আমার বুড়ো অন্তিম পর্ব 

0
3540

আমার বুড়ো অন্তিম পর্ব

লেখিকা সুরিয়া মিম

!
যাই হোক বাবা তোমাকে আর জ্বালাবো না,
.
হা হা হা,

কি হয়েছে বুড়ো?
কিছু বলবে?
….
হ্যা একটা কথা আমি কিছুদিন হলো জানতে পেরেছি,
….
কিন্তু কিছু তেই তোমাকে সাহস জুটিয়ে বলতে পারছিনা,

আমি বুঝতে পারছিনা বিষয় টা তুমি,
কিভাবে নিবে?

কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো এভাবে নাটকের মতো সাসপেন্স ক্রিয়েট করো নাতো প্লিজ আমার ভয় করছে,
…..
তাহলে শোনো,
ইমান হসপিটালে,
…..
তো আমি কি করবো?
……
তুমি মানো আর না মানো এটা তো সত্যি যে ও তোমার স্বামী তোমার সন্তানের বাবা,
.
so what should I do?
.
মিশশশ ওর ব্রেন টিউমার ধরা পরেছে এবং ও লাস্ট স্টেজে আছে,
….
বুড়োর কথা শুনে আমার চোখেরজল চলে আসে,
….
কারন আমি চেয়েছিলাম যে খান সাহেব শাস্তি পাক,
তবে এভাবে পাক তা কখনওই চাইনি,
….
কেন চাইবো আমি ওনার সাথে সংসার করেছি,
ওনার সন্তানের মা হয়েছি,
ভালোবাসা মানে টা প্রথমে উনি আমাকে শিখিয়েছেন,
….
তাই কখনওই মৃত্যু কামনা আমি করতে পারবোনা,

যদি ও সে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তবু ও আমি তো নিষ্ঠুর নই,

কি হলো কি ভাবছ সোনা?
হসপিটালে যাবে?
…..
মা তোমার না হসপিটালে গিয়ে আঙ্কল কে দেখে আসা উচিত,
কারন,
আঙ্কল বোকামো না করলে তো তোমাকে আমি আমার মা করে পেতাম না তাই না?

তাই বলছি চলো না মা,
একটি বার গিয়ে দেখে আসো,
….
মেয়ে ও তার বাবার কথা শুনে রেডি হয়ে ওদের সাথে হসপিটালে যাই,
…..
হসপিটালে ঢুকতেই ছোটো ছেলেটা আমাকে জড়িয়ে ধরে,
হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে,
….
ইশান বাবা কাঁদেনা,
দেখি চোখেরজল মুছো,

এখানে মিসেস খান কে?
….
হ্যা ডক্টর বলুন?
….
আসলে আপনার হ্যাজবেন্ট আপনাকে দেখতে চেয়েছিলেন,

এখন উনি ঘুমিয়ে আছেন তবে তাকে একবার দেখে আসতে পারেন,
…..
চলো আমি তোমাকে ইমানের ক্যাভিনে নিয়ে যাচ্ছি,
….
বুড়ো তোমার কষ্ট হয় না তোমার বৌ কে তার প্রথম স্বামীর কাছে নিয়ে যাচ্ছ?

নিয়ে যাচ্ছি দিয়ে তো আসছিনা,
তাছাড়া আমি চাই না ও যে কটা দিন বাঁচুক মনে কষ্ট নিয়ে বাঁচুক,
..
তাই ও যদি তোমাকে চোখের দেখা দেখে স্বস্তি পায় পাক,
আমার কোনো অভিযোগ নেই,

কারন ওর জন্যে আমার ভালোবাসার মানুষ টিকে খুজে পেয়েছি,
….
চলো ভেতরে চলো,
..
ক্যাভিনের ভেতরে ঢুকে দেখি উনি,
ঘুমিয়ে আছেন এবং ওনার মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে আছে,
….
একটু ছুয়ে দেখবে ওকে?

বুড়ো তোমার মাথাটা কি গেছে?

না গো না,
.
তারপর বুড়ো আমার হাত টা তুলে ওনার গালে ছুয়ে দেয়,
আর আমার গালে চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যায়,
….
হঠাৎ উনি আমার ওনার গালে চেপে ধরে বলেন,
.
মিশু তুমি এসেছ?
আমি না খারাপ কাজ করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও,
আমি তো তোমার ঘৃণা নিয়ে কবরে যেতে পারবোনা,

আমার কাছে একটু আসবে?
.
ওনার কাছে আসতেই উনি ওনার বা হাত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
….
আমি তোমার সংসারে কোনো অশান্তি চাই না
আমি মরে যাওয়ার আগে তোমাকে প্রতিদিন চোখের দেখা দেখতে পাওয়ার অনুমতি চাই,
….
তোমার কাছে ক্ষমা চাই,
আমি কখনওই তোমার কাছে স্বামীর অধিকার দাবি করবোনা,
….
দেখুন আমার ওপরে কোনো অভিযোগ নেই,
আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি
আমি এখন আসি ,

আমি ক্যাভিনের বাহিরে এসে দেখি আমার বুড়ো টা চেয়ারে বসে ভিডিও গেম খেলছে,
..
আমাকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

কি হলো মাএ পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে এলে হুমমম?
….
হ্যা তো?

ডক্টর কিছু বলেন?
…..
হ্যা মিস্টার খানের মেন্টাল কন্ডিশন যা দেখলাম,
তাতে ওনাকে কোনো স্ট্রেস দেওয়া যাবেনা,
যত সম্ভব ওনাকে হাসি খুশি রাখতে হবে,
….
যেকোনো মেন্টাল প্রেশার ব্রেনের জন্যে বিপদজনক হতে পারে,
..
আই হোপ আমি কি মিন করছি সেটা আপনারা বুঝতে পারছেন,

তাই বলছি বি কেয়ার ফুল,
….
ওকে,

একটা কথা বলবো বুড়ি?

হ্যা বলো?
….
ইমান কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে?
আমরা সবাই মিলে ওর দেখা শোনা করবো,

দেখো ও অল্প কয়দিনের মেহমান নিজের কর্মের নিজেই পস্তাচ্ছে,
…..
ও হয়তো নিষ্ঠুর আমরা তো নই তাই না?
….
বুড়ো তুমি কি আমার মনে ঢুকে দেখেছিলে আমি কি চাই?
….
হ্যা আমি তো জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো,
ইমান কে বাসো তবে আমার থেকে কম,

তোমার কষ্ট হবে তো?

হবে না বুড়ি,
মানবিকতা বলতে ও একটা জিনিসআছে,
….
তাছাড়া তোমার আদর ভালোবাসা পওয়ার অধিকার শুধু আমার একার না ইমানের ও আছে,
তোমার বাচ্চাদের বাবাতো,
তোমার স্বামী তো বলো?
….
তোমার মাথা টা না গেছে বুড়ো,

হুমম, আই লাভ ইউ বুড়ি,

যাহহহ দুষ্টু মি করে,
.
তারপর আমি বাসায় ফিরে যাই,

সন্ধায় আমার বুড়ো খান সাহেব কে নিয়ে হাজির হয়,
…..
তারপর ওনাকে ধরে আমাদের পাশের রুমে শুইয়ে দেয়,
…..
বিদেশি ডক্টর এসে ওনার প্রপার চেকাপ করেছিলেন,

চেকাপ করে জানায় ওনার হাতে বেশি সময় নেই,
….
মাএ দু মাসের মেহমান উনি,
তাই আমি চাই না উনি মনে কষ্ট নিয়ে চলে যাক,
….
আর তাই আমি আমার সবটা দিয়ে ওনার সেবাযত্ন করি,
আমার বুড়ো টাও আমাকে সাহায্য,
….
একদিন দুপুরে উনি হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

তোমাকে আমি এতো কষ্ট দিয়েছি,
তবু ও তুমি আমাকে কেন ভালোবাসো,

ডক্টর বলেছে আপনাকে স্ট্রেস না নিতে আপনি কাঁদবেন না প্লিজ,

আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?

ওনার কথা শুনে তাকিয়ে দেখি,
আমার বুড়ো টা ওনা র পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতে ইশারা করছে,

তাই আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরি,

তখন বুড়ো টা মিষ্টি হাসি দিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,

তারপর আমি ওনাকে শুয়ে দিয়ে বুড়োর সাথে রুমে চলে যাই,

তখন বুড়ো টা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর আমি বুড়োর কপালে আলতো করে চুমু একে দেই,
…..
রাতে আমি একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম,

তখন দুপাশ থেকে দুজন এসে আমার হাত চেপে ধরে,

ডায়ে বায়ে তাকিয়ে দেখি,
আমার বুড়ো দুটো আমার হাত চেপে ধরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে,
আজকে আমার নিজেকে সবচেয়ে সুখী বলে মনে হচ্ছে হুমমমম,
…..
কারন আজকে আমার স্বামী দের সাথে এক সাথে দাঁড়িয়ে রমজানের চাঁদ দেখছি,
…..
কালকে থেকে রহমতের দিন শুরু,
সবাই দোয়া করবেন আমি যেন আমার বাচ্চাকাচ্চা ও বুড়ো দুটো কে নিয়ে সুখেস্বচ্ছন্দে পারি,

.
…..
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে