হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি পর্ব-১৭

0
1863

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_তুমি
#পর্ব_১৭
#জান্নাতুল_বিথী

রাতের আকাশে মেঘের খেলা দেখতে ব্যস্ত আমি।আপাত অন্য কোনো দিকে মন নেই আমার।অনেক্ষন যাবত এখানে দাড়িয়ে আছি আমি।অয়ন বাসায় নেই।কোনো এক কাজে বের হইছে সেই কখন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো খবর নেই।সে আমার উপর অনেক রেগে আছে মনে হয়।হয়তোবা আমার আশেপাশে থাকলে কষ্ট পাবে তাই বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।তার সাথে এমন ব্যবহার করার পর নিজের কাছেও ভালো লাগছে না।অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্বান্ত নিলাম স্বামী যখন আমার আর ভালোবাসি যখন বলে দিলো তাহলে আর দুরে সরিয়ে রেখে কি লাভ।এমনিতেও আমার মতো বউ যখন তার কপালে জুটলো তবে সে শান্তিতে থাকতে পারবে না।জ্বালিয়েই মারবো তাকে।কথাটা ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠে আমার।হঠাৎ পেটে কারো শীতল স্পর্শে কেপে উঠি আমি।বুঝলাম সে ফিরে এসেছে।তার স্পর্শ গুলো চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে থাকি।এক পর্যায়ে সে আমার চুলের মাঝে ডুব দেয়।এক সময় সে কাপা কাপা গলায় বলে উঠে..

“কি হইছে তোমার দিয়ুপাখি কেনো আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো। আর কেনোও বা আমাকে এভাবে দুরে সরিয়ে রাখছো।”

তার কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে।আমি কিছু না বলে তার বাধন থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার দিকে ফিরে দাড়াই।আর তার দুই কাধে আমার দুই হাত রেখে ঝাঝালো কন্ঠে বলি..

“আপনার প্রথম অপরাধ আমাকে ভালোবাসেন তারপরও বলেন নাই কেনো।দ্বিতীয় অপরাধ কথায় কথায় মেসেজ করে করে আমাকে থ্রেট দেন কেনো।আর আপনি সব চেয় বড় ভুল করছেন আমাকে বিয়ে করে।জ্বালিয়ে মারবো আপনাকে আমি।”

আমার কথা শুনে সে ফিক করে হেসে দেয়।ভেবেছিলাম আমার ঝাঝালো কন্ঠ শুনে ভয় পাবে (দিয়ুপাখিকে ভয় পাবে আমার অয়ন স্টেঞ্জ😏😇) কিন্তু তা না করে সে হেসে দিলো।উপপ কেমন যে লাগছে আমার।হঠাযঅয়ন আমার কোমড় জড়িয়ে আমাকে তার কাছে টেনে বলে..

“তোমার আগুনে জ্বলেই তো মরতে চাই আমি।”

তার কথা শুনে আমি চোখ পিটপিট করে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকি।আজ আমার তাকে অনেক কিউট লাগছে।চোখ গুলো ফোলা ফোলা।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে আছে।মুখে নজর কাড়া হাসি সারাক্ষণ বিদ্যমান থাকে।তার এই হাসি টাতেই যে পাগল আমি।..

“আপনি কান্না করছেন.?????”

আমার কধা শুনে সে আমাকে চেড়ে দেয়।আর অন্যদিকে ঘুরে দাড়ায়।কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না।আমি তাকে এক হাত দিয়ে আমার দিকে ফিরিয়ে বুকে দুই হাত ভাজ করে বলি.

“কি হলো এন্সার মি.”

সে আমার দিবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে..

“কান্না করলাম কখন আজিব।”

“আপনার চোখ মুখ আমাকে জানান দিচ্ছে আপনি কান্না করছেন।তারপর গিয়ে কতো দিন যাবত ঠিক মতো ঘুমান না সত্যি করে বলেন তো।.????”(ভ্রু কুচকে)

“পাশে সুন্দরী বউ শুয়ে থাকলে তার দিকে যদি সারারাত তাকিয়ে নির্ঘুমে কাটিয়ে দেই তাহলে তো চোখের নিচে কালো দাগ পড়বেই।”

তার কথা শুনে আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।বলে কি এসব সে।ইয়া আল্লাহ।আমি তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলি…

“ঘুরতে যাবো আমি।”

আমার কথা শুনে সে যেনো আকাশ থেকে পড়ে।আমার দিকে অবাক চাহুনি নিক্ষেপ করে বলে..

“পাগল নাকি তুমি।রাত ১১ টা বাজে এখন।ভয় করে না একথা বলতে।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে বলি…

“উপপপ আপনি যখন আমার সাথে আছেন তাহলে ভয় পাবো কেনো।আর এমনিতেও আমি জানি আপনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে protect করবেন।”

আমার কথা শুনে সে কিছু বলে নাই।শুধু মুচকি হেসেছিলো।


ল্যামপোস্টের নিচে একটা বেঞ্চিতে আমি আর অয়ন পাশাপাশি বসে আছি।আমার হাতে আইসক্রিম।দুই হাতে দুইটা।আমি তার দিকে একটা আইসক্রিম ধরে বলি..

“এই যে মিস্টার স্বামী খাবেন।”

সে আমার দিকে অবাক চাহুনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দেয়।হয়তো তাকে মিস্টার স্বামী বলাতে হেসে দিছে।সে আমার হাত থেকে আমার এটো আইসক্রিমটা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করে।আকস্মিক এমন হওয়ায় পুরো ঘটনা বুঝতে আমার একটু সময় লেগে যায়।যখন বুঝলাম কি হচ্ছে তখন হেসে নিজেই নিজেকে বলে উঠে..

“বুঝলি দিয়া শুনলাম বউয়ের এটো জিনিষ খেলে ভালোবাসা বাড়ে।এখন যদি তোর কপাল ভালো হয়ে থাকে তো এটাই হবে।”

আমার কথা শুনে সে জোরে হেসে দেয়।..

“আমার দিয়ুপাখির কপাল এমনিও অনেক ভালো বুঝলে।সেটা তোমাকে আর বলতে হবে না।শুধু অয়নের কপাল খারাপ আজ পর্যন্ত সে বউয়ের ভালোবাসা পেলো না।”(ইনোসেন্ট ফেস করে বলে)

তার কথা শুনে আমি তাকে ভেংচি কেটে বলি..

“আপনার কপাল খারাপ হতে পারে বাট আমার অয়নের কপাল অনেক ভালো।খারাপ শুধু এতো টুকুই যে সে তার কপালে একটা ঝগড়াটে বউ পাইছে।যে তার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়াই করবে।”

অয়ন কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।দিয়ার মুখে আমার অয়ন শুনে তার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে।..

“আমি তো ছোট বেলা হতে এটাই চাইতাম আমার কপালে যেনো একটা ঝগড়াটে বউ জুটে।এখন দেখছি তা কবুল হইছে।”

তার কথা শুনে আমি হেসে উঠি।আর অয়ন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।তারপর আমার কপালের অবাধ্য চুল গুলোকে কানের পাশে গুজে দিয়ে বলে..

“তোমার এই হাসি মাখা মুখ দেখেই যেনো সারাজীবন পার করে দিতে পারি।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে