#পর্ব-৪
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব
আমি এখন নদী নামের মেয়েটির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছি।এই মেয়েটাকে বাজারে দেখতে পেয়ে আমি পিছু নিয়েছি। মেয়েটা তখন আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছিল আমি কে তা চেনে নাই। কারন আমার মুখ ঢাকা ছিল। নদী নামের মেয়েটি আমার সামনে দিয়ে একটা ছেলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলো না। কারন মেয়েটা যদি আমার স্বামীকেই ভালোবাসে তাহলে আবার এই ছেলে কে?
আমার মনে হাজারো প্রশ্ন জমা হয়ে গেছে।
ছেলেটার মুখ চুল কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শীতের দিনের পোশাক,ক্যাপ, মাস্ক দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছে।
মেয়েটাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না! বেশ চিন্তিত আছে মনে হচ্ছে। আমি বাজারে এসেছিলাম একটা দরকারে। আমার স্বামী রাফি বাড়িতে ছিল না।তাই আমার আসতে হলো।আর এসেই এরকম একটা পরিস্থিতিতে আটকে গেলাম মেয়েটা কে দেখে। মেয়েটা বাজারে হয়তো কোনো কাজে এসেছে। আমিও তাই দূরে থেকে তাকে ফলো করছি। মেয়েটা একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকল।আমিও তার পাশের দোকানে কাপড় কেনার বাহানা করে দাড়িয়ে রয়েছি।
‘আমি দেখলাম নদী একটা কাপড় কিনে দোকান থেকে বের হয়ে গেল। আমি ভাবলাম দেখি এখন কোথায় যায়’
আমি খেয়াল করলাম একটা মহিলা শীঘ্রই রাস্তা পার হচ্ছে।আর একটা বাইক এগিয়ে আসছে।
আমি খুব শীঘ্রই রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ কেমন মাথা ঘুরে গেল। শরীরে ব্যাথা অনুভব করলাম। মাথা ঝিম ধরে গেছে।আর কখন ঘুমেরই ভেতর হারিয়ে গেছি
জানিনা।জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি বাড়িতে রয়েছি।
আমি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর অবাক হয়ে গেলাম কারন আমি তো বাজারে ছিলাম।
আর আমি ওই মেয়েটাকে চিনেছি কারণ কিছুদিন আগে নদী নামের মেয়েটির আমি একটি ছবি দেখছিলাম রাফির ফোনে।রাফির ফোন সাধারনত আমাকে ধরতে দেয় না। কিন্তু সেদিন রাফি ফোনের লক খুলে রেখেছিল ভুলবশত। তখনই আমি ছবিটা দেখছিলাম। কিন্তু তখন আমার তেমন কিছু মনে ছিল না।আর আমি রাফিকে সেটা সম্পর্কে বলি নাই। আর যেহেতু রাফির ফোনে ছবি দেখছি তারমানে ওই মেয়েটাই।কিন্তু আজ দেখি সত্যি প্রমাণ হয়ে গেল।
আমি এখনো কিছু মানতে পারলাম না।
আমি দেখলাম আমার পাশে বর্ষা বসে রয়েছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারন এই মেয়েটা তো অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরে আসে না।আর কখনো তো কারো সেবা করে না।
আমি বললাম তুমি এখানে কেন? নদী কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলল তুমি অসুস্থ তাই পাশে বসে রয়েছি। ধারা লম্বা শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলল এই বাড়ির ব্যাপার কিছু বুঝতে পারি না।যারা কষ্ট দেয় আবার তারাই বিপদের সময় পাশে থাকে। মনে মনে ভাবলাম আমার মনের জমানো প্রশ্ন গুলো বর্ষাকে বলি।
রাফি কি সত্যি পরকীয়া করে?এই কথা গুলো ভালো করে বর্ষাকে প্রশ্ন করি!
দেখি যদি সত্যি কথা গুলো বলে নাকি। আমি বললাম আমি এখানে আসলাম কি করে? বর্ষা বলল তুমি নাকি বাজারে বাইকের সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছিলে।আর তখন রাফি ভাই বাজার এসেছিল। বেশি দুঃখ পাওনি দেখে রাফি ভাই বাড়ি নিয়ে এসেছে।
আমি বললাম ওহ তাহলে এই ব্যাপার আচ্ছা ঠিক আছে
আমি বর্ষাকে যখনি রাফি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে যাব তখনি রাফি ঘরে এসে হাজির হলো।
রাফিকে আসা দেখে বর্ষা ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রাফি কাছে এসে আমার শরীরে হাত দিল। আমি ঝাকি দিয়ে হাত সড়িয়ে দিলাম। রাফি অবাক হয়ে বলল কি হয়েছে এরকম ব্যবহার কেন?
আমি কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম সবার সবাইকে ধরার অধিকার নেই। আমি আমাকে ধরার অধিকার যাকে দেব সেই ধরতে পারবে।
রাফি ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল আমি তোমার স্বামী আর আমার ধরার অধিকার নেই। আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে।তাই এখন আর আমাকে পছন্দ হচ্ছে না। আমি অবাক হলাম তোমার ব্যবহার দেখে ধারা।
আমি মনে মনে বললাম এই কথাটা আমার তোমাকে বলা উচিত ছিল।
রাফি কে বললাম তো সেই পুকুর পাড়ে ঘুরতে যাবে না ।
রাফি বলল না যাব না। তোমার তো শরীর ভালো না।
আমি রাফিকে একটু শুনিয়ে বললাম তুমি আবার আমার চিন্তা করো এই কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। রাফি মায়াবী কন্ঠে বলল তুমি এমন করছো কেন? আগে তো তুমি ছিলে না এমন ।
নাকি আমার সাথে তুমি সুখে থাকতে পারতো না। তোমার কিসের অভাব ধারা আমাকে একটু বলব।
আমি অবাক হয়ে রাবির দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর ভাবলাম এই লোকটা অভিনয় তো খুব ভালো পারে।এমন ভাবে বলছে যেন কিছু জানেনা।
আর আজকাল কার মানুষের কাছে অভিনয় করা কোনো ব্যাপার না।এসব তাদের কাছে কিছু না।
অনেক আগেই মায়ের কাছে শুনেছিলাম কিছু মানুষ এমন অভিনয় করে যে যা তুই বিশ্বাস করতে বাধ্য হবি।
আর ওইরকম মানুষদের বিশ্বাস করা মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা।তাই কখনো ওইরকম মানুষদের কথা বিশ্বাস করবি না।
আজ মায়ের সেই কথা গুলো মনে পড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমার কপালের এরকম মানুষ জুটলো।
–আচ্ছা ধারা আমাদের আজ ঘুরতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আমরা সামনে মাসে সাজেক ঘুরতে যাব।
–আমি বললাম তোমার ইচ্ছে এখন আমি গোসল করতে যাব।আজ আমার শাশুড়ি রান্নার জন্য ডাকতে আসেনি হয়তো আঘাত পেয়েছি দেখে।
আমি গোসল করার জন্য গেলাম। হঠাৎ দেখলাম নিচে রাফির একটা শার্ট পড়ে রয়েছে। আমি উঠিয়ে দেখলাম
সকালে নদী যে দোকান থেকে কাপড় কিনলো সেই দোকানের কার্ড।তার মানে আমার সন্দেহ ঠিক।
সকালে দোকানে তারমানে রাফি গিয়েছিল। আমি ঠিক ধরেছি আমার আন্দাজ ঠিক হয়েছে।
আমি কান্নার ভেঙে পড়লাম। পানি ছেড়ে দিয়ে খুব জোরে কান্না করলাম।এই কান্না শেষ হবার নয়।আর দুদিন ধরে দেখছি আমার শাশুড়ি আমার সাথে কথা বলে না। হয়তো সেদিন রাতের ঘটনার জন্য।
আমি অনেকক্ষন কান্না করার পর শান্ত হলাম। তারপর বের হয়ে আসলাম। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।দিন দিন আমি শুকিয়ে যাচ্ছি।
মোবাইলে কে যেন ফোন দিয়েছে। আমি চেক করে দেখলাম মা।
আজ কেন জানি মায়ের সাথেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
তাই মায়ের ফোন কেটে দিলাম।আর মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে রাখলাম।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমার দেবর এসেছে মানে বর্ষার স্বামী।
আমার দেবর একটু তার বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিল। অনেক কিছুই দেখলাম এনেছে।
আমি তার জন্য নাস্তা বানাচ্ছিলাম। তখন বর্ষা দৌড়ে এসে বলল ভাবী একটা সমস্যা হয়েছে।
আমি বললাম কি সমস্যা? বর্ষা বলল রাফি ভাই একটা মেয়েকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।
আমি বললাম তার মানে আমার সন্দেহ একদম মিলে গেছে। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখলাম হ্যা সত্যই রাফির সাথে সেই নদী নামের মেয়েটি।
আর সকালে যে জামা কিনেছে সেইটা পড়ে এসেছে।
আমি মনে মনে বললাম আমার সংসার হলো না
কিন্তু পরক্ষনেই আমি অবাক হলাম,,
___________________
চলবে,,