Angry_Husband
Season_2_ Part_19
Written by Avantika Anha
বাড়িতে বাকীরা সবকিছু শুনে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো আমি ভালো আছি কি না? সবাইকে বললাম ভালোই আছি। রুমে আসার পর….
আরাভ- পা এর কি শুধু ওই জায়গায় কাটছে?
আমি- হুমমম।
আরাভ- আচ্ছা।
আমি- শুনেন না আজ আমি মরে গেলে কি করতেন?
.
আরাভ এই কথা শুনে আমাকে একটা চর মারলো। আমার হাত গালে চোখে পানি। আর ওকে আদুরে+কাঁদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
আমি- কি করলাম আমি?
আরাভ- কতোবার মানা করছি মরার কথা বলতে না।
আমি- ইয়ে মানে..
আরাভ- তুমি মরলে আমি নিজে জীবিত লাশ হয়ে যেতাম।
আমি- উরিম্মা কত্ত ভালোবাসা।
আরাভ- আনহা সিরিয়াস হও।
আমি- এতো সিরিয়াস হয়ে কি করবো একদিন তো মরেই যাবো। আজও তো মরেই যাইতাম। আপনার তো ভালোই হইতো আর কেউ জালাইতো না।
.
আরাভ হাত আবার আমার আরেক গালে। অর্থাৎ আরাভ আবার আমাকে থাপ্পড় মারলো। আমার আরেক হাত আরেক গালে। এখন আমি দুই গালে হাত দিয়ে আছি। মনে মনে, “শয়তান,লাল বান্দরটা খালি মারে”
আরাভ- কি মনে মনে গালি দিচ্ছো? নিশ্চয়ই বলতেছো শয়তান, লাল বান্দর।
আমি- (অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম) আপনি কিভাবে জানলেন? মনের কথা পড়া শিখছেন নাকি?
.
আরাভ বিনিময়ে জবাব না দিয়ে একটা রহস্যের হাসি দিয়ে ওর ব্লেজার খুলতে লাগলো। আমিও ছাড়ার পাত্রি না। ও কেমনে আমার মনের কথা জানলো আমাকে তা জানতেই হবে। গাল থেকে হাত নামিয়ে আমি আরাভের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
আমি- ওই বলেন না কেমনে জানলেন?
আরাভ- এটা সিক্রেট মিস।
আমি- না না আপনাকে বলতেই হবে।
আরাভ- সরো কাজ আছে।
আমি- আমি করে দিবো আগে বলেন।
আরাভ- আগে নিজের খেয়াল রাখো। আর তোমার ব্যাথা উঠতে পারে ওষুধ খেয়ে নেও।
আমি- কিহ। না ওষুধ তিতা।
আরাভ- আনহা ওষুধ খাবা নাকি থাপ্পড়?
আমি- আপনি আমাকে আরো মারবেন? (আদুরে গলায় আরাভকে জিজ্ঞেস করলাম)
আরাভ- এমন করে বলিও না পাগলি ইচ্ছা করে কিস করে দেই।
আমি- কিইইইইইই। (লজ্জা পাইলাম)
আরাভ- জ্বী। কাছে আসো একটা কিস করি।
.
আমি আর কিছু না বলে উল্টা দিকে দৌড় দিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলাম। আরাভ হাসতে লাগলো
আর বলতে লাগলো, “তোমার এসব পাগলামি আর লজ্জায়ই তো আমি কাবু হইছি ম্যাডাম।” আমাকে দৌড়াতে দেখে আভা জিজ্ঞেস করলো,
আভা- কি ভাবি দৌড়াচ্ছো কেনো?
আমি- এমনি ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো জানো না?
আভা- হাহাহা তাইইইই।
আমি- হুমমম।
আভা- ভাবি এখন অবস্থা কেমন?
আমি- আমার কি মহা এক্সিডেন্ট হইছে নাকি। ভালোই আছি।
আভা- দুই গাল লাল হয়ে আছে কেনো? মার খাইছো নাকি লাভ বাইট।
আমি- আভা মাঝে মাঝে তোমার ভাই মনে হয় ঠিকই বলে তোমার বিয়ে দেওয়া উচিত।
আভা- ভাবি তুমি কি আমার শত্রু?
আমি- না তো বাবু।
আভা- বাই দি ওয়ে আমার কথা ভাইয়াকে বললা?
আমি- হুমমম। বলছে তুমি যেন তোমার উনিকে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলো।
আভা- আচ্ছা। আমি বলতেছি। কয়েকদিন পরে রেস্টুরেন্টে দেখা করুক।
আমি- ওকে বাবু।
আভা- ওকে।
.
রাতের দিকে,, আরাভ বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। আমি রুমে ঢুকলাম। আরাভ আমার দিকে তাকালো না। কি ব্যাপার? তাকায় না কেনো? এমনি সময় তো বারবার তাকায় তাকায় দেখে এখনো তাকায় না কেনো? আমি সোফায় বসলাম। আরাভ এখনো তাকাচ্ছে না। কিছু সময় পর ল্যাপটপ বন্ধ করে ও ফোন হাতে নিলো। এবার মুচকি হাসতেছে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। ব্যাপারটা বুঝতে হবে। আমার তো রাগ উঠতাছে। আমার ফোনটাও নাই যে নিজেকে ব্যস্ত রাখবো। “ওয় কি করে?” এটা জানতেই হবে আমাকে। আমি উঠে ওর দিকে চুপি চুপি পায়ে আগালাম।
আরাভ- এভাবে হাটছো কেনো?
আমি- ওমা আপনি আমাকে কেমনে দেখছেন? আমার দিকে তো তাকানই নি।
আরাভ- হাহা ম্যাডাম। আমি বুঝছি আপনি এসেছেন। যতোই আস্তে আসেন না কেনো? আপনার উপস্থিতি আমি বুঝবোই। আপনি আসে কথা বললেন না। বুঝছি কিছু একটা হইছে। তাই ফোনের ক্যামেরা অন করে ফোনে আপনাকে দেখতেছিলাম।
আমি- তার মানে আপনি আমাকে দেখে হাসতেছিলেন?
আরাভ- জ্বী ম্যাডাম।
আমি- বান্দর পোলা। আমাকে খালি জ্বলান।
আরাভ- নিজের বউকে জ্বলাবো না তো কাকে জ্বলাবো?
আমি- একটা গুড নিউজ আছে।
আরাভ- কি?
আমি- আপনি বাবা হতে চলেছেন।
আরাভ- সত্যি?
আমি- হিহি মজা করলাম।
আরাভ- আনহা এই বিষয়েও মজা?
আমি- হুমমম।
আরাভ- তুমি না দুই বাচ্চার মা হলেও এমনি থাকবা।
আমি- অবশ্যই।
আরাভ- হায়রে পাগলি।
.
এমন সময় আরাভের ফোনে একটা কল আসলো। কথা গুলো শুনে আরাভ কিছুটা রেগে গেলো। আর কাকে যেন বললো জ্বলদি কিছু করতে। ফোন কাটার পর,,,
আমি- কি হইছে? কার সাথে কথা বললেন?
আরাভ- পুলিশ।
আমি- কিন্তু কিনু?
আরাভ- আজকের এক্সিডেন্ট নিয়ে।
আমি- ওওওও।
আরাভ- এক্সিডেন্ট টা জান্নাত করিয়েছে।
আমি- জানি।
আরাভ- কিভাবে?
আমি- রাস্তায় একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসছিলো। লিখা ছিলো। “tmk mortei hbe ekhn anha. bye bye.”
আরাভ- ওই মেয়েকে আমি মেরেই ফেলবো।
.
আরাভের চোখ লাল হয়ে গেলো। ওর এতোটা রাগান্বিত মুখ আমি কখনো দেখি নি। আমি আরাভের রাগ কমাতে ওর পাশে গিয়ে বসলাম আর ওর হাতটা ধরলাম।
আরাভ- ডোন্ট ওয়ারি আমি এখনি বের হচ্ছি। ওকে তো আমি গুলি করবো।
আমি- আমাকে ভালোবাসেন?
আরাভ- অনেক বেশি।
আমি- আপনি আজ ওকে কিছু করলে যদি পুলিশ আপনাকে নিয়ে যায় আমার কি হবে?
আরাভ- কিন্তু।
আমি- চুপ। (আঙ্গুলটা ওর ঠোঁটে রেখে চুপ করালাম)
আপনাকে ছাড়া আমি একটুও থাকতে পারবো না। প্লিজ রাগের বশে কিছু করবেন না।
.
এইটুকু বলে আরাভকে জড়িয়ে ধরলাম। আরাভও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমি তাকে আভার রাজের কথা বললাম। আরাভ রাজি হলো। জান্নাতের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলো না। যদিও একদিন এক অনুষ্ঠানে আরাভ আর আমি গেছিলাম। জান্নাতও ওখানে ছিলো। উল্টা কথা বলায় আরাভ ওকে থাপ্পড় মেরেছিলো, সেই সাথে মেরে ফেলার হুমকি দিছিলো। সেদিন আমি আরাভকে আটকে নিয়েছিলাম। নাহলে হয়তো আরো খারাপ কিছু হতো। ফিরার পথে
.
আমি- আহা আমি ভালোই আছি ভাগ্যিস।
আরাভ- কেন?
আমি- আপনি আমাকে আস্তে মারেন। আজ জান্নাতের তো একেবারে দাঁত ভাঙ্গে যাইতো।
আরাভ- আনহা তুমি একটা পাগলি।
আমি- আমি তো জানি।
কয়েকদিন পর…..
.
আরাভ- আজকে দেখা করবো তোমার ননদের রাজের সাথে।
আমি- আমিও যাবো।
আরাভ- না।
আমি- প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আরাভ- ওকে চলো।
আমি আর আরাভ গাড়িতে করে যাচ্ছি।
আমি- মি. আরাভ গাড়ি থামান।
আরাভ- কেনো?
আমি- ফুচকা খাবো।
আরাভ- হুররর।
আমি- প্লিজ।
.
আরাভ গাড়ি থামালো। কেনো জানি বেশিই খাইতে ইচ্ছা করছে। তাই আমি একে একে তিন প্লেট ফুচকা একাই খাইলাম।
আরাভ- এক্সিডেন্ট এর জন্য মনে হয় তোমার ক্ষুধাও বেড়ে গেছে।
আমি- মনে হয়। কয়েকদিন ধইরা আজব লাগে।
আরাভ- হুমমম বুঝি তোমার তো সবসময়ই আজব লাগে।
আমি- হুহ শয়তান পোলা।
আরাভ- এবার চলো।
.
ক্যাফের মাঝে। রাজ আর আরাভ সামনা সামনি বসে আছে। আমার সামনে আভা। আরাভ একটা কেমন লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। রাজও মেবি ভয় পাচ্ছে। সাথে আমি আর আভাও ভয় পাচ্ছি।
আরাভ- কি করো তুমি?
রাজ- জ্বী আমি সিএইচ কোম্পানির সিইও।
আরাভ- ওহ। আমার বোনকে সুখে রাখতে পারবে?
রাজ- আমি ওকে কষ্টে না রাখার পুরো চেষ্টা করবো। আমি যেভাবে থাকবো সেভাবেই রাখবো। যদি এক ঘরেও থাকি তবুও ওকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।
.
সব প্রশ্ন শেষে আরাভ রাজি হয়ে গেলো। খাবার অর্ডার করা হলো। চাওমিং। সবাই খেতে লাগলো সবার ভালো লাগলেও আমার কেনো জানি মুখে দিতেই খারাপ লাগলো। এর আগেও আমি এখানকার খাবার খেয়েছি কিন্তু এমন হয় নি। আমি ওয়াশরুমে গেলাম বমি হলো। কিন্তু আজব ব্যাপার এমন হচ্ছে কেনো?
আভা- ভাবি ভালো আছো? এমন লাগছে কেনো তোমাকে?
আমি- জানি না।
আভা- ডক্টর দেখাইয়ো।
আমি- লাগবে না।
আরাভ- আরে তিন প্লেট ফুচকা খাইছে। পেট খারাপ তো হবে।
আমি- না সেটা না।
আরাভ- বুঝি।
আমি- হুহ। আমি দই ফুচকা খাবো।
আরাভ- এখন?
আমি- যা খাইছি বমি হইছে। আমাকে এখন আবার খেতে ইচ্ছা করছে।
আরাভ- না।
আমি- হুহ।
আরাভ- এটা খাও।
আরাভ আমাকে ফালুদা খাওয়ায় দিলো জোড় করে। আমাদের এসব দেখে রাজ বললো,
রাজ- ভাইয়া ভাবির ভালোবাসা অনেক।
আমি- নজর দিয়েন না জামাইবাবু।
রাজ- আরে ভাবি না না।
আরাভ- আনহা এখানেও বাচ্চামি?
আমি- আমি এমনি হিহি।
রাজ- ভাবি আপনি ভারি মজার মানুষ।
আমি- সেটা তো তোমার ভাইয়া হারে হারে বুঝে আমি কেমন?
আরাভ- হুমম।
.
বাড়ি ফেরার পথে একসাথে ফিরলাম। হঠাৎ করে কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে মাকে আর আভাকে যেতে হলো। আবারো পুরো বাড়িতে আমি আর আরাভ একা।
খাওয়ার টেবিলে..
আরাভ- ম্যাডাম আজ তো আপনি আর আমি। রোমান্টিকতা হারে হারে দেখবেন।
আমি- ইয়ে মানে আমার ঘুম পাচ্ছে।
আরাভ- আনহা আসো মুভি দেখবো। (অন্য কারণে)
আমি- সত্যি চলেন।
.
আরাভ আসলে ভুতের মুভি দেখতে ডাকছিলো আমাকে। এমনিতে ওর কাছে কম যাই। কিন্তু আমি ভুতের মুভি ভয়ও পাই আবার ভালোওবাসি। তাই রুমে গেলাম। আরাভ ভুতের মুভি ছেড়ে দিলো।
.
চলবে…….