#পর্ব-১০
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ হাসান সজীব
ওসি সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো এই পুলিশের চাকরি আর ভালো লাগে না।পাশে থাকা জুনিয়র পুলিশ অফিসার হাবিব বলল কি হয়েছে স্যার? আপনার চাকরি ভালো লাগে না কেন?
আর বলো না হাবিব এতো ঝামেলার মধ্যে থাকা ভালো লাগে না । প্রতিদিন নিত্য নতুন কেস আসছে। একেবারে আমি মনে হয় শেষ হয়ে যাব।তাই চাকরি আর আমার ভালো লাগে না।
“ হাবিব বলল ঠিক বলছেন স্যার! ”
আচ্ছা স্যার সন্ধ্যায় যে ছেলেকে ধরে আনলেন ছেলেটার কিছু ব্যবস্থা করলেন না তো। ছেলেটা কি সত্যি খুন করেছে আপনার মনে হয়?
“ জানি না হাবিব প্রমান যার বিরুদ্ধে থাকবে সেই খুনি! ”
স্যার আমি শুনলাম রিজু নামের একটা লোক আসবে।
তাই তো শুনলাম যাকে ধরে এনেছি লোকটার মামা তো তাই বলল।ওই কোন এক লোককে দিয়ে নাকি তদন্ত করাবে।
আর তার নামই মনে হয় তাহলে রিজু ।
“ জ্বী স্যার ঠিক বলছেন ”
হাবিব আমি লোকটাকে আনার পর অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু সে বলছে খুন করেননি।সে নির্দোষ। জানিনা পরে কি হবে?
— স্যার লোকটাকে দেখে মনে হয় ভালো মানুষ।
— কেন তোমার এমন মনে হয় কেন?
— কারন স্যার লোকটার কথার ধরন ভালো। দেখতে ভদ্র মানুষ এর মতো মনে হয়।
— ওহ আচ্ছা তোমার কথায় আমি সহমত।
— জ্বী স্যার তাহলে আমি এখন যাই।
— ঠিক আছে আর খুনের ফাইল নং ৩৩৪ বের করো।
— আচ্ছা ঠিক আছে স্যার
———————-
পাশের সিটে বসা লোকটা রিজুকে প্রশ্ন করল কোথায় যাচ্ছো বাবা?
রিজু ভালো করে খেয়াল করলো লোকটার বয়স ৫০ এর কাছাকাছি।
রিজু আস্তে করে বলল এই তো টাঙ্গাইলের মধুপুর গ্ৰামে। সেখানেই একটু কাজ আছে।
লোকটা বলল ওহ কোনো আত্মীয় বাসা নাকি কাজের জন্য!আর তুমি কি কাজ করো?
তোমাকে দেখে ভদ্র ঘরের মনে হচ্ছে। ভালো মানুষ।
আসলে চাচা আমি টুক টাক খুন এর মামলা নিয়ে তদন্ত করি। টাঙ্গাইলে একটা খুন হয়েছে।
আর যে খুন হয়েছে মেয়েটা তার সাথে একটা ছেলে ছিল আর সবাই সন্দেহ করছে ছেলেটা খুন করেছে ।
আর তাই ছেলের মামা আমাকে সম্পুর্ন ঘটনা বলল।
ছেলেটার মামা আমার বাবার বন্ধু তাই আমি খবর পেয়ে সাহায্য করতে আসলাম।
— তুমি কি পেশাদার গোয়েন্দা?
— না চাচা তবে ছিলাম একটা ষড়যন্ত্রে পড়ে কাজটা হারিয়ে গেছে এমনকি,
— চাচা কৌতুহল দৃষ্টিতে বলল কি এমন ?
— আমি এমন ভাবে ফেসেছিলাম আমার ৬ মাসের জেল হয়েছিল।
— ওহ তাহলে তো বড় ঘটনা মনে হচ্ছে আমার বাড়িও
টাঙ্গাইলে শফিপুর। তোমার সাথে পরে দেখা করব। এখন তো জায়গা পেয়ে গেলাম।
রিজু খেয়াল করে দেখল হ্যা টাঙ্গাইলে পৌঁছে গেছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে রিজু একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেল।আর বৃদ্ধ লোকটা অন্য রাস্তা দিয়ে তার গ্ৰামে
চলে গেল।
রিজুর আফসোস হচ্ছে লোকটা ভালোই ছিল। ঠিকানা
নিয়ে আসলে ভালো হতো।পরে দেখা করা যেত।
–রিজু সেই গ্ৰাম মধুপুর পৌঁছে গেল।
একটু বারো বছরের ছেলে এগিয়ে এসে বলল আপনার
নাম কি রিজু আংকেল?
রিজু বলল হ্যা আমার নাম রিজু!!
ছেলেটা বলল আমাকে করিম কাকা পাঠিয়েছে আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
রিজু বলল ঠিক আছে চলো।
রাত্রি এখন দশটার বেশি বাজে আমি করিম কাকাকে বললাম আসতে অনেক দেরী হয়ে গেল।
করিম কাকা বলল কোনো ব্যাপার না কাল সকালে আমরা থানায় যাব।আজ কিছু খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাও।
না করিম আংকেল আমি এতো তাড়াতাড়ি ঘুমায় না । কোনদিন
রাত ১/২ টা বাজে ঘুমায়।
ওহ এতো রাত জেগে কি করো? নাকি এর আগে তোমার ঘুম আসে না।
আসলে আংকেল আমি এমনিতেই ঘুমায় না।ঘুম ধরে না। অবসর সময়ে ডাইরিতে কবিতা লিখে কাটায়। নিজের জীবন সম্পর্কে ডাইরিতে লিখে রাখি।
ওহ আচ্ছা তোমার জীবনের ঘটনা ভুলতে পারোনি!
— আজকে এসব কথা থাক আংকেল।
— আচ্ছা ঠিক আছে ।
করিম চাচা রিজুকে একটা ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে একটা খাট আছে আর একটা কাপড় রাখার আলনা আছে।আর একটা ছোট টেবিল। এছাড়া কিছু নেই।দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন ধরে কেউ থাকে না।
করিম চাচা বলল থাকতে অসুবিধা হবে বাবা।
রিজু বলল না চাচা কোনো অসুবিধা হবে না আর কয়দিনের তো ব্যাপার।আর এখন আপনার ভাগ্নের সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এখন তো আর দেখা করতে দেবে না।
করিম চাচা বলল আমার ভাগ্নের নাম রাফি।আর ওর স্ত্রী
সন্ধ্যায় এই ঘটনা শোনার পর থেকেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল এখন স্যালাইন দেওয়া রয়েছে।
করিম চাচা কথা বলে চলে গেল। রিজু বাড়িটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে।
রিজু বাড়ির বাইরে হেটে দেখছিল লাইট দিয়ে। একটা কাগজ দেখে তার চোখ আটকের যায়।
খুব সাবধানে কাগজ টা নিয়ে দেখে তাতে লেখা।
মনের ভেতর সহস্রাধিক ব্যাথা
করেছি আমি আহার,
সবাই আমাকে করে হেলা
কষ্ট পাবো না আর।
মনের মতো এবার আমি
খেলেছি এক বেলা।
এবার দেখি সবাই আমাকে
করে কেন হেলা?
ভালো থাকুক সবাই এবার
সুখে থাকুক।
একবার হলেও তো এবার
আমার খবর রাখুক।
কাগজে লেখা পড়ে রিজু এটা বুঝতে পারলো কোনো কষ্টে থাকা কেউ এটা লিখছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কে?
রিজু আর কিছু না ভেবে বারোটার দিকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
______________
সকাল সকাল কান্নার আওয়াজে রিজুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখনো মসজিদে আজান দেয়নি । রিজু উঠে গিয়ে বাইরে দেখল একজন মহিলা কান্না করছে।আর সাথে একজন পুরুষ মানুষ শান্তনা দিচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে স্বামী – স্ত্রী।
ওই মহিলা দৌড়ে এসে রিজুর হাত ধরে বলল আমার ছেলেকে তুমি বাচাও। বিনা দোষে জেলে রয়েছে।
রিজু বুঝতে পারলো এটা রাফির মা। লোকটা এসে বলল আমার বিশ্বাস আমার ছেলে কিছু করেনি। আমি এখানে থাকি না। অন্য জেলায় কাজের জন্য থাকি।
রিজু বুঝতে পারলো এরা দুজন রাফির বাবা মা।
— রিজু বলল আমি বুঝতে পারছি আমি চেষ্টা করে দেখি
— রাফির বাবা বলল ঠিক আছে।
রিজু ব্রাশ করে তৈরি হয়ে নিলো। মসজিদে আজান দিচ্ছে তাই নামাজ পড়তে যাবে।
————–
— ধারা সারারাত পর এখন একটু চোখ খুললো। বর্ষা রুমে ঢুকে ধারার কাছে গেল।
— বর্ষা বলল ভাবী তোমাকে একটা কথা বলি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলে আমি কেন বলেছিলাম রাফি ভাই পরকীয়া করে ?
“ ধারা বলল কেন ? ”
বর্ষা বলল সেদিন আমাকে একজন ফোন দিয়ে একটা ছবি পাঠিয়েছিল রাফি ভাই আর নদীর।
সেখানে দুজন একসাথে ছিল ,,
ধারা বলল কে পাঠিয়েছে??
বর্ষা বলল আসলে ___!
চলবে,,