মাতাল হাওয়া পর্ব-২৩+২৪

0
547

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-২৩
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

রওনকের কেবিনে টেবিলের এপাশ আর ওপাশে মুখোমুখি বসে আছে ওরা দুই ভাই। ছোট ভাইয়ের জরুরী তলবেই বড় ভাই রাদিন এসেছে তার সঙ্গে দেখা করতে। এসেই খানিকক্ষণ এদিক সেদিকের কথা বলে রাদিন জিজ্ঞেস করে,

-তুই হঠাৎ আমায় অফিসে এসে দেখা করতে বললি কেন? এমন কি জরুরী কথা যা এখানেই বলা লাগবে? বাসায়ও তো কথা বলা যেতো নাকি বাসায় বলা যাবে না? কেউ শুনে ফেললে সমস্যা?

-এত অধৈর্য্য হচ্ছো কেন ভাইয়া? আসছো কিছুক্ষণ বসো। আমি যেহেতু তলব করেছি অবশ্যই বলবো কেনো আসতে বলেছি। তুমি তো অফিসে আসোই না। আজ যেহেতু আসছোই কিছুক্ষণ বসো। আমার ছোট্ট একটা কাজ আছে, শেষ করি। ততক্ষণে তোমার জন্য চা দিতে বলি। এক কাপ ওয়াও লেভেলের চা খাও।

-লাল চা আমার জন্য বলিস না। ওসব লিকার ভালো লাগে না।

স্মিত হেসে রওনক বলে,

-চিন্তা করো না গরম পানির লিকার খাওয়াবো না। ওয়ার্ল্ড ক্লাস চা খাওয়াবো আজ তোমায়।

-ওয়ার্ল্ড ক্লাস! বলিস কি? অফিসে এই জিনিস কীভাবে এলো?

-তোমার ছোট ভাইয়ের হাত অনেক বড় জানোই তো। জোগাড় করে ফেলেছি।

-তাহলে বল এক কাপ ওয়ার্ল্ড ক্লাস চা দিতে। খেয়ে দেখি কেমন তোর ওয়ার্ল্ড ক্লাস চা।

আর কথা না বাড়িয়ে ইন্টারকমে ফোন করে রওনক চিত্রলেখাকে বলে দু’কাপ চা দিয়ে যেতে। তারপর নিজের কাজে ব্যস্ত হয় সে। চিত্রলেখা চা দিয়ে গেলে রাদিন বেশ আরাম করেই চা-টা পান করে। আয়েশ করে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা নামিয়ে রেখে বলে,

-তুই তো ঠিকই বলেছিস রে। এতো দেখছি ওয়ার্ল্ড ক্লাস চা। চায়ের কোনো কম্পিটিশন হলে নিঃসন্দেহে এই চা জিতে চ্যাম্পিয়ন হবে।

ভাইয়ের কথার বিপরীতে কিছু না বলে আবার কেবল স্মিত হাসে রওনক। রাদিন হাত ঘড়িতে সময় দেখে। এখানে আসার পর এই পর্যন্ত সাতবার হাত ঘড়িতে সময় দেখেছে সে। তা রওনকের দৃষ্টি এড়ায়নি। শুধু হাত ঘড়ি নয়। দেয়াল ঘড়ির দিকেও তাকিয়েছে বেশ কয়বার। বড় ভাইয়ের যে বিশেষ তাড়া আছে তা রওনক জানে। এবারে মুখ খুলে সে বলে,

-তোমার বুঝি তাড়া আছে বের হবার?

খানিক অপ্রস্তুত হয়ে রাদিন বলে,

-না, ঠিক তা নয়।

-তাহলে বারবার ঘড়ি দেখছো যে! কারো সাথে এপয়েন্টমেন্ট আছে নিশ্চয়ই?

-সামনে একটা এক্সিবিশন আছে। সেই রিলেটেড মিটিং আছে একটা।

-বেশি জরুরী হলে ফোন করে বলে দাও আজ তুমি যেতে পারবে না।

রওনকের কথায় কিঞ্চিৎ অবাক হয় রাদিন। অবাক হওয়াটা তার চোখ-মুখে ফুটে উঠেছে। সে বলে,

-যেতে পারব না কেনো? এখনো তো সারাদিনই পড়ে আছে।

-দিন পড়ে থাকলেও আমার মনে হয় আমি এখন তোমাকে যে কথাগুলো বলবো তা শুনার পর তুমি হয়ত নিজেই আর যাবে না।

রওনকের কথার আগামাথা ধরতে পারে না রাদিন। তাই বলে,

-হেয়ালি না করে স্পষ্ট করে বলতো কি বলতে চাইছিস। তোর কথায় রহস্য টের পাচ্ছি।

-রহস্য তো আছে তবে আমার নয় তোমার।

-আমার রহস্য! আমার আবার কিসের রহস্য?

-তুমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছো?

রওনকের প্রশ্নে থতমত খায় রাদিন। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টাও করে। তার সিঙ্গাপুর যাবার বিষয়টা কেউ জানে না। সে এখনো কাউকে জানায়নি। শুধু তানিয়াকে বলেছে তার পেইন্টিংয়ে মন বসছে না তাই হাওয়া বদলের দরকার। কেবল এতটুকুই বলেছে। ভুলেও সিঙ্গাপুর তো দূরের কথা এটাও জানায়নি সে দেশের বাইরে যাচ্ছে। তাহলে এই খবর রওনক কীভাবে জানলো? টিকেটটাও সে নিজে কেটেছে। অন্য কাউকে দিয়ে কাটায়নি যদি বিষয়টা লিক হয়ে যায় এই ভয়ে। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত নামে। রাদিনের ক্ষেত্রে হয়েছে তাই। সে কাউকে না জানিয়ে সিঙ্গাপুর যাবে ভেবেছিল কিন্তু তা মনে হয় আর হলো না। তবে এই মুহূর্তে রাদিনের মাথায় প্রশ্ন ঘুরছে, রওনক কি তানিয়াকে বিষয়টা জানিয়েছে? প্রশ্নটা করতে চেয়েও চেপে যায় সে। ভাইকে চুপ করে থাকতে দেখে রওনক নিজেই বলে,

-অবাক হচ্ছো? অবাক হওয়ার তো কিছু নেই ভাইয়া। এত বড় ব্যবসা যে সামলাচ্ছে তার জন্য কি এতটুকু খবর রাখা খুব কঠিন কিছু?

-তুই কি আমার পেছনে স্পাই লাগিয়েছিস?

-স্পাই লাগানোর কি কোনো প্রয়োজন আছে?

প্রশ্নের বিপরীতে পাল্টা প্রশ্নের তৎক্ষনাৎ জবাব দেয় না রাদিন। দুই সেকেন্ড সময় নেয়, ভাবে, তারপর বলে,

-হ্যাঁ যাচ্ছি, এটা তো নতুন কিছু নয়। এর আগেও কয়েকবার সিঙ্গাপুর গিয়েছি আমি।

-আগের যাওয়া আর এখনের যাওয়াটা যে এক নয় তা তুমিও ভালো করেই জানো ভাইয়া। তুমি সিঙ্গাপুর ঘুরতে যাচ্ছো না। বরং সেটেল্ড করতে যাচ্ছো। তুমি ভাবীকে চিট করছো।

রাদিনের থতমত ভাবটা বেড়ে গেল মুহূর্তেই। নিজেকে সামলে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে সে। কথা ধরে আসছে তার। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

-আমি তানিয়াকে চিট করছি এই কথা তুই বলতে পারলি?

-তুমি করতে পারছো আর আমি বলতে পারবো না? তুমি তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছো এটা তো মিথ্যা নয়।

নিজের মোবাইল ফোনটা রাদিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে রওনক আরও বলে,

-যদি মিথ্যা হয়ে থাকে তাহলে এসব কি?

রওনকের ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে রাদিন ও তার প্রাক্তন প্রেমিকার হাত ধরাধরি করে কক্সবাজারের বিচে হাটাহাটির মুহূর্তের কিছু স্থিরচিত্র। ছবিগুলো দেখে একবার ঢোক গিলে রাদিন। রওনক বলতে থাকে,

-এখন বলো না এসব আগের তোলা। ছবির ডিটেইলসে গেলেই ডেট পাওয়া যাবো ছবিগুলো কোনদিন, কত তারিখে ঠিক কয়টার সময়ে তোলা। তাছাড়া দু’বছর আগের তুমি আর বর্তমান তুমির মধ্যেই বিশাল ফারাক। সেখানে তোমার ইউনিভার্সিটি টাইমের তুমি আর এখনকার তুমির মধ্যে রাতদিন পার্থক্য।

কি বলবে খুঁজে না পেয়ে রাদিন প্রসঙ্গ অন্যদিকে ঘুরাবার চেষ্টা করে বলে,

-তার মানে তুই সত্যি সত্যি আমার পেছনে স্পাই লাগিয়েছিস!

-এসব কথা বলে তুমি প্রসঙ্গ এড়াতে পারবে না ভাইয়া। এত বড় ব্যবসা সামলাচ্ছি চোখ-কান বন্ধ করে নয় নিশ্চয়ই! শুধু তো ব্যবসাটা না বাবা আমার উপর তোমাদের সবার দায়িত্ব দিয়ে গেছে। সেসব দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে গেলেও তো খোঁজ-খবর রাখতে হবে তোমরা কে কোথায় কি করছো না করছো।

-তুই কি তানিয়ার পিছনেও স্পাই লাগিয়েছিস?

স্মিত হেসে রওনক বলে,

-ভাইয়া তুমি নিজেও জানো চরিত্রের দিক দিয়ে ভাবী তোমার থেকে ফার বেটার। তোমার মতো তার চারিত্রিক সমস্যা নেই।

-তুই বলতে চাইছিস আমার চরিত্রে দোষ আছে?

-অবশ্যই আছে।

-রওনক!

চেঁচিয়ে ওঠে রাদিন। কিন্তু রওনক শান্ত কন্ঠেই বলে,

-অযথা চেঁচিয়ে লাভ নেই ভাইয়া৷ আমি চেঁচামেচি করলে তুমি টু শব্দ করারও সুযোগ পাবে না। যে লোক ঘরে বউ বাচ্চা রেখে প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রাখে তার চরিত্র নিশ্চয়ই পরিষ্কার নয়। আর তুমি ভাবীর দিকে আঙ্গুল তুলছো নিজের দোষ ঢাকার জন্য। যে মহিলা তোমার জন্য নিজের জীবন সেক্রিফাইজ করলো।

-তানিয়া আমার জন্য সেক্রিফাইজ করেছে?

-করেনি বলছো? তার কি প্রয়োজন কোম্পানির পিছনে গা ধা র খাটনি খাটার? বাড়ির বড় বউ বাসায় থাকবে, আরাম করবে, মন চাইলে শপিং করবে, দেশ-বিদেশ ঘুরতে যাবে, পার্টি করবে। কিন্তু এসব না করে সে কোম্পনির পিছনে দিন-রাত খাটছে। কেনো? তোমার জায়গাটা অপূর্ণ না রাখতে। কেউ যেনো তোমার দিকে আঙ্গুল তুলতে না পারে সেজন্য। কেউ যেনো বলতে না পারে তোমার সাইড থেকে কোম্পানিতে কোনো কন্ট্রিবিউশন নেই। তোমার হয়ে তোমার কাজটা সে করছে। আর তুমি তাকে চিট করছো। তোমার জন্য এতকিছু করার পর মানুষটা আর যাই হোক এটা ডিজার্ভ করে না। তুমি তাকে ঠকানোর কোনো অধিকার রাখো না। তাছাড়া কার জন্য করছো এসব? তুমি কি মনে করো তোমাকে ভালোবেসে ঐ মহিলা তোমার জীবনে ফিরে এসেছে? যদি এমনটা ভেবেও থাকো তাহলে আমি বলছি শুনো, তুমি খুবই ভুল ভাবছো। ঐ মহিলা শুধু মাত্র তোমার টাকার জন্য এসেছে। আগের হাজবেন্ডের সাথে ডিভোর্সের সময় যেসব টাকা পয়সা পেয়েছিল সব উড়িয়ে শেষ করেছে। তারপর যখন তোমার সঙ্গে দেখা হলো এবং দেখলো তুমি আজও তাকে ভুলে যাওনি তখনই বুদ্ধি আটলো তোমাকে ফাসানোর। তুমি তার জন্য কেবল সোনার ডিম দেয়া হাঁস। এই পর্যন্ত তুমি তার পেছন বিশাল এমাউন্ট খরচ করে ফেলেছো। যার পাই টু পাই হিসাব আমার কাছে আছে। তুমি কি ভেবেছো তোমরা কে কথায় টাকা খরচ করছো সে খবর আমার অজানা? আমার পারমিশন ছাড়া এক পয়সাও কোম্পানি থেকে নিতে পারবে না তোমরা কেউই। শুধু তাই নয় তোমার ধানমন্ডির ফ্ল্যাটটায় ঐ মহিলা থাকছে। তুমি কি ভেবেছো এসব খবর আমার পর্যন্ত আসবে না? আমার নাকের নিচে তুমি কান্ড ঘটনাবে আর আমি টের পাবো না তা তুমি ভাবলে কীভাবে ভাইয়া? সবার কাছ থেকে আড়াল করতে পারলেও আমার থেকে আড়াল করতে পারবে না এটা সিওর থাকো।

কথার এই পর্যায় রওনক থামলে রাদিন জিজ্ঞেস করে,

-তানিয়া এসব জানে?

-তুমি বলতে লজ্জাবোধ করলে আমি বলতে পারি সমস্যা নেই।

আমতা আমতা করে রাদিন। তা দেখে রওনক বলে,

-তুমি নিজেও ভালো করে জানো, তুমি যে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছো সেটা শুধুমাত্র তোমার ইনকাম দিয়ে সম্ভব নয়। আর এটাও জানো আমি বললে কোম্পানি থেকে যে শেয়ার তুমি পাও সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। কোম্পানির একটা টাকাও যেনো তুমি না পাও সেই ব্যবস্থা করার ক্ষমতা আমার আছে। তখন কিন্তু তোমার প্রেমিকা তোমাকে ছাড়তে দুইদিন সময়ও অপচয় করবে না।

-তুই কি আমায় হুমকি দিচ্ছিস?

-তুমি ভালো করেই জানো ভাইয়া আমি হুমকি ধামকি দেয়ায় বিশ্বাসী নই। সবসময়ই আমার কাজ কথা বলেছে। তাই তোমাকেও সরাসরি বলছি। তোমার আমার পরে এই সব বিষয়-সম্পত্তির মালিক হবে মিমি, মিশকাত। অহেতুক তোমার পেছনে এক পয়সা অপচয় করার পক্ষে আমি নই। বরং যাদেরটা তাদের জন্যই সংরক্ষিত হবে। সময় মতো বুঝিয়ে দেয়া হবে আসল উত্তরাধিকারীদের। তবে ভাইয়া তোমার জন্য আমার একটা অফার আছে।

রাদিনের চোখে-মুখে কৌতুহল। কৌতুহলী কন্ঠে সে জিজ্ঞেস করে,

-কিসের অফার?

একটা চেক এগিয়ে দিয়ে রওনক বলে,

-তিন কোটি টাকার চেক লিখে দিলাম। তোমার প্রেমিকা তার প্রাক্তন স্বামীর থেকে ডিভোর্সের সময় মাত্র পঞ্চাশ লাখ টাকা পেয়েছিল। এটা সেই তুলনায় কয়েকগুণ। চেকটা দিয়ে সম্পর্কের ইতি টেনে নিজের সংসারে মন দাও। আর তোমার প্রেমিকাকে এটাও বলো আরও টাকার প্রয়োজন হলে যেনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তোমাকে বিরক্ত না করে।

এক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে রওনক আরও বলে,

-আমি জানি তুমি মনে মনে কি ভাবছো। তুমি ভাবছো তোমার প্রেমিকা চেকটা নিবে না। তবে এটা তোমার ভুল ধারনা। চেকটা সে নিবে তা আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। তবে যদি না নেয় অর্থাৎ আমি ভুল প্রমাণিত হই তাহলে নাহয় তুমি তোমার প্রেমিকাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যেও। এদিকটা আমি সামলে নিবো। তবে গ্যারান্টেড আমি একটুও ভুল নই। চাইলে বাকিটা তুমি পরীক্ষা করে দেখতে পারো। আমার আর কিছু বলার নেই ভাইয়া। তুমি আসতে পারো। তোমার পরবর্তী সিন্ধান্তের উপর সব কিছু নির্ভর করছে আমি কোন স্টেপটা নিবো। তবে এটা মাথায় রেখো আমার জন্য তোমার চাইতে মিমি, মিশকাত মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট। তোমার হাত ছাড়তে আমার দু’সেকেন্ডও লাগবে না কিন্তু জীবন থাকতে আমি মিমি, মিশকাতকে ছাড়বো না। আমি থাকতে ওরা ওদের বাবার চিটের পরিণাম ভোগ করবে না।

ছোট ভাইয়ের কথার পিঠে আর কিছু বলার মতো মুখ নেই রাদিনের। তাই আর কোনোরকম প্রতিউত্তর না করেই বেরিয়ে যায় সে। কিন্তু যাবার সময় চেকটা নিয়ে যায়নি।

রাদিন চলে যাবার এক মিনিটের মাথায় রওনক এগিয়ে গিয়ে তার কেবিনের বাথরুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তানিয়া। তাকে দেখতে স্বাভাবিক লাগছে। মনে হয় যেনো সবকিছু তার আগে থেকে জানা নয়ত এমন কিছুর জন্য আগে থেকেই সে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে রেখেছিল। রওনক কিছু জিজ্ঞেস করে না। তানিয়া নিজেই বলে,

-আমি তোমার ভাইয়াকে ডিভোর্স দিবো রওনক। সে আমাকে ছাড়বে কিনা জানি না তবে আমি সত্যি সত্যি আমার জীবনে তার চ্যাপ্টার ক্লোজ করছি। এই সম্পর্কটার ইতি টানার সময় হয়ে গিয়েছে। আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও বিয়ের প্রথমদিন থেকেই আমি তাকে ভালোবাসি। কিন্তু বিনিময়ে তোমার ভাইয়ার সেই উষ্ণ ভালোবাসা কখনই পাইনি। তবুও আফসোস করিনি কখনো। কারণ আমি জানতাম মানুষটা একান্তই আমার। কিন্তু সেই মানুষ নিজেই নিজের ভাগ আরেকজনকে দিয়েছে তাও আমার বর্তমানে। তাই সেই ভাগ হয়ে যাওয়া মানুষটাকে আমি আমার জীবনে আর চাই না।

-আই এম অলওয়েজ উইথ ইউ ভাবী ইন ইউর এভরি ডিসিশন।

বেরিয়ে যাবার আগে তানিয়া আরও বলে,

-ডিভোর্সের পর আমি এখানে থাকবো না রওনক। যার হয়ে দায়িত্ব পালন করছি সেই মানুষটাই যেহেতু জীবনে থাকবে না তাই তার হয়ে আর কোনো দায়িত্ব পালন করতে চাই না। রাতেই আমার রিজায়েন লেটার তোমায় মেইল করে দিবো। ডিভোর্সের পর আমি আমেরিকা চলে যাবো। তুমি চাইলে মিমি, মিশকাতকে রাখতো পারবে তবে আমার একটা ছোট্ট শর্ত আছে।

-কি শর্ত?

-তোমাকে বিয়ে করতে হবে। মা না থাকুক, মায়ের মতো কাউকে প্রয়োজন হবে ওদের সবসময়। তুমি নাহয় বাবার জায়গাটা পূর্ণ করলে। মায়েরা বাবার অভাব পূরণ করতে পারলেও পৃথিবীর কোনো বাবাই মায়ের অভাব পূরণ করতে পারে না। তাই মায়ের জায়গায় মায়ের মতো কাউকে লাগবেই। সেজন্য তোমাকে বিয়ে করতে হবে যদি তুমি মিমি, মিশকাতকে নিজের কাছে রাখতে চাও।

রওনকের কপালে চিন্তার সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। তা দেখে তানিয়া আরও বলে,

-চিন্তা নেই। আমি মায়ের মতো বলবো না তোমায় সাবাকেই বিয়ে করতে হবে। আমি শুধু বলছি বিয়ে করতে। তুমি যাকে চাও তাকেই করবে, যার জন্য তোমার মন পোড়ে তাকে আপন করে নাও। যার হাতের চায়ের খুব করে প্রশংসা করলে চাইলে তাকেও করতে পারো সেটা একান্তই তোমার ব্যাপার। তবে আমার শর্ত বহাল থাকবে। তুমি নিজেও ভালো করে জানো আমি বেঁচে থাকতে মামলা করেও তুমি ওদের দু’জনকে নিজের কাছে রাখতে পারবে না। তোমার কাছে একমাত্র ও সহজ পথই হচ্ছে আমার শর্তটা মেনে নেয়া। ভেবে দেখো কি করবে, আমি আসছি।

বলেই বেরিয়ে যায় তানিয়া। পেছনে রওনকের কপালের দুশ্চিন্তার ছাপ গাঢ় হয়।

চলবে…

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-২৪
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

তানিয়া বের হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই রওনকের কেবিনের দরজায় নক করে চিত্রলেখা। নক করেই দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিতেই দেখতে পায় টেবিলের কার্ণিশ ঘেঁষে খানিকটা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রওনক। তার চোখ-মুখে ছড়িয়ে আছে বিধ্বস্ত ভাব। তা দেখে ওখানে দাঁড়িয়েই চিত্রলেখা জিজ্ঞেস করে,

-ইজ এভরিথিং অলরাইট?

চিত্রলেখাকে দেখে কিঞ্চিৎ সোজা হয়ে দাঁড়ায় রওনক। বলে,

-কাম ইন।

চিত্রলেখা ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা ছেড়ে দিতেই চৌম্বকের টানে তা লেগে যায়। এগিয়ে এসে রওনকের মুখোমুখি দাঁড়ায় সে। দু’হাত পরিমাণ দূরত্ব দু’জনের মাঝে। রওনক হাত তুলে সামনের দিকে ইশারা করে বলে,

-টু স্টেপ সামনে এসো।

রওনকের আদেশ মতো দু’কদম সামনে আগায় চিত্রলেখা। রওনক আবারও বলে,

-ওয়ান মোর স্টেপ।

এবারে কেমন কেমন করে তাকায় চিত্রলেখা তবুও কিছু করার নেই বসের আদেশ বলে কথা। তাছাড়া আরেক কদম আগে গেলেও সামনে জায়গা থাকছে তাই প্রশ্ন না করে আরও এক কদম আগায় সে। এবারে দু’জনের মাঝে দূরত্ব এক হাতও নেই। আপাতত রওনক আর কিছু বলছে না। তার দৃষ্টি চিত্রলেখার মুখের উপর সীমাবদ্ধ। এমন কঠিন নীরবতায় চিত্রলেখার সাহস হয় না কিছু জিজ্ঞেস করার। কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে তারা দু’জনে আবার লিফটে আটকা পড়েছে। এক্ষুনি মাথা ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে সে। এবারে একদম সোজা হয়ে দাঁড়ায় রওনক। চিত্রলেখাকে কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়ে বাম হাত বাড়িয়ে ওর ডান হাতটা ধরে ওকে নিজের আরও খানিকটা কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-বিয়ে করবে আমায়?

চিত্রলেখার মনে হলো ওর মাথার উপরে কঠিন একটা বজ্রপাত হয়েছে। বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে ও হয়ত ভুল শুনেছে কানে। চিত্রলেখাকে ওমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধরে রাখা হাতটা সামান্য ঝাঁকিয়ে রওনক আবারও জিজ্ঞেস করে,

-করবে আমায় বিয়ে?

তৎক্ষনাৎ চিত্রলেখার কি হলো কে জানে! সে রওনকের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার কপাল স্পর্শ করে আগ্রহ ভরে জানতে চাইলো,

-আপনার কি জ্বর হয়েছে?

কিন্তু কপাল স্পর্শ করতেই চিত্রলেখার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। তাকে ছুঁয়েই টের পেলো কোনো জ্বর টর হয়নি। রওনক চিত্রলেখার চোখে চোখ রেখে বলল,

-আমায় দেখে কি মনে হয় জ্বর হয়েছে?

রওনকের কপাল স্পর্শ করে থাকা চিত্রলেখার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় সে। এবারে যেনো সাপ দেখার মতো জমে গেল বেচারি। রওনকের মুখে আবোলতাবোল কথা শুনে ও নিজেও ঘেটে ফেলেছে হাত বাড়িয়ে জ্বর দেখে। চিত্রলেখাকে চুপ করে থাকতে দেখে রওনক বলে,

-আমি কিন্তু জবাব পাইনি।

কিছু না বলে রওনকের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় চিত্রলেখা। রওনক আর বাঁধা দেয়নি, পেছনও ডাকেনি। একলা দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানেই জবাবের অপেক্ষায়। তবে জানা নেই আদৌ সে জবাব পাবে কিনা। খুব বেশি একটা আশা রাখছে না যদিও।

আজকের মতো পড়ানো শেষ করে বেরিয়ে যাবার আগ মুহূর্তে লিখন বলে,

-একটু খালাম্মাকে ডাক দিয়ে দেও।

নাইম এক দৌড় লাগায় মাকে ডাকতে। বৃষ্টি ওর খাতা কলম গুছাতেই ব্যস্ত। যদিও খাতা কলম গুছানোটা বাহানা কেবল। লিখন যতক্ষণ থাকে বৃষ্টি আশেপাশেই থাকে কোনো না কোনো বাহানায়। বৃষ্টি, নাইমের মা সালেহা বেগম এগিয়ে এসেই জিজ্ঞেস করেন,

-তুমি নাকি আমাকে ডাকছো বাবা?

-জি খালাম্মা। একটু বসেন কথা আছে।

একটা চেয়ার টেনে বসেন সালেহা বেগম। লিখনকে ইতস্তত করতে দেখে নিজেই বলেন,

-তোমার কি বাবা টাকা পয়সা কিছু লাগবে? এই মাসের বেতনটা আগাম দিয়ে দিবো?

-না না খালাম্মা টাকা পয়সা লাগবে না। আসলে আমি অন্য একটা কথা বলতাম।

-বলো শুনি।

-মানে আসলে খালাম্মা…

লিখনকে মানে আসলে করতে দেখে খানিকটা উঁচু স্বরেই বৃষ্টি বলে,

-এত মানে মানে করতেছেন কেন? ঝেড়ে কাশেন তো। আমার মা বা ঘ না যে আপনাকে খে য়ে ফেলবে। বলেন তো দেখি কি বলতে চান।

লিখন এক মুহূর্তের জন্য বৃষ্টির দিকে তাকায়। মেয়ের কথা শুনে ওকে ধমকে সালেহা বেগম বলেন,

-এসব কি বৃষ্টি! শিক্ষকের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?

লিখন বাঁধা দিয়ে বলে,

-থাক খালাম্মা আজ আর ওকে কিছু বইলেন না।

-এই তোমার আদরেই এত লাই পেয়ে মাথায় উঠছে বেয়া দব মেয়েটা।

-থাক না খালাম্মা।

-আচ্ছা বলো তুমি কি বলতে চাও।

লিখন আরও একবার বৃষ্টির দিকে তাকায়। ওর চোখে স্পষ্ট আগ্রহ ও কৌতূহল। পারছে না মায়ের ভয়ে আবার বলতে, ❝জলদি বলেন তো কি বলবেন।❞ তবে এবারে আর সময় অপচয় না করে লিখন বলেই ফেলে আসল কথাটা। ছোট্ট করে বলে,

-কাল থেকে আমি আর ওদের পড়াতে পারব না।

-কেন বাবা? কোনো সমস্যা হইছে?

-কোনো সমস্যা হয়নি। জানেনই তো আমার এটা ফাইনাল ইয়ার। নিজের পড়ালেখার চাপ তো আছেই তাছাড়া আমি আইএলটিএসের কোর্সে ভর্তি হইছি। কাল থেকে ক্লাস শুরু। ইউনিভার্সিটির ক্লাসের পর কোর্সের ক্লাস করে ওদের পড়াতে পারবো না। এমনিই সপ্তাহে চারদিন পড়াই সেটাও যদি ঠিক মতো সময় না দিতে পারি তাহলে কীভাবে হয় বলেন! সেজন্যই আর কি ভাবছি আমি পড়ানোটা বাদ দিয়ে দিবো। এই মাসটা পড়াতে চাইছিলাম কিন্তু আমার সিডিউল এত টাইট যে সময় হবে না একদমই।

সব শুনে ফোঁস করে একটা শ্বাস ছেড়ে সালেহা বেগম বলেন,

-জানোই তো বৃষ্টির সামনে পরীক্ষা। তুমি এই সময় না পড়াইলে ওকে নিয়ে সমস্যায় পড়ে যাবো মনে হচ্ছে। মাঝামাঝি সময়ে ভালো টিচার কই পাই বলো তো।

-ওটা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আমার কয়েকজন ফ্রেন্ডকে বলছি। ওদের মধ্যে যার সময় হবে সে পড়ায় দিবে। আমি কালকের মধ্যেই একজন কনফার্ম করে ফেলবো। আর বৃষ্টির পরীক্ষায় তো এখনো সময় আছে। আমার কোর্সটা শেষ হয়ে গেলে পরে নাহয় আমিও ওকে পড়া দেখায় দিবো। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।

-আচ্ছা তুমি যেহেতু দেখেতেছো তাহলে আর কোনো চিন্তা নাই। তোমার ভবিষ্যতের ব্যাপার তাই আমি আর তোমাকে আটকাবো না। অন্য ব্যাপার হইলে ছাড়তাম না। আমার জন্য তো তুমি আর ওরা আলাদা না। তবে তুমি শুধু দেইখো তোমার মতো যত্ন করে পড়াবে এমন কাউকে দিও। আর তুমিও একটু খোঁজ-খবর রাইখো বাবা।

-আপনি একদম চিন্তা করবেন না খালাম্মা আমি সবসময় টাচে থাকবো।

-তাহলে আমি নিশ্চিত হইলাম।

এতক্ষণ চুপচাপ পাশে বসে থেকে দু’জনের কথা শুনেছে বৃষ্টি। এবারে উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,

-কোনো দরকার নাই আম্মু কাউকে কষ্ট দেয়ার। যে পড়াবে না তার তো দায় পড়ে নাই টিচার ঠিক করে দেবার। মাথা যার ব্যথাও তার। আমার পড়ালেখার ব্যবস্থা আমিই দেখে নিবো।

-মানে! টিচার না রাখলে পড়বি কেমনে?

জিজ্ঞেস করেন সালেহা বেগম। জবাবে বৃষ্টি বলে,

-যাদের বাসায় টিচার আসে না তারাও লেখাপড়া করে আম্মু। তাছাড়া এখন আর সেই আদি যুগ নাই যে বাসায় এসে গৃহশিক্ষক ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াবে। সবাই ব্যাচে পড়ে আমিও ব্যাচেই পড়বো অন্যদের মতো। টিচার তো আর রেজাল্ট আইনা দিবে না। রেজাল্ট ভালো করার দায়িত্ব আমার। নাইমকেও ব্যাচেই ভর্তি করায় দিবো। তুমি আর উনাকে কষ্ট দিও না। সে দায় মুক্ত হতে চায় তাকে দায় মুক্ত করলাম। এখান থেকে আমার পড়ালেখার ব্যাপার আমিই বুঝবো।

আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হয় বৃষ্টি। পেছন থেকে লিখন একবার ডাকে ওকে।

-বৃষ্টি।

লিখনের ডাকে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে বৃষ্টি বলে,

-ভালো থাকবেন, আসসালামু আলাইকুম।

এতটুকু বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। পেছনে বেচারা লিখনের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। এভাবে মাঝপথে ছাত্রীর হাত ছেড়ে দেয়ার অপরাধবোধ জেঁকে বসেছে তাকে।

সালেহা বেগম বলে,

-তুমি একটু বসো বাবা এই মাসের বেতন টা দিয়ে দেই।

-দরকার নেই খালাম্মা, এই মাসে পড়ালামই তো মাত্র কয়টা দিন। এখনো আধা মাসও হয় নাই।

-তো কি হইছে? আমি কি তোমাকে সামান্য কয়টা টাকা খালা হিসেবে দিতে পারি না? তাছাড়া তোমার খালু যদি শুনে তোমাকে খালি হাতে বিদায় দিয়েছি তাহলে আমার সাথে অনেক রাগ করবেন। তুমি বসো আমি আসতেছি।

লিখনকে দেবার জন্য টানা আনতে ভেতরে চলে যান সালেহা বেগম। এতক্ষণ নাইমও চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এবারে মুখ খুলে বলে,

-আপনি সত্যি সত্যি আর আমাদের পড়াবেন না?

-কাছে আসো।

লিখনের ডাকে নাইম তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে সে বলে,

-পড়ায় কোথাও কোনো সমস্যা ফেইস করলে বন্ধের দিন বই খাতা নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবা কেমন? আমি পড়ায় দিবো।

-আচ্ছা।

বলে মাথা ঝাঁকায় নাইম। লিখন আরও বলে,

-তোমার আপুকেও বলবা আমি বলছি বন্ধের দিন বাসায় গিয়ে যা যা সমস্যা আমার থেকে যেনো দেখে আসে।

-আচ্ছা বলবো।

পাশ কেটে একবার বৃষ্টির ঘরের বন্ধ দরজার দিকে তাকায় লিখেন। তার বুক উপচে একটা অপরাধবোধের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কিন্তু এই কাজটা করা ছাড়া ওর নিজেরও কোনো উপায় ছিল না। সম্ভব হলে পড়ানোটা ও ছাড়তো না। উপায় নেই বলেই এই পদক্ষেপ নেয়া। বৃষ্টিটা যে অভিমান করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে লিখন। তবে সে এটাও জানে বৃষ্টি বুদ্ধিমতী মেয়ে। খানিক সময় পর ঠিকই বুঝতে পারবে তারপর নিজেই সামলে উঠবে। ওকে আর আলাদা করে বুঝাতে হবে না। তখন নিজে গিয়েই দেখা করে আসবে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে