Angry_Husband
Season_2 _Part_3
Written by Avantika Anha
আরাভ উঠে চলে গেলো। আমি এদিকে আবারো মনে মনে ওরে গালি দেওয়া শুরু করলাম,”বান্দর,রাক্ষস,গাধা,হাতি,বাজে পোলা কোনেকার আম্মু হাত ব্যাথা কেহো বাঁচাও আমারে এই Angry husband এর কাছে থেকে।” এইসব বলতে বলতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
কিছু সময় পর আরাভ ঘরে আসলো। কিছু সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলো। শেষে ও ভাবতে লাগলো,”ওর চেহারাটা এতো মায়াবী কেনো? মায়াবী হলেও কিন্তু একটু বেশিই ফাজিল। দেখে মনেই হয় না এতোটা ফাজিল ও।” আরাভ আমার গায়ে চাদর দিয়ে দিলো। তারপর পাশে শুয়ে পড়লো। সকাল সকাল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখি আরাভের এক হাত আমার পেটের উপর। হয়তো ঘুমের ঘোরে এসেছে। কিন্তু আমার তবুও প্রচুর লজ্জা লাগছিলো। তাড়াতাড়ি ওর হাত সরিয়ে দিতে যাবো কিন্তু তখনি ও একটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার লজ্জা আরো বেড়ে গেলো। কি করবো ভেবে পারছিলাম না। তাই আমি আরাভকে ডাকলাম।
.
আমি- মি. আরাভ ও মি. আরভ।
.
আরাভ নড়ে চড়ে গেলো। আমি আবার ডাক দিলাম। কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর মি. আরাভের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমাকে এতো কাছাকাছি দেখে সেও কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।
আরাভ- তুমি আমার এতো কাছে আসছো কেনো ?
আমি- ভালো করে তাকায় দেখেন আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। আপনার জন্যই আমি উঠতে পারছি না। ছাড়ুন আমাকে।
.
এই কথা শুনে আরাভ আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো। আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকবো তার আগে আমার মাথায় একটা বিষয় আসলো।
আমি- Angry husband আপনাকে না লজ্জা পাইলে সেই কিউট লাগে। ইচ্ছা করে গাল দুইটা ধরে টানি। (এইটা বলে আমি তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে গেলাম)
.
আরাভ ভাবতে লাগলো, এই মেয়ের মুখে কিছু আটকায় না। দুররর।
.
আমি ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম। আজ যেহেতু বউভাত তো আভার কাছে গেলাম কারণ তৈরি তো হতে তো হবেই আমাকে আভা তৈরি হতে বললো তাড়াতাড়ি। তাই আমি ঘরে গিয়ে লেহেঙ্গাটা নিয়ে বাথরুমে গেলাম। এদিকে আরাভ রুমে এসে পাঞ্জাবি পড়ছিলো। ও যে ঘরে আসছে আমি জানি না। আমি লেহেঙ্গা পড়ে বের হয়ে দেখি আরাভ। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এদিকে আমি দেখলাম নীল পাঞ্জাবিতে ওকে সেই লাগছে। দেখে পুরাই ক্রাশ খেয়ে গেলাম। ওর দিকে তাকায় হাটতে গিয়ে খাইলাম উস্টা। উস্টা খেলাম তো খেলাম পড়লাম আরাভের উপর কিন্তু আরাভ নিজেকে সামলায় নেওয়ায় নিচে পড়ে গেলাম না আমরা। কিন্তু আরাভের কাছাকাছি চলে আসলাম। নিজের অজান্তেই আরাভ আমার কোমরে হাত দিলো। ওর মুখটা আমার কাছাকাছি চলে আসলো। একটু বেশিই কাছাকাছি আসছিলো। আমার ওই সময় সেই পরিমাণ লজ্জা লাগছিলো। হঠাৎ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো..
আমি- মি. আরাভ আমার লজ্জা লাগছে।
.
আরাভ কিছুটা ঘোরের মধ্যে ছিলো তাই প্রথমে শুনতে পেলো না। ওর মুখটা আমার মুখের আরো কাছে আসতে লাগলো। ভয় লেগে গেলো। তাই একটু জোড়েই চিৎকারের মতো করে “আম্মুউউউ” বলে উঠলাম।
আরাভের ঘোর ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- কি হলো চিল্লাচ্ছো কেনো?
আমি- ভয় লাগছে আপনি এতো কাছে এসেছেন তাই।
.
এই কথা শুনে আরাভের প্রচন্ড রাগ হয়ে গেলো। এমন একটা রোমান্টিক সময়ে কেউ যদি এমন বলে আর যাকে বলে সেই মানুষটা যদি আরাভের মতো হয় তাহলে আমার মতো আনহার বারোটা বাজবেই। আরাভের একটা গুণ আছে। রাগলে মুখটা কিছুটা লাল লাল হয়ে যায়। কিন্তু আরাভ রাগ টাকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বিছানায় বসে পড়লো।
এদিকে আমি ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমি ভালো করেই বুঝেছি আরাভ রেগে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি লেহেঙ্গার পিছনের ফিতাটা বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই বাঁধতে পারছিলাম না। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি কিছুতেই ফিতাটা বাঁধতে পারছি না। আরাভ উঠে আমার কাছে আসলো।
.
আরাভ- দেও আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- না থাক।
আরাভ- চুপপপপ বললাম না আমি বেঁধে দিচ্ছি।
আমি- ওকে ওকে দেন। এতো Angry হওয়ার কি আছে? আমি বাচ্চা মানুষ ভয় লাগে তো।
আরাভ- তুমি বাচ্চা?
আমি- হুমমম।
আরাভ- হাহা এমনি তো পাকা বুড়ি। আর এমনি ক্ষেত্রে বাচ্চা।
আমি- বাঁধে দেন তো। এমনি বউভাত। একটু ভালো করে তৈরি হতে হবে তো।
আরাভ- কেনো? (বেঁধে দিতে দিতে)
আমি- প্রথম বিয়ে বলে কথা। একটু ভালো ভাবে সাজতে হবে তো। পরে বিয়ে হলে নাহয় কম সাজবো।
আরাভ- কিহ তুমি আবার বিয়ে করবে?
আমি- না মানে
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। আবারো আরাভ আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আরাভ। দুইদিনে ৪ বার এমন করছে। প্রতিবারই রেগে। আরাভের রাগী লুক দেখে আমি ভিগি বিল্লি। নিজেকে মনে মনে গালি দিতে লাগলাম, “বান্দরনি মাইয়া কি বলিস এসব। জানিসই তো কিরাম রাগী তাও বকবক। আম্মু বাঁচাও আমাকে।”
আরাভ- এবার বলো কি বললা?
আমি- আমি তো কিচ্ছু বলি নি। বিয়া কি আমি আর বিয়াই করবো না।
আরাভ- হুমম। অন্য ছেলেদের থাকে তোমার দূরে থাকতে হবে।
আমি- হুমম হুমম। আমি পোলা কি আমি আর কারো কাছেই যাবো না। আমি আপনার কাছেও আসবো না।
আরাভ- কিহহহহ (আরও রাগ লেগে গেলো)
আমি- না মানে আমি আপনার কাছেই থাকবো। এই যে এতো কাছেই থাকবো। কোনো দূরে যাবো না। এবার ছাড়েন। আভা অপেক্ষা করতেছে।(কি যে বলি)
আরাভ- (আনহার কথা শুনলে হাসিও পায়। রাগও লাগে দুররর।)
আমি- কি হলো ছাড়বেন না? আচ্ছা সমস্যা নাই ধরেই থাকেন। আমি কিচ্ছু বলবো না।
.
আরাভ আমাকে ছেড়ে দিলো। আর মুচকি একটা হাসি দিলো। কিন্তু ওটা আমার শয়তানি হাসি মনে হচ্ছিলো। যাই হোক আমাকে ছাড়ছে তো। এইটা মাথায় আসতেই আমি আমার জিনিস গুলো নিয়ে দৌড় আভার ঘরে।
.
আভা- কি ভাবি রোমান্স করছিলে নাকি?
আমি- আরে না।
আভা- তাই নাকি? হিহি।
আমি- শয়তানি হাসি দিচ্ছো কেনো গো।
আভা- হাহা তোমাদের শয়তানি দেখে। দেও তৈরি করে দেই।
.
সেদিন তৈরি হয়ে ঘরে চলে গেলাম। ভালোই লাগছিলো। তাই কয়েকটা পিক তুলে নিলাম। তারপর প্রেয়সিকে পিক গুলো পাঠাতে লাগলাম। নিচের দিকে তাকায়ই রুমের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু দরজার কাছে যে আরাভ ছিলো দেখি নি। কপাল পুড়লো আবার খাইলাম ঢাক্কা। চোখ তুলে উপরে তাকায় দেখি আরাভের সাথে ঢাক্কা খাইছি। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো কাজল কালো চোখে, গোলাপি লিপস্টিক, টিকলি, হালকা গহনা, হাত ভর্তি মেহেদী আর আলতা পায়ে আমাকে সেই লাগছে। এভাবে আমাকে দেখে আরাভ আবারো হারায় গেলো আমার মাঝে। কিন্তু আমার এসবের অভ্যাস না থাকায় আবার তারে ডাক দিলাম। সে চুপচাপ ছিলো। তাই কয়েকটা ঝাঁকি দিলাম। তার ঘোর আবারো ভেঙ্গে গেলো।
আরাভ- হুমম। বলো কি বলছিলা।
আমি- সেল্ফি তুলবেন? আসেন একটা সেল্ফি তুলি।
আরাভ- (সামান্য সেল্ফির জন্য আমার ঘোর ভাঙলো। আরাভ সেই রেগে গেলো।)
আমি- (তাকিয়ে দেখলাম। সে লাল হচ্ছে। বুঝলাম না কিছুই রাগ করলো কেনো?) আচ্ছা থাক তুলতে হবে না।
আরাভ- না না দেও আমি তুলে দিচ্ছি।
আমি- সত্যি?
আরাভ- হুম হুম সত্যি।
.
আমি ফোন টা ওর হাতে দিলাম। দিতেই ও রেগে ফোনটা নিজের কাছে রেখে নিলো।
আমি- কি হলো। পকেটে ঢুকালেন কেনো?
আরাভ- আজ আর এই ফোন পাবে না তুমি।
আমি- প্লিজ দেন। আজ সেল্ফি তুলতে হবে তো।
আরাভ- না দিবো না।
আমি- আম্মু তোমার মেয়ের ফোন কেড়ে নিছে। আম্মু গো তুমি কই? (কাঁদো কাঁদো স্বরে)
আরাভ- নাটক কইরা লাভ নাই। দিচ্ছি না।
আমি- দূরররর ।
.
রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলাম ওখান থেকে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো। আমি আমার ফোনকে মিস করতেছি। আর ওই হালারপো ফোন দেয়ও না। অনেকবার ফোন চাইলাম কিন্তু দিলো না। মাথায় একটা আইডিয়া আসলো। আমি আরাভকে রুমে ডাকলাম। অনেক দরকার আছে এটা বলে। হাতে একটা ব্যাট নিলাম। আরাভেরই পুরোনো। বাট ম্যানেজ করছি। আরাভ ঘরে আসতেই আমি দরজা লাগায় দিলাম।
আরাভ- ওএমজি আনহা তুমি আমাকে ধর্ষণ করবা?
আমি- কিহ না তো। আমি ছি ছি ছি । আমি এমন কেনো করবো?
আরাভ- তো দরজা লাগালা কেনো? দরজা খুলো বাহিরে মেহমান আছে।
আমি- না খুলবো না।
আরাভ- খুলো আমার বন্ধুরা আছে।
আমি- ফোন দেন।
আরাভ- তুমি ফোনের জন্য এতো কিছু করছো?
আমি- হুমমম ফোন দেন। বান্দর পোলা আমার ফোন দেন বলছি।
আরাভ- না দিলে কি করবা?
আমি- ওই হারামি, রাক্ষস, বান্দর আমার ফোন দে। দে বলছি।
আরাভ- (আরাভ ভেবেছিলো রোমান্টিক কিছু হবে। কিন্তু এমন হলো না আর আমার মুখে তুই তুই ভাষা শুনে ওর রাগ উঠে গেলো। আমার ফোনটা ভেঙ্গে দিলো)
আমি- আপনি ভেঙ্গে দিলেন?
আরাভ- নিচে পড়ে আছে দেখো না?
আমি- বান্দর পোলা। আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন কেনো?
আরাভ- আমাকে তুই বললা কেনো?
আমি- আমার ফোনননননন। (ফোনটা অনেক সাধের। বাপের কাছে মেলাদিন কান্দে কান্দে নিছি সেই ফোন ভাঙ্গে দিছে)
আরাভ- তুই বলার শাস্তি।
আমি- (কেঁদে দিলাম সাধের ফোনটার জন্য)
আরাভ- (কাঁদে কেনো? ফোনের জন্য কেউ কাঁদে নাকি?) কি হলো কাঁদছো কেনো?
আমি- আমার ফোন ভাঙ্গে দিলেন। আপনি অনেক বাজে।
.
এই বলে আমি কাঁদতে লাগলাম। আরাভের আমার কান্না দেখে খারাপ লাগলো। কি জানি ওর মাথায় এলো আর ও বাইরে চলে গেলো। আমি কিছু সময় পর কান্না মুছে বের হয়ে গেলাম।
.
প্রায় আধা ঘন্টা পর আরাভ এলো। সবাই খাচ্ছিলো। খাওয়ার টেবিলে। আরাভ আসার সাথে সাথে আমাকে দুই মিনিটের জন্য বলে ঘরে নিয়ে গেলো।
আমি- (রাগে কথা বলছিলাম না। অন্য দিকে ঘুরে ছিলাম)
আরাভ- কি হলো। কথা বলো মিস. বাঁচাল।
আমি- কি বলবেন বলেন। আপনার সাথে আমি কথা বলবো না। আমার ফোন ভাঙ্গে দিছেন আরো বড় কথা।
আরাভ- এই নাও। (এইটা প্যাকেট দিলো)।
.
আমি খুলে দেখি নতুন ফোন আর সেই ফোনই যেটা নেওয়ার ইচ্ছা আমার অনেকদিনের।
আমি- আপনি কেমনে জানলেন আমার এই ফোন কিনার ইচ্ছা?
আরাভ- প্রেয়সি বললো। তাই কিনে আনলাম।
আমি- ওয়াও এটার ক্যামেরা সেই থেংকু। উম্মাহ(এই বলে আরাভের গালে একটা কিস করে। খুশি মনে বাইরে চলে গেলাম)
.
আরাভ হাসতে লাগলো, “এই মেয়েটা আজব।”
.
চলবে?????