#হে_দুঃখি_চোখ
#১ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
এই নিয়ে নবম বারের মতো আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে।এই বিয়েটা অবশ্য হয়েই গিয়েছিল!ছেলের মা এসে আংটি পড়াতে আমার আঙুল ধরেছে পর্যন্ত।আর ঠিক তখন বরের ছোট মামা ডাকলেন তার বোনকে।মানে আমার হবু শাশুড়িকে।
‘আপা?’
বরের মা তাকালেন।
বরের মামা বললেন,’একটু এদিকে আসো আপা। কথা আছে।’
বরের মা বললেন,’আহা!আংটি টা পরিয়েই আসি। তুই একটু ওয়েট কর।’
বরের মামা তখন বললেন,’জরুরি কাজ।আংটি পরানোর আগেই আসতে হবে তোমার।’
বরের মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’দাঁড়াও মা। আমি একটু শুনে আসি কী বলে ও কেমন!’
আমি মুচকি হাসলাম।আর দাঁড়িয়ে রইলাম আমার হবু শাশুড়ির জন্য। তিনি আবার আসবেন আর আমার অনামিকায় চকচকে সোনালী আংটি পরিয়ে দিবেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমার হবু মামা শ্বশুরের কথা শুনতে গিয়ে আমার হবু শাশুড়ি আর আমার কাছে ফিরে এলেন না আংটি পরাতে। তিনি বারান্দায় ডেকে নিলেন বাবাকে। তারপর বললেন,’ভাইসাব,বিয়েটা হবে না।’
আব্বা মুখ মলিন করে বললেন,’এ কী বলছেন আপনি? কেন হবে না?’
বরের মা বললেন,’এর আগে আপনার মেয়ের আটবার বিয়ে ভেঙেছে। বিয়ে ভাঙা মেয়েকে আমি আমার পুত্রবধূ করবো না।’
এই কথা শুনে আমার বাবা সঙ্গে সঙ্গে বারান্দায় পিলার ধরে বসে গেলেন।আর আমার সৎ মা এসে আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে গেলেন উঠোনে। তারপর আমায় মাটিতে ফেলে দিয়ে বললেন,’পুড়া কপালী,তোর লাইগা আমার মাইয়াডারেও বিয়া দিতে পারতাম না আমি।তোর তো জীবনেও বিয়া হইবো না।পিছনে আমার মাইয়াডারও হইবো না।বড়
বইনের বিয়া না হইলে ছোড বইনের হইবো কেমনে?’
আব্বা তখন আম্মাকে বললেন,’রাখো তো। আমার মা মরা দুঃখী মেয়ে।এরে তুমি কতো বকো?’
আব্বার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আম্মা আব্বাকে ধমকে উঠলেন।
‘আহ্লাদী বাপ।একটা কলঙ্ক জন্ম দিছে। আপনার এই মাইয়ারে লইয়া আপনি এই বাড়ি থাইকা বাইর হইয়া যান কইলাম। আপনার মাইয়ার লাইগা আমার মাইয়ার সুন্দর জীবন আমি নষ্ট হইতে দিতাম না।’
আব্বা তখন চুপ মেরে গেলেন।যেন কোন উত্তর তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না আর।
‘
রাতে সবাই প্লেট টেনে নিয়ে খেতে বসেছে। আমিও গিয়ে সবার সাথে প্লেট টেনে নিয়ে বসে পড়লাম। কিন্তু আম্মা সবার প্লেটে ভাত বেড়ে দিলেও আমার প্লেটে দিলেন না। আব্বা বললেন,’এ কী, বিথীর প্লেটে ভাত দিলা না যে?’
আম্মা তখন গমগমে গলায় বললেন,’হের কপালে এই বাড়ির ভাত উইঠা গেছে।এরে আমি ভাত দিবো না।কতো করে আপনেরে কইছিলাম যে আমার ভাতিজার মতন এমন ছেলে মিলানো বহুত কঠিন। শুনলেন না।ছেলের রাগ বেশি এইটা আপনার সমস্যা!রাগ এই পৃথিবীর কোন পুরুষের না আছে! লক্ষ্মী ছেলের কাছে আপনে মেয়ের বিয়া দিবেন। দেখি লক্ষী ছেলে আপনের কই মিলে!’
মিলবে না এটা আমিও জানি। আমার সৎ মা চান তিনি আমাকে তার ভাইয়ের ছেলে হাসানের জন্য তার ঘরের বউ করে নিতে। কিন্তু হাসান সম্পর্কে আব্বা খুব ভালো করেই জানেন যে হাসানের শুধু রাগই বেশি না তার চরিত্রও খারাপ।শত শত মেয়ের সাথে সে প্রতারণা করেছে। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে সে খুন রাহাজানিও করে। এই জন্যই আব্বা না করে দিলেন। কিন্তু আমার সৎ মা আব্বার এই না বলা খুব সহজে মেনে নিতে পারেননি। এই জন্য তিনি আমার জন্য বিয়ের কোন আলাপ এলেই খুব কুট কৌশলে বরপক্ষের লোকদের কানে তিনি এই কথা বলে দেন যে আমার নাকি চরিত্রে সমস্যা। অনেক ছেলের সাথে আমার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে।কী অসভ্য ব্যাপার!
আব্বা এর জন্য আম্মাকে বকতেও পারেন না। বেশি বকাঝকা করলে আম্মা আব্বাকে হুমকি দিয়ে বলেন,’একটা কল দিলে আপনার মাইয়ার কী হইবো জানেন?’
আব্বা থরথর করে কেঁপে উঠে বলেন,’কী হবে?’
আম্মা বলেন,’ইজ্জত যাইবো। আমার ভাতিজার হাতে ইজ্জত যাইবো!’
আব্বা তখন চুপ হয়ে যান।
আম্মা তবুও বলেন,’হাসান গত পড়শুও একটা মাডার করছে। চেয়ারম্যানের পোলারে।হের সাথে লাগতে গেলে হে কাউরে ছাড়ে না।ফুপারেও ছাড় দিবো না।’
কথাটা শুনে ভয়ে আব্বার মুখ কেমন শুকিয়ে যায়।তাই তিনি শীর্ণ মুখে ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকান। আমার তখন খুব কান্না পেয়ে যায়।তাই আমি ওখান থেকে উঠে চলে যাই বারান্দার দিকে। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদতে থাকি।
আব্বা বাড়া ভাত রেখে হাত ধুয়ে উঠে পড়েন। তারপর তিনি ঘর থেকে চুপচাপ বের হয়ে চলে যান বাইরে। আব্বা বাইরে চলে গেলে আম্মা আসেন আমার কাছে। এসে ধমক দিয়ে বলেন,’কপাল যদি ভালা রাখতে চাস তাইলে বিয়াডাত রাজি হইয়া যা। নাইলে তোর জীবনডা বরবাদ কইরা দিবো কইলাম।’
আমার তখন রাগ পেয়ে যায় খুব। রাগে আমি জোর গলায় বলে উঠি,’পৃথিবীতে মনে হয় তোমার মতন খারাপ মহিলা আর একটাও নাই!’
কথাটা শুনে আম্মা খুব রেগে যান।আর তার চোখ আগুন করে মুহূর্তে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দেন। তারপর আমার চুল ধরে টেনে ফেলে দেন মেঝেতে। আমি—-
‘
#চলবে