। উঠতে চেষ্টা করে বুঝলাম আমার হাত পা গুলো ব্যাথা করছে। সাধারণত জ্বর হলে আমার এমন হয়। কিছুক্ষণে কি কি হয়েছে মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে গেলো সব। আমার হাসি পেলো। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে গেলেও কিছুটা ঘোরে ছিলাম। কারণ আমি জানি আরাভের চিন্তায় বারোটা বাজে গেছিলো নিশ্চয়ই।
.
আমি উঠে বসতেই আরাভের হালকা ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কিছু সময় আরাভ আর আমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কেউ কিছু বলছিলাম না। হঠাৎ করে আরাভ আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি- কিচ্চে রাগ কমছে?
আরাভ- চুপ করো।
আমি- ওকে আমি চুপই আছি।
আরাভ- কে বলছে এতক্ষণ পানির নিচে থাকতে?
আমি- আপনিই তো বললেন।
আরাভ- তাই বলে এতো সময়?
আমি- আমার কি দোষ?
আরাভ- জানো আমি কতো ভয় পাইছিলাম।
আমি- হিহি।
আরাভ- হাসবা না। দাড়াও আমি খাইয়ে দেই। ওষুধও আছে খেয়ে নেও।
আমি- না তিতা।
আরাভ- খাবা কি না?
আমি- পঁচা।
আরাভ- মুখ খোলো।
আমি- আপনি খান।
আরাভ- চুপচাপ খাবা কি না? (কিছুটা জোড়ে)
আমি- খাচ্ছি খাচ্ছি। খালি রাগ দেখায়।
আরাভ- খাও।
.
ওষুধ খেয়ে নিলাম। রাতে ঘুমানোর আগে আরাভের হেল্প নিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো না। রাত বাড়তে শুরু করছিলো সেই সাথে আমার মনে হচ্ছিলো আমি কোনো এক ঘোরের মাঝে এগিয়ে যাচ্ছি। আরাভ আমার পাশেই শুয়েছিলো। আমার খুব ঠান্ডা লাগছিলো। যদিও গায়ে লেপ ছিলো। আমি আরাভের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার স্পর্শ ওর গায়ে পড়তেই ও বুঝে গেলো আমার জ্বর বেড়ে গেছে। ও তাড়াতাড়ি আমার মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।
.
আমি- আরাভ তুমি একদম ভালোনা।
আরাভ শকড হয়ে গেলো। কারণ ওকে আমি কখনো তুমি বলি নি। কিন্তু আমি যে ঘোরের মধ্যে কথা বলছি ও ভালো করেই বুঝে গেলো। আমার কথা গুলো একে ওপরের সাথে বেঁধে বেঁধে আসছিলো।
আরাভ- আমি কি করছি?
আমি- তুমি খালি বকো আমাকে একটুও ভালো না।
আরাভ- তুমি আমাকে রাগাও কেনো?
.
আমি জবাব দিলাম না। আরাভ আবার জিজ্ঞেস করলো…
আরাভ- বলো।
আমি- তোমাজে রাগলে কিউট লাগে ইচ্ছা করে কিসসি দেই।
আরাভ- তাই?
আমি- কিন্তু তুমি ভালো না।
আরাভ- জানি।
আমি- আয়াভ আসলে দেখিও আমি আর ও তোমাকে মারবো অনেক।
আরাভ- আয়াভ কে?
আমি- আমাদের বাবু।
আরাভ- নামও ঠিক?
আমি- হিহি হুমম কিন্তু আমি নাম বলবো না।
আরাভ- আচ্ছা।
আমি- আমার ঠান্ডা লাগছে। একটু জড়িয়ে ধরো তো।
আরাভ- আসো।
.
আরাভ আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি যে ঘোরে কি বলছি আমার মাথায় ছিলো না। আরাভের এবার খুব হাসি পাচ্ছিলো। আমার এমন কথা শুনে। সকালে….
আমার জ্বরের পরিমাণ কিছুটা কম লাগছিলো।
আরাভ- গুড মর্নিং ম্যাডাম।
আমি- হুম। আমার কি হইছে?
আরাভ- জানো না?
আমি- ও জ্বর মনে হয়।
আরাভ- হুমম। জ্বরের ঘোরে কাল কি সব করলে।
আমি- কি আমি কি করলাম?
আরাভ- আমার তো লজ্জা করছে বলতে।
আমি- কি আমি উল্টা পাল্টা কিছু করছি?
আরাভ- হুমম।
আমি- সত্যি?
আরাভ- হুমমম।
আমি- কি করছি?
আরাভ- আমার কাছে আসলা তারপর..
আমি- তারপর কি?
আরাভ- লজ্জা লাগে।
আমি- এ্যা এ্যা এ্যা (কাঁদতে লাগলাম)
আরাভ- আরে কেঁদো না। কিছু করো নি খালি জড়িয়ে ধরছো। আর কিছু উল্টা পাল্টা বকছো।
আমি- সত্যি?
আরাভ- হুমমম।
.
আমি উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তাকিয়ে দেখি আমার গায়ের কাপড়টা ভিন্ন।
আমি- কাপড় কে পাল্টাইছে?
আরাভ- আমি কেনো?
আমি- কিহ?
আরাভ- হুম তো কি?
আমি- আপনি আমার সব দেখছেন?
আরাভ- হুমমম।
আমি- আমার ইজ্জত গেলো গা আম্মুউউউউ।
আরাভ- আমি তোমার স্বামী।
আমি- ওহো ভুলে গেছিলাম। তাহলে সমস্যা নাই।
আরাভ- কিন্তু আমি সব দেখছি।
আমি- ইইইইইই
.
আমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে পালালাম লজ্জায়।
.
চলবে….