#হৃদ_মাঝারে (পর্ব ৬)
ঘরের বাইরে থেকেই মেয়েকে কারো সঙ্গে কথা বলতে শুনেছিলেন মাধবী | ঘরে ঢুকে দেখলেন মেয়ে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে |
– কার সাথে কথা বলছিলি দিঠি?
সমাদৃতা দরজার দিকে চোখ ঘোরাল | মা একটা ট্রেতে স্যালাড আর গ্লাসে দুধ নিয়ে দরজা ঠেলে ঢুকছে | এই দুধটা খেতে একটুও ভালো লাগে না ওর, কিন্তু প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেতেই হয়। হরলিক্স বর্নভিটা জাতীয় হেলথ ড্রিঙ্ক মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেও দেখেছে, এমন কিছু সুস্বাদু হয়ে যায় না |
– ওই একটি মেয়ে, একটা বাড়ি খুঁজছিল
ট্রে টা টেবিলের উপর নামিয়ে রাখতে রাখতে মাধবী বললেন,
– ও আচ্ছা, কোন বাড়ি? তুই বলে দিতে পারলি?
– হ্যাঁ মা, সুমি পিসিদের বাড়ি…
মেয়ে খুব নির্বিকার মুখে উত্তরটা দিলেও মাধবী একটু চমকে উঠলেন | তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে | এমনটাই হবে সমাদৃতা জানতো। কিছু না বলে টেবিল থেকে গ্লাসটা তুলে নিল। এক চুমুক দিয়েই প্রতিদিনের মতো নাক কুঁচকালো। তাকিয়ে দেখল মা তখনও ওর দিকে চেয়ে আছে।
আস্তে করে বলল,
– তিতলির টিউটর…
– ও
– তুমি কি ভেবেছিলে?
– আমি কি ভাবব!
মাধবী তড়িঘড়ি নিজেকে সামলে নিলেন, তারপর বললেন,
– ওই তো একরত্তি মেয়ে, তার জন্য আবার টিউটর রাখতে লাগে!
একটা মৃদু হাসি খেলে গেল সমাদৃতার ঠোঁটে | মা বোধ হয় চায় না ওই বাড়িতে কোনো মেয়ে যাক…
– তুমি তো জানো মা বুবাইদা কি পরিমান চাপে থাকে | অফিসের কাজ, তার উপর আবার স্বস্তিক দেখাশোনা | মানুষটা সময় পায় কতটুকু নিজের জন্য, পরিবারের জন্য?
মাধবীর মুখে একটা কালো ছায়া নামল |
– চাকরি করার কি দরকার সেটাই তো বুঝিনা! এত বড় পারিবারিক ব্যবসা…
– মা!
– কি হল? বুবাই জেদ করেই চাকরিটা করছে | এখনও | ওটার দরকার আছে কি ওর?
সমাদৃতার দুই চোখে একটা ব্যথার ছায়া নামল | আস্তে আস্তে বলল,
– কেন মা? একটা মানুষের তার নিজের পছন্দের প্রফেশন চুজ করার অধিকার নেই? কই, দিদিয়ার বেলায় তো তুমিই অন্যরকম কথা বলেছিলে! বাবার ল ফার্ম, দিদিয়া ল পড়ল | ওর তো লইয়ার হওয়ার কথা | ও যখন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে চাইলো তখন তো তুমি ওর হয়েই কথা বলেছিলে | বলেছিলে কারোর ক্যারিয়ার তার ওপরে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাহলে এখন অন্যরকম কথা বলছ কেন? নিজের মেয়ের বেলায় একরকম নিয়ম, আর পরের ছেলের বেলায় অন্যরকম?
মাধবী রেগে উঠলেন | কোন মা তার নিজের সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয় না? মেয়ের এখন বয়েস কম, তাই এসব বড় বড় কথা | নিজের সংসার হলে, ছেলেপুলে হলে, তখন দেখা যাবে, কোথায় থাকে এ সব জনদরদী মনোভাব | কিন্তু নিজের সংসার কি আর হবে মেয়েটার? বুকের ভিতরে পুরোনো জমানো কষ্টের ঢেউগুলো ঝুরঝুর করে ভাঙতে লাগলো | দেখতে চান না উনি, তবু চোখ যায় | টেবিলের নীচে, সাড়বিহীন দুইখানা পা | যে পায়ে ঘুঙুর বেঁধে মঞ্চে ঝড় তুলতে পারত এক কিশোরী | টের পান নি, কখন নোনা জলের ধারা গাল গলা ভিজিয়ে দিয়েছে |
স্যালাড মুখে পুরে সদ্য আসা একটা মেসেজের দিকে মন দিয়েছিল সমাদৃতা, মুখ তুলতেই মাধবীর ভেজা চোখের দিকে নজর গেল |
– মা!
মাধবী তাড়াতাড়ি চোখ মুছলেন | যা ভেবে চোখে জল এসেছিল, তা মেয়ের সামনে বলা যায় না | বড় জনকে এ জন্মে আর কাছে পাবার আশা করেন না, কিন্তু ছোট জনের জন্য বড় চিন্তা হয় | কিন্তু ওর সামনে কোনও দুর্বলতা দেখানো যাবে না | মেয়ে রাগ করে, দুঃখ পায় | ডাক্তার চ্যাটার্জিও বারণ করেছেন |
– কিছু না রে, স্যালাডে মরিচ গুঁড়ো দিয়েছিলাম, হাত ধুই নি, ওই হাতই চোখে দিয়ে ফেললাম, জ্বালা করছে, তুই খা, আমি আসছি হাতে মুখে জল দিয়ে…
মাধবীর বেরিয়ে যাওয়ার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে আবার স্যালাডে মন দিল সমাদৃতা | মা কাঁদছিল | কেন কাঁদছিল তাও আন্দাজ করতে পারে | কিন্তু ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই | যা হয়ে গেছে তাকে বদলানো সম্ভব নয়, কিন্তু সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানসিক জোর দরকার। চোখের জল মনের জোর কমিয়ে দেয় |
স্বস্তিক ফ্যাশন হাউজ | কলকাতায় হেডকোয়ার্টার, এছাড়াও অফিস এবং ওয়্যারহাউজ আছে দেশের আরো চার-পাঁচটি বড় শহরে | আন্তর্জাতিক খাতা খোলারও পরিকল্পনা হয়েছিল বছর কয়েক আগে, কিন্তু হয়ে ওঠে নি | দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু শশাঙ্ক সেন এবং প্রতীক লাহিড়ীর যুগ্ম উদ্যোগের ফল | শূন্য থেকে শুরু করে এক প্রজন্মেই স্বস্তিককে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন ওঁরা | শশাঙ্ক সেন – শিবাজী সেনের ঠাকুরদা | প্রতীক লাহিড়ী, দাদু |
এখানে শিবাজীর কেবিনটা ওদের রাজারহাটের অফিসের ওডিসির প্রায় সমান। একদিকে দেয়াল চেপে বিশাল বড় ক্যাবিনেট, তাতে ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু বইপত্র ছাড়াও রয়েছে স্বস্তিকের পাওয়া বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন পুরস্কার এবং শংসাপত্রের প্রদর্শনী | ক্যাবিনেটের সমকোণ বরাবর শিবাজীর ডেস্ক এবং চেয়ার | অন্য প্রান্তে ছোটখাটো একটা কিচেনেট, চা কফি বানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও, মিনি ফ্রিজে অতিথি আপ্যায়নের সরঞ্জাম সবসময় মজুদ থাকে |
বিশাল ডেস্কের উপরে দুই হাত ছড়িয়ে মাথা নিচু করলো শিবাজী | অফিসে ঢুকেছে সেই সকাল ন’টায়, এসে থেকেই একের পর এক বিভিন্ন প্রজেক্ট এর নানা ধরনের অ্যাপ্রুভাল, সারা সপ্তাহের খরচের হিসাব, নতুন রিক্রুটমেন্ট এর লিস্ট, একের পর এক এসেই চলেছে সামনে | ঘন্টা চারেক টানা কাজ করার পরে শেষে ওর পার্সোনাল সেক্রেটারি তমোজিত কে বলেছে আধ ঘন্টার ব্রেক দিতে।
– স্যার আপনি বরং লাঞ্চটা করে নিন!
তমোজিত বলেছিল | ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল প্রায় একটা বাজছে |
– আর কতটা বাকি আছে বলো তো?
– স্যার আরো ঘন্টাখানেক তো লাগবেই…
– থাক্, একটু স্ট্রং কফি খাওয়াও এক কাপ |
একেবারে বাড়ি গিয়েই লাঞ্চ করবে | মেয়েটার সাথে ছুটির দিনেও সকালটা কাটানো হয় না | মাঝে মাঝে বড় বিরক্ত লাগে, কিন্তু এই মুহূর্তে ওর কাছে দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই | নিজেকে বড় বেমানান লাগে এখানে | সোম থেকে শুক্র আইটি ইন্ডাস্ট্রির রিকোয়ারমেন্ট গ্যাদারিং, ফাংশনাল অ্যানালিসিস, টেকনিক্যাল আর্কিটেকচার, সিকিউরিটি অ্যাশ্যুওরেন্স – সমস্ত গুলো নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকতেই ভালবাসে। যেন মনে হয় নিজের সব টুকু দিয়ে পছন্দের কাজ করতে পারছে | কিন্তু শনি আর রবি এই বিলাসবহুল অফিসে সকালের এই পাঁচ ছয় ঘন্টায় যেন ওর দম বন্ধ হয়ে আসে |
তমোজিত দরজার নক করে কফি দিয়ে গেল | ছেলেটা শিবাজীকে খুব পছন্দ করে | সত্যি বলতে, এই কফি দেওয়ার কাজ তমোজিতের করার কথা নয়। তার জন্য আলাদা স্টাফ আছে | কিন্তু এটুকু ব্যক্তিগত খেয়াল রাখার কাজ তমোজিত নিজে থেকেই করে | একটা লোক সারা সপ্তাহ অফিস করে আবার শনি রবি ব্যবসার কাজ দেখতে আসছে, ব্যাপারটা শিবাজীর সম্পর্কে বেশ একটা শ্রদ্ধা জাগিয়েছে তমোজিতের মনে |
কফির কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে এলো শিবাজীর। দারুন বানিয়েছে! মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে রিং করল | বার কয়েক বাজার পরেই ওদিক থেকে ঝরনার মতন কল কল করে শব্দ ভেসে এলো,
– হ্যালো হ্যালো! কে বাবাইয়া?
আজকাল আর ল্যান্ডলাইন নাম্বার কেউ ব্যবহার করে না | সমস্ত বয়সের মানুষের হাতেই তাদের নিজস্ব মোবাইল | শিবাজীদের বাড়িতেও তার অন্যথা নয়। তার নিজের দুখানা নাম্বার, পিসিমার একখানা নাম্বার, কৈলাসের ও একখানা ফোন আছে গত বছর চারেক ধরে | শুধুমাত্র মেয়ের হাতে এখনই মোবাইল তুলে দিতে নারাজ শিবাজী | তিতলির ট্যাবে কার্টুন দেখাও পছন্দ নয় তার। দিনে কিছুটা সময় দূর থেকে টিভি দেখার অনুমতি আছে, বাকি সময়টা সে গল্প বা গান শুনুক, ছবি আঁকুক কিংবা বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করুক সেটাই শিবাজীর ইচ্ছা। তবে নিজে যেহেতু খুব বেশি সময় দিতে পারে না আর সুমিত্রার পক্ষে সব সময় দুরন্ত বাচ্চাকে সামলে রাখা সম্ভব হয় না বলে টিভির সময় টা মাঝেমধ্যেই বেশ অনেকটা বেড়ে যায়।
বাড়িতে ফোন করার সময় শিবাজী সবসময় ল্যান্ড লাইনেই ফোন করে | তাহলে তিতলির সাথে কথা বলতে হলে তিতলিকে আর মোবাইল ধরতে হয় না | ভাত খেয়ে উঠে রাজন্যার এঁকে দিয়ে যাওয়া একটা ছবিতে রং করছিল তিতলি | ছবিটা একটা বেলুনওয়ালা আর একটা বাচ্চা ছেলের। ছবির বিভিন্ন অংশে এক দুই তিন লিখে কোন নম্বরে কোন রং করতে হবে বলে দিয়ে গেছে ফেয়ারি সিস্টার । সেই মিলিয়ে মিলিয়ে রং করতে বেশ মজা লাগছিল ল্যান্ড লাইন বেজে উঠতেই তড়াক করে এক লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরল,
– হ্যালো হ্যালো! কে? বাবাইয়া?
শিবাজী হেসে ফেলল | ফোনের মধ্যেই চকাশ করে একটা চুমু দিয়ে বললো,
– ইয়েস প্রিন্সেস। কি করছো? লাঞ্চ হয়ে গেছে তো?
বাবা যে ঘাড় নাড়া দেখতে পাবে না তা একেবারেই খেয়াল না করে খেয়াল অনেকখানি মাথা হেলিয়ে উত্তর দিল তিতলি,
– হ্যাঁঅ্যাঅ্যা এইতো খেয়ে উঠলাম …
– তাহলে এখন কি করছো?
সাথে সাথে উত্তর এলো,
– আমি এখন ড্রইং, না না কালারিং করছি |
শিবাজী চমৎকৃত হল | ছুটির দিনে লাঞ্চের পরে টিভি দেখার বায়না করে তিতলি। শিবাজী বাড়ি না থাকলে ওই সময়টা সুমিত্রা ওকে টিভি চালিয়ে দেন। সেই মেয়ে আজ নিজে থেকে ড্রয়িং করছে!
– বাব্বাহ্, তুমি তো গুড গার্ল হয়ে গেছ দেখছি! টিভি না দেখে কালার করছ?
– সিস্টার বলেছে আমি পড়াশোনা আর কালারিং ঠিক ঠিক করে না করলে টুপাই আমাকে দিদি না বলে বোনু বলবে | আমাকে তো ওর থেকে বেশি বেশি জানতে হবে, তাই না?
– সিস্টার! কে সিস্টার মাম্মা?
এই রে! জিভ কাটলো তিতলি | বাবাইয়ার সামনে সিস্টার বলে ফেলল | এটাতো ওদের দুজনের সিক্রেট। তাড়াতাড়ি করে বলল
– সিস্টার না, ম্যাম | ম্যাম বলেছে | ম্যাম আজকে এসেছিল না পড়াতে ?
ওহো তাইতো! নতুন মাস পড়েছে আজ থেকে | একটি মেয়ের পড়াতে আসার কথা ছিল | সুমিত্রাই ঠিক করেছেন, শিবাজীর একবার নিজে কথা বলার ইচ্ছা ছিল মেয়েটির সাথে। তিতলি এখনো খুব ছোট, ওকে ঠিক প্রথাগতভাবে পড়ানো হোক সেটা পছন্দ নয় শিবাজীর। এমনভাবে ওর সাথে যদি সময় কাটানো যায় যাতে পড়াশোনার প্রতি ওর ভয়ের বদলে আগ্রহ তৈরি হয় সেটাই ওর জন্য সবথেকে ভালো হবে | কিন্তু এইসব পিসিমাকে বোঝাতে গেলেই উনি বলবেন ‘ওসব খটোমটো কথা তুই নিজেই বলগে যা’ | আজ হলো না, কালকেও হবে না | সপ্তাহের মাঝে তো সম্ভাবনাই নেই | পরের শনিবার কোন ভাবে অফিস আসাটা বাদ দিতে হবে।
– তোমার ম্যাম কি পড়ালো মাম্মা আজ? ম্যামকে পছন্দ হয়েছে তো?
– হ্যাঁ বাবাইয়া, ম্যাম খুউব ভালো। ম্যাম অংক করিয়েছে আর স্টোরি বলেছে আর ড্রইং করিয়েছে।
তিতলির কথা বলার ধরনে বোঝা যাচ্ছে যে এই নবনিযুক্ত শিক্ষিকাকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। আগের দিন পিসিমার সাথে কথা বলে মনে হলো তাকেও প্রথম দেখায় বেশি ইমপ্রেস করে ফেলেছে। নাহ্, মেয়েটির সাথে আগামী সপ্তাহে কথা বলতেই হবে। ফোনে আর দু চারটে কথা বলার পর তিতলিকে একটু ঘুমোতে বলে ফোন রেখে ফের কাজে মন দিল শিবাজী | আধঘন্টার মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে বেরোতে হবে। ও না ফেরা পর্যন্ত পিসিমা না খেয়ে বসে থাকবেন |
শনি রবি ভালোয় ভালোয়ই কেটে গেল, কিন্তু রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজন্যার মনের মধ্যে একটা কিন্তু কিন্তু ভাবের সাথে ভয় মেশানো অদ্ভুত অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল। শুক্রবার রাতে যেমন দুঃখ হয়েছিল তেমন বেজায় রেগেও ছিল | মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছিল, সোমবার অফিসে গিয়েই এই প্রোজেক্ট থেকে রিলিজ চাইবে। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, তত মনের ভিতর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নিজের দোষটাও বড্ড চোখে পড়ে যাচ্ছে। সত্যিই সে তো জুনিয়ার, মাত্র বছর দেড়েকের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওভাবে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়া উচিত হয়নি | বিশেষ করে যে প্রসঙ্গে শিবাজী সেনের মতন সিনিয়র মানুষ অন্য মত প্রকাশ করছিলেন | অফিসে গিয়ে শিবাজীদার মুখোমুখি কিভাবে দাঁড়াবে ভাবতেই কেমন যেন গলা, বুক শুকিয়ে আসছে রাজন্যার | একবার সৌম্যর সাথে ফোনে কথা বলবে ভেবেছিল, কিন্তু সৌম্য নিজে থেকে কোন ফোন বা মেসেজ করেনি দেখে ধরে নিতে হয়েছে শিবাজীদা সৌম্যকে কিছু জানায়নি এখনো | মায়ের অসুখ বলেছিল, এর মধ্যে অফিসের কথা নিয়ে বিরক্ত করাটা হয়তো ঠিক হবে না |
রাজন্যা কে থালায় রুটি মাংস নিয়ে খোঁটাখুটি করতে দেখে মালবিকা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
– কিরে খাচ্ছিস না যে! খেতে খারাপ হয়েছে? দুপুরে তো কিছু বললি না?
রবিবার দিন টা সাধারণত ওরা মুরগির মাংস খায়। রান্না রাজন্যাই করে | একটু বেশি করেই করে রাখে যাতে সোমবার দিনটাও হয়ে যায়। রাজন্যার রান্নার দিকে বরাবরই ঝোঁক বেশি। প্রতি সপ্তাহে একই রকম না বানিয়ে ইউটিউবে নানান রকমের রেসিপি দেখে এক একদিন এক এক রকম চেষ্টা করে | কোনদিন বাঙালি স্টাইলে আলু দেওয়া মাংসের ঝোল তো কোনদিন বাটার চিকেন | কোনদিন আবার কড়াই মুর্গ নয়তো আচারি চিকেন | টিউশনের এটা প্রথম সপ্তাহ হওয়ায় শনি রবি দুই দিন সকালে সময় ম্যানেজ করা নিয়ে একটু অসুবিধা হয়ে গেছে, তাই এই রবিবার মালবিকাই রান্না করেছে। নিজের রান্না মালবিকার মোটেই পছন্দ হয়নি | তাই দুপুরে রাজন্যা কোন অভিযোগ না করলেও রাতে ওকে খাবার নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে মালবিকার মনে হল রাজন্যা বুঝি খেতে পারছে না |
– না না খারাপ হয়নি রে, আসলে টেনশন হচ্ছে রে
– কিসের টেনশন?
– কাল অফিস গিয়ে ঝাড় খেতে হবে…
শুক্রবার সন্ধ্যার গল্পটা রাজন্যার কাছে পরে শুনেছে মালবিকা, গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল,
– এক কাজ কর | ঝাড় দিতে শুরু করার আগেই সরি বলে দে!
মালবিকা ভেবেছিল এই প্রস্তাব শুনেই রাজন্যা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রাজি হয়ে গেল মেয়েটা | আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বলল,
– ঠিক বলেছিস। শিবাজীদা আমাকে ধমকেছে ঠিকই, কিন্তু আমি অন্যায় করার পর। তার আগে তো আমাকে অত বড় বড় লোকের সামনে প্রেজেন্ট করার সুযোগ দিয়েছিল বল?
ভূতের মুখে রাম নাম! একবারে নিজের অন্যায় স্বীকার করে ফেলছে! মালবিকা চোখ সরু করে একটুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো রাজন্যার দিকে তারপর থালার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে | খাওয়া শেষ কর |
সোমবার সকালে একটু তাড়াতাড়িই তৈরি হয়ে নিল রাজন্যা। সৌম্য সাধারণত খুব সকাল সকাল অফিসে আসে | তাড়াতাড়ি গিয়ে সৌম্যর সাথে একটু আলোচনা করে নেওয়ার বাসনা। এলিভেটার থেকে যখন ফ্লোরে নামল, ঘড়িতে তখন নটা দুই | করিডোর দিয়ে প্রথম বাঁকটা ঘুরতেই লম্বা চওড়া চেহারাটাকে ছেলেদের ওয়াশরুম থেকে রুমালে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসতে দেখে ওইখানেই প্রায় জমে গেল রাজন্যা। শিবাজী দা এত সকালে! সর্বনাশ।
রুমাল পকেটে ভরে সামনের দিকে তাকাতেই অদূরে একটা সাদা চুড়িদার কামিজ পড়া মেয়েকে হেঁটে আসতে আসতে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে ভ্রু কুঁচকাল শিবাজী | ভালো করে তাকাতেই বুঝলো মেয়েটা কে | গম্ভীর ভাবে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
– রাজন্যা, ব্যাগ রেখে একবার মিটিং রুমে আসবে | কথা আছে |
শিবাজী চলে যাওয়ার পরেও রাজন্যার কেমন যেন মনে হচ্ছিল ওর পা দুটো অসম্ভব ভারী হয়ে আছে। কোন রকমে পা টেনে টেনে ওডিসিতে ঢুকে ব্যাগ রেখে মিটিং রুমে এসে ঢুকলো |
শিবাজী দেওয়ালে টাঙানো হোয়াইট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে | রাজন্যার উপস্থিতি টের পেয়ে শান্ত স্বরে বলল,
– দ্যাখো রাজন্যা, আমি জানি তুমি আমাদের টিমে কাজ করতে পছন্দ করছ না। প্রথম দিন থেকেই সেটা তোমার ভাবে ভাবে, আচরণে বুঝিয়ে দিয়ে আসছ। তোমাদের টিমকে আমাদের টিমের সাথে মার্জ করার সিদ্ধান্ত কিন্তু আমার নয়। এমনকি সাবর্ণদারও নয় | এটা কোম্পানির ডিসিশন | তবে তোমার যদি মনে হয়, তুমি নিতান্তই আমাদের সাথে কাজ করতে পারবে না তাহলে রিলিজ রিকুয়েস্ট করতে পারো, আমি আটকাব না |
কথাটা শুনে রাজন্যার প্রথমেই মনে হলো শিবাজী ওকে তাড়িয়ে দিচ্ছে | দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল, মনের হাজার বারণ সত্ত্বেও চোখের কোণে মুক্তো দানার মতন জল টলমল করতে লাগলো। শিবাজীর অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই | সে বলে চলেছে,
– আমি জানি বদমেজাজি বলে আমি একটু কুখ্যাত । তবে তাই বলে এই নয় যে আমি আমার জুনিয়রদের অসম্মান করি। কে কোন কাজটা ভালো পারে এবং ভালোবাসে, সেটা আমি সব সময় মাথায় রাখার চেষ্টা করি | আর তাছাড়া এই অল্প বয়সটাই তো কাজ শেখার সময়। কোডিং ব্যাপারটা কোন রকেট সায়েন্স নয়, আমরা যখন প্রোগ্রামিং শিখেছিলাম তখন মোটা মোটা বই বগলদাবা করে ঘুরতে হত | কোন কঠিন সমস্যা হলে রাত জেগে জেগে নানান রকমের সলিউশন ট্রাই করতাম | ইন্টারনেট ছিল না | তোমাদের এখন গুগলে একটা সমস্যা নিয়ে সার্চ দিলে একশ রকম সমাধান চলে আসে | একটু সিরিয়াস হলেই ঝটপট দক্ষ হয়ে ওঠা যায় | কিন্তু একটা কর্পোরেটে চাকরি করতে গেলে শুধুমাত্র টেকনিক্যাল স্কিল থাকলেই চলে না | সারা জীবন নিশ্চয়ই তুমি ডেভলপার হয়ে থাকতে চাইবে না? তাই কিভাবে বিভিন্ন লেভেলের মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়, কিভাবে উত্তর না জানা প্রশ্নকে ম্যানেজ করতে হয়, কিভাবে সকলের সাথে মিশে কাজ করতে হয় সেগুলোও শেখার বিষয়। আমি মূলত বকাঝকা করি যখন জুনিয়াররা সেই শেখায় আলগা দেয়। তুমি টেকনিক্যালি ভালো, সৌম্য তো বলেইছে, আমি নিজেও দেখেছি | তুমি বুদ্ধিমতী, কিন্তু তুমি হয়তো একা কাজ করে অভ্যস্ত | টিমের সাথে মিশে কাজ করতে তোমার অসুবিধা হচ্ছে। আমি কখনোই চাইবো না আমার কোন টিম মেম্বার অখুশি মনে এখানে কাজ করুক | সেই জন্যই…
মৃদু নাক টানার শব্দে থেমে গেল শিবাজী | পাশ ফিরে রাজন্যার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল | মেয়েটার বড় বড় দুই চোখের থেকে জলের ধারা নেমে এসে ভিজিয়ে দিয়েছে গাল। মাথা অল্প নিচু করে নাক টেনে চলেছে। শিবাজী একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল | মেয়েটাকে এই ক’দিনে তার বেশ অহংকারী এবং উদ্ধত মনে হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার ঘটনার পরে ভয়ানক রেগে গিয়েছিল | সাবর্ণদাকেও জানিয়ে রেখেছিল | তার কারণ ওই সুব্রামনিয়াম তার বিচিত্র সব দাবি নিয়ে সাবর্ণদাকেই প্রথমে ধরে। আর কোন মিটিংয়ে বেফাঁস বলে ফেলা কোন কথাই ওই লোকের কান এড়ায় না। রাজন্যার বলা কথাগুলোকে অস্ত্র করে ওদেরকে যে প্যাঁচে ফেলবার চেষ্টা করবে সেই ব্যাপারে মোটামুট নব্বই শতাংশ নিশ্চিত শিবাজী | কিন্তু সাবর্ণদাও এ বিষয়ে ওকেই ভর্ৎসনা করলেন।
– তোমারই বা কি দরকার ছিল একটা নতুন মেয়েকে দিয়ে ডেমো দেওয়ানোর? সবে দু সপ্তাহ হয়েছে এসেছে। তাও আবার বাড়ি থেকে! সামনে থাকলে না হয় ঠিকঠাক বুঝিয়ে শুনিয়ে নেওয়া যায়।
এই এক মেয়েকে নিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে দুবার সাবর্ণদার কাছে কথা শুনতে হয়েছে | রীতিমতো মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিল | ভেবেই নিয়েছিল সৌম্যকে বলে মেয়েটিকে অন্য কোন প্রজেক্টে সরিয়ে দেবে | কিন্তু এখন এই মুহূর্তে সামনে দাঁড়ানো ফুলোফুলো গালের মেয়েটার চোখে জল দেখে কেমন যেন সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল শিবাজীর।
– এই রাজন্যা তুমি কাঁদছো কেন?
– আই এম সরি শিবাজী দা, প্লিজ আমাকে আরেকটা চান্স দিন।
শিবাজী কেমন যেন হতচকিত হয়ে পড়ল | ও ভেবেছিল রাজন্যা ওর সাথে তর্ক করবে, ওর যে কোন অপরাধ ছিল না সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে | কিন্তু এত সহজে সরি বলে ফেলায় শিবাজী আর কি বলবে বুঝেই পেল না। একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
– আচ্ছা ঠিক আছে…
– আমি যাব?
– হ্যাঁ যাও | আর… চোখে মুখে জল দিয়ে নিও |
রাজন্যা চোখ তুলে একবার শিবাজীর দিকে তাকিয়ে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে এলো | ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিতে দিতে রাজন্যার মনে হল, ঠিক কি কারণে ও কাঁদলো? যে লোকটাকে ও দু’চোখে দেখতে পারে না, তার প্রজেক্ট থেকে চলে যেতে হবে শুনে হঠাৎ এতটা মন খারাপ কেন হলো! খানিকক্ষণ মনের মধ্যে হাতড়াহাতড়ি করে কোন উত্তর না পেয়ে টিস্যু পেপারে চোখ মুখ মুছে ওডিসিতে ফিরে এল রাজন্যা ।
এরপরে দুটো দিন কেটে গেল | বুধবার তিতলিকে পড়াতে যাবার দিন | রাজন্যা সৌম্যকে বলেই রেখেছিল, তাড়াতাড়ি বেরোবে | সেইমতো সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে ঢুকে কাজকর্ম এগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু গোলমাল বাঁধলো ঠিক বিকেল পাঁচটার সময় একটা জরুরী কাজ এসে যাওয়ায় | খানিকটা কাজ নিজে করে বাকিটা অনুরাগ কে বুঝিয়ে দিয়ে সীট ছেড়ে ব্যাগ নিয়ে উঠে পড়তেই শিবাজী তাকালো |
– রাজন্যা তুমি কি বেরোচ্ছো নাকি?
– হ্যাঁ শিবাজী দা |
– ওই ইস্যুটা ফিক্স হয়ে গেছে?
মোবাইল আর জলের বোতল হাতে তুলে নিতে নিতে রাজন্যা নিশ্চিন্ত কন্ঠে বলল,
-আমি আইডেন্টিফাই করে দিয়েছি কোথায় চেঞ্জ করতে হবে | অনুরাগ কাজ করছে। ওর আর আধঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে |
– তুমি কাজটা শেষ করে দিয়ে যাচ্ছো না কেন অনুরাগের যদি প্রবলেম হয়
– না না প্রবলেম হবে কেন? আমি দেখিয়ে দিয়েছি তো | আসলে আজকে আমার একটু তাড়াতাড়ি বেরোনোর দরকার ছিল | সৌম্যদাকে বলেই রেখেছিলাম | আমি তাই জন্য আজকে সকালে এসেছি তাড়াতাড়ি।
সৌম্য প্রমাদ গুনল | রাজন্যার অনুরোধটা এমন কিছু অযৌক্তিক মনে হয়নি তার | সপ্তাহে একটা করে দিন মেয়েটা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবে বলেছে | কিন্তু এক ঘন্টা আগে বেরোবে বলে এক ঘন্টা আগে অফিসেও আসবে। এর মধ্যে আজকেই বিকেলবেলা এরকম ইস্যু আসবে তা আর কে জানতো!
শিবাজী লক্ষ্য করেছে রাজন্যা আজকে অন্যদিনের থেকে একটু বেশি পরিপাটি হয়ে এসেছে | হালকা হলুদ রঙের একটা চুড়িদার পরেছে। ওর ফর্সা গায়ের উপরে এক ঝলক সোনালী রোদ্দুরের মতন লাগছে জামাটা। চুল পনিটেন করে বাঁধা, কানে হলুদ রঙের দুল | মুখে বোধ হয় বেরোনোর জন্য খানিক প্রসাধনী ছুঁইয়ে এসেছে । নির্ঘাত ডেটিংয়ে যাচ্ছে। শিবাজী গম্ভীর গলায় বলল,
– রাজন্যা, উইক ডেজ এ পার্সোনাল কমিটমেন্ট না রাখলেই আমি খুশি হব | আমি চাইবো তুমি অনুরাগের সাথে বসে কাজটা শেষ করে যাও…
রাজন্যা খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে রেখে ফের বসে পড়ল | মোবাইলে সুমিত্রার নম্বর ডায়াল করে ওনার ফোন ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো | ওদিক থেকে হ্যালো শুনতে পাওয়ার পরে চাপা স্বরে বলল,
– পিসিমা, আমার না একটু দেরি হবে | অফিসের কাজে আটকে গেছি |
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি কাজ শেষ করেই এসো |
কাজ শেষ হতে অবশ্য চল্লিশ মিনিট লাগলো না | কুড়ি মিনিটের মাথাতেই কোডটা ঠিকঠাক চলতে শুরু করল | রাজন্যা শিবাজীর ডেস্কের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গোমড়া মুখে বলল,
– এবার কি আমি যেতে পারি?
শিবাজী মনিটরের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই উত্তর দিল
– যাও।
অফিস থেকে তিতলিদের বাড়ি যাওয়ার ডাইরেক্ট বাস আছে এটা একটা বাঁচোয়া |রাজন্যা বাসটা পেয়েও গেল তাড়াতাড়ি। উঠে একটা খালি সিটে গুছিয়ে বসতে না বসতেই হোয়াটসঅ্যাপে একটা টুং করে আওয়াজ হল। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।
– হাই। আমি সোমদত্তার বাবা
রাজন্যা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মেসেজটার দিকে | সোমদত্তা আবার কে? প্রোফাইল পিকচার টা দেখার চেষ্টা করল, নাহ্ কোন মানুষের ছবি নেই। একটা সূর্যাস্তের ছবি দেওয়া। ওরই মতন কেউ । রাজন্যা নিজেও প্রোফাইল পিকচারে কুকুরছানা বিড়াল ছানার ছবি দিয়ে রাখে | মেসেজে লিখল,
– কে সোমদত্তা?
উত্তর এলো সাথে সাথে |
– কেন আপনি যে সোমদত্তাকে পড়াচ্ছেন দুদিন ধরে?
ওহো ভুলেই গিয়েছিল তিতলির ভালো নাম সোমদত্তা | তাড়াতাড়ি টাইপ করল,
– হ্যাঁ সরি, আসলে তিতলি বলে বলে সোমদত্তা নামটা ভুলে গিয়েছিলাম |
– আপনার সাড়ে ছয়টায় আসার কথা ছিল, আসেননি শুনলাম
– না আসলে অফিসের কাজে একটু আটকে গেছি…
– দেখুন ম্যাডাম, আমি কিন্তু সময়ানুবর্তিতাকে খুব গুরুত্ব দিই। আপনি যদি ঠিকঠাক টাইম মেইনটেইন না করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনার ছাত্রীও এই বিষয়ের গুরুত্বটা সম্পর্কে শিখবে না |
– আই এম সরি, আসলে বেরোবার মুখেই একটা দরকারি কাজ পড়ে গেল। আশা করছি অন্যদিন আর দেরি হবে না
– ধন্যবাদ। আপনার সাথে আমার কথা হয়নি। তবে আগামী শনিবার আশা করি বাড়িতে থাকতে পারবো। সোমদত্তাকে পড়ানো বিষয়ে কয়েকটা কথা বলার আছে আমার
– আচ্ছা। দেখা হবে।
শেষ মেসেজটাতে আর নীল রঙের টিক হলো না দেখে রাজন্যা বুঝল সোমদত্তার বাবা হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছেন |
(ক্রমশ)