Angry_husband
season_2___Part_2
Written by Avantika Anha
আরাভ রেগে চিৎকার দিয়ে আমাকে ডাকতে লাগলো।
.
আভা- ভাবি তোমার কপালে আজ দুঃখ আছে। ভাইয়া এমনিতেই কতো রাগী। তার উপর তুমি তার মুখের বারোটা বাজাইছো। আজ তো তুমি শেষ।
আমি- আরে না কিচ্ছু হবে না। আমি যাচ্ছি। (মুখে এমন বললেও আমার ভয় লাগছিলো খুব)
.
ভয়ে ভয়ে আমি রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আরাভ এখনো মুখ পরিষ্কার করে নি। মুখ টা লাল হয়ে আছে ওর। হায় রে আজ আমার খুন হবে। আমারে কি করবে? চড় মারবে নাকি এই ভাবতে ভাবতে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই এক হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো।
আমি- ক.ক কি হইছে?
আরাভ- তুমি জানো না কি হইছে? হা মজা করো আমার সাথে।
আমি- আপনি মজা করার মানুষ নাকি যে ম.মজা করবো।(কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ভয়ে তোতলায় যাচ্ছে)
আরাভ- ও তাই । আমার মুখের এমন অবস্থা করছো কেনো?
আমি- আমি করি নি। (চোখ নিচে রাখছি ভয়ে। ওর মুখ আমার মুখের কাছাকাছি)
আরাভ- আমার দিকে তাকিয়ে বলো কিছু করো নি।
আমি- (ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর নাক রাগে কিছুটা লাল হয়ে গেছে। এটা দেখে আমার প্রচন্ড পরিমাণ হাসি পেলো। হাসি আটকাতে পারলাম না) হিহিহি
আরাভ- (হাসি দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম) হাসছো কেনো ?
আমি- হিহিহি কমু না।
আরাভ- বলো।
আমি- আপনার নাকটা লাল হয়ে গেছে রাগে আর আপনাকে এমনে পুরাই বানর লাগতেছে হিহিহি।
আরাভ- কিহহ।
আমি- চেক করেন আপনি ওইখানেই আয়না আছে।
.
.
আরাভ আয়নায় তাকায় দেখে একটু আজব লাগছে ঠিকি। কিনগতু পুরো বান্দর তো না। তাই ও আবার আমাকে বকা দেওয়ার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে দেখে আমি ওখানে নাই। কারণ ও আয়না দেখতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি দৌড় দিছি। হেতের রাগের কাছে আমি শেষ। আমি ওখানে নাই দেখে আরাভ আরো বেশি রেগে গেলো। তারপর ও মুখ ধুয়ে বাইরে এলো।
.
এদিকে আমি আভার রুমে চলে গেলাম। যাতে ও খুঁজে না পায়।
আভা- কি ভাবি। ভাইয়া কি করলো? খুব বকলো নাকি?
আমি- পালায় আসছি বইন।
আভা- হাহা। ভাইয়া ছাড়বে না দেইখো। আর কাল তো বউভাত তোমার শপিং করবা না? আজকে যাবো কিন্তু।
আমি- হুমমম আচ্ছা। আমি কি পড়বো শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?
আভা- উমমমম লেহেঙ্গা। ব্লু পইড়ো ভাইয়ার প্রিয় রং।
আমি- আমারো প্রিয়।
আভা- বাহ কাপল দেখি প্রিয় প্রিয় সেম।
.
এমন সময় আরাভ আসলো। ওকে দেখে আমি ভয়ে শেষ আভাও। আভা জানে আমি ভয় পাচ্ছি কেনো তাই ও কথা বদলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
আভা- ভাইয়া হঠাৎ আমার রুমে আমাকে তো ভুলেই গেছোস।
আরাভ- আভা তোর নাটক শেষ হইছে ? আনহা রুমে চলো।
আমি- আপনি কে ভাই?
আরাভ আরো রেগে গেলো- রুমে যাবা নাকি তুলে নিয়ে যাবো।
আমি- যাচ্ছি।
.
ভেজা বিড়ালের মতো অবস্থা হয়ে গেলো আমার। রুমে যেতেই আরাভ দরজা লাগায় দিলো। আল্লাহ আমারে বাঁচাও। কেহো আমারে তুইলা নেও। এই রাগী পোলার হাত থেইকা বাঁচাও আমারে।
আরাভ- খুব মজা করার শখ তাই না তোমার?
আমি- ভাই প্লিজ মাফ কর আমাকে।
আরাভ- (আরও রেগে গেলো। কারণ যাই হোক আনহা ওর বউ। আর বউ এর মুখে ভাই ডাক শুনতে কারই বা ভালো লাগে।) মাফ করবো এক শর্তে।
আমি- হ্যা হ্যা আমি রাজি।
আরাভ- ওয়েট।
.
এই বলে আরাভ ওর আলমারি এর অর্ধেক কাপড় বের করলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে ধুয়ে দিতে বললো। এতো কাপড় দেখে আমি থ।
.
আমি- এতো কাপড় আমি ধুয়ে দিবো?
আরাভ- এটা যদি না ধুয়ে দাও। তোমাকে মরিচ খাইতে হবে।
আমি- (ঝাল খাই মোটামোটি। কিন্তু মরিচ অসম্ভব) কিহ ।
.
আরাভ আগে থেকেই মরিচ এনে রাখছিলো। ও হাতে তিনটা মরিচ নিলো। লম্বা লম্বা সবুজ মরিচ দেখে আমি ভয়ে শেষ। হেতের ভরসা নাই। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে কাপড় গুলো নিয়ে ধুয়ে দিতে লাগলাম। আর আরাভ বাইরে চলে গেলো।
.
এদিকে কাপড় কাঁচতেছি আর আরাভকে গালি দিচ্ছি।
আমি- এতো কষ্ট মেনে নেওয়া যায় না। বিয়ে টা আর করা ঠিক না। আমি কি এমন ভুল করেছি । এতো Angry husband কেনো পেয়েছি। এই পোলারে কেউ মাইরালাও। আমি তারে দিমু গিফ্ট।
.
হায়রে কপাল। কোনেকার এক বান্দর পোলা। ওইটা একটা ইদুর। না না ইদুর না চামচিকা। ওরে ধইরা পিডাইয়া পিডাইয়া লাল,নীল,হলুদ,বেগুনী করে দেওয়া উচিত। টিকটিকি পোলা। হুহ। ওয় তো একটা রাক্ষস। ওরে কিল করবো আমি বান্দর কোনেকার। (এসব বলতে বলতে কাপড় কাঁচতে লাগলাম)
.
আরাভ কি জানি নিতে ঘরে এসেছিলো।এদিকে আমার মুখে এসব কথা শুনে ও আরও বেশি রেগে গেলো। কিন্তু কিছু বললো না। কাপড় ধুয়ে আমি গোসলটাও করে ফেললাম। হাত ব্যাথা করছিলো। তাই কিছু সময়ের জন্য রুমে আসলাম। আরাভ আসলো…..
আরাভ- এতোটুকুতেই টায়ার্ড। যাও আমার জন্য কিছু নিয়ে আসো ক্ষুধা লাগছে।
আমি- এখনি তো নাস্তা খেলেন।
আরাভ- তাহলে এক কাজ করো শরবত নিয়ে আসো।
আমি- হারামি পোলা। আমারে এতো কাম করাইয়াও তোর শান্তি নাই। খাড়া আইতাছি নিয়া।
.
গিয়ে আমি শরবত বানালাম। ওরে এতো সহজে ছাড়বো না। তাই শরবতে বেশি করে মরিচের গুড়া দিয়ে দিলাম। আরাভ হঠাৎ রান্নাঘরে আসলো আর দেখে ফেললো আমাকে মরিচের গুড়া মেশাতে।
আরাভ- কি করছো তুমি?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- কি মিশিয়েছো ?
আমি- কই কিছু না তো।
আরাভ- তাই ।
আমি- জ্বী।
আরাভ- খেয়ে দেখতে হবে তো।
আমি- হুমমম নিন খান খান।
আরাভ- তুমি খাবে।
আমি- না মানে।
আরাভ- খাওওওওওও।
.
কি করবো ভাবতে ভাবতে আইডিয়া এলো। কারণ ওটায় আমি খুব বেশি পরিমাণ মরিচের গুড়া মিশিয়েছি। খাওয়ার জন্য মুখের কাছে নেওয়ার আগে ফেলে দিলাম।
আরাভ ভালোই বুঝলো যে আমি ইচ্ছে করে ফেলছি। তাও কিছু বললো না।
আরাভ- পরিষ্কার করে নেও।
আমি- হুম।
.
কাচের গ্লাস ছিলো তাই হাতটা কেটে গেলো।
আমি- আম্মুউউউ।
আরাভ- কি হলো? কেটে ফেললা। বাচ্চা নাকি? সাবধানে করতে পারো না।
.
আমার চিৎকার শুনে আরাভের মা রান্নাঘরে এলো।
মা- কি হলো কাটলো কিভাবে? গ্লাস ভাঙ্গে গেলো কিভাবে?
আমি- ভুলে।
মা- নিশ্চয়ই আরাভ কিছু করেছে। আরাভ তোর রাগকে কন্ট্রোল করা শিখ।
আরাভ- কিন্তু মা।
মা- চুপপপপপ।
.
আরাভ চুপ করে বকা শুনলো। ওকে বকা শুনতে দেখে আমি সেই পরিমাণ খুশি হলাম।
মা- ওষুধ লাগিয়ে দে আনহা কে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ রুমে এসে আমাকে ওষুধ দিয়ে দিলো। আমার ডান হাত কাটছে এই জন্য আরাভ আমাকে আর কাজ করাতে পারবে না এই ভেবে আমি সেই খুশি।
আরাভ কিছুই বললো না । গোসলে গেলো। আমি বাহির দিক দিয়ে দরজা লাগায় দিলাম।
কিছু সময় পর আরাভ দরজা খট খট করতে লাগলো। আমি এদিকে আর খুলি না দরজা।
আরাভ ভিতর থেকে বলতে লাগলো…
আরাভ- আনহা আমি জানি এটা তোমার কাজ। দরজা খুলো তোমার আজ খবর আছে।
আমি- তাহলে খুলবো না।
আরাভ- আনহা খুলো।
আমি- না।
আরাভ- আচ্ছা কিছু করবো না খুলো।
আমি- এক শর্তে।
আরাভ- কিই?
আমি- আমার ৫ টা কাজ করবেন। আর কথা গুলো শুনবেন তাহলে।
আরাভ- চালাকি করো । যাস্ট বের হতে দেও।
আমি- তাহলে খুলবো না ওয়াদা করেন।
আরাভ- না।
আমি- ওকে থাকেন আপনি।
আরাভ- আচ্ছা ওকে ওকে ওয়াদা রইলো শুনবো।
আমি- হিহি ওকে।
.
এরপর আমি দরজা খুলে দিলাম। আরাভ প্রচন্ড রেগে কিন্তু ওয়াদা করছে বলে কিছু বলতে পারলো না। সেদিন আমি আর আভা শপিং এ গেলাম। আরাভ নাকি যাবে না।
আমি- চলেন শপিং এ।
আরাভ- না আমি যাবো না।
আমি- আপনি যাবেন এবং আমি যা যা চাবো তাই করতে হবে এটাই আপনার প্রথম কাজ।
আরাভ- দুরর।
.
ওইদিন সারাদিন আমরা শপিং করলাম। আরাভের পকেট ফাঁকা করতে লাগলাম। কিন্তু ও ওয়াদার কারণে কিছুই বলতে পারলো না।
.
সেদিন রাতে…..
আমি- মি. আরাভ পা টিপুন।
আরাভ- কিইইইইই।
আমি- ওয়াদা ভুলে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ২য় কাজ। করুন।
.
আরাভ কিছু না বলে রাগী লুকে পা টিপতে লাগলো। আমি সেই খুশি হয়ে ওর একটা সেল্ফি তুললাম। এবার আর আরাভ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।
আরাভ- কি ভাবো নিজেকে হা। চালাকি করো?
আমি- মি. আরাভ আমার লাগছে।
আরাভ- চুউউউপ।
আমি- সিরিয়াসলি লাগছে।
আরাভ- বললাম না চুপ।
.
এতে আমার চোখে পানি চলে আসলো। কষ্টে আর কিছু বললাম না।আমার চোখে পানি দেখে আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর ঘরের বাইরে চলে গেলো।
.
চলবে…..