হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২ পর্ব_১৭_ও_১৮

1
1945

হ্যাকারের_লুকোচুরি
#সিজন_২
#পর্ব_১৭_ও_১৮
লেখক_sharix_dhrubo

রাফির মনে পড়ে রকিবের কথা। “ওহহো রকিবকে ফোন দেয়ার কথা” জিভ কামড়ে ধরে রাফি।
রাফি – পিকাচু, রকিবকে কন্ট্যাক্ট করো।
পিকাচু – communicating………
রকিব – আননোন নাম্বার থেকে কল দেখেই বুঝছি যে তুই ফোন দিয়েছিস।
রাফি – ফোন নিয়েছিস নতুন!?
রকিব – হ্যাঁ নিলাম, নে নাম্বারটা নে।
রকিব নাম্বারটা বলতে থাকে আর পিকাচু নোট করে নেয়। রাফি পিকাচুকে কমান্ড দেয় নাম্বারটির রেকর্ড মুছে ফেলতে আর নাম্বারটি সিকিউর করতে। পিকাচু ও কাজ শুরু করে দেয়।
রাফি – আচ্ছা তুই বের হতে পারবি কখন?
রকিব – তুই বললে এখনই।
রাফি – আচ্ছা বের হ। ঠিকানামত পৌছালে আমার নাম্বারে ফোন দিস।
রকিব – তোর নাম্বার তো বন্ধ বহুদিন ধরে। আচ্ছা ঠিক আছে ফোন দিবো, এখন ঠিকানাটা দে।
রাফি পিকাচুকে নির্দেশনা দিলো রকিবকে ঠিকানাটি মেসেজ করতে। পিকাচু ও জিপিএস লোকেশন সই ঠিকানাটি পাঠিয়ে দিলো।
রাফি – তোর ফোন চেক কর। ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছি।
রকিব – (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হ্যাঁ পেয়েছি। আচ্ছা বের হচ্ছি আমি।
রাফি – ফি আমানিল্লাহ।
রকিব ফোনটা কেটে দেয়। কল কাটার পরপরই একটা মেসেজ পায় রাফি। মাফিয়া গার্ল,
“Congratulations, Mafia boy. Well done miles to go.”
রাফি বুঝতে পারে মাফিয়া গার্ল হয়তো প্রেস রিলিজ ফলো করেছে, আর হয়তো ধরতে পারে নি রাফির প্লান।
রাফি পিকাচু নিয়ে বসে পড়ে। রাফি জানে যে মাফিয়া গার্ল যদি ওর বাবা মা আর তোহার সিকিউরিটির দায়িত্ব নেয় তাহলে অবশ্যই কোন না কোনভাবে অনলাইন প্রযুক্তির সাহায্য নেবেই।
রাফি – পিকাচু, ওই ঠিকানায় কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো না। তারপরও চেক করো কোন ক্যামেরা আছে কি না।
পিকাচু – Accessing all available internet network around the pinpoint …….
রাফি – পিকাচু, এভাবে কি খুঁজছো?
পিকাচু – যদি কোন সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ অনলাইনে ট্রান্সমিট করতে হয় তাহলে মালিককে অবশ্যই কোন না কোন ইন্টারনেট প্রোভাইডার এর নেটওয়ার্কের সহায়তা নিতে হয়েছে। হতে পারে মোবাইল নেটওয়ার্ক অথবা ব্রডব্যান্ড। আমি যদি নেটওয়ার্কগুলোকে একসেস করতে পারি তাহলে খুব সহজেই ধরতে পারবো কোন কোন কানেকশনগুলো সিসিটিভি ফিড ট্রান্সমিট করছে।
রাফি – তার মানে তুমি এখন ওই এলাকার গোটা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক হ্যাক করবে!
পিকাচু – Affirmative.
রাফি দেখতে পায় পিকাচু ওই ঠিকানাকে মিডপয়েন্ট ধরে আশেপাশে একটা সার্কেল করে সার্চ এরিয়া তৈরী করে আর তারপর ওই সার্কেলের ভেতর থাকা প্রতিটা মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির নেটওয়াকিং সিস্টেম হ্যাক করছে পিকাচু। এত সহজে এতগুলো কোম্পানীর নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করা বাচ্চার হাতের মোয়া নয়। নেটওয়ার্কের কন্ট্রোল নিয়ে নেয়ার পর এলাকায় থাকা প্রতিটা অনলাইন ডিভাইসই পিকাচুর নাগালে চলে আসলো, শুধু যে সিসিটিভি নাগালে পেলো তা নয়।
পিকাচু – I can control anything in this network.
রাফি – আপাতত, বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে কোন সিসি ক্যামেরা আছে কি না তাই দেখো।
পিকাচু বাড়ির সদর দরজার বিপরীত বাড়িতে সিসি ক্যামেরা পেলো। সেখানে ২ টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে ঠিক রাস্তা বরাবর যা দিয়ে রাস্তার বিপরীতের বাড়ি স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়াও বাড়ির আসেপাশের পার্সোনাল ক্যামেরাগুলোও একসেস নিয়ে নিলো।
রাফি – পিকাচু, আমি যখন ওই বাসাতে ছিলাম তখন ওই বাসার বাউন্ডারির ভেতর কোন সিসিক্যামেরা ছিলো না, তাই আমরা সপরিবারে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার পর ওই বাসায় কোন টেকনিশিয়ান টিম বা সিসিক্যামেরা ইনস্টল করা টিম এসেছিলো কি না।
পিকাচু – বাড়িতে বা বাড়ির বাউন্ডারিতে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও সমস্যা হবার কথা না।
পিকাচু মনিটরে শো করে বাড়ির আশেপাশে থাকা অনলাইন ক্যামেরাগুলো যাতে করে পুরো বাড়িটার সার্ভেইল্যান্স সম্ভব।
রাফিও ভাবতে থাকে মাফিয়া গার্ল সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে এটেনশন টানবে না, কারন বাড়িটাকে সে ব্যবহার করছে শুধুমাত্র বাবা মা এবং তোহা যেন অবিশ্বাস না করে সেজন্য, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।
পিকাচু – I found something.
রাফি মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখে পিকাচু একটা স্যাটেলাইট ডিটেক্ট করেছে যা এই বাড়ির উপর নজর রাখছে।
রাফি – এ তো ভয়ংকর ঘটনা হলো, এই স্যাটেলাইটকে বোকা বানাবো কিভাবে !!
রাফি কিছু একটা ভেবে রকিবকে ফোন দেয়।
রকিব – বল দোস্ত,
রাফি – কতদূর পৌছেছিস!
রকিব – এইতো পথে।
রাফি – যাস না। আশেপাশে ভালো ফাষ্টফুডের দোকানে যা। সেখানে একটা বড়সড় পিৎজা অর্ডার কর সাথে ফ্রেন্চফ্রাই আর কোক।
রকিব – কেন? এসব কেন?
রাফি – ঝামেলা আছে। তুই ফ্রেন্স ফ্রাই এর প্যাকেটে ফোনটা ঢুকিয়ে দে আর তারপর সেটা ফুড ডেলিভার সার্ভিসে দিয়ে দে ওই ঠিকানা বরাবর, প্রাপকের নাম দিয়ে দিস তোহা।
রকিব – এত ঝামেলা কেন?
রাফি – যেটা বললাম সেটা কর দোস্ত, আমি চাই না আমার কারনে তুই কোন বিপদে পড়িস।
রকিব – আচ্ছা ঠিক আছে। কাজ শেষে ফোন দিচ্ছি।
রাফি জানে তোহা পিৎজা ছাড়া বাঁচতে পারবে না। ওই বাসায় থাকলেও কম বেশী পিৎজা অর্ডার করছে সে তা যে কোন ভাবেই হোক। আর বডিগার্ডরা হয়তো ডেলিভারি বয় নিয়ে খুব একটা মারপ্যাচ খাটাবে না। দেখা যাক।
রাফি নিজেও বসে আছে মাফিয়া গার্লের ডেরায়। কেন যেন কোনভাবেই আর বিশ্বাস করতে পারছে না সে মাফিয়া গার্লকে। পুরা দেশ বদল করে ফেলা হ্যাকারকে কোনভাবেই আর নিজের বিশ্বস্ততায় রাখতে পারছে না।
রাফি – পিকাচু, সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরাতে তোমার একসেস কেউ ধরতে পারবে না তো?
পিকাচু – নেগেটিভ, আমি নেটওয়ার্ক থেকে একসেস নিচ্ছি যা সাধারণত end to end Encrypted থাকে, আমি সেই এনক্রিপশন ভেংগে নেটওয়ার্ক থেকেই এই ভিডিও আপলিংক নিচ্ছি।
রাফি – আচ্ছা, এই কারনেই তুমি সবার প্রথমে পুরো এলাকার নেটওয়ার্ক সিসটেম দখলে নিয়েছিলে?
পিকাচু – পিকা পিকা।
রাফি – অসাধারণ। অনেকটা দুমুখি পানির পাইপের মাঝখানে ফুটো করে পানি বের করে নেয়ার মত অবস্থা। আচ্ছা ঠিক আছে। কোন ডেলিভারি বয় বাড়ির দিকে এপ্রোচ করলে ইনফর্ম করো।
পিকাচু – পিকা পিকা।
রাফি চেয়ার ছেড়ে ওঠে। বেজমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসে পেটপূজা করতে। বাইরের আবহাওয়া পুরাই ভিন্ন। রান্নাঘরের জানালার অর্ধেক ডুবে গেছে বরফে। বাইরে ভয়াবহ তুষারপাত হচ্ছে।
রাফি ভেবেছিলো বাড়ির লোকজনদের বের করে নিজেও এখান থেকে পালাবে রাফি কিন্তু বাইরের আবহাওয়া মোটেই সুবিধাজনক না। রাফি আর কিছু না ভেবে খাবার গরম করে খাওয়া শুরু করে। অন্য দুইজনের অবস্থা জানার ইচ্ছা আপাতত নেই রাফির। পরিবার নিয়েই বেশী চিন্তিত রাফি।
বেশকিছুক্ষন পর রাফির মোবাইলে রকিবের নোটিফিকেশন আসে, রাফি ফোন দেয় রকিবকে,
রাফি – কি হাল, কাজ শেষ?
রকিব – হ্যাঁ, তোর কথামত ফ্রেন্সফ্রাইয়ের প্যাকেটে মোবাইলটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। আর ডেলিভারি বয় ও বের হয়ে গেছে খাবার পৌছে দিতে।
রাফি – যাক, তুই বাসায় চলে যা এখন দোস্ত। অনেক বেশী কষ্ট দিলাম তোরে।
রকিব – বিপদের সময় যদি কাজে না আসতে পারি তো কিসের বন্ধুত্ব। প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই জানাবি।
রাফি – ধন্যবাদ দিলাম না, বিরিয়ানি ট্রিট দিমুনি।
রকিব – ওক্কে। পাওনা থাকলো।
রাফি – দোয়া কর যেন প্লান কাজে দেয় দোস্ত।
রাফি ফোন কেটে দেয়। প্রাথমিক কাজ হয়ে গেছে। দেখা যাক কি হয় এখন।
রাফি দ্রুত খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যায় বেজমেন্টে। সামনে কি হবে তা দেখার জন্য।
রাফি বসে আছে মনিটরের দিকে তাকিয়ে, কখন ডেলিভারি বয়কে দেখা যাবে। ততক্ষণে মাফিয়া গার্লের ফোন,
– পিকাচু কে পেয়ে আমাকে ভুলেই গেলে?
রাফি – আপনাকে ভোলা যায়! বসেই তো আছি আপনার দেয়া ঘরের বেজমেন্টে।
– পিকাচু কি পুরোপুরিভাবে তৈরী? Knowledge hunting শেষ?
রাফি – না, এখনো শুরু করতে পারে নি, যথাযথ জায়গা খুঁজছে এখনো।
– তুমি কি যে কোন এক জায়গায় পিকাচু কে রাখতে চাচ্ছো?
রাফি – ধরে নিতে পারো তেমনটাই। এছাড়া খন্ড খন্ডভাবে রাখাটা যুক্তিসংগত নয়।
– যে কারনে তোমার হাতে পিকাচুকে দেয়া, একটা বড় ধরনের বিপদ ঘটে গেছে।
রাফি – বড় ধরনের বিপদ! কি বিপদ?
– কিছুদিন আগে একটা মিলিটারি স্যাটেলাইটের কন্ট্রোল নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে একদল সন্ত্রাসী।
রাফি – এমন তো অহরহই হয়ে থাকে, সন্ত্রাসীরা দখল করবে আর সেনাবাহিনী আর হোয়াইট হ্যাট পুনরায় সেটা উদ্ধার করবে এমনটাই তো হয়ে আসছে।
– এবার আর এমন হচ্ছে না। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে শুধুমাত্র একটা স্যাটেলাইট স্টেশন আর একটা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন।
রাফি – এছাড়া আর কোন কন্ট্রোল নেই!?সাবমেরিনকে কন্ট্রোল করে কিভাবে! আর কি হয়েছে এতে? আর যে স্যাটেলাইট শুধুমাত্র সাবমেরিন আর স্যাটেলাইট স্টেশন ছাড়া কন্ট্রোল সম্ভব না সেটা হ্যাক করলো কিভাবে! ?
– এই পুরো সিস্টেমটাই একটা ব্যাকআপ প্লান হিসেবে ছিলো। যদি কোন কারনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তো সিকিউরভাবে সাবমেরিন থেকেই নিউক্লিয়ার হামলা চালানো যাবে।
রাফি – এমন হয় নাকি! প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিষ্টারের আদেশ ছাড়া নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক সম্ভব নাকি?
– টুইষ্ট তো ওখানেই। যেন যুদ্ধের সময় কোন কারনে প্রেসিডেন্ট বা নিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহারের আদেশ দেয়ার মত কেউ জীবিত না থাকে তাহলে যেন সাবমেরিনের অপারেশন কন্ট্রোল নিউক্লিয়ার স্ট্রাইক চালাতে পারে। এছাড়া স্যাটেলাইট স্টেশন ও একই কাজ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস থেকে এক্টিভেট করা থাকলেই কাজ হয়ে যাবে।
রাফি – তাহলে সাবমেরিন অথবা স্যাটেলাইট স্টেশন দিয়ে স্যাটেলাইটির কন্ট্রোল ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করলেই হয়।
– স্যাটেলাইটের কন্ট্রোল হাতছাড়া হয়েছে একবারে নয়, ধাপে ধাপে,
প্রথম ঘটনা, নেভী ড্রিল হিসেবে দুই সপ্তাহ আগে সাবমেরিনটি প্রশান্ত মহাসাগরে যাত্রা করলে যাত্রার কয়েক ঘন্টা পর সাবমেরিনটি থেকে সকল ধরনের ট্রান্সমিশন বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত সাবমেরিনটি নিখোঁজ।
দ্বিতীয় ঘটনা, স্যাটেলাইট দিয়ে সাবমেরিন খুঁজে বের করার জন্য সরকারী প্রোগ্রামার দিন রাত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে ট্রাষ্টেড হোয়াইট হ্যাটদের সাহায্য নেয়া হয়, যাদের মধ্যে কেউ একজন এক ভয়ানক প্রোগ্রামিং ভাইরাস সিস্টেমে আপলোড করে দেয় যার কারনে স্যাটেলাইট স্টেশন শুধু নয়, স্যাটেলাইট স্টেশনের সাথে কানেক্টেড সব ডিভাইস ওভারহীটেড হয়ে ফ্রাইড হয়ে গেছে। আর ওই ভাইরাসই পুরো স্যাটেলাইট কন্ট্রোল তুলে দিয়েছে কোন এক প্রোগ্রামার গোষ্টির হাতে।
রাফি – সাবমেরিন গেলো, সেটা খুঁজতে স্যাটেলাইট স্টেশন কাজে লাগাতে গিয়ে সেটাও গেলো সাথে স্যাটেলাইটের কন্ট্রোলও। এখন এটা বলবেন না যে কোন না কোনভাবে একটা নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস ও খোয়া গেছে।
– আনফর্চুনেটলী তাই ই হয়েছে। রিসেন্টলি নেভাল কমান্ড একটা ফুললি ফাংশনড নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস হারিয়ে ফেলেছে।
রাফি – মাশাআল্লাহ, আর কি চাই? দুনিয়া আনস্ট্যবল হয়ে যাওয়ার জন্য আর কি লাগে। আপনার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে দুনিয়া এখন বিশাল বড় নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে, তাই তো!
– হ্যাঁ সেটাই।
রাফি – এখানে পিকাচু বা আমি কি করতে পারি! আমাদের কি কাজ এখানে?
– যদি খুব দ্রুত সাবমেরিন অথবা স্যাটেলাইট খুঁজে বের করা না যায় তাহলে কি হওয়া সম্ভব তা হয়তো আন্দাজ করতে পারছো। তুমি এবং আমি মিলে এই পৃথিবীকে বাঁচাতে পারি।
রাফি – এটা ছোটখাটো বিষয় নয়, অনেক বড় বিষয়। এতোটা সহজভাবে বললেও অতটা সহজভাবে করা সম্ভব নয়। যারা একটা সাবমেরিন গায়েব করে দিতে পারে, যারা নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস চুরি করতে পারে তাদেরকে এতটা হালকাভাবে দেখা উচিৎ নয়।
– হালকাভাবে দেখছি না বলেই আমার সাহায্যের প্রয়োজন আর তোমরা মানে তুমি আর পিকাচু ছাড়া এমন ইফেক্টিভভাবে কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না।
রাফি – একটা প্রশ্ন, আপনি কেন এসব করছেন!?এসব করে আপনার কি লাভ!?
– এই দুনিয়া সার্ভাইভ করলে আমার লাভ। আর একটা জিনিস এড করে দেই, সাবমেরিনে ১৫ টা নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড আছে, যা স্যাটেলাইট এবং নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস এর দ্বারা সারা পৃথিবীর যে কোন পিনপয়েন্টে আক্রমন করতে সক্ষম।
রাফি – আসলেই চিন্তার ব্যপার। ১৫ টা নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড মানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারা এখনো কোন হুমকি বা স্ট্রাইক চালায়নি কেন?
– দুইটা কারনে, এক স্যাটেলাইট স্টেশন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্যাটেলাইটটিতে যে কোন সময় যোগাযোগ স্থাপন অসম্ভব হয়ে গেছে, এখন সাবমেরিন এবং স্যাটেলাইটকে কাছাকাছি এ্যালাইনমেন্টে আসতে হবে এবং তখনই যোগাযোগ সম্ভব।
আর দ্বিতীয়ত স্যাটেলাইট স্টেশন ব্যতীত সাবমেরিনকে স্যাটেলাইটের সাথে কানেক্ট হতে হলে সাবমেরিনকে অবশ্যই জলের উপর ভেসে থাকতে হবে। কিন্তু এখন জলের উপর ভেসে উঠলেই ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
রাফি – মানে ওই এক স্যাটেলাইট স্টেশনের জন্য অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে সবাইকে, মিলিটারিও আর সন্ত্রাসীরও।
– স্যাটেলাইট স্টেশনই একমাত্র উপায় ছিলো সাবমেরিন খুজে বের করার। স্টেশন না থাকলে মিলিটারি অসহায়।
রাফি – এই সাবমেরিন উদ্ধারে আমার সাহায্য নেয়ার প্লান আপনার মাথায় এলো কবে থেকে!?
– তোমার কাছে মজা মনা হচ্ছে এসব! একটা নিউক্লিয়ার বোমা বিষ্ফোরন মানে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু আর কোটি কোটি মানুষের রেডিয়েশন এক্সপোজারে ধুকে ধুকে মরন। তোমার বাবা মা এর শহরকেই যদি সন্ত্রাসীরা টার্গেট করে তাহলে! ওই শহরে এমন কোন নিউক্লিয়ার বাংকার ও নেই যেখানে চাইলেই তুমি বা আমি তোমার ফ্যামিলিকে ওই বাংকারে ঢুকিয়ে দিতে পারবো। আমার ফ্যামিলির কথা না হয় বাদই দিলাম।
যতই মজা করে উড়িয়ে দিক না কেন ব্যপারটা মোটেই হাসিঠাট্টার নয় সেটা রাফি ভালো করে জানে। হিরোশিমা নাগাসাকিতে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নেয় এই রেডিয়েশনের জন্য । আর একবার যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ বাধে তো এই পৃথিবী বলে কিছু থাকবে না। নাহ ভালো চিন্তায় পড়ে গেলো রাফি। একদিকে বাবা মা আর তোহাকে উদ্ধার করা অন্যদিকে পৃথিবীকে উদ্ধার, কি করবে রাফি!

#পর্ব_১৮
.
.আর একবার যদি নিউক্লিয়ার যুদ্ধ বাধে তো এই পৃথিবী বলে কিছু থাকবে না। নাহ ভালো চিন্তায় পড়ে গেলো রাফি। একদিকে বাবা মা আর তোহাকে উদ্ধার করা অন্যদিকে পৃথিবীকে উদ্ধার, কি করবে রাফি!
মাফিয়া গার্লের কথায় যেমন ভয় আছে তেমনি সন্দেহ ও আছে। ভেরিফাই করে নেয়া দরকার।
রাফি – পিকাচু, গত একমাসের ভেতর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নিখোঁজ সংক্রান্ত নিউজ বা রিপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করো।
পিকাচু – পিকা পিকা, Accessing news feeds…….. searching for update information ……….
No results found.
রাফি – কোন ইনফো নেই! এতবড় একটা ঘটনা ঘটলো অথচো কোন সংবাদেই এলো না! এটা কিভাবে সম্ভব!!!!!?
রাফি একটা জিনিস বুঝতে পারে যে এত বিপুল পরিমানে নিউক্লিয়ার বোমা সহ সাবমেরিন হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা যেমন ভয়ংকর তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে চাপ তো থাকবে অবশ্যই। যে কে দেশের অথরিটি ই চাইবে সারা দুনিয়াকে না জানিয়ে যতটা সম্ভব লুকিয়ে সাবমেরিন খুঁজতে। কিন্তু এমন শক্তিধর দেশের নেভাল ডিফেন্স সিস্টেম কি এতটা দূর্বল হতে পারে যে নিজেদের সমুদ্রসীমায় নিজেদেরই সাবমেরিন খুইয়ে ফেলবে!? তাছাড়া সাবমেরিন খুঁজতে হ্যাকারদের কি দরকার, সাবমেরিন হারিয়ে গিয়েছে, হ্যাকড তো হয় নি। হতে পারে নেভিগেশন আর কমিউনিকেশন সিস্টেম ড্যামেজ হয়ে সাবমেরিনটি স্টেল্থ মোডে চলে গেছে। হ্যাকার নিয়োগ দিয়ে সাবমেরিন খোঁজার কি দরকার ছিলো! সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খুজলেই তো পারতো! এত তাড়ার তো দরকার ছিল না। আর যেসব হ্যাকারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কি চেক করে নেয়া হয় নি? তার উপর হ্যাকারদের কেউ যদি ভাইরাস সিস্টেমে আপলোড করে তাহলে ওইসব হ্যাকারদের জেরা করলেই তো বের হয়ে যেত কি এবং কার মাধ্যমে ঘটেছে ঘটনা। অনেক বেশী তালঘোল দেখতে পায় রাফি। এটাকে “ডাল মে কুছ কালা হ্যায়” না বলে “পুরা ডাল ই কালা হ্যায়” বলা উচিৎ।
রাফি – পিকাচু, মিলিটারী নেটওয়ার্ক একসেস করো, দেখো ইন্টারনালভাবে এই বিষয়টা নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা।
পিকাচু – Accessing Military network…….
রাফিও আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে লাগলো কিছু একটা পাওয়ার আশায়। কিন্তু পিকাচু কিছুই খুঁজে পেলো না। মনিটরে শো করলো “NO RESULTS FOUND”
রাফি অবাক হয়ে গেলো। এত বড় একটা ঘটনা অথচো মিলিটারি নেটওয়ার্কেও কেউ এইব্যপারে মেনশন করে নি! মিডিয়াতে ফ্লাশ করলে হয়তো লোকজন আতংকিত হবে সেজন্য মিডিয়া এভয়েড করতে পারে কিন্তু তাই বলে নিজেদের সিকিউর নেটওয়ার্কেও বিষয়টা নিয়ে কোন আলোচনা হবে না এটা কেমন কথা!!
পিকাচু – All messages are encoded. No direct message found.
পিকাচুর কথায় আবারও ভাবনায় পড়ে রাফি, মিলিটারী নেটওয়ার্কে বেশীরভাগ মেসেজই সংকেতের মাধ্যমে আদানপ্রদান করা হয় যাতে করে সুনিদিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কেউ মেসেজ শুনতে পেলেও বুঝতে না পারে।
মাফিয়া গার্লের একের পর এক মিথ্যার জন্য রাফির মনে যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে তা এত সহজে দূর হবার নয়। আর এমনও হতে পারে রাফি এবং পিকাচু ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার স্যাটেলাইট আর সাবমেরিন এর দখল নিতে চায় মাফিয়া গার্ল! অসম্ভব কিছু নয়, হতেই পারে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেলো অথচো কেউ জানে না এটা তো অসম্ভব।
নাহ এসব ভাবলে চলবে না, মাফিয়া গার্লের কথায় ভুললে চলবে না। নিজের কাজে ফোকাস দিতে হবে।
পিকাচু – Package reached to its destination.
রাফি আবার মনিটরের দিকে তাকালো, পিৎজা আর ফ্রেন্সফ্রাই নিয়ে ডেলিভারি বয় পৌছে গেছে ঠিকানায়। বাসায় গেটে ওয়েট করছে।
পিকাচু বাসাটির বিপরীতে থাকা cctv ক্যামেরা দিয়ে শো করতেছে ডেলিভারি বয় বাসার দরজায় কার সাথে যেন কথা বলছে। রাফি এক চোখ চেপে আর এক চোখ দিয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো ডেলিভারি বয়কে, ক্যামেরার পজিশন আর দূরত্বের কারনে ডেলিভারি বয়ের পেছনটা দেখা যাচ্ছে শুধু আর দরজায় কে কথা বলছে এটাও দেখা যাচ্ছে না। রাফির টার্গেট প্যাকেটগুলো শুধু কোনভাবে ভেতরে যাক, বাকিটা পরে দেখা যাবে।
কিছুক্ষণ পর ডেলিভারি বয়কে বের হয়ে আসতে দেখা গেলো, রাফি খুব মনযোগ সহকারে ডেলিভারি বয়ের হাত আর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে থাকলো, প্যাকেটগুলো কি আদৌ ভেতরে গেলো নাকি প্যাকেটগুলো ব্যাগের সাথেই ফেরৎ নিয়ে এলো ডেলিভারী বয়!?
রাফি – পিকাচু, ফ্রেন্সফ্রাই এর ব্যাগে থাকা মোবাইলটির নেটওয়ার্ক ট্রাক করো, সেটা মুভ করছে নাকি একজায়গায় স্থির আছে।
পিকাচু – সেটটি এনড্রয়েড বা স্মার্টফোন নয় যে কারনে মুহূর্তের ভেতর জিপিএস পিনপয়েন্ট লোকেশন ধরা সম্ভব নয় তবে ১০ সেকেন্ডের ভেতর ট্রেস করে ফেলা যাবে নেটওয়ার্ক টাওয়ারের মাধ্যমে।
রাফি যেন ১০ সেকেন্ড ও ধৈর্য ধরতে পারছে না। অস্থিরতায় কপালে ঘাম জমিয়ে ফেলেছে, এছাড়া মাফিয়া গার্ল যদি টের পার রাফির সিক্রেট অপারেশন তাহলে সব শেষ।
রাফি – পিকাচু, ডেলিভারি বয় এর ব্যাগ এর ভিজুয়্যাল মেজারমেন্ট নিয়ে বলো যে ব্যাগটা খালি না ভরা। মানে বাড়িতে আসার আগে এবং বাড়ি থেকে বের হবার পর ব্যাগের ওজনের কোন তারতম্য হয়েছে কি না!
পিকাচু – scanning…… comparing…… ভিজ্যুয়াল মেজারমেন্ট বলছে ৮৬% সম্ভাবনা আছে বাসা থেকে বের হবার পর ব্যাগের ওজন ৯৫০গ্রাম কম হওয়ার।
এদিকে পিকাচুর নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং ও কম্প্লিট হলে ফোনের লোকেশন বাড়ির ভেতরেই শো করছে।
দুইটা কনফার্মেশন পজেটিভ হওয়ায় রাফি ব্যপক স্বস্তি পেলো। তাহলে কি তোহা বাড়িতেই আছে? থাকলে তো ভালই হবে, একসাথে সবাইকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো বুঝিয়ে বলতে পারবে।
রাফি এতটা বেশী সঙ্কায় আছে, যদি মাফিয়া গার্লের কাজ করতে রাফি রাজি না হয় তাহলে পরিবার জিম্মি করে কাজ আদায় করে নেয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এতদিনের অভিজ্ঞতা বলে মাফিয়া গার্ল যা চেয়েছে তা কোন না কোনভাবে সফল করেই ছেড়েছে। পরিবার রাফির সবচেয়ে বড় দূর্বলতা, তাই পরিবারকে বিপদের মুখে রেখে রাফি একদন্ডও শান্তিতে থাকতে পারবে না। কিন্তু পরিবারকে উদ্ধার করে রাখবে কোথায় রাফি! আর মাফিয়া গার্ল যখন জানতে পারবে বাবা মা আর তোহা হাতের মুঠোয় নেই তখন তো রাফিকে এই ঘরের ভেতরই ধুয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিতে পারে ওই দুই বডিবিল্ডারকে। তাই ওইদিকে বাবা মা আর তোহাকে বের করে আনার পাশাপাশি রাফিকেও এই ডেরা থেকে পালাতে হবে। অন্যদিকে পিকাচু এখন পুরোপুরিভাবে তৈরী কিন্তু knowledge hunt কম্প্লিট না করে পিকাচুকে এভাবে এই সার্ভারে ফেলে রেখে এখান থেকে পালানো ও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কোনভাবে ইন্টারনেট কানেকশন ডিসকানেক্ট করে দিলেই পিকাচু বন্দি হয়ে যাবে এই সার্ভারে। তাই পিকাচুর জন্য সিলেক্ট করা স্যাটেলাইটটি এন্টেনার রেন্জে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে রাফিকে। টাস্ক অনেকগুলো কিন্তু কাজগুলো করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে যাতে করে কোন ভুল না হয়। এদিকে রাফির মনে পড়ে ভয়ংকর তুষারপাতের কথা, এভাবে তুষারপাত হতে থাকলে খুব দ্রুত এখান থেকে পালানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
“ইয়া আল্লাহ, এ কোন পরিক্ষায় ফেললে তুমি আমায়।” রাফি মনে মনে উপরের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে।
রাফি – পিকাচু, ফ্রেন্সফ্রাই এর প্যাকেটে থাকা মোবাইলটার লোকেশন এখন কোথায় শো করছে?
পিকাচু মনিটরে একটা গ্রীন পয়েন্ট দিয়ে শো করছে ফোনের লোকেশনটা। রাফি চোখ বন্ধ করে ঘরের ভেতরের রুমগুলো কোথায় কেমন তা মনে করতে লাগলো।
রাফি – পিকাচু, ঘরের ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করো।
পিকাচু – পিকা পিকা।
পিকাচু ঘরটার স্যাটেলাইট ইমেজ নিয়ে ঘরের পিলার আর বাইরের দেয়ালসহ সদর দরজার লোকেশন ইন্ডিকেট করে ঘরটার একটা প্রাইমারি ব্লুপ্রিন্ট তৈরী করে দিলো। রাফি পরবর্তীতে নিজের স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে ঘরের ভেতরের রুম আসবাব ও অন্যান্য স্থাপনা ব্লুপ্রিন্টে বসিয়ে দিলো।
ব্লুপ্রিন্ট কম্প্লিট হলে রাফি দেখতে পায় মোবাইলটার লোকেশন ডায়নিং টেবিলের উপর শো করছে। এখনো ডায়নিং টেবিলে খাবারগুলো থাকা মানে হয় তোহা ঘরে নেই আর না হলে অন্য কাজে ব্যস্ত, পিৎজা ফেলে রাখা মেয়ে তোহা নয়।
পিকাচু – I can access the microphone if you want ….
রাফি কেমন যেন ধাক্কা খায়। পিকাচু মাইক্রোফোন একসেস করতে পারবে মানে!
রাফি – ফোনে কোন কল না দিয়ে বা রিসিভ না করিয়ে তুমি ফোনের মাইক্রোফোন দিয়ে আড়ি পাততে পারবে!
পিকাচু – Affirmative…..
রাফি পুরাই শকড হয়ে যায় তবে অন্য কিছু ভাবার আগে মাইক্রোফোন একসেস নিয়ে ঘরের ভেতর কি হচ্ছে সেটা শোনা বেশী জরুরী মনে করলো রাফি।
রাফি – শোনাও তাহলে ভেতরে কি শোনা যাচ্ছে।
পিকাচু – Software control override…… Accessing microphone….. use headphone for better listening…
রাফি হেডফোন তুলে নেয় কানে। পিকাচু সাউন্ড এডজাষ্ট করে শোনাতে থাকে রাফিকে।
দুইজন ব্যক্তির কথপোকথন শোনা যাচ্ছে যাদের কারো ভয়েসই চেনে না রাফি।
– ম্যাডাম পিৎজা অর্ডার করছে অথচো ম্যাডাম তো বাড়িতে নেই।
– হয়তো রাস্তায় আছে, আসতেছে। বাসায় এসে পিৎজা খাবেন হয়তো তাই অর্ডার দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
হঠাৎ রাফি একটা পরিচিত গলা শুনতে পায়, রাফির মা কথা বললেন,
মা – হয়েছে হয়েছে, এতো গবেষণা করতে হবে না, বৌমা ছাড়া আর কে পিৎজা পাঠাবে এখানে? রাফি ও তো দেশে নেই যে বলবো রাফি পাঠিয়েছে।
রাফি বুঝতে পারে হয়তো বডিগার্ড সহ বাবা মা ঘরের ভেতরেই আছে আর তোহা এখনো বাপের বাড়ি থেকে ফেরে নি। সবার গলার আওয়াজ হিসাব করে পিকাচু একটা এস্টিমেশান করে যে পিৎজা ফ্রেন্সফ্রাই কোক সবার সামনে খুব কাছাকাছি রেন্জেই রাখা। সবার সামনে থাকলে তো আর রাফির পক্ষে ফোন দিয়ে কারো সাথে কথা বলা সম্ভব না। আর হঠাৎ করেই যদি একটা খাবারের প্যাকেট থেকে ফোনের রিং শোনা যায় তাহলে অবাক হওয়ার থেকে আতংকিত হবার সম্ভাবনাই বেশী।
আচ্ছা শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে একটু কথা বলা উচিৎ। মাফিয়া গার্ল হয়তো তাদের নাম্বারে কোন সমস্যা করবে না। এমনটা ভাবতে ভাবতে শ্বশুরের নাম্বারে কল ঢোকায় রাফি, নাম্বার আনরীচেবল শো করছে। রাফি আর একবার কল দেবে এমন সময় মাফিয়া গার্লের ফোন,
– কি হচ্ছে এসব?
রাফি – কি হবে!
– কাকে ফোন দিচ্ছো তুমি?
রাফি – আমার শ্বশুর অসুস্থ, তার খোঁজ নিতে ফোন দিচ্ছি, আর তাছাড়া আমার ওয়াইফ ও ওখানে আছে। কথা বলা উচিৎ।
– কথা বলা উচিৎ! রাফি, তোমার ফ্যামিলি সেফ আছে, কিন্তু তুমি যদি ওই সাবমেরিন আর স্যাটেলাইট উদ্ধার না করো তাহলে এই পৃথিবী আর সেফ থাকবে না।
রাফি – পৃথিবীকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য অনেকেই আছে তবে আমার পরিবার নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নাই। পৃথিবী অপেক্ষা করবে তবে আমার পরিবার নয়। ফোনটা যদি আপনার কারনে আনরীচেবল হয়ে থাকে তাহলে দয়া করে ওপেন করে দিন। আমি তাদের সাথে কথা বলবো।
– তাদের ফোন এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে। তুমি চাইলে চেক করে নিতে পারো।
রাফি মাফিয়া গার্লের সাথে লাইইনে থাকা অবস্থায় পিকাচুকে কমান্ড দিলো যেন শ্বশুরবাড়ির সব নাম্বার ক্রসচেক করে যে আসলেই নাম্বারগুলো বন্ধ কিনা। পিকাচু ও স্ক্রীনে শো করে Scanning…..
রাফি – আপনার আসল উদ্দেশ্যটা কি! এসব করে কি হাসিল করতে চাচ্ছেন?
– হাসিল হলেই দেখতে পাবে।
রাফি আর কথা না পেচিয়ে ফোন রেখে দিলো। মাফিয়া গার্লের ঘুরানো প্যাঁচানো কথাগুলো আর ভালো লাগে না রাফির। অন্যদিকে পিকাচু শো করে আসলেই রাফির শ্বশুরবাড়ির সব নাম্বারগুলো বন্ধ হয়ে আছে।
হলো না শ্বশুরের উসিলায় তোহার সাথে কথা বলা। এতকিছু সামলাবে কিভাবে রাফি! মাথা গরম করলে কোন ফল বের হবে না জেনে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে বসে রাফি। সবার প্রথমে রাফিকে তার মা বাবা অথবা তোহার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, যেহেতু ফোন ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে তাই কথা বলা এখন সময়ের ব্যপার। তাই রাফি পিকাচুকে মাইক্রোফোনের কথপোকথনের ভয়েস আইডেন্টিফিকেশনের নির্দেশ দেয় আর বডিগার্ড দুইজনের ভয়েসকে ডেন্জার মার্ক এবং মহিলার আওয়াজকে সেফ মার্ক করতে বলে। পিকাচু আরো দুইটা আলাদা আলাদা ভয়েস আইডেন্টিফাই করে ফেলে ততক্ষণে, রাফি হেডফোন ভয়েসগুলো শোনে, খুব হালকা শোনালেও রাফি তার বাবার গলা ঠিকই চিনতে পারে, অন্যটা তিনজনের একজন বডিগার্ডেরই ভয়েস হবে তাই পিকাচুও রাফির কমান্ড হিসেবে ডেন্জার আর সেফ ভয়েস মার্ক করে নিলো।
পিকাচু যেহেতু ভোক্যাল টোন শুনে পসিবল ডিস্টেন্সের এস্টিমেশন করতে পারে সেহেতু সেফ ভয়েস কাছাকাছি ও ডেন্জার ভয়েস দূরে থাকলে রাফিকে এলার্ট করতে।
বাবা মায়ের সাথে কথা যা ই হোক, মূল উদ্দেশ্য তো তাদেরকে ওখান থেকে বের করে নিয়ে আসা, সেটা করতে হলে প্রথমে বডিগার্ড আর তারপর মাফিয়া গার্লকে স্যাটেলাইট আর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ব্লাইন্ড করতে হবে।
রাফি – পিকাচু, মাফিয়া গার্ল যে স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে তার ব্লাইন্ড স্পট টাইমিং কতক্ষণ সেটা ক্যালকুলেশন করে জানাও।
পিকাচু – পিকা পিকা। calculating the time of satellite orbiting blindspot …………. 45 minutes blindspot timing found.
অর্থাৎ দিনের একটি নিদিষ্ট সময়ে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট সার্ভেইল্যান্স 45 মিনিটের জন্য অন্ধ বা অকার্যকর হয়ে থাকে, আর রাফিকে এই ৪৫ মিনিটের ভেতরেই বাবা মা কে বের করে আনতে হবে ওই বাসা থেকে। বাবা মা কে বের করার পর যখন মাফিয়া গার্ল জানবে যে বাবা মা আর সেফ হাউজে নেই তখনই হয়তো সে ওই দুই বডিবিল্ডারকে পাঠিয়ে দেবে রাফিকে জব্দ করতে, তাই মাফিয়া গার্লের ব্লাইন্ড টাইমের ভেতর বাবা মা এর পাশাপাশি রাফিকেও পালাতে হবে।
পিকাচুর কারনেই যেহেতু রাফি আটকে আছে সেহেতু আগে পিকাচুর একটা ব্যবস্থা করা বেশী জরুরী, তাই পিকাচুর জন্য বাছাই করা স্যাটেলাইটের বর্তমান অবস্থান জানতে চায় রাফি,
রাফি – পিকাচু, what is the present condition of your memory Option number 32, the satellite?
পিকাচু – Calculating ………. 10 hours to contact…
রাফি ভাবে যে ১০ ঘন্টা পর পিকাচু স্যাটেলাইটে আপলোড হয়ে গেলে রাফিকে আর এই সার্ভারের মায়া না করলেও চলবে, তখন বিনা চিন্তায় পালাতে পারবে রাফি। কিন্তু রাফি পালিয়ে যাবেই বা কোথায়? এই দেশের কিছুই তো চেনে না রাফি, তার উপর যে পরিমাণ তুষারপাত শুরু হয়েছে তাতে পালিয়ে বাঁচা তো একপ্রকার অসম্ভব।
রাফি – পিকাচু, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আপডেট নাও। এই ঘন তুষারপাত কখন বন্ধ হতে পারে?
পিকাচু – Accessing weather satellite imaging…… update weather report …….
রাফি দেখতে পায় এই তুষারপাত শেষ হতে কমপক্ষে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা লাগবে। অর্থাৎ আগামী ৪৮ ঘন্টার ভেতর আর পালানো হচ্ছে না রাফির। একদিক দিয়ে ভালই হলো, পিকাচু আপলোড হবার পর বেশ সময় পাওয়া যাবে পিকাচুর knowledge hunting এর জন্য। তাছাড়া পালানোর প্লানটিকেও আরো পাকাপোক্ত করা যাবে।
নিজের কথা বাদ নাহয় বাদ ই দিলো রাফি, বাবা মা কে ওখান থেকে বের করে নিয়ে কোথা রাখবে রাফি, রাফির পরিচিত যে কোন জায়গায় বিপদ ঘটতে পারে তাই অন্য কোথাও ব্যবস্থা করতে হবে। রকিবকে ফোন দিয়ে সাজেশন নেয়া উচিৎ হবে কি? মনে মনে আকাশ পাতাল ভাবনায় বসে পড়ে রাফি। তাছাড়া এসবে প্রচুর টাকা খরচ হবে যা এইমুহূর্তে রাফির হাতে নেই, আর রাফির বাবা যদি তার একাউন্ট থেকে টাকা তোলে তো মাফিয়া গার্ল বুঝে যাবে। কারো কাছে টাকা চাইলেও বা পাওয়া যাবে কি না তাই ভাবতে থাকে রাফি। এই পুরোটা সময় পিকাচুর কথা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলো রাফি, গতানুগতিক চিন্তা করতে করতে যখন রাফির মাথা ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা তখন পিকাচু নোটিফিকেশন দেয়
পিকাচু – সন্ধ্যা ৬ টা ৫৪ মিনিট থেকে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইটের ব্লাইন্ড স্পট শুরু হয় আর শেষ হয় সন্ধ্যা ৭ টা ৩৯ মিনিটে।
অন্যসব বাদ দিয়ে রাফি তার প্রয়োজন নিয়ে বসে পড়ে পিকাচুর সামনে,
রাফি – পিকাচু, আমার টাকার দরকার, প্রচুর টাকার দরকার।
পিকাচু – Feeding money ….. calculating…..
..
.

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে