Angry_Husband
Season_2___Part_6
Written by Avantika Anha
কিন্তু প্রশ্ন, “আরাভ যে বললো আমাদের ৩ বার দেখা হইছে। কিন্তু কেমনে? আমার তো মনেই নাই। দুইবারের কথা নাহয় মনে আছে ৩য় বার কখন? আরাভকে জিজ্ঞেস করতে হবে।” এই কথা গুলো মাথায় ঘুরতেছিলো। আমি চুপচাপ ছাদে চলে গেলাম। বোর লাগছিলো। তাই চুপচাপ পা টিপে টিপে রুমে গেলাম। দেখি ঘরে আরাভ নাই। আমি চুপচাপ আমার গিটারটা বের করে নিলাম। নিয়ে আবার দৌড় দিতে গেলাম এমন সময় আরাভের গলা পেলাম।
আরাভ- কই যাও?
আমি- জ…জ্বী ক…কোথাও ন..ন….না তো। (ভয়ে)
আরাভ- তোতলাচ্ছো কেন?
আমি- ক… কইইইই?
আরাভ- এই যে।
আমি- আপনার ভয়ে।
.
এই বলে আমি ভয়ে দৌড় দিলাম। কারণ আমি জানি ওয় আবার Angry হতে পারে। আমি ছাদে চলে গেলাম। ছোট বেলায় গান ভালো লাগতো। এমনি এমনিই কিছু গান গাওয়া শিখছি। সেই সাথে গিটার বাজানোও শিখে নিছি। তাই শখ করে গিটার বাজালাম…..
.
“ভালো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।”
.
গান শেষ হতেই পিছন থেকে কার যেনো গলা পেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ।
আরাভ- ভালোই তো গান করো।
আমি- হিহিহি এত্ত পামমমম।
আরাভ- সিরিয়াস।
আমি- আপনি গান শুনান তো একটা।
আরাভ- আমি পারি না।
আমি- না না না আপনি বসুন এখানে আর গান শুনান।
আরাভ- না না আমি এসব পারি না।
.
এই বলে আরাভ চলে যাচ্ছিলো। তখন আমি ওকে আটকানোর জন্য ওর শার্টের হাতের কাছের কিছুটা অংশ ধরে টানলাম।
আরাভ- কি হলো?
আমি- না শুনালে যেতে দিবো না।
আরাভ- আরে আমি পারি না তো।
আমি- আমি জানি না কিছু। গান শুনান।
আরাভ- ওকে ওকে। কি গান শুনবা?
আমি- পৃথিবীর যতো সুখ আনলাম
আরাভ- ওকে.. পৃথিবী
আমি- দাড়াননননন। গিটার বাজাতে পারেন ?
আরাভ- হুমমম।
আমি- তো বাজান । ধরুন। (এই বলে গিটার টা আরাভের হাতে ধরিয়ে দিলাম।)
আরাভ- “পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে,
আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ”
.
আমি- ওয়াওওওওওওওও। আপনি তো সেই গান করেন।
আরাভ- না তো।
আমি- সেইরাম। খাড়ান আমি আমার ফ্রেন্ডদের ফোন করে ডাকি কালকে। আপনার গান শুনাবো।
আরাভ- এই না।
আমি- আরে আমি তো ডাকবোই কারণ আমার বর পারে এতো ভালো। ওদের শুনাইয়া একটু জ্বলাইতে হবে তো।
আরাভ- হাহাহা কিইই।
আমি- আরে সত্যি। আচ্ছা দাড়ান আমি আইসক্রিম আনি। খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি খাবেন ?
আরাভ- না।
আমি- ওকে।
.
এই বলে আমি তাড়াতাড়ি করে আইসক্রিম আনতে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি দুইটা আইসক্রিম আনলাম।
আরাভ- বললাম যে খাবো না।
আমি- হুমমম জানি তো।
আরাভ- তা দুটো আনলে যে।
আমি- হুম দুটোই আমি খাবো।
আরাভ- কিহহহ?
আমি- হুমমম। আমি তো দুটোই খাবো। কতোদিন পর খাচ্ছি।
আরাভ- না। ঠান্ডা লাগবে।
আমি- না আমি খাবোই।
.
এই বলে আমি দুটোই ছিড়তে গেলাম। কিন্তু আরাভ একটা কেড়ে নিলো। আমি জিজ্ঞেস করায় বললো, “এতো নাকি খাওয়া যাবে না। আরাভ ফেলে দিতে ধরেছিলো। একটা।
আমি- ফেলিয়েন না প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা। প্রেয়সিকে দিচ্ছি।
আমি- না আপনি খান। প্লিজ প্লিজ।
আরাভ- আচ্ছা ওকে।
.
আমি আর আরাভ পাশাপাশি বসে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আর সেই সাথে গল্প করতে লাগলাম। গল্প করতে করতে বুঝছিলাম আমি যে, মি. আরাভ এতোটা খারাপ না। ভালোও উনি। আইসক্রিম খাওয়া শেষে মি. আরাভ হাসতে লাগলো।
আমি- কি হলো হাসতেছেন কেনো?
আরাভ- আইসক্রিম দিয়ে নিজের মুখের কি অবস্থা বানিয়েছো ?
আমি- কই দেখি? (এই বলে ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম, আইসক্রিম দিয়ে উপরের ঠোঁটের সামান্য উপরে নাকের নিচ অংশে আইসক্রিম জমেছে)
.
এটা দেখে আমিও হাসতে লাগলাম। আরাভ তাকিয়ে ছিলো। কারণ ওর জানা ছিলো না যে, নিজের উপরও কেউ এতো হাসে।
আরাভ- থামো মিস. হাসুরি । পরে হাইসো। যাও পরিষ্কার করো।
আমি- আপনি মুছে দিন।
আরাভ- কিহ।
আমি- আরে মুছুন না। আমি একটা পিক তুলবো।
আরাভ- কিইইইইই? (চোখ বড় করে)
আমি- হুমমম। ইন ফিউচার আমাদের যে নাতি নাতনি হবে। ওদের দেখাতে হবে তো। আপনি তো এমনিই পুরাই আনরোমান্টিক। তবুও একটা ইজ্জত আছে না। ওরা তো জানবে ওদের দাদা-দাদি/নানা-নানি একটু হলেও রোমান্টিক ছিলো।
.
আরাভ আমার মুখে এমন ধরনের কথা শুনে পুরাই থ। কেউ এভাবে এসব বলতে পারে এটাও তার জানা ছিলো না।
আমি- হা করে আছেন কেনো?
আরাভ- না কিছু না।
আমি- পুরাই আনরোমান্টিক এমনি কই আমি। হিহিহি। থাক লাগবে না।
.
এই বলে আমি চলে গেলাম। আরাভ থ হয়ে ছিলো তখনো।
.
রাতের দিকে……
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি। আরাভ কখন এলো তাই তা বুঝলাম না। ও কি জানি কাজে কিছুটা বাইরে গিয়েছিলো। ফিরে এসে দেখে আমি ঘুমাচ্ছি তাও হেলানি দিয়ে। আরাভ বুঝে গেলো আমি ওরই অপেক্ষা করছিলাম। আরাভ আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। আরাভের কিছুটা নেশা নেশা লাগছিলো। এটা অন্য কোনো নেশা নয়। শুধুই কিছুটা মায়ার নেশা। যা ধীরে ধীরে আরাভের উপর চড়ছিলো। আমার নেশা। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো। আর একটা স্মৃতি মনে করতে লাগলো। আরাভ আর আমার প্রথম দেখা। যে দেখার স্মৃতি আমি জানি না। কারণ সেদিন আরাভের চেহারাটা আমি দেখি নি কারণ আরাভের মুখটা কাপড়ের কি জানি দিয়ে ঢাকা ছিলো। আরাভ দেখেছিলো আমাকে….
সেদিনই ভালো লেগে যায় আরাভের আমাকে..
তারপর খোঁজার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু পায় নি। পরে যেদিন পআনার আরাভের সাথে দেখা হলো, ঢাক্কা খেলাম। সেদিন আমি না চিনলেও আরাভ চিনতে পেরেছিলো। কিন্তু আমি একটু বেশি গোলমাল করি তাই আরাভ রাগ সামলাতে না পেরে আমাকে চড় মেরেছিলো।
.
আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন কিভাবে হলো পরিচয়, চলুন জানা যাক…
.
আরাভ স্মৃতির পাতায় চোখ দিলো।
সবসময় ফাজলামি পছন্দ করে আনহা(আমি)। আরাভও কিছুটা ফাজিল। কিন্তু অনেক বেশিই রাগী। আমি ও আমার ফ্রেন্ডরা গিয়েছিলাম কাছাকাছি একটা পাহাড় এরিয়া দেখতে। সে সময় আমি ফাজলামি করে একটা বাস আসতে দেখি। সেখানের আরাভ ও তার পরিবারের অন্যরা ছিলো। আরাভের একটা কাজিন ছিলো। যে আরাভকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু আরাভ পাত্তা দেয় না। এই কাহিনী আমি জানতাম না। সে কাজিনটার নাম ছিলো জান্নাত। জান্নাত তার এক ফ্রেন্ড এর সাথে একটা ফুলের গাছের আড়ালে প্লান করছিলো। সেটাও আমি জানতাম না। এমনি ফাজিল। আর ওই গাছের ফুলগুলো ভালো লেগেছিলো। তাই আমার বান্ধবীদের সাহায্যে গাছে উঠছিলাম ঠিকই। কিন্তু সব গুলো আমার সাথে ফাজলামি করে চলে যায়। পরে যাই প্যারায় কারণ আমি নামতে পারছিলাম না। সেই সময় জান্নাত আসে আর প্লান করে। সব বুঝে যাই। আরাভ রান্নার চুলার ওদিক কি জানি করছিলো। শুধু জামা দেখে আর ওদের কথা শুনে বুঝলাম সবটা। ইচ্ছ হলো সাহায্য করি। সেই জন্য জান্নাত রা সরে যাওয়ার পরপরই কি জানি করতে আরাভ অন্য দিকে যাচ্ছিলো। ওদিক গাছ থেকেই ডাকলাম….
আমি- এই যে ভাইয়া শুনুন।
আরাভ প্রথমে থামলো কিন্তু ভাবলো ওকে ডাকছে না কেউ। তাই চলে যেতে ধরলো। কিন্তু আমি আরো কয়েকবার ডাকলাম। ডাক শুনে এদিকে আসলো… আরাভ দেখলো একটা মেয়ে বয়স ১৬/১৭ ওকে ডাকছে। মেয়েটি কালো গাউন পড়ে ছিলো সাথে ওড়না। আমি মাঝে মাঝেই কথা বলতে বলতে হাসি। তাই তখনও হেসে ফেলছি। আরাভ ক্রাশ খেয়ে যায়।
আমি- ভাইয়া ভুত হয়ে দাড়াইয়েন না। একটা হেল্প করুন। পরিবর্তে আপনার একটা বিপদ আছে সামনে কমিয়ে দিবো।
আরাভ- কিহ? এমনিই হেল্প করছি। এতো বাহানা করার কি দরকার?
আমি- মই টা আনুন।
.
আরাভ মই আনলো। আমি নামতে ধরলাম।
আরাভ- সাবধানে।
আমি- আরে আমি পারবো পারবো। (এখনো আরাভের চেহারা দেখি নি)
.
বেশি নিজের উপর ভরসা করার ফল হিসেবে পা পিছলে পরে গেলাম। আর পড়লাম আরাভের উপরে। আর হাতের ফুল গুলো আমাদের উপর পুরাই রোমান্টিক ব্যাপার। এদিক বেশি মানুষ আসে না। তাই কেউ দেখলো না। আরাভ তাকিয়ে থাকলো,কাজল কালো চোখজোড়ার দিকে। সবচেয়ে বেশি ওর চোখ গেলো আমার ঠোঁটের নিচে থাকা তিলের উপর। কিন্তু আমার মাথায় সেই টাইমে রোমান্টিক কিছু আসে নি তাই উঠে পড়লাম। আরাভও উঠে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলছিলাম আপনাকে সাবধান হতে।
আমি- তা বিষয় না। ধন্যবাদ। আর শুনুন ওই মেয়েটা আপনার কে হয়? (জান্নাতকে দেখিয়ে)
আরাভ- কাজিন কেনো?
আমি- আপনাকে মে বি ভালোবাসে আর আপনি রিজেক্ট মারেন।
আরাভ- আপনি কেমনে জানলেন?
আমি- (বললাম কিভাবে জানলাম) জান্নাত ওর কোল্ড ড্রিংকে আজ কিছু একটা মেশাবে। তারপর কর্ণারে নিয়ে গিয়ে খারাপ অবস্থায় ছবি তুলবে। ইত্যাদি সব বললাম।
আরাভ- (এসব শুনে পুরাই রেগে গেলো আরাভ)
আমি- ওহো এতো রাগিয়েন না। ওর প্লানে ওরেই মারুন।
আরাভ- মানে?
আমি- ওরেই ওটা খাওয়ান। আর সেই সময় ও সবার সামনে উল্টা পাল্টা কাম করবে। আর ওর বাবা মা ওরেই বকবে সিম্পল। খালি ও খাওয়ার কিছু সময় পর ওরে বলবেন, ও একটা ঝাড়ুদারনি। আর শুনুন ওর ফ্রেন্ড টারে অন্য জায়গায় বিজি কইরেন। তার মাঝেও ঘাপলা।
আরাভ- নাইস আইডিয়া।
আমি- আমি তো জানি। আনহার আইডিয়া সেইরাম হয়। আচ্ছা আমি যাই আগে আমার বান্ধবী গুলার বারোটা বাজামু। আমাকে ছেড়ে গেছে।
.
এই বলে সেদিন ওখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাই। আরাভ কিছুই বলতে পারে না। কিন্তু মনে মনে হাসে আমার কথা গুলো ভেবে। ও জেনে যায় আমার নাম আনহা কিন্তু আমি ওর চেহারাও দেখি নাই সেদিন। যাওয়ার সময় আরাভ দেখেছিলো আমাকে, কিন্তু আমি দেখি নি। ও ডাকার আগেই সেখান থেকে চলে যাই। তারপর আজকের দেখা।
.
এসব স্মৃতি মনে করতেই আরাভ হেসে ফেলে। ওর ঘোর কেটে যায়। ঘুমিয়ে পড়লো আরাভ। এই ভেবে, জানে না সে কাল এই মেয়ে আরও কি কি পাগলামি করে।
.
চলবে…..