#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_19
#Sabrina_Summa
বৃহস্পতিবার.,.
আগামীকাল মিস সিক্রেটের বিয়ে। আজ তার এবং রুদ্রের গায়ে হলুদ।
এখনও রুদ্র সকলেই সামনে আসেনি। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে সবই জানা মিস সিক্রেটের।
মাহিরকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। মিস সিক্রেটের বিয়ে হলেই তো মাহির বাঁচে।
তাই তো মাহির যদি বেঈমানী করেও তবুও একটা উল্টো চাল দিবে মিস সিক্রেট ।
হলুদ লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে মিস সিক্রেট। সাথে মেচিং হুডি এবং মাস্ক তো আছেই।
সবাই নাচ গান করছে আর সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তবে এগুলো তে মন নেই তার। সে তো নিজের ভাবনায় ডুবে। সে ভাবছে –
” যদি আজ বা কাল মাহির বেঈমানী করে তবে সে সত্যিই সুপ্তিকে হারাবে। আর মিস সিক্রেট রুদ্রকে খুন করবে। ”
হলুদের দিন চলে গেলো। তবে হলুদই লাগানো হলো না। কারণ মাহির লাগাতে দেয় নি।
এই কয়েকদিন ধরে মাহির আর সুপ্তির দেখা হয় নি। শুধু মেসেজে কথা হয়েছে। কারণ মাহির খুব বিজি থাকে ৷
শুক্রবার।
আজ মিস সিক্রেট আর রুদ্রর বিয়ে ৷ সবাই মজা করছে। সব জায়গায় মানুষ। কেউই সত্যিটা জানে না শুধু মাহির, মিস সিক্রেট ও তার টিম এবং কিছু ফোর্স ব্যতিত।
যারা জানে তারা সবাই তাদের পজিশন নিয়ে ছদ্মবেশে আছে।
একটা রুমের সোফায় কালো কালারের গর্জিয়াস লেহেঙ্গা পড়ে পা সোফায় তুলে আরামছে ফোন চালাচ্ছে মিস সিক্রেট। বাহিরে কি হচ্ছে তাতে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
“বিয়েতে কালো লেহেঙ্গা ঠিক মানানসই না ” এই উক্তিটা মাহির মিস সিক্রেটকে বুঝাতে অক্ষম। তাই তো মাহিরকে কালো লেহেঙ্গা কিনতে হয়েছে। কারণ মিস সিক্রেট তো নাছোড়বান্দা। কালো তার পছন্দ তো সবকিছু কালো হওয়া চাই।
কারো রুমের শব্দ পেলো মিস সিক্রেট। তবে কোনো ভাবান্তর দেখালো না। পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো, ” হাই বেবি।”
মিস সিক্রেট ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো, ” আমাকে দেখে বাচ্চা মনে হয়? ”
সেই মানুষটি আবারও বললো, ” তুমি বাচ্চা হবে কেন! আমি আদর করে তোমাকে বেবি ডাকছি। ”
” তোর আদর তোর কাছেই রাখ বুইড়া। ৩৫ বছরের বুইড়া হইয়া ২৫ বছরের যুবতিকে বিয়ে করতে আসছিস। লজ্জা করে না? ” ( মনে মনে )
মিস সিক্রেট : তা এখানে কেন রুদ্র শেখ? এসেছো যখন বসে পড়ো।
রুদ্র : ছিঃ ছিঃ। জামাইয়ের নাম ধরে ডাকছো।
” তোকে তো মনে হচ্ছে এখানেই শুট করে মারি। কি ন্যাকা কথা! ওয়াক থু। “( মনে মনে )
রুদ্র : একটু পর তো আমাদের বিয়েই হবে। তো আমি আসতে পারি না!
মিস সিক্রেট : মেয়েদের কিন্তু এখনও ছাড়ো নি।
রুদ্র : এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? আগে বিয়েটা হোক।
মিস সিক্রেট নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” ২ মিনিট টাইম দিলাম। যদি মেয়েগুলো নিরাপদ স্থানে না পৌঁছায় তবে বিয়েটাই হবে না। আর যদি বিয়ে না হয়, তাহলে বুঝতেই পারছো তোমার কি হবে! ”
রুদ্র : ওকে, ছাড়ছি।
কাউকে কল করে মেয়েগুলোকে ছাড়ার আদেশ দিলো এবং মিস সিক্রেট ছাড়ার সিসি টিভি ফোটেজ দেখালো।
মিস সিক্রেটের ফোনে মেসেজ আসলো মেয়েগুলো নিরাপদে আছে ৷
সাথে সাথে সেও মেসেজ করলো ইরফানকে। তার কিছু মুহূর্ত পর রুদ্রকে ঘেড়াও করে ফেললো বিভিন্ন ফোর্স।
রুদ্র মিস সিক্রেটের দিকে গান তাক করলো। কিন্তু মিস সিক্রেটের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে তার মতোই আরামছে সোফায় বসে রইলো।
মিস সিক্রেট : তোমার কি মনে হয়, আমার দিকে গান তাক করে তোমার ১% ও লাভ হবে!
রুদ্র : খুব বড় ভুল করছো। আমি মরে গেলেও আমার সকল কর্মের খবর তুমি পাবে না। আমার লোক তোমাকে ছাড়বে না।
মিস সিক্রেট : তোমার সকল গোডাউন, তোমার সকল লোক এখন আমার আন্ডারে।
এরই মাঝে রুদ্র মিস সিক্রেটের বুক বরাবর গুলি করে দিলো। সুযোগ বুঝে ইরফান গানটা ছিনিয়ে নিলো।
এই গুলিতে মিস সিক্রেটের কিছুই হলো না। উল্টো মিস সিক্রেট রুদ্রর পায়ে গুলি করে বললো, ” হয়তো তুমি নিশানা তাক করতে ভুলে গেছো। আমার মতো মানুষকে শুট করতে হলে বুকে না মাথায় করতে হবে। কারণ আমার মতো মানুষ সবসময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে থাকে। ”
রুদ্র পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।
তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।
মিস সিক্রেট মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকালো। তারপরই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল।
মাহির মিস সিক্রেটকে ধরলো কিন্তু পরে ইরফানকে বললো, ” ওকে নিয়ে যাও। ”
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেজে থাকে সবসময়। ”
ইরফান : হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।
#চলবে.,.
#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_20
#Sabrina_Summa
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেক করে বললো, ” লো প্রেশার। খুব স্ট্রেসে থাকে সবসময়। ”
ইরফান :হ্যাঁ, তা তো থাকতেই হয়।
ডক্টর : যদি কিছু মনে না করতেন। ম্যামের মাস্কটা কিন্তু খোলা প্রয়োজন।
মাহির : আপনার কি মরার খুব শখ হয়েছে?
ডক্টর : না, কিন্তু এটা প্রয়োজন ৷
ইরফান : এটা যদি করি তাহলে আপনি তো মরবেন মরবেনই। সাথে আমাকেও মরতে হবে।
মাহির : এমনিতেই যা করেছি! মাস্কটা খোলা ছাড়া অন্য কোনো আইডিয়া দেন।
ডক্টর : আমার আর কিছু বলার নেই। স্যালাইন দেওয়া আছে জ্ঞান ফিরে যাবে । ম্যামকে ভারি ড্রেস থেকে নরমাল ড্রেসে আনুন। আমি চললাম।
বলা শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ইরফান : মহিলাদের তো আগেই এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন চেঞ্জ করাবে কে!
মাহির : এই ডক্টরের সব মারার মতো আইডিয়া। যাইহোক ইরফান তুমি থাকো ৷ আমাকে বাকি বিষয়টা দেখতে হবে।
মাহিরও বেরিয়ে গেলো।
ইরফান ঘাড়ে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে রেখে সবাই পালাচ্ছে কেন? শেষে তো আমিই মরবো।”
আধা ঘণ্টার মাঝে জ্ঞান ফিরলো মিস সিক্রেটের।
এরপর ড্রেস আপ চেঞ্জ করে ইরফানকে বললো, ” মাহির কোথায়? ”
ইরফান : ম্যাম,ওই দিকটা সামলাতে গেছে।
মিস সিক্রেট : ওকে কল দেও।
১ সপ্তাহের মাঝে ভালো বন্ধুত্বই হয়ে গেছে তাদের ৷ মাহিরের চিন্তাভাবনা বদলেছে ৷ মিস সিক্রেটের ক্ষতি করার ইচ্ছাটা এখন আর তার নেই।
মাহির কল রিসিভ করতেই মিস সিক্রেট রেগে বললো, ” মাহিরের বাচ্চা, তোরে খালি পাই আমি। তোকে আমিই খুন করবো। ”
মাহির : সরি, সরি। আমি জানতাম না ও শুট করে দিবে। আর আমাকে একদম মাহির বলবে না। মাহির শুধু সুপ্তি বলবে। আর তুই তুকারিও করবে না। ফ্রেন্ড বলেই এমন করতে পারো না তুমি!
মিস সিক্রেট : তুমি শুধু আসো। আমি কি করতে পারি আর না করতে পারি দেখাবো নি।
মাহির : ওকে বাবা, আসছি।
মিস সিক্রেট : আমি বাবা নই। আর মরতে না চাইলে তাড়াতাড়ি আসো। বাই।
বলেই কল কেটে দিলো।
মাহির আসতেই মিস সিক্রেট রাগী চোখে তাকালো।।
মাহির : সারেন্ডার করছি। তবুও মেরো না। ( হাত উপরে তুলে )। তোমার জন্য ছোট একটা গিফট আছে।
মিস সিক্রেট : কি গিফট?
মাহির একটা ছোট ডাইরি এগিয়ে দিয়ে বললো, ” এতে তোমার ফেয়ারগুলো সম্পর্কে লেখা আছে এবই প্রতিকারও আছে। একদিনের জন্য ঘুষ দিচ্ছি। তারপর ফেরত দিবে। ওভারঅল, আমার প্রেমিকার বলে কথা। ”
” আমার জিনিস আমাকেই গিফট দিচ্ছে। তাই তো বলি আমার নাম্বার পাও কোথা থেকে! “( মিস সিক্রেট মনে মনে )
মিস সিক্রেট : আমি বাহিরে যাবো কি করে? সাংবাদিকরা তো অপেক্ষা করছে।
মাহির : এখানেই থেকে যাও।
মিস সিক্রেট : আমার কি খাইয়া দাইয়া আর কোনো কাম নাই? এমনিতেই এক সপ্তাহ ধরে তোমার কাজে পড়ে আছি। ( রেগে )
মাহির : একদিনই তো। না, হয় মাস্ক হুডি খুলে বেরিয়ে যাও। কেউ চিনতেও পারবে না।
মিস সিক্রেট : মাস্ক, হুডি খোলার থেকে এখানে থাকাও ভালো আছে।
মাহির: তাহলে থাকো।
বলেই চলে গেলো।
রাতে মিস সিক্রেট লাইভে এসে সব কিছু ক্লেয়ার করলো।।
কেটে গেলো আরও কয়েকটি দিন। সবাই আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। এখনও বিভিন্ন বাহানায় মাহির সুপ্তির ক্যাম্পাসে যায়। তবে কারোরই বুঝার বাকি নেই সে কেন আসে এখানে! সবাই জানলেও সুপ্তিকে এখনও কনফেস করে নি নিজের ফিলিংস সম্পর্কে।
সময় বিকেল পাঁচটা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট।
বহু দিন পরে, বহু ক্রোশ দূরে ঘুরতে এসেছে মাহির ও সুপ্তি। বহু ক্রোশ দূরে বলতে ক্যাম্পাস থেকে দূরে একটা পার্কের লেকের এক কোনে বসে আছে তারা। কিছু বডিগার্ডও আছে। তবে তারা কিছুটা দূরে। মিডিয়া এড়াতে ক্যাপ পড়ে আছে মাহির। হাতে তার গিটার। তবে এখানে গান কম গল্প বেশি হচ্ছে। হঠাৎ করে সুপ্তি বলে উঠলো, ” গিটারটা আমাকে দিন। ”
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” তুমি গিটারও বাজাতে পারো? ”
সুপ্তি : হ্যাঁ, আমি সবই পারি। শুধু ওই বাস্কেটবলেই যা সমস্যা।
মাহির বাস্কেটবল শব্দটা শুনতেই হেসে দিলো।
সুপ্তি : হাসছেন কেন?
মাহির : সেদিনের কথা মনে পড়লো।
দুদিন আগে.,.
মাহির চুপচাপ বসে ছিল। মাহিরকে দেখে সুপ্তিও চুপচাপ বসে ছিল।
হঠাৎ মাহির বলে উঠলো, ” চলো, তোমাকে বাস্কেটবল খেলা শিখায়। ”
সুপ্তি মুখ ভাঙ্গিয়ে বললো, ” আমি পারি। ”
মাহির : তাহলে চলো, এক ম্যাচ খেলা যাক।
সুপ্তিও উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ” ওকে। ”
খেলা শুরু হলো। কিন্তু বাস্কেটবল হূকটা উপরে থাকায় মাহির সুপ্তি দুইজনেই বিরক্ত হলো। কারণ সুপ্তি গোল করতে পারছে না।
মাহির বিরক্ত হয়ে বললো, ” তুমি পারবে না। তুমি বেশি শর্ট। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বললো, ” আমি শর্ট না। তুই বেশি লম্বা। ”
মাহির তো এ কথা শুনে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খেল। আর সুপ্তি রাগ করেই রইলো।
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, ” আপনি থেকে সরাসরি তুই এ চলে গেলে? ”
সুপ্তি : তাছাড়া কি করবো। আমি ৫ ফুট ৪ হয়েও যদি শর্ট হই তবে যারা আসলেই শর্ট তারা কি? ( রেগে )
মাহির : আচ্ছা, সরি। সব দোষ ওই হূকের ৷
সুপ্তি রেগে চলে গেলো। সেই রাগ ভাঙ্গাতে আরও একদিন লাগলো মাহিরের।
#চলবে.,.