হৃদয় স্পর্শ পর্ব_২
#লেখনীতে_সাদিয়া_নুর
কুয়াশাতে ভরা আকাশ এবং চারপাশ। কি ঠান্ডা। ওরনাটা ভালো ভাবে জড়িয়েও শান্তি নেই। এতরাত ভয় ভয় ভাবটাও জেগে আসছে। মনের মধ্যে সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে এত রাতে কেন সে ঢাকা এলো এবং আমার বাসার ঠিকানাও কিভাবে জানলো? উফফ চরম মাথা ব্যাথা। কিন্তু তাকে নিজের চোখের সামনে দেখার আকুলতা যে আরো বেশি। এই ভেবে সাদিয়া চারপাশ চোখ বুলাচ্ছে। খুব বড় ছাদ। এগারো তলা বিল্ডিং। থাকে ৮ তলা। লিফটের মাধ্যমে দ্রুত আশা যেত কিন্তু এত রাতে লিফট টাও বন্ধ। চালু থাকলেও সমস্যা মনে করত চোর এসেছে। সাদিয়া নিজের অজান্তে হেসে ফেলে। এই হাসিতে একজন নড়ে চড়ে উঠে আর বলে ফেলে,,,
– কে ওখানে, সাদিয়া তুই?
আদনানের গলার আওয়াজ শুনে সাদিয়া থেমে যায়। রীতিমতো ঘামছে। এতক্ষণ ঠান্ডায় মরে যাচ্ছিলো আর এখন গরম হাওয়া যেন বয়ে গেছে বুকের মাঝে। কি অসাধারণ অনুভূতি! ইশ কিভাবে সামনা সামনি হবে। কিভাবে কথা বলবে? নাহ নাহ পারবে না। সাদিয়া উলটো পাশে হাটা ধরলেই আদনান ফ্ল্যাশ লাইট অন করে সামনে আসে।
চোখের সামনে এক সদ্য ঘুমকুমারি রানী কে দেখার সৌভাগ্য কার কার হয়। আদনানের হয়েছে। ইশ মনের মাঝে কেউ লোহা দিয়ে পেটাচ্ছে এমন অনুভূতি। সাদিয়ার থেমে যাওয়াতে আদনান এক পা এক পা করে সাদিয়ার সামনে আসে। চোখ মুখ ফোলা ঘুমের জন্য নাকি কান্নার জন্য সেটা ধরা মুশকিল। কিন্তু আদনানের মন বলছে তার মেসেজ পড়ে এমন হাল হয়েছে এই মেয়েটার। কত তাড়াতাড়ি কান্না করে দেয় এই মেয়েটি। পারবে তো আজ বলতে সব? এতদিনের জমানো অনুভুতি ব্যক্ত করতে পারবে কি? নাকি আবারও হেরে যাবে যেভাবে প্রথমবার হারিয়েছিলো একটা মেয়ের কারণে। দুইজন কিছুই বলছেনা,, কখন থেকে সাদিয়া নোখ ভাঙার চেস্টা করেই যাচ্ছে তো যাচ্ছে আর আদনান দেখেই যাচ্ছে কর্মকান্ড। চুল গুলোও বাধেনি। জটলেগে যাচ্ছে বারবার ওরনা ঠিক করার কারণে। আদনান প্রথমেই শুরু করে,,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
– ইজি হো,, আমি তোর বর না যে এত আনকম্ফোর্ট হতে হবে। কথা আছে তাই এসেছি এতদুর। নয়ত আসতাম না।
– বর না কিন্তু পর তো হয়ে গেছেন৷ আর্মিতে চাকরি করেন। ছ্যাকা খেয়েছেন। আপনি তো অনেক বড় মানুষ হয়ে গেছেন। আর বয়সের দিক দিয়েও…..
আর বলতে পারে না,, আদনান পাশ থেকে একটা লাঠি উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষকের মত আচরণ করা শুরু করে দিয়েছে,, সাদিয়া লাঠি দেখে ভয়ে ‘আ’ জোরে বলে ফেলে,, আর চিল্লিয়ে বলে,,
– আরে আরে রাগ করছিস কেন…
– কি বললি বয়স,, হ্যা তুই পুচকি,, হ্যা তুই ছোট বাচ্চা,,
– তো বড় কে বড় না বলে কি এলিয়েন বলমু।
এটা না বলতেই মার পড়লো পিঠে সাদিয়ার।
– আহ,, লাগছে তো আদনান। যাহ আমি চলে যামু,,
– যেতে পারবি না।
– এহ,, মামা বাড়ীর আবদার মনে হচ্ছে,, ভাগ এখান থেকে,, আমার ঘুম নষ্ট করবি, কান্না করাবি, এত রাতে এত কুয়াশার মধ্যে ছাদে ডাকবি ঠ্যাকা পড়সে তোর কাছে থাকার আর মাইর খাওয়ার?
– কান্না করেছিস মানে, আর কিসের জন্য কান্না করেছিস?
আদনান জানে কেন কান্না করেছে কিন্তু সে সাদিয়ার মুখ থেকে জানতে চায়।
– আসলে, আসলে,
– হ্যা আসলে নকলে বল জলদি,,
– ওই তো,চারমাস পর মেসেজের উত্তর দিলি, আর যেই ছ্যাকা খেয়েছিস না সেই কাহিনি শুনে অজান্তেই কান্না করে দিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু নাহ।
– সত্যি আর কিছু না।
– আর জানিস আমি এই ছ্যাকা খেয়ে না বড় অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
– যেমন?
– আয় চল এদিকে বসি…
– ইশ, নাহ বাবা, খুব ঠান্ডা, আর রেলিং গুলো বরফের মত ঠান্ডা বসতে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– আচ্ছা তোর বসতে হবে না আমি বসমু তুই দাড়ায় দাড়ায় শুনবি,,
– আচ্ছা,
দুইজনে হেটে হেটে ছাদের দক্ষিন পাশের দিক চলে যায় সেখান থেকে সিড়ির দিক উল্টো। তাই কেউ আসলে তদের দিক চোখও পড়বে না।
– তো বল, কি কি অভিজ্ঞতা লাভ হলো,,
– তুই তো আগের থেকেই জানোস, আমি আগে কখনো রিলেশনে যাইনি,,এইবার ইভা কে ভালোবেসে আমার অভিজ্ঞতা পূরণ হলো,,সব ফ্রেন্ডস দের থেকে তাদের ছ্যাকা খাওয়ার কাহিনি শুনতাম আর বেশ মজাও পেতাম কিন্তু এইবার নিজে সেই কষ্ট টা ফিল করেছি, দম বন্ধ হয়ে আসতো যখনি ইভা আমাকে পিক পাঠাতো কিভাবে সেই জানোয়ারটা মেরেছে। কতই না কষ্ট দিচ্ছে শুধু আমার জন্য। কিন্তু এখন নিজেকে নিজে বলি সে এখন পর।
সাদিয়া কিভবে নিজের চোখের পানি আটকাবে কিভাবে। সে তো নিজেই ইরশাদ এর ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে।
– জানিস আদনান! তোর মত আমারও এমন একটা সময় পার হয়েছিলো। কিন্তু তখন আমি টিনেজার ছিলাম। তুই তো এডাল্ট হয়ে এসবে জড়াইসিস। কিন্তু আমি জানি টিনেজ বয়সের প্রেমের পর যখন ছেড়ে চলে যায় তার কষ্ট। তুই যখন আমাকে মেসেজ গুলো দিয়েছিলি না প্রত্যেক টা লাইনে আমি ইরশাদ কে মনে করে কেঁদেছিলাম।
কত জঘন্য দিন গুলি ছিলো,,
সাদিয়া আনমনে কথাগুলো বলতে বলতে কখন যে আদনানের বসার পা গুলোর মাঝে চলে যায় বুঝতেই পারেনি,, আদনানের শরীরে ভর দিয়ে মুখটা কে সোজা দেয়ালের দিক রেখে কথা বলছে আর আদনান সাদিয়ার মাথায় নিজের থুতনি লাগিয়ে রেখেছে।
– ইরশাদ,, আগে তো কোনোদিন বলিস নি, কোন ক্লাসে পড়ত?
– অনার্স কম্পলিট তার। এসএসসি শেষ তখন আমার। স্কুলে একটা পার্টি ছিলো যেখানে আমাদের ক্লাসের সবাই ইনভাইটেড ছিলো সাথে আরো সাত আট বছর আগের স্টুডেন্টস রাও ইনভাইটেড ছিলো,, খুব ইঞ্জয় করছিলাম তখন একজনের সাথে ধাক্কা লাগে, সিনেমার মত ছিলো না যে সে আমাকে উঠিয়ে সরি বলবে বা ব্যথা পেয়েছো নাকি জিজ্ঞেস করবে…সে সরাসরি আমাকে ধমক দিয়ে বলে,,
“এই মেয়ে চোখ কোই তোমার,,, দেখে হাটতে পারোনা।”
এমন বকা মনে হয় আমি সাত জন্মেও শুনিনি,, কান্নাতে চোখ গুলো টলমল করছিলো,আমার ফ্রেন্ডস রাও পর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলো,,সম্পুর্ণ দোষ কিন্তু তারই ছিলো কিন্তু ক্ষমা চেয়েছিলাম আমি,, সেইদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যাই হোক এই বেটার সামনে আসবো না। কিন্তু কে জানতো আগামি দেড় টা বছর আমাদের রিলেশন হবে,,
– নেক্সট কি হয়েছিলো?
সাদিয়া নিজের চোখের কোনা মুছে আবার বলতে শুরু করে,,
– কি আর হবে সেই দিনই স্কুলের ক্যান্টিনে ৫০ টাকার ফুচকা অর্ডার দিচ্ছিলাম ৫ জনে খাবো বলে৷ ফুচকা আশা মাত্রই সে চারটা প্লেট দখল করে আমার দিক তাকিয়ে বলে,,
“সেই ঘটনার শাস্তি সরূপ এই চারটা প্লেট ফুচকা আমার হয়ে গেলো”
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো কিন্তু অনেক সিনিয়র বলে চুপচাপ রাগ হজম করে বিল নতুন করে পে করে ফ্রেন্ডস দের ট্রিট দিয়েছিলাম।
– তুই কি তখন কালো ছিলি,,
– এটা কেমন প্রশ্ন?
– নাহ ভাবছিলাম ছেলেটা তোকে একদেখাতে প্রেমে পড়েনি কেন?
– তুই পড়েছিস? যখন আমাদের ফ্রেন্ডশীপের পর আমি তোকে পিক দিয়েছিলাম?
-আচ্ছা বাদদে তোর আওয়াজ শুনেও প্রেমে পড়েনি?
এইবার সাদিয়ার রাগ উঠে সে আদনানের শরীর থেকে ভর সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে মুখোমুখি হয়ে তাকায় আদনানের এতক্ষন সে আদনানের মুখোমুখি ছিলো না।
– তুই প্রেমে পড়েছিলি যখন আমি তোকে ভয়েজ মেসেজ পাঠাতাম?
আদনান এইবার বলে উঠে,,
-নেক্সট কি হয়েছে আগে সেটা বল,,
– রাগে দুঃখে দ্রুত অনুষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলাম,, তখন দুপুর ১ টা বাজে,, আর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিলো ১২ঃ১৫ নাগাদ আর আমি গিয়েছিলাম ১১ঃ৩০ দিক। মেডাম বার বার পেছন থেকে ডাকছিলো কেন গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম। তখন ম্যাম বলে ইরশাদ কে পাঠায় আমাকে ডেকে আনতে,, পেছন থেকে আমাকে চেনা যাচ্ছিলো না বলে সে তাড়াতাড়ি ছুটে বলে,,
“এক্সকিউজ মি,, এই যে মিস আপনার ম্যাম ডেকেছে,,”
পিছন ফিরে দেখি সেই ছেলেটা আরো রাগ উঠলো কিন্তু তখনো কিছু বললাম না কিন্তু এরপর যা করল তাতে রাগে দুঃখে কান্নাই করে দিয়েছিলাম,, আর সেই কান্নার রিজন ছিলো,,
“ওহ তো আপনি সেই মিস,, জানেন আপনি কতটা সাইকো? আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন,, যখন আমি আপনাকে পানিশ করলাম তখন চোখ রাঙানি দিয়েছেন আর এখন ম্যাম আমাকে বলল আপনাকে ডেকে আনতে,এত অবাধ্য এত অসাবধান কিভাবে?”
তার কথাগুলো হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,প্রচুর কষ্ট। কিন্তু আমি জীবনেও কারো সামনে কান্না করতাম না কারণ কান্না মানুষের দুর্বলতা। আর মেয়েদের দুর্বলতা দেখা দিলে সামনের মানুষটা শক্তিশালী হয়ে যায়।
– তারপর কিভাবে কান্না গিলেছিস?
– তেমন কিছু করতে হয়নি সে এসব বলে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলো আর আমি “সরি” নামক একটা ছোট্ট ওয়ার্ড জোরে বলে দৌড় দিয়েছিলাম স্কুলের ভিতর, দৌড়ে সোজা তিনতলা ছাদে সেখানে গিয়ে এককোনায় কান্না তে ভেঙে পড়েছিলাম। ফ্রেন্ডস দের থেকে ইন্সাল্ট ঠিক আছে,, ফ্যামিলি সদস্য থেকে ইন্সাল্ট ঠিক আছে কিন্তু বাহিরের মানুষ যাকে আজ পর্যন্ত চিনতাম না সে ইন্সাল্ট করবে সয্য আমি করতে পারবো না।
কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গিয়েছিল কিন্তু কান্না থামছিলো না,, পাশ থেকে একজন পানির বতল পাস করে ভেবেছিলাম রুহি এসেছে তাই বলে ফেললাম “থ্যাংক্স দোস্ট সবসময় পাশে থাকিস আর কাউকে বলবি না আমি কান্না করেছি আর রুমাল দে চোখ ফুলে গেসে না দেখ তো লাল হয়ে আছে কিনা?” এসব আমি অন্যদিকে ফিরে চোখে মুখে পানি দিচ্ছিলাম আর বলছিলাম…কিন্তু পাশে রুহির বদলে ইরশাদ ছিলো কে জানতো,, চুপ করে এক ধ্যান এ আমার কথা গুলো শুনছিলো আর আমায় দেখছিলো,,,
পাশ ফিরে যখন তাকে দেখলাম তখন কান্না না রাগ আসছিলো,, কিন্তু সে কিছু না বলে রুমাল রেখে নিচে চলে যায়,,,আর আমি হা করে তাকিয়ে থাকি সে কি আমার কান্নার ফুল এপিসোড দেখেছে আর কি ভাবলো আমার ব্যাপারে আরো নিচ মেয়ে?
চলবে?