Angry_Husband
Season_2___Part_8
Written by Avantika Anha
রাতে খাবার টেবিলে আরাভ আসলো না। হয়তো রাগ নিয়ে বসে আছে। আমি ভালো করেই জানি রেগে আছে।তাতে আমার কি? ও আমাকে মারলো কেনো? হুহ। এসবই মাথায় চলছিলো।
তবুও আমি আভার হাত দিয়ে আরাভের জন্য রুমে খাবার পাঠালাম। কিছু সময় পর আভা এসে বললো, আরাভ নাকি খাবার ফেলে দিয়েছে। খাবে না বলে। আজব ব্যাপার রাগ করছি আমি। রাগ এর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে আরাভ। মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ এতো পরিমাণ রাগী কিভাবে হতে পারে।
মা- বউমা তুমি যাবে নাকি?
আমি- বকে যদি কি হবে?
মা- তোরা পারিসও বটে। আচ্ছা বাদ দে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
.
আরাভের মা ওর জন্য খাবার নিয়ে গেলো। আরাভ আর যাই হোক ওর মাকে না বলতে পারে না। আমি এদিকে সেই খুশি। কারণ ওয় আমাকে এখন বকতেও পারবে না। বাজে পোলা, লুইচ্চা কোনেকার। হুহ। বেয়াদপ।
.
এই সব ভেবে আমি রাতে ঘুমাতে চলে গেলাম। মাঝে মাঝে এভাবে রুম চেঞ্জ ভালোই লাগে। আর আমি তো রাগে আছি। যাক না ওই শাকচুন্নির কাছে।
.
এদিকে আরাভের অবস্থা খারাপ। ওর পুরো রুম অনেক ফাঁকা লাগছে। আরাভের যে আনহার অভ্যাস হয়ে গেছে তা ও ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। ওর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছিলো তার যে, আনহাকে তুলে নিয়ে আসুক। কিন্তু এটা করবে না সে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে আরাভ ভালো করেই। ওর কিছুতেই ঘুম আসছে না। রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। ওর মতে বর্তমানে আনহা ভুল। এরকম বিহেভ করা ভুল। কিছু সময় পর মনে হতে লাগলো ওর যে, “যেকোনো মেয়ে তার স্বামীর সাথে অন্য মেয়েকে ওভাবে দেখলে রাগ করবেই। আনহাই বা ভিন্ন হবে কেনো?” “এটা তো জ্বেলেসির অংশ। তাহলে কি ও আমাকে ভালোবেসে ফেলছে? প্রশ্নের উত্তর তো শুধু ওই দিতে পারবে।” আরাভ ওর রাগ কমায় আমার নম্বরে কল দিলো।
.
এদিকে আমি মায়ের পরম স্নেহের আবেশে ঘুমের চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ ফোন আসলো। উঠে দেখি আরাভ আমি কাটতে লাগলাম। আরাভ বারবার কল দিতে লাগলো আমি বারবার কেটে দিলাম। হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো…..
আরাভ- room a aso now.
আমি- jabo na Ami.
আরাভ- asba n now. kono ktha sunte chacci na. 5 minute er majhe Ami tmk room a chai.
আমি- Ami ghumacci tata .
আরাভ- asba .
.
আমি ঘুমে মনোযোগ দিলাম। গেলাম না ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। মায়ের সামনে এভাবে আনহাকে তুলে আনতে পারবে না। এই ভেবে আরাভ যাচ্ছে না। আরাভের রাগের পরিমাণ চরমে উঠে গেলো। সারারাত আর আরাভ ঘুমালো না শুধুই রাগের আবেশে।
.
সকাল ১০ টার ওদিক মায়ের ফোনে কল আসে.. তাকে আর আভাকে নাকি তাদের মামার বাড়ি যেতে হবে কোনো এক দরকারে। কে জানি অসুস্থ। তাই সেদিন তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে তারা চলে গেলো। আমি এদিকে ভয়ে শেষ। কারণ এমনি আরাভের উপর রেগে আছি আমি। এই চক্করে আরাভের রাগও বাড়ায় দিছি। মা যখন যাচ্ছিলো আমি ভেজা বিড়ালের মতো হয়ে আছি। একবার আরাভের দিকে তাকালাম ওর মুখ লাল রাগে। প্লাস মুখে শয়তানি লুক দেখলাম। এটা খেয়া আমার ভয়ে অবস্থা শেষ।
.
মা যাওয়ার সময়…
মা- আনহা তুই নিজের আর আরাভের খেয়াল রাখিস।
আমি- মা আমারেও নিয়া যাও। ওয় আমাকে ছাড়বে না।
মা- ওই আরাভ তুই আমার বউমাকে একটুও বকবি না। আর ওর রাগ ভাঙ্গাবি।
আরাভ- হুম মা। তুমি একদম চিন্তা করো না। (আমার দিকে তাকায় একবার চোখ মারলো।)
আমি- মা মা আমি যাবো। ৫ মিনিট দাড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।
মা- তোর নাকি কি কাজ আছে পরশু ভার্সিটিতে। এই জন্যই তো নিলাম না।
আমি- না না আমি যাবো। ফেল করি তাও আমি থাকবো না এখন একা।
মা- আরে
আমি- ৫ মিনিট দাড়ান।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসলাম ৫ মিনিট পরে। এসে দেখি মা নাই। আমি দেখি আরাভ হাসছে। শয়তানি হাসি।
আমি- মা কই?
আরাভ- চলে গেছে।
আমি- আমিও যাবো।
আরাভ- ম্যাডাম তা তো আর হচ্ছে না।
আমি- ভাই মাফ করেন আর আমি কাউকে ঢাক্কা দিবো না। ওই শাকচুন্নিকে আপনি যা ইচ্ছা করেন। তাও কিছু বলবো না।
আরাভ- (জবাব দিলো না)
.
ওর দিকে তাকায় দেখি ওয় আরো বেশি রেগে গেছে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আমি ভয়ে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।
আমি- সরি আর কিছু বলবো না। এই দেখেন কানও ধরছি আমি। (কান ধরে)
আরাভ কিছু না বলে বাড়ির দরজা লাগিয়ে দিলো। এখন বাড়িতে আমি আর আরাভ ছাড়া কেউ নাই।
আমি- ওই কিছু তো বলেন।
আরাভ- আর কিছু বলার আছে তোমার ?
আমি- না। আমি আম্মুর কাছে যাবো। যাই আচ্ছা রেডিই আছি তো।
আরাভ- ওহ ওকে।
আমি- আচ্ছা আমি গেলাম।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি কিছু জামা নিয়ে বাড়ি যেতে বের হচ্ছিলাম। কিন্তু বাইরের দরজায় দেখি তালা। বুঝছি আজ আমার নিস্থার নাই। আরাভের রুমে গেলাম পা টিপে টিপে।
আরাভ- কি যাবা না?
আমি- কি চান আপনি। এরাম কেন? আমি বাড়ি যাম।
আরাভ- তো যাও।
আমি- চাবি দেন।
আরাভ- ওকে কান ধরে ৫০ বার উঠবস করো।
আমি- তাহলে যেতে দিবেন?
আরাভ- হুম।
আমি- একটু কমানো যায় না?
আরাভ- যাবা কি না?
আমি- যাবো যাবো।
আরাভ- স্টার্ট।
.
পুরো ৫০ বার উঠবস করলাম।
আমি- এবার যেতে দেন।
আরাভ- চলো।
আমি- আপনিও যাবেন?
আরাভ- হুম।
আমি- ওকে রেখে আসিয়েন।
আরাভ- হুম।
.
বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি চলছে। হঠাৎ মাথায় এলো আমি না থাকলে আরাভ খাবে কি?
আমি- গাড়ি ঘুরান ।
আরাভ- কেনো?
আমি- বাড়ি যাবো না।
আরাভ- কিন্তু কেনো?
আমি- না থাকলে খাবেন কি। যতই আপনি মুখপোড়া হনুমান আর রাগী বিড়াল হন। আমার একটা দায়িত্ব আছে না। আমি তো ভালো মেয়ে।
.
কথাটা বলে আরাভের দিকে তাকালাম। দেখলাম ওয় আবার রেগে গেছে।
আমি- না থাক রাগতেছেন কেন? আমি তো এমনি বলছি। আপনি অনেক ভালো। এসব তো আমি নিজে।
.
আরাভ গাড়ি চালায় যাচ্ছিলো কোনো কথা বলে না। কিছু সময় পর দেখি ওয় আমাকে অন্য রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ওয় কি আমাকে মেরে ফেলবে? এইসব ভাবতেছি। আর ভয়ে শেষ হচ্ছি। আচ্ছা রাগ তো আমি করছি। থাপ্পর তো ওয় মারছে। তাহলে আমি ওর কথা শুনতেছি কেন?
আমি- ওই মি. আরাভ। রাগ তো মে বি আমি করছি। তাহলে আপনি লাল লাল টমেটো হচ্ছেন কেনো? (মজা করার জন্য)
আরাভ- চুপ।
আমি- আচ্ছা একটা জোক শুনাই হুম,
“একটা হুতুম পেচা ছিলো। দেখতে লাল। কারণ সে রাগলেই লাল লাল হতো। তাই ওর নাম দিলো লাল টমেটো।
.
একদিন সে পা পিচলে পড়ে গেলো। সবাই বলতে লাগলো। লাল টমেটো পড়ে ভর্তা হলো। তারপর থেকে আপরা ভর্তা খাই। মজার না। হিহি।”
.
আমি জোক টি বলে আরাভের দিকে তাকালাম। মনে হয় না সে বিশেষ খুশি হইছে। বরং রেগে গেছে। কিন্তু রাগলো কেনো? আমি তো আর কিছু বললাম না।
.
“পাঠকরা কি জানেন? আরাভ কেনো রাগলো?”
.
হঠাৎ আরাভ গাড়ি থামায় দিলো। খুন করবে নাকি?
আরাভ- বের হও গাড়ি থেকে।
আমি- প্লিজ আমাকে মারিয়েন না। কেবল তো বিয়ে হলো। এখনো তো বাচ্চাও হয় নাই। দেখেন আমি আপনাকে কতোদিন রান্না করে খাওয়ালাম। আরও খাওয়াবো নে। তাও মারে ফেলিয়েন না। দেখেন আমি মরলে আপনার বাচ্চাও মা হারা হবে। আপনার ছোট বাচ্চাদের মা কে মাইরেন না।
আরাভ- কি বলছো এসব?
আমি- মারিয়েন না প্লিজ।
আরাভ- ১-৩ বলবো না বের হলে ফল খারাপ হবে।
.
আমি চুপচাপ বের হলাম। জায়গাটা অন্ধকার। দেখা যাচ্ছে না কিছু। হঠাৎ আরাভ একটা মোমবাতি জ্বালালো। মোমের আলোয় দেখলাম আরাভের হাতে চাকু। তার মানে ও এটা দিয়ে আমাকে মারবে।
.
আমি আর নাই।
আরাভ আরও কিছু মোম জ্বালিয়ে দেখে আমি পাশে নাই।
.
এদিকে আমি দৌড়াচ্ছি। বাঁচলেই ভালো। হঠাৎ কে জানি হাত ধরে ফেললো। ঘুরে দেখি আরাভ।
আমি- মারিয়েন না। দেখেন মারলে বিষ খাওয়ান। চাকু দিয়ে কেনো মারবেন। আপনি না ভালো ছেলে। খুনি হইয়েন না।
আরাভ- তুমি কি পাগল? চলো ওখানে।
আমি- না না না আমি যাবো না।
.
আরাভ কিছু বলার সুযোগ দিলো না আমাকে। কোলে তুলে ওখানে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখি কেক। কিন্তু কেনো আজ কি তবে আমার জন্মদিন?
আমি- কেক?
আরাভ- জ্বী।
আমি- ওয়াও আমার আজকে জন্মদিন। মনেই ছিলো না। থেংকু গিফ্ট কই?
আরাভ- এটা অ্যানেভার্সেরি কেক আমাদের।
আমি- ওওওওও আমাদের ১ বছর হয়ে গেলো। এটাও জানতাম না। মনেই ছিলো না।
আরাভ- ৭মাস হলো আজ আমাদের বিয়ের।
আমি- কি ৭ মাস। এতোদিন ধরে আমি আপনাকে সহ্য করছি।
আরাভ- বাড়ি চলো।
আমি- সরি মজা করলাম। চলেন কেক কাটি।
.
কেক কাটা শেষে ওখানকার পরিবেশ উপোভোগ করে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু উনি এতো রাগী হওয়া সত্ত্বেও এরকম রোমান্টিক জানতামও না। ওমা আমি যে রাগ করছি।
.
রাতে….
আমি মায়ের রুমে যাচ্ছিলাম। দেখি আরাভ টিভি দেখছে।
আমি- আমি ঘুমোতে গেলাম।
আরাভ- সব জিনিস রুমে আনো।
আমি- না আমি রেগে আছি।
আরাভ- ঢং করবা না।
আমি- না না না।
আরাভ- আনহা আজ রাতটা অন্ধকার খুব তাই না।
আমি- কি
আরাভ- হুম। ভুত আসতে পারে তাই না? দেখো শব্দ পাচ্ছো?
আমি- আম্মুউউউউ। (বলে তাড়াতাড়ি আরাভের পাশে বসে পড়লাম)
আরাভ- কই ঘুমাবা?
আমি- আপনার পাশে।
আরাভ- না না থাক।
আমি- প্লিজ আমার ভয় লাগছে।
আরাভ- কেনো?
আমি- প্লিজ।
আরাভ- যাও। তোমার সব জিনিস ঘরে আনো।
আমি- আপনিও চলেন। আমার ভয় করছে।
.
অতঃপর আরাভ আনহার সব জিনিস রুমে নিয়ে আসলো। আজ প্রথম হয়তো আরাভ নিজের রাগকে কন্ট্রোল করছে। শুধু আনহার জন্য এই ভেবে ওর মুখে হাসি ফুটলো। রাতে আরাভের আরাম লাগছে। কারণ ১ রাত পর আনহা ওর পাশে। আরাভ যে পুরোপুরি আনহার মায়ায় পড়েছে। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে।
.
পরেরদিন….
আরাভ উঠে দেখে আনহা পাশে নাই। হঠাৎ ছাদে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ এলো। আরাভ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলো। তারপর যা দেখলো চোখ উপরে….
.
চলবে……