হেল্পিং মেন্টালিটি

0
710

– শোন, চুলায় গরম পানি বসাও আর ডিম সেদ্ধ করতে দাও। আমি এসে খিঁচুরি রান্না করব।

ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছাড়ার আগেই রিয়ার আম্মুর আদেশ। ভেবেছিলাম, ছুটির দিন, একটু বেলা করে শুয়ে থাকব। সেটা আর কই হলো! কথামত কাজ করলাম। ডিমটা সেদ্ধ হয়ে গেল, পানিটাও গরম হয়ে গেছে। রিয়ার মা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাকতে ইচ্ছা করল না। দুটো চুলো বন্ধ করে ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে বসে গেলাম। তামিল ছবির হিন্দি ভার্সন। আমার খুব প্রিয়। তারও প্রায় ঘন্টাখানেক পর রিয়ার মা উঠল।

– কি ব্যাপার, ডাকলে না কেন?

– ছুটির দিন, কোন তাড়া নেই। তাই আর ডিস্টার্ব করলাম না।

– এতক্ষণ বসে বসে টিভি দেখছ, ডিমগুলো ছুলিয়ে ফেলতে পারতা না!

– তুমি তো সেরকম কিছু বল নাই।

– বলতে হবে কেন? তোসার কোন হেল্পিং মেন্টালিটি আছে? ছিল কখনো?

– আরে! এই যে গরম পানি করলাম, ডিম সেদ্ধ করলাম, তুমি যা বলেছ তাই তো করেছি!

– উদ্ধার করেছ! বসে বসে বস্তাপচা সিনেমা না দেখে কাজটা আগিয়ে রাখতে পারতা না? খিঁচুড়ি কি আমি একা খাব?

যাহ্ বাব্বা! ওকে ঘুমিয়ে থাকতে দিয়ে তো বিরাট অপরাধ করে ফেললাম! পরবর্তি আধা ঘন্টা খিচুড়ি রান্না আর ঝগড়া একসাথে চলল আর তারপর নিশব্দে খাওয়া। একটা সুন্দর দিনের শুরুতেই এরকম সমাপ্তি একদম কল্পনাতেও ছিল না। এমনিতেই আমার বাসায় খিচুড়ি রান্না খুব কম হয়, তিন-চার মাস পরপর। মনে মনে ডিসিশন নিলাম, এর পরের বার কাজ এগিয়ে রাখবই। মাস তিনেক পর আবার সুযোগ আসল।

– শোন, পানি গরম কর আর ডিম সেদ্ধ বসিয়ে দাও। আমি এসে খিঁচুড়ি রাধব।

সাথে সাথে পূর্বের ঘটনাটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। আজ আর ভুল হবে না। ডিম সেদ্ধ হতেই ছুলানো শুরু করে দিলাম। একটা কোনমতে ছুলানো শেষ করেছি তখনই রিয়ার মা চলে আসল।

– কি ব্যাপার? জীবনেও তো রান্নাঘরে আস না! আজকে কি হলো?

– না, ভাবলাম তেমাকে একটু হেল্প করি।

– আরে! ডিম এভাবে ছিলেছ কেন?

– কখনো তো ছিলিনি, তাই ডিমের চামড়ার সাথে মাংস একটু বেশি বেশি উঠে গেছে।

– বেশি, বেশি! কুসুম ছাড়া তো প্রায় পুরোটাই খোসার সাথে ফেলে দিয়েছ! যেটা পারনা সেটা করতে কে বলেছিল?

– তুমিইতো বল, হেল্পিং মেন্টালিটি নেই আমার। আমি তো হেল্প করতেই চাচ্ছি।

– হ্যা, হেল্প করতে গিয়ে লোকসানে ফেল আমাকে! ডিমগুলো তো সেদ্ধই হয়নি ঠিকমতো, তার আগেই ছুলানো শুরু করেছ! এত তাড়াহুড়ো কেন? নিশ্চয়ই বন্ধুদের সাথে কোন প্ল্যান আছে ছুটির দিনে!

– আরে হেল্প করতে চাচ্ছি, কোন এপ্রিসিয়েশন তো নাই ই, উল্টো আজেবাজে কথা বলে মেজাজটা খারাপ করে দিচ্ছ। যাও ছিলবই না।

– হ্যা, তোমার উদ্দেশ্য ধরে ফেললেই তো আর আমার কথা ভাল লাগে না….

পরবর্তি আধাঘণ্টা বিভিন্ন অতীত ইতিহাসের আলোচনা চলল আর আবারও নিশব্দে খাওয়া শেষ হলো। বলা বাহুল্য, আমার ছুলানো ডিমটা আমাকেই খেতে হল। নেহাত না খেলে আরও বড় ঝগড়া হবে চিন্তা করে খেলাম।

করলেও জ্বালা, না করলেও জ্বালা!

কোথায় যাই? কি করি? ভাবতে ভাবতেই টিভিটা অন করলাম। গান চলছে একটা চ্যানেলে। একটা মেয়ে গাইছে-

বাহির বলে দুরে থাক
ভেতর বলে আসো না
ভেতর বলে দুরে থাক
বাহির বলে আসো না…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে