#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_11
#Sabrina_Summa
দীর্ঘ চারদিন পর ক্যাম্পাসে আসলো সুপ্তি। নিমিষেই এ খবর চলে গেলো মাহিরের কানে।
আজও সুপ্তি বকা খাচ্ছে স্যারের কাছে। এভস্যান্ট থাকার জন্য।
তাকে বসানোর একটু পরই ক্লাসে প্রবেশ করলো মাহির।
মাহিরকে দেখে স্যার বলে উঠলো, ” আরে আরে তাশরিফ যে! ”
মাহির : সরি স্যার। বাট আমার একজনকে লাগবে। ( উকি ঝুকি দিয়ে কাউকে খোঁজার চেষ্টা করে)
স্যার : কাকে?
মাহির : সুপ্তিকে৷
স্যার : সুপ্তি নামে কেউ আছো? স্ট্যান্ড আপ কুইকলি।
কেউ দাঁড়ালো না। সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
সুপ্তি নিজের নাম শুনে হেড ডাউন করে বসে আছে। আর সুশমিতা তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এরই মাঝে স্যার নামের লিস্টটা ভালো করে দেখে বললো, ” সুপ্তি নামে কেউ নেই। ”
মাহির ভ্রু কুচকে বললো, ” তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি ভুল ইনফরমেশন নিয়ে এসেছি! ”
স্যার : না তাশরিফ। আমি তা মিন করি নি।
মাহির : ওয়েট, আমিই খুঁজছি।
সানগ্লাসটা খুলে টি-শার্টের সাথে ঝুলিয়ে বেঞ্চের দিকে আগালো মাহির।
সুপ্তি বসে আছে ক্লাসের মিডেলের বেঞ্চের দিকে। লুকিয়ে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা তার৷ কিন্তু সুশমিতা কৌতুহল আটকাতে না পেরে অবাক হয়ে বলে উঠলো, ” সুপ্তি, তোকে তাশরিফ চৌধুরি খুঁজছে? ”
সুপ্তি : আরে চুপ থাক এখন। পরে বলবো কাহিনি।
বলতে গিয়ে খেয়াল করলো পুরো ক্লাস তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷
মূলত মাহিরের উপস্থিতিতে একটা কানাগোষা চলতেও তা খুবই ধীরে। এক প্রকার বলা চলে পুরো ক্লাস নিরব। আর সুশমিতা অবাক হয়ে সুপ্তি নামটা একটু জোরেই বলে ফেলেছিল। ফলস্বরূপ সকলের দৃষ্টি এখন সুপ্তির দিকে।
সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহিরও সে জায়গায় দ্রুত গেল। তারপর নিজের কোমরে হাত রেখে বললো, ” চলো৷ ”
স্যার বলে উঠলো, ” স্ট্যান্ড আপ। ”
সুপ্তি খুবই অস্বস্থিকর পরিবেশে পড়ে গেছে। তাও উঠে দাঁড়ালো।
সুপ্তিকে দেখেই স্যার বলে উঠলো, ” ও তো রিশিতা খানম। ”
মাহির : হ্যাঁ। ডাকনাম সুপ্তি। ভুলেই গিয়েছিলাম।
স্যার : কি করেছে ও?
মাহির : কিছুই না। আমার ফ্রেন্ড ও। নিয়ে যাচ্ছি। মাইন্ড করবেন না।
বলা শেষ করে সুপ্তিকে যাওয়ার জন্য ইশারা করলো। সুপ্তিও বাধ্য মেয়ের মতো হাটাঁ করলো। এখানে কিছু বলে আর সিন ক্রিয়েট করতে চাই না সে। মাহিরও সুপ্তির পিছে পিছে হাঁটা শুরু করলো।
পুরো ক্লাস তাদের যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।
একটা মেয়ে বললো, ” এই ছেলেটা এত হ্যান্ডসাম কেন! ”
মেয়েটার পাশেরজন মেয়েটার কথায় তাল মিলিয়ে বললো, ” এই সুপ্তিকে তো আমি চিনতামই না। যদি আমি ওই সুপ্তির জায়গায় থাকতে পারতাম।।
মাহির সুপ্তিকে ৩১৯ নাম্বার কক্ষ অর্থাৎ মাহিরের প্রশিক্ষণ কক্ষে নিয়ে গেলো। রুমের ভিতরে প্রবেশ করার আগে পর্যন্ত দুইজনই চুপ ছিল। নিরবতা ভেঙে মাহিরই বললো, ” এই নাটকের কি দরকার ছিল? ”
সুপ্তি একটা চেয়ারে বসে বললো, ” আপনার এই নাটকের কি দরকার ছিল? ”
মাহির : নিজেকে চিনো না নাকি!
সুপ্তি : কেন আনলেন সেটা বলেন।
মাহির : কতদিন ধরে দেখি না বলো তো!
সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” আপনার কি মেয়ের অভাব পড়লো নাকি? ”
মাহির আর কি বলবে! সে সুপ্তিকে একবার দেখার জন্য এতটা উৎফুল্ল কেন সেটাই তো বুঝতে পারছে না। তার মাঝে এ মেয়ে তো আছেই সবসময় তাকে প্লে বয় প্রমাণ করার জন্য!
মাহির : কোথায় ছিলে এতদিন?
সুপ্তি : বলেছি তো অসুস্থ ছিলাম।
মাহির : এতটাই যে একবারও ভার্সিটিতে এলে না!
সুপ্তি : আপনার কি মনে হয় আমি ইচ্ছে করে ভার্সিটি অফ দিবো সামনে এক্সাম থাকা সত্ত্বেও!
মাহির : তিন বছরও তো দিয়েছো!
” আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি । কাজে ব্যস্ত থাকলে কি করবো! ” ( মনে মনে )
মাহির : পড়ছো তো কঠিন বিষয় রাজনীতি নিয়ে। ফেল করলে কি করবে?
” সেটা তো আমারো চিন্তা। কোটি কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও আমাকে অসহায় অবলা নারী হয়ে থাকতে হবে। আমি তো ব্যবসার ‘ব’ ও বুঝি না। শুধু বুঝি রাজনীতি । কিন্তু আমি ভোটে দাঁড়ালে তো কেউ ভোটই দিবে না। কারণ সবাই চিনে মিস সিক্রেটকে সুপ্তিকে নয়। এগুলো ছাড়া এত রিচ দেখানো সম্ভবও না। “( মনে মনে )
মাহির : মনে মনে উত্তর না দিয়ে সরাসরিই তো দিতে পারো যাতে আমি শুনতে পারি।
সুপ্তি : আচ্ছা একটা গল্প শুনবেন।
মাহির : হুম বলো৷
সুপ্তি : একছিল মাফিয়া কুইন। তার ছিলো অনেক টাকা।…
মাহির কথার মাঝখানে বললো, ” মাফিয়া। অবৈধ টাকা তো থাকবেই। ”
সুপ্তি : আরে চুপ থাকেন। আমাকে বলতে দেন। কথার মাঝখানে কথা বলবেন না।
মাহির মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
সুপ্তি : তবে কেউ তার পরিচয় জানতো না। রাতের বেলায় ছিল মাফিয়া কুইন এবং দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ। এতটাই সাধারণ যে তার চলার মতো টাকায় নেই। কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলায় তা ব্যবহার করতে পারতো না। কারণ একটাই কেউ তো তার পরিচয় জানে না। হঠাৎ করে ধনী হয়ে গেলে মানুষ অবৈধ টাকা বলবে না! কিন্তু তার টাকা তো অবৈধ নই। তাকে জেলেও দিতে পারে। তখন তার পরিচয় তো মানুষের সামনে চলে আসবে। সে তো এটা হতে দিবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো দিনের বেলায় ভিক্ষা করবে।…”
মাহির আবারো কথার মাঝে কথা বললো, ” তাহলে বড়লোক কাউকে বিয়ে করলেই হয়! ”
সুপ্তির বলতে ইচ্ছে করলো, ” তুই করবি বিয়ে এক ফকিরকে! ” কিন্তু বললো না। শুধু চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো। তাতেই চুপ হয়ে গেল মাহির৷
সুপ্তি : আমরা এই ঘটনায় মাফিয়া কুইনকে কি বলতে পারি! সে হলো কোটিপতি ফকির।
” আর সেটা হলাম আমি। ” ( মনে মনে )
মাহিরের কাছে গল্পটা তেমন ইন্টারেস্টিং লাগলো না। তবুও কিছু বললো না।
সুপ্তি : আজ আসি।
মাহির : পরে যাও। আগে এক রাউন্ড ফাইট করে যাও৷
সুপ্তি : আজ না।
মাহির : কেন ভয় পেলে?
সুপ্তি : না। তবে আমি সুস্থ নই। আজকে তোমার জিতার চান্স ৭০% ।
মাহির : এত কনফিডেন্স। যে ৩০% নিয়ে নিলে।
সুপ্তি : হ্যাঁ। আজ আসি।
বলেই উঠে দাঁড়ালো।
মাহির : কাল কখন দেখা হচ্ছে?
সুপ্তি : ক্লাস শেষে। ক্যাম্পাসে।
বলা শেষ করে চলে গেলো। ক্লাসে গিয়ে সুশমিতাকে সব বললো ৷
সুশমিতার মনে হচ্ছে মাহির সুপ্তিকে ভালোবাসে । তবে সুপ্তির ধারণা কোনো প্লে বয় কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারে না। আর যদি বাসে তবে সেটা তারই লাভ।।।
#চলবে.,.