নিষিদ্ধ প্রেম।পর্ব_২
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
তোমার ওড়নাটা আমার একটুও পছন্দ না,ছিঃ কি বিচ্ছিরি দেখতে।ফেলে দাও তো ওড়নাটা।
এই বলে সাফিন আমার বুক থেকে ওড়নাটা কেড়ে নিলো।
-প্লিজ সাফিন এত বড় ভুল তুমি করোনা।
-ভুল?কিসের ভুল?আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি।আর ভালবাসায় কিসের ভুল?
-সাফিন আর কয়টা দিন প্লিজ,আমরাতো বিয়ে করবো কিছু দিনের মধ্যেই।তো তখন আমি পুরোপুরি তোমার হয়ে যাবো।আর তখন তুমি যা ইচ্ছে তাই করো।কিন্তু আজ না প্লিজ।
এত বড় পাপ তুমি করোনা।
-তুই আমাকে ভালবাসিস না?সত্যি করে বল।
-হ্যাঁ বাসি।খুব ভালবাসি তোমাকে আমি।কিন্তু তাই বলে এই না যে বিয়ের আগেই আমি আমাকে তোমার কাছে সপে দেবো।
প্লিজ আমি বাসায় যাবো।আমাকে যেতে দাও।
-তা কি করে হয় পাখি?আমি তোমাকে ভালবাসি আর তুমিও আমাকে ভালবাসো।তাই এতে কোন ভুল নেই।
-প্লিজ হাত ছাড়ো আমার।যেতে দাও আমাকে।তোমার পায়ে ধরি আমি প্লিজ।
সেদিন সাফিন আমার কোন কথাই শোনেনি।হিংস্র জানোয়ার হয়ে গিয়েছিলো।
ওর মধ্যে সেদিন আমি কোন দয়া,মায়া, ভালবাসা দেখতে পাইনি।
যা দেখেছি তা হলো হিংস্রতা।
আর আমি পারিনি একটা মেয়ে হয়ে ওর সাথে শক্তিতে।
পারিনি রক্ষা করতে আমার সতীত্ব।
ওর চাহিদা মিটে গেলে ও আমাকে ছেড়ে দেয়।আমি কোন কথা না বলে খুরিয়ে খুরিয়ে হেঁটে কিছু দূর এসে একটা রিক্সায় করে বাসায় চলে আসি।
এসেই বাথরুমে ঢুকে গোসল করে নেই।আর আয়নায় আমি আমার এক নতুন আমিকে দেখি।যে নাকি কিছু ক্ষণ আগেই নিজের ভালবাসার মানুষটার কাছে নিজের সতীত্ব হারিয়েছে।
যে নাকি ভেঙে ফেলেছে তার বাবা মায়ের বিশ্বাস।
এই মানুষটার বেঁচে থাকার কোন অধিকার আছে?কোন অধিকার নেই।
তাই আমার মরে যাওয়াই ভালো।
নিজের রুমের দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে ফ্যানের সাথে নিজের একটা ওড়না বেধে নিলাম।
দাঁড়িয়ে গেলাম চেয়ারে,
কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঝুলে পড়বো।
চোখ বন্ধ করলাম,প্রথমেই আম্মুর মুখ টা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
আমার স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হলে বাড়ীর গেইটের সামনে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো এই মহিলাটা।
স্কুল ছুটি হতো বিকেল চার টায়,আর বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে চার টা বেজে যেতো।এত ক্ষণ অব্ধি না খেয়ে অপেক্ষা করতো আমার এই জন্মদাত্রী মা।
যদি বলতাম,কেন এভাবে না খেয়ে বসে থাকো আমার জন্য?
উত্তর দিতো,যখন মা হবি তখন বুঝবি।
জ্বর এলে যখন রাতে ঘুমাতে পারতাম না,
সারারাত ছটফট করতাম।
এই মহিলাটা সারা রাত জেগে আমার মাথায় জল পট্টি দিতো।
ছোট বেলায় একদিন নাকি আমাকে আমার কাকী আম্মুকে না বলে কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিলো।
আম্মু নাকি কান্না কাটি করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।পরে নাকি তাকে মেডিকেলে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়েছে।
এই মানুষটাকে ছেড়ে যদি আমি একে বারে চলে যাই,এই মানুষটা বাঁচবেতো?
এরপর চোখের সামনে বাবা নামক মানুষটার মুখ টা ভেসে উঠলো।
যেদিন প্রথম স্কুলের ক্লাস হয় আমার,সেদিন আব্বুকে ছাড়া কোন মতেই স্কুলে যাবোনা আমি।
একটা রিক্সাও সেদিন পাইনি আমরা।
আমার কষ্ট হবে বলে সারা রাস্তা আমাকে কোলে করে নিয়ে গেছে আমার বাবা।
ক্লাসে ঢোকার আগে বলে গেছি,তুমি এখানে থাকবে কিন্তু।
আমি যদি ক্লাস থেকে তাকিয়ে দেখি তুমি এখানে নেই তাহলে কিন্তু আমি ক্লাস করবোনা।
আব্বু আমার ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল গেইটের সামনে একটা বেঞ্চ ছিলো।
সেখানে বসে থাকতো।যদি কোন মহিলা এসে বসতো সেখানে, তবে দাঁড়িয়েই থাকতো যত ক্ষণ না ছুটি হয় আমার।
আমি একদিন অসাবধানতায় সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে পায়ের আঙুলে অনেক ব্যথা পাই।
রক্ত পড়া শুরু হয়ে যায় নখের ওখান দিয়ে।ব্যথায় সেদিন রাতেই আমার জ্বর এসে যায়।
পরের দিন সকালে আমার বাবা সেই সিঁড়িই ভেঙে ফেলেন।
আমি এই সিঁড়িতে ব্যথা পেয়েছি যে।
নতুন করে অন্য রকম ডিজাইনে পরে আবার সিঁড়ি বানান।
এই মানুষটাকে আমি ছেড়ে গেলে,মানুষ টা পাগল হয়ে যাবেনাতো?
তারপর চোখের সামনে ভেসে উঠে আমার পিচ্চি ভাই ইয়ানের মুখটা।
বেচারা প্রতিদিন অপেক্ষা করে ওর আপি কখন ফিরবে।কখন ওর জন্য মজা আনবে।
আমি বাসায় ফিরতে দেরি,
আমার সামনে এসে চোখ বন্ধ করে হাত পাততে তার দেরি নেই।
মজা দিলেই সে আমার গালে,নাকে,কপালে চুমু খায়।
আমি চলে গেলে কার কাছে গিয়ে ও মজার জন্য হাত পাতবে?
কে ওকে মজা এনে দেবে?
চেয়ার থেকে নেমে গেলাম।
কেন আমি সুইসাইড করবো?
ওই জানোয়ার টার জন্য?যে আমার ভালবাসার ফয়দা তুলেছে?
যারা আমাকে এই দুনিয়া দেখালো,এত বড় করলো,আমার খুশিতে যারা বিশ্ব জয়ের হাসি হাসে।তাদের জন্য কি আমি বাঁচতে পারিনা?তাদের কেন এক আকাশ যন্ত্রণা দিয়ে আমি এই দুনিয়া ছেড়ে পালিয়ে যাবো?
কোন অধিকার নেই আমার তাদের জীবন নষ্ট করার।
আমি বাঁচবো,
আমার মায়ের জন্য বাঁচবো,আমার বাবার জন্য বাঁচবো,আমার ভাইয়ের জন্য বাঁচবো।
ছোট ভাইটা দরজা এসে নক করছে আর ডাকছে।
আমি চেয়ার টা জায়গা মত রেখে দরজা খুলে ওকে বুকে জড়িয়ে কোলে তুলে নিলাম।
আমার কোলেই ও চোখ বন্ধ করে হাত পেতে আছে।
আমি আমার পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা চকলেট বের করে ওর হাতে দিলাম।
মোবাইলে রিং বাজছে আমার।
কে ফোন দিলো?
সাফিন ফোন দিচ্ছে,
মোবাইল টা অফ করে রেখে ইয়ানকে কোলে নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
আম্মুর কোলে মাথা রেখে দুই ভাই বোন শুয়ে আছি।
আম্মু দুজনের মাথায়ই হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষটা আমি।আর আমার কোন দুঃখই নেই।
পরের দিন সকালে মোবাইল অন করে দেখি সাফিনের মেসেজ।
সরি!আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
আমাকে ক্ষমা করে দাও।
ক্ষমা করে দাও।
ক্ষমা করে দাও।
ক্ষমা করে দাও।
আমি মোবাইল বন্ধ করে রেখে দেই আবার।
আম্মুকে বলি,চলো সবাই মিলে আমরা নানু বাড়ীতে যাই।
যাতে এই জঘন্য অধ্যায় টা আমার মাথা থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়।
সাত দিন নানু বাড়ীতে থাকি।
এ সাত দিন মোবাইল অফ করে রাখি।
বাসায় এসে মোবাইল অন করি,
মোবাইল অন করার কিছু ক্ষণ পর সাফিন ফোন দেয়,
-কোথায় ছিলি তুই?
-ফোন কেন বন্ধ ছিলো?
-প্লিজ আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন না।
-মানে কি?
-মানে আপনার যা দরকার ছিলো তা তো আপনি পেয়েই গেছেন।এখন আর কি প্রয়োজন আমাকে আপনার?
-কি বলিস তুই?
প্রয়োজন তো সবে মাত্র শুরু।
মানে?
ও কিছু বলার আগেই আব্বুর ডাকে আমি লাইনটা কেটে দেই।
গিয়ে দরজা খুলি।
-হ্যাঁ আব্বু এসো।
-কি করছিলি?
-কিছুনা আব্বু।বসো,কিছু বলবে?
-তোর আম্মুও আসবে।
আম্মুও চলে এসেছে।
-কি করছিস? (আম্মু)
-কিছুনা,কি বলবে বলো।
-রাইমানকে চিনিস না?তোর শানু আন্টির ছেলে?
-হ্যাঁ চিনিতো।তোমার খালাতো বোনের ছেলে না?
-হুম।
-নানু বাড়ীতে গিয়েও তো দেখলাম।
ওই দিন ইয়ান আর আমি গাছ থেকে পানিফল পাড়তে চাচ্ছিলাম,পারছিলাম না পাড়তে।আর ইয়ান পানিফলের জন্য কাঁদছিলো।পরে রাইমান ভাইয়া আমাদের দেখে এসে না পানি ফল পেড়ে দিলো।
-ও তাহলে হয়তো তখনই তোকে দেখেছে।
আমিও তো বলি,এ কয়দিনে কখন আবার দেখলো তোকে।
-কেন কি হয়েছে?
-রাইমান নাকি তোকে পছন্দ করেছে।রাইমানের বাসায় গিয়ে রাইমান বলেছে,তাই ওই বাসার সবাই তোকে দেখতে আসতে চায়।তুই কি বলিস?( আম্মু)
-তাছাড়া ছেলেটা অনেক ভালো।পড়াশোনার পাশাপাশি জবও করছে।পরিবারও ভালো,এক ছেলে।টাকা পয়সাও আছে।(আব্বু)
-রাইমানের বাবা অসুস্থ বলে সে ছেলেকে বিয়ে করাতে চাচ্ছে।
কখন কি হয়ে যায় বলাতো যায়না,
তাই ছেলের বউ দেখে যেতে চায়।
এখন তুই কি বলিস?
-আম্মু আব্বু,আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবোনা।এ ব্যাপারে তোমরা আমাকে এখন কিছু বলোনা প্লিজ।
-আচ্ছা বলবোনা, তবুও তুই একটু ভেবে দেখিস।তোর শানু আন্টি আপন মানুষ খুব আদর করবে।
তা ছাড়া চেনা জানা,আজ কাল কোথায় কোথায় বিয়ে সাদী হয়, চেনা জানা থাকেনা।পরে জানা যায়,শাশুড়ি পাজি,স্বামী ভালো না।কত রকম ঝামেলা।
এখানে সবই পরিচিত।কোন সমস্যাও হবেনা।আর রাইমান কে তো ছোট থেকে দেখে আসছি।খুব ভালো ছেলে।তুই একটু ভেবে দেখ।একদিন না একদিন তো বিয়ে করতেই হবে।হয় সেটা এখন নয়তো পরে।
(আম্মু)
কথা গুলো বলে আম্মু আব্বু চলে গেলো।
আমি সাফিন কে ফোন দিলাম।
-বাসা থেকে আমার জন্য ছেলে দেখছে।ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসতে চায়।
তুমি তোমার মা বাবাকে বলো আমাদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসতে।
-কিসের প্রস্তাব?
-কিসের প্রস্তাব মানে?আমাদের বিয়ের প্রস্তাব।
-মাথা টাথা ঠিক আছে তোমার?সবে মাত্র প্রেম করছি।৪ ৫ বছর প্রেম করবো,লাইফ টাকে ইঞ্জয় করবো তারপর বিয়ে সাদীর চিন্তা ভাবনা করা যাবে।
-লাইফ ইঞ্জয়,প্রেম ভালবাসা কিন্তু বিয়ের পরও করা যাবে সাফিন।
-বিয়ের পর প্রেম ভালবাসায় কোন মজা নাই।
-তাহলে তুমি কি বলতে চাও?বিয়ে করবেনা?
-বিয়ে করবোনা বলিনি,বলেছি এখন বিয়ে করবোনা।করলেও আরো চার পাঁচ বছর পর।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
সাফিনের সাথে কথা বলে বাসায় না করে দেই।তাছাড়া নিষ্পাপ একটা ছেলেকে আমি ঠকাতে চাইনা।
সাফিন রাতে ফোন দেয়,
-এত রাতে ফোন দিয়েছো যে?
-খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তোমায়।
-বলেছিতো,চলো বিয়ে করে নেই।
-উঁহু,বিয়ে ৫ বছর পর।
-তাহলে ৫ বছর পরই ফোন দিও।
-নাহ্।কালই তুমি আমার সাথে দেখা করবে।আর আমার ইচ্ছে পূরণ করবে।
-হুয়াট?
-বাংলায় বলেছি,বুঝোনি?
-ওহ তাহলে এখন তুমি আমাকে এভাবে ইউজ করতে চাও?আর ৫ বছর ইউজ করে বলবে আমার পক্ষে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না।তাইনা?ভালোই প্ল্যান করেছো দেখছি।
-এত বেশি কথা বলিস নাতো।যা বলেছি তাই করবি।আগামীকাল ঠিক ১০ টায় চলে আসবি।
-কক্ষনোই না,আজই আমাদের শেষ কথা।তুই আর আমাকে কোন দিন ফোন দিবি না।গুড বাই।
-এই এই ফোন কাটিস না,ফোন কাটিস না।তুই আমার কাছে আসতে বাধ্য।
-মানে?
-মানে তুই আমার মাছ,আর টোপ এখন আমার হাতে।
-কি বলতে চাও তুমি?
-তুই যদি কাল না আসিস,তবে সেই দিন যেই পিক গুলো আমি তোর অগোচরে তুলেছি সব গুলো ভাইরাল হয়ে যাবে।
কাউকে তুই আর মুখ দেখাতে পারবিনা।
আর তোর বাবা মা তো লজ্জায় অপমানে সুইসাইড করবে।এখন তুই ভাব তুই কি করবি?
আগামীকাল আমার কাছে আসবি?নাকি তোর মা বাবার কাফনের কাপড় রেডি করবি।
-ছিঃ সাফিন ছিঃ এসব করতে আর বলতে তোমার বিবেকে একটুও বাধলোনা?
এই তোমার আমার প্রতি ভালবাসা?
এই জন্য তুমি আমাকে ভালবেসেছো?নাকি ভালবাসার অভিনয় করেছো?
-তুই যা ভাবিস তাই।আমি শুধু জানি,কাল তুই আসবি,আমি কালকে তোকে চাই।ঠিক সকাল ১০ টায়,আম তলায়।
আমি চিৎকার করে কাঁদছি।
আর ভাবছি,
কি করবো আমি?
সাফিনের কাছে নিজের শরীর বিলাতে যাবো?
নাকি বাবা মায়ের জন্য কাফনের কাপড় কেনার জন্য তৈরী হবো।
চলবে?