#পর্ব-১
#হেমন্ত ধারার অশ্রু
#মারুফ_হাসান_সজীব
ফোনে এ কথা বলার সময় রান্না ঘর থেকে ধপ করে কিছু পরার শব্দ পেলাম। মনে হলো কোনো বড় কিছু পড়েছে। আমি মাকে বললাম মা ফোন রেখে দাও পরে কথা ই বলব।এটা বলেই আমি মায়ের ফোন কেটে দিলাম। আমি দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে দৌড় দিলাম।বড় কোনো কিছু হলে আমার জন্য ভালো হবে না। কিছুক্ষণ আগে মা ফোন দিয়েছে।তাই কথা বলছিলাম।
আমি নিচে গিয়ে দেখি রান্না ঘরে চুলায় দুধ দিয়ে গিয়েছিলাম। সম্পূর্ণ দুধ নিচে পড়ে রয়েছে। ওখানে এক কেজি দুধ ছিল।
আমার হাত পা কাঁপছিল কারন দুধ বাসায় আর নেই।দুধ সবাই বাসার খায়।তাই দুধ প্রয়োজন।
আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার শাশুড়ি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আমি বললাম মা আমি জানি না কিভাবে হয়েছে?
আমি এখানে ছিলাম না আমি একটু ঘরে গিয়েছিলাম।
আমার শাশুড়ি বলল দুধ কি করে পড়ল? বাড়ির সবাই কি দুধ খাবে না আজ? নাকি ইচ্ছে করে এমন করেছ।
আমি বললাম মা আমি কেন এমন করতে যাব? আমি সত্যিই ছিলাম না। আমি ঘরে ফোনে কথা বলছিলাম আমি জানি না দুধ কি করে পড়ল?
তখন আমার ছোট জা বলল মা আমি দেখছি একটা বিড়াল বের হয়ে গেল ঘর থেকে। আমার মনে হয় সেই বিড়ালটা এই কাজ করেছে।
আমার শাশুড়ি চিৎকার করে উঠল আর বলল এই ঘরে বিড়াল ডুকল কি করে?
আমার জা বলল ঘরের দরজা খোলা ছিল! এখনো দরজা খোলা রয়েছে বিশ্বাস না হলে দেখো মা।আমি সত্যি বলছি কিনা মিথ্যা!
আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঘরে যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করে রেখে গিয়েছিলাম। তাহলে দরজা কিভাবে খোলা থাকলো? আমি তো দরজা বন্ধ করে রেখেই গিয়েছিলাম। তাহলে অন্য কেউ এই কাজ করেছে। আমি যাওয়ার পর।
আমার শাশুড়ি আমাকে আর কিছু বলল না শুধু বলল আজ আমার খাওয়া বন্ধ। আমি এটা শুনে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লাম কারন এমনিতেই সকাল এর পর থেকে কিছু খাওয়া হয়নি এখন না খেলে একেবারে মরে যাব।
আমি বললাম মা এমনটা করবেন না কিন্তু এমন কথা বলার কোনো দাম নেই।কারন আমার শাশুড়ি যা সিদ্ধান্ত নেয় তা করেই পর শান্ত হয়। নয়তো সারা বাড়ি মাথায় করে রাখবে।
‘আমার শাশুড়ি কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে গেল আমি শুধু দেখলাম এছাড়া কিছু করার নেই’
আমার স্বামী তো সেই রাত দশটার আগে বাসায় আসে না অফিসে থাকে। সত্যি বলতে আমার স্বামী খুব ভালো মানুষ। কিন্তু তার মায়ের উপর কোনো কথা বলা পারেনা
আমার নাম সিদরাতুল ধারা আর আমার স্বামীর নাম রিজানুল ইসলাম রাফি।
আমি ডায়নিং রুমে বসে আছি আমার স্বামীর অপেক্ষায়। সবাই যার যার মতো খেয়েছে। কিন্তু আমার খাওয়া হয়নি। আমার স্বামীরা দুই ভাই। আমার স্বামী বড়
রাত নয়টা আমি আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারলাম না। তবুও আমার মাথায় একটা কথা বাজছে। আমি কখন দরজা খোলা রাখলাম?আর আমার জা কিভাবে দেখল?সে তো সন্ধ্যার সময় নিজের রুপ চর্চা নিয়ে ব্যাস্ত
আমি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।আর কখন ঘুমিয়েছি তা আমার জানা নেই?
যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন দেখি রাফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আমি দেখলাম ১১ টা বাজে রাত।
আমি উঠে গিয়ে বললাম তুমি কখন আসলে?
রাফি বলল এই তো একটু আগে আসলাম আমার বউ।
-রাফি তুমি সবসময় দুষ্টুমি করে কথা বলো কেন?
-আমার বউ আমি বলব না তো কি পাড়ার লোক বলবে!
আর আমি একটু আগেই এসেছি।এসে ফ্রেশ হয়ে তোমার জন্য খাবার আনলাম।
-আমার জন্য খাবার মানে কেন এনেছো?
-তুমি কি ভেবেছ ধারা আমি কি জানি না তুমি খেয়েছ কিনা।
-আমি রাফিকে বললাম যেদিন আমি থাকবো না সেদিন তুমি অন্য কাউকে তোমার জীবনে নিয়ে আসবে তাকে ঠিকই একই কথা বলবে তাই না।
রাফি কিছুটা বিরক্ত কন্ঠে বলল আমি তোমাকে বলছি এরকম কথা আমার ভালো লাগে না।
আমার এই দেহে যতদিন প্রান আছে যেদিন দেহ থেকে প্রানটা বিদায় নেবে সেদিন পর্যন্ত আমি তোমাকে ভালোবাসবো।এই আকাশ বাতাস সব সাক্ষী হয়ে থাকবে
আমাদের ভালোবাসার পৃথিবীর লোক আমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে জানবে। চিরদিন অটুট হয়ে থাকবে। আমরা যদি মৃত্যর পর আলাদাও থাকি তবুও আমাদের ভালবাসা থাকবে যদি আল্লাহ চায়।আর তুমি কিনা বলছো আমি অন্য কাউকে ভালোবাসবো।
এই রাতকে আমি সাক্ষী রাখছি আমাদের ভালোবাসা চিরদিন থাকবে কখনো কমবে না।
রাফির এরকম কথা শুনে ধারার চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়ে গেল।এমন স্বামী কয়জনের ভাগ্যতে জোটে।
দুজনের কথা বলার সময় খেয়াল করে নি রাফির মা দরজায় এসে দাড়িয়ে ছিল।ধারার শাশুড়ি নাদিয়া বেগম বলল পিরিতি চলছে দুজনের।দুজনেই এরকম কথা শুনে ভরকে গেল।
নাদিয়া বেগম বলল আমি তোকে বলেছিলাম না রাফি এই মেয়েকে খাবার দিবি না। তুই আমার কথা শুনলি না।
রাফি রেগে গিয়ে ভাতের থালা ছুড়ে মারলো বলল আমিও খেতে চাই না এই খাবার।ধারা না খেলে আমিও খাবো না এই খাবার।
নাদিয়া বেগম ঝাড়ি দিয়ে বলল ভাত নষ্ট করলি তো তোর বউ শান্তিতে থাকতে পারবে না।
ধারার হাত পা কাঁপছিল এরকম দৃশ্য দেখে কারন রাফি তার মায়ের সাথে এরকম ভাবে কখনো কথা বলেনি।
রাফি ধারাকে বলল কাল তোমাকে আমি একটা সারপ্রাইজ দিব। সবার সামনে সারপ্রাইজ দেব। তুমি শুধু অপেক্ষা করো কাল সকালের।
ধারা বলল কি সারপ্রাইজ?আর মায়ের সাথে তুমি এমন ব্যবহার কেন করলে?
তুমি কোনো চিন্তা করো না কিছু হবে না এরকম অত্যাচার সহ্য হয়না প্রতিদিন। আমরা এখন ঘুমিয়ে পড়ি এক রাত একটু না খেয়ে থাকো।
ধারা বলল ঠিক আছে।ধারা সব কিছু গুছিয়ে পরিস্কার করে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমানোর সময় ধারা বলল আমাদের এখন কিন্তু একটা বাচ্চা নেওয়া উচিৎ তাহলে হয়তো মায়ের রাগ কমবে।
রাফি উঠে গিয়ে বলল আমি এসব কিছু এখন চাইনা।
আমি বললাম কেন এখন আমাদের বাচ্চা হলে সমস্যা কি?
রাফি এগিয়ে এসে বলল ধারা আমাদের নিজস্ব একটা সংসার হবে আমরা একসাথে থাকবো। আমাদের নিজস্ব সংসারে আমাদের সন্তান আমাদের মধ্যে বেড়ে উঠবে। তবে আমি এখন চাই না। ঘুমিয়ে পড়ো ধারা।
ধারা এরকম কথা বলার কোনো মানে খুঁজে পায় না।সে কি তাহলে ধারাকে ভালোবাসে না নাকি অন্য কারন।
সকাল বেলা সবাই যখন খাবার খাচ্ছিল। তখন রাফি উঠে গিয়ে বলল মা আমি আর ধারা বিয়ের পর কোথাও বেড়াতে যায়নি তাই আমরা একটু কক্সবাজার বেড়াতে যাব। কয়েকদিন এর জন্যে।
নাদিয়া বেগম আগুনে জ্বলে উঠল আর বলল কোথাও যাওয়া হবে না।
ধারার ছোট জা ধারার কাছে গিয়ে বলল আমি আর আমার স্বামী কোথাও যায়নি তাই টিকিট আমরা নেব।
তুমি গিয়ে কি করবে?
ধারা বলল মানে!ধারার জা বলল তোমার স্বামী তো আমার মতো কয় মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছে সে আবার তোমার সাথে রাত কাটাতে বাইরে ঘুরতে যেতে হবে কেন তার সাথে?
ধারা রেগে গিয়ে বলল এরকম আজে বাজে কথা বলে কেন?
ধারার জা বলল তোমার স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত। বিশ্বাস না হলে পরীক্ষা নিয়ে দেখো।আর এজন্যই তোমাদের বাচ্চা নিতে চায় না তোমাকে বের করে দেবে।
ধারা এই কথা শোনার পর বুক কেঁপে উঠলো আর মনে মনে বলল এর নামই কি ভালোবাসা?
এগুলো কি সত্য তাহলে রাতের বলা কথা গুলো মিথ্যা?
তার স্বামী পরকীয়ায় যুক্ত। নিজের অজান্তেই ধারার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
ধারা মনে মনে বলল আমার চোখ দিয়ে কি সারাজীবন অশ্রুই বের হবে।
__________________
চলবে,,