Angry_Husband
Season_2___Part_9
Written by Avantika Anha
.
আরাভ দেখলো আমি ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে গাছের ডালে আটকে থাকা ঘুড়িটিকে নামানোর চেষ্টা করছি আর পাশের বাড়িতে থাকা বাচ্চাগুলো আমাকে তাড়াতাড়ি ঘুড়িটিকে নামিয়ে আনতে বলছে। কিছু সময় চেষ্টার পর আমি ঘুড়িটিকে নামিয়ে আনি ঠিকই কিন্তু হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে যায়। আর ভয় পেয়ে চিল্লাতে শুরু করি।।
.
এই অবস্থা দেখে আরাভ এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি ভিষন লজ্জা লাগতাছে।ওমা আরাভ তো কোলে তুলে নিয়েছে এবার কি তাহলে ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাকি।
ভয় লাগতাছে…. ধুররর না আর এই বিপদের মধ্যে থাকা যাবেনা।তবে খুব একটা খারাপ ও লাগতাছেনা। ওর জন্য তো মরতেও পারি…! ইয়ে মানে আমি মরে গেলে আবার ওর বাচ্চার আম্মু কে হবে? তখন আবার অন্যএকজনকে বিয়ে করে নিবে। নাহ এইটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
আনহা লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে পড়ে।
আরাভের দিকে তাকায়,
.
– ওই বজ্জাত মেয়ে ভয় পাও তাহলে ওখানে কেনো গেছো?(আরাভ)
– কেনো গেছি…..! হুম কেনো যানি গেছি? ওহ মনে পড়ছে ওইযে বাচ্চা ওদের জন্যই তো গেলাম।(আমি)
– রাখো তোমার বাচ্চা, নিজেই তো একটা বাচ্চা আবার আরেক বাচ্চাকে হেল্প করতে গেছে।(আরাভ)
.
আমার সেই লেভেলের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমিতো সাহায্য করছি তার জন্যও ঝাড়বে আমাকে। হুহ এইযে আবার রাগ করলাম দেখি এবার কিভাবে রাগ ভাঙায় হুহ।
.
রাগ করে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে আসলাম।
আরাভ ও বেশ রেগে আছে তবে আজকে আমি বেশি রাগগ করছি। কি ভাবে ও নিজেকে হিরো? ধুরো হিরো কেনো হইতে যাইবো ও তো ভিলেন। ডেভিল……
,
মন খারাপ আর রাগের একটা কম্বো মুড নিয়ে বসি আছি।
তখন আরাভ রুমে আসলো। বিছানায় বসে বললো,
– রান্না বান্না কিছু হইছে?(আরাভ)
– আমিতো কারো মতো এতো পচা না যে না খাইয়ে রাখবো।(আমি)
– হইছে এতো ভালো হইতে হবেনা খাবার দাও আমার ক্ষুদা লাগছে।(আরাভ)
– পারবোনা।পারলে নিজে খেয়ে নেন। আমি অনেক রাগ করছি।(আমি)
– তুমি যাবা কি না??(আরাভ)
– যাবোনা যাবোনা যাবোনা।আর খাবোওনা কিছু দেখি আপনি কি করেন।(আমি)
– কি করবো দেখবা।(আরাভ)
– হ দেখবো আপনি কি করতে পারেন।(আমি)
– ওকে দেখো কি করি।(আরাভ)
.
কথাটা বলেই আরাভ আমাকে কোলে তুলে নিলো তারপর বিছানা থেকে আমার ওড়নাটা হাতে নিলো।
তারপর আমাকে সহ খাবার টেবিল এ চলে আসলো।
.
তারপর জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
আমি ছুটার চেষ্টা করতাছি কিন্তু বদমাইশটারর শক্তি অনেক বেশি তাই ওর সাথে পারতাছি না।
আরাভ ওড়নাটা নিয়ে আমার দিকে তাকালো।
তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত বেধে ফেললো চেয়ারের সাথে।
.
তারপর একপ্লেট ভাত নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানের মতো একটা হাসি দিলো। ভয়ে অন্তরটা কেপে উঠলো। কিন্তু সেটা বড় কথা না বড় কথা হচ্ছে যে ও এখন কি করে সেটাই দেখার।
আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,
– ওই ছাড়েন আমাকে।(আমি)
– কি যানি বলছিলা আমি যাবোনা খাবোনা…ব্লা ব্লা ব্লা… তুমি আসছো এবার খাবাও।(আরাভ)
– আমি খাবোনা।(আমি)
– দেখাই যাক।(আরাভ)
.
আরাভ প্লেটে ভাত আর তরকারি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো।তারপর জোর করে খাইয়ে দিলো। মাথায় বুদ্ধি আসছে আমার হাত বেধে রাখছে কিন্তু মুভ বাধে নাইই ওরে খাইছি আজকে বজ্জাত পোলা আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করো। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
পরেরবার আরাভ আমার মুভে ভাত তুলে দিতেই দিলাম এক কামড়। আরাভ চিৎকার করে উঠলো।
.
– ওই তুমি কি করলা?(আরাভ)
– আপনি কি অন্ধ চোখে দেখেন না কি করছি।(আমি)
– আমি ভালো মতো খাইয়ে দিতাছিলাম আর তুমি হাতে কামড় দিলা?(আরাভ)
– হুহ তো কি করবো আপনি আমার হাত কেনো বাধছেন?বললেই পারেন খাইয়ে দিবেন এমনিতেই খেতাম।(আমি)
.
আরাভ কিছু না বলে হাতের বাধন খুলে দিয়ে না খেয়েই চলে গেলো। রাগ করলো নাকি? করলে করুক তাতে আমার কি আমিও তো রেগেই আছি।
……………………………………………………………………………….
বিকেল হয়ে গেলো এখনো আরাভ আসছেনা কেনো??
ফোনটাও তো বন্ধ। কেমন যানি লাগতাছে খুব ঝগড়া করতে ইচ্ছা করতাছে কোথায় উনি। রাগ করে আবার কোথাও চলে যায়নি তো?
উফফ ভালোলাগতাছে না। ফোনটা তো খোলা রাখলেই পারতো। কেনো যানি খুব টেনশন হচ্ছে উনার জন্য।
রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেলো।
সন্ধা হয়ে গেলো এখনো আসতাছে না কেনো??
আমার তো ভয় লাগতাছে —- ভুউউত আসবে কি করবো।
ভয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনলামম। দৌড়ে গিয়ে দড়জা খুলে দিতেই আরাভকে দেখে প্রান ফিরে পেলাম। সব ভয় গায়েব হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়লো আমিতো রাগ করছি।
.
তাই নিজের অভিনয়ে ফিরলাম। ইয়ে মানে অভিনয় না রাগি মুডে আরকি। আমি রুমে চলে আসলাম। এসে বিছানায় বসলাম।
আরাভ আমার পাশে এসে বসলো,
– খাইছো??(আরাভ)
– না।(আমি)
– কেনো??(আরাভ)
– খাইনি এমনি আমার ইচ্ছা আপনার কি?(আমি)
– খুব বেশি রাগ করছো নাকি?(আরাভ)
– হু।
– রাগ কি ভাঙবে না? কোনো ঘুষ অথবা অন্যকিছু দিলে?(আরাভ)
– কোনো কিছুতেই ভাঙবে না আমি প্রচন্ড রেগে আছি।(আমি)
– তাহলে আর কি করার আইসক্রিম আর কিটক্যাট গুলা আমি একা একাই খাই। রাগ যখন ভাঙবেই না।(আরাভ)
.
কিটক্যাট আর আইসক্রিমের কথা শুনতেই লোভে পড়ে গেলাম।
আরাভ কিটক্যাট বের করে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আর সহ্য হচ্ছেনা।
– ওই মিয়া আমারটা দেন।(আমি)
– কেনো? আপনি তো খাবেনন না?(আরাভ)
– খাবোনা বলেই খাবোনা?(আমি)
.
বলেই আইসক্রিম আর কিটক্যাট কেড়ে নিলাম।
কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলাম ওর হাতে ব্যানে্ডজ করা।
– ওই হাতে কি হইছে?(আমি)
– ইদুর এ কামড় দিয়া কেটে ফেলছে।(আরাভ)
– কিহ ইদুর কে??(আমি)
– কেও না।(আরাভ)
.
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আরাভ গিয়ে সুয়ে পড়লো।
আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়লাম। শীতের রাত কম্বল সহজে গরম হয়না। তবুও আরাভের পাশে শুয়ে খুব ভালো লাগতাছিলো। এভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যে কি রোমান্টিক একটা স্বপ্ন দেখলাম। আমি আরাভকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। অবশ্য সত্তিই ঘুমের ঘোরে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাইগেছি। কিন্তু সালার লোকটা এতোই বাজে যে স্বপ্নের মধ্যেও ঝগড়া শুরু করে দিছে।
ধুরররর আর ভালোলাগেনা।
……………………………………………………………………………
এভাবে তিনদিন কেটে গেলো তিনদিন। ঝগড়া আর ঝগড়া তবে ঝগড়া করতে ভালোই লাগে।
আজ ভার্সিটি যাবো।
আরাভ নিচে অপেক্ষা করতাছে কিন্তু আমার দেরি হচ্ছে।
দুই দুই মিনিট করে ২০ মিনিট সময় খেয়ে ফেলছি।
এভাবে আরো কিছুক্ষন চলে গেলো। আমি রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আরাভ নাই।
তার মানে চলে গেছে।
ওদিকে আরাভ অপেক্ষা করতে করতে লেট হয়ে যাচ্ছে তাই আনহাকে রেখেই চলে আসছে। ভার্সিটির মেয়েগুলা আড়চোভে দেখছে আরাভকে। অনেক হ্যান্ডসাম তবে ঝগড়াটে আর বদরাগি। কিন্তু তারপরও মেয়েগুলা কেনো যে ওর ওপর ক্রাশ খায় আমি বুঝিনা।
.
কি আর করার একাই ভার্সিটিতে আসতে হলো।
এমনিতেই রেগে আছি উনি রেখে কেনো আসলো।
তারওপর রাগটা আরো বেড়ে গেলো যখন দেখলাম আরাভ মেয়েগুলার সাথে হেসে হেসে কথা বলতাছে।
এমন ভাবে হাসতাছে মনে হয় প্রেমিকা।
অথচ আমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যাবহার করে।
দাড়াও দেখাচ্ছি মজা। আমি দৌড়ে গেলামম আরাভের কাছে। আজকে ঘটনা একটা ঘটাবোই।
রাইসা- কিরে আনহা জিজু তো সেই।
আমি- হুম তো।
রাইসা- তোর আগে আমি পেলে তো সিওর বিয়া করতাম।
আমি- হুম স্বভাব বুঝি এমন তোর?
.
রাইসা জবাব দিলো না মুখ কালো করে চলে গেলো।
.
আমি- শুনুন চলেন বাড়ি আমার কাজ আছে তাড়াতাড়ি চলুন।
আরাভ- আচ্ছা চলো।
.
আমি আর আরাভ একসাথে বাড়ির পথে যেতে লাগলাম। আরাভ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? কিন্তু আমি জবাব দিলাম না।
.
বাড়িতে…..
মা ও আভা চলে এসেছে।
আমি- মা কি হয়েছিলো মামার ?
মা- কিছু না মা। এমনি ডেকেছিলো।
আমি- আপনি যে বলেছিলেন অসুস্থ।
মা- না রে। আরাভ ভুল শুনেছিলো।
আমি- ভুল না কি আমি জানি। (বিড়বিড় করে)
মা- কিছু বললি?
আমি- না। বসুন আমি খাবার আনি।
মা- আচ্ছা।
.
সেদিন রাতে….
মা- তোরা তো ফ্রি আছিস। কোথাও থেকে ঘুরে আয়।
আমি- না থাক।
মা- তোদের বয়সে বিয়ের এতোদিনে আমি ৩ জায়গা ঘুরে এসেছি আরাভের আব্বুর সাথে।
আমি- হিহি তাহলে কাহিনী একটু আমাদেরও শুনান।
আরাভ- আনহা চুপ।
মা- যাই বল কই ঘুরতে যাবি বিদেশে নাকি?
আরাভ- যাওয়া যায়।
আমি- আমার পাসপোর্ট নাই।
আরাভ- সাব্বাস। এতোদিনেও এটা জানাও নাই।
আমি- আমার কি দোষ?
আরাভ- হুম বুঝি। বাদ দেও মা প্লান।
মা- বাদ দিবো কেনো দেশে কি ঘুরতে পারবি না? কক্সবাজার বা বান্দরবান যা।
আরাভ- হুম যাওয়া যায়। কই যাবো তুমি ই বলো।
মা- পাহাড়েই যা।
আরাভ- হুমমম শীতে পাহাড়ে কুলফি।
আমি- আমি পাহাড়েই যাবো।
আরাভ- ওকে ফাইন যাবো নে।
.
প্লান অনুযায়ী আমরা কিছুদিন পর বান্দরবানের ওদিক ঘুরতে গেলাম। আমার প্রথম বান্দরবান ঘুরতে আসা। খুব মজা লাগছিলো। আমি ভাবছিলাম এই পরিবেশে হয়তো ওই রাগী মানব আর রাগ করবে না।
.
রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমি। আরাভ ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের কাপড় খুঁজতে গিয়ে দেখে ৩টা শার্ট, একটা প্যান্ট আর একটা জ্যাকেট ছাড়া ওর কিছু নাই। চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকলো…
আরাভ- আনহা
আমি- কি?
আরাভ- আমার বাকী কাপড় কই?
আমি- আমি কেমনে কমু ছিলো তো।
আরাভ- নীল ব্যাগ কই?
আমি- আভার ঘরে।
আরাভ- মানে?
আমি- আপনিই তো বললেন নীলটা আভার ঘরে দিতে।
আরাভ- আমি নীলটা না লাল ব্যাগটা আভার ঘরে দিতে বলেছিলাম।
আমি- ইয়ে মানে। তাহলে ভুল হয়ে গেছে।
আরাভ- আমি পড়বো কি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আমি- শাড়ি।
আরাভ- কিহ?
আমি- না মানে আমার শাড়ি আনি নি মে বি। আপনি শপিং করে নেন।
আরাভ- ওটাই করতে হবে। তোমার মতো বউ যার থাকবে তার কপাল পোঁড়া।
আমি- ইনসাল্ট করেন?
আরাভ- না তারিফ করি।
আমি- হুহ বুঝি।
আরাভ- যাই হোক। ঠান্ডার কাপড় পড়ে নেও।
আমি- আরে লাগবে না।
আরাভ- যা বললাম করো।
.
আরাভ ফ্রেড হয়ে এলো। তারপর আমাকে নিয়ে কয়েকটা জিনিস কিনে নিলো। বিকেলের পত আমরা হাটতে বের হলাম।
আমি- ওই ঠান্ডা খুব হোটেল চলেন।
আরাভ- বললাম ঠান্ডার কাপড় বেশি পড়ো।
আমি- আমি কি জানতাম এই টাইমে এতো ঠান্ডা এখানে।
আরাভ- ভালো ভালো। এদিক শপও নাই যে চাদর কিনে দিবো। হোটেলই যেতে হবে।
আমি- না আরেকটু হাঁটি তারপর যাই।
আরাভ- না।
আমি- যাবো যাবো যাবো।
আরাভ- ইচ্ছা। পরে মজা বুইঝো।
.
কিছু সময় হেঁটে আমি আর ঠান্ডা সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই আমরা হোটেল ফিরে গেলাম। হোটেলে আমি কাঁপতে কাঁপতে শেষ।
আরাভ- হাহা আরো কাঁপো। কথা তো শুনো না।
আমি- চ..চুপ। লেপ কোনে। আমি ঢুকুম।
আরাভ- নাও এটা গায়ে দেও।
.
আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে গেলাম। তারপর বসে গেম খেলতে লাগলাম। কিছু সময় পর আরাভও বিছানায় এলো।
আমি- ওই ওই সরুন। আপনার হাত পা ঠান্ডা। আমি কতো কষ্টে গরম করছি।
আরাভ- কি বললা?
আমি- এটা ছাড়বো না। আপনি অন্য লেপ নেন।
আরাভ- আমি এটাই নিবো।
আমি- না না।
.
আমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। ও আমার গা ঘেসে বসলো। ওর প্রতি রাগী লুক নিয়া তাকালাম। কিন্তু ওয় শয়তানি হাসি দিচ্ছিলো। আজকাল মনে হচ্ছে এংরি বর ফাজিল হচ্ছে । কিন্তু কেমনে আর কিনু? রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
……
চলবে?