#পর্ব-৯ [রহস্যময়+খুন]
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব
ধারা হেমন্তকে বলল আমি যে তোর বোন এটা কেউ যাতে না জানে।এটা কাউকে জানানোর দরকার নেই।
এটা যেহেতু কেউ জানে না তাই গোপন থাকুক। সবাইকে বলে কোনো লাভ নেই। বুঝতে পেরেছিস হেমন্ত।
— হেমন্ত মাথা নেড়ে বলল ঠিক আছে ।
পেছন থেকে কেউ বলল আমি শুনে ফেলেছি ।ধারা একটু একটু ভয় নিয়ে পেছন এ তাকিয়ে দেখল পাশের
বাসার ৪ বছরের ছোট্ট মেয়ে আফিয়া।
ধারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল বাঁচলাম সাথে কেউ ছিল না!
নাহলে নিশ্চয় শুনে ফেলতো।
ধারা কাছে ডেকে বলল কি শুনেছ তুমি?
মেয়েটা বলল তোমরা কথা বলছিলে এটা!!
আমরা কি বলছিলাম?
আফিয়া মাথা নিচু করে বলল জানি না মনে নেই।
ধারা মনে মনে ভাবলো মেয়েটা ছোট হলেও খুব চালাক।
সব কথা বড় মানুষের মতো বলে। ভাগ্য ভালো আসল
কথা শোনেনি।তা নাহলে বিপদ হতো।
মেয়েটা আবার যদি সবাইকে বলে দিত তাহলে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো আমার।
হেমন্ত বলল আচ্ছা আপা আমি একটু বাজারে যায় তোমার শাশুড়ি বলল কিছু বাজার করে আনতে।
ধারা বলল ঠিক আছে যা ভালো করে!
হেমন্তকে বিদায় দিয়ে ধারা বাড়ির ভেতরে চলে গেল ।
বাড়িতে এসে দেখল বর্ষা চলে এসেছে। ধারার দেবর আসেনি। বর্ষা অনেক কিছু মার্কেট করে নিয়ে এসেছে।
বর্ষা বলল ভাবী দেখবে কি কি এনেছি এসো দেখো?
ধারা কৌতুহল নিয়ে বলল ঠিক আছে দেখব।
ভিন্ন ভিন্ন কালারের শাড়ি।থ্রি-পিছ আছে। ধারার দিকে একটা শাড়ি ও থ্রি – পিছ এর ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল এটা তোমার জন্য এনেছি ভাবী।
ধারা কিছু একটা ভেবে বলল আমার জন্য লাগবে না রেখে দাও তোমার কাছে !
বর্ষা কোনো কথা শুনলো না জোর করে দিল।
আর বলল আমার কাছে থেকে তোমার নিলে অসুবিধা
কি? আমি আগে খারাপ ছিলাম বলে কি এখনো আছি?
— ধারা বলল সেরকম বিষয় নয়!
— তাহলে নাও না কেন?
— আচ্ছা ঠিক আছে নিচ্ছি।
— বর্ষা ধারাকে দিয়ে দিল।
ধারাকে নাদিয়া বেগম নিচ তলায় থেকে ডাক দিচ্ছে।
ধারা বলল রাখো আমি দেখছি ডাকে কেন?ধারা এটা
বলে নিচে চলে গেল।
–নাদিয়া বেগম বলছে বেয়ান ভালো আছেন!
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি।
–আমি আছি মোটামুটি ভালো বেশি না।
— কেন? আপনার কি হয়েছে আবার?
— কিছুদিন হলো আবার পায়ের ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারি না।অসহ্যনীয় এক অসুখ।
–ধারার মা সায় দিয়ে বলল হ্যা ।
— পায়ের ব্যথার কারণে ভালো করে নামাজ পড়তে পারি
না আমি।
— তা তো নামাজ পড়া কষ্টকর।
ধারা তার মাকে দেখে খুশি হয়ে গেল।এতো খুশি হয়েছে তা বলার বাইরে ।
ধারার মা তার মেয়েকে দেখে সমপরিমাণ খুশি হয়েছে।
নাদিয়া বেগম বলল তোমার মা এসেছে।
এজন্যই আমি তোমাকে ডাকলাম। তোমার মায়ের সাথে
দেখা হওয়ার জন্য বুঝলে ।
ধারা বলল কেমন আছো মা? তোমাকে কতদিন পর
দেখলাম আর এতো দিন আসো নাই তো তাই আমার
ভালো লাগেনি। শুধু বার বার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। অবশেষে তোমাকে পেলাম।
ধারার মা বলল হ্যা আমিও তোকে দেখে খুব খুশি হয়েছি। আমি তা বলে বুঝাতে পারবো না।
— কেমন আছিস মা ?
— ভালো আছি মা। তুমি ভালো আছো।
— হ্যা ভালো আছি জামাই কোথায়?
— অফিসে গেছে তো তাই আসতে দেরি হবে। সন্ধ্যায় চলে আসবে তখন দেখতে পারবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। নিজের শরীরের ঠিক মতো যত্ন রাখিস তো।দেখে মনে হচ্ছে না।
— ঠিক মতো খাওয়া হয় না তাই। ভালো লাগে না।
মা বলল কেন ঠিক মতো খেতে কি অসুবিধা তোর। প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া দাওয়া করবি তাহলেই তো শরীর সুস্থ থাকবে। নাহলে ভেঙে পরবি।
“মা এরকম আরো অনেক কথা বলল”
আমার দেবর কোথায় থেকে এসে বলল আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে। আমার কিছু বন্ধু আসবে।আর তোমরাও থাকবে। আমার বন্ধুর জন্মদিন।
আমার শাশুড়ি বলল এখানে হবে নাকি!
আমার দেবর বলল হ্যা ছাদে হবে। আমার শাশুড়ি বলল ঠিক আছে।
ছাদে আয়োজন চলছে জন্মদিনে। জন্ম দিন নাকি আমার দেবরের এক বান্ধবীর। সবাইকে আয়োজন করেছে। অনেক জন এসে আবার ছাদে গল্প করছে।
টুক টাক আয়োজন চলছে। খিচুড়ি রান্না করা হচ্ছে খাওয়া জন্য।
।
।
সন্ধ্যায় সবাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। হাসাহাসি করছে সবাই।
ধারা বর্ষা তার শাশুড়ি সবাই হাসাহাসি করছে।ধারা শুধু একটা চিন্তা করছে রাফি আসছে না কেন?
আর নদী ফোন করে বলেছিল চাকরি হয়েছে।তাও এখনো আসছে না কেন?
সবাই অতিরিক্ত মজা করছে।কথায় আছে অতিরিক্ত হাসাহাসি করলে নাকি বিপদ নিয়ে আসে।
ধারার পরিবারের ও তাই হলো।
সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে গ্লাস পড়ার শব্দ হলো। ঘরের দরজা খোলা ছিল। সবাই নিচে এসে দেখে রাফির ঘর্মাক্ত শরীর। একটা চাদর জোড়ানো শরীর এ।
শরীর থেকে চাদর নিচে পড়ে গেল। সবাই আতঙ্কিত হয়ে
গেল কারণ শরীরে রক্ত।
সবাই ভয় পেয়ে গেল।ধারা এগিয়ে গিয়ে বলল তোমার কি হয়েছে?
রাফির চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। কিছু বলতে চাইছে।
বাড়ির বাইরে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেল।
রাফি চিৎকার করে বলল তোমরা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি। আমি নির্দোষ।
সবাই এরকম কথা শুনে ভয় পেল কি বলতে চাইছে।
দরজায় একজন পুলিশ এসে বলল একাই কি রাফির বাসা।
আমার শাশুড়ি বলল হ্যা কি হয়েছে? আমার ছেলে কি করছে?
সে বলল আমি থানার ওসি আপনার ছেলে নদী নামের একটা মেয়েকে খুন করেছে।
আমার শাশুড়ি চিৎকার করে বলল না আমার ছেলে এসব কখনো করতে পারে না।
একজন পুলিশ রাফির হাতে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়ে নিয়ে গেল।
রাফি যাওয়ার সময় শুধু বলল আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করো এই পৃথিবীর মানুষ।
আমি নির্দোষ।রাফির এক ভয়ানক আর্তনাদ।
এদিকে ধারা কখন অজ্ঞান হয়ে গেছে কেউ জানে না।
রাফির একটা কথা শুধু বাড়িতে বাজছে আমি নির্দোষ।
আমি নির্দোষ।
আমি নির্দোষ।
বর্ষা চিৎকার করে বলল ভাবী,,,,
_______________
চলবে,