Angry_Husband
Season_2_ Part_1
Written by Avantika Anha
.
আমি- আপনি আমাকে চিটিং করে বিয়ে করলেন কেনো বান্দর পোলা।
আরাভ- ওই মেয়ে ভালো করে কথা বলবা আমার সাথে। ভুলে যাবা না যেভাবেই হোক আমি তোমার স্বামী। বেশি কথা বললে কিন্তু থাপ্পর খাবা।
আমি- (সাথে সাথে মনে পড়ে গেলো প্রথম থাপ্পড়ের কথা।যেটা আরাভের কাছে আমি প্রথম খাইছিলাম।মনে পড়তেই হাত গালে চলে গেলো।) আর কি পারেন রাক্ষস কোথাকার। আপনার নাম না আরাভ ছিলো।রাহিদ কেমনে হলো। এ্যা আমার কত্ত শখ ছিলো। কিউট একটা বর হবে। কই থেকে এই Angry পোলা আমার কপালে জুটে গেলো।
আরাভ- হাহা আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার মিস. আনহা। সরি মিস. না মিসেস আনহা। তুমি কি ভেবেছিলে বর আমার পাশের ছেলেটা ছিলো ওটা আমার বন্ধু ছিলো। হাহা প্লানটা আমারি। এবার বুঝবা আমি কতোটা রাগী।
আমি- আমি বাড়ি যাবো থাকবো না এইখানে। আম্মুউউউউ আম্মু গো তুমি কই। এই টিকটিকি মার্কা ছেলে আমাকে চিটিং করে বিয়ে করছে।
আরাভ- আনহা একদম চুউউপ। চুপচাপ শুয়ে পড়ো।
আমি- না আমি ঘুমাবো না আমি এইখানে থাকবোই না আমি বাড়ি যাবো।
.
আরাভ আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে দিলো।
আরাভ- শুনো আমার সাথে লাগতে মানা করছিলাম তোমাকে। কিন্তু শুনো নি। একের পর এক ঝগড়া লাগিয়েই গেছো আমার সাথে। এখন বুঝবা আসল রাগ কাকে বলে। বুঝতে থাকো মিসের আহমেদ।
আমি- কিন্তু।
আরাভ- চুপ । কোনো কথা না শুয়ে পড়ো। নাহলে বাসর রাত করে ফেলবো আজই জোড় করে। যদিও আমার অধিকার আছে আমি তোমার স্বামী। সব নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু আমি এভাবে তোমাকে অাস্তি দিবো না। আলাদা ভাবে দিবো। শুয়ে পড়ো এখন জানু। গুড নাইট।
আরাভ ছেড়ে দিয়ে ও বিছানায় বসলো। আমি নিজের একটা সুতি জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকার আগে বললাম, “বান্দর পোলা। আমি আপনারেও বাঁশ দিবো। যদি না দেই তাহলে আমার নামও আনহা না।”এই বলে আমি বাথরুমে দৌড় দিলাম। আরাভ কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
.
এতক্ষণ কথা হচ্ছিলো আরাভ আর আমার মধ্যে। আমাদের সম্পর্কটা ঝগড়াটে তা এতক্ষণে আপনারা হয়তো বুঝে গেছেন। আমি আনহা বর্তমানে ভার্সিটি প্রথম বর্ষে পড়ি। আর উনি মি. রাগী আরাভ। বান্দর মার্কা পোলা।নিজের কোম্পানি আছে। আরাভ ওর পরিবার আর একটা বন্ধুকে নিয়ে আমাদের বাড়ি গেছিলো। আমি আমার পরিবারের ওপরে বেশি কথা বলি না। তাই আমি ভেবেছিলাম আরাভের বন্ধুই হয়তো ওর হবু বর। যার নাম রাহিদ। কিন্তু আরাভের পুরো নাম যে রাহিদ আহমেদ আরাভ তা আমি জানতামই না। আমাদের পরিচয়ও একটা ঝগড়ার মধ্য দিয়ে। তাই তারে আমি Mr. Angry নাম দিয়েছি। বিয়ে কিভাবে হলো তা তো জেনেই গেছেন। এবার পরিচয়ের ঘটনাটা বলা যাক।
..
..
..
ফ্লাশব্যাক…..
প্রায় ২ মাস আগে…
আমি আর মিমি আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিলাম। এদিকে আরাভ মিটিং এর জন্য অফিস যাচ্ছিলো। রাস্তায় ওর কার নষ্ট হয়। মিটিং এর জন্য দেরি হচ্ছিলো। তাই সে ফোন দিয়ে গাড়ি আনতে বললো কাউকে। সে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলো। আমি মিমির সাথে গল্প করছিলাম তাই সামনে কে লক্ষ্য করি নি। সামনে ইট ছিলো তাও দেখি নি। খাইছি উস্টা আর আমার হাতের আইসক্রিম সোজা গিয়ে লেগে গেলো আরাভের মুখে আর হোয়াইট শার্টে। আমি ভয় তো একটু পাইছিই। তবুও সাহস নিয়ে সরি বলে আরাভের দিকে তাকালাম। যদিও তখন তার নাম একদম জানতাম না। আইসক্রিম লেগে আরাভের মুখ সত্যিই বান্দরের মতো লাগছিলো। তাই ভুলে হেসে ফেলছি। এই হাসাই আমার কাল হয়ে দাড়াইছে। এমনি এই পোলা রাগী। আমার হাসি দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো।
আরাভ- এই যে মিস. আপনার সাহস তো কম না। এক আমার উপর আইসক্রিম লাগালেন। সরি বললেন মানলাম। কিন্তু হাসলেন কেন? আমাকে কি আপনার ফানি মনে হচ্ছে।
আমি- আসলে হয়েছে কি ভাইয়া ইট ছিলো আরকি.. (বিষয়টা বুঝাতে লাগলাম)
আরাভ- একদমমমমম চুউউপ।
আমি- আরে আরে বলতে তো দেন।
আরাভ- বললাম না চুউউউপ। কোনো কথা না পরিষ্কার করে দেন। রুমাল বা টিস্যু দিয়ে।
আমি- আরে একটু শুনেন।
.
আরাভ আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। সোজা চড় বসিয়ে দিলো।
.
আরাভ- বললাম না। আরাভের মুখের উপর বেশি কথা বলা আরাভ একদম পছন্দ করে না।
.
আমি চুপচাপ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম।
মিমি- দোস্ত এটা কেমন পোলা। এখন কি হবে?
আমি- চুপচাপ
আরাভ- যা বললাম করেন। সোজা কথা।
.
আমি মিমির কানে বললাম…
দোস্ত পিছন দিকে দৌড় মারবো ওকে। ওই পাশের গলিটায়। ১ ২ ৩ বলার সাথে সাথে।
মিমি- ওকে
আরাভ- কি হলো কি ফিসফিস করছেন। পরিষ্কার করেন।
আমি- বান্দর পোলা। মারেন আমারে। দেখতে তো ভুতের মতো। ভুতকে ওমনেই মানায়। দুররর হন ।মিমি ১ ২ ৩ দে দৌড়।
.
বলেই আমি আর মিমি দিলাম দৌড়।
আরাভ আরও বেশি রেগে গেলো। সে ঠিক করে নিলো এই মেয়েকে ও একদিন শাস্তি দিবেই।
.
এটুকুতেই শেষ নয়। একদিন আমি ফোনে পিচ্চি বাচ্চাদের খেলার পিক তুলছিলাম।আর ওদের সথে খেলা করছিলাম পার্কে বসে। ওইদিন ওখান থেকে হঠাৎ একটা বাচ্চা রাস্তা হারায় কোনদিকে জানি চলে যায়। আর রাস্তা হারিয়ে ফেলে আরাভ বাচ্চাটাকে দেখে এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আছে। বাচ্চাটা সম্পর্কে আমার কাজিন হওয়ায় আমি পুরো পার্ক মাথায় তুলে ফেলি । হঠাৎ আরাভ আসে সায়ানকে(কাজিনটা) নিয়ে। আমি ভেবে ফেলি আরাভ সায়ানকে কিডন্যাপ করেতেছিলো। পুরো মাঠ জড়ায় ফেলি। আর কিছু মানুষ মিলে আরাভকে মারা শুরু করে দেয়।
.
সায়ান- আপ্পি আংকেলটা আমাকে বাঁচিয়েছে। মারতে মানা করো।
আমি- ওমা সত্যি?
সায়ান- হুমম আপ্পি।
আমি- ওই হনুমান আগে বললি না কেনো? এবার যে কি হবে আমার?
.
.
ভয়ে তাড়াতাড়ি ওদের থামিয়ে আরাভকে সরি বলি। কিন্তু আরাভ কিছু না বলেই চলে যায়। আরাভ সেদিনই ঠিক করে নেয় আমাকে শাস্তি দিবে। আরাভ প্রচন্ড রাগী ছেলে। ওর পরিবারের সবাই ওকে ভয় পায়।
.
একদিন আরাভের বাড়িতে বিয়ের জন্য পাত্রীদের ছবি দেখা হচ্ছিলো।
.
আরাভ- কি মা এসব? আমি এখন বিয়ে করবো না। তোমাকে তো বলেছিলাম।
মা- একবার দেখ শুধু।
আরাভ- না ।
মা- দেখলে কি হয়?
আরাভ- দুরর
.
.
আরাভ ছিবি দেখা শুরু করলো। ওসব ছবির ভিড়ে আনহার ছবি দেখে আরাভ ঠিক করে ফেলে ওকে কি করতে হবে। তারপর আরাভের প্লান অনুযায়ী আজকের বিয়ে। আমি এদিকে রাগে শেষ হচ্ছি কারণ রাগী মানুষ আমার অপছন্দ। আর কে এভাবে বদলা নিতে বিয়ে করে আপনারাই বলুন।
.
ফ্রেশ হয়ে দেখি আরাভ ঘুমায় গেছে আমি সেই খুশি হয়ে ওকে বকা শুরু করলাম।
আমি- বান্দর পোলা, রাক্ষস একটা, শয়তান কোনেকার, ইদুর,বিড়াল টিকটিকি, তুই একটা বাজে ছেলে আমাকে শাস্তি দিস। কতো শখ ছিলো একটা কিউট বর হবে। যে আমাকে কত্ত ভালোবাসবে আর কোথা থেকে তুই একটা রাগী বান্দর মার্কা পোলা আমার ঘাড়ে চাপলি হুহ। তোকে আমি পুড়া রুটিব খাওয়াবো। ইদুরের বিষ মিশায় খাওয়াবো।
.
আরাভ চোখ খুললো। ও আসলে ঘুমানোর নাটক করছিলো। আমার এতো গুলো বকবক শুনে ও রাগে শেষ। আমার হাত ধরে এক হ্যাচকা টান দিলো। সোজা পড়লাম ওর বুকে। আর এদিকে আমার অবস্থা যায় যায় ভাব। কারণ আরাভ সব শুনে ফেলছে। আমি নিজেকে বলতে লাগলাম, আনহা এটাই তোর শেষ দিন। কে বলছে এতো বকভক করতে বুঝ এবার।
.
আমি- আমি না কিছু বলি নি । এসব তো নিজেকে বলছিলাম আমি।
আরাভ- ও তাই নাকি তা তুমি মেয়ে থেকে ছেলে হলা কেমনে । বকবক যখন করছিলা তখন তো এক পোলার কথা বলছিলা।
আমি- ভাই মাফ কর আমাকে। আমি আর কিচ্ছ বলবো না এই দেখেন কান ধরছি। (এক হাত দিয়ে এক কান ধরলাম)
আরাভ- আমি তোমার ভাই নাকি বর?
আমি- আপনি তো একটা বান্দর (আস্তে বললাম)
আরাভ- কি ? কি বিড়বিড় করছো জবাব দেও।
আমি- আপনি তো বর।
আরাভ- শাস্তি পেতেই হবে। পা টিপো আমার।
আমি- কিহহ ।
আরাভ- কিহ না হুম। টিপো নাহলে আজ এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে তোমাকে বাথরুমেই রাত কাটাতে হবে। চুপচাপ যা বলছি করো ।
আমি- হুহ আমারো সময় আসবে।
আরাভ- আমি থাকতে এখন আমার সময় যা বললাম করো।
.
কি আর করার চুপচাপ পা টিপতে লাগলাম আর মনে মনে আরাভকে গালি দিতে লাগলাম। আরাভ এদিকে হাসতে লাগলো মুচকি মুচকি। আনহাকে আরাভ ঘৃণা করে না। কিন্তু ওর আনহাকে শাস্তি দেওয়ারও আছে। তাই ও বিয়ে করলো।
.
আমি এদিকে পা টিপছি আর ঘুমে টুপতেছি। পা টিপি আর ঘুমে টুপি। হঠাৎ ঘুমিয়েই পড়লাম। আরাভ তাকিয়ে দেখে আমি ঘুমিয়ে গেছি। ও আমাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো।
.
পরেরদিন…
আমি উঠে দেখি আমি ঠিকঠাক শুয়ে আছি। আর পাশে Mr Angry ঘুমাচ্ছে। রাগ উঠে গেলো।আমাকে এতো শাস্তি দিয়ে ঘুমানো। ওকে আমি মজা দেখাবো । যেই ভাবা সেই কাজ। লিপস্টিক আনলাম। ওর মুখে ওটা দিয়া দাগ দিয়ে ওরে ভুতের মতো বানালাম। তারপর জ্বলদি জ্বলদি ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে বাইরে চলে এলাম। দেখি আরাভের মা বাইরে।
.
আমি- সরি দেরি হয়ে গেলো। আমার ঘুম ভাঙ্গে নি আন্টি।
মা- আন্টি কেন মা হবো তোর। পর দেরির কি? তুই আমার মেয়ের মতো।
আমি- আপনাকে কাজ করতে হবে না আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।
মা- এখন না । আজ তুই দেখ ও। শিখ পরে অন্য কোনোদিন।
আমি- আরে হেল্প তো করি। আমি না আপনার মেয়ের মতো। মেয়ের কথা কি শুনবেন না ?
মা- হাহা হুমমম। আয় সাহায্য কর। আরাভ কই ঘুমাচ্ছে?
আমি- জ্বী।
মা- এখনো । আচ্ছা নাস্তা হলে ওকে ডাকবি।
আমি- আচ্ছা (ডাকবো। আগে উঠুক নিজেকে দেখে তো পাগল হয়ে যাবে)
.
এদিকে আরাভ উঠলো। ওর আবার জ্বলদি পেপার পড়ার অভ্যাস তাই ঘরের বাইরে গেলো। ওকে দেখে মা (আরাভের আম্মু) আর আমি হাসতে লাগলাম। কিছু সময় পর আভা (আরাভের বোন) এলো। ও নিজেও হেসে ফেললো।
আরাভ ভাবতে লাগলো সবাই হাসছে কেনো? কিন্তু গুরুত্ব দিলো না। ঘরে গিয়ে পেপার পড়তে লাগলো। পেপার পড়া শেষে হঠাৎ ওর চোখ আয়নায় গেলো। আরাভ বুঝে গেলো সবাই কেনো হাসছে আর এই কাজ যে আমি করেছি তাও বুঝে গেলো। কারণ সবাই ওকে ভয় পায় ওর রাগের জন্য ।
.
এদিকে মা ও আভাও বুঝলো এই কাজ আমার । কিন্তু কেউ কিছু বললো না। শুধু এটা বললো… তুই অনেক ফাজিল আনহা।
.
এদিকে আরাভ…. আনহা বলে জোড়ে ডাক দিলো।
.
.
চলবে?????