হৃদ মাঝারে পর্ব-০৭

0
477

#হৃদ_মাঝারে (পর্ব ৭)

তিতলিদের বাড়িতে যখন বেল বাজালো রাজন্যা, ঘড়িতে তখন সাতটা বাজতে পাঁচ | দরজা খুললেন সুমিত্রাই, রাজন্যা তড়িঘড়ি বলে উঠলো,

– ভেরি সরি পিসিমা। আসলে ঠিক বেরোবার সময় একটা এমন দরকারি কাজ এসে গেল যে না শেষ করে আসতেই পারলাম না।

সুমিত্রা হাসলেন।

– ও ঠিক আছে, একদিন একটুখানি দেরি হলে কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না

ঘরে ঢুকে জুতো খুলতে খুলতে মুখ বেজার করল রাজন্যা,

– দেরি হতো না। আসলে আমার অফিসে যে বস, সে একেবারে রামগরুড়ের ছানা | আমি কাজটা আর একটা ছেলেকে দিব্যি বুঝিয়ে দিয়ে এসেছিলাম, ও করেও ফেলত | কিন্তু না! আমাকেই করে আসতে হবে |

ওর কথা বলার ধরনে হো হো করে হেসে ফেললেন সুমিত্রা | ঠিক এই জিনিসটারই অভাব ছিল এ বাড়িতে | স্বতঃস্ফূর্ত মজা মেশানো আনন্দের |

– রামগরুড়ের ছানা মানে কি? বেবি রামগরুড়? রামগরুড় কি অ্যানিমেল? আমি তো দেখিনি কখনো!

বিকেল হওয়ার পর থেকেই তিতলি বেশ কয়েকবার সুমিত্রাকে জিজ্ঞাসা করে গেছে কখন সাড়ে ছটা বাজবে। সাড়ে ছটা বেজে যাওয়ার পরেও ফেয়ারি সিস্টার আসছে না দেখে রীতিমত কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠেছিল ওর মুখ খানা | দিদি একটা কাজে আটকে গেছে বলে আসতে একটু দেরি হবে, এই কথাটা শোনার পরেও প্রতি দুই মিনিটে একবার করে দোতলার ব্যালকনি থেকে নীচে উঁকি দিয়ে দেখছিল কেউ এল কিনা | কলিং বেলের আওয়াজ পেয়েই লাফ দিয়ে নীচে নেমে এসেছে |

টপ করে তিতলিকে কোলে তুলে নিয়ে রাজন্যা বলল,

– চলো তোমাকে ছবি এঁকে দেখাচ্ছি রামগরুড় কেমন দেখতে হয়!

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সুর করে কবিতাটা শুনিয়ে দিল –

রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
“হাসব না–না, না–না !”
সদাই মরে ত্রাসে– ঐ বুঝি কেউ হাসে !
এক চোখে তাই মিটমিটিয়ে
তাকায় আশেপাশে ।
ঘুম নেই তার চোখে আপনি ব’কে ব’কে
আপনারে কয়, “হাসিস যদি
মারব কিন্তু তোকে !”

মিনিট চল্লিশেক টানা পড়াশোনার পরে একটা স্টোরি ব্রেকের বায়না হল | রাজন্যার অবশ্য গল্প বলতে কখনোই আপত্তি নেই। ছোটবেলা থেকে সে নিজেও গল্পের বইয়ের পোকা। নিজের বিশেষ বই না থাকলেও জ্যাঠতুতো দাদা দিদিদের থেকে বই নিয়ে নিয়ে পড়েছে | একটু বড় হবার পরে লাইব্রেরী থেকে বই আনিয়েছে | তাই ছোটদের বলার মতন গল্প তার ঝুলিতে অনেক।

– সিস্টার, আমি একটু বাথরুম থেকে আসছি…

বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিতলি রাজন্যার দিকে কাঁচুমাচু হয়ে তাকিয়ে বলল,

– আমি একটু নিচে ঠাম্মির কাছ থেকে ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসব? ফ্রকটা ভিজে গেল |
– ওহ তাই নাকি? তোমার অন্য ফ্রক এখানে আছে? তাহলে আমি চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি |
– হ্যাঁ আছে তো, আমার ড্রেস তো সব এখানেই থাকে

গোলাপি রঙের ওয়ার্ডরোব খুলে একটা ফ্রক বের করে আনলো তিতলি । রাজন্যার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দুই হাত মাথার উপর তুলে দাঁড়াল | ওর পরনের ফ্রকের চেইন খুলে মাথা গলিয়ে জামাটা বের করে আনতেই একটা দৃশ্য দেখে থমকে গেল রাজন্যা। তিতলি পেটের কাছে একটা বেশ বড় কাটা দাগ, পুরনো ক্ষতচিহ্ন, সেলাই এর দাগ রয়েছে |

– তিতলি! এটা কি? কিসের দাগ?

তিতলি ঠোট উল্টাল,

– কি জানি! বাবাইয়া বলেছে অনেক ছোটবেলায় আমার কিরকম ভাবে জানি কেটে গিয়েছিল..

অনেক ছোটবেলায়! তিতলির এখনই বয়স কত? আরো ছোটবেলায় একটা দুধের শিশুর এরকম একটা দুর্ঘটনা কিভাবে হতে পারে? বাড়ির লোকে কি বাচ্চাটার কোন খেয়ালই রাখত না? রাজন্যার কেমন যেন রাগ হতে থাকে তিতলির বাবা-মায়ের উপরে | খানিক অন্যমনস্ক ভাবে একটা বেফাঁস প্রশ্ন করে বসে,

– আচ্ছা তিতলি তোমার মাম্মাম কে তোমার একটুও মনে নেই না?

অপ্রত্যাশিতভাবে ফিক করে হেসে ফেলল তিতলি

– মনে থাকবে না কেন ? মাম্মাম তো খুব বিজি, তাই আমাদের সাথে থাকতে পারে না | বাবাইয়া বলেছে, দরকারি কাজগুলো শেষ হয়ে গেলে মাম্মাম আবার এখানে চলে আসবে।

বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল রাজন্যার । তাহলে প্রথম দিন যে পিসিমা বললেন তিতলির মা নেই! কিছু বলার আগেই প্রবল উৎসাহে তিতলি দৌড়ে গিয়ে আবার তার ওয়ার্ডরোব খুলে বের করে নিয়ে এসেছে একটা ছবি

– এই দেখো আমার মাম্মামের ছবি | কি সুন্দর দেখতে না মাম্মামকে? এক্কেবারে কুইনের মত!

একটু অস্বস্তি নিয়েই তিতলির হাত থেকে ছবিটা নিল রাজন্যা | ঠিক ফটোগ্রাফ নয়, কোন একটা রঙিন পত্রিকা, পোস্টার বা ম্যাগাজিন থেকে কাটা ছবি | ছবির মেয়েটির মুখ খুব চেনা চেনা লাগছে | সত্যিই সুন্দরী | তার সঙ্গে মেকাপের পালিশ এবং ক্যামেরার কারসাজিতে অনবদ্য লাগছে। অফ শোল্ডার ক্রিম রঙা গাউন পরনে, গলায় কানে হীরের গয়না, বাদামী রঙের হাইলাইট করা চুল চূড়ো করে মাথার উপর দিকে বাঁধা | তির্যক চোখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত সুন্দর ভঙ্গিমায় হাসছে | একেই কি লাস্যময়ী কটাক্ষ বলে?

– কেমন দেখলে? আমার মাম্মাম বিউটিফুল না?
– হ্যাঁ তিতলি, তোমার মাম্মাম খুব সুন্দর | আর শুধু তোমার মাম্মাম নয়, তুমিও খুব খুব সুন্দর…

এক গাল হেসে হাত বাড়িয়ে ছবিটা নিতে নিতে তিতলি বলল,

– দাঁড়াও, ছবিটা আবার লুকিয়ে রাখি!

রাজন্যার কপালে ভাঁজ পড়ল |

– কেন লুকিয়ে রাখবে কেন?

তিতলি ওয়ার্ডরোবে ফের ছবিটাকে ঢুকিয়ে রেখে রাজন্যার সামনে এসে বলল,

– এইটা কিন্তু তোমার আর আমার সিক্রেট ফেয়ারি সিস্টার। আমি মাম্মামের ছবি দেখতে চাইলে বাবাইয়া খুব রাগ করে | তাইতো ঠাম্মির ঘরের একটা বই থেকে আমি এই ছবিটা কেটে নিয়ে আমার কাছে রেখেছি
– হুম বুঝেছি…

রাজন্যা নিজের ঠোঁটে তর্জনী চেপে চোখ বড় বড় করে বলল,

– ঠিক আছে, এটাও আমাদের একটা সিক্রেট | যাক গে, এবার চলে এসো দেখি, লক্ষ্মী মেয়ের মতন | আমরা আজকে আরেকটু পড়াশুনা করে নিই!

পড়াশোনার পাট শেষ করে ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে এলো রাজন্যা। এর মাঝে অবশ্য কৈলাসদা গিয়ে এক কাপ কফি আর স্যান্ডউইচ দিয়ে গিয়েছিল | রাজন্যা তাকাতেই গম্ভীর গলায় বলে গিয়েছিল,

– আজকে তো অফিস থেকে এসেছো। আজকেও কি কিছু খেয়ে এসেছো নাকি? বলেছি না, এ বাড়িতে আসতে গেলে পেটে জায়গা রেখে আসবে?

হাসতে হাসতেই স্যান্ডউইচ এর প্লেট সামনে টেনে নেওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর ছিল না |

সুমিত্রা টিভি দেখছিলেন | রাজন্যাকে নেমে আসতে দেখে উঠে ওর কাছে এলেন

– ছাত্রী তোমাকে ছাড়লো? ওর হাবভাব দেখলে তো মনে হয় দিদিমণিকে বাড়িতে রেখে দিতে পারলেই খুশি হয়!

রাজন্যা হাসিমুখে মাথা নাড়ল

– আমারও ওর সাথে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগে পিসিমা | তিতলি ভীষণ মিষ্টি বাচ্চা |

দুই এক মুহূর্ত থেমে ফের বলল,

– আচ্ছা পিসিমা একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
– হ্যাঁ হ্যাঁ, কি বলো?

কথাটা বলার আগে সামান্য ইতস্তত করল,

– আসলে তিতলি টয়লেটে গিয়ে জামা ভিজিয়ে ফেলেছিল | ওর জামা বদলে দিতে গিয়ে দেখলাম পেটের কাছে একটা খুব বড় কাটা দাগ | মনে হল সেলাইয়ের দাগও আছে। ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম | ওর মনে নেই কি হয়েছিল | কি হয়েছিল পিসিমা?

মুহূর্তে থমথমে হয়ে উঠল সুমিত্রার মুখমণ্ডল | একটা বিষাদের ছায়া নেমে এল হাসিখুশি মানুষটার চোখে মুখে | কিছুক্ষণ চুপ করে রাজন্যার দিকে তাকিয়ে থেকে খুব ধীরে ধীরে বললেন,

– তিতলির খুব ছোটবেলায় একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল | ও খুবই ছোট ছিল, তাই জন্য ওর মনে নেই | আর আমরাও সেই সময়টাকে মনে করতে চাই না | তোমার কাছেও একটা রিকুয়েস্ট, তুমি প্লিজ এই প্রসঙ্গে আর তিতলির সঙ্গে কোন কথা বোলোনা |

রাজন্যা একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়ল,

– নানা পিসিমা। এভাবে বলছেন কেন? আসলে আমি বুঝতে পারিনি | আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি এই নিয়ে কখনোই তিতলির সাথে কোন কথা বলবো না | আমি আসি তাহলে…

রাজন্যা বেরিয়ে যাবার আধঘন্টাটাক পরেই বাড়ি ফিরল শিবাজী |

– ফ্রেশ হয়ে আয়, চা খাবি তো?
– হ্যাঁ চা খাব…

শ্যু রাকে জুতো জোড়া তুলে ঘুরে দাঁড়াতেই সুমিত্রার চোখে মুখে আলগা থমথমে ভাবটা চোখে পড়ে গেল শিবাজীর। একটু অবাক হয়ে এগিয়ে গেল।

– পিপিয়া! তোমার চোখমুখ এরকম লাগছে কেন?
– কি রকম?
– কেমন যেন একটা থমথমে! কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করছো বা দুঃখ পেয়েছ | কি হয়েছে?
– কিছু না, তুই হাত মুখ ধুয়ে আয়..
– কিছুতো হয়েছে পিপিয়া | তোমার মন খারাপ হলে আমি বুঝতে পারব না!

একটা বিষন্ন হাসি সুমিত্রার ঠোঁটের কোণ ছুঁয়ে গেল | হাত বাড়িয়ে শিবাজীর চুলে একটু নাড়াচাড়া করে বললেন,

– আচ্ছা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, চা খেতে খেতে কথা হবে

টিভিতে কার্টুন দেখতে গিয়ে কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায়নি তিতলি, দরজার কাছে শিবাজীকে দেখেই ঝপ করে এক লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে দৌড়ে এসে বাবার কোমর জড়িয়ে ধরল।

– বাবাইয়া!

মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে এক পাক ঘুরিয়ে ফের খাটে বসিয়ে শিবাজী নিজে খাটের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

– প্রিন্সেস, হাউ ওয়াজ ইওর ডে টু ডে?

একগাল হেসে তিতলি জবাব দিল,

– ওয়ান্ডারফুল! আজকে তো ম্যাম এসেছিল! ম্যাম যেদিন যেদিন আসে সেদিন সেদিন আমার ডে ওয়ান্ডারফুলই হয়!
– বাব্বা, তোমার তো তাহলে ম্যামকে খুব পছন্দ হয়েছে?
– হ্যাঁ বাবাইয়া! ম্যাম খুব খুব খুব খুব খুব খুব খুব খুব খুব খুব খুব ভালো…

শিবাজী হেসে ফেলল

– ওরে বাবা, এত্ত ভালো? বাবাইয়ার থেকেও ভালো নাকি?

তিতলি একটু থমকে গেল | চোখ সরু করে শিবাজীর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কোমরে হাত দিয়ে রাগের ভঙ্গিতে বলল

– ম্যাম তো ম্যাম। বাবাইয়া তো বাবাইয়া। ম্যাম আর বাবাইয়া কি একই রকম ভালো হতে পারে নাকি?

হো হো করে হেসে উঠলো শিবাজী | তার ছোট্ট একরত্তি মেয়ে একটা দারুণ সত্যি কথা বলে দিয়েছে। প্রতিটি মানুষ তার নিজের জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ | তার সাথে অন্য একজনের তুলনা করা যায় না।

– একদম ঠিক বলেছো সোনা | এবারে আমাকে দেখাও দেখি আজকে ম্যামের কাছে কি কি পড়াশোনা করেছ |

তিতলি সোৎসাহে আজকের পড়াশোনার বই খাতা নিয়ে এলো | পাতা উল্টে দেখে শিবাজী খানিক নিশ্চিন্ত হলো | মেয়েটি আর যাই হোক, ফাঁকিবাজ বা নির্বোধ নয় | খাতা রেখে দেওয়ার সময় পাখার হাওয়ায় হুট করে ফর ফর করে অনেকগুলো পাতা উড়ে গিয়ে শেষ পাতায় চলে আসতেই শিবাজীর চোখ বড় বড় হয়ে গেল | চট করে হাত দিয়ে পাতাটা চেপে পেন্সিল দিয়ে আঁকা ছবিখানা দেখিয়ে তিতলিকে জিজ্ঞাসা করল,

– তিতলি সোনা, এটা কিসের ছবি? কে এঁকেছে?

তিতলি ফিক করে হেসে ফেলল,

– এটা তো রামগরুড়ের ছবি | ম্যাম এঁকেছে |

শিবাজী খানিকক্ষণ বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো | মেয়েটির আঁকার হাত সত্যিই চমৎকার বলতে হবে। সুকুমার রায়ের রামগরুড়ের ছবিটা প্রায় অবিকল এঁকে দিয়েছে তিতলির খাতার পিছনের পাতায় | একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো ঠোঁটে |

– তা তোমার ম্যাম আজকে হঠাৎ রামগরুড়ের ছবি আঁকলো কেন?
– রামগরুড় তো স্মাইল করে না তাই না বাবাইয়া? যতই তুমি ফানি কথা বলো, রামগরুড় কিছুতেই স্মাইল করে না। ফানি কথা বললে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায় | ম্যামের অফিসের যে বস, সে এই রকম রামগরুড় । তাই জন্য ম্যাম আমাকে ছবি এঁকে দেখাচ্ছিল |

আরো একবার হো হো করে হেসে উঠতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল শিবাজী | নাহ্ পিপিয়া তিতলির জন্য ভুল মানুষকে নির্বাচন করেননি বলেই মনে হচ্ছে |

অফিস থেকে ফিরে স্নান করা শিবাজীর পুরনো অভ্যাস | স্নান সেরে ঘরের পোশাক পরে নীচে নেমে দেখল সুমিত্রা দুটো কাপে দার্জিলিং টি ঢেলে ফেলেছেন

– তুমি এখন খাবে? এই অসময়ে?

নিজের কাপটা টেনে নিতে নিতে বলল শিবাজী | সুমিত্রা হাসলেন,

– এক আধ দিন নিয়মের বাইরে গেলে কিছু হয় না…

শিবাজী সোফার উপরে দুই পা তুলে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুমিত্রার দিকে তাকাল,

– এবারে বলো, কি হয়েছে? মন খারাপ কেন তোমার?

এদিক ওদিক কথা না ঘুরিয়ে সুমিত্রা সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন,

– আচ্ছা বুবাই, এভাবে কত দিন চলবে?
– এভাবে মানে? কিভাবে?
– এভাবে মানে, তিতলি এরকম মা বাবা ছাড়া একলা একলা পুরো শৈশবটাই কাটাবে? ও যখন বড় হবে তখন ওর ছোটবেলার স্মৃতিতে কি থাকবে? টিভি, কাজের লোক আর চোখে দেখতে পায় না এইরকম একজন বয়স্ক ঠাকুমা? ও বাবা মায়ের সাথে কোথাও বেড়াতে গেল বা বাড়িতে বোর্ড গেম খেলল, পার্কে গেল, গল্প শুনল সেরকম কোনো স্মৃতিই তৈরি হবে না ওর?

মুহূর্তে ঘরের মধ্যে একটা দম চাপা নিস্তব্ধতা নেমে এলো | শিবাজীর চোখের মণি স্থির | সুমিত্রা জানেন তিনি যে প্রসঙ্গ তুলেছেন তা অস্বস্তিকর এবং শিবাজীর অপছন্দের | তবু জেদী, একগুঁয়ে দৃষ্টিতে তিনিও তাকিয়ে রইলেন শিবাজীর দিকে | বেশ কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল | একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিবাজী কাপে একটা বড় চুমুক দিল, তারপরে অস্বাভাবিক শান্ত গলায় বলল,

– কি চাও পিপিয়া ?

সুমিত্রার কণ্ঠস্বর সামান্য কেঁপে গেল,

– বললাম তো! তিতলির জন্য একটা স্বাভাবিক শৈশব, কৈশোর চাই | ওর জন্য একটা পরিবার চাই |
– আমরা তাহলে কি? আমি, তুমি আমরা তিতলির পরিবার নই?
– শুধুমাত্র তর্ক করার জন্য তর্ক করিস না বুবাই | তুই নিজেও জানিস মেয়েটা বঞ্চিত হচ্ছে। তুই অফিস, ব্যবসা সামলে ওকে কতটুকু সময় দিতে পারিস? আমি বাড়িতে থাকলেও নিজের শরীরের জন্য সবটুকু সময় ওকে দিতে পারি না | নতুন টিচার যে মেয়েটি এসেছে, তাকে ও কিভাবে আঁকড়ে ধরেছে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবি না। কেন বলতো? প্রতিটা শিশুই চেতনে হোক বা অবচেতনে তার মাকে চায়। মাকে না পেলে মায়ের মতন কারোকে খোঁজে, যে তাকে নিঃশর্ত ভালবাসবে | যে কোনভাবেই হোক তিতলি ওর টিচারের সাথে এই দুই তিন দিনেই সেই রকম একটা বন্ডিং বানিয়ে ফেলেছে | সেটা দেখে আমার আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাটার কি দোষ বুবাই?
– তিতলির যে কোনও দোষ নেই সে কি আমি জানিনা পিপিয়া ? কিন্তু এখানে আমি কি করবো তুমি বলো? তিতলির মাকে আনা যে সম্ভব নয়, তা তো তুমি জানো! সে তো তার মাতৃত্বকেই অস্বীকার করেছে। নিজেও কি প্রাণে ধরে পারবে তার হাতে তিতলিকে তুলে দিতে?
– না!

তীব্র তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠলেন সুমিত্রা

– তার কথা আমি বলছিও না | ওই মেয়ে আমাদের পরিবারের কাছে একটা অভিশাপ | ওই অভিশপ্ত সময়টুকু না থাকলে আজ এই সেনভিলার অন্যরকম রূপ হত | কিন্তু সে কথা আমি মনে করতে চাই না | তুই আরেকবার বিয়ে কর বুবাই!

আকুতি ঝরে পড়ল সুমিত্রার কন্ঠে | শিবাজী চায়ের কাপ সেন্টার টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো।

– কেন এরকম অসম্ভব অনুরোধ আমাকে করছো পিপিয়া ? যদি চাও আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেয়ের সাথে আরো সময় কাটাই, আমি তাই করবো | কিন্তু আমাকে আর দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কথা বলো না | আমি পারবো না | কোনো মহিলার থেকে আরও আঘাত নেওয়ার মতন শক্তি আমার কাছে আর অবশিষ্ট নেই |
– কিন্তু বুবাই…
– আমি তোমার কাছে হাতজোড় করছি পিপিয়া | আমি তো একটা ঘটনা চোখে দেখেছি আর অন্য ঘটনাটার শুধুমাত্র ফল ভুগেছি | তুমি তো দুটো ঘটনাই সামনে থেকে চোখে দেখেছো পিপিয়া! আমি অভিশপ্ত, আমার পক্ষে…
– বুবাই!!

সুমিত্রার চাপা কিন্তু দৃঢ় কন্ঠস্বরে মুখের কথাটা শেষ না করেই শিবাজী বুকশেলফের একটা নির্দিষ্ট তাকের পেছনদিকে লুকিয়ে রাখা সিগারেট আর লাইটারটা নিয়ে সদর দরজা খুলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল | সুমিত্রা আটকাতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের জায়গায়। ছেলেটার স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করেছেন | কিন্তু তিনিও তো মা | বাইরে এরকম কাঠিন্যের মুখোশ পরে থাকলেও ভেতরে ভেতরে কি ছেলেটা নিজেও গুমরে মরে না? শুধু কি তিতলিরই মা প্রয়োজন? বুবাইয়েরও তো একটা জীবনসঙ্গিনী দরকার। কতই বা বয়স? এখনও অনেকটা পথ চলার বাকি | তিনি আর কতদিন, তারপর? অভিভাবকহীন সকলকে হতে হয় একদিন না একদিন, কিন্তু এমন সঙ্গী বিহীন পথ চলা! তিনি জানেন সে কষ্টের কথা। তিনি ওদের আঁকড়ে ধরে কাটিয়ে দিতে পেরেছেন, কিন্তু মেয়েদের সহ্য শক্তি আর সামলানোর ক্ষমতা অনেক বেশি হয় ছেলেদের থেকে। বুবাই কি পারবে? তাছাড়া তিনি শুধুমাত্র ঘর সামলেছেন, বাইরের চিন্তা তাঁকে করতে হয়নি। তার জন্য মাথার উপরে দাদা ছিলেন | বুবাইকে তো ঘরে বাইরে দুদিক সামলাতে হবে!

শিবাজী বাইরে বেরিয়ে যেতে কৈলাস এসে সুমিত্রার সামনে দাঁড়ালো | কিচেনের পাশের ঘরটা ওর, সেই ঘরের থেকে সবই কানে গেছে। তবু ভদ্রতাবশত তখন বাইরে আসেনি।

– এটা কি করলে বলো তো? তুমি তো জানো ছোড়দাভাই এই প্রসঙ্গে কথা বলতে চায় না!

সুমিত্রা জলভরা চোখ তুলে তাকালেন |

– তুইও এ কথা বলছিস কৈলাস? ছেলেটা কি এভাবেই সারাজীবন থাকবে? আমি তো ওর পিসি নই, আমি তো ওর মা ই! আমি কি ওকে এভাবে দেখতে পারি?

কৈলাস ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো

– ছোট মুখে বড় কথা হবে দিদিমণি | কিন্তু জোর করে কিছু তুমি করতে পারবে না | যদি ছোড়দাভাইয়ের ভাগ্যে সংসার করা থাকে তাহলে সে ঘটনা ঘটবেই। বারবার এ কথা বলে ছেলেটাকে দুঃখ দিও না…

কৈলাস সামনে থেকে সরে যেতে সুমিত্রা ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন | যেসব দিনের কথাগুলো তিনি মনে করতে চান না, সেই কথাগুলোই ঘুরেফিরে মনের মধ্যে চলে আসছে।

সুমিত্রা তার দাদা শিবনাথের থেকে সাত বছরের ছোট | বিয়ের দেড় বছরের মাথায় বিধবা হয়েছিলেন। বিয়ের সময় পাত্রের পুরনো কঠিন রোগ লুকিয়েছিল পাত্রপক্ষ | স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির মানসিক অত্যাচার তো ছিলই, কিন্তু যখন শারীরিক অত্যাচার শুরু হলো তখন আর ওখানে থাকতে পারেননি তিনি | বৌদি রমলা পছন্দ করবেন না জেনেও ও বাড়ির সাথে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়ে সেন-ভিলায় ফিরে এসেছিলেন। সেই সময় টুবাইয়ের তিন বছর বয়স আর রমলা বুবাইকে নিয়ে সাত মাসের প্রেগন্যান্ট | ননদের হুট করে এ বাড়িতে চলে আসা তাঁর পছন্দ না হলেও সুমিত্রা এসেই যেভাবে টুবাইয়ের সমস্ত দায়-দায়িত্ব এবং একই সাথে রমলার যত্নআত্তির কাজ নিজের ঘাড়ে তুলে নিলেন, তাতে চক্ষুলজ্জার খাতিরে আর কিছু বলতে পারেননি তিনি | বুবাইয়ের জন্মের পরেও সুমিত্রার সহজাত মাতৃসুলভ যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা দেখে রমলা ধীরে ধীরে তার ওপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন |

রমলা ছিলেন অসাধারণ সুন্দরী | তাঁর বহুদিনের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল ফিল্মে নামার | সুন্দরী স্ত্রীর মনোবাসনা পূর্ণ করতে শিবনাথ তাঁর এক বন্ধুর সাহায্যে রমলাকে একবার রূপোলি পর্দায় মুখ দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন | কিন্তু পরপর দুবার গর্ভবতী হয়ে পড়ার ফলে রমলার সেই ইচ্ছায় বাধা পড়ে গিয়েছিল। সংসার এবং বাচ্চাদের দায়িত্ব সুমিত্রা নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার পরে রমলা বেশ কিছুটা অবসর সময় পেলেন এবং তাঁর সেই পুরনো ইচ্ছা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। অল্প দিনের মধ্যেই খাদ্যাভ্যাস বদলে এবং ত্বকের ও শরীরের নিয়মিত চর্চা করে রমলা তার পুরনো সৌন্দর্য ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন এবং শিবনাথকে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন |

শহরের অন্যতম বড় ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার শিবনাথ সেনের সাথে রঙিন পর্দার মানুষদের ওঠা বসা ছিলই | রমলার সিনেমায় নামার ইচ্ছাটাকে ছেলেমানুষি শখ ভেবে শিবনাথ তাঁর এক প্রযোজক বন্ধুর সাথে কথা বলে বেশ কিছু টাকা ইনভেস্ট করে রমলাকে একটা ছবির মুখ্য চরিত্র পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করলেন। এ বাড়িতে তখন শিবনাথের বাবা কিংবা মা কেউই বেঁচে নেই | শিবনাথ নিজেও উদার চরিত্রের মানুষ, তাই রমলার সিনেমায় নামা নিয়ে পারিবারিক কোনো আপত্তির সম্মুখীন হতে হলো না। সুমিত্রা মন থেকে বিষয়টাকে পছন্দ না করলেও এ বিষয়ে কোন মতামত দিতে সাহস করেননি।

গোলমাল বাঁধলো সিনেমা রিলিজ হওয়ার পরে | দাদা বৌদির ঘর থেকে চাপা তর্জনের আওয়াজ শুনে বাইরে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন সুমিত্রা | আড়ি পাতার ইচ্ছা না থাকলেও ঘরের ভেতরের কথা কাটাকাটি যেভাবে উচ্চগ্রামে উঠছিল তাতে ঘুমন্ত বাবাইকে বের করে নিয়ে আসার ইচ্ছা হচ্ছিল প্রবল।

– এই নাকি তুমি উদার চরিত্রের মানুষ! এতই যদি সংকীর্ণ মন তোমার তাহলে ঘটা করে আমাকে সিনেমায় নামার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলে কেন?
– তুমি সে সুযোগের এরকম অপব্যবহার করবে তা আমার দূরতম কল্পনাতেও ছিল না তাই!
– কি অপব্যবহার করেছি? চরিত্রের প্রয়োজনে যেটুকু করার সেটুকুই করেছি!
– চরিত্রের প্রয়োজনে চারবার ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু! চরিত্রের প্রয়োজনে বারংবার বুক থেকে শাড়ির আঁচল খসে যাওয়া! ক্লিভেজ দেখানো, ভেজা ব্লাউজে শরীর ফুটিয়ে তোলা, বারবার তোমার শরীর ছুঁয়ে ওই ছেলেটির দাঁড়ানো, কথা বলা, সব চরিত্রের প্রয়োজনে?
– হ্যাঁ হ্যাঁ, চরিত্রের প্রয়োজনে | সিনেমা যে দেখো না তা তো নয়, নিজের বউ বলে আজ এত কথা মাথায় আসছে?
– আসাটাই কি স্বাভাবিক না? পর্দায় এতখানি দেখা যাচ্ছে, তাহলে পর্দার পিছনে না জানি আরো কত কিছু হয়েছে!

দরজার বাইরে কাঠ হয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সাহস করে দরজায় টোকা দিয়েছিলেন সুমিত্রা | ততক্ষণে মা-বাবার চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিল বুবাই। চোখমুখ লাল করে রমলা দরজা খুলতেই সুমিত্রা কোন কথা না বলে বেবি কট থেকে বুবাইকে ছোঁ মেরে কোলে তুলে নিয়ে দুদ্দাড় করে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন |

সেই যে শুরু অশান্তির, সে আর শেষ হয়নি। এর বছরখানেকের মাথায় শিবনাথের বন্ধু সেই প্রযোজকের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেছিলেন রমলা। কিন্তু মুশকিল হল পরপর দু তিনটে ছবি ফ্লপ করার পর | রমলার সৌন্দর্য যতটা ধারালো ছিল ততটাই ভোঁতা ছিল তাঁর অভিনয়ের ক্ষমতা | তাই নতুন মুখ দেখতে প্রথম প্রথম দর্শকের ভিড় হলেও খুব শিগগিরই তার ফিল্মগুলো বাতিলের তালিকায় চলে গেল | বছর দুয়েক বাদে নিজের অনুতাপ প্রকাশ করে ফিরতে চেয়েছিলেন রমলা, কিন্তু শিবনাথ এ বাড়িতে আর তাঁকে জায়গা দেননি।

রমলার বাবা প্রতীক লাহিড়ী এবং শিবনাথের বাবা শশাঙ্ক সেন ছিলেন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু | এই ঘটনার সময় প্রতীক লাহিড়ী তখনও জীবিত। মেয়ের এই হঠকারী পদক্ষেপ তিনিও সমর্থন করেননি। কিন্তু রমলা ফিরে আসার পর শিবনাথ যখন তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন, তার কিছুদিন পরেই প্রতীক লাহিড়ী সপরিবারে কলকাতা শহর ছেড়ে কোথাও একটা চলে গেলেন। এ বাড়ির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে। এমনকি স্বস্তিক ফ্যাশন হাউজের সমস্ত অধিকার লেখাপড়া দিয়ে করে দিয়ে গেলেন শিবনাথ এবং তার উত্তরসূরীদের নামে | লাহিড়ী পরিবারের সঙ্গে সেন পরিবারের আর সামান্যতম কোন যোগসূত্র অবশিষ্ট রইল না |

শিবনাথ প্রথমটা ভেঙে পড়লেও ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। সুমিত্রার বহু অনুরোধ সত্বেও তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে রাজি হননি। দুই ছেলের পড়াশোনা, তাদের অন্যান্য ইন্টারেস্ট এর জায়গায় উৎসাহ দেওয়া, প্রতি বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাওয়া এবং ব্যবসার কাজ এই নিয়েই তিনি মেতে ছিলেন পুরোপুরিভাবে | এদিকে সংসার ছিল সম্পূর্ণরূপে সুমিত্রার তত্ত্বাবধানে | এর মধ্যেই ছেলেরা বড় হল | টুবাই এমবিএ করে ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কাজ শুরু করল আর বুবাই ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হল। শিবনাথ চেয়েছিলেন দুই ছেলেই ব্যবসায় ঢুকুক | দুই প্রজন্মে ব্যবসার আয়তন অনেকটাই বেড়েছে | মূল দায়িত্ব পরিবারের মধ্যে থাকুক সেটাই তাঁর ইচ্ছা ছিল | কিন্তু বুবাই সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিল যে সে ব্যবসায় উৎসাহী একেবারেই নয়। সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়বে এবং সেই ফিল্ডেই চাকরি করবে |

হয়তো এভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের একটা সুখী পারিবারিক ছবি আঁকা হয়ে উঠতে পারতো সেন-ভিলায়, যদি না হঠাৎ করে একদিন স্বস্তিকের অফিসে গিয়ে নতুন মডেল সমর্পিতা চৌধুরীর সাথে দেখা হতো বুবাইয়ের |

(ক্রমশ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে