হৃদ মাঝারে পর্ব-২০

0
500

#হৃদ_মাঝারে (পর্ব ২০)

রাজন্যা যেরকম হঠাৎ করে মিটিং রুমের ভিতরে মুন্ডু বাড়িয়েছিল, ধমক খেয়ে সেই রকমই তড়িঘড়ি বেরিয়ে গিয়ে দরজা টেনে দিতে শিবাজী দুই হাতে কপাল টিপে বসে পড়ল | এই সমর্পিতার চিঠির ব্যাপারটা সামলে তারপরে ইউএসএ গেলে ভালো হতো | দ্বৈপায়নের ল-ইয়ার আগামী পরশু দেখা করবেন বলেছেন। শিবাজীর সত্যিই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে স্বস্তিক পুরোপুরি সমর্পিতাকে হ্যান্ড-ওভার করে দিলে ভালো হত | দ্বৈপায়নের কথাতেও যুক্তি আছে, এটা ওদের পারিবারিক ব্যবসা। দাদু আর ঠাকুরদা দুজনের অনেক পরিশ্রম, অনেক অধ্যবসায়ের ফল | ঠাকুরদা মারা গেছেন বহুদিন, বাবাও নেই আজ বছর তিনেক হল | কেবল দাদুর কোন খবর জানে না শিবাজী | হিসাব অনুসারে যা বয়স হয়, তাতে বেঁচে থাকার কথা নয় | কিন্তু নিশ্চিত করে জানা নেই | ওর শিশুকালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তখন জানা বা বোঝার অবস্থা না থাকলেও বড় হয়ে শুনেছে সবটাই। কিছুটা দাদার কাছে, কিছুটা পিপিয়ার কাছে | বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবার পরে নিজের ভুল বুঝে মা ফিরে এসেছিল আবার | কিন্তু বাবা মাকে আর গ্রহণ করেননি | এ বিষয়ে ঠাকুরদা আর দাদুও বাবাকেই সমর্থন করেছিলেন। দাদু এরপরে ওদের মা রমলাকে নিয়ে শহর ছেড়ে কোথাও চলে গিয়েছিলেন | কিন্তু তাঁর মৃত্যুর খবর যেহেতু আসেনি তাই স্বস্তিকের মালিকানার একাংশ এখনো দাদুর এবং দাদুর অবর্তমানে শিবাজীর মায়ের | তাই চাইলেও সম্পূর্ণরূপে স্বস্তিকের সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পুরোপুরি ভাবে শিবাজীর হাতে নেই |

সমর্পিতাকে চিনতে বড় দেরি করে ফেলেছিল শিবাজী | মেহেন্দি লঞ্চ হয়ে যাবার পরের দিনগুলো কাটছিল রঙিন প্রজাপতির ডানায় ভর করে | ব্যবসার কাজে জড়াতে না চাওয়া শিবাজীও মাঝে মাঝেই হানা দিচ্ছিল অফিসে | সেদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাশন শো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, সৌভিক জানতো ভাইকে আগেকার মতন অনুরোধ উপরোধ আর করতে হবে না, একবার বললেই হাজির হবে | কারণটাও অজানা ছিল না | শিবাজী চলেও এসেছিল বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়ে | ইচ্ছা ছিল, বিকেলের মিটিং এর আগে সমর্পিতাকে নিয়ে কোথাও একটা লাঞ্চে যাওয়া |

– কি ব্যাপার রে ভাই! আগে তোকে ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি করে স্বস্তিকের অফিসে আনাই যেত না, আজকাল দেখি কাকের মুখে খবর পেলেও দৌড়ে আসিস!

শিবাজী সামান্য লজ্জা পেলেও প্রকাশ না করে বলল,

– আচ্ছা ঠিক আছে, আসবো না তাহলে! নিজেই ডাকিস আবার নিজেই আওয়াজ দিস!

সৌভিক শব্দ করে হেসে ফেলল। তারপর এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,

– মডেলদের কিন্তু কন্ট্রাক্ট পিরিয়ডে বিয়ে করা বারণ | আর এই নিয়ে যা প্রশ্ন করেছিলি তাতে কি উত্তর দিয়েছিল মনে আছে তো?

মনে আছে শিবাজীর | মডেলদের ফাইনাল রাউন্ডে জিজ্ঞাসা করার জন্য যে কতগুলো প্রশ্ন শিবাজী সৌভিক এর কাছে দিয়েছিল তার মধ্যে একটা ছিল মডেলদের কনট্র্যাক্ট পিরিয়ডে বিয়ে না করা বা সন্তান না নেওয়ার যে চুক্তিতে সই করতে হয় সেই সম্পর্কে আপনার মতামত কি? প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় সামনে না থাকলেও পরে দুই প্রতিযোগীর উত্তরই শুনেছিল। সমর্পিতা অত্যন্ত সপ্রতিভ ভাবে উত্তর দিয়েছিল,

“আমি মনে করি কোনো মেয়ে যদি তার ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে চায়, তাহলে তাকে কিছু কিছু স্যাক্রিফাইসের জন্য মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে | বিয়ের পরে যেহেতু এখনো পর্যন্ত সাংসারিক দায়িত্বের সিংহভাগ ভারতীয় মেয়েদের উপরেই এসে পড়ে এবং সন্তান ধারণের সময় এবং সন্তানের জন্মের পরেও যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় এবং সামাজিক পরিবর্তন মেয়েদেরই হয়, তাই মডেলিং এর মতন একটি পেশা নির্বাচন করার আগে মেয়েটিকে তার প্রেফারেন্স সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে | আমি মনে করি জলে নামবো কিন্তু বেণী ভেজাবো না এই থিওরি বাস্তব জীবনে কাজ করে না।”

মেয়েটির চিন্তাভাবনার স্বচ্ছতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল সকলে, শিবাজীও |

– ভাই আমি এখনো সেভাবে কিছু রোজগার করি না। কাজেই বিয়ের স্বপ্ন আমি দেখছি না, তবে মডেলদের ডেটিং করার ব্যাপারে আমাদের কোম্পানির কন্ট্রাক্টে কিছু আছে বলে তো জানিনা?

মুখখানাকে বেচারা বেচারা করে প্রশ্ন করল শিবাজী | সৌভিক আরো একবার শব্দ করে হেসে উঠে বলল,

– না, নিরামিষ ডেটিং এ কোন বাধা নিষেধ নেই | তবে ওই সন্তান ধারণ ইত্যাদি ইত্যাদি ওটা আর বিয়ে দুটোর মধ্যে কোন রিলেশন নেই কিন্তু। আই মিন বিয়ে ছাড়া সন্তান ধারণও বারণ।
– ঈস, তুই কি রে! দাদা হওয়ার সম্মানটুকু তো রাখ!

বলে সৌভিকের পেটে একটা আলতো ঘুষি মেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল শিবাজী। আর বেরোতেই মুখোমুখি সমর্পিতার সাথে | সমর্পিতার পরনে আজ একটা স্লিভলেস কালো রঙের ব্লাউজ আর লালের উপর কালো বুটি দেওয়া শাড়ি। একটু অন্যমনস্কভাবে মাটির দিকে চোখ রেখে হাঁটছিল সমর্পিতা। শিবাজীর একেবারে সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো |

– কি ব্যাপার! এরকম বেখেয়ালে হাঁটছ? আরেকটু হলেই ধাক্কা খেতে তো!

সমর্পিতা একটা ছোট্ট করে সরি বলল | শিবাজী অবাক হলো একটু।

– কি হয়েছে? চোখমুখ এরকম লাগছে কেন?

সমর্পিতা ক্লান্ত স্বরে বলল,

– আমাকে একটা ফ্ল্যাট রেন্টে জোগাড় করে দিতে পারো শিবাজী?

শিবাজীর ভ্রু কুঁচকে গেল,

– কি ব্যাপার ঠিক করে বলো দেখি? তুমি কি দাদার কাছে কোন দরকারে যাচ্ছিলে?
– নাহ্, এই ব্যাপারে রিকোয়েস্ট করতে যাচ্ছিলাম।
– সকাল থেকে খেয়েছো কিছু?

সমর্পিতা উত্তর দিল না | শিবাজী ওর বাহু ধরে বলল,

– চলো আগে একটু কিছু খাবে। খেতে খেতে কথা বলছি।

সৌভিকের কেবিনে উঁকি মেরে বলল,

– দাদা তোর মডেলকে ঘন্টাখানেকের জন্য হাইজ্যাক করছি।

উত্তরে সৌভিক শুধু একবার মুচকি হাসলো | কিছুক্ষণ পরে একটা ক্যাফেতে সমর্পিতা আর শিবাজী মুখোমুখি | সমর্পিতা ভাজাভুজি কিছু খাবে না, তাই ওর জন্য চিকেন সালাদ আর নিজের জন্য কফির সাথে একটা ব্রাউনি অর্ডার করেছে শিবাজী | অর্ডার নিয়ে ওয়েটার ছেলেটি সামনে থেকে সরে যেতেই সমর্পিতা মুখ খুলল,

– বাড়িতে বড্ড অশান্তি হচ্ছে। মেহেন্দির লঞ্চের পরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ম্যাগাজিন থেকে ফোন আসছে, তাছাড়া রাস্তার হোর্ডিং এও কোথাও কোথাও পোস্টারে আমার ছবি দেখা যাচ্ছে। সেই নিয়ে বাবার আপত্তি।

শিবাজী অবাক হলো

– কিন্তু মেহেন্দিতে যে ধরনের পোশাক তুমি পরেছ সে নিয়ে তো কারোর আপত্তি থাকার কথা নয়!
– আইডিয়ালি নয়, কিন্তু বাবা ব্যাপারটা পছন্দ করছেন না | আমি আর মা বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু লাভ হচ্ছে না | বাড়ির মেয়ের ছবি রাস্তাঘাটে হোর্ডিং এ দেখালে নাকি পরিবারের সম্মান থাকে না |

শিবাজী ডান হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর রাখা সমর্পিতার হাতের ওপরে রাখল |

– আসলে তোমার বাবা হয়তো এই পেশাটাকেই একেবারে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না
– হ্যাঁ সেটাই | আর বাড়িতে এরকম প্রতিনিয়ত অশান্তি হলে আমার খুব মানসিক স্ট্রেস হচ্ছে। রাতে ঘুমাতে পারছি না, চোখের তলায় ডার্ক সার্কেল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে থাকা সম্ভব নয়। আমার কিছু জমানো টাকা আছে তাই দিয়ে সেলামির টাকা হয়ে যাবে আর স্বস্তিকের স্যালারি দিয়ে ফ্ল্যাটের ভাড়া চালিয়ে দিতে পারব | তুমি প্লিজ আমাকে একটা ওয়ান বি এইচ কে ফ্ল্যাট খুঁজে দাও শিবাজী |
– বাড়িতে আরেকবার কথা বলে দেখলে হত না?
– মনে হয় না | তাছাড়া আগামী সমস্ত ক্লোদিং লাইনে যে মেহেন্দির মতনই পোশাক হবে তারও তো কোন গ্যারান্টি নেই | ধরো কালকে কোথাও অফ সোল্ডার গাউন পরতে হলো। তখন বাড়িতে অশান্তির পরিমাণ বাড়বে বই কমবে না!

শিবাজী বলে উঠলো,

– না ধরো তোমাকে যদি আমরা শুধুমাত্র এথনিক লাইন্সের জন্যই রাখি?

সমর্পিতা বিস্ফারিত চোখে বলল,

– না না তা কেন? আমার নিজের তো কোনো ইনহিবিশন নেই শিবাজী। আই অ্যাম কম্ফর্টেবল উইথ অল কাইন্ড অফ ড্রেসেজ | নিজেকে কোনো একটা বিশেষ ধরনের পোশাকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে তো আমি চাই না | তাই ভবিষ্যতে যে আরও বড় ধরনের ঝামেলা আসতে পারে সেটা অনুমান করেই তোমাকে এই অনুরোধটা করছি | সৌভিক স্যারকেই বলতাম, তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল বলে অ্যাজ আ ফ্রেন্ড তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি।

সমর্পিতার জন্য একটা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে ফেলা গেল | ওয়ান বেডরুম নয়, টু বেডরুম সেমি ফার্নিশড একটা ফ্ল্যাটই জোগাড় হল | একটা হাউসিং সোসাইটির ভিতরে ফ্ল্যাটেরই খোঁজ করা হয়েছিল যাতে সিকিউরিটির সমস্যা না থাকে | খোঁজাখুঁজির কাজটা অবশ্য মূলত সৌভিকই করেছিল কিন্তু কৃতিত্ব গোটাটাই শিবাজীর কপালে জুটল | দু একবার বলতে গিয়েছিল বটে, যে সব খোঁজই তার দাদার দৌলতেই পাওয়া | কিন্তু সমর্পিতা তাতে আমল দেয়নি। হাসতে হাসতে শিবাজীর গলা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,

– দাদার কাছে তেমন তেমন করে অনুরোধটা কে করেছিল সে আমার জানা আছে!

স্বস্তিকের নতুন মডেলের সঙ্গে মালিকের ছোট ছেলের সম্পর্কটা নিয়ে এদিক সেদিক নানান রকম কানাঘুষো চলতে থাকলো। সৌভিকের বিষয়টাতে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় থাকলেও ব্যাপারটা যখন শিবনাথের কান পর্যন্ত পৌঁছালো তিনি মোটেই খুশি হলেন না। প্রসঙ্গটা উঠে পড়ল একদিন ডিনারের টেবিলে | সেন বাড়ির রেওয়াজ, সারাদিন যে যেখানেই থাকুক না কেন, নিতান্ত অসুবিধা জনক পরিস্থিতি না এলে রাতের খাওয়া পরিবারের সকলে একসাথেই করবে | সুমিত্রা মাঝেমধ্যেই পরিবেশনের আছিলায় পরে বসতে চাইতেন, কিন্তু দাদার ধমক খেয়ে তাঁকেও সকলের সাথে একসাথে খেতে বসার অভ্যাস করতে হয়েছিল। বাড়িতে তখন চব্বিশ ঘন্টায় দুজন সহায়ক সহায়িকা থাকতো। কৈলাসের মা রানু এবং ভজন নামের এক বিহারী প্রৌঢ় । ভজনের মূল কাজ ছিল বাড়ির বাগান দেখাশোনা করা আর বাড়ির সব ধরনের আসবাবপত্র ঝেড়ে মুছে চকচকে তকতকে করে রাখা | রান্নাবান্নার দিকটা সামলাত রানু | কৈলাস তখনও এ বাড়ীর সদস্য হয়ে ওঠেনি, দেশের বাড়িতে থেকে চাষবাসের কাজ দেখাশোনা করে |

শিবনাথ গম্ভীর গলায় বললেন,

– বুবাই, টুবাই তোমাদের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার আছে

খেতে খেতেই দুই ভাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো। সুমিত্রাও খাওয়া ছেড়ে দাদার মুখের দিকে তাকালেন |

– টুবাইয়ের আঠাশ বছর বয়স হল | আমার মনে হয় এবার ওর জন্য পাত্রী খোঁজা দরকার |

শিবনাথের মুখ দিয়ে কথাটা বেরোনো মাত্র সৌভিক একটা বিষম খেলো। পাশে বসা সুমিত্রা ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

– ষাট ষাট, জল খা, জল খা…

ছেলের দিকে কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে শিবনাথ বললেন,

– বিষম খাবার মতন এমন কোন কথা আমি তো বলিনি। বিয়ের বয়স তোমার হয়েছে এবং পেশাগত দিক থেকেও তুমি যথেষ্ট সফল | নিজেদের বাড়ি আছে, যতদূর জানি তোমার কোন বান্ধবীও নেই | তাহলে পাত্রী দেখার প্রসঙ্গে এত চমকানোর কি হলো?

সৌভিক ততক্ষণে একটু নিজেকে সামলে নিয়েছে। দুই দিকে মাথা নেড়ে বলল,

– বাবা আমি বিয়ে করবো না।

সুমিত্রা চমকে উঠেছেন | শিবনাথ গম্ভীর |

– কেন? বিয়ে করবে না কেন?
– না মানে বিয়েটা করতেই হবে এরকম তো কোন কথা নেই! আমি এরকমই ঠিক আছি। আমাকে বিয়ে করার জন্য জোরাজোরি কোরোনা |

শিবনাথ কপালে ভাঁজ নিয়েই বললেন,

– বিনা কারণে এরকম একটা কথা বললে তো চলবে না | একটা বয়সে এসে সংসার ধর্ম পালন করতেই হয়। যদি না করতে চাও তার পিছনে কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেখাতে হবে। তা না হলে তোমার এই খামখেয়ালিপনা আমি মেনে নেব সেটা ভেবো না |

সৌভিক খানিকটা অধৈর্য ভাবে বলে উঠলো,

– কিন্তু আমার জীবনে আমার ব্যক্তিগত মতামতের কোন মূল্য নেই?
– নিশ্চয়ই আছে | কিন্তু সেই মতামতের পিছনে কারণটা আমার জানা দরকার।
– সবকিছু তোমাকে জানাতে আমি বাধ্য নই বাবা!

বরাবরের শান্ত, বাধ্য ছেলে সৌভিক হঠাৎই থালা ছেড়ে উঠে পড়ল। সুমিত্রা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন,

– খাবার ছেড়ে ওভাবে উঠতে নেই টুবাই | ফেরত আয়!

কিন্তু সৌভিক ততক্ষনে এঁঠো হাতেই সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে গেছে।

– এটা কি হলো দাদা? ছেলেটা না খেয়ে উঠে গেল!
– সেটাই আমিও বোঝার চেষ্টা করছি | ওকে এই রকম রিয়্যাক্ট করার মতন কোন কথা বলা হয়নি।

পুরো ঘটনাটায় শিবাজীও অবাক হয়েছে। দাদার যে কোন বান্ধবী নেই সেটা ওর নিজেরও ধারণা | থাকলে ও অন্তত টের পেত নিশ্চয়ই। সৌভিক সুদর্শন, হাসিখুশি, ব্যবসায় সফল | এমন ছেলেকে সুযোগ্য পাত্র হিসেবে লুফে নেবে অনেকেই | কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে দাদার এই মাত্রায় আপত্তি আছে সেটা আগে কখনো বুঝতে পারেনি কেন সেটাই ভাবার চেষ্টা করছিল | চিন্তার রেশটা কাটলো শিবনাথের মুখে নিজের নাম শুনে |

– তোমার সাথেও আমার কিছু কথা আছে বুবাই |

শিবাজী নিরীহ মুখে বলল,

– খাওয়াটা শেষ করে নিই?

শিবনাথ ভ্রু কুঁচকাতেই তড়িঘড়ি জবাব,

– না মানে আজকে চিংড়ির মালাইকারিটা ভীষণ ভালো হয়েছে। এবারে তুমি যদি এমন কিছু বলো যাতে আমাকেও খাওয়া ছেড়ে উঠে যেতে হয় তাহলে এটা আমার মিস হয়ে যাবে। খেয়ে নিই আগে?

শিবাজীর কথা বলার ভঙ্গিতে এরকম থমথমে পরিস্থিতির মধ্যেও সুমিত্রা ফিক করে হেসে ফেললেন | সেদিকে একবার তাকিয়ে শিবনাথ গম্ভীর গলায় বললেন,

– জীবনে সমস্ত কিছু ইয়ার্কি নয় বুবাই | কিছু কিছু বিষয়ে সিরিয়াস হতে হয়।

কোন রকমে একটা হুঁ বলেই তাড়াতাড়ি বাটি থেকে চিংড়ি মাছের মালাইকারি পাতে ঢেলে ভাত মাখতে শুরু করলো শিবাজী। ছেলের কান্ডকারখানা দেখে ক্ষুব্ধ হলেও শিবনাথ অপেক্ষা করতে লাগলেন ওর খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। দ্রুতগতিতে ভাতটুকু শেষ করে শিবাজী বাবার দিকে ফিরল।

– হ্যাঁ, এবারে বলো।

শিবনাথ বিনা ভনিতায় বললেন,
– আমার কানে এসেছে তুমি আমাদের মডেল সমর্পিতা মল্লিক এর সঙ্গে একটু বেশিই ঘোরাঘুরি করছো। এই কথাটা কি সত্যি?!

শিবাজী ভ্রু কপালে তুলে খানিকক্ষণ বসে রইল | তারপরে বলল,

– তোমার চরেরা তোমাকে ঠিক কি খবর দিয়েছে আমি জানি না, তবে ঘোরাঘুরি বলতে যদি মাঝেমধ্যে কফি খেতে যাওয়া বা কোন ইভেন্টে একসাথে যাওয়া হয়, তাহলে হ্যাঁ |
– এই মেয়েটির প্রতি তোমার এই বিশেষ উৎসাহের কোন কারণ?

শিবাজী মাথা নাড়ল

-কারণ বলতে কি জানতে চাইছো বুঝতে পারছি না! তবে আমি সমর্পিতাকে ভালো বন্ধু মনে করি |
– কোম্পানির মালিক যখন এমপ্লয়িকে বন্ধু মনে করে তখন বুঝতে হবে তাদের মধ্যে একটা বিশেষ কোন সম্পর্ক আছে।
– দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও | কে মালিক? আমি কোনো মালিক-টালিক না। আমি শিবনাথ সেনের ছেলে, সৌভিক সেনের ভাই। এবং আমি আইটি কোম্পানিতে চাকরি করি।

শিবনাথ বিরক্ত মুখে বললেন,

– সে তুমি মুখে যতই অস্বীকার করো, তুমি যে স্বস্তিকের অংশ সেটা তো মিথ্যে নয় | সে ক্ষেত্রে সমর্পিতা তোমারও এমপ্লয়ি হল। আমি জানতে চাইছি তুমি মেয়েটির বিষয়ে কোন বিশেষ সম্পর্কের কথা ভেবেছো কিনা?

শিবাজী কয়েক মুহূর্ত ভাবার সময় নিয়ে বলল,

– না সেভাবে কিছু ভাবি নি |
– ভালো কথা। যদি ভবিষ্যতে কিছু ভাবতে চাও তাই জন্য আগে থেকে জেনে রাখো এই সম্পর্কে আমার মত নেই।
– মানে? কেন সেটা জানতে পারি?
– অবশ্যই! আমার বাড়িতে কোন মডেল বউ হয়ে ঢুকবে না |

এবারে শিবাজী হেসে ফেলল,

– এটা কি ধরনের হিপোক্রেসি হলো বাবা? তোমার কোম্পানি, সেখানে তুমি একজনকে চাকরি দিয়েছো। সেটা নিশ্চয়ই একটা ভদ্র গোছের সম্মানজনক চাকরি। তাহলে সেখানে চাকরি করে এমন মেয়ে তোমার বাড়ির বউ হওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে গেল কি করে?

শিবনাথ থমথমে গলায় বললেন,

– তুমি এখন আর ছোট নেই বুবাই | তুমি খুব ভালো করেই জানো ঠিক কি কারণে তুমি আর তোমার দাদা মাকে ছাড়া বড় হয়েছ | আমি চাইনা পরবর্তী প্রজন্ম সেই একই ধরনের শৈশব ভোগ করুক |

শব্দ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন শিবনাথ | অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল শিবাজী | সবসময় বোঝা যায় না বটে, কিন্তু এত বছর পরেও লোকটা সেই পুরনো ক্ষতটা বুকের মধ্যে জমিয়ে রেখেছে!

শিবনাথ উঠে যাওয়ার পরে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করলো শিবাজী | তারপর সুমিত্রার দিকে ফিরে বলল,

– তোমার মনে হয় বাবা সিরিয়াস?

সুমিত্রা তখনো শিবনাথের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলেন | শিবাজীর কথায প্রথমে বুঝতে না পেরে বললেন,

– অ্যাঁ! কি বলছিস?

শিবাজী আবারও প্রশ্ন করল,

– না মানে, এই যে বাবা বলল সমর্পিতাকে মেনে নেবে না, তোমার মনে হয় এটা বাবা সিরিয়াসলি বলল?

সুমিত্রা খানিক্ষণ তাকিয়ে রইলেন শিবাজীর দিকে | বৌদি চলে যাওয়ার সময় এই ছেলেটা একেবারেই ছোট | সুমিত্রা ভেবেই পান নি এত ছোট দুধের শিশুকে ফেলে রমলা কি করে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পেরেছিলেন | সেই সময় নিজের সমস্তটুকু স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিলেন শিবাজী কে | সৌভিকও তখন ছোট ছিল ঠিকই, কিন্তু বরাবরের বুঝদার ছেলেটি বাড়ির মা-বিহীন সঙ্গীন অবস্থার গুরুত্বটা অনুধাবন করে নিয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি। তাই যথাসম্ভব ছোট্ট ভাইকে সামলানোর জন্য পিসিমাকে সাহায্য করতে চাইত । আড়াই বছর পরে রমলা যেদিন ফের সেন ভিলাতে পা রেখেছিলেন, তখন দুই ছেলেকে দোতলার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শিবনাথ | নিচে বসার ঘর থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল রমলাকে | নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, দুই ছেলের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শিবনাথ রাজি হননি। দৃঢ় স্বরে বলেছিলেন,

– তোমার ছেলেদের দু বছর আগে তোমাকে দরকার ছিল বেশি রমলা । এখন তারা মাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছে। এমন স্বার্থপর মায়ের ছায়া তাদের গায়ে না পড়লেই মঙ্গল | কে বলতে পারে আজ তুমি ফিরে এসে কাল আবার বৃহত্তর আঘাত দিয়ে ওদের জীবন থেকে চলে যাবে না?

বিবাহ বিচ্ছেদের কাগজপত্র তৈরি করাই ছিল, রমলা সই করে দিয়েছিলেন | টাকা পয়সা দিতে চেয়েছিলেন শিবনাথ, কিন্তু রমলা নিতে চাননি | সুমিত্রাকে সজল চোখে রান্নাঘরের পাশ থেকে উঁকি দিতে দেখে রমলা ওর উদ্দেশ্যে বলে গিয়েছিলেন,

– আমি জানি তুমি কিভাবে আমার ছেলেদের আগলে রেখেছো সুমি। এ বাড়িতে আমার তো আর জায়গা হলো না। মায়ের অধিকার দাবি করার মুখও নেই আমার, তাই তুমিই ওদের ভালো করে রেখো। মায়ের অভাব বুঝতে দিও না। আর আমার মতন কোন মেয়েকে ওদের জীবনে আসতে দিও না।

বেরিয়ে যাওয়ার পরে দাদার পায়ে আছড়ে পড়ে বৌদিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলেন সুমিত্রা | তাঁর মনে হয়েছিল যে রমলা আগে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলেন সে আর যে আজ এ বাড়িতে এসেছিল তারা এক মানুষ নয় | নিজের ভুল বুঝে রমলার জন্মান্তর হয়েছে, অনুশোচনার আগুনে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়েছেন তিনি | কিন্তু শিবনাথ রাজি হননি, তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

– তোমাকে কি জিজ্ঞাসা করলাম আর তুমি কি সব ভেবে চলেছ?

শিবাজীর প্রশ্নে বর্তমানে ফিরলেন সুমিত্রা, তারপর ধীরে ধীরে বললেন,

– আমার মনে হয় না দাদা মেনে নেবে |

– কিন্তু পিপিয়া, মা একটা ভুল করেছিল মানেই মডেলিং কিম্বা অভিনয় জগতের সকলে একই ধরনের মানসিকতার হবে সেটা ধরে নেওয়াটা ঠিক নয়, তাই না ?
– হয়তো নয় রে বুবাই, কিন্তু জানিস তো মানুষ নিজের সাথে ঘটে যাওয়া বিপর্যয় নিজের সন্তানের জীবনে আসতে দিতে চায় না | মেয়েটির সাথে তোর বন্ধুত্ব আছে থাকুক, কিন্তু ওকে তোর জীবন সঙ্গিনী করার কথা ভাবিস না |

শিবাজী চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,

– আমি ইনফ্যাক্ট ততদূর কিছু ভাবিওনি। সবে তো চাকরিতে ঢুকেছি। আগে নিজে ঠিকঠাক দাঁড়াই তবে না! সমর্পিতা ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডটাকে ওর ক্যারিয়ার হিসেবে পছন্দ করেছে ঠিকই কিন্তু ও তো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষা এবং ভ্যালুজ ওর রক্তে | সেই মেয়ে সংসারের গুরুত্ব বুঝবে না তা হয় না কি!

মুখ হাত ধুয়ে দোতলায় গিয়ে দেখল দাদার ঘরের দরজা বন্ধ | দু চার বার নক করার পরেও ভিতর থেকে কোন আওয়াজ না পেয়ে গলা তুলল,

– কিরে না খেয়ে দেয়ে তো চলে এলি, আবার দরজা বন্ধ করে আছিস! দরজা খোল…

শিবাজীর গলা পেয়ে দরজা খুলে দিয়ে ফের নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো সৌভিক | শিবাজী গিয়ে দাদার পাশে লম্বা হয়ে শুল

– কি হয়েছে রে তোর? বিয়ে করবি না বললি কেন?
– প্লিজ বুবাই, তুই আবার শুরু করিস না

শিবাজী আলতো করে সৌভিকের গায়ে একটা গুঁতো মেরে বলল,

– আরে আমাকে বলতে কি অসুবিধা তোর?

সৌভিক তখনো চুপ | শিবাজী উঠে বসে নানান রকম ভাবে চেষ্টা করতে লাগলো দাদার মুখ দিয়ে কথা বের করার | কিছুতেই কিছু না হওয়ায় বিরক্ত হয়ে উঠে পড়ল,

– আমার ধারণা ছিল আমরা দুজনে নিজেদের মধ্যে কিছু সিক্রেট রাখি না। তুই আজকে সেটা ভুল প্রমাণ করে দিলি

শিবাজী বিরক্ত মুখে ঘর থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল, দরজায় হাত ছোঁয়ানোর ঠিক আগের মুহূর্তে সৌভিকের থমথমে গলার আওয়াজ শুনতে পেল।

– আই অ্যাম গে বাবাই

ঘরের মধ্যে একটা বজ্রপাত হলো যেন | শিবাজী পিছন ফিরলো, বিস্ময়ে চোখ বড় বড়।

– কি বললি!

সৌভিক আপন মনে বলতে লাগলো,

– আই অ্যাম গে | কোনো মেয়েকে দেখে আমার কোনো ফিলিংস হয় না, কোন শারীরিক আকর্ষণ বোধ করি না | প্রথমে ভাবতাম মে বি আমার হরমোনাল সমস্যা, আমি ইম্পোটেন্ট, বাট আমি পরে বুঝেছি আমার ইনক্লিনেশন ডিফারেন্ট…

শিবাজী কি বলবে বুঝে পাচ্ছিল না | আজকাল ওরা সকলে নিজেদেরকে অনেক বেশি আধুনিক মনস্ক ভাবতে ভালোবাসে | সমকামিতাকে আগের মতন আর অন্যায় বা অস্বাভাবিক ভাবা হয় না | এল. জি. বি. টি. কিউ নিয়ে কলেজে এবং অফিসেও বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়। কিন্তু সবকিছুই যেন ঘরের বাইরে স্বাভাবিক লাগে, ঘরের ভেতর এসব শব্দগুলোর প্রবেশ যেন বারণ | দাদার মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পরে শিবাজীর মনে হচ্ছিল ও ভুল শুনেছে বা ভুল বুঝেছে | পায়ে পায়ে দাদার দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,

– আর ইউ শিওর? আই মিন তোর বুঝতে কোন ভুল হচ্ছে না তো? মে বি এটা কোন মেডিকেল সমস্যা! হয়তো কোনো ট্রিটমেন্ট দরকার?

অনেকক্ষণ বাদে হেসে উঠল সৌভিক।

– দ্যাখ ভাই তুই আজকালকার ছেলে হয়ে এরকম রিয়াক্ট করছিস, তাহলে জাস্ট ইমাজিন বাবা শুনলে কি বলবে! তাই আমি সেফ রাস্তাটাই বেছে নিয়েছি | আমি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | একটি মেয়েকে আমি শারীরিকভাবে সুখী করতে পারবো না তো বটেই তার প্রতি আমার কোন আকর্ষণও থাকবে না বরং উল্টে এমন এক ধরনের সম্পর্কের প্রতি আমি সবসময় অ্যাট্রাক্টেড থাকবো যেটা এখনো আমরা সামাজিকভাবে মেনে নিতে পারিনি | একটা মেয়ের লাইফ আমি জেনেশুনে নষ্ট কোন দিনই করতে চাইবো না |

শিবাজী বিস্ফারিত চোখে খানিকক্ষণ সৌভিকের দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সৌভিকের হাতের উপরে হাত রাখল

– আমার কাছেও খুব কঠিন বিষয়টা মেনে নেওয়া দাভাই, কিন্তু তোকে কথা দিলাম সব সময় তোর পাশে থাকবো, যা হয়ে যাক…

ফোনটা সশব্দে বেজে উঠতে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলো শিবাজী | দ্বৈপায়ন ফোন করেছে | ফোনটা না ধরে সাইলেন্ট করে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে ওডিসিতে এসে ঢুকলো | ওডিসি ফাঁকা, একা দ্বৈপায়নই ফোন কানে নিয়ে বসে আছে | ওকে দেখেই বলল,

– ও তোকেই তো ফোন করছিলাম। ছিলি কোথায়? চল নিচে ক্যাফেটেরিয়ায় সবাই অপেক্ষা করছে
– কেন?
– আরে নবারুণের জন্মদিন, কেক আনা হয়েছে |

ওদের টিমে এই একটা নিয়ম চালু আছে, কারো জন্মদিন থাকলে একটা বড় কেক এনে ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে কেক কাটা হয় | আলাদা করে কোন গিফট দেওয়া হয় না, তবে জন্মদিনের দিন তাকে খানিক আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া থাকে। এই নবারুণ ছেলেটি বহু বছর এই টিমে রয়েছে | ডেভলপার হিসেবে যে খুব ভালো তা নয়, তবে নিতান্ত ভদ্র এবং ভালো ছেলে। কোন কাজে না নেই এবং নতুন কিছু শিখতে সবসময় আগ্রহী। শিবাজীর খুব পছন্দের | ক্যাফেটেরিয়ায় পৌঁছে দেখল সকলে ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে | সাবর্ণদা ওদের দেখেই বললেন,

– এই তো শিবু আর দীপু হাজির | কেক কাটিং শুরু করো | রাজন্যাকে তো পাঠিয়েছিলাম শিবাজী তোমাকে ডাকতে, ও এসে বলল তুমি নাকি এক ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছো?

শিবাজী হাসলো

– হ্যাঁ মানে তখন একটা দরকারি ফোন এসেছিল, কথা বলছিলাম।

রাজন্যা ফস করে বলে উঠল,

– মোটেই তখন ফোনে কথা বলছিলেন না, ফোন সামনে টেবিলের উপর রাখা ছিল |

শিবাজী একটু অপ্রস্তুতভাবে সাবর্ণদার দিকে তাকাতেই সাবর্ণদা “বুঝে গেছি” গোছের ভঙ্গি করে মাথা নাড়লেন

– চলো চলো, আর লেট নয়, এবার কেক কাটা হোক। হইহই করে কেক কাটা শুরু হলো |

(ক্রমশ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে