তুমিময় সমাপ্তি পর্ব

0
2217
তুমিময় সমাপ্তি পর্ব গল্পবিলাসী – Nishe . সবাই বসে আছে। আলতাফ সাহেব : আরমান তোর মেয়েকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে দিবি আমাকে? আরমান : রুহির দিকে তাকিয়ে আমার তো কোনো আপত্তি নেই রুহির পাশে এসে মিসেস আলতাফ বসলেন, কিরে যাবি আমার ঘরের রাণী হয়ে? রুহি :পুরাই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। কি বলছে ওনারা? ভাইয়াকে ও আশেপাশে দেখা যাচ্ছেনা। বাবার উপরে সে কখনো কিছু বলেনি এখন কিভাবে বলবে? কিভাবে সামলে নিবে সব? ভয়ে শরীর কাঁপছে। ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এই এসি রুমেই ঘামতে শুরু করেছে রুহি । কারন বাবা একবার যে ডিসিশন নেয় কিছুতেই সে ওইটা থেকে পিছপা হয়না। তারপরও রুহি বললো – বাবা আমিতো এখন এইসব নিয়ে ভাবছিনা অনার্স শেষ করি তারপর নাহয় ভাববো -সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা আমরা এখন শুধু আকদ হয়ে থাকবে পরে সময় বুঝেই অনুষ্টান হবে। – রুহি খুব ভালোভাবেই জানে এখন বাবা তার সিদ্ধান্তটাই ঠিক তার উপর চাপিয়ে দিবে। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে নিজের সিদ্ধান্তটাই বেস্ট বলে ভাবেন তিনি। যা করার তাকেই করতে হবে।জীবনটা কোনো সিনেমা নাটক নয় যে যেভাবে সাজিয়ে তুললাম সেভাবেই হলো। তাকে বিয়েটা আটকাতেই হবে। মিসেস আরমান : বলছিলাম যে এখনি কি দরকার রেজাল্ট বের হোক এডমিশন নিক তারপর নাহয় আমরা ভেবে দেখবো মিসেস আলতাফ : আমরা না হয় আজ আকদ করে নিলাম আরমান : আমার মেয়ের উপর যথেষ্ট ভরশা আছে সে আমার সিদ্ধান্তটাই মেনে নিবে রোহান : হ্যা বাবা আমি জানি তুমি আমার আর রুহির উপর ভরশা করো আমরাও করি কিন্ত তাই বলেতো এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা ঠিক মেনে নিতে পারবে ও? সবেমাত্র এইচএসসি দিয়েছে আর কিছু সময়তো তাকে দাও এটলিষ্ট সংসার জীবনের মানে বুঝার জন্য (ভাইকে দেখে যেনো আশার আলো খুঁজে পেলো রুহি রোহান চোখের ইশারায় তাকে শান্ত হতে বললো ) আরমান : দেখ রোহান আলতাফ কে আমি অনেক আগে থেকে চিনি সে এবং তার ফেমিলি খুব ভাল সেখানে রুহি খুব সুখে থাকবে রুহি : বাবা আমি জানি তুমি কোনো ভূল সিদ্ধান্ত নিবেনা কিন্তু আমি এখনো বিয়ে, সংসার এইসব নিয়ে প্রিপেয়ার না কিছুটা সময় দাও আমাকে রোহান : বাবা রুহিতো ভূল কিছু বলেনি যাকে কিনা এখনো আমরা সব ঠিক করে দিতে হয় সে কিভাবে অন্য একটা সংসার সামলাবে ভেবে দেখেছো? আজ সুখের কথা ভেবে তুমি ওকে বিয়ে দিবে কিন্তু সে সেই সুখের চাবি খুঁজতে গিয়ে ঠিক কতোটা হিমশিম খাবে বুঝতে পেরেছো? আশাকরি আপনারাও বুঝতে পারছেন আঙ্কেল আন্টি। অনেক বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি আরমান সাহেব কে সে তার কথায় অনড়। আরমান আর আলতাফ আলাদা হয়ে কিছুক্ষন কথা বলে এলো রুহি : আমি আসছি বলে যেতে চাইলে আরমান সাহেব তাকে বাধা দেয় আরমান : একটু বসো তার সাথে কিছু কথা বলেই সে সিদ্ধান্ত পাকা করবে বলে বসিয়ে দিলেন। রোহান বসে অপেক্ষা করছে বাবা কি করতে চায়। সে থাকতে এই বিয়ে কিছুতেই হবেনা। কিছুক্ষন পর কাজী সাহেব এলেন। আরমান সাহেব : আপনি মেয়ের যাবতীয় কাজটা শেষ করে নিন ছেলে এক্ষনি আসছে। রুহির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো চোখ দুটো দিয়ে পানি আসছে। বাবা কি করে পারছে এইসব করতে? কাজী সাহেব একটা রেজিস্টার খাতা এগিয়ে দিলেন এখানে সাইন করো রুহি রোহানের দিকে তাকালে দেখে রোহান রেগে আছে খুব। রুহি বাবার দিকে তাকিয়ে আছে আরমান সাহেব : তারাতাড়ি সাইনটা করো ওদেরকে বাসায় যেতে হবে। রোহান : বাবা তুমি এইটা ঠিক করছো? আরমান সাহেব : রোহান আমার সিদ্ধান্ত যেটা সেটাই আশাকরি আমাকে উত্তেজিত করে তুলবে না।বারবার রুহিকে বলছে সাইন করার জন্য কিন্তু রুহি কিছুতেই করছেনা আরমান সাহেব রীতিমতো রেগে যাচ্ছেন তিনি হার্টের পেশেন্ট। উত্তেজিত হওয়া তার জন্য মোটেও ভালো নয়। এক পর্যায়ে আরমান রুহির গালে চড় মেরে বসলেন সবাই হতবাক হয়ে আছে। সবাই রুহির দিকে তাকিয়ে আছে রোহান পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। মেঘকে জানানো দরকার মনেহলো তার। মেঘ নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে। সবাই যখন জোড় করছিলো রোহান তখন মেঘকে কল দিতে ব্যস্ত। কিন্তু মেঘ তখনো ড্রাইভিং এ ব্যস্ত। আলতাফ চৌধুরী : আজকে আকদ হবে তোমাকে নিয়ে যাবোনা যতদিন ইচ্ছা তুমি থাকতে পারবে। রুহি :যাস্ট এনাফ বাবা। আর নয় অনেক সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি আর না কিন্তু রুহির কথা যেনো বাবার কানেই পৌঁছালেন না তিনিও আবার জোড় করছিলেন রুহি এবার চিৎকার দিয়ে উঠলো রুহি : কি করে করবো আমি? আমি বিবাহিতো বলেই কেঁদে দিলো আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আই এম সরি বাবা। আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবোনা ।কথাটা বলেই সে দৌড়ে রুমে চলে যায়। কিছু সময়ের জন্য সব থেমে গেলো সবাই অবাক হয়ে আছেন রুহির কথায় মেঘ : বাবার দেয়া এড্রেস অনু্যায়ী সে চলে এসেছে কিছুক্ষন আগেই বাবা কল দিয়ে বললেন বেড়াতে এসে তার মা অসুস্থ হয়ে গেছে তাই মেঘ ছুটে এসেছে এতো তারাতাড়ি এসেছে যে মোবাইলটা অফিসেই ফেলে চলে এসেছে। কলিং বাজাতেই একটা বৃদ্ধ লোক এসে দরজা খুলে দিলেন। ততোক্ষনে রোহান রুহির রুমে চলে এসেছে। রুহিকে না দেখতে পেয়ে ওর রুমে ছুটে যায় উল্টা পাল্টা কিছুনা করে বসে এই ভেবে। মেঘ রুমে ঢুকেই মায়ের কাছে এলো ঠিক আছো তুমি? মিসেস আলতাফ : একদম ফিট বলেই হেসে দিলেন আলতাফ চৌধুরী : বাবা মেঘ! তোমার বউ তোমাকে বিয়ে করবেনা বলেই অট্টহাসি তে ফেটে পরলেন সাথে মিসেস আলতাফ ও। আরমান সাহেব : আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা মেঘের বউ মানে? তখন আলতাফ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলতে শুরু করলেন সেদিন তুই যখন তোর মেয়ের ছবি দেখিয়েছিলি বাসায় গিয়েই আমি মেঘকে ডাকি বিয়ের ব্যাপারে। কিন্তু তখন সে আমাকে বলে সে বিয়ে করে নিয়েছে। এবং কিভাবে করেছে তখন আলতাফ চৌধুরী সবটা ওদের খুলে বললেন। তখন আমি মেঘ থেকে সবটা শুনে রুমে চলে যাই ভাবতে থাকি তোকে কি জবাব দিবো কিভাবে হেন্ডেল করবো ব্যাপারটা। তখনি আশু মেঘের বউয়ের ছবি নিয়ে। আমি না দেখতে চাইলেও আশু ছবিটাতে চোখ চলে যায়। তাকিয়ে দেখি তোর মেয়ের ছবি। তখন অবাক হই তুই জানিস না তোর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম মেঘকেও একটু চমকে দেই। কাউকে না বলেই আশুকে নিয়ে চলে এলাম। এরপরতো তোমরা সবাই জানো। এতো হাসির শব্দ শুনে রোহান ড্রইংরুমে আসছিলো মেঘকে দেখে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। তাহলে ওদেরকে কি মেঘই পাঠিয়েছিলো? কিন্তু মেঘের রিয়েক্ট দেখেতো মনে হয়না সে নিজেই জানে। তারপর রোহান ড্রইংরুমে আসে। মেঘের সাথে হ্যান্ডশেক করে নিলো। মেঘের কানে কানে বিয়েটা কি সত্যিই এইভাবেই হয়েছিলো? মেঘ : হেসে দেয়। কিছু পাওয়ার জন্য একটু মিথ্যার আশ্রয় নাহয় নিলাম। মেঘকে আশেপাশে কিছু খুঁজতে দেখে ওইটা রুহির রুম। যাও মেঘ : না ঠিক আছে। রোহান : আরে ব্রো ওই আর ফ্রেন্ডস নো প্রবলেম এখনো ভয়ে আছে সে কিন্তু জানেই না ওনারা তোমার বাবা মা। মেঘ : আচ্ছা আমি দেখছি বলেই রুহির রুমে চলে গেলো। আর এদিকে রুহি কেঁদে কেঁদে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে রুমে আসার পর থেকেই মেঘকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই রিসিভ করছেনা। মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিতেই মেঘ গিয়ে কেচ ধরে নেয়। মেঘ দরজাটা বন্ধ করে দেয়। তখনো রুহি মেঘকে দেখেনি কেঁদেই চলছে। হঠাৎ করেই পিছনে কারো সাথে ধাক্কা লাগে চোখ তুলে তাকাতেই মেঘকে দেখে আরো বেশি কেঁদে দেয় রুহি : ওরা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা কিছুতেই না প্লিজ কিছু একটা করো মেঘ রুহিকে বুকে জড়িয়ে -আমি আছিতো একটু শান্ত হও। এই যে আমি চলে এসেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। রুহি :কিছু ঠিক হবেনা তুমি আমার বাবাকে চেনোনা বাবা যা বলে ঠিক তাই করে। চলো আমরা পালিয়ে যাই বলেই মেঘের হাত ধরে টেনে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিয়ে রুহি : এখান দিয়ে গেলে সবার চোখে পরবে তাহলে কিভাবে যাবো? মেঘ শুধু রুহিকে দেখছে কি পাগলামি করছে তাকে হারানোর ভয়ে। একটা টানে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। মেঘ : এই পাগলি এমন করছো কেনো? কিছু হবেনা। এতো ভয়ের কিছু নাই একটু রিলেক্স হও রুহি : এখন রিলেক্স হওয়ার সময়? সবকিছু তেই তোমার হেয়ালি প্লিজ মেঘ চলো পালিয়ে যাই। আমি পারবোনা তোমাকে ছাড়া থাকতে। বলে কাঁদতে থাকে। মেঘ : থাকতে হবেনা দেখি আমার দিকে তাকাও রুহি মুখ তুলে তাকালে চোখের পানি গুলো ঠোট দিয়ে শুষে নেয় মেঘ। কি হাল করেছো নিজের। একদম কাদঁবেনা। রিলেক্স মোডে আমার কথা শুনো রুহি তখনো কান্না করে যাচ্ছে মেঘ কিছুতেই তাকে শান্ত করতে পারছেনা।রুহির ঠোট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো এছাড়া আর কোনো ওয়ে তার ছিলোনা রুহি ছাড়াতে গেলে মেঘ কোমড়ে জড়িয়ে আরো আবেশে কাছে টেনে নেয়। রুহি কিছুটা স্থির হয়ে এলে মেঘ ছেড়ে দেয়।রুহি তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। মেঘ কাছে টেনে নিয়ে মেঘ : মন স্থির হলো রুহি : মেঘের বুক থেকে মাথা তুলে প্লিজ একটু সিরিয়াস হও তুমি দেখোনি ড্রইংরুমে একটা আঙ্কেল আর আন্টি বসে আছে ওনারা ওনাদের ছেলেকে ডেকেছে ছেলে এলেই বিয়ে হবে মেঘ : ছেলে তো চলেই এসেছে আর বিয়ে ওতো হবে তো কি হয়েছে রুহি : মানে? তুমি কি ডিভোর্সের পেপার নিয়ে এসেছো? মেঘ : না মেডাম আমার বউকে নিয়ে যেতে এসেছি। রুহি : মেঘ প্লিজ মেঘ : চলো আমার সাথে বলে হাত ধরে ড্রইংরুমে নিয়ে এলো। আলতাফ চৌধুরী আর মিসেস আলতাফ চৌধুরীকে দেখিয়ে তাকাও ওনাদের দিকে। মনে পরে কিছু? রুহি ভালোভাবে তাকাতেই খেয়াল করলো আরে ওরা তো মেঘের বাবা মা। ছবি দেখিয়েছিলো মেঘ।ইশ একটু ভালোভাবে খেয়াল করলেই তো হতো মেঘ : মনে পরে কিছু? রুহি : সরি তখন সেভাবে খেয়াল করিনি মেঘ :কবে যে আমাকেই ভূলে যাও কে জানে সবাই হেসে উঠলো মেঘের দিক তাকাতে মেঘ চোখে কিছু ইশারা করে রুহি গিয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে সালাম করে নেয়। মিসেস আলতাফ : কিরে যাবিতো আমার ঘরের বউ হয়ে রুহি : হেসে উঠে মিসেস আলতাফ : পাগলি মেয়ে বলে জড়িয়ে নেয়। সকলের উপস্থিতিতে আবার ওদের বিয়ে দিয়ে দিলো। বিয়ের পর সবাই মিষ্টি মুখ করে নিলো।দুপুরে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসে। রুহি তার মায়ের সাথে মাকে হেল্প করছে ডিশ গুলো টেবিলে এনে সাজিয়ে রাখছে আর মাঝেমধ্যে মেঘের দিকে তাকাচ্ছে। সবকিছু রেডি করতেই শ্বাশুড়ি রুহিকে মেঘের অপজিট পাশে বসিয়ে দেয়। রুহি খাচ্ছে কি সবার কথা শুনছে । কিছুক্ষন পর মেঘ রুহির পায়ের উপর পা রেখে খাচ্ছে। রুহি তাকাতেই মেঘ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। রুহি পা দিয়েই মেঘকে চিমটি কাটলে মেঘ তার দু পা দিয়ে রুহির পা আটকে দেয় বেচারা রুহি আর কিছুই করতে পারেনা। সবাই ডায়নিং এ অনেক গল্প করতে করতেই শেষ করে নিলো। রুহির শ্বশুর বলছে ওনার অনেক ইচ্ছা ছিলো একটা রিলেশন করার আমাদের ফেমিলির মধ্যে তাই আল্লাহ ওনার আশা পূরন করেছে। অনেল আড্ডার পর মেঘের বাবা মা বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে মেঘও সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে আসে গাড়ির কাছ অবধি সবাই এগিয়ে দিতে আসছে। সাথে রুহিও। মেঘ রুহির দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিলো রুহিও হেসে উঠলো। মেঘ গাড়িতে ঢুকার আগে ঠোটের ইশারায় একটা ফ্লাইং কিস ছেড়ে দেয় আর রুহিও চোখের ইশারায় হেসে এক্সেপ্ট করে নেয়। রুহি রুমে আসতেই ওর মা ডেকে উঠে মা : কিরে আমাকে জানালেও পারতি রুহি : আসলে মা এডমিশন এর পর জানাবো ভেবেছিলাম মা : যাই হোক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। বাবা : আমার উপর রাগ করলে এমন ই হয় বুঝলে সবসময় সবাই জিতে যায় বলে হেসে উঠলো রুহির কাছে এসে খুব রাগ না এই বাবার উপর? রুহি : কি যে বলোনা বাবা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। রোহান : মা আমি অফিসে যাচ্ছি বলেই বেড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষন পরে রুহি মেঘকে কল দেয় রুহি : হ্যালো! মেঘ : বলো সুইটহার্ট রুহি : কি করছো? বাসায় কখন যাবে? মেঘ : যাবো একটু পর রুহি : সারপ্রাইজ আছে, আচ্ছা আম্মু ডাকছে বাই মেঘ : শোনো কিন্তু তার আগেই কেটে দিয়েছে রুহি প্ল্যানমতো সবকিছু করে নিলো পুরো একঘন্টার মধ্যে। প্রায় আটটার দিকে মেঘ বাসায় আসে। বাসায় এসে রুমে আসতেই দেখে পুরো রুম অন্ধকার। সেতো সবসময় একটা লাইট জ্বালিয়ে রাখে নিশ্চয়ই আজ জ্বালাতে ভূলে গিয়েছিলো। লাইট জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিলে বেলকনিতে চোখ পরে মেঘের। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বেলকনিতে। কোমড় পর্যন্ত চুল, কালো শাড়ি তাতে খয়েরি কিছু স্টোন। কিছুটা কাছে যেতেই মেঘের মনকাড়া সেই স্মেল পিছন থেকে কোমড়ে স্পর্শ করে মেঘ। কোমড়ে স্পর্শ পেয়ে আবেশে চোখগুলো বন্ধ করে নেয় রুহি। মেঘের বুকে পুরো শরীরের ভর ছেড়ে দেয়। মেঘ : আজতো আমি শেষ জান বলে রুহিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। রুমে লাইট থাকার কারনে কিছুটা ধিম আলো বেলকনিতে পরছে সেই আলোয় রুহিকে দেখছে মেঘ। খুব মায়াবী হয়ে আছে। গাঢ়ো কাজল ঠোটে লিপস্টিক গায়ে হালকা জুয়েলারি। চোখ ফিরানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেঘ রুহির ঠোট দুটোকে নিজের দখলে নিয়ে নেয়। কোমড়ে চেপে আরো কাছে টেনে নেয়। কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলে রুহি লজ্জা পেয়ে পিছিয়ে গেলে মেঘ এগিয়ে যায়, এভাবে রুহি পিছিয়ে যাচ্ছে মেঘ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে একটা সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় রুহির। মেঘ রুহির হাত দুটো দেয়ালে চেপে ধরে। মেঘ : এতোবড় সারপ্রাইজ পাবো কখনো ভাবিনি সত্যিই খুব সারপ্রাইজড হয়েছি। রুহির হার্ট খুব জোড়ে বিট করছে নিঃশ্বাস মেঘের মুখে পরছে রুহির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয় মেঘ। চুমু খেতে খেতে কোলে তুলে নেয়। খাটে শুইয়ে কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রুহিও উঠে বসে। কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে আসে রুহি : এই তুমি ভাইয়াকে কল দাও মেঘ : কেনো? রুহি : দাওতো বলো এক্ষনি তোমার ফ্ল্যাটে আসতে। খাটে শুয়ে রুহিকে বুকে টেনে ওকে বললাম কিন্তু কেনো? তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য? রুহি : নাহ ওকে আমিই বলছি মেঘ : আমি বলছিতো ওয়েট মোবাইলটা নিতে রোহানকে আসতে বললো মেঘ :এবার বলেন রুহি : ওহু আরো বাকি এবার ভাবিকে বলো মেঘ : ভাবি!রোহান বিয়ে করলো কবে? রুহি : একদম ভাব নিবেনা তুমি সব জানো তোমরা আমার কাছে স্কিপ করে গেছো তুমিও পারলে মেঘ : আচ্ছা তা কিভাবে জানলেন শুনি? রুহি : সেদিন আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিলোনা ভাইয়ার মোবাইল থেকে মায়াকে কল করতে যাচ্ছিলাম যখন মায়ার নাম্বার ডায়েল করলাম তখনতো আমি পুরাই শক। মায়ার নাম্বার সুইটহার্ট দিয়ে সেইভ। তখনি জানতে পারি। মেঘ : বড় ভাই তার বোনের বান্ধুবির সাথে রিলেশন করছে তাই জানাতে চায়নি। তুমি কি জানো আমি আরো কিছু তোমার কাছে স্কিপ করেছি? রুহি : কি? মেঘ : রোহান অনেক আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে জানে। রুহি : আর ইউ জোকিং? মেঘ : মোটেও না ইটস ট্রু। আপনি যখন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে অফিসে চলে যেতেন তখন আপনার ভাই দেখেছিলো আর পরে মায়া তো আমাদের সব কিছু জানতো রোহান মায়াকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে দেয়। রুহি :আশ্চর্য ভাইয়া কোনো রিয়েক্টই করেনি? মেঘ : করেছে মায়া খুব কষ্টে মানিয়ে নিয়েছে পরে আমার অফিসে গিয়ে আমাকে যাচাই করেছে আমাকে পছন্দ হয়েছে তাই কিছু বলেনি। তোমার বর বলে কথা মেঘ : এতো ইজিলি হারাতে দিলে কি সেদিন নিজের কেরেক্টারের হালুয়া বানাতাম রুহি : হা হা করে হেসে উঠলো সেদিন অনেক ভাবলাম এই পিচ্চি মেয়েটাকেই চাই আমার। এতো মেয়ে লাইফে দেখেছি কারো প্রতি কখনো এতোটা আকৃষ্ট হইনি তাই সিদ্ধান্ত নেই এই মেয়েটাকেই আমি আমার রাজ্যের রানী করে রাখবো। মনেমনে একটা ছক একে নিলাম কিভাবে কি করবো যখন রাহিম, মহিন ভাইয়া ওদেরকে আসতে দেখে নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। রুহি তখনো ঘুম। সবাই যখন ড্রইংরুমে বসে আছি মেয়েটার অবস্থা জানতে চাইলে মেঘ : এম সরি গাইস! আমি তোমাদের বিশ্বাস টা রাখতে পারিনি। রাহিম : মানে কি মেঘ? কি করেছিস তুই? তাড়িয়ে দিয়েছিস মেয়েটাকে? মেঘ :নাহ মহিন : তাহলে? মেঘ : আই রেপড হার দুজনেই চমকে উঠলো মেঘ : আমি এখন মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাই রাহিম : আর ইউ জোকিং? মেঘ : এম সিরিয়াস। মহিন : মেয়েটা কি করছে এখন? মেঘ : কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। (আমি তখন তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছিলাম) রাহিম : তুই জানিস তুই কি করেছিস? মেঘ : ভালোবেসে ফেলেছি তাইতো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি আর তাই এখন বিয়ে করতে চাইছি। সেদিন মহিন আর রাহিম কাজি ডেকে বিয়ে করেছিলাম। রুহিকে ঘুমের ঘোরেই বিয়ে করে নিয়েছিলাম। যখন রুহি ঘুম থেকে উঠে আমি তখন রুহিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম আমাকেকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। আর আমিও বোকার মতো তখনি বিয়ের কথাটা বলে দেই সাথে সাথেই রুহি ডিভোর্সের কথা বলে কিন্তু আমি জানাই যে ডিভোর্সের জন্য তিন মাস সময় লাগবে। এই তিনমাস যদি আমার সাথে ভালো বিহেভ না করে আমি কিছুতেই ওর ফেমিলির কাছে ফিরিয়ে দিবোনা এবং যদি খারাপ ব্যবহার করে তাহলে আজকেই ওকে নিয়ে বাহিরের কান্ট্রিতে চলে যাবো আর যদি ভালোভাবে থাকতে পারো আমার কথা মেনে চলতে পারো তাহলে তিনমাস পর যদি রুহি চায় আমি নিজ থেকেই ওকে ডিভোর্স দিবো।তখন রুহি মেনে নিলো সে ভালো ব্যবহার করবে। সেদিন থেকে আমি ওকে যেভাবে যা বলতাম সব শুনতো। বই কিনে দিয়ে নিজেই ওকে পড়াতাম। নিজ হাতে খাইয়ে দিতাম। রাতে বুকে নিয়ে ঘুমাতাম বিয়ের সাতদিনের মাথায় সে চলে যায় বাসায়। তখন রুহি কিছুটা হলেও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। আমার নাম্বার নিয়েছিলো নিজ থেকেই কল দিতো। মোবাইলে কথা হতো প্রতিদিন। একদিন হঠাৎ করেই অফিসে চলে আসে আমি খুব অবাক হই। সেদিন একসাথে এরিয়ার বাহিরে গিয়ে লাঞ্চ করেছিলাম। তারপর প্রায়ই প্রতিদিন কলেজ শেষে আসতো।আমি বুঝতে পারছিলাম ওনি আমার প্রেমে পরেছেন। রুহির কপালে চুমু খাওয়া ছিলো আমার প্রত্যেহ রুটিন।প্রতিদিন ক্লাস শেষে এসে এখানে নিয়ে যেতে ওখানে নিয়ে যেতে বায়না ধরে। সামনে রুহির পরিক্ষা ছিলো তখন আমিও পড়া দিয়ে অফিসে বসিয়ে রাখতাম। যতটা ঢেড়স ভেবেছিলাম তা নয় খুব ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু মুশকিল পড়তে চায়না। ওর পড়ার স্টাইল গুলো ছিলো অত্যাধিক ইউনিক। ওকে সোফায় পড়তে বসালে বিশমিনিট সোফায় বসে পড়তো, ফ্লোরে বসে বিশমিনিট পড়তো, ফ্লোরে শুয়ে বিশ মিনিট, হাটতে হাটতে বিশ মিনিট, সোফায় শুয়েও পড়তো, একদিন আমি মিটিং করার জন্য বের হয়েছিলাম ওকে পড়তে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম এসে দেখি রুহি নেই ভাবলাম হয়তো চলে গেছে আমাকে না বলেই। আমি লেপটপে কাজ করছিলাম হঠাৎ পড়ার শব্দ শুনতে পাই। তারপর দেখি ও ফ্লোরে শুয়ে আছে। এইভাবেও কি পড়া যায়।প্রায় একমাস পর, একদিন বিকেলবেলা রুহি পড়ছে আর আমি লেপটপে কাজ করছি হঠাৎ করে এসে আমার কোলে বসে পড়ে। রুহি : এতো বোরিং কেনো আপনি। মেঘ : কেনো আমি আবার কি করলাম? রুহি :এতো পড়তে ভালোলাগেনা। মেঘ : গোল্ডেন পেতে হবে মনে থাকে যেনো রুহি : যদি না পাই ছেড়ে দিবেন আমাকে? মেঘ : রুহিকে কোলে বসিয়েই আমি মেইল চেক করতে করতেই বলে দিলাম হুম। রুহি সেদিন আর কোনো কথা বলেনি ইভেন যাওয়ার সময় আর কিছুই বলেনি। প্রথমে ততোটাও খেয়াল করিনি কি হয়েছে ব্যাপারটা পরে খেয়াল হতেই রুহিকে কল দিলাম রিসিভ করেনি। রাতেও তেমন কথা হয়নি শুধু হু হ্যা এইটাইপ কথা বলে রেখে দেয়। সেদিন থেকে খুব সিরিয়াস ভাবে লেখাপড়া করেছে রুহি। কোনো বায়না করেনি অফিসে এসেও আমি পড়া দিলে খুব কষ্ট হলেও শিখে নিতো। হঠাৎ করে রুহি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় অফিসেও আসেনা আমার ও কেমন লাগছিলো। কোনো উপায় না দেখে কলেজে যাই। ক্লাস শেষ করে রুহি বের হয়ে আসে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে রুহি। দেখি রুহি কিরকম হয়ে গেছে। অনেক শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালি কি হয়েছে ওর। কিছু জিজ্ঞাসা না করেই গাড়িতে করে অফিসে নিয়ে এলাম।রকিং চেয়ারে রুহিকে বসিয়ে দুপাশে দুহাত দিয়ে আটকে দিলাম মেঘ : কই ছিলা এতোদিন? রুহি : বাসায়। মেঘ : মোবাইল অফ কেনো? রুহি :নষ্ট হয়ে গেছে। মেঘ : আমাকে জানাতে পারতে। এখানে আসনি কেনো? রুহি : এমনি। মেঘ : কি হয়েছে জানতে চাইছি ফেমিলিতে কিছু হয়েছে? রুহি : নাহ কি হবে কিছুনা আমি বাসায় যাবো মেঘ : পালিয়ে বেড়াচ্ছো কেনো? কি হয়েছে জানতে চাইছিনা? রুহি : কিছু হয়নি বললাম তো দেরী হচ্ছে আমার বলে উঠতে গেলে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দেয় মেঘ। রুহি :অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ দুটো রক্তবর্ন হয়ে আছে। মেঘ : কি হলো? কিছু জিজ্ঞাসা করছিনা? কেঁদে উঠলো। মেঘ অবাক হয়ে আছে কি হলো কাঁদছ কেনো? রুহি : আপনি ডিভোর্সের পেপার রেডি করে ফেলেছেন আমি জানি দেখা হলেই সাইন নিয়ে নিবেন গত রবিবারেই তিনমাস হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের। তাই আসছিলাম না সাইন হলেই তো শেষ। মেঘ খুব বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে রুহিকে বুকে জড়িয়ে নেয়। যা চেয়েছিলো তাই হয়েছে। পাগলিটা আমাকেই ভালোবেসে ফেলেছে মেঘ : এই পাগলি আমি যদি তোকে ছেড়েই দিতাম তাহলে কি এভাবে বিয়ে করতাম? কি করে ভাবলি যে তোকে ছেড়ে দিবো আমি। এই একসপ্তাহ পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কতোবার মোবাইলে ট্রাই করেছি। রুহি মেঘের বুকে কাঁদছে। মুখ তোলে বললো ভালোবাসি। মেঘ : আমিওতো ভালোবাসি পাগলি সেদিন রুহির মুখথেকে ভালোবাসি কথাটা শুনেছিলাম। অতীতে ডুবেছিলো মেঘ। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বাস্তবে ফিরে এলো রুহি : ওরা চলে আসছে তুমি সামলে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে যাও রোহান : কি এতো জরুরি তলব মেঘ : আছে যাই হোক আসো তোমরা রোহান সমন্ধি হলেও মেঘের ছোট তুমি বলেই বলে। সময় ঠিক এগারোটা বেজে আটান্ন মিনিট মেঘ ওদেরকেকে গেস্ট রুমে নিয়ে এলো। হঠাৎ লাইট জ্বেলে দিয়ে হ্যাপি বার্থডে ভাবি বলে উঠলো রুহি রোহান আর মায়া পুরাই শক। মেঘের দিকে তাকাতে মেঘ : আমি কিছু বলিনি তোমার ফোন থেকেই জেনেছে সুইটহার্ট দেখেই বুঝে নিয়েছে। রুহি :আর কতো পালিয়ে প্রেম করবা ভাই এবারতো পার্মানেন্ট করো বলেই হেসে উঠলো সবাই মিলে কেক কেটে মায়া আর রোহান কে প্রাইভেসি দিয়ে ওরা চলে এলো। মেঘ : আজতো আমাদের আবার বিয়ে হলো তাইনা রুহি : হ্যা তো? মেঘ : বিয়ের রাত মানে তো বাসর রাত তাইনা রুহি : ওরে দুষ্টু রে বলেই বালিশ নিয়ে তেড়ে এলো এভাবে চলছিলো ওদের ভালোবাসার গল্প। সমাপ্তি


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে