হ্যাকারের_লুকোচুরি সিজন_২পর্ব-১
লেখা-sharix dhrubo
টাইপ শেষ করতেই চ্যাটবোট উধাও হয়ে যায়। রাফিও বুঝতে পারে না কি হলো, আর কি ই বা হতে চলেছে রাফির জীবনে।
কপালের ভাঁজ ছিলো সারাদিনই, কিন্তু কাজের প্রতি অবহেলা করে নি রাফি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ল্যাপটপের স্ক্রীনের দিকে তাকায় রাফি, মাফিয়া গার্ল কেন এমনটা করলো তা ভেবে পায় না সে। নাহ, রাফির মন ছটফট করতেই থাকে। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছে না মাফিয়া গার্লের। অফিসের সময় শেষ হলে রাফি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দরজা কড়া নাড়ছে কিন্তু কোন সাড়া মিলছে না। তৃতীয়বার কড়া নাড়তেই তোহা দরজা খুলে দেয় কিন্তু রাফি তা খেয়াল ও করে নি। চতুর্থবারের জন্য দরজায় টোকা দেয়ার জন্য হাত বাড়াতে যাবে তখন তোহার মেকি কাঁশিতে ঘোর কাটে রাফির। দেয়াল থেকে চোখ ফিরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই যেন একটা আলোকছটা চোখে পড়ে রাফির। দরজায় তোহা দাড়িয়ে আছে। তেমন সাজে নি মেয়েটা, শাড়ীতে মোড়ানো, খোলা চুল, চোখে কাজল, কপালে টিপ আর ঠোঁটে হালকা রং এর ছোঁয়া। ব্যাস, এই মেয়েটাকে একটা হার্টবিটওয়ালা ডায়নামাইট বানাতে এতটুকুই যথেষ্ট। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে পাড়ি জমানো এই অপ্সরী, রাফির মত একটা ছেলের জন্য কেন ফিরে এলো এই ভাবনায় রাফির মাথায় চুল পড়া শুরু হয়ে গেছে হয়তো বহু আগেই, রাফিই হয়তো খেয়াল করে নি। দরজার সামনে দাড়িয়ে তোহার চেহারার দিকে তাঁকিয়েই এই আকাশ পাতাল চিন্তা করে ফেলে রাফি। কিছুক্ষণ আগেও দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মাফিয়া গার্লকে ভাবলেও দরজার ওপাসের পরীকে দেখে রাফির মস্তিস্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর অবস করে নিয়ে আসলেও তোহার মায়াবী চেহারায় বিমোহিত হয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকে রাফি। রাফির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তোহা, রাফিও বিমোহিত দৃষ্টিতে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দেয়। রাফিকে হাত বাড়াতে দেখে তোহার চোখ কিছুটা বড় করে, হালকা লাজুক চাহনীতে আলতো করে রাফির হাতটা সরিয়ে দিয়ে ঘাড়ের ব্যাগটা নিয়ে দৌড়ে চলে গেল ঘরের ভেতর। তোহার হাত বাড়ানোর উদ্দেশ্য যে ব্যাগ নেয়া ছিলো তা বুঝতে পেরে ভয়াবহ লজ্জা পেলো রাফি, বৌয়ের সৌন্দর্যের ঘোর কেটে বের হয়ে বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ঘুরিয়ে এনে নিজের মাথায় নিজেই একটা আলতো চড় মেরে বসলো। নাহ, বৌ তার ভয়ংকর রুপসী।
ঘরে ঢুকে কিছুটা চমকে যায় রাফি। ঘরের সবকিছু একদম পরিপাটি করে ফেলেছে তোহা। কে বলবে যে তারা দুইদিন আগেই এই নতুন কোয়ার্টারে এসেছে। সবকিছু একদম ছিমছাম পরিস্কার। তোহা মেয়েটার যে শুধু অপরুপ তা নয়, করিতকর্মা ও। একাই পুরো ঘর সাজিয়ে ফেলেছে।
ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর খুবই পরিচিত এক সুবাস নাকে ধাক্কা মারতে লাগলো। কাচ্চি কাচ্চি কাচ্চি। রাফি চোখ বুজে সুবাস নিতে নিতে ড্রয়িং টেবিলের দিকে রওনা দিলো, তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে মারবে তখনই,
তোহা – (উত্তেজিত) এই এই এই এই! কি করছো!
রাফি চোখ খুলে দেখলো তোহা সামনে দাড়িয়ে আছে। কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
রাফি – (বিস্ময়ের সাথে) কি হলো?
তোহা – (অভিমানী অভিযোগ) আজ যদি ভেজা তোয়ালে বিছানায় রাখো তাহলে খেতে দিবো না কিন্তু, হুউ।
রাফির খেয়াল হয় আর একটু হলেই সে ভেজা তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে ফেলতো। ভেজা তোয়ালেটা বুকে জড়িয়ে নিলো রাফি।
রাফি – (দুষ্টুমিতে) আচ্ছাআআআআ, তাহলে কি করা উচিৎ এই সন্ত্রাসী তোয়ালের সাথে যার জন্য আজ আমার উপবাস থাকার উপক্রম?
বলে হাতের ভেতর মোচড়াতে থাকলো তোয়ালেটাকে। তোহা চোখ বড় বড় করে রাফির কান্ড দেখছিলো আর গালে হাত দিয়ে নম্রস্বরে হাসছিলো।
তোহা -(হাসি হাসি) হয়েছে হয়েছে। আমাকে দাও। নিরপরাধ তোয়লের উপর আর অত্যাচার করতে হবে না।
বলে রাফির হাত থেকে তোয়ালের একপাশ ধরে বারান্দার দিকে যেতে চাইলো কিন্তু অপর প্রান্ত রাফি ধরেই রেখেছে তখনো। বাধা পেয়ে তোহা ফিরে তাকায় রাফির দিকে,
তোহা – ( অবাক) কি হলো? ছাড়ো তো?
রাফি – ( দুষ্টুমিতে) মাঝে মাঝে আমায় ছোঁয়ার জন্যও তো হাত বাড়াতে পারো, দেখতে পারো মাঝে মাঝে কার সাথে সংসার করছো, মানুষ নাকি ভুত।
তোহা – (আহ্লাদে) ভূতের সাথে সংসার করতে এসেছি আমি।
বলে টান দিয়ে তোয়ালে টা নিয়ে নিলো তোহা।
তোহা – (মিষ্টি গলায়) ডাইনিং রুমে যাও। আমি আসছি।
রাফি কিছুক্ষণ তোহার পথপানে চেয়ে থেকে চলে গেলো ডায়নিং রুমে।
কাচ্চি বিরিয়ানির সুবাসে সারাঘর একেবারে মৌ মৌ করছে। রাফি ডায়নিং এ বসে বেডরুমের দিতে উঁকি দেয় তোহার ফেরত আসার জন্য। সামনেই ডিসভরা কাচ্চি অথচো রাফি তোহার অপেক্ষায় বসেই আছে।
তোহা একপ্রকার দৌড়ে চলে এলো ডাইনিং এ , এসে থমকে গেল রাফিকে বসে থাকতে দেখে। যেন ভুত দেখছে তোহা।
তোহা – (অবাক হয়ে) তুমি এখনো শুরু করো নি?
রাফি – (বিস্ময়) কি শুরু করবো? আজ সেফ আমাকে সার্ভ করবে।
তোহা – (অবাক) তবে মা যে বলেছিলো………….
রাফির কপাল কুঁচকে যায়, স্থীরভাবে তোহার দিকে তাকায়।
রাফি – (কৌতুহল নিয়ে) মা? মা কি বলেছিলো?
তোহা – (প্রসংগ এড়াতে) না না, কিচ্ছু না বলে খাবার বাড়তে লাগলো।
রাফি ডুব দিলো অতীতের পাতায়, আজকের আগে সে কোনদিন কারো জন্য কাচ্চি বিরিয়ানিকে অপেক্ষা করায় নি। এমনও হয়েছে সবাই রাফির অপেক্ষায় কাচ্চি না খেয়ে বসে আছে আর রাফি এসে ম্যানুতে কাচ্চি দেখে কাউকে না ডেকে একাই সেটে দিয়েছে। কাচ্চিই রাফির ভালোবাসা। কিন্তু আজ কি হলো! রাফি অপেক্ষা করিয়েছে কাচ্চিকে! ক্যামনে সম্ভব!
মা তাহলে বিরিয়ানির গল্প তোহাকে বলে দিয়েছে!!! কিছু বলতে গেয়েও ভাষা হারিয়ে ফেলে রাফি। চুপচাপ বসে তার পার্সোনাল সেফ এর খাবার সার্ভ করা দেখতে লাগলো।
তোহা মুচকি হাঁসতে হাঁসতে রাফির প্লেটে বিরিয়ানি তুলে দেয়, রাফি প্লেটের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কাচ্চিকে বলতে থাকে ” My love, তোমার সতীন চলে এসেছে।”
রাফির মনে হলো প্লেটভরা বিরিয়ানিও ওর কথার পাল্টা জবাব দিয়ে বললো “আগে খেয়ে তো দেখো আমার সতীন আমায় রাঁধে কেমন?”
রাফি তোহার দিকে লজ্জা নিয়ে তাকিয়ে কাচ্চিতে হাত ডোবায়। তোহা রাফির মন্তব্য শোনার জন্য তাকিয়ে থাকে রাফির দিকে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে একলোকমা তুলে গালে চালান দেয় রাফি। দুইবার গাল নাড়ানোর পর থেমে যায় রাফি, চোখটা বন্ধ হয়ে যায়।
রাফি – (উত্তেজনায়) উম …..উ…উম..উম..উম।
তোহা – (উৎকন্ঠার সাথে) কি হলো?
রাফির মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। অমৃতের স্বাদ নিতে আরো একলোকমা গালে ঠেসে দেয় সে। এদিকে তোহা যে হা করে উৎকন্ঠার সাথে রাফির মন্তব্য শোনার জন্য বসে আছে সেদিকে রাফির কোন খেয়াল নেই। যেন তোহার কোন কথাই শুনতে পায় নি রাফি।
গোগ্রাসে পুরো প্লেট সাফ করে ফেলে রাফি। কৌতুহলবসত রাফির চোখ যায় তোহার দিকে। কিন্তু যা দেখলো তা সাধারণ কিছু ছিলো না। তোহার চোখ বিশাল হয়ে গেছে, গালটাও হা হয়ে আছে, সামনে প্লেটে বিরিয়ানি রাখা কিন্তু মনে হয় না এখনো একলোকমাও তোহা গালে তুলেছে। রাফি তোহার চোখের সামনে হাত নাড়ায়। কিন্তু তোহা শুধু একটা চোখের পলক ফেলে রাফির হাত নাড়ানোর জবাবে।
তোহা -(অবাক) ক্যামনে পারে মানুষ?
রাফি – (কপালে ভাঁজ এঁকে) কি পারবে মানুষ?
তোহা – (উত্তেজনায়) আগে বলেন রান্না কেমন হয়েছে!
রাফি – (উল্লসিত হয়ে) লা-জওয়াব, মাইন্ডব্লোইং, সুপার সে উপার, ১এর ক, মারহাবা।
পুরোটা একদমে বলে তোহার চোখের দিকে তাকায় রাফি, রাফির মুখে ওভাবে কাচ্চির প্রসংসা শুনে লজ্জায় মেয়েটার গালদুটো লাল হয়ে গেল।
রাফি – জীবনে হয়তো কোনদিন আমি এত দ্রুত বিরিয়ানি শেষ করি নি। অমৃত ছিলো কাচ্চিটা।
তোহা – (লজ্জা পেয়ে) এত ভালো হয়েছে! (রাফি হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়) হয়েছে হয়েছে এখন যাও।
রাফির খাওয়া শেষ হলেও টেবিল ছেড়ে ওঠার নাম নেয় না। তোহা আড়চোখে রাফিকে দেখছে আর ছোট্ট একটা লোকমা তুলে গালে দিচ্ছে, আর রাফি তোহার খাওয়া দেখছে।
তোহা – (জোর করে) কি হলো, যাওও।
রাফি – আমিতো তোমার রান্নার স্বাদে ভেসে গিয়ে তোমাকে রেখেই খেয়ে নিলাম, এখন না হয় তোমার পাশে বসে তোমাকে সংঙ্গ দেই।
তোহা – (মুচকি হেসে) হয়েছে, সঙ্গ দিতে হবে না, এখন যাও তো। (মনে মনে) রাফিজ্বী আপনি আমার জন্য বিরিয়ানিকে ওয়েট করিয়েছেন দেখেই আমার মন আপনার সংঙ্গ পেয়ে গেছে।
রাফি আর অপেক্ষা না করে বেডরুমের বারান্দায় চলে গেল। আর ভাবতে লাগলো তোহার কথা। এই মেয়েটা কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো রাফির জীবনে আর এক পলকেই পাল্টে দিলো রাফির পুরো পৃথিবীকে। মনে মনে আবারো বৌয়ের প্রেমে পড়ে রাফি।
পরদিন সকাল
রাফি তৈরী হয়ে অফিসে রওনা দেবে এমন সময় তোহা একটা লাঞ্চবক্স এগিয়ে দেয়।
তোহা – (গম্ভীর গলায়) আজ থেকে দুপুরে বাইরের খাওয়া বন্ধ। ঠিক সময়ে খেয়ে নিবা। আমি কিন্তু ফোন দিয়ে শুনবো খেয়েছো কি না।
রাফি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আসলে এমন সিচ্যুয়েশনে কি বলা উচিৎ বা কি করা উচিৎ তা জানে না রাফি। তাই শুধু আচ্ছা বলে বেরিয়ে আসে রাফি।
অফিসে পৌছে রাফি দিনের কাজ শুরু করে। কিছুক্ষন পর ডাইরেক্ট স্যার রাফিকে তার রুমে ডেকে নেন।
রাফি – আসসালামু আলাইকুম, স্যার। আসতে পারি?
ডাইরেক্টর – ওয়ালাইকুমুস সালাম রাফি। ভেতরে আসেন।
রাফি চেম্বারের ভেতরে ঢুকে টেবিলের সামনে দাড়িয়ে রইলো। ইজাজ স্যার (প্রয়াত ডাইরেক্টর) খুব মিষ্টি একটা হাসি দিতো রুমে এসলেই। অথচো ডাইরেক্টরের চেয়ারে বসে থাকা বর্তমান মানুষটির কাছ থেকে এমনকিছু আশা করে না রাফি। গতকাল মাফিয়া গার্ল হয়তো এমন কিছু করেছে যে কারনে আজ ডাইরেক্টর রাফিকে আপনি করে বলছেন। সম্মান আর শ্রদ্ধা মন থেকে আসে, জোর করে ডাইরেক্টর স্যারের কাছ থেকে সম্মান আদায় করার পক্ষপাতী না রাফি।
ডাইরেক্টর – কি হলো! বসুন। হাতের কাজটা সেরেই কথা বলছি।
রাফি – স্যার যদি আপনি ব্যস্ত থাকেন তাহলে আমি পরে আসি?
ডাইরেক্টর – না না না, বসো। ব্যপারটা জরুরী।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে বসে পড়ল ডাইরেক্ট স্যারের সামনে। হাতের কাজ সেরে রাফির দিকে ঘুরে বসলেন ডাইরেক্টর।
ডাইরেক্টর – তারপর মি. রাফি? কেমন লাগছে অফিস?
রাফি – (বিব্রতবোধ করে) আগের মতনই। শুধু আপনাকেই নতুন পেয়েছি।
ডাইরেক্টর – বুঝতে পেরেছি। ইজাজের অকাল প্রয়ানে আমিও মর্মাহত। যিনি চলে গেছে তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না, শোককে শক্তিতে পরিনত করে সামনে এগনো উচিৎ। যাইহোক, যেজন্য ডেকেছি আপনাকে।
রাফি – (বিব্রত হয়ে) আমাকে তুমি করে বলবেন স্যার। আমি আপনার অধিনস্থ এবং বয়সেও ছোট, আপনি শুনতে অশোভন লাগে।
ডাইরেক্টর – সময়ের সাথে সাথে এডজাষ্ট হয়ে যাবে মি. রাফি। (বলে একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন রাফির দিকে) পড়ুন।
রাফি পড়তে শুরু করে। রাফির জন্য একটা ট্রেনিং অর্ডার। দেশের বাইরে বড় একটা এন্টি সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের আন্ডারে রাফির ট্রেনিং হবে মাসখানেক। সফলভাবে ট্রেনিং সম্পন্ন করলে প্রোমোশন হবে রাফির।
ডাইরেক্টর – উপরের অর্ডার, আপনার মত ইফিশিয়েন্ট অফিসারকে আরো চৌকস করে তুলতে এই স্পেশাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা।
রাফি – আমাকে একটু ভাবার সময় দিন। পরিবারের সবার সাথে কথা না বলে আমি হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।
ডাইরেক্টর – Take your time, but it is a government order, mind it.
রাফি – I will, sir.
বলে রাফি উঠে দাড়ায়। বিয়ের পর একের পর এক ঝড় এসেই চলেছে রাফির জীবনে। এখন ট্রেনিং এর জন্য আবার দেশের বাইরে যেতে হবে। রাফি সাতপাচ ভাবতে ভাবতে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। এদিকে রাফির ফরেন ট্রেনিং ট্রিপের কথা মোটামুটি সারা অফিস জেনে গেছে। সবাই এসে রাফিকে কংগ্রাচুলেশনস জানায়। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও রাফি হাসিমুখে ধন্যবাদ জানায় সবাইকে।
অফিস সেরে বাড়িতে ফেরে রাফি। তোহা একগাল হাসি নিয়ে দরজা খোলে কিন্তু আজ আর রাফির চোখ তোহার হাসির উপর পড়ে না। মুখ ভার করে ঘারের ব্যাগটা তোহার হাতে তুলে দেয় রাফি। চুপচাপ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হবার জন্য। তোহা আন্দাজ করতে পারে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কি হয়েছে তা ধরতে পারে না। এমন সিচুয়েশনে নেগেটিভ চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক।
রাফি ফ্রেস হয়ে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। আজ আর বিছানায় তোয়ালেটা ফেলে না রাফি, সোজা বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে পড়ে।
তোহা পেছন পেছন এসে রাফির পাশে দাঁড়ায়।
তোহা – কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেন?
কিছুটা চমকে ঘুরে তাকালো পেছন দিকে। তোহাকে দেখে আবারো চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
রাফি – কিছুই না। হয়তো আমার খুশি হওয়া উচিৎ কিন্তু বুঝতে পারছি না।
তোহা – বলবে তো কি হয়েছে?
রাফি ঘরে চলে যায়। ব্যাগ থেকে কাগজটা বের করে তোহার হাতে ধরিয়ে দেয়।
তোহা কৌতুহলের সাথে কাগজটা খোলে। পুরোটা পড়ে তোহার চোখ চকচক করে ওঠে।
তোহা – বাহ বাহ অফিসার! বিদেশে ট্রেনিং, ফিরে আসলে প্রোমোশন। ওয়াহ মি. রাফি। আপনার তো মহা খুশি হওয়া উচিত। তা আপনি এত মনমরা হয়ে আছেন কেন?
রাফি – (উদাসীনভাবে) জানি না। একের পর এক ঝামেলা পেরিয়ে এই সুসংবাদটাকেও এখন আর আনন্দময় লাগছে না। কেন যেন অসম্পূর্ণ সবকিছু। বিয়ের পর থেকে একটা দিনও ঠিকমত তোমার সাথে কাটাতে পারলাম না। ভয়ংকর এক মরনজাল থেকে মরতে মরতে ফিরে এলাম। কিছুটা সময় তো লাগবে স্বাভাবিক হতে।
তোহা -(হাসিমুখে) এইজন্যই কি আপনার মুখ ভার হয়ে আছে!
বলে রাফির বাম হাতের ভেতর নিজের হাত জড়িয়ে মাথা ঠেকায় রাফির হাতে। রাফি আর কথা বাড়ায় না। অসম্পূর্ণতা রাফিকে ঘিরেই আছে। কিন্তু কিসের এত অপূর্নতা। তোহাকে দিতে না পারা সময় নাকি মাফিয়া গার্লের করা উপকারের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করতে পারা?
চলবে???