হেমন্ত ধারার অশ্রু পর্ব-৮

0
981

#পর্ব-৮
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব

নাদিয়া বেগম হতভম্ব হয়ে বলল হেমন্ত এসেছে। আমি তো এই নামে কাউকে চিনি না।আর হেমন্ত কে?

বর্ষা বলল আমিও তো চিনতে পারছি না। আমাকে বলল
শুধু তোমায় ডেকে দিতে বলল।
নাদিয়া বেগম বলল ঠিক আছে বাড়ির ভেতরে এসে বসতে বলো আমি আসছি।

–বর্ষা নিচে চলে গেল।

বর্ষা হেমন্ত নামক ছেলেটিকে বলল মা আসছে অপেক্ষা করুন।আর আপনি কোথায় থেকে এসেছেন?

হেমন্ত বলল এই তো সামনের গ্ৰাম থেকে।গ্ৰামের নাম
মধুপুর। ওখানেই আমার বাসা।
বর্ষা কিছুটাও উৎসুক কন্ঠে বলল বলেন কি?

— হেমন্ত বলল কেন কি হয়েছে?

— ওই গ্ৰামে তো আমার ভাবীর বাসা!

— হেমন্ত বলল ওহ ঠিক আছে।

— আপনি চিনেন ভাবীকে!

— আমি তো আপনার ভাবীকে দেখিনি কিভাবে চিনবো?

— ওহ তাও ঠিক কথা!

— হেমন্ত বলল হ্যা এটাই। আপনার শাশুড়ি আসছেন না কেন?

— আসলে আমার শাশুড়ির একটু পা ব্যথা আছে তো।

— ওহ এজন্যই আসতে দেরি হচ্ছে তাহলে।

নাদিয়া বেগম সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে বলল কোথায়
কে এসেছে?
আর আমার সাথে দেখা করতে এসেছে কোন ছেলে?

বর্ষা এগিয়ে গিয়ে বলল ওই তো ওখানে বসে রয়েছে সোফায়।আর ছেলেটা মধুপুর থাকে।

— নাদিয়া বেগম বলল ওহ পাশের গ্ৰামে থাকে।

নাদিয়া বেগম ছেলেটার কাছে গিয়ে বলল বাবা তোমাকে চেনা চেনা লাগছে। তবে ঠিক মনে করতে পারছি না।
তোমাকে যেন কোথায় দেখেছিলাম? তুমি একটু বলে দাও তাহলে আমার মনে করতে সুবিধা হবে!

“হেমন্ত বলল আচ্ছা ঠিক আছে”

সেদিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল। আপনি বলেছিলেন আপনার বাড়িতে কাজ করার জন্য লোক
লাগবে। আপনাকে আমি গাড়িতে তুলে দিয়েছিলাম।
আর তখন আপনার সাথে এইসব বিষয় নিয়ে কথা
হয়েছিল। আপনার কি কিছু মনে পড়ছে?

নাদিয়া বেগম বলল ওহ হা মনে পড়ছে এখন। আমি
ভুলেই গিয়েছিলাম সব কথা।

নাদিয়া বেগম বর্ষাকে বলল সেদিন আমি গাড়ি পাচ্ছিলাম না আমার ভাইয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য। আমি সেদিন একাই ছিলাম। তখন ছেলেটা আমাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল গাড়ি ডেকে এনে।আর তখন
হেমন্তর সাথে আমার পরিচয় হয়। আমি তোমাকে বলেছিলাম বর্ষা যে আমাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য লোক লাগবে।আর এই ছেলেটা এখন থেকে করবে।

বর্ষা বলল ঠিক আছে তাহলে। তবে মা আপনি বলেছিলেন যে একজন মেয়েকেও রাখবেন।যে রান্না
বান্নায় সাহায্য করবে।

নাদিয়া বেগম বলল হ্যা মেয়ে আসবে। হেমন্তকে বলল
তোমাকে তো বলেছিলাম একটা ভালো মেয়েকে আনতে। আমাদের কাজের জন্য।

— হ্যা আন্টি আমার মনে আছে একটা মেয়ে কাল আসবে। আপনাদের পছন্দ হলে রাখবেন। মেয়েটার বয়স অল্প ১৭ বাবা মারা গেছে মাস খানেক হলো।তার
মা এক বাসায় কাজ করে।আর তার মেয়েও করতে চায়

— নাদিয়া বেগম বলল ঠিক আছে কাল আসুক তবে।

— হেমন্ত বলল কাল আসবে।

ধারা উপর থেকে জগ হাতে নিয়ে আসতে আসতে বলল কে এসেছে মা?

নাদিয়া বেগম বলল তোমাদের গ্ৰাম এর একটা ছেলে
আমাদের বাড়ির কিছু কাজ করবে।

ধারা বলল ঠিক আছে ছেলেটা কই?

নাদিয়া বেগম বলল একটু আগেই বাইরে গেছে।

ধারা নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।ধারা সকালের নাস্তা বানানো শুরু করল। নদী অনেক আগেই নামাজ পড়ে বসে ছিল।রাফির একটা বদ অভ্যাস নামাজ পড়ে না কোনদিন ঠিক ঠাক মতো।

সকাল সাড়ে ছয়টায় রান্না শেষ। সাতটার দিকে সবাই
খেতে বসলো।রাফির অফিস অনেক দূরে বাইক নিয়ে
যেতে চল্লিশ মিনিট এর মতো লাগে।
কারন ওরা যেখানে থাকে সেটা গ্ৰাম।আর সেখান থেকে
শহরে যেতে অনেকক্ষন লাগে। নয়টা থেকে অফিস শুরু।রাফি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে।

— নদী ধারার কাছে গিয়ে বলল ভাবী দোয়া করো যেন চাকরি হয়?

— ধারা বলল অবশ্যই দোয়া সবসময় করি।

— নদী বলল আমি জানি তোমরা দোয়া করবে‌।

— ধারা বলল ভালো ভাবে ইন্টারভিউ দিও।

— আমি অনেক দিন আগেই সিভি জমা দিয়েছিলাম রাফি ভাই বলল তাদের নাকি কাগজ-পএ দেখে পছন্দ হয়েছে। এখন শুধু ইন্টারভিউতে পাশ করলে হয়।

— ধারা বলল অবশ্যই পারবে।

আটটার দিকে নদী-রাফি বাসা থেকে বের হয়ে গেল।রাফি আজ নিজের বাইক নেয়নি। কারন যেহেতু তার সাথে নদী যাবে বাইকে গেলে বাইরের মানুষ খারাপের ভাববে। তাই অন্য সিএনজি দিয়ে চলে গেল তারা।

ধারা যাওয়ার সময় নদীকে বলল চাকরি হলে ফোন
দিয়ে একটু জানিও।

নদীও মাথা দিয়ে সম্মতি জানালো।

ধারা বাড়িতে আসলো রাস্তা থেকে। বাইরে গেলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে যায়।
বাড়িতে আসার পর নাদিয়া বেগম বলল আমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দাও।আর আজ তোমার মা আসবে
আমি ফোন করে আসতে বলেছি।

কথাটা শোনা মাএ ধারা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
কিন্তু পরক্ষনেই আগের বারের কথা মনে পড়ে গেল
সেই বার ইচ্ছে করে তার শাশুড়ি ধারার মায়ের শরীরে
তরকারি ফেলেছিল।
তাই ধারার মন ক্ষুন্ন হয়ে গেল।

নাদিয়া বেগম কিছুটা বুঝতে পেরে বলল আমি জানি তুমি কি ভাবছো?
কিন্তু আমি আগের থেকে অন্যরকম হতে চাচ্ছি। আমি আগের থেকে একটু একটু বদলে যাচ্ছি।
এবার আর কোনো খারাপ ব্যবহার করব না।

ধারা বুঝতে পারলো তার শাশুড়ি ভুল বুঝতে পেরেছে।

ধারা তার শাশুড়ির মাথায় তেল ঢেলে দিচ্ছে। দুই জন
খুব গল্প করছে।
বর্ষা আর তার দেবর বাড়িতে নেই।তারা একটু বাইরে গেছে। হয়তো কিছু কেনাকাটা করতে।

অনেকক্ষন দুই শাশুড়ি বৌমা গল্প করে শেষ করলো।
নাদিয়া বেগমকে কে যেন ফোন করেছে তাই সে উঠে চলে গেল।ধারা একটু বাইরে চলে আসলো।

বাইরে এসে দেখে হেমন্ত বসে রয়েছে।

ধারা এগিয়ে গিয়ে বলল হেমন্ত! হেমন্ত পেছনে তাকিয়ে
দেখে বলে কিছু বলবে!

— তুই রাগ করে আসিস ভাই আমার!

— রাগ করতে যাব কেন আফা।

— তুই যে আমার ভাই এটা আগে কাউকে বলবি না।

পেছন থেকে কেউ একজন বলল আমি শুনে ফেলছি,

______________

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে