#হৃদ_মাঝারে (পর্ব ২৩)
গ্রেটার নয়টার এক অভিজাত এলাকায় একটি বহুতল বিল্ডিং এর সতেরো তলার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বেডরুমে পূব দিকের জানলার পর্দাটা সরাতেই এক ঝলক সোনালী আলো এসে পড়ল বিছানার ওপর। বিছানায় শোওয়া নগ্ন পুরুষটি ঘুমের মধ্যেই চোখ কুঁচকে পায়ের কাছে গুটিয়ে পড়ে থাকা চাদরটা তুলে নিয়ে চোখ ঢাকা দিল | সদ্য বিছানা ছাড়া নারী মূর্তিটির পরনে একটা মাখনরঙা শাটিনের রাত পোশাক, হাঁটুর একটু উপরে এসে শেষ হয়েছে। বিছানার দিক থেকে অস্ফূট বিরক্তির শব্দ শুনে একবার সেদিকে তাকিয়ে পায়ে পায়ে এসে বিছানার কিনারায় বসলো | বিছানার মুখোমুখি দেওয়াল জোড়া বেলজিয়ান গ্লাসের আয়না | নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ | আলতো হাতে দুই কাঁধ থেকে নামিয়ে দিল রাত পোশাকের সরু স্ট্র্যাপ দুটো | ঢিলা পোশাকখানা খুলে পড়ল কোমরের কাছে। খুঁটিয়ে নিজেকে দেখতে থাকলো, এইতো, এখনো যে কোনো পুরুষের মধ্যে কাম এবং নারীর মধ্যে ঈর্ষা জাগানোর মতন শরীর তার! আলো পিছলে যাওয়া মোমরঙা ত্বক, সুগঠিত দুই স্তন, সরু কোমর, মেদের বিন্দুমাত্র ছিটে ফোঁটা না থাকা গ্রীবা, বাহু এবং অন্যান্য প্রত্যঙ্গ | সমর্পিতা মল্লিক নিজের মনেই বলে উঠল,
– কি নেই আমার? কেন আমি ছবির মূল নায়িকা হতে পারব না? বিজ্ঞাপনের মডেল আর ওয়েব সিরিজের মুখ্য চরিত্র করার জন্য এত কিছু ছেড়েছি নাকি!
সমর্পিতা কথাগুলো খুব নিচু স্বরে বললেও বিছানায় শায়িত পুরুষটির কানে গেল | চোখে আলো পড়তেই ঘুম হাল্কা হয়ে গিয়েছিল ওর, এবারে চোখ খুলে তাকালো | ঈষৎ জড়ানো গলায় বলল,
– কি বিড়বিড় করছ বসে বসে? কাম ব্যাক টু দা বেড বেবি!
সমর্পিতা ঘাড় ঘোরালো,
– সকাল হয়ে গেছে সায়ন, এখন এক্সারসাইজ করার সময় আমার। তুমি চাইলে ঘুমাতে পারো |
সায়ন নামক ব্যক্তিটির বয়স চল্লিশের উপরে, শ্যামলা গায়ের রং, সুগঠিত শরীর, ঘাড় পর্যন্ত লম্বা লম্বা চুল | সায়ন পেশায় ফিল্ম এডিটর | বহু স্বনামধন্য ডাইরেক্টর এবং প্রডিউসারের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার | সমর্পিতার সাথে তার আলাপ প্রায় বছরখানেক, তবে সমর্পিতার ফ্ল্যাটে রাত কাটানোর অনুমতি মাত্র মাসখানেক হলো পেয়েছে। মুচকি হেসে সায়ন বলল,
– এক্সারসাইজ তো তুমি বিছানাতেও করতে পারো, তাতে এফেক্ট অনেক তাড়াতাড়ি আর অনেক বেশি পাবে
সমর্পিতা রাত পোশাকের স্ট্র্যাপ আবার কাঁধে গলিয়ে নিতে নিতে রাগী গলায় বলল,
– দেখো সায়ন, তোমার কথা শুনে আমি এমন অনেক কিছু করেছি যেগুলো আমার নীতিবিরুদ্ধ | তুমি কিন্তু তোমার দেওয়া প্রমিসের কিছুই রাখতে পারোনি এখনো | মিস্টার ভাটিয়ার সাথে একটা মিটিংও ফিক্স করে দিতে পারোনি…
– ও ডার্লিং, চিন্তা করছ কেন? ভাটিয়াদের পরের ফিল্মের হিরোইন তুমিই হবে | কিন্তু কি বলো তো, প্রথম মুভি তো, পকেট থেকে তোমাকেও কিছু খসাতে হবে | প্রডিউসার যদি বোঝে যে হবু নায়িকার রেঁস্তর জোরও আছে, তাহলে সে আর অন্য কোন দিকে ফিরেও তাকাবে না
– তুমি কি বলতে চাও সায়ন, এখানে যারা নায়িকা হয় সবাই পকেট থেকে পয়সা খরচ করেই হয়? তাদের ট্যালেন্টের কোন দাম নেই?
– ট্যালেন্ট এর দাম অবশ্যই পাবে ডার্লিং, কিন্তু আগে নিজেকে প্রুভ তো করতে হবে!
সমর্পিতা হতাশ গলায় বলে,
– এত বছর ধরে কি করছি তাহলে? এখনো নিজেকে প্রুভ করা বাকি আছে বলতে চাও? বাংলা হিন্দি কম ওয়েব সিরিজ তো করলাম না!
– ওয়েব সিরিজ আর মুভির মধ্যে অনেকটা ডিফারেন্স স্যামি! বাজেটের ডিফারেন্স, প্রসেসর ডিফারেন্স, প্রফিটের ডিফারেন্স | বাই দ্য ওয়ে, তুমি যে বলেছিলে তোমার এক্স হাজবেন্ডের কাছ থেকে বিজনেসের একটা পার্ট তুমি দাবি করতে পারবে, সেটার কি হলো?
সমর্পিতা বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটা হেয়ার ব্রাশ নিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল,
– এখনো কোনো উত্তর আসেনি | আমার লিগাল এডভাইজার ফোন করেছিল, তবে আশাজনক কিছু শুনতে পায়নি এখনো
– তুমি শিওর, ওই টাকাটা তুমি ক্লেম করতে পারবে?
– না আমি ঠিক শিওর নই, তবে আমি যতদূর জানি আমার মেয়ের নামে ব্যবসার অর্ধেক করা আছে | মেয়ের গার্জেন হিসাবে সেটা আমি ক্লেইম করতে পারি | তবে মুশকিল হচ্ছে ডিভোর্সের সময় আমি মেয়ের কাস্টডি ক্লেম করিনি
– এহ্, ওইটা ভুল করে ফেলেছ!
– কি করতাম? তখন আমি নিজেই দাঁড়ানোর জন্য স্ট্রাগল করছি | তখন যেন তেন প্রকারে ওই ফ্যামিলির যাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসাটা ইম্পরট্যান্ট ছিল | তখন একটা ঐটুকু মেয়েকে নিয়ে আমি কি করতাম? একবার ভেবেছিলাম আমার মায়ের কাছে দিয়ে রাখবো, কিন্তু তখন বোনেরও অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে, মা ওকে নিয়ে অলরেডি প্রচন্ড ব্যস্ত ছিল | তখন আবার একটা বাচ্চা সামলানো মার পক্ষে ডিফিকাল্ট হয়ে যেত।
– ও মাই গড! স্যামি মল্লিক অন্য লোকেদের জন্য এত কিছু ভাবতো! ভেবেই আমি আবার এক্সাইটেড হয়ে যাচ্ছি, এসে আমাকে টাচ করে দেখতে পারো ডিয়ার!
সমর্পিতা বিরক্ত ভঙ্গিতে হেয়ার ব্রাশটা ছুঁড়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে ফেলে দিল | তারপরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
– আগামী এক ঘন্টা আমাকে বিরক্ত করবে না কিন্তু…
সায়ন শুক্লা হাসতে হাসতে সে বিছানায় শুয়ে পড়ল, তারপর নিজের মনেই বলল,
– স্যামি মল্লিক, তোমাকে তো আমি নিজের মুঠোয় পেয়েই গেছি | নিজেকে বড্ড বেশি চালাক মনে করো না? তুমি এবং তোমার ব্যবসা, দুটোই এই সায়ন শুক্লার হবে | জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!
সমর্পিতা বেডরুম থেকে বেরিয়ে ওর সর্বক্ষণের সহায়িকা কল্পনাকে হাঁক দিয়ে এক কাপ দালচিনি দেওয়া উষ্ণ জল দিতে বলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো। অল্প সময়ের মধ্যেই মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক পরিবর্তন করে বসার ঘরে এসে দেওয়াল জোড়া বড় টিভি টা চালিয়ে দিল। কল্পনা সুদৃশ্য কাপে পানীয়টি দিয়ে যেতে আলতো কয়েকটা চুমুকে সেটা শেষ করে টিভিতে এক্সারসাইজের ভিডিও চালিয়ে তালে তালে হাত, পা, কোমর নাড়াতে শুরু করলো সমর্পিতা।
আজ একটু ভোর ভোর উঠে ঘরের সমস্ত কাজ সেরে নিয়েছেন মাধবী | সমাদৃতাকে নিয়ে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে যাওয়ার কথা। সত্যেন আজ যেতে পারবেন না, একটা গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট কেস আছে | তাই মাধবীকে একাই যেতে হবে | সাড়ে এগারোটার মধ্যে চেম্বারে পৌঁছতে হবে | এখান থেকে প্রায় মিনিট চল্লিশেক লাগে | সমাদৃতার স্নান এবং জল খাবার সারা হয়ে গেছে। কিন্তু মুশকিল হল ট্যাক্সি পাওয়া যাচ্ছে না | হলুদ ট্যাক্সি এখানে আজকাল পাওয়াই যায় না বলতে গেলে। সমাদৃতা অবশ্য ওর ফোনের অ্যাপে ওলা কিংবা উবের বুক করার চেষ্টা করছে, কিন্তু সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ার কারণে কিনা কে জানে গত পনের মিনিট ধরে চেষ্টা করেও একটাও গাড়ি বুক করতে পারেনি। যে দু-একবার বুকিং তাও বা হল, কিছুক্ষণ বাদেই ড্রাইভাররা বুকিং ক্যানসেল করে দিল। সমাদৃতা হতাশ গলায় বলল,
– গাড়ি পাচ্ছি না তো মা? কি করি?
মাধবী ঘড়ির দিকে তাকালেন | দশটা চল্লিশ বাজে, আর মিনিট দশেকের মধ্যে বেরিয়ে না পড়তে পারলে সময়মতো পৌঁছানো যাবে না | এই ডাক্তারের চেম্বারে প্রচুর ভিড় হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর টাইম মিস করলে হয় অন্য দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে, আর নয়তো সব পেশেন্টের দেখানো শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সমাদৃতা হঠাৎ বলে উঠলো,
– মা সুমি পিসিকে একটা ফোন করবো?
মাধবী কঠিন চোখে তাকালেন,
– না!
– কেন মা? প্রতিবেশী হিসেবেও তো প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে! শিবাজীদা ইউএসএ গেছে, ওদের দুটো গাড়িই বাড়িতেই রয়েছে তার মানে। বলে দেখি না? মোড়ের মাথার ড্রাইভার সেন্টার থেকে একজন ড্রাইভার নিয়ে নেব?
মাধবী তবু বললেন,
– না, তুই দেখ ওলা উবের
পরবর্তী পাঁচ মিনিটেও কোন গাড়ি পাওয়া গেল না। বৃষ্টির পরিমাণও বাড়ছে। হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়লেন মাধবী, তারপর বললেন,
– আচ্ছা ঠিক আছে, ফোন কর |
*****
– এই দিদি দ্যাখ, কি সুন্দর একটা প্লেন উড়ে যাচ্ছে | আমি আগে কখনো সবুজ রঙের প্লেন দেখিনি।
সত্যিই তো! বাড়ির ছাদ থেকে সবুজ প্লেনটাকে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে। প্লেনটা ঠিক ওদের মাথার উপরে এসে থেমে গেল |
– এই দিদি প্লেনটা আমাদের মাথার উপরে থেমে আছে তো রে!
তপু রাজন্যার হাত জড়িয়ে ধরে ভয় পাওয়া গলায় বলল
– চিন্তা করিস না। মনে হয় প্লেন থেকে এখানে কোন প্যাসেঞ্জার নামবে
বিজ্ঞের মতো ভাইকে অভয় দিলো রাজন্যা | আর হলও তাই, প্লেনটা থেকে একটা লম্বা সিঁড়ি নেমে এলো ওদের ছাদ পর্যন্ত। আর সেই সিঁড়ি বেয়ে
নেমে এলো সাদা চুড়িদার কামিজ পরা একটা মেয়ে | রাজন্যা অবাক হয়ে গেল,
– মণীষাদি, তুমি এখানে?
মণীষা গম্ভীর গলায় বলল,
– না এসে উপায় ছিল না। তুমি আমার সব কোড ডিলিট করে দিয়েছো। আমি ভুলে গেছি কোন প্রোগ্রামে কি লেখা ছিল, সেগুলো এবার তোমাকে লিখে দিতে হবে
রাজন্যা মাথা নেড়ে বলল,
– কিন্তু আমি তো তোমার কোন কোড ডিলিট করিনি!
– আলবাত করেছো, তা না হলে সব কোড গুলো আমার ল্যাপটপ থেকে উড়ে গেল কি করে?
– কিন্তু আমি তো লাস্ট তিন দিন অফিসেই যাইনি, কি করে তোমার কোড ডিলিট করব?
– সে আমি জানি না | কিন্তু এই সমস্ত কোড তোমাকে আজকেই লিখে দিতে হবে। তা না হলে ক্লায়েন্টের কাছে বকা শুনতে হবে।
– এত তাড়াতাড়ি কোড লেখা সম্ভব নাকি? আমি কিছুতেই পারব না | আমি এখন ছুটিতে এসেছি, এখন আমি কিছুতেই কোড লিখব না।
– এই রাজন্যা, রাজন্যা!
– বলছি তো কোড লিখব না
– রাজন্যা!
এতক্ষণ শুধু নিজের নামটা শুনে ধরে কেউ ডাকছে শুনতে পাচ্ছিল, এবার তার সাথে গায়ে একটা ঠেলা খেয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে চোখ খুলে বসলো রাজন্যা। কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো বুঝতে ও কোথায় আছে | তারপরেই খেয়াল হলো ও তো প্লেনে | কলকাতা থেকে দিল্লির ফ্লাইটে | পাশে তাকিয়ে দেখল শিবাজী অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাজন্যা কাঁচমাঁচু মুখ করে বলল,
– শিবাজীদা আপনি কি আমাকে ডাকছিলেন?
শিবাজী হাসি চেপে বলল,
– হ্যাঁ ডাকছিলাম, কিন্তু একবার ডাকার পরেই তুমি কি সব কোড লিখব না লিখতে পারবো না ইত্যাদি বলতে শুরু করলে, তাই ঘাবড়ে গেছিলাম |
রাজন্যা লজ্জা পেয়ে গেল
– ইয়ে মানে স্বপ্ন দেখছিলাম | আসলে আমি না খুব উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখি, তারপরে যখন ঘুমটা ভাঙবো ভাঙবো হয়, তখন কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা আসল সেটা পুরো ঘেঁটে যায়।
– তা কিসের স্বপ্ন দেখছিলে? কেউ প্রচুর কোড লিখতে বলেছে?
রাজন্যা হেসে ফেলল,
– হ্যাঁ, দেখলাম আমি আবার মণীষাদির সব কোড ডিলিট করে দিয়েছি। আর মণীষাদি প্লেনে করে আমাদের বোলপুরের বাড়িতে গিয়ে আমাকে বলছে এক ঘন্টার মধ্যে সব লিখে দিতে ।
শিবাজী হেসে ফেলল, তারপর বলল
– ওই ডিলিট করা ব্যাপারটা মাথা থেকে ডিলিট করে দাও প্লিজ। কোন পরিস্থিতিতেই কারোর কোন কিছু আর ডিলিট করবে না, খেয়াল থাকে যেন!
বাধ্য মেয়ের মতন মাথা নাড়ালো রাজন্যা। ইতিমধ্যে ককপিট থেকে সিট বেল্ট বেঁধে নেওয়ার অ্যানাউন্সমেন্ট শুরু হয়ে গেল | ওরা যখন প্লেন থেকে নামল তখন রাত সাড়ে তিনটে | আকাশে নিকষ কালো অন্ধকার | রাজন্যা ফিসফিস করে শিবাজী কে জিজ্ঞাসা করল,
– আমরা কি এখান থেকেই পরের প্লেনটাতে উঠে পড়বো?
শিবাজী ওকে বুঝিয়ে বলল,
– না, এখান থেকে একটা বাসে করে আমাদের আগে এয়ারপোর্টের ভিতরে নিয়ে যাবে | সেখানে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বেশ কিছুক্ষণ | তারপরে আবার এখনকার মতন প্রসেসে আরেকটা গেট দিয়ে পরের প্লেনে গিয়ে উঠব |
ইতিমধ্যেই এয়ারলাইন্সের বাস ওদের সামনে এসে হাজির হলো | দিল্লির এয়ারপোর্টটা কলকাতা এয়ারপোর্ট এর থেকে বেশ অনেকটা বড় | রাজন্যা শুনতে পেল অনেকেই বলছে টার্মিনাল থ্রি | শিবাজীর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকাতে শিবাজী ওকে বোর্ডিং পাসের উপরে লেখা টার্মিনাল থ্রি কথাটা দেখিয়ে বলল,
– বড় এয়ারপোর্ট গুলোতে একাধিক টার্মিনাল থাকে। দিল্লিতে তিনটে টার্মিনাল আছে | আমরা টার্মিনাল থ্রি তে যাচ্ছি, আর আমাদের পরের প্লেনটাও টার্মিনাল থ্রি থেকেই ছাড়বে | যখন একা ট্রাভেল করবে এই টার্মিনালের ব্যাপারটা সব সময় দেখে নেবে। শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলেই নয়, ডোমেস্টিক ট্রাভেলেও টার্মিনাল চেঞ্জ এর ব্যাপার থাকে |
শিবাজীদার কথা শুনতে শুনতে রাজন্যা নিজের মনেই ভেবে ফেলল, লোকটা কত কিছু জানে! যেন কোন মোড় থেকে কোথাকার অটো ছাড়বে সেরকম বোঝাচ্ছে |
বাস থেকে নেমে ওয়েটিং এলাকায় পৌঁছে হাতের ব্যাগ রেখে দুজনে দুটো চেয়ারে বসলো। পেটের মধ্যে গুড় গুড় করছে, রাজন্যা বুঝতে পারছে এবারে ওর প্রবল খিদে পাচ্ছে। দুপুরে সামান্যই খেয়েছিল, রাতে তো কিছুই খায়নি বলতে গেলে | কলকাতা এয়ারপোর্টেও এক কাপ কফি ছাড়া আর কিছু খায়নি। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-ওদিক দেখতে লাগলো খাবারের দোকান কি আছে | কিছুক্ষণ পরেই সেটা লক্ষ্য করে শিবাজী জিজ্ঞাসা করল,
– কি হয়েছে, খিদে পেয়েছে?
এই লোকটা যে কি করে সবকিছু বুঝতে পেরে যায়, কে জানে! রাজন্যা ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলতে শিবাজী আঙুল দিয়ে সামনে একটা জায়গা দেখিয়ে দিল।
– ওইখানটাতে গিয়ে দেখো, নানান রকম খাবারের দোকান আছে |
– আপনি খাবেন না?
– খাব, তবে এখনই না
– ও! আমার সাথে যাবেন?
– না
শিবাজী ঘাড় নাড়ালো,
– আমার যাওয়ার প্রয়োজন হবে না | যাও, নরমাল দোকানের মতোই দোকান। টাকা দেবে খাবার কিনে নেবে | ভয় পাওয়ার কিছু নেই |
রাজন্যা তাড়াতাড়ি বলে উঠল,
– ভয় পাবো কেন? ভয় পাওয়ার কি আছে?
বলে পায়ে পায়ে ফুড প্লাজার দিকে এগোলো | অনেক রকমের দোকান | কোস্টা কফি, কেএফসি, সাবওয়ে, কি নেই! এদিক-ওদিক দেখে একটা চাইনিজ স্টল থেকে ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেন অর্ডার করল | যে পরিমাণ খিদে পেয়েছে তাতে কফি আর কেক খেয়ে চলবে না |
খাবার তৈরি হয়ে আসতে একটু সময় লাগবে | একটা খালি টেবিলে খুঁজে নিয়ে বসে মোবাইল বের করে একে একে সৌম্যদাকে, মালবিকাকে, মাকে এবং সমাদৃতাকে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার মেসেজ করে ফেলল রাজন্যা | খাবার দিয়ে গেল একটুক্ষণের মধ্যেই | বেশ সুস্বাদু খাবার | বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বলেছিল এয়ারপোর্টের খাবার নাকি অতি জঘন্য হয় | রাজন্যা মনে মনে ঠিক করে নিল ফিরে গিয়ে তাদের বলবে দিল্লি এয়ারপোর্টে এলে এই দোকানটা থেকে চাইনিজ খেতে | খাওয়া শেষ করে উঠে বসার জায়গায় ফেরত গিয়ে শিবাজী কে না দেখতে পেয়ে চমকে উঠল রাজন্যা। কোথায় গেল লোকটা? ঘাবড়ে গিয়ে এদিক-ওদিক খানিক হাঁটাহাঁটি করে ফেলল | না! কোথাও নেই! তাড়াতাড়ি স্লিং ব্যাগ থেকে দিল্লি টু শিকাগো বোর্ডিং পাসটা বের করে সময় দেখল। এখনো দু ঘন্টা সময় আছে, কিন্তু শিবাজীদা ওকে না বলে কোথায় গেল! মোবাইলে ফোন করতে গিয়ে দেখল নেটওয়ার্ক নেই | আরো কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক দেখে ভয়ে ভয়ে আগের সিটটাতেই এসে চুপচাপ বসলো | কিছুক্ষণ বসে থাকার পরেই পিছনে পরিচিত কণ্ঠস্বর,
– খাওয়া হলো?
রাজন্যা লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে শিবাজীকে দেখেই রাগে ফেটে পড়ল,
– কোথায় চলে গেছিলেন আপনি? আমি এসে আপনাকে খুঁজে না পেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম! এদিক ওদিক সব জায়গাতে দেখলাম, কোথাও আপনি নেই!
– আরে কোথায় আর যাবো? ওই দিকের একটা স্টোরে ইয়ারফোন কিনতে গেছিলাম | ফ্লাইটে উঠে টের পেয়েছি আমার ইয়ারফোনটা গন্ডগোল করছে…
রাজন্যার চোখে ততক্ষণে জল এসে গেছে
– আপনি তো জানতেন আমি কোথায় আছি, একবার বলে তো যেতে পারতেন। আপনি জানেন আমি প্রথমবার ট্রাভেল করছি। আপনার ভরসায় আছি। আপনি যদি মাঝ পথে আমাকে ছেড়ে চলে যান তাহলে আমার অবস্থাটা কি হয় ভাবুন!
শিবাজী ওকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে,
-আমি কোথাও যাইনি রাজন্যা | আমি এখানেই ছিলাম |
-সেটা আপনি জানেন! আমি তো জানি না! আমি তো ভাবছি…
শিবাজী ঘুরে ওর পাশে চলে এসে দুই হাতে থর থর করে কাপতে থাকা রাজন্যার হাত দুটো ধরে বলল,
– কুল ডাউন কুল ডাউন | এরপর থেকে তোমাকে না জানিয়ে আর কোথাও যাবো না | হয়েছে?
রাজন্যা টের পেল ওর দুই চোখ দিয়ে নোনতা জলের ধারা গাল ছুঁয়েছে | অপ্রস্তুতভাবে চোখের জল মুছতে গিয়ে টের পেল ওর হাত দুটো এখনো শিবাজীর দুই হাতের মধ্যে বন্দি | আস্তে করে নাক টেনে বলল,
– আমি জানি আমি উৎপাত করছি। কিন্তু…
– শশশ্, আর কিচ্ছু বলতে হবে না | আই অ্যাম সরি | আমি খেয়াল রাখবো এরকম যাতে আর না হয় | ওকে?
চোখে জল নিয়েই মাথা নাড়াল রাজন্যা |
(ক্রমশ)
#হৃদ_মাঝারে (পর্ব ২৪)
এরপরে আরো ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষার পালা কাটিয়ে শিকাগো ফ্লাইটে উঠলো শিবাজী আর রাজন্যা। প্লেনে উঠেই রাজন্যার চোখ বড় বড় হয়ে গেল | এই প্লেনটা আগেরটার থেকে অনেকটা বড় | আগের প্লেনে ডানদিকে তিনটে সিট, বাঁদিকে তিনটে সিট ছিল, অর্থাৎ এক একটা সারিতে ছ’জন করে। এটাতে ডান দিকে তিনটে, বাঁদিকে তিনটে তো আছেই, মাঝখানে আরো চারজন করে বসার জায়গা, অর্থাৎ এক এক সারিতে মোট দশ জন | প্লেনটা আবার দোতলা, বাথরুমে যেতে গেলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হয় | রাজন্যার সিট পড়েছে জানালার ধারে, ওর বাঁ পাশে শিবাজী, শিবাজীর পাশে একজন বিদেশি মেয়ে | লালচে ফর্সা গায়ের রং | প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা | টিভির পর্দায় যেমন দেখা যায় সেই রকম সুন্দরী | কাঁধ ছাপানো সোনালী রংয়ের চুল থাকে থাকে পিঠের উপরে পড়ে আছে। কেন যেন একবার মনে হল শিবাজীদার সিটটা জানলার ধারে আর ওর সিটটা মাঝখানে হলেই ভালো হতো।
দীর্ঘ পনের ঘন্টার জার্নি নিরুপদ্রবেই কাটলো | সমাদৃতার দেওয়া গল্পের লিংকগুলো খুব কাজে দিল। রাজন্যা অবশ্য শুধুমাত্র প্রথম বইটাই পড়তে পারল, তাও শেষ হয়নি | কিন্তু পড়তে পড়তে চরিত্র গুলোর সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল | বহুদিন পরে কোন বই পড়ে এত ভালো লাগলো | মনে মনে ভেবে রাখলো ফিরে গিয়ে সমাদৃতাকে অবশ্যই এই বইয়ের রেফারেন্স দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে হবে | পাইলট যখন শিকাগো পৌঁছে যাওয়ার ঘোষণা করা শুরু করলেন, শিবাজী ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
– ঘড়ির টাইমটা চেঞ্জ করে নাও
তাকিয়ে দেখল ওর ঘড়িতে এখন রাত সাড়ে দশটা, কিন্তু বাইরে আলো ঝলমল করছে।
– শিকাগো আমাদের থেকে এগারো ঘণ্টা পিছিয়ে, কাজেই এখানে এখন সকাল সাড়ে এগারোটা
বলতে বলতেই পাইলটও স্থানীয় সময় ঘোষণা করে দিলেন | রাজন্যা ঘড়ি এডজাস্ট করে নিল |
প্লেনেই ওদের সবার কাছে ইমিগ্রেশন এর ফর্ম দিয়ে দিয়েছিল | শিবাজীর ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ফর্ম ফিল আপও করে নিয়েছিল রাজন্যা।
– এখান থেকে নেমে আমাদের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে লাইন দিতে হবে | ওরা ডকুমেন্টস দেখবে, তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে কেন যাচ্ছ | তোমার উত্তরের স্যাটিস্ফাইড হলে তোমাকে এলাও করবে…
রাজন্যা চোখ বড় বড় করল।
– অ্যালাও না করলে?
– দেশে ফেরত | তবে চান্স কম |
ভয়ে ভয়ে শিবাজীর সাথে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়াল রাজন্যা | লালমুখো একজন মেম সাহেবের কাছে সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউটুকু দিয়ে আমেরিকায় ঢোকার ছাড়পত্র পেয়ে চওড়া হাসি মুখে নিয়ে বেরিয়ে এলো |
– এবারে আমরা এখান থেকে ডোমেস্টিক টার্মিনালে যাব | তার জন্য ওই যে ট্রেন যাচ্ছে দেখছো? ওটাতে উঠতে হবে |
রাজন্যা অবাক হওয়া আর ফুরোচ্ছেই না!
– ট্রেনে করে? এই এয়ারপোর্টটা কত বড় যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ট্রেনে করে যেতে হবে?
শিবাজী হাসলো,
– বড় তো! চলো ঐদিকে…
ডোমেস্টিক টার্মিনালে আরেক দফা সিকিউরিটি চেকিং হল | এখানে আবার জুতোও খুলে আলাদা ট্রে তে করে দিতে হল | এখানে অবশ্য খুব বেশিক্ষণের ওয়েটিং পিরিয়ড ছিল না | ঘন্টাখানেক পরেই ডে ময়েন যাবার ফ্লাইট | রাজন্যা উঁকি দিয়ে দেখল ছোট্ট ছোট্ট মিনিবাসের সাইজের প্লেন |
– শিবাজীদা! এইটুকু প্লেন?
– ডোমেস্টিক প্লেন তো, তাই ছোট ছোট
– কিন্তু আমাদের দিল্লি আসার প্লেনটাও তো ডোমেস্টিক ছিল, সেটা তো এর থেকে অনেক বড়!
– ডে ময়েন ছোট শহর, খুব বেশি লোক যাতায়াত করে না, তাই ছোট ছোট প্লেনেই কাজ চলে যায় |
রাজন্যাকে বারবার উঁকি দিতে দেখে এয়ারপোর্টের পোশাক পরিহিত একজন মহিলা হাসিমুখে এগিয়ে এলেন
– ইন্ডিয়ান?
রাজন্যা দেখল ভদ্রমহিলার বুকের ব্যাজে লেখা সর্বানি মিত্র | একগাল হাসলো,
– হ্যাঁ, শুধু ইন্ডিয়ান না বাঙালি!
সর্বানি মিত্র জিজ্ঞাসা করলেন,
– হাজবেন্ডের সাথে যাচ্ছেন?
মুহূর্তে কান লাল হয়ে উঠল রাজন্যার, তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ালো।
– না না অফিসের কাজে | উনি আমার অফিস কলীগ।
– আচ্ছা আচ্ছা। কিছু মনে করবেন না | হ্যাপি জার্নি, ডে ময়েন খুব ভালো জায়গা
জায়গায় ফিরে আসতে শিবাজী জিজ্ঞাসা করল,
– কি বলছিলেন ভদ্রমহিলা?
রাজন্যা অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠলো,
– তেমন কিছু না | আসলে উনিও বাঙালি তাই জিজ্ঞাসা করছিলেন আমি বাঙালি কিনা…
শিকাগো থেকে ডে ময়েন পৌঁছে গেল এক ঘন্টা পনের কুড়ি মিনিটের মধ্যেই | ছোট্ট এয়ারপোর্ট, লোকজনও কম | সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখল কনভেয়ার বেল্টে ওদের লাগেজ গুলো আসা শুরু হয়েছে | অল্প সময়ের মধ্যেই দুজনের লাগেজ এসে পৌঁছল | এর মধ্যেই এয়ারপোর্টের দরজা দিয়ে ঢুকে আসা গোলগাল চেহারার এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোক এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেছে শিবাজীকে | শিবাজীও দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
– কেমন আছো রত্নেশ ? ফাইনালি দেখা হল আমাদের, অ্যাঁ?
রত্নেশ শিবাজী কে দুই হাতে জড়িয়ে রেখেই বলল,
– ইয়েস ইয়েস! আমি ভাবিনি যে ফাইনালি দেখাটা হবে
রাজন্যাকে অদূরে ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখে রত্নেশ শিবাজী কে ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
– ইনিই কি আমাদের সেই ইয়াং লেডি?
শিবাজী হাসিমুখে বললো,
– হ্যাঁ। রাজন্যা সান্যাল। আমাদের টিমের জুনিয়র ডেভেলপার, বাট আ ভেরি সিনসিয়ার ডেভেলপার |
– হাই রাজন্যা!
রত্নেশ এগিয়ে এল
– আই অ্যাম রত্নেশ পাটেল, আপনাদের প্রজেক্টের অন সাইট এ্যাসোসিয়েট
রাজন্যা রত্নেশের সাথে হাত মেলালো | এর কথা সৌম্যর কাছে শুনেছিল | অবাঙালি ছেলে, পরিবার নিয়ে এই ওয়েস্ট ডে ময়েনেই থাকে | ক্লায়েন্টের সাথে সরাসরি কথাবার্তা বলবে রত্নেশই আর পুরোটা ওর মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সঙ্গে কো-অর্ডিনেট করবে শিবাজী এবং সৌম্য | রত্নেশ গাড়ি নিয়ে এসেছিল, এয়ারপোর্ট থেকে ঘন্টাখানেক লাগল ওদের অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছতে | জানলা দিয়ে জুলজুল করে বাইরের রাস্তাঘাট দেখছিল রাজন্যা | এখানে রাস্তায় লোকজন খুব কম, নেই বললেই চলে | এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এলাকা ছাড়িয়ে জনবসতিতে ঢুকতেই সুন্দর সুন্দর ছবির মতন কাঠের বাড়ি দেখতে পেল | বেশিরভাগ বাড়ি একই ধাঁচের, ছোটবেলার ছবিতে আঁকা বাড়ির মতন ত্রিভুজাকৃতি চাল, সামনে এক চিলতে বাগান, পাশে একটা কিংবা দুটো করে গাড়ি দাঁড় করানো। রাজন্যা জিজ্ঞাসা করল,
– এখানে দোতলা তিন তলা বাড়ি নেই না?
গাড়ি চালাতে চালাতেই রত্নেশ উত্তর দিল,
– খুব একটা না | যাদের পয়সা বেশি তারা ওই একতলা বাড়িটাই বেশি জায়গা জুড়ে করে, আর তার সাথে থাকে বেসমেন্ট | অনেকে বেসমেন্ট টা ভাড়া দেয়, অনেকে আবার শুধুমাত্র স্টোরেজ হিসাবেই ব্যবহার করে |
– লোকজন খুব কম না?
রত্নেশ হাসলো,
– হ্যাঁ, কলকাতা থেকে এসেছেন, ভে ময়েন তো খালি মনে হবেই। তবে একেবারে কম নয় কিন্তু। আর জায়গাটা বেশ ভালো। মোটামুটি গেরস্থ লোকজনের বাস আর খুব হেল্পফুল কমিউনিটি |
রত্নেশের গাড়ি একটা জায়গায় এসে টার্ন নিয়ে যেখানে ঢুকলো সেখানে পরপর একই ধরনের অনেকগুলো দোতলা বিল্ডিং দেখতে পেল রাজন্যা | প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতে শিবাজী বলল,
-এই অ্যাপার্টমেন্টটার নাম ওয়ারেন টেরেস। এখানে আমাদের থাকার জায়গা বুক করা হয়েছে আগামী এক মাসের জন্য।
-প্রথম তিনদিন হোটেলে থাকার কথা ছিল যে?
-হ্যাঁ ছিল, কিন্তু রত্নেশ এখানে সমস্ত সেট আপ করে দিয়েছে তাই আর হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়লো না | ওই তিন দিনের হোটেল ফেয়ার টা তোমার স্যালারির সঙ্গে যোগ হয়ে যাবে।
রত্নেশ গাড়ি থেকে নেমে পড়ল | তিনজনেই হাত লাগালো লাগেজ নামাতে | মালপত্র টানাটানি করতে করতেই রত্নেশ বলল,
– এই যে রাস্তাটা দেখছেন এটার নাম ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউ | এই এলাকাটা খুব সেফ আর অনেক ইন্ডিয়ান এই চত্বরে থাকে | রাস্তা পেরিয়েই ভ্যালি ওয়েস্ট মল | টুকিটাকি জিনিস কিনতে হেঁটেই যেতে পারবেন । এর মধ্যে দিয়ে আরেকটু হেঁটে গেলেই আরেকটা গ্রসারী শপ আছে, হাইভী নাম, কাল এসে চিনিয়ে দেব। রাজন্যা শিবাজী আর রত্নেশের পিছন পিছন নিজের একটা ট্রলি ব্যাগ টানতে টানতে অ্যাপার্টমেন্টের দিকে এগোলো | রত্নেশ পিছন ফিরে বলল,
– ওখানেই রাখুন, তুলতে পারবেন না | এখানে লিফ্ট নেই, সিঁড়ি দিয়ে টেনে তুলতে হবে।
রত্নেশ আর শিবাজী মিলে রাজন্যার ব্যাগ দুটো দোতলায় তুলে ফেলল | দুই কাঁধে নিজের আর শিবাজীর ল্যাপটপ ব্যাগ দুটো নিয়ে ওদের পিছন পিছন উঠে এলো রাজন্যা | স্কুলবাড়ির মতো লম্বা টানা করিডোর, তার দুপাশে অ্যাপার্টমেন্টের দরজা | সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁ দিক বেঁকে একটা দরজা ছেড়ে পর পর দুটো অ্যাপার্টমেন্ট ওদের দুজনের | ২০২ আর ২০৩ |
– রাজন্যা, আপনার জিনিসপত্র ২০৩ এ রেখেছি।
২০২ এর ভিতর থেকে চেঁচিয়ে বলল রত্নেশ |
অ্যাপার্টমেন্ট কাকে বলে গুগল করে দেখে নিয়েছিল রাজন্যা। অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর ঢুকে মনটা খুশি হয়ে গেল | যতটা ছোট ভেবেছিল, ততটা ছোট নয়। বেশ বড় আয়তাকার ফ্ল্যাটটা | দরজা দিয়ে ঢুকে ডান হাতে বাথরুম, সামান্য এগিয়েই বাঁ হাতে বেশ বড় কিচেন | ওভেন ফ্রিজ মাইক্রোওয়েভ ছাড়াও জিনিসপত্র রাখার অজস্র ক্যাবিনেট করা | উল্টোদিকে জানালার ধার ঘেঁষে একটা প্রমাণ মাপের বিছানা, পাশে একটা সোফা, কাঠের ছোট সেন্টার টেবিল | কিচেন আর সোফার মাঝামাঝি একটা উঁচু খাবার টেবিল আর দুটো চেয়ার | বিছানার ঠিক উল্টো দিকের দেয়াল জুড়ে কাঠের দরজা | ঠেলে দেখল সেটা একটা ওয়াক-ইন ওয়ার্ডরোব | ট্রলি দুটোকে ওই ওয়ার্ডরোবের মধ্যেই ঢুকিয়ে দিল রাজন্যা, পরে জিনিসপত্র বের করে নেওয়া যাবে। দরজায় টকটক শব্দ হল | রাজন্যা গলা তুলল,
– খোলা আছে
রত্নেশ আর শিবাজী ঘরে ঢুকে এলো |
– পছন্দ হয়েছে?
– হ্যাঁ, খুব সুন্দর।
রত্নেশ পরপর সুইচ গুলো বুঝিয়ে দিল
– তোমরা যতদিন থাকবে তার মধ্যে হিটার হয়তো লাগবে না তবু দেখে রাখো।
রাজন্যা বেশ মজা পেল দেখে। কলকাতায় তো প্রায় সবার বাড়িতেই এসি এখন কিন্তু এখানে আক্ষরিক অর্থেই এয়ার কন্ডিশনার। একই যন্ত্রে বিভিন্ন মোডে ঠান্ডা গরম দুই হয় |
– এখানে খুব শীত পড়ে, না?
রত্নেশ হাসলো,
– ভীষণ! মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রী ও টেম্পারেচার নেমে যায়…
– বরফ পড়ে?
– পড়ে তো! এত বরফ পড়ে যে আমরা বিরক্ত হয়ে যাই
শিবাজীর দিকে তাকিয়ে রাজন্যা বলল,
– ইস বরফ পড়ার সময় আসলে কি মজা হত!
শিবাজী কিছু বলার আগেই রত্নেশ বলল,
– বরফ পড়া কিন্তু ওই প্রথম প্রথম দু চার দিন দেখতে ভালো লাগে | তারপরে কোথাও বেরোতে গেলেই কোট পরো, বুট পরো, মাথা ঢাকো, গ্লাভস পরো, বরফ পরিষ্কার করো, খুব একটা সুখকর নয় |
রাজন্যা দাঁত বার করলো,
– তা হোক! আসলে আমি কখনো বরফ দেখিনি, খুব দেখার ইচ্ছা।
রত্নেশ শিবাজীর দিকে ফিরল,
– ডিসেম্বর মাসে ম্যাডামকে পাঠিয়ে দিও এক মাসের জন্য।
তিনজনেই হেসে উঠলো।
*****
সমাদৃতার ফোন পেয়েই সুমিত্রা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন | ড্রাইভার সেন্টারে আর ফোন করতে হয়নি। সুমিত্রার একজন মাইনে করা ড্রাইভার আছে, বসন্ত। তিতলিকে নিয়ে বা সুমিত্রাকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার হলে বসন্তই যায়। ওকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নির্বিঘ্নে ডাক্তার দেখানো হয়েছে | ডাক্তার এবারে একটু ভরসাও দিয়েছেন, চিকিৎসায় সমাদৃতার শরীর আগের থেকে ভালোভাবে সাড়া দিচ্ছে | দু’বছর হয়তো অপেক্ষা করতে হবে না। তার আগেই পায়ে সাড় ফিরে পাবে মেয়েটা। মাধবী আর সমাদৃতাকে বাড়িতে ছেড়ে গাড়ি ফিরে গেছে কিছুক্ষণ হলো | দুপুরের খাওয়া সেরে বাসনপত্র গুছিয়ে রেখে মাধবী মেয়েকে বললেন,
– তুই একটু শো, আমি একটু আসছি।
সমাদৃত অবাক হল।
– এখন কোথায় যাচ্ছ মা?
মাধবী মুখ নিচু করলেন।
– সুমিত্রার সাথে একটু দেখা করে আসি…
সমাদৃতা মনে মনে খুশি হলো | তবু এই একটা সামান্য ঘটনাকে আছিলা করে মা আর সুমি পিসির মধ্যে সম্পর্কটা যদি একটু ঠিক হয় |
দিদির সাথে শিবাজীদার বিয়ে হওয়াটাই একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তখন দিদি, শিবাজীদা, মা কেউই বুঝতে চাইলো না | ওরা আসলে একে অপরের জন্য ছিলই না। সমাদৃতা অনেক ছোট থাকলেও কেন যেন বুঝতে পারত | দিদিয়ার নজর ছিল অনেক উপরে, আর শিবাজীদা মাটিতে পা দিয়ে চলা মানুষ | দুজন মানুষ একে অপরের সাথে থাকতে না পারলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেই পারে, শুধু যদি দিদিয়াটা তিতলিকে পৃথিবীতে না এনে ফেলতো, তাহলে হয়তো সবটুকু এতটাও তেতো হয়ে যেত না | এ্যাক্সিডেন্টের আগের কিছু দিনের কথা সমাদৃতার ভালো করে মনে পড়ে না, কেবল মনে আছে ও বাড়িতে ভয়ানক অশান্তি চলতো দিনরাত। সেই অশান্তিতে শুধু শিবাজীদা আর দিদিয়া নয়, সৌভিকদাকেও জড়িয়ে পড়তে হতো বারবার | দিদিয়া একবার ওকে বলেছিল,
– শিবাজীর মতন অ্যাম্বিশনলেস একটা ছেলের সাথে নিজেকে জুড়ে বিরাট বড় ভুল করেছি | আমার উচিত ছিল সৌভিককে টার্গেট করা। কিন্তু তার তো আবার কেস অন্য!
অন্য মানে?
সমাদৃতার মনে আছে জানতে চেয়েছিল দিদির কাছে, কিন্তু সমর্পিতা কখনোই পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। শুধু বলেছিল সৌভিকের সাথে থাকতে গেলে শুধু ক্যারিয়ারটাই হবে। বরং সাংসারিক অশান্তিতে সেটাও লাটে ওঠার চান্স আছে |
দুপুরবেলাটা সুমিত্রার আজকাল ঘুম আসেনা। টিভিতে একটা গানের প্রোগ্রাম হয়, সেটাই দেখেন। কলিংবেল বাজতে অবাক হলেন | কে এলো আবার? সেলসম্যান নির্ঘাত | দরজা খুলে সামনে দাঁড়ানো মাধবীকে দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য বিমূঢ় হয়ে পড়লেন | তারপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে অভ্যর্থনা করলেন
– এসো এসো, ভেতরে এসো
মাধবী ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
– এক সময় আমরা একে অপরকে তুই-তোকারি করতাম, তাই না?
সুমিত্রা হাসলেন,
– তখন আমরা বন্ধু ছিলাম।
মাধবী একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে সোফায় বসলেন | বহু বছর পরে এই বাড়িতে পা রেখেছেন।
– চা কফি খাবে কিছু?
– নাহ্, এইমাত্র ভাত খেয়েছি…
– ডাক্তার কি বলল?
– আগের থেকে অনেকটাই ভালো, আস্তে আস্তে ট্রিটমেন্টে সাড়া দিচ্ছে | উনি আশা করছেন বছর খানেকের মধ্যেই দিঠি নিজে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটাচলা করতে পারবে।
সুমিত্রার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দুই হাত জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে বললেন,
– খুব ভালো খবর। অমন হাসি খুশি মেয়েটা এভাবে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে
– সবই আমার কপাল!
সুমিত্রা হাত বাড়িয়ে মাধবীর হাতের উপর হাত রাখলেন,
– খানিকটা কপাল, খানিকটা আমাদের বোঝার ভুল | দুই পরিবারেরই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে | যা হয়ে গেছে তাকে তো আর ঠিক করার আমাদের সাধ্যের ভেতরে নেই, কিন্তু অন্তত আমরা যদি নিজেদের মধ্যে তিক্ততাটুকু মুছে ফেলতে পারতাম…
মাধবী উদাস কন্ঠে বললেন,
– ভেবেছি অনেকবার | কিন্তু মেয়েটার হুইল চেয়ারের দিকে চোখ গেলে কিছু আর ভুলতে পারি না
সুমিত্রা উঠে দাঁড়ালেন। ধীর কণ্ঠে বললেন
– তুমি তো তবু হুইল চেয়ারে বসা মেয়েটাকে দেখতে পাও | আমাদের বড় ছেলেটাকে যে আর দেখতেও পাই না আমরা। বুবাই টুবাইয়ের সমস্ত জিনিসপত্র ওর ঘরে একইভাবে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে আজও | নিজের হাতে ঘর রোজ পরিষ্কার করে | কারোকে ঢুকতে দেয় না। কেউ নাড়াচাড়া করলেই নাকি দাদার স্মৃতিতে আঘাত করবে। আমাদের ক্ষতি তোমার থেকে কিছু কম হয়নি মাধবী।
মাধবী কেঁদে ফেললেন |
– সবটাই কি আমার মেয়েরই দোষ সুমি? বুঝতে পারি না | আমি কি মা হয়ে এতটা ভুল বুঝলাম মেয়েকে? সব সময় ওর পছন্দের কাজ করতে দিয়েছি। ওর পাশে থাকতে চেয়েছি সব সময়। ও যখন মডেলিং করতে চাইল, ওর বাবার কি ভয়ানক আপত্তি ছিল তুমি তো জানোই। তখনও আমি মেয়ের পাশে থেকেছি | অথচ এখন সেই মেয়ে নিজে থেকে একটা ফোন পর্যন্ত করে না | গত সপ্তাহে নিজে ফোন করলো, কত খুশি হলাম, অথচ ও ফোন করেছে বাবার সম্পত্তির কিরকম ভাগ হবে তা জানার জন্য! ভাবতে পারো ? এখন যেন মাঝে মাঝে মনে হয় ও আমাকে যা বলেছিল, যা বুঝিয়েছিল, সবটাই বোধহয় নিজের স্বার্থের কারণে…
সুমিত্রা কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকলেন, তারপর বললেন,
– মাধবী, আমার মনে হয় সমর্পিতার কোন কারনে প্রচুর টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়েছে
তারপরে তিনি খুলে বললেন দিন কয়েক আগে আসা আইনি চিঠি খানার কথা। মাধবী নিশ্চুপ হয়ে শুনলেন, তারপর উঠে দাঁড়ালেন | বললেন,
– তোমরা কিন্তু ওর অন্যায় দাবি মেনে নিও না। আমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। মা হয়ে এতদিন মেয়ের অন্যায় গুলো দেখেও দেখিনি। কিন্তু আর নয়। ও নিজের জীবন নিয়ে খুশি আছে থাকুক | কিন্তু যাদের জীবন ইতিমধ্যে তছনছ হয়ে গেছে তারা যখন সামলে নেওয়ার পর্যায় পৌঁছে গেছে, তখন আর ওকে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া যাবে না |
ইতিমধ্যেই ঘুম ভেঙে দোতলা থেকে পায়ে পায়ে নেমে এসেছে তিতলি | অপরিচিত মুখ দেখে দৌড়ে সুমিত্রার পিছনে লুকিয়ে পড়ল। মাধবী স্নেহভরে ডাকলেন,
– সামনে এসো তিতলি সোনা
তিতলি সামনে না এসেই জিজ্ঞাসা করল,
– তুমি কে? তুমি আমার নাম জানলে কি করে?
মাধবী কিছু বলার আগেই সুমিত্রা বললেন,
– তিতলি ইনি তোমার দিদান হন। যাও সামনে যাও |
তিতলি আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে মাধবী হাঁটু গেড়ে বসে তিতলিকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলেন | টের পেলেন তাঁর দুই চোখ থেকে অশ্রুধারা বেরিয়ে আসছে | শিশুটিকে শেষ কোলে নিয়েছিলেন যখন ওর ছ মাস বয়স ছিল, আর শেষ দেখেছিলেন হাসপাতালে | রক্তে মাখা ছোট্ট শরীরটা নিয়ে তখন পাগলের মতন হাসপাতালের করিডোর দিয়ে দৌড়াচ্ছিল শিবাজী |
সায়নের উপরে আর ভরসা করা যাচ্ছে না | আজ দেখা করাব, কাল দেখা করাব করে যাচ্ছে প্রতিদিন। অথচ ভাটিয়ার সাথে মিটিংটা হয়ে উঠল না আজ পর্যন্ত। সমর্পিতা বিরক্ত হয়ে উঠেছে। সেই যদি প্রতিশ্রুতির বদলে শরীর দিতে হয়, তাহলে খামোকা ফিল্ম এডিটরের সঙ্গে জুড়ে থেকে লাভ কি? ভাটিয়ার সাথে সরাসরি দেখা করে তাকেই জিজ্ঞাসা করবে তার কি চাহিদা!
ওদিকে শিবাজীর দিক থেকে কোন উত্তর এলো কিনা জানার জন্য তমালিকাকে ফোন করল,
– হ্যাঁ তমালিকা, ওদিকের কোনো আপডেট?
তমালিকা বলল,
– না ম্যাডাম | নাথিং অপটিমিস্টিক | শিবাজী সেন কিছুদিনের জন্য আমেরিকায় গেছেন | তবে ইতিমধ্যে ওনার লিগাল এ্যাডভাইজার হিসাবে দুজন ফোন করেছিলেন | মিস্টার শতদ্রু বাসু এবং মিস্টার সত্যেন মল্লিক |
সমর্পিতা চমকে উঠলো।
– দ্বিতীয় নামটা কি বললে? সত্যেন মল্লিক?
– ইয়েস ম্যাডাম | ওনারা দুজনে একসাথে মিলে কাজ করবেন। আমার মনে হয় ব্যাপারটা যতটা সহজ ভাবছিলাম ততটা সহজ হবে না |
সমর্পিতা গম্ভীর গলায় বলল,
– তোমার কোন স্পেসিফিক অ্যাডভাইজ আছে এই ব্যাপারে?
তমালিকা একটু চুপ করে থেকে বলল,
– আমি আপনাকে একটা জিনিস রেকমেন্ড করবো ম্যাডাম | আপনি তো গত কয়েক বছরে কখনোই আপনার মেয়ের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেননি। আমি বলব এখন যেহেতু শিবাজী সেন কলকাতায় নেই, এই সময়টাই আদর্শ সময় | আপনি কলকাতায় গিয়ে আপনার মেয়ের সঙ্গে দেখা করুন। ওর মনে মায়ের স্মৃতিটা জাগিয়ে তুলুন। ওর মধ্যে মায়ের সঙ্গে থাকার, মায়ের সঙ্গে সময় কাটানোর ইচ্ছাটা জাগান |
(ক্রমশ)